ভালোবাসার তৃষ্ণাতে তুমি পর্ব -০২

#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ০২
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* ঘুমন্ত অধরাকে ভিশন অবাক করে দিয়ে অয়ন অধরার দিকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— এই উঠো। নবাব নন্দিনী হয়েছে। পরে পরে বেলা দশটা পর্যন্ত ঘুমালে বাড়ির কাজ করবে কে? উঠো!

অয়নের ষাঁড়ের মতো চিৎকারের শব্দে বেশ অবাক হয়ে যায় অধরা। খানেকটা অপ্রস্তুত হয়ে অধরা চোখ মেলে তাকায়। অয়নের দিকে ঘুমো ঘুমো দৃষ্টিতে তাকালো সে। অয়নের রাগটা চোখের মধ্যে স্পষ্ট। অধরা অয়নের রাগি লুক দেখে বেশ ঘাবড়ে গিয়ে সংকিত কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— জ্বি, কি হয়েছে? এভাবে চিৎকার করছো কেনো?

অধরার আলতো মৃদু কন্ঠ প্রকাশ করছে তার মনের মধ্যের ভয়। অধরা ভাবছে কি হয়েছে? সকাল সকাল কি এমন হলো যে অয়ন খেপে গেলো? অয়ন অধরার কথার কোনো জবাব না দিয়ে ধুম করে অধরার চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরে। অধরা প্রচন্ড অবাক হয়ে যায় অয়নের ব্যবহারে। অধরা অয়নের হাত ধরে ব্যথায় ককিয়ে বলতে থাকলো

— প্লিজ! এমন করছো কেনো? আমার চুল ছেড়ে দাও। আমার কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ অয়ন!

অয়ন অধরার এই আর্তনাদ মূলক কথার জবাবে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— কতক্ষণ ধরে ডেকে চলেছি তোকে। পরে পরে ঘুমানো, আমার সাথে ঘুম থেকে ওঠা, এই সবের জন্য তোকে এই বাড়িতে আনা হয়নি। বাড়ির সমস্ত কাজ করার জন্য তোকে এখানে আনা হয়েছে। বুঝতে‌ পেরেছিস?

* অয়ন নিজের কথা শেষ করতেই লক্ষ্য করলো অধরার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। অয়ন একটা ধাক্কা দিয়ে অধরার চুল গুলো ছেড়ে দিলো। অধরার দিকে কিছু সময় বিক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে অয়ন ফ্রেশ হতে চলে যায়। অধরা বিছানার একটা কোনে বসে আছে। সিল্কি চুল গুলো ভিশন উষ্ণ ফ্যাকাশে হয়ে আছে তার। চোখ থেকে বেরিয়ে আসা নোনা জল গুলো ভিশন বিক্ষিপ্ত ভাবে জানতে চাইছে কি জন্য করছে অয়ন এতো অবহেলা? অয়ন রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই অধরা ভাবতে লাগলো অয়নের বলা আজকের কথা গুলো। “এটাকি সেই অয়ন? যেই অয়ন আমাকে প্রচন্ড পরিমানে ভালোবাসতো! এটাকি সেই অয়ন? যে অয়ন আমি নিজে ব্যথা পেলে সে নিজে আঁতকে উঠতো? আমি কি করেছি? যার জন্য এতোটা অবহেলা, ঘৃণা আমায় সহ্য করতে হচ্ছে? আমি তো নিজের সবটা দিয়ে অয়নকে পাগলের মতো ভালোবেসেছি। এটাই কি আমার অপরাধ? সকালে নাস্তা রেডি করে দেয়া। অয়নকে গুছিয়ে দেয়া। সারা দিন সংসার সামলানো আর রাতে বসে বসে তার অপেক্ষা করা। এই ছিলো আমার দুনিয়া। আমার পৃথিবী। তবে কি এমন হলো যে আজ সেই দুনিয়াটা আঁধার কালো হয়ে এলো? ওহহহ বুঝতে পেরেছি। অয়ন আর আমাকে সহ্য করবেই বা কি করে? সে তো আর আমার নাই। সে যে এখন অন্য কারো ভাবনায় মগ্ন থাকে। এক নারীতে আকৃষ্ট পুরুষ এই সমাজে খুব বেশি চোখে পরে না। একে আসক্ত পুরুষ মানে নারীটি নিশ্চিত ভাগ্যবতী। কিন্তু আমি অত ভাগ্য নিয়ে জন্মাই নি। অয়নকে চেয়েছি নিজের করে বেঁধে রাখতে। হয়তো আমি তাকে তার মতো করে ভালো রাখতে পারিনি কিন্তু হ্যাঁ চেষ্টা করেছি। ব্যর্থ হয়েছি আমি। জীবনের প্রতিটা প্লাটফর্মে মারাত্মক ভাবে হেরেছি আমি।‌ আমার মতো মেয়ের সাথে হয়তো এর থেকে বেশি ভালো কিছু আশা করা যায় না। তবে একটা কথা। আমার আজ উত্তর চাই। কি কারনে অয়ন আমাকে এভাবে ঠকাচ্ছে? কি করেছি আমি? দিনের পর দিন আমার অগোচরে এসব কি নোংরা খেলা সে খেলছে? জবাব চাই আমার”।

কথা গুলো আপন মনে বিড়বিড় করে বলছে অধরা। বুঝে উঠতে পারছে না তার বোবা মনের এই প্রশ্নের জবাব কি করে দিবে সে? চাওয়া বলতে তো তার কাছে শুধু মাত্র ভালোবাসা ছিলো। একটু কি দেয়া যেতো না ভালোবাসা? অধরার ভাবনার ঘোর কাটলো অয়নের রুমে আসার শব্দে। অয়ন রুমে আসতেই দেখতে পায় অধরা বিছানার এক কোনে বসে আছে। অয়ন অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করলো না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো ঠিক ঠাক গুছিয়ে নিলো সে। অধরা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। চোখ থেকে জল মুছে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অয়ন তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

অধরার কান্না ভেজা কন্ঠে বলল কথাটা অয়নের কানে পৌঁছায় ঠিক তবে হৃদয়ে নয়। অয়ন আয়না থেকে মুখ ঘুরিয়ে অধরার দিকে তাকালো। ভ্রূ কুঁচকে অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য বলল

— কি কথা? আমার এখন কোনো‌ ফালতু কথা শোনার মতো সময় হাতে নেই।

অয়ন কথাটা শেষ করতেই অধরা তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসির রেখা ঠোঁটের কোণে এঁকে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— গভীর রাতে অন্য কোনো মেয়ের সাথে সময় কাটানোটা ফালতু সময়ের মধ্যে পরে না। বরং ঐ সময়টা সব চাইতে জরুরী সময়ের মধ্যে পরে। এতোটাই জরুরী সময়ের মধ্যে পরে যে কেউ একজন খুব ভালো করে নিশ্চিত হয়ে নেয় তার স্ত্রী ঘুমিয়ে পরেছে কি না। নিশ্চয়ই লুকিয়ে লুকিয়ে অন্য কোনো নারীর সাথে সময় কাটানোর মতো সময় তোমার হাতে রোজ থাকে। তাই না অয়ন!

অধরার কথা গুলো কানে আসতেই অয়নের টনক নড়ে। অয়নের মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন প্রবল ভাবে মাথা চারা দিয়ে ওঠে “তবে অধরা সব কিছু জানতে পেরে গেছে”? অয়ন অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করে একটু কর্কশ গলায় বলে উঠলো

— মানে? কার সাথে কখন আমি আড়ালে, গোপনে দেখা করতে গিয়েছি? পাগল হয়ে গেছো সকাল সকাল? কি সব ভুল ভাল বকছো? মাথা ঠিক আছে তো!

অধরা অয়নের ভয়ার্ত কন্ঠ শুনে বাঁকা হাসি দিলো। অয়ন নিজেকে এমন ভাবে রিপ্রেজেন্ট করছে যে মনে হচ্ছে অধরা‌ যা শুনেছে, যা দেখেছে সব মিথ্যে। একটা স্বপ্ন ছিলো মাত্র। অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলতে লাগলো

— তাই অয়ন! নেশা আমি করি না। নেশা তুমি করো। হ্যাঁ অন্য নারীর প্রতি আসক্ত তুমি। তোমার চরিত্র কতটা নোংরা তা আমি গতকাল রাতে জানতে পেরেছি। তোমার দিকে এখন তাকাতেও না রুচিতে বাধে।

অধরা কথাটা শেষ করতেই অয়ন অধরার দিকে দৃষ্টিপাত করে। অধরার চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে। নিজের স্বামীর ভাগ কোনো নারী অন্যকে দিতে পারে না। অধরার রাগে ফেটে পরাটা স্বাভাবিক। অয়ন অধরার রাগি লুকের বিপরীতে সোফার উপর বসে পা এর উপর পা তুলে নিলো। অধরার দিকে বেশ শব্দ করে হেসে উঠলো সে। অধরা অয়নের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অয়ন একটু হেসে নিয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে ভিশন তাচ্ছিল্য কর কন্ঠে বলতে লাগলো

— সব কিছু জেনে গেছো দেখছি। হুম আমি অন্য নারীতে আসক্ত। কি হয়েছে তাতে? আমি একজন না হাজার জনের প্রতি দুর্বল। সো ওয়াট? তোমার সমস্যা কোথায়?

অয়নের কথা গুলো একটু অবাক করছে অধরাকে। অয়ন জানতে চাইছে তার সমস্যা কোথায়। অধরা কর্কশ গলায় বলল

— আমার সমস্যা থাকার কথা নয়? আমি তোমার স্ত্রী। নিজের স্বামীকে কি করে অন্যের সাথে শেয়ার করে নিবো আমি? এটা আমার পক্ষে কি করে সাধারন বিষয় হবে? জবাব দাও আমায়।

— শার্ট আপ ওকে। স্ত্রী বলতে এসেছে। স্ত্রী হিসেবে কি করেছো তুমি? কখন আমার ইচ্ছেকে মূল্যায়ন করো নি। তোমার ব্যর্থতার জন্য আমি বিকল্প পথ বেছে নিয়েছি। এই সবের জন্য আমি না, তুমি নিজে দায়ী। আমি এখন যেমন আছি সামনেও ঠিক তেমনি থাকবো। ইচ্ছে হলে এখানে থাকবে তা না হলে পথ খোলা আছে। চলে যেতে পারো।

* অধরা অয়নের কথা গুলো শুনে একদম নিশ্চুপ হয়ে যায়। অয়ন ব্যাগটা কাঁধে চেপে হনহন করে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। রুম থেকে বেরিয়ে অয়ন নিজের গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। অফিসের সামনে গাড়ি পার্ক করে অয়ন নিজের কেবিনে চলে আসে। কেবিনে এসে অয়ন নিজের চেয়ারে বসে একটু সকাল কার ঘটনা মনে করলো। “অধরাকে ওভাবে অপমান টা না করলেই পারতাম। আচ্ছা ও আমাকে ছেড়ে কেনো দিচ্ছে না? আমি সত্যি তো একটা চরিত্রহীন নোংরা ছেলে। আমার সাথে কেনো জরিয়ে আছে ও? সত্যি এটা যে অধরাকে ভালোবাসি ঠিক। তবে ঘৃণার পরিমান ভালোবাসাকে অনেক‌ আগেই ছাপিয়ে গেছে”। আপন মনে অয়ন বিড়বিড় করে কথা গুলো বলছে। অয়নের ভাবনার মধ্যে অর্পা চলে আসে অয়নের কেবিনে। অর্পার ঠোঁটের মিষ্টি মধুর কন্ঠ অয়নের কানে আসতেই অয়নের ভাবনার অবসান ঘটে।

— অয়ন আসবো?

— ইয়া প্লিজ।

অর্পা অয়নের কেবিনে এসে অয়নের সামনে বসলো। অয়ন একটু বাঁকা হেঁসে অর্পাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— ওহহহ তো আমার কেবিনে হঠাৎ সকাল সকাল। কি মনে করে?

— কেনো আমি আসতে পারি না?

— হুম। তা পারো তবে কি কারনে এখন এসেছো তাই বলো।

— তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই ছুটে এসেছি।

— উফফফ। তাই নটি গার্ল। দেখা হয়ে গেছে? এখন আসতে পারো আমি একটু বিজি আছি।

— হুম।

* অয়নের মুড অফ তা অর্পা বুঝতে পারলো। তাই সে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। অর্পা চলে যেতেই অয়ন ফাইলে মুখ গুজে কাজ করতে থাকে। কিছু সময় কাজ করার পরে হঠাৎ করে অয়ন…………………..

#চলবে……………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here