ভালোবাসার ফোড়ন পর্ব ১৪+১৫

#ভালোবাসার_ফোড়ন
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৪

রাতে খাবার টেবিলে সবাই একসাথে বসে খাবার খাচ্ছে। আমি সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিলাম। বাবা খাবার খেয়ে উঠে পড়লেন। আমি আপু’র পাশে বসে খাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে আহিয়ান বলে উঠে…

– আম্মু খাবার শেষে আমাদের বাড়ি’র বাচ্চা’টার জন্য এক গ্লাস গরম দুধ পাঠিয়ে দিও।

বলেই উঠে পড়ে সে, কিন্তু আমার মাথায় কিছুই ঢুকলো না। আহিয়ান এর কথা শুনে আমি অনেকটা অবাক হই। কারন আমি এখন পর্যন্ত কোনো বাচ্চা দেখলাম না তাহলে আহিয়ান কার জন্য গরম দুধ এর কথা বলছে।
আমি একবার আপু আরেকবার আম্মু’র মুখের দিকে তাকাই। তারা দুজনেই মুখ টিপে হাসছে। আমি আম্মুকে বলি…

– মা এই বাড়ির বাচ্চা টা কে? আমি কেন দেখলাম না তাকে।

আমার কথা শুনে মা রহস্যময় হাসি দিয়ে উঠে গেলেন কিন্তু আমার কথার উত্তর দিলেন না কেন? আমি এবার আপু’র দিকে তাকাই। আপু আমার চাহনি দেখে জোরে হেসে উঠে বলেন…
– তুমি বোঝ নি আহি কার কথা বলেছে?

আপু’র কথায় আমি ভ্রু কুঁচকে ফেলি। আমি এবার আমার ঘাড়ে হাত রেখে বলে…
– হ্যাঁ তোমাকেই বলেছে।

আপু’র কথা শুনে আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে নেই। উনি এভাবে সবার সামনে আমাকে অপমান করল। সারাদিন তো অপমান করতেই থাকে আর এখন এখানে এভাবে অপমান করলো। উনার কাছে আমি একটা বাচ্চা। লাইক সিরিয়াসলি! কিভাবে বললেন উনি এই কথা আমাকে। তাও আম্মু আর আপু’র সামনে। আমি রেগে উঠে যাই।
.
ঘরে সামনে এসে দেখি সার্ভেন্ট দরজায় দাঁড়ানো। উনি সার্ভেন্ট কে দরজা থেকেই চলে যেতে বললেন কিন্তু কেন? সার্ভেন্ট চলে যেতেই আমি যেয়ে দেখি দরজা লক করা। এটা কি হলো? আমি দরজা নক করতে উনি দরজা খুলে দিলেন। আমি ভেতরে এসে দেখি উনি দুধের গ্লাস টা চামচ দিয়ে নাড়ছেন। আমি ভেবেই গেছিলাম আজ উনার সাথে আমি ঝগড়া করবোই। আমি ঘরে ঢুকেই বলতে থাকি…

– আপনি নিচে কি বললেন? আমি একটা বাচ্চা! আপনি জানেন আমার বয়স ১৮‌। তাহলে আপনি আমাকে কিভাবে বাচ্চা….

বলার আগেই উনি দুধের গ্লাস আমার মুখে দিয়ে দেন। উনি শান্ত ভাবে বলে উঠে…
– এটা খেয়ে শেষ করে নাও তারপর ঝগড়া করো। এনার্জি পাবে।

উনার কথায় আমি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছি। গ্লাস টা উনি এখনো ধরে আছেন। আমি অর্ধেক এর মতো খেয়ে বলে উঠি…
– ছিঃ আর খাবো না…

বলতেই উনি আবার ‌গ্লাস আমার মুখে দিয়ে দেন। আর বলেন…
– পুরোটা শেষ করো।

আমি চোখ বন্ধ করে খেতে থাকি। অতঃপর উনি আমাকে পুরোটা খাইয়ে ছাড়লেন। উনি গ্লাস টা রেখে বলেন…
– গুড গার্ল এবার বলো কি বলবে?

– আপনি নিচে বললেন? আমি একটা বাচ্চা! আম্মু আর আপু’র সামনে আপনি এভাবে আমাকে অপমান করলেন কেন?

– অপমান কোথায় করলাম?

– অপমান কোথায় করলেন মানে? সবার সামনে আমাকে একটা বাচ্চা বললেন আপনি!

– বাচ্চা কে বাচ্চা বলবো না তো কি বুড়ি বলবো।

– কিহহ?

– তাহলে! ছোট একটা বাচ্চা মেয়ে আবার কথা বলো কতো বড় বড়।

– আমার বয়স ১৮ বুঝলেন।

– তো!

– তাহলে আমি বাচ্চা হলাম কিভাবে?

উনি আমার কথা শুনে হঠাৎ করেই আমার কাছে আসেন। কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে আছি পিছিয়ে যায় নি কারন আমি জানি উনি এমন কিছু করবে না কিন্তু কিছু একটা তো করবে যা পাগলামো ছাড়া আমার কাছে আর কিছু মনে হয় না।
ঠিক তাই হলো উনি আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে নিজের হাইট মাপলেন। তাহলে বললেন…

– দেখো তুমি আমার থেকে কতো ছোট! আমার ঘাড় অবদি পড়ো তুমি। বাচ্চা একটা পিচ্চি মেয়ে আবার কথা বলো।

উনার কথা শুনে আমি মুখ ফুলিয়ে ঘুড়িয়ে নেই। আমি চমকে উঠি কারন ঘরে দুটো বেড। একজন শুতে পারবে এরকম টাইপের দুটো বেড। আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকাই। উনি আমার দিকে না তাকিয়ে একটা বেড এ গিয়ে বসে।‌ আমি‌ উনার কাছে গিয়ে বলে উঠি…
– এখানে এরকম বেড আসলো কখন?

– যখন তুমি ঝগড়া করে বাইরে গেলে তখন।

– ঝগড়া কি আমি একা করি আচ্ছা এটা নিয়ে পড়ে কথা হবে আগে এটা বলুন, কখন আনেলন এগুলো? আর কিভাবে? কেউ দেখেনি!

– না বাড়ির পিছনে’র দরজা দিয়ে এনেছি! কেউ দেখেনি।

– তাহলে আপনি বাড়ি’র পিছনের দরজা দিয়ে বাইরে গিয়েছিলেন আর সবার সামনে আমাকে কানা বললেন।

– তো সবাইকে বলতাম বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে গিয়েছিলাম! তখন সবাই জিজ্ঞেস করলে আমি কি বলতাম কেন গিয়েছি বলো!

আমি চুপ হয়ে গেলাম আসলেই তিনি কি বলতেন? আর এখানে তিনি যা করেছেন সেটা তো আমার জন্য’ই করেছেন। হুট করেই একটা কথা মাথা আসলো।‌আমি তাড়াতাড়ি করে উনাকে জিজ্ঞেস করি…
– আপনি এটা করলেন? কিন্তু যদি কেউ দেখে ফেলে তখন! মা দেখলে কি ভাববে?

উনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বললেন…
– এখন যেমন দরজা লক করে রেখেছি তখন ও রাখবো!

আমি বলে উঠি…
– এটা কেমন দেখা যাবে না। আপনি সবসময় দরজা লক করে রাখবেন!

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠেন…
– তোমায় জ্বালায় আর পারছি না আমি!

– আমি জ্বালাই আপনাকে?

– তাহলে কি করো। বলেই আবার আমার শাড়ি’র‌ আঁচল ধরে হাত দিয়ে গিটু দিতে থাকে।

আমি অবাক হয়ে উনার কান্ড দেখছি। এরকম situation এ উনি এটা কি করছেন আমি বুঝে উঠতে পারছি না। আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি আর উনি নিচের দিকে তাকিয়ে আমার আঁচল নিয়ে ফাজলামি করছে ভাবা যায়।

আমি উনার পাশ থেকে উঠে নিজের খাটে এসে বসি পড়ি। উনি কপাল কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলে…
– এটা কি হলো?

– যা হবার তাই হলো!

– মানে…

– আপনি জানেন আপনি হলেন আমার জাত শত্রু!

– কিহ বললে তুমি!

– যা শুনলেন তাই! যেদিন থেকে আপনার সাথে দেখা হয়েছে সেদিন থেকে সবকিছু উল্টা হচ্ছে। যাই হোক না কেন সব জায়গায় আপনি থাকবেন’ই।

– আমি তোমার হেল্প করছি আর তুমি আমি এটা বললে!

– যা বলেছি ঠিক বলেছি!
বলেই অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ করেই মনে হল আমার ওপর বৃষ্টি পড়ছে। আমি লাফ দিয়ে উঠে পড়ি। দেখি উনি দাঁড়িয়ে হাসছে , উনার হাতে পানির জগ। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি পুরো বিছানা ভিজে একাকার। আমি দাঁড়িয়ে বলি…
– এটা কি করলেন!

– তুমি বললে না আমি তোমার জাত শত্রু! আর জাত শত্রু দের কাজ কি শত্রুর ঘুম হারাম করা তাই করলাম। এখন ঘুমাও তুমি।
বলেই বাঁকা হেসে নিজের বিছানা দিকে গেলেন। আমি রাগে ফুঁসছি। শান্তিতে একটু ঘুমাতে দিবে না আমাকে উনি। উনি পিছে ফিরতেই আমি উনার হাত থেকে পানির জগ টা নিয়ে উনার বিছানায় পুরো ফেলে দিলাম। উনার বিছানা ভিজে একাকার। আমি জোরে হেসে বললাম…

– ঘুম‌ হারাম করাও কিন্তু শত্রু’র প্রতিকক্ষের কাজ।

আমার কথায় উনি রেগে আমার দিকে তাকালেন। আমি পাশ দিয়ে হেঁটে অন্যদিকে চলে এলাম। উনি বালিশ নিয়ে আমার কাছে আসলেন। আমি আমার বালিশ নিয়ে খাটের ওপাশ চলে গেলাম। দুজন বালিশ নিয়ে মারামারি করতে লাগলাম। একসময় উনার বালিশ ছিড়ে তুলো বেরিয়ে আসলো। আমি আবারও হেসে দিলাম। তারপর দুজন মিলে পুরো ঘর দেখতে লাগলাম। ঘরের অবস্থা আসলেই খারাপ। বিছানায় ঘুমানো যাবে না। এখন ঘুমাবো কোথায়?

উনি আমার দিকে তাকালেন আমি উনার দিকে তাকাই। ব্যাপার’টা পরিষ্কার। আমি উনার আগেই দৌড়ে বেলকনিতে চলে আসি।‌ তাড়াতাড়ি করে দোলনায় গিয়ে বসে পড়ি, এর মানে এখানে আমি ঘুমাবো। উনি আমার সামনে এসে কোমরে হাত দিয়ে বলে…

– নিহা নামো!

– না নামবো না আমি এখানে ঘুমাবো।

– দোলনা আমার!

– তো!

– নামো এখান থেকে! আমি ঘুমাবো এখানে।

– না নামছি না আমি ঘুমাবো এখানে।
বলেই দোলনায় বালিশ রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।

হুট করেই মনে হলো কেউ আমাকে কোলে তুলল। আমি তাড়াতাড়ি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আমি আহিয়ান’র কোলে। প্রথমত আমি এই আহিয়ান এর কোলে থাকার ধাক্কানো’টা সামলাতে পারি নি তার মধ্যে নিচে তাকিয়ে দেখি উনি একদম আমাকে বেলকনি’র কর্ণারে নিয়ে এসেছেন। আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি দাঁতে দাঁত চেপে বলেন…

– তোমাকে এখান থেকে ফেলে দিই, একেবারে মরে ভূত হয়ে যাবে। আমার ঝামেলা শেষ।

আমি ভয়ে উনার গলা জরিয়ে ধরি। তাও একটু সাহস নিয়ে বলি…
– আমাকে আপনার ঝামেলা মনে হয়। এমনতেও আমি মরে গেলে ভূত হয়ে এসে আপনাকে জ্বালাবো বলে দিলাম।

উনি অসহায় ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বলে…
– তার মানে তুমি মরে গিয়েও আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না।

আমি এক গাল হেসে বলি…
– নাহ!

– পাজি মেয়ে একটা।
বলেই আমাকে ধপাস করে দোলনায় বসিয়ে দেন। আমি এবার একটু সরে বসি। তখন উনি আমার পাশে বসে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে….
– তোমার মরে ভূত হওয়া লাগবে না। তুমি এমনে’তেই ভূতনি।

– কিহহহ!

– হ্যাঁ একটা ভূতনি তুমি। বেঁচে থেকে এখনই ভূতনি’র মতো আমাকে জ্বালাও।

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বলি…
– আমি ঘুমাবো গুড নাইট!

ভ্রু কুঁচকে বলে…
– আমার ডায়লগ আমাকে বলছো।
আমি মাথা নাড়িয়ে একপাশে হেলান দিয়ে বসে রইলাম। এরপর আর উনার কথা জানি না।

পরদিন সকালে আমার ঘুম অনেক দেরি করে ভাঙে আর ঘুম ভাঙার পর দেখি আমি বিছানায়। আমার শরীর একটা চাদরও দেওয়া কিন্তু এটা কিভাবে হতে পারে। শুয়ে ছিলাম তো বিছানায়। তাহলে এখানে আসলাম কিভাবে? পাশে তাকিয়ে দেখি উনি ঘুমিয়ে আছে। বিছানায় এবার ভালো মতো চোখ পড়ল। এটা আগের বিছানা! তার মানে উনি রাতে ‌কি এসব করেছেন যে এখনও ঘুমাচ্ছেন।

আজ আমি উনার পাশে ঘুমিয়েছি আর উনি আমার পাশে। আমি ঘুম ঘুম চোখে উনাকে দেখতে ব্যস্ত। খুব গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন উনি। উনাকে দেখার মধ্যে একটা প্রয়াস আছে আমার কিন্তু সেটা আমি বুঝে উঠতে পারছি না। এর মধ্যে এর্লাম বেজে ওঠে। উনি ঘুম ঘুম চোখে তার পাশে টেবিলে হাত নাড়ছে কিন্তু এর্লাম আমার এপাশে বাড়ছে। উনি ঘুমের মধ্যেই আমাকে বলে…

– নিহা এর্লাম টা বন্ধ করো প্লিজ আমি এখন ঘুমাবো।
বলেই ওপাশ হয়ে ঘুমিয়ে গেলো। আমি উঠে এর্লাম বন্ধ করে ‌ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

আজও কালকের মতো উকি দিয়ে বের হলাম শাড়ি পড়তে। সেদিন সার্ভেন্ট দিয়ে আপু অনেকগুলো শাড়ি পাঠিয়েছিল। তাদের মধ্যে একটা শাড়ি নিলাম। শাড়ি’টা সবুজের মতোই কিন্তু সবুজ না একটু অন্যরকম। আমি সেটাই নিলাম। শাড়ি পড়ে চুল মুছে নিচে চলে এলাম। উনি এখনো ঘুমাচ্ছে।

আজ সবার জন্য আমি নাস্তা বানালাম। অনেক সময় লেগে গেলো বানাতে বানাতে। বানানো শেষে এককাপ কফি নিয়ে উনাকে ডাকতে গেলাম। দেখি উনি বিছানা ছেড়ে উঠে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আমার হাতে কফি দেখে কিঞ্চিত হেসে বলল…

– এটার খুব দরকার ছিলো। মাথা ধরেছে আমার।

আমি উনার কাছে গিয়ে কফি উনার হাতে দিলাম। উনি কফি তে এক কাপ চুমুক দিয়ে বলেন…
– এটা তুমি বানিয়েছো।

– হুম কেন?

– নাহ আজ এটার স্বাদ আলাদা তাই!

– ওহ্, কিন্তু এই বিছানা!

– রাতে সব করেছি। তুমি ঠিক বলেছো আম্মু এসে দেখলে খারাপ লাগলে তার।

– কখন করলেন এসব।

– তুমি ঘুমানোর পর, সব ঠিক করতে করতে প্রায় রাত ২ টো বেজে গেলো। আমার সাথে দু’জন সার্ভেন্ট ও ছিলো।

– ওহ আচ্ছা।

– নাস্তা করে রেডি হয়ে নাও ভার্সিটিতে যাবো আজ।

– হুম।
.
ভার্সিটিতে যাবার জন্য উনি রেডি হয়ে নিচে চলে গেছেন। কিন্তু আমার অনেকটা সময় লাগলো। কেন জানি উনার সাথে যেতে ইচ্ছে করছে না। আমাকে মানায় না তার সাথে। এর মাঝেই উনার ডাক পরল। কি অসভ্য লোকটা “ভূতনি, ভূতনি” বলে ডাকাডাকি করছে নিচ থেকে। আমি তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে এলাম। বাইরে এসে দেখি গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেই সানগ্লাস টা উনার চোখে। পড়নে একটা জ্যাকেট আর জিন্স। খুব পরিপাটি হয়েই আছেন। আমাকে দেখে চোখের চশমা খুলে বলে…
– এতো সময় ভূতনি!

– কি অসভ্য আপনি। এখান থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভূতনি বলে ডেকে যাচ্ছেন।

উনি হেসে বললেন…
– কি করবো বলো আমার একমাত্র জাত শত্রু তুমি।

উনার কথায় মুখ ফুলিয়ে উনার দিকে তাকাই। উনি গাড়ির ‌দরজা খুলে বলেন….
– উঠুন ভূতনি দেরি হচ্ছে।

আমি মুখ ফুলিয়েই গাড়িতে উঠে বসি। উনি গাড়ি চালাচ্ছেন আর কিছুক্ষণ পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে।‌ হঠাৎ বলে উঠে….
– কি হলো ভূতনি, এভাবে মুখ ফুলিয়ে রাখবে নাকি।

– আপনি আমাকে ভূতনি ভূতনি বলে ডাকা বন্ধ করুন।

– কেন তোমার মুখ নাকি। আমার মুখ আমি বলবো।

– তাহলে প্লিজ আমাকে বলবেন না।‌

– ভূতনি।

আমি আর কথা‌ বাড়ালাম না। বাড়িয়ে লাভ নেই। প্রায় অনেকক্ষণ পর ভার্সিটিতে কাছে চলে এসেছি। আমি উনাকে গাড়ি থামাতে বলি। উনি গাড়ি থামিয়ে বলে…
– কি হয়েছে?

– আমার বই কিনা লাগবে কিছু আপনি যান আমি বই কিনে আনছি।
বলেই গাড়ি থেকে নামতে থাকি। গাড়ির দরজা খুলতে গিয়ে দেখি দরজা লক করা। আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকাই। উনি সামনে তাকিয়ে বলে..
– কোথায় যাচ্ছো?

– বললাম তো বই কিনতে যাবো।

– আব্বু কি বলেছিল! আমার সাথে থাকতে তাহলে একা যাচ্ছো কেন?

উনার কথায় মাথা নিচু করে ফেলি। এরপর উনি গাড়ি থেকে নেমে আমাকে নামতে বলে। আমি নামার পর আমার হাত ধরে দোকানে নিয়ে যাই‌। নিজেকে তখন সত্যি’ই বাচ্চা বাচ্চা মনে হচ্ছে। অতঃপর উনি আমাকে বই কিনে দিলেন।‌
আমি প্রথম বর্ষের ছাত্রী উনি আমার সিনিয়র মানে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। উনার বাসায় কিছু বই ছিলো কিন্তু এগুলোও দরকার ছিলো তাই কিনতে হলো। উনি দোকানদারকে টাকা দিচ্ছে। আমি এক পাশে দাঁড়ানো। হঠাৎ উনার ফোন আসল উনি দাঁড়িয়ে কথা বলছে। কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে আকাশ ভাইয়া।সে হয়তো এখনো আসেনি। এখান থেকেই ভার্সিটি ৫ মিনিটের পথ। আমি উনাকে বলে হেঁটেই সেখান থেকে চলে গেলাম। উনি ফোনে কথা বলার কারনে আমাকে কিছু বলতে পারি নি নাহলে বেশ ঝাড়ি খেতে হতো আমায়।

ভার্সিটিতে আজ ঢুকতে কেমন লাগছিলো। তার মধ্যে আমি শাড়ি পড়েই ‌ঢুকেছি। সবাই কেমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাড়াতাড়ি করে হাঁটছি। সবার চাহনি তে অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে আমার। হঠাৎ কয়েকজন ছেলে এসে আমার পথ আটকালো। তাদের দেখে আমার ভয় আরো বেড়ে গেলো। আমি কোনোমতে একপাশ দিয়ে চলে এলাম। তারা পিছনে থেকে আমাকে ডাকছিলো কিন্তু আমি এতে কোনো বিদ্রুপ করলাম না। তাড়াতাড়ি করে রুমের ক্লাসরুমে ঢুকলাম। দেখি ইতি পানির বোতল নিয়ে পানি খেয়েই যাচ্ছে। আমি দৌড়ে বই গুলো রেখে ওর হাত থেকে পানি নিয়ে নিজে খেতে লাগলাম। ইতি বেশ অবাক হলো আমাকে দেখে। বলতে লাগল…
– তুই! এতো দিন পর…

– পরে বলছি আগে পানি খেয়ে নিই।

– কেন কি হয়েছে?

– ….. ( ছেলে গুলো’র কথা বললাম )

– ওহ্ এই ব্যাপার!

– তা তুই এমন ভাবে পানি খেলি কেন?

– যা শুনেছি তাতে আরো এক বোতল পানি লাগবে আমার!

– কেন এমন কি শুনেছিস।

– ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে ) যা শুনেছি তাতে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। তোর কিছু হবে না।

– মানে!

– আকাশ , আনিকা আর আহিয়ান ও নিতি ফেসবুক এ পোস্ট করেছে ইন অ্যা রিলেশনশিপ!

আমি পানি খেতে খেতে বলি…
– এর মানে কি?

– তারা দু জুটি রিলেশন করছে!

মুখের পানি সব থেকে ফেলে দিয়ে…
– কিহহহহ!
#ভালোবাসার_ফোড়ন
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৫

– তারা দু জুটি রিলেশন করছে!

মুখের পানি সব থেকে ফেলে দিয়ে…
– কিহহহহ!

ইতি আনমনে…
– হ্যাঁ।

– তোকে এই কথা বললো কে?

– আরে বলছি না ফেসবুকে এ পোস্ট করেছে।

– ফেসবুক এ পোস্ট করলেই কি সত্যি!

ইতি আমার দিকে তাকিয়ে বলে…
– শোন তুই তো আর এইসব use করিস না তাই বুঝতে ও পারোস না। আর আমি প্রথমে সবার থেকে শুনেছি,এখন আমি নিজে দেখেছি তাই এতো সিউরলি বলছি।‌ আনিকা আর নিতি নাকি ট্রিট ও দিবে সবাইকে।

আমি পায়ের মাটি নিমিষেই সরে গেল। এসব কি বলছে ইতি! উনি কি সত্যি’ই নিতি কে ভালোবাসে। তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করলেন তিনি।নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি। কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে আমার! মেনে নিতে পারছি না এইসব।

আমি নিরবতা দেখে ইতি আমার কাছে এসে। আমার ঘাড়ে হাত রেখে বলে…
– তুই এতো শক কেন? অবস্থা তো আমার খারাপ হবার কথা। আচ্ছা বাদ দে এইসব।‌ এখন বল তোর শশুর বাড়ির কি অবস্থা! শশুড় শাশুড়ি ভালো তো। ভালো আছিস ওখানে।

আমি ওর কথায় শুধু মাথা নাড়ি। ইতি আবার বলে উঠে…
– তোর জামাই তোকে পড়াশোনা করার অনুমতি দিয়েছে তাহলে। আমি তো ভেবেছিলাম তুই আর আসবি না। যাক ভালো হলো তুই আসলি। আমার আর একাকিত্ব লাগবে না।

আমি এবারও মাথা নাড়ি। ও আমার শাড়ি ধরে বলে…
– শাড়ি টা খুব সুন্দর তো কে দিয়েছে তোর বর।

আমি এবার ও মাথা নাড়ি। ইতি এবার আমার মাথায় বাড়ি মেরে বলে…
– কি শুধু মাথা নাড়ছিস, কথা বল। এতো চুপ কেন তুই। তোর বর এর নাম কি।

– আ…..

– কি আ আ করছিস নাম কি?

আমার মুখ থেকে কথা আর বের হলো না। কি বলবো আমি ওকে। অনেক কথা বলার ছিলো ইতি কে কিন্তু এখন আর কথা বলতেই ইচ্ছে করছে না আমার। হঠাৎ ক্লাসের বাইরে অনেক চেঁচামেচি শুনতে পাই। আমরা দুজনে কি হয়েছে দেখার জন্য বের হই।

বের হয়ে দেখি নিতি, আনিকা, টিনা আর ওর কয়েকজন বন্ধু। সবাই দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে।‌আমার চোখ একবার নিতি’র দিকে গেল। অনেক সুন্দরী সে, দেখতেও খুব স্মার্ট। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। তার সাথে আমার তুলনা বোকামি। কোথায় সে কোথায় আমি। হুট করেই নিতি আর আমার চোখাচোখি হয়ে যায়। সে আমার কাছে আসে। অতঃপর আমাকে বলতে থাকে…
– কেমন আছো নিহা।

আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলি…
– ভা…লো।

– তোমার কি বিয়ে হয়ে গেছে?

আমি মাথা নেড়ে বলি…
– হ্যাঁ!

নিতি হেসে বলে…
– তা আমাকে congrats করবে না।

– কেন আপি!

– ওমা তুমি জানো না। পুরো ভার্সিটি আমায় congrats করছে, আর তুমি জিজ্ঞেস করছো কেন?

-….. ( নিশ্চুপ হয়ে আছি )

– আচ্ছা শোন তাহলে আমি বলি! আমি আর আহি রিলেশনে গেছি তাই সবাই আমাকে ‌ congrats করছে।

নিতি’র কথায় আমি খুব কষ্ট হল। আমি মাথা নিচু করে বলি…
– congratulations আপি।

– thank you.
.
হঠাৎ আনিকা এসে ‌নিতি’র হাত টেনে বলে…
– আহি এসেছে চল!

অতঃপর তারা সবাই মিলে চলে যায়। আমি ইতি’র দিকে তাকাই। রাগে তার চোখ লাল হয়ে আছে। সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে…
– শুনলি মেয়ের কথা, কিভাবে বলে আমাকে congrats করবে না।‌আসছে‌ কোন নবাবজাদি তাকে আবার congrats করতে হবে।

আমি নিজেকে স্বাভাবিক করতে মুচকি হেসে বলি…
– তুই এতো রেগে আছিস কেন?

– ভালো লাগছে না আমার কিছু
বলেই ইতি ক্লাসরুমে চলে গেল। আমিও তার পিছু পিছু গেলাম। পুরো ক্লাস ইতি আর আমি চুপ হয়ে ছিলাম। কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে নি আমার। কেন জানি ভালো লাগছিলো না কিছু। ক্লাসের কোনো পড়াই মন বসে নি আমার। মাথায় শুধু আহিয়ান আর নিতি’র কথা ঘুরছিলো। মাথা থেকে তাদের কথা বের করতেই পারলাম না।

আচ্ছা উনি প্রেম করুক না নিতি’র সাথে।‌আমার কি তাতে! উনি তো বলেই দিলেন আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেনি। তাহলে আর কি নিশ্চয়ই কষ্ট দেওয়ার জন্য বিয়ে করেছে।‌ আর তার সূত্রপাত এটা দিয়েই শুরু করলেন তিনি। কিন্তু কষ্ট কেন হবে আমার। আমি তো আর উনাকে ভালোবাসি না। তাহলে এই খারাপ লাগার কারন কি? আমি উনার স্ত্রী বলে কি!

ক্লাসশেষে আর দাঁড়ালাম না। ইতি কে বলে চলে এলাম ইতি অনেক বার থাকতে বললো ওর সাথে কিন্তু কিছুই ভালো লাগছিলো না আমার। কোথায় একটা চাপা কষ্ট ছিলো তার সাথে রাগ ও। ভার্সিটি থেকে বের হবার সময় উনাকে দেখালাম বন্ধু দের সাথে বসে আড্ডা দিতে। হয়তো উনি আমায় খেয়াল করে নি। কিন্তু আমি খেয়াল করেছি! নিতি বসে ছিলো উনার পাশে, মাথা রেখেছিলো উনার ঘাড়ে! আমি শুধু চোখের দেখা দেখেই চলে এলাম।

আনমনে হাঁটছিলাম রাস্তায়, অনেকটা সময় ধরে হাঁটছি কিন্তু মটেও খারাপ লাগছিলো না হাঁটতে। পুরো আকাশ জুড়ে এখন রোদ, আবহাওয়া কিন্তু ঠান্ডা। প্রকৃতি টা অনেক সুন্দর। আশপাশ মানুষের তেমন ভিড় নেই। আমি রাস্তার একপাশে আস্তে আস্তে হাঁটছি। হুট করেই একটা গাড়ি এসে আমার সামনে দাঁড়ায়। হঠাৎ করেই গাড়ি টা আসায় আমি খানিকটা ভয় পেয়ে যাই। আমি ভাবনা ভেঙে যায়। আমি চোখ তুলে গাড়ির দিকে তাকাই। সামনে তাকাতেই আহিয়ান এর রেগে যাওয়া মুখ টা দেখতে পেলাম। আমি প্রথমে বোঝার চেষ্টা করলাম এটা কি সত্যি নাকি। মানে আসলেই কি এটা আহিয়ান না আমার চোখের ভুল।

নাহ সত্যি, এটা আহিয়ান’ই। উনি গাড়ি থেকে নেমে আমার সামনে দাঁড়ালেন। দেখে মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে। আমাকে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন..
– কোথায় যাচ্ছো?

– বাসায়!

– একা একা কেন যাচ্ছো। আমার জন্য অপেক্ষা করলে কেন?

– আপনি তো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন আমি ভাবলাম দেরি হবে তাই!

– তাই! তাই তুমি এভাবে চলে এলে। তুমি জানো আমাই পাগল হয়ে তোমাকে খুঁজছিলাম। পুরো ভার্সিটি খুঁজেছি তোমায় আর তুমি কিনা না বলে চলে এলে।

– ….. ( নিশ্চুপ )

– কি হলো কথা বলছো না কেন?

– বাসায় যাবো।

আহিয়ান আমার কথা শুনে আরো রেগে গেলেন কিন্তু তা বহিঃপ্রকাশ করলেন না। আমার হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন। অতঃপর নিজে গাড়িতে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন…
– কি হয়েছে?

– কিছু না।

– ভার্সিটিতে কেউ কিছু বলেছে?

– না।

– তাহলে এভাবে কথা বলছো কেন? ( ধমকে বলেন )

আমি উনার ধমকে চুপ হয়ে যায়। উনিও চুপ, দু’জনেই নিরব। নিরবতা ভেঙ্গে উনি বলেন…
– তোমার যদি বাসায় যাবার জন্য এতো তাড়া থাকতো তুমি তখন ওখানে এসে আমায় বলতে পারতে।

– কোথায় যেতাম?

– যেখানে আমি ছিলাম।

– আপনার বন্ধুদের সামনে!

– হ্যাঁ কেন?

– আচ্ছা একটা কথা বলুন তো?

– কি বলো?

আমি চোখ বন্ধ করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে উনার দিকে তাকিয়ে বলি…
– আপনার বন্ধুরা জানে আপনার আর আমার বিয়ের কথা।

উনি ভ্রু কুঁচকে বলেন…
– না, এখনো বলি নি কেন?

– কেন‌ বলেন নি? না মানে আপনি বললেন আপনি যেখানে ছিলেন সেখানে যেতে মানে আপনার বন্ধুদের সামনে তাহলে তখন ওদের কি বলতেন আপনি।

আমার কথা শুনে উনি খানিকটা অবাক হয় তবুও শান্ত ভাবেই বলেন…
– নিহা! এমনটা না যে আমি বলতাম না। তুমি আমার স্ত্রী তাও বিবাহিত।‌ এটা আজ জানলেও মানুষ জানবে কাল হলেও জানবে। আজ বলিনি কারন এরকম কোনো টপিক নিয়ে কথা হয়নি।

তাহলে আমার ব্যাপারে কথা বলতেও উনার টপিক লাগবে। কিন্তু এই ব্যাপার টা আমার জন্য স্বাভাবিক কারন আমার মতো মেয়েকে নিজের স্ত্রী পরিচয় দিলে উনার মান সম্মান থাকবে না। এটা আমি এখন বুঝতে পেরেছি। একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে উনাকে বলি….

– আমার একটা উপকার করবেন।

– উপকার?

– হ্যাঁ!

– কি উপকার?

– আপনার আর আমার বিয়ের কথা আপনি ততোদিন কাউকে বলবেন না যতদিন না আমি বলতে বলি।

আমার কথা শুনে উনি ধতমত খেয়ে যান। হয়তো ভাবতে পারে নি আমি এমন কিছু একটা বলবো। আমার থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলি…
– যদি এটা তোমার ইচ্ছে হয় তাহলে আমি জোর করবো না কিন্তু একটা কথা মনে রেখো এর জন্য তোমাকে অনেক ভুগতে হবে।

আমি উনার কথা’র মানে কিছু বুঝলাম না। কি বলতে চাইলেন উনি আমায় ভুগতে হবে। কিন্তু কেন? এই প্রশ্ন উনাকে আর জিজ্ঞেস করলাম না। উনি ড্রাইভ করতে শুরু করেন। কিছুক্ষণ ড্রাইভ করার পর উনি বলে উঠেন…
– আমাদের ব্যাপার‌টা যাতে কেউ না জানতে পারে তাই তুমি একা একা চলে এলে তাই না। ( হেসে বললেন )

আমি কথা শুনে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু আমি তো এমন কিছু চায়নি। আমি তো রেগে চলে এসেছিলাম। তাহলে উনি এই কথা কেন বললেন। ভুল বুঝলেন উনি আমায়। বুঝলে বুঝুক আমার কি তাতে হুহ।
.
বাড়িতে আসার পর গাড়ি থেকে নেমে সোজা নিজের ঘরে চলে এলাম। মা’র সাথে দেখা হয় নি তাই ফ্রেশ হয়ে মা’র রুমে গেলাম। দেখি উনি বই নিয়ে বসে আছেন। মা আমাকে দেখে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করেন “আজকের দিন কেমন কাটলো”।
আমি হেসেই উওর দিলাম খুব ভালো। একটুপর উনিও আসলেন। মা’র সাথে কথা বললেন। সবাই একসাথে দুপুরে খাবার খেলাম। উনি আমার সাথে আর কথা বলেনি আমিও বলেনি। রাগ কি উনার’ই আছে নাকি আমার ও আছে। তাই আমিও আর কথা বলতে যায় নি।

দুপুরে খাবারের পর কোথায় বের হলেন তিনি কিন্তু কোথায় আমি জানি না। কাল অফ ডে ভার্সিটি অফ। পরশু আবার ক্লাস। ভাবতেই অবাক লাগে যেই ভার্সিটিতে এতোদিন যাবার জন্য আমি পাগল হচ্ছিলাম এখন সেইটাই অসহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।‌ বেলকনির দোলনায় বসে ছিলাম। মাথা থেকে এখনো নিতি কথা বের করতে পারি নি। হঠাৎ একটা স্কুটি নিয়ে একজন কে ঢুকতে দেখলাম কিন্তু কে এটা? দেখে তো আহিয়ান মনে হচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি দোলনা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে উঁকি দিতে লাগলাম। দেখি হেলমেট খুলে আহিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে ইশারায় নামতে বলল। আমি তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে এলাম।

নিচে নেমে দেখি একটা স্কুটি’তে হেলান দিয়ে উনি দাঁড়িয়ে আছে‌। আমাকে আসতে দেখে হাতে থাকা হেলমেট টা আমাকে পড়িয়ে দেয়। আমি বোঝার চেষ্টা করছি উনি কি করতে চাইছে। উনি আমাকে স্কুটি দেখিয়ে বলে…
– পছন্দ হয়েছে!

– আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলি।

উনি হেঁসে বলেন…
– যাক কোনো জিনিস তোমার পছন্দ হয়েছে তাহলে!

হেলমেট খুলে…
– এটা আমার!

– তোমার কি মন হয়!

– আমি তো চালাতেই পারি না। আর বড় কথা হলো এটা চালিয়ে আমি কি করবো।

– ভার্সিটিতে যাবা।

– কিহহহ? কেন? আপনি কোথায় থাকবেন?

উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলে…
– সকালের কথা এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেছো।

– কোন কথা!

– বিয়ের কথা।

– ওহ হ্যাঁ মানে না মনে আছে।

– তো? যখন আমাকে সবাই জিজ্ঞেস করবে তুমি আমার গাড়ি তে কি করো তখন আমি কি বলবো সবাইকে। বলো!

– হ্যাঁ এটাও ভাবা’র বিষয়।

উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলে..
– মানুষ বলে খাটো দের নাকি শরীরে রগে রগে বুদ্ধি থাকে কিন্তু তোমার তো হাঁটুর নিচে।

হাত হেলমেট সহ কোমরে রেখে…
– ওহ্ তাহলে কি আপনার বুদ্ধি অনেক নাহ। তাহলে এটা বলুন যতদিন না স্কুটি চালানো শিখছি ততোদিন আমি কি ভার্সিটিতে না যেয়ে থাকবো। কারন একদিনে তো আমি আর স্কুটি চালানো শিখতে পারবো না তাই নাহ্!

– জানি আমি সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না। এখন বসো আমার পিছনে।

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে উনার পিছনে বসি। অতঃপর উনি আমাকে একটা ধমক দিয়ে বলে…
– ধরে বসো! পরে গেলে তখন কে দেখবে?

আমি বিড় বিড় করতে করতে উনার ঘাড়ে হাত রাখি। উনি স্কুটি চালাতে শুরু করে। আর আমাকে বলে খেয়াল রাখতে কিভাবে কি করছে। কিন্তু সমস্যা হলো আমি পিছনে বসে তেমন কিছু’ই বুঝতে পারছি না।
কিছুক্ষণ চালানোর পর উনি চালানো হঠাৎ থামিয়ে দেন। অতঃপর আমাকে বলে…
– নামো!

আমি সাথে সাথে নেমে পড়ি। উনিও নেমে পড়ে আমাকে বলে…
– বসো!

অবাক হয়ে বলি…
– আমি!

উনি আশপাশ তাকিয়ে বলে…
– চারপাশে কি আর ভূতনি আছে।

দাঁতে দাঁত চেপে…
– বসছি।

আমি বসার পর উনি আমার পেছনে বসে। তারপর আমাকে হাতে ধরে শিখিয়ে দেন কোনটা কি! অতঃপর আবার চালাতে শুরু করে। এবার আমরা একটা পার্কে এসে পড়ি। হেলমেট পড়ার কারনে কেউ হয়তো উনাকে চিনছে না কিন্তু সবাই তাকিয়ে আছে।‌ এতো কিছুর মধ্যে সকালের কথা প্রায় মাথা থেকে বের হয়ে গেল।

#চলবে….
#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here