#ভালোবাসার_রংবদল
#পর্বঃ১৩
#Saiyara_Hossain_Kayanat
“আদ্র আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছেন?? আমার প্রচন্ড ভয় লাগছে আদ্র।”
আদ্র শীতল কন্ঠে বললেন-
—”তোকে মেরে ফেলবো বলেছি বলে ভয় পাচ্ছিস না-কি শুভি!!”
আমি জানালার কাছ থেকে দূরে সরে আদ্রর সাথে চিপকে বসলাম। বাহিরের এমন ঘুটঘুটে অন্ধকার আর গুমোট পরিবেশটা দেখেই ভয়ে গাঁ শিউরে উঠছে আমার। তার চেয়ে ভয়ানক হলো এই কনস্ট্রাকশন সাইড। হয়তো বাড়িটা পুরোপুরি সম্পূর্ণ রূপ পাওয়ার আগেই কনস্ট্রাকশনের কাজ থেমে গেছে। আশেপাশে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না অন্ধকারে। শুধু মাত্র এই বাড়িতেই কিছুটা আলো দেখা যাচ্ছে। আমি বাহির থেকে নজর সরিয়ে আদ্রর শার্টের হাতার দিকটায় খামচে ধরে ভয়ে ভয়ে বললাম-
—”বার বার আমাকে মেরে গুম করে ফেলার কথা বলছেন কেন? আমার ভয় লাগছে আপনার এমন কথা শুনে। আপনি এই কনস্ট্রাকশন সাইডে নিয়ে এসেছেন কেন? আপনি সত্যি সত্যিই কি মেরে ফেলবেন না-কি আমাকে??”
আদ্র আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললেন-
—”ভয় যখন পাচ্ছিস তাহলে আবার আমার কাছেই কেন চেপে বসছিস?”
আমি আদ্রর এক হাত জড়িয়ে ধরে বললাম-
—”মস্তিষ্ক আমাকে আপনার প্রতি ভয় জাগিয়ে তুলছে কিন্তু মন মানছে না। মন বলছে আপনাকে ভরসা করতে। তাই আপাতত আমি আমার মনের কথাই শুনছি। এখন আপনি বলুন বার বার আমাকে মেরে ফেলার কথা বলছেন কেন? কি করেছি আমি?”
আদ্র আমার কথায় হাসলেন। অন্যায় হাসি যাকে বলে। অসময়ে অপ্রত্যাশিত মুহূর্তের হাসিই হচ্ছে অন্যায় হাসি। এই মুহূর্তে ওনার এমন ঝংকার তোলা হাসিতে পুরো গাড়ি কেঁপে উঠছে। ওনার হাসির শব্দ গুলো আমার কানে ঝনঝন করে বারি খাচ্ছে। উনি হাসতে হাসতেই বললেন-
—”এই কথা বলেছি তোকে ভয় দেখানোর জন্য। তুই সেই কখন থেকে বিরতিহীন ভাবে কান্না করেই যাচ্ছিলি। আর আমার সাথেও কোনো বলছিলি না তাই আমি ইচ্ছে করেই তোকে ভয় দেখিয়েছি যেন ভয়ে তোর কান্নাকাটিও থেমে যায় আর তুই যেন আমার সাথে কথাও বলিস। দেখ আমি যেমনটা ভেবেছিলাম ঠিক তেমনটাই হয়েছে। তুই চুপচাপ বাচ্চাদের মতো ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে ছিলি।”
আদ্র হাসছেন কথা গুলো বলে আর আমি বেকুব বনে গেলাম ওনার কথায়। আদ্র হাসতে হাসতে হুট করেই হাসি থামিয়ে দিলেন। আচমকা আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। এতো জোরেই চেপে ধরলেন যে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যাচ্ছে। উনি একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। কোনো কথাই বলছেন না। আমি ওনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানো চেষ্টা করছি কিন্তু ওনার শক্তির কাছে হেরে যাচ্ছি। হঠাৎ করে আমার জামার কাধের দিকটা ভেজা অনুভব করছি। গরম তরল জাতীয় কিছু আমার কাধে গরিয়ে পরছে। আচ্ছা উনি কি তাহলে কান্না করছেন!! আমি আবারও নিজেকে ছাড়ানো চেষ্টা করছি উনি এবার আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধিরলেন। আমার শরীরের সব হাড়গোড় মনে হচ্ছে এক সাথে গুটিয়ে নিতে চাইছেন উনি। আমি মুখে কিছু বলছি না। উনি প্রায় অনেকটা সময় পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে আমার দু গালে হাত রেখে অসহায় কন্ঠে বললেন-
—”খুব জোরে মেরেছি তাই না শুভি?? অনেক বেশি ব্যাথা পেয়েছিস?? অনেক কষ্ট দিয়েছি তোকে তাই না পিচ্চি?? আমি আসলেই খুব খারাপ সব সময় তোকে কষ্ট দেই, তুই সত্যিই বলিস আমি অসভ্য লোক। তুই এক কাজ কর আমাকেও একটা চড় দে তবেই যদি একটু সুবুদ্ধি হয় আমার। আমি তোর ভালোবাসার যোগ্যই না। তাই বার তোকে কষ্ট দিয়ে ফেলি। কেউ কি ভালোবাসার মানুষকে এভাবে থাপ্পড় দেয়!! খুব ব্যাথা পেয়েছিস গালে শুভি!!!”
উনি একনাগাড়ে কথা গুলো বলেই আমার পুরো মুখে এলোপাথাড়ি চুমু খাচ্ছে। আবারও আমার গাল দু’হাতে আগলে নিয়ে বললেন-
—”এবারের মতো আমাকে মাফ করে শুভি। আর কখনো তোকে কোনো কষ্ট পেতে দিবো না। ভুলেও কখনো তোর গায়ে হাত তুলবো না প্রমিজ করছি আমি। এই লাস্ট বারের মতো মাফ করে দে প্লিজ শুভি।”
আদ্র আবারও আমার সারা মুখে, গালে অগণিত ভাবে চুমু খাচ্ছে। কি সব পাগলামি করছেন উনি!!থামার কোনো লক্ষনই নেই।
আমি আদ্রকে জড়িয়ে ধরে ওনার বুকে মাথা ঠেকিয়ে শান্ত গলায় বললাম-
—”ভালোবাসি আদ্র। খুব খুব বেশিই ভালোবাসি আপনাকে। আমি জানতাম আপনি কখনো বদলাবেন না। আমার বিশ্বাস ছিলো আপনার ভালোবাসার রঙ কখনো বদলাবে না। ভালোবাসি আদ্র।”
আদ্র আমার মাথা তুলে কপালে একটা গভীর চুমু দিয়ে। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। খুশিতে গদগদ করে বললেন-
—”আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি শুভি। নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি তোমাকে। প্রমিজ করছি সারাজীবন তোমাকে এই বুকে আগলে রাখবো। আর কে বলেছে তোমাকে আমার ভালোবাসার রঙবদলায় নি!!! ভালোবাসার বদলেছে। আগের থেকেও অনেক বেশি রঙিন হয়েছে একদম রংধনুর মতো।”
আমি কিছু বললাম না শক্ত করে ওনার পিঠের দিকের শার্ট খামচে ধরলাম। সবার ভালোবাসা বদলে গেলেও এই মানুষটার ভালোবাসা কখনো বদলাবে না আমি জানি।
———————
“আচ্ছা আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন? আর এটা কার বাড়ি??”
অসম্পূর্ণ বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে আদ্রকে জিজ্ঞেস করে বসলাম কথাটা। আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-
—”এটা আমাদের বাড়ি। শুধু তোর আর আমার বাড়ি। আজ থেকে আমরা এখানেই থাকবো।”
আমি ওনার কথা শুনে চমকে উঠলাম। বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম-
—”আমাদের বাড়ি মানে?? কবে করলেন এইসব? আর আজ থেকে এখানে থাকবো কি করে? বাড়ি তো এখনো তৈরি-ই হয়নি।”
আদ্র আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে বাড়ির ভিতরে যেতে যেতে বললেন-
—”আমাদের বিয়ে যখন ঠিক হয়েছে তখনই আমি এই বাড়ি করার প্ল্যান করে রেখেছিলাম। বিয়ের পর পরই আমার এতো দিনের জমানো সব সঞ্চয় আর একটা লোন নিয়েই এই বাড়ির কাজ শুরু করেছি। ভেবেছিলাম আমাদের বিবাহবার্ষিকীতে তোমাকে গিফট করবো। কিন্তু দিন দিন আম্মুর এমন ব্যবহার দেখে আমি এই বাড়ি কাজ খুব দ্রুত শুরু করে দিয়েছি। এই পনেরো দিন ধরে এই বাড়ির কাজেই দিন রাত ব্যস্ত ছিলাম। আর কে বললো এখানে থাকা যাবে না!! সামনে তাকিয়ে দেখ।”
সামনে তাকিয়ে দেখলাম ছোট্ট একটা রুম খুব সুন্দর করে গুছানো। তেমন বেশি কিছু নেই শুধু প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস। রুমটা ভালো করে দেখে বুঝলাম আদ্র এতদিন এখানেই থাকতেন। ওনার জামাকাপড় আর কিছু জিনিস পত্র আছে রুমে।
“আপনি এখানে একা একা থাকতেন? ভয় করতো না আপনার?”
কিছুটা বিস্ময়ের সাথে প্রশ্নটা করলাম। আদ্র আমাকে খাটে বসিয়ে দিয়ে বললেন-
—”একা একা না, আমি রাতে এখানে থেকেই সব কর্মীদের দিয়ে কাজ করাতাম। এখানে প্রতিদিনই অনেক কর্মী থাকে। কিন্তু আজ বৃষ্টির কারনে এখানকার কারেন্টে কিছু প্রব্লেম হয়েছে তাই সব কাজ বন্ধ আর এই জন্যই চারপাশে এমন অন্ধকার ভূতুড়ে পরিবেশ দেখা যাচ্ছে।”
আমি চুপ করে বসে বসে ভাবছি এই লোকটা নিরব থেকে একা একা কতো কিছুর প্ল্যান করে রেখেছে। আর আমাকে একটু কিছু বুঝতেও দেয় নি। মানুষটা আসলেই খুব অদ্ভুত। আর অদ্ভুতভাবেই আমাকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসে।
চলবে…..
(গল্প লিখতে বসেছি এমন সময় ভাইয়া ফোন দিয়ে বললো রেডি হতে আমাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাবে। ব্যাস এই কারনেও আজ গল্প লিখতে এতো দেরি হয়ে গেল। আর তারাহুরো করে লিখতে গিয়ে আজকের পর্বটা খুব অগোছালো হয়ে গেছে। আমি খুবই দুঃখিত আজকের জন্য। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা রইলো।❤️)