ভালোবাসি প্রিয় পর্ব -০৫

#ভালোবাসি_প্রিয়
পর্বঃ০৫
#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)

এই যে, মিস লা*ল টমেটো খুব রুপের অহংকার তোমার তাই না। তুমি রনির গালে থা*প্প*ড় দিয়েছ। অবশ্য তোমার ঐ নরম হাতের থা*প্প*ড় খেয়ে ভালোই লেগেছে আমার। সেদিন বেঁ*চে গেছিলে এক বুড়োর জন্য আজ তোকে কে বাঁ*চা*তে আসবে?আজ তোর এমন অবস্থা করব যেন কু*কু*রে ও তোর দিকে ফিরে না তাকাই। তখন এই রনির কাছেই তোর আসতে হবে। আমার পায়ে পরতে হবে তোর।

দেখুন “অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সয়ে দুইজনে সমান অপরাধী”। আপনি আমার সাথে অ*স*ভ্য”তা”মি
করেছেন ,বাজে ভাষা ব্যবহার করেছেন, আমি বাধ্য হয়েছি আপনাকে থা*প্প*ড় দিতে। তবুও আপনার শিক্ষা হয় নি।আজ আপনি মেয়েদের সাথে অ*স*ভ্য*তা*মি করছেন ‌, খারাপ ভাষা ইউজ করছেন‌, এমন ও তো পারে আপনার এই অপকর্মের ফল আপনার স্ত্রী, কন্যা কে ভোগ করতে হলো। প্রকৃতির বিচার বলে একটা কথা আছে । আল্লাহ ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না।

মিষ্টি কথায় তুই আমাকে ভুলাতে পারবি না।এই নির্জনে ‌কেউ তোর মিষ্টি কথা শুনতে আসবে না। তোর রুপের অহংকার আজ আমি শেষ করব।

রনির কথায় অনেক ভ*য় পেয়ে গেলাম। আসলেই তো জায়গা টা নির্জন,কোন‌ মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। আমি শীতল। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমার বান্ধবী আয়াতের সাথে ভার্সিটি তে যাওয়া আসা করি। কিন্তু কিছু দিন আয়াত অসুস্থ থাকার কারণে আমার একার যাওয়া আসা করতে হচ্ছে।রনি ছেলেটা বড়লোক বাবার একমাত্র সন্তান। চেহারার মধ্যে ব*খা*টে ,গুন্ডা গুন্ডা ভাব।ওর কাজ হচ্ছে মেয়েদের উ*ক্ত্য*ক্ত করে বেড়ানো। অথচ কেউ কখনও প্রতিবাদ করে নি। কিছু দিন আগে ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরছিলাম , তখন রুনি আমাকে প্রপোজ করে , কিন্তু আমি রাজি না আমাকে তু*লে নিয়ে যাওয়ার হু*ম”কি দেয়। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই একটা মধ্যবয়সী লোকের আগমন ঘটে। লোকটা রনিকে উদ্দেশ্য করে বলে,কি হচ্ছে এইখানে ? আমি অনেক্ষণ যাবৎ নোটিশ করছি তুমি এই মেয়েটার সাথে অ*স*ভ্য আচরণ করছ।

আর তোমাকেও বলি মেয়ে ,পায়ে জুতা আছে না? জুতা খুলে এসব কুলাংগারদের সোজা করতে হয়।

ভদ্রলোকের কথায় সাহস পেয়ে রনিকে থা*প্প*ড় দিয়ে দেই। তখন ও বুঝতে পারি নি এই থা*প্প”ড় দেওয়া টা আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াবে।

কি রে কি এতো ভাবছিস?যত‌ই ভাবিস তোকে আজ কেউ বাঁ*চা*তে আসবে না।

আমার ভ*য়ে হাত পা কাঁপতে শুরু করছে।এই নির্জন জায়গায় আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই আমাকে সাহায্য করার। আমি আয়াতুল কুরসি পড়তে লাগলাম। মাথা ঘুরাচ্ছে আমার ,চোখে ঝাপসা লাগছে। ঝাপসা চোখে দেখলাম রনি আমার হিজাব ধরে টান দিয়েছে। এরপর আর কিছু মনে নেই আমার ।মাটিতে লুটিয়ে পরি আমি।

ভেতরে আসতে পারি কুয়াশা মা?

জ্বি আন্টি আসুন । বাসাটা আপনাদের , নিজেদের রুমে আসবেন অনুমতি নেওয়ার কি আছে?

বাসাটা শুধু আমাদের না এখন থেকে তুমি ও এই পরিবারের একজন সদস্য। আমি তো তোমার কাছে ঋণী হয়ে আছি মা। সেদিন তুমি যদি আমাকে ব্লাড না দিতে হয়তো আমি আজকের দিন দেখতে পেতাম না।
সেই ঋন ভালোবাসা দিয়ে শোধ ‌করার জন্য তোমাকে আমার ছেলের বউ করে নিয়ে এসেছি।

এইভাবে বলবেন না আন্টি।

এই আন্টি কে কি আম্মার জায়গা দেওয়া যায় না?হয়তো তোমার আম্মার মতো ভালোবাসা দিতে পারব না ,তবে মন থেকে একটা কথা বলতে পারব ভালোবাসি প্রিয়। এইখানে কালো শাড়ি,তার সাথে ম্যাচিং পেটিকোট, ব্লাউজ হিজাব আর কিছু গহনা আছে,পরে রেডি হয়ে নাও। আসলে বিয়ে টা তো হুট করে হয়েছে।তেমন কাউকে জানানো হয় নি। তাই ছোট খাটো একটা বৌভাতের আয়োজন করা হয়েছে।তবে তোমাকে আলাদা জায়গায় বসানো হবে। শুধু মহিলারা আসবে দেখতে। তোমার বাবা মাকে ও বলা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো তারা এসে পরবে।

আমি শাড়ি পরতে পারলে ও হিজাব বাঁধতে পারি না । কখনো হিজাব করি নি। সমস্যা টা এইখানেই হয়েছে। শাড়ি পরে বসে রয়েছি কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও হিজাব পরতে পারছি না।

আমি কি হেল্প করব?

রাজের কথায় পেছন ফিরে থমকে গেলাম আমি।মুগ্ধ চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে রয়েছি।রাজ ও আমার সাথে ম্যাচিং করে কালো পাঞ্জাবি পরেছে।কালো রঙ রাজের গায়ের সৌন্দর্যকে হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

কুয়াশা আমি কি হিজাব বাঁধতে তোমাকে সাহায্য করবো?

আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে হিজাব বাধায় খুব এক্সপার্ট আপনি। কতগুলো মেয়ের মাথায় হিজাব বেঁধে দিয়েছেন?

এই তো তোমার মধ্যে ব‌উ ব‌উ ভাব টা দেখা যাচ্ছে।ব‌উদের তো এমনই হওয়া উচিত সব কাজের কৈফিয়ত নেওয়া ‌। অবশ্য আমি কোন মেয়ের মাথায় হিজাব বাঁধি নি।তার জন্য তো ইউটিউব আছে। ইউটিউব দেখে তোমাকে হেল্প করতে পারি যদি তুমি চাও।

ঠিক আছে।
রাজ ইউটিউব দেখছে আর যত্নের সাথে হিজাব বেঁধে দিচ্ছে। না চাইতেও বারবার রাজের দিকে চোখ চলে যাচ্ছে।

দেখ কুয়াশা , আমি তোমার বিয়ে করা বর। আমার উপর তোমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।তাই আমাকে দেখতে হলে সামনাসামনি দেখ, এইভাবে লুকিয়ে দেখার কোন প্রয়োজন নেই।

রাজের কথায় বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম। কিন্তু রাজকে বুঝতে দেওয়া যাবে না যে আমি তাকে দেখছিলাম। বাজখাঁই গলায় বললাম, নিজেকে হিরো ভাবার কোন কারণ নেই। আমি আপনার পাঞ্জাবির ডিজাইন দেখছিলাম, আপনাকে নয়।
আহ্

কি হলো?

আপনি কি আমাকে আলপিনের আঘাতে মে*রে ফেলতে চাচ্ছেন? দিলেন তো আমার মাথায় ফু*টা করে।

লেগেছে বুঝি? দেখি ক‌ই লেগেছে? সরি আসলে আমি বুঝতে পারি নি।

থাক আপনার দেখা লাগবে না। দূরে থাকবেন আমার থেকে। সবসময় শুধু কাছাকাছি আসার বাহানা খুঁজেন।এর‌ই মধ্যে দেখি বাবার ফোন। হ্যাঁ বাবা বল।

কেমন আছিস মা?

যতটা খারাপ থাকব বলে ভেবেছিলাম তার তুলনায় ভালো আছি।

আমি জানতাম মা ,রাজ তোকে অনেক ভালো‌ রাখবে , সুখে রাখবে।

তোমরা কখন আসবে বাবা?

শীতল এখন ও ভার্সিটি থেকে বাসায় আসে নি। শীতল ফিরলেই আসবো।

ঠিক আছে বাবা। তাড়াতাড়ি এসো তোমাদের সবাইকে অনেক মিস করছি।

আমারাও তোমাকে অনেক মিস করছি। তোমার আম্মা তো সকাল থেকে তোমার পছন্দের সব রেসিপি রান্না করছে। বারবার আমাকে এসে জিজ্ঞেস করছে আমরা কখন যাব?মনে হচ্ছে কোন‌ বাচ্চা তার নানু বাড়ি যাওয়ার জন্য বায়না করছে।

হ্যালো মিস বোরকাওয়ালি, যাহ্ বাবা ম*রে টরে‌ গেল নাকি কোন‌ সাড়াশব্দ নেই।

চোখের মুখে পানির ছিটা পরতেই‌ একজন সুদর্শন পুরুষ দেখতে পেলাম। কিন্তু রনি কোথায়? আমি ও জ্ঞান হারানোর আগে যেমন ছিলাম তেমন‌ই রয়েছি।তার মানে আল্লাহ রক্ষা করেছেন আমাকে। আপনি এইখানে কিভাবে আসলেন?

আমি বাসায় ফিরছিলাম। বাসায় যাওয়ার একটু তাড়া থাকার কারণে এই শর্টকাট রাস্তা দিয়ে এসেছি। আমি দূর থেকে দেখছিলাম ছেলেটার সাথে আপনার কথা কা*টা*কা*টি হচ্ছে। কিন্তু যখনই ছেলেটা আপনার হিজাবে টান দেয় আপনি মাটিতে লুটিয়ে পরেন।আর ছেলেটা ও ভ*য় পেয়ে পালিয়ে যায়।

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

ধন্যবাদ দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। মানুষ মানুষের জন্য। একজন বিপদে পরলে অন্যজন সাহায্য করবে এইটাই তো নিয়ম। চলুন আমি আপনাকে বাসায় পৌছে দেই।

না না তার কোন প্রয়োজন নেই। আমি যেতে পারব।

চলবে ইনশাআল্লাহ…..
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here