#ভালোবাসি_প্রিয় (১৯)
#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)
ভালো করে দেখতে যাবো তার আগেই রাজ এসে বলল , এইখানে কি করছ তুমি? আমি তোমাকে সারা বাড়ি খুঁজে বেড়াচ্ছি। নাকি বর ছেড়ে যাবেনা বলে এইখানে এসে লুকিয়ে রয়েছ?
আপনি নিজেকে কি মনে করেন হ্যাঁ? আমি যখন ইন্টার পড়াতাম ঐ কলেজে একজন দপ্তর ছিল, কিন্তু ভাবখানা এমন নিত যেন তিনিই কলেজের প্রিন্সিপাল। আপনার ভাবখানা ও হয়েছে এমন।দেখতে তো হিরো আলম অথচ নিজেকে কিং খান শাকিব মনে করেন।এ কথা টা বলতেই রাজ আমার হাত দুটো ওর হাতের মধ্যে নিয়ে বলল, আমি কিং খান শাকিব হতে চাই না কুয়াশা। আমি তোমার মনের কিং হতে চাই। যেইখানে শুধু রাজ নামক ব্যক্তির বসবাস থাকবে,শায়ানের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। দেবে কি আমাকে সেই সুযোগ?বলবে কি #ভালোবাসি_প্রিয় ।
আমি খুশি মনে ভালোবাসি প্রিয় বলতে যাব তার আগেই রাজ হো হো করে রাজহাঁসের মতো হেসে উঠে বলল, কেমন দিলাম হিরো আলমের ডায়ালগ?
অ*স*ভ্য লোক একটা দিলেন তো আমার ফিলিংস এর দফারফা করে।
বাহ্ কুয়াশা! আমার জন্য কিছু ফিল হয় বুঝি তোমার?এই বল না কি ফিল কর?
বলব না। কোন দিন ই বলব না। অ*স*ভ্য লোক একটা।
কুয়াশা জানো তোমার মুখে অ*স”ভ্য কথা টা শুনতে আমার অনেক ভালো লাগে। একদম বুকে এসে বিঁধে অ*স*ভ্য কথা টা। আর একবার বলো প্লিজ।
আপনি কোন দিনই ভালো হবেন না। অ*স*ভ্য লোক।
বাবা গাড়ি পাঠিয়েছে। অনেকক্ষণ যাবৎ ড্রাইভার আঙ্কেল অপেক্ষা করছে, তাড়াতাড়ি চলো। আর হ্যাঁ বাবাকে আমি বলে দিয়েছি তোমার জন্য শাকসবজি আর ছোট মাছ কিনতে। শাকসবজি ছোট মাছ খেয়ে চোখের জ্যোতি বাড়িয়ে তারপর আসবে।
আমি চলে গেলে আপনার কোন কষ্ট হবে না?
প্রশ্নই উঠে না। বরং আমার আরো ভালো লাগবে। তোমার জন্য তো আমি শান্তি করে ঘুমোতে পারি না। বুকের উপর আটার বস্তার মতো পরে পরে নাক ডেকে ঘুমাও। অনেক দিন পর একটু শান্তি করে ঘুমোতে পারব। তুমি কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি চলো।
আমাকে তাড়িয়ে দেওয়ার খুব তাড়া দেখছি আপনার। তবে একটা ব্যাপার আমি নিশ্চিত আপনার আর বাবার মধ্যে নিশ্চয় কোন চক্কর চলছে ,যা আমি জানি না।
কুয়াশা লেট হচ্ছে কিন্তু। ড্রাইভার আঙ্কেল কতোক্ষণ অপেক্ষা করবে।
যাচ্ছি তো। আম্মা , বাবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। ভেতর থেকে কান্না দলা পাকিয়ে আসছে।মনে হচ্ছে আমার হৃদয়ের এক অংশ এই বাড়িতে রেখে যাচ্ছি। অবশেষে ১ ঘন্টার জার্নি শেষ করে বাবার বাড়ি পৌঁছালাম। কলিং বেল দিতেই আম্মা দরজা খুলে দিল। মনে হচ্ছে আমারই অপেক্ষায় ছিল। আমাকে দেখেই আম্মা জ*রি*য়ে ধরে মুখে অজস্র চু*মু যে ভরিয়ে দিয়ে বলল, কেমন আছো মা? নতুন আম্মা পেয়ে এই আম্মা কে মনে পড়ে না বুঝি?
খুব মনে পড়ে আম্মা। তোমাদের খুব মিস করি আমি। বাবার কথা জিজ্ঞেস করতে যাবো তার আগেই বাবা এসে বলল, তোমাদের ভালোবাসা বাসি শেষ হলে আমার মেয়েটা কে ভেতরে আসতে দাও । অনেক টা পথ জার্নি করে এসেছে। বাবাকে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমার সামনে সুস্থ সবল একটা মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে।বাবা তুমি কেমন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ খুবই ভালো মা। এখন তুই আমার কাছে আছিস এখন আরো বেশি ভালো থাকব।
তাহলে তুমি যে বললে অসুস্থ?
অসুস্থতার কথা না বললে তো তুই আসতি না মা।তাই একটু মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছে।
আমি গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,এইরকম আর কখনো করবে না বাবা। আমার কষ্ট হয় তো।
পা*গ*লী মেয়ে। আমি কিন্তু সহজে তোকে যেতে দিচ্ছি না।
আচ্ছা বাবা একটা সত্যি কথা বল তো। তোমার আর রাজের মধ্যে কিসের চক্কর চলছে?
অনেক কিছুই তোর অজানা রয়েছে রে মা।সময় হলে সব জানতে পারবি। সেদিন দেখবি সিজদায় লুটিয়ে পড়বি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করার জন্য। এখন যা ফ্রেশ হয়ে খেতে বস। অনেক দিন পরে একসাথে সবাই মিলে মজা করে খাব।
আমি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আমার সব পছন্দের সব রেসিপি রান্না করা হয়েছে। আমি এসে বসতেই আম্মা ভাত মেখে খাইয়ে দিতে লাগল। অনেক দিন পরে আবার আম্মার হাতে তৃপ্তি সহকারে খেলাম।রাজের কথা খুব পড়ছে।না জানি কি করছে মানুষ টা।
দেখতে দেখতে কেটে গেল এক সপ্তাহ।এই এক সপ্তাহে আমি বুঝতে পারছি আমি রাজকে ঠিক কতটা ভালোবেসে ফেলছি। রাজ বিহীন একেক টা দিন যেন আমার কাছে এক বছরের সমান মনে হয়েছে। আমি রয়েছি আমার জ্বালায় এর মধ্যে আবার জামিয়া প্যারা দিচ্ছে ওর হয়ে শায়ান ভাইয়াকে প্রপোজ করার জন্য। আমার ও ইচ্ছা আছে শায়ান ভাইয়া কে ফেস টু ফেস দেখার তাই আমি ও রাজি হয়ে গিয়েছি।
সকালের নাস্তা সেরে বোরকা পড়ে রেডি হয়ে নিলাম।এরই মধ্যে দেখি জামিয়ার আগমন ঘটল আমাদের বাসায়।
বাহ্ জামিয়া! শায়ান ভাইয়ার তো আজ তোর থেকে চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়বে। শায়ান ভাইয়া আজ তোকে এই রুপে দেখে কিছুতেই এক নারীতে আসক্ত হয়ে থাকতে পারবে না। আমি ও আজ দেখব কিভাবে শায়ান ভাইয়া আমার বান্ধবীর প্রেমে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারে।
আমার ভ*য় লাগছে কুয়াশা। ভাইয়া যদি আমাকে প্রত্যাখ্যান করে আমি সত্যিই ম*রে যাবো রে। বড্ড বেশি ভালোবাসি আমি শায়ান নামক মানুষ টা কে।
আরে ইয়ার নো টেনশন ডু ফুর্তি। তুই আমার একটা মাত্র বেষ্টি , তোর জন্য আমি সব করতে পারব। প্রয়োজনে ঐ মেয়েটা কে ভাইয়ার জীবন থেকে সরে যেতে বলব।
এই জন্যই তোকে এতো ভালোবাসি কুয়াশা।লাভ ইউ। উম্মাহ।
থাক হয়েছে ।আমাকে আর ভালোবাসা দেখাতে হবে না। তুই চল তাড়াতাড়ি । আজকে আবার রাজ আসবে আমাকে নিতে। কিন্তু শায়ান ভাইয়ার সাথে আমরা কোথায় মিট করব? আচ্ছা শায়ান ভাইয়ার বাসা কোথায়?
ভাইয়ার বাসা আপুর বাসার কাছে।মানে আমাদের এইখানে থেকে বেশ জার্নির পথ। আমাদের কলেজের পাশে যে পার্ক টা রয়েছে ঐ খানে আসতে বলেছি ভাইয়া কে।
কিন্তু জামিয়া ভাইয়া এতো সহজে তোর সাথে মিট করতে রাজি হয়ে গেল?
আরে না। কিছু দিন আগে ভাইয়ার বিসিএস পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপ শেষ হয়েছে।আর ভাইয়ার পরীক্ষা নাকি খুবই ভালো হয়েছে। আমাদের এইদিকে হয়তো কোন কাজ আছে তাই আসবে।আর আমি ও এই সুযোগে ভাইয়া কে বলেছি মিট করার জন্য। কিন্তু ভাইয়া প্রথমে আমার একার সাথে নির্জনে দেখা করতে রাজি হয় নি । ভাইয়া বলল হাদিসে এসেছে ,কোন পুরুষ যদি কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হয় সেখানে শয়তান থাকে তৃতীয় ব্যক্তি।[সহীহ তিরমিযী,১১৭১]।পরে যখন বললাম আমার বান্ধবী ও থাকবে তখন রাজি হয়েছে।
দুইজনে গল্প করতে করতে পার্কে চলে এসেছি।এরই মধ্যে হঠাৎ জামিয়া চিৎকার করে বলল,দোস্ত ঐ যে দেখ শায়ান ভাইয়া । আমার দেখা সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ, আমার ভালোবাসার মানুষ।
শায়ান ভাইয়া পিছন ফিরে ফোনে কথা বলছিল। ভাইয়া ফোন রাখতেই আমি বলে দিলাম, ভাইয়া আমার বান্ধবী আপনাকে খুব ভালোবাসে। এতো গুলো দিন আমার চোখের সামনে ওকে ছটফট করতে দেখেছি শুধু মাত্র আপনাকে #ভালোবাসি_প্রিয় বলবে বলে। প্লীজ আপনি ওকে ফিরিয়ে দিবেন না। কিন্তু শায়ান ভাইয়া আমার দিকে ঘুরতেই যা দেখলাম তাতে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। কারন শায়ান ভাইয়া আর কেউ নয় স্বয়ং
চলবে ইনশাআল্লাহ…
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।