#ভালোবেসে_তোমায়
Writer: Jannat
পর্ব: ৩+৪
.
.
হায়রে মেয়ে ,তুই সামান্য এইটুকু মেনে নিতে পারবি না আর সেখানে দিব্যি সুখে শান্তিতে আমার স্বামীকে নিয়ে কিভাবে আমার গড়া রাজ্যে রাজত্ব করতেছিস …..
সময় তার আপন গতিতে পাড় হয়ে যাচ্ছে ।
তিশা প্রেগনেন্ট ৭মাস । খুব দূর্বল হয়ে পড়তেছে । রাতে তো একদম ঘুমাতেই পারে না । রুম থেকে বারান্দা আবার বারান্দা থেকে রুমে পায়চারি করে রাত পাড় করে দেয় ।
__এইইই (বালিশ দিয়ে মাইর দিয়ে)
__কি হল তিশু পাখি
__কি হয়নি বল ,আমাকে অশান্তিতে রেখে নিজে ঘুমাচ্ছ ক্যান ?
__আমি আর অশান্তি …! তাও তোমাকে ?
__তুমি না তো কে হ্যাঁ । আমি প্রেগনেন্ট এর জন্য দায়ী কে হ্যাঁ ? খাটাশ লোক একটা
__আরেরে তিশুপাখিটা রাগতেছে ক্যান ?
__একদম স্পর্শ করবে না আমায় ,তোমার বাবুরা আমাকে ঘুমাত দেয়না ক্যান হ্যাঁ (এলোপাথারি মাইর আর সাথে তো বকা আছেই) ।
আমি ঘুমাবো ,আমার বুঝি ঘুম পায়না (কাঁদো কাঁদো হয়ে)
__কিহ,ওদের এত্তবড় সাহস । আমার তিশুমনিকে জ্বালায় ,এদিকে এসো বকে দিচ্ছি (বুকের সাথে লেপ্টে নিয়ে) ।
তিশুপাখি …
__হু
__বাবুরা বড় হচ্ছে তো তাই তোমাকে জানান দিচ্ছে ,মাম্মাম আমরা আসতেছি । আর একটু সহ্য কর পাখিটা , আর কয়টাদিন তো ।
__তাইলে তোমাকে ক্যান জ্বালায় না ?
__বাবুরা তো তার মাম্মামকে বেশি ভালোবাসে তাই মাম্মামকে জ্বালায় । এখন আমার তিশুপাখিটা ঘুমাবে
__উহু , কোলে নাও
__এখন …! সকালে অফিস আছে তো…
__গোল্লায় যাক তোমার অফিস । তারাতারি কোলে নাও
__বাধ্য হয়ে কোলে তুলে নিল নয়তো হরতাল শুরু করবে ।
__ আমি না ঘুমানো পর্যন্ত আমাকে কোলে নিয়ে হাটবে ,বুঝেছ
__এ্যাআআআ…!
__এ্যাআআ না হ্যাঁ । তোমার বাবুরা যতক্ষন আমাকে জ্বালাবে ততক্ষন তোমাকে আমি জ্বালাবো ।
.
ফিক করে হেসে উঠল তিশা । তিশার হাসির শব্দে শাশুড়ি জেগে উঠছে ,,
__কিরে মা কি হইল ,হাসতেছিস ক্যান ?
.
শাশুড়ির কথায় হুস ফিরে পেল তিশা । সে তার অতিত হাতরে বেরাচ্ছিল এতক্ষন । ইশ কতটা যত্নে গড়া ভালোবাসা আজ তা সবই অতিত ।
শায়ন যদি পাশে থাকত তাইলে আজও এভাবে জ্বালাতো ।
চোখ বুঝে ঘুমানোর চেষ্টা করতেছে ।
মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে বড্ড মায়া হচ্ছে । কোন পাপের বিনিময় এমন সন্তানের মা হল কে জানে । হঠাৎ বিয়ে করে নিয়ে আসার জন্য মানতে পারেনি মেয়েটাকে কিন্তু তবুও কখনো তো ছেড়ে দিতে বলেনি । এমন ছেলের মা পরিচয় দিতেও বিবেকে বাধাঁ দেয় ।
তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে শাশুড়ি আর তিশার ২চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়তেছে ,কতদিন কারো ভালোবাসার স্পর্শ পায়নি ।
__আটকাতে পারলি না রে মা ?
__যে যেতে চায় তাকে আটকে কয়দিন রাখা যায়
__বুঝি না বাপু ,তোরা এযুগের হয়েও এমন কাজ কেমনে করলি । একটা বাচ্চা তো এডোপ্ট ও নিতে পারতি
__বলছিলাম মা । তবে অক্ষমতা তো আমার ,তার তো আর না
__কষ্ট হয়না এখানে থাকতে ..?
__বড্ড কষ্ট হয়, মা
__যাবি আমার সাথে ..?
__তিশার চোখেমুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠছে ।
যাবেনা মানে একটা আশ্রয়ের অভাবেই তো এখানে পড়ে থাকা ।
.
সকাল থেকে তিশা যাবতীয় ,যা যা প্রয়োজন আরকি সব গুছিয়ে নিচ্ছে । বিকেলে রওনা দিবে শাশুড়ির সাথে ।
শাশুড়ি নামাজ পড়তেছে ,হেনা সাওয়ার নিচ্ছে আর এদিকে অনাবরত কলিংবেল বেজেই চলছে ।
তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে দরজা খুলে দিয়ে ,তারাতারি সরে যেতে নিলে কাপড়ের সাথে পা আটকে পড়ে যেতে নিল কেউ একজন ধরে ফেলল ।
স্পর্শটা তিশার খুব ভালোভাবেই চেনা । কিছুক্ষনের জন্য যেন জমে বরফ হয়ে গেল । তার সেই চিরচেনা ২টো হাত তাকে আকরে ধরেছে । যে হাত ২দুটোকে ভরসা করে সব ছেড়ে এসেছিল ।
তবে আজ আর সেই স্মেলটা পাচ্ছে না । যে স্মেলটা পাগল করে দিত ,দূর থেকে তার উপস্থিতি জানান দিত ।
এই স্মেলটার জন্য কতই না পাগলামী করত । রিলেশন চলাকালীন যখন দেখা করত , শায়নকে দেখার সাথে সাথেই জড়িয়ে ধরে বুকে নাক গুজে দিয়ে প্রানভরে স্মেলটা নিঃশ্বাসের সাথে মিশিয়ে নিত শরীরের প্রতিটা শিরা-উপশিরায় ।
আবার যাবার সময় সেইম কাজটা করত ।
একদিন তিশা ফ্রেন্ডদের সাথে শপিং গেল ,হঠাৎ তার নাকে তার পাগল করা স্মেলটা এসে লাগল ।
সাথে সাথেই শায়নকে ফোন দিল ।
__তিশুপাখি ,আমি বিজি আছি । পরে ফোন করছি
__একদম ফাজলামী করবে না আমার সাথে। তুমি নিউ-মার্কেটে আছ …?
__ তোমাকে কে বলল হ্যাঁ ..?
__কেউ না ,তোমার উপস্থিতি কেউ বলে দিতে হবে ক্যান । তোমার শরীরের স্মেলটা আমি এখানে পেয়েছি
__হ্যাঁ, আমার বউটা সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেল গো এবার । এই স্মেলটা কি অন্য কারো থাকতে পারে না..?
__না পারে না । আমার হৃদয়ে হৃৎপিন্ডের চাইতেও অনেক গভীরে ,রক্ত আর শিরা-উপশিরারও অনেক গহিনে ,যে অস্পর্শ অবিনশ্বর রুহ আছে সেই রুহুবিন্দুর সাথে মিশে আছে তোমার স্মেল ।
সেই অনুভূতিটা কি মিথ্যা হতে পারে ।
__শপিং মলের আড়ালে দাড়িয়ে কথাগুলো শুনতেছিল শায়ন । শুধু শুনতেছিল না প্রানভরে অনুভব করার চেষ্টা করতেছিল কতটা ভালোবাসলে এতটা সিরিয়াস হতে পারে ।
তিশা কথাগুলো শেষ করে সামনে তাকানোর সাথে সাথেই থমকে যায় । শায়ন ২হাত দুদিকে ছড়িয়ে দাড়িয়ে আছে ,তিশা চোখ বুঝে এক দৌড়ে শায়নের বুকে জায়গা করে নিল ।
হ্যা তার অনুভূতি ,অনুভব গুলো ঠুকনো না ।
__এত ভালবাসিস ক্যান পাগলী ?
__যেদিন ব্যাখ্যা করতে পারব সেদিন তুমি আমি ভালোবাসাময় রের্কড গড়ব ।
.
চোখ ২টো ভিজে উঠল তিশার । শায়ন চোখের পানি মুছিয়ে দেওয়ার স্পর্শে হকচকিয়ে উঠল সে । চোখ মেলে তাকিয়ে
শায়নের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল ,চোখগুলো নামিয়ে ফেলল তিশা ।
এই দৃষ্টিতে ডুবে গিয়ে আজ খেসারত দিতে হচ্ছে ,বড্ড ঘৃনা করে এই দৃষ্টিটাকে আজ ।
__দেখে চলতে পার না ..?
__দেখতে দেখতে বড্ড ক্লান্ড এবার না হয় ,না দেখেই বাকীটা জীবন পাড় করলাম ।
__যদি পড়ে যেতে
__বেশি কিছু হলে মরেই যেতাম । সেইটুকুই তো বাকী আছে ।
.
খুব যত্নে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ,শায়নের দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল । শায়ন চেয়ে আছে ওর যাওয়ার পানে । কতদিন পর মুখটা দেখছে হিসেব নেই ,আর হিসেব করার সময়ই বা কোথায় । বেশ ভালোই আছে নতুন সঙ্গীকে নিয়ে । তবে বুকের ভিতর হঠাৎ চিনচিনিয়ে ব্যাথা করতে ,এই কি সেই তিশা । যার কাজল টানা চোখের জালে আটকে গেছিলাম ।আজ আর চোখে কাজল নেই কিন্তু চোখের নিচে কষ্টের কালো ছাপ পড়ে আছে….
.
.
চলবে…
#ভালোবেসে_তোমায়
Writer: Jannat
পর্ব: ৪
.
ভালোবাসা দিয়ে গড়া ,ভালোবাসাময় পৃথিবীটা আজ ছেড়ে যাবে ।
তিশা ফ্লাটের প্রতিটা কানায় কানায় হাত ছুঁয়ে দিচ্ছে ।
আর কখনো ফেরা হবে না তার নিজের হাতে গড়া স্বপ্নের স্বর্গে । স্বর্গটা আজ অন্য কারো দখলে । কি দরকার আর মিছে মিছে মায়া বাড়িয়ে ।
মায়া বাড়িয়ে যখন লাভ নেই তখন না হয় মায়া কাটিয়েই নিবে ।
__হেনা ,আসব?
__জী,আপু । আসেন
__নাও ভাই ,তোমার সবকিছু বুঝে নেও (সংসারের একগোছা চাবি হাতে দিয়ে)
__থাক না আপনার কাছে
__এত মূল্যবান জিনিস বহিবার শক্তি বা ইচ্ছা কোনোটাই নেই । আর তাছাড়া আমি চলে যাচ্ছি , তাই তোমার জিনিস তোমাকে বুঝিয়ে দিয়ে যাই
__চলে যাচ্ছেন মানে ?
__হ্যাঁ ,মা বলছে ওনার কাছে আমি থাকতে পারব । তাই শুধু শুধু তোমাদের সংসারে ঝামেলা নাই বা করলাম । আর তাছাড়া তোমাদের প্রাইভেসিরও প্রয়োজন আছে যদিও এতটা দিন তোমাদের সাথে ছিলাম ।
কি করব বল ,উদ্দেশ্যহীন পথে তো আর পা বাড়ানো যাবেনা আর এখন যেহেতু একটা ঠিকানার সন্ধান পেয়েছি ।
সো ,এই সংসার ছাড়া উচিত ।
শায়নের দেওয়া সকল গহনা তিশার হাতে তুলে দিল ।
যদিও এগুলো আমি ব্যাবহার করছি কিন্তু এগুলো তোমার বরেরই কিনে দেওয়া ।
তুমি না হয় ভেঙ্গে নতুন করে গড়ে নিও
__বর তো আপনারও , এগুলো আপনার কাছেই রাখা উচিত । আর আপনার গহনা আমি কেন নিব ?
__উচিত ,অনুচিত বুঝার
মত পরিস্থিতিতে নেই আমি ।
সবচেয়ে দামি জিনিসটাই তো নিয়ে নিলে ,তার দেওয়া ঠুকনো স্মৃতির বোঝা আমার কাছে নাই রাখলাম ।
__আপনি ওনার কাছেই দিয়ে যাইয়েন
__তার মুখ দর্শন করার ইচ্ছা আমার নেই বইন ।
আর শোনো তোমার প্রতি মায়া জন্মাই গেছে , অন্তত সপ্তাহে একদিন আমি ফোন দিয়ে জ্বালাব । বিরক্ত হলেও একটু কথা বল ।
ভালো থেক । সংসারটা সাবধানে রেখ, তোমার কাছ থেকে যেন কেউ কেড়ে না নেয় ।
.
তিশা রুম থেকে বের হয়ে আসল । হেনা ওর যাওয়ার পানে চেয়ে আছে ,শেষ উক্তিটা কি আমাকে অভিশাপ হিসেবে দিয়ে গেল ?
শায়ন বিকেল ৪টা বাজে গাড়ি নিয়ে বাসার সামনে আসল । মায়ের জন্য অপেক্ষা করতেছে । খুব কষ্টে বাসার বাহিরে পা রাখল তিশা , এই মুহুর্তে যদি তার রূহটা বের হয়ে যেত তাইলেও বোধহয় এতটা কষ্ট হত না ।
বারবার পা টা থমকে যাচ্ছে , ছেড়ে যাচ্ছে সে তার আপন ঠিকানা । ইশ মনে হচ্ছে ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখতেছে ,এই বুঝি স্বপ্নটা ভেঙে যাবে । আর তখন তিশা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদবে ,শায়ন তিশাকে বুকের মাঝে টেনে নিয়ে আদর করে দিবে ।
__এই পাগলী ,কি হল । তুমি জাননা, বড্ড কষ্ট হয় তোমার চোখের জল দেখলে ।
এই দেখ ,কতটা কাছে আছি তবুও কেন ভয় পাচ্ছ । তিশুপাখি কেঁদ না , সারা জীবন পাশে থাকব ।
.
কিন্তু না সে ঘুমের ঘোরে নেই ,সে এখন কঠিন বাস্তবতার মাঝে আছে ।
এক বুক আশা ,সারাজীবন এক সাথে থাকার শপথ করে শায়নের ২হাত আকরে ধরে পা রেখেছিল ।
ভেঙে গেছে শপথ আজ , হয়ে গেল জীবনটা গতিহারা ।
নীড়ের ঠিকানা তার জন্য না , শিমুল তুলার মত উড়তেছে জীবনটা আদৌ তার বিরতি আছে কিনা ।
গেটের সামনে আসার সাথে সাথে শায়নের চোখগুলো ছানাবড়া । তিশার পেট স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটা বড় ,তাইলে কি তিশা প্রেগনেন্ট । আর ও চলে যাচ্ছে ক্যান,এখানে ওর সমস্যা হচ্ছে কোথায় ।
গাড়িতে উঠে তিশা ওর শাশুড়ির পাশে বসল ,শায়ন মুখোমুখি ভিন্ন সিটে ।
তিশা একবারও ওর দিকে তাকালো না ,একদম স্বাভাবিক হয়ে বসে আছে ।
শায়ন কেন যেন ফ্যালফ্যাল হয়ে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে । ওদেরকে স্টেশনে পৌছে দিয়ে ,শায়ন বাসার দিকে পা বাড়াল । বুকটা একটু একটু শূন্য লাগতেছে । কিন্তু কেন লাগতেছে তা জানা নেই ,তার তো সবই আছে ।
.
শশুড়-শাশুড়ির সাথে দিনগুলো ভালোই যাচ্ছে তিশার । নিজের মেয়ের মত খেয়াল রাখতেছে তারা । এর মাঝে একবার ফোন দিয়ে হেনার সাথে কথা বলেছে ,তারপর নিজের থেকেই যোগাযোগ অফ করে দিয়েছে ।
হেনা আর শায়নের সংসারও খুব সুখেই কাটতেছে । হেনা প্রেগনেন্ট ,নিয়মিত চেকাব করছে । সবকিছু স্বাভাবিক আছে । তিশাকে একপ্রকার ভুলেই গেছে শায়ন ,তিশা নামের কেউ একজন ছিল কখনো এমনটা তার ধারনায়ও আসে না ।
বেশ আছে তার বউ আর অনাগত সন্তান নিয়ে ।
আর কয়েকটা দিন ,তিশার কোল জুঁড়ে আসবে তার বেঁচে থাকার শেষ আশা।
মাঝে মাঝে খুব ভয় হয় ,এতটা পথ এসে আল্লাহ যদি কেড়ে নিয়ে যায় । কি নিয়ে বাচবে ,বাঁচার জন্য তো প্রেরনা প্রয়োজন ।
আর তার অনাগত সন্তানই তার সেই প্রেরনা । খুব জ্বালায় বাবুটা ,ইশ কবে যে বুকে পাবে ,ছোট্র ২টো কোমল হাতে ছুঁয়ে দিবে ।
বুকভরা আশা নিয়ে বেঁচে আছে তিশা ।
শরীরটা বেশি ভালো যাচ্ছেনা ,মা-বাবাকে খুব মিস করতেছে । আজ অনেক দিন পর মায়ের নম্বরটায় ডায়েল করল । __হ্যালো…
__মা…
__কে তুমি..?
ভুল নম্বরে কল করেছ , আমার কোনো সন্তান নেই ।
__ সেই জন্য বুঝি আমাকে বারবার সন্তানহারা করে দিচ্ছ ?
__ফোনটা কাটতে গিয়েও থেমে গেল তিশার মা ,ফোনটা কানে চেপে রেখেছে ।
__শেষবারের মত কিছু একটা চাইব ।
__জলদি বল ,আমি বিজি আছি
__আমার উপর থেকে অভিশাপটা তুলে নাও ।
__অভিশাপ..!
__তোমাকে যেমন সন্তানহারা করে দিয়েছি তেমনি আমাকেও উপর আল্লাহ একবার না বারবার সন্তানহারা করে দিচ্ছে ।
এই অনাগত সন্তান ছাড়া আমার আর কেউ নিয়ে । প্লীজ কেড়ে নিও না তোমার অভিশাপ দ্বারা আমার বাচ্চাটাকে ।
আমার যে আর বেঁচে থাকার অবলম্বনই থাকবে না ।
কাঁদতে কাঁদতে ফোন কেটে দিল তিশা ।
মেয়ের কন্ঠটা তার কাছে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে । তার মন বলছে ,তার কলিজাল টুকরোটা ভালো নেই ।
দুনিয়াতে একমাত্র মা হচ্ছে আলৌকিক শক্তি যে চোখের চাওয়ায় সন্তানের মুখের ভাষা বুঝে নেয় ।
মেয়ের কান্না জড়িত কন্ঠ তাকে বড্ড জ্বালা দিচ্ছে , হয়ত অত্যাধিক কষ্ট পেয়েছে কিন্তু তিশা অশান্তিতে থাক এমনটা ভুলেও ধারনায় আসে নি ।
খোঁজ নিয়ে মেয়ের অসহ্যকর অবস্থা শুনে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে তার । তার মেয়ের এখন তাকে প্রয়োজন ,হ্যাঁ বড্ড বেশি প্রয়োজন ।
অনেক অভিমান করছে আর না , তার বুকে এনে রাখবে তার মেয়েকে ।
বাবাকে বলার পর সেও মুখটা ফিরিয়ে রাখতে পারেনি ,বেড়িয়ে পড়েন মেয়ের শশুড় বাড়ির উদ্দেশ্যে ।
মেয়েকে দেখে চোখ দিয়ে অজরে জল পড়তেছে ,আর অপ্রস্তুত ভাবে বাবা-মা কে দেখে নিজেকে সামলাতে পারেনি তিশা । বাবা-মাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতেছে । আজ যেন সকল কষ্ট,মান অভিমান চোখের জলের সাথে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে ।
তিশাকে নিয়ে যাবে তারা ,শশুড়-শাশুড়ি বাঁধা দিতে চেয়েও পাড়ল না ।
এই কয়েকদিনে মেয়েটা বড্ড মায়া জন্মাই ফেলছে ।
মিথ্যে সুখের সন্ধানে একদিন যে বাড়ি ছেড়ে এসেছে আজ আবার সেই বাড়িতেই পা রাখতেছে একটু সুখের আশায় ।
বাবার বাড়িতে দিনগুলো ভালোই কাটতেছে ,হয়ত মনের সুখটা নেই তবুও ভালো আছে । প্রেগনেন্টের পর থেকে হেনা বাসায় থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছে । শায়ন বাসায় আসার সাথে সাথেই আদুরে গলায় কোথায়ও ঘুরতে যাওয়ার আবদার করে বসল ।
বিকালে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল তারা ।
অন্যদিকে , তিশার লেবার পেইন উঠছে । তাকে নিয়ে বাবা-মা হাসপাতালে চলে গেছে । খুব কষ্ট হচ্ছে , সেই হাতটাকে খুব বেশী প্রয়োজন ।
হেনা যখন বাইকে বসে শায়নকে আষ্টেপিষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে ।
সেই মুহূর্তে তিশা লেবার পেইনের যন্ত্রনায় হাসপাতালে বেডটাকে খামচে ধরল….
#চলবে