মন গহীনে পর্ব -১৯+২০

#মন_গহীনে

#পর্বঃ১৯

#দোলন_আফরোজ

তমা আবিরের সংসার সুন্দর চলছে। কাব্যদের অনুষ্ঠানের পর ওরা তারেক রহমান এর বাসায় দ্বিরাগমন এ বেরিয়ে যায়। কাব্য কেউ বলে তিথীকে নিয়ে আসতে, তিথী ই যায়নি।
ফোনে কথা ও বলতে চেয়েছে তারেক রহমান তানিয়া বেগম, কথাও বলেনি সে।

কয়েকদিন কেটে গেছে, তিথী কাব্যর রুমেই থাকে কিন্তু তাদের মাঝে বিরাজ করে ভারত পাকিস্তান এর বর্ডার।
কাব্য ছাড়া বাকি সবার সাথে তিথীর সম্পর্ক খুবই ভালো। সেলিম সাহেব শাহানারা বেগম কায়েস সবাই খুব আদর করে তাকে। শুধু পছন্দ করে না অর্না, তা তিথী ভালোই বুঝতে পারে। কিন্তু তবু সে তার তরফ থেকে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে অর্নার সাথে মিশার। অর্নার ই তিথীর আদিক্ষ্যেতা পছন্দ হয় না।
এর মাঝে বাড়ির কথা খুব করে মনে হয়েছে, কেঁদেছেও অনেক। এসব দেখে পরেও কতোবার কাব্য বলেছে ওবাড়ি যেতে, যাবেই না ও। মেয়েটা আসলেই অনেক জেদি। যা বলে তাই।যেখানে সে বিয়েটাই মেনে নিতে পারেনি সেখানে বাবা মা তার সাথে যে এমন টা করলো তা কি করে মেনে নিবে।

সবাই একসাথে ডিনার করে তিথী কাব্য রুমে যায়। কাব্য তার কিছুক্ষণ পর রুমে ঢুকে। কিন্তু কি ব্যাপার, তিথী কই?
বেলকনিতে খুঁজে, ওখানেও নাই। ওয়াশরুমেও কোন শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। কাছে গিয়ে দেখে ভিতর থেকে দরজা লক। রাত সাড়ে ১০ টা বাজে। কাব্য বিছানায় বসে ফেসবুক স্ক্রল করছে। অনেকটা সময় হয়ে গেছে তিথী এখনো বেরুচ্ছে না। হঠাৎ যখন ওর মনে পড়ে তখন ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে ১১.২৪ বাজে। কাব্যর টেনশন শুরু হয়ে গেছে। কি হলো মেয়েটার,এখনো ওয়াশরুমে কি করে ও? আর কোনো সাড়াশব্দ ও তো পাওয়া যাচ্ছে না।

ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে ডাকে, তিথী কি করো তুমি? ভিতরে আছো তুমি?

কোনো শব্দ নাই।

এই তিথী, কথা বলছো না কেনো?প্লিজ সাড়া দাও।

————

আর নিতে পারছি না আমি।কিছু তো বলো প্লিজ।

————

দরজা ভেঙে ফেলবো কিন্তু। টেনশন হচ্ছে খুব। প্লিজ খোলো তিথী।

দরজা ভাংতে যাবে তখনই খট করে শব্দ হয় ভিতর থেকে। কাব্য যেনো প্রান ফিরে পায়।

তিথী ভিতর থেকেই বলে, ঠিক আছি আমি।

আমি ভিতরে আসবো, বলেই সে ভিতরে যেতে নেয়।

তখনই তিথী বলে এই না।🥺

সামনে আসো আমার।

তিথী এখনো ভিতরেই আছে।

না পেরে কাব্য ই দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে নেয়।
দরজাটা হাত দিয়ে চেপে ধরে তিথী।আমি আসতে না করলাম না? বলেই কান্না করে দেয়।

এবার কাব্যর বুকের ভিতর টা মুচড় দিয়ে উঠে। এই কি হয়েছে প্লিজ বলোনা। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার। বলেই রাগের চোটে দরজায় হালকা চাপর মারে। একবার সামনে আসো প্লিজ। কেনো বুঝতে পারছো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ( কাতর কন্ঠে)

তিথী দরজা একটুখানি ফাঁক করে মাথা নিচু করে দাঁড়ায় কাব্যর সামনে।

কাব্য ওর চোখে চোখ রাখে। এ চোখে আজ ভয় লজ্জা দুটোই দেখতে পাচ্ছে কাব্য। দরজা টা আরেকটু ফাঁক করে তিথীর দুহাত তার হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে বলবে না আমায়?

তিথী লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ফেলে। কি বলবে সে কাব্য কে, কিভাবেই বা বলবে।

কোনো সমস্যা হয়েছে?

টুপ করেই দু ফোটা অশ্রু কাব্য হাতে পড়ে।

কাব্য তিথীর হাত টা ছাড়িয়ে, ৫ মিনিট ওয়েট করো, আমি এক্ষুনি আসছি, বলেই বেড়িয়ে যায় সে।
ঠিক ৮ মিনিট পর ফিরে আসে। তিথী এখনো ওয়াশরুমেই। দরজায় নক করে কাব্য ওর হাতে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দেয়। শপিং ব্যাগ টা নিয়ে তিথী তো অবাক। সেনেটারি ন্যাপকিন ও আরো প্রয়োজনীয় জিনিস আছে ব্যাগে।

সে তো কিছু বলিনি,কি করে বুঝলো তবে।
ভাবনা চিন্তা করে ফ্রেশ হয়ে বেরুতে নিবে কিন্তু বেরুতে পারছে না সে। কি করে যাবো এখন উনার সামনে, সবটাই তো বুঝে ফেলেছেন উনি। ছিহঃ কি জানি ভাবছেন এখন। 🫣
আসলে এ বাড়ি আসার পর এটাই তিথীর ফার্স্ট পিরিয়ড। আর নিজের বাড়ির মানুষের থেকে কিভাবে এসেছে এটা তো জানা ই। তাই তার এ ব্যাপারে কোনো প্রিপারেশন ছিলো না। আর কাব্য যে কি করে বুঝে গেলো সে তাও বুঝতে পারছে না। এখন কিভাবে সে ঘরে যাবে তাই ভাবছে। এসব ভাবনা চিন্তার মাঝেই কাব্যর গলা শুনতে পায়।

কি ব্যাপার বের টের হবে নাকি ওখানেই ঘুমানোর প্ল্যান। বালিশ পাঠাবো?

তিথী খট করে দরজা খুলে সোজা এসে নাকে মুখে কম্পল দিয়ে শুয়ে পরে।
কাব্য বেশ বুঝতে পারে মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে। তাই সেও আর কথা না বাড়িয়ে বেড সুইস টা অফ করে তার জায়গায় শুয়ে পরে।

মাঝরাতে হঠাৎ ই কাব্যর ঘুম ভেঙে যায়। সে বুঝতে পারে না কিসের শব্দ হচ্ছে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুনে শব্দ টা তার পাশ থেকেই হচ্ছে। হাত দিয়ে টেবিল ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে দেখে তিথী পেটে হাত রেখে কাতরাচ্ছে।

এই তিথী কি হয়েছে তোমার? বলেই ওকে ধরে দেখে এই এসির মাঝেও সে ঘেমে নেয়ে একাকার।

এক ঝটকায় তিথীকে বুকে চেপে ধরে। কি হয়েছে জান বলো না? কষ্ট হচ্ছে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে?

পিটপিট করে তাকায় তিথী। ওকে খুব ক্লান্ত আর বিদ্ধস্ত লাগছে। তিথীর মুখটা দেখে কাব্যর ভিতর টা কেঁপে উঠে। একটা হাত তিথীর পেটে রেখে বলে এখানে কষ্ট হচ্ছে?

হালকা মাথা নাড়ে তিথী।

কেনো আমায় বললে না এ সময় পেইন হয় তোমার?

প্রথম দুদিন হয়।
অস্ফুট স্বরে বলে তিথী।

এখন তো ঘরে পেইন কিলার ও নেই মনে হচ্ছে। বলে ঘড়িতে সময় দেখে নেয়। রাত ২.৩৭ বাজে।
কখন থেকে হচ্ছে ব্যাথা?

অনেকক্ষণ!

কপট রাগ দেখিয়ে, আমায় বললে না কেনো তবে? এই কষ্ট টা কি পেতে হতো? একটু ওয়েট করো। দেখছি কি করা যায়। বলে উঠে যায় কাব্য। ওর সারা রুম খুঁজে, কোনো হট ব্যাগ পায়না। সে অবশ্য জানতোই পাওয়া যাবে না এই রুমে। তবু বৃথা চেষ্টা করলো।
হট ব্যাগ আছে মা বাবার রুমে। কিন্তু এতো রাতে কি তাদের ডাকা ঠিক হবে? দুজনের ই হাই ব্লাড প্রেশার। তাই আর তাদের ডাকে না।
নিচে রান্না ঘরে চলে যায়। একটা পাতিলে গরম পানি করে নেয়৷ পানির বোতলে নিয়ে উপরে চলে আসে। তিথী এখনো ওভাবেই পেটে হাত দিয়ে পরে আছে। তিথীকে সোজা করে শুইয়ে পেটের উপর আরেকটা কাপড় দিয়ে তার উপর গরম পানির বোতল টা চেপে ধরে।
কিছুক্ষণ কাতরানোর পর তিথী শান্ত হয় কিছুটা।

ভালো লাগছে এখন?

উপর নিচ মাথা নাড়ে তিথী।

ঘুমানোর চেষ্টা করো এখন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আমি, বলে তিথীর চুলে বিলি কাটতে থাকে।

আজ মায়ের কথা খুব মনে পরছে তিথীর। পিরিয়ড এর সময় টাতে মা ও এভাবে পেটের উপর হট ব্যাগ চেপে ধরে চুলে বিলি কেটে দিতো।
কাব্য কে কেনো যেনো আজ আপন মনে হচ্ছে খুব। মা বাবার কথা মনে পরছে। খুব ইচ্ছে করছে কাব্যর কোলে মুখ গুজে ইচ্ছে মতো কাঁদতে। কিন্তু সব ইচ্ছেকে প্রশ্রয় দিতে নেই। অজান্তেই চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।

এই কি হয়েছে? খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে? ( ব্যাস্ত হয়ে)

মাথা নাড়ায় তিথী। উহুম, ভালো লাগছে এখন।

আচ্ছা ঘুমাও এখন। বলে আবারো চুলে বিলি কাটে। তিথী ও চোখ বুজে নেয়।

সকালে তিথীর ঘুম ভাংগে আগে। ঘুম ভেঙে দেখে কাব্য ওভাবেই আধশোয়া হয়ে বসে আছে ওর মাথায় হাত রেখে। কি নিষ্পাপ লাগছে ওকে। আর এই প্রথম তিথীর কাব্যর জন্য বিরক্তি কাজ করছে না। কেমন যেনো ভালোলাগা কাজ করছে। মানুষ টা বাকি রাত ওর জন্য এভাবে বসে কাটিয়ে দিলো?সত্যিই কি ভালোবাসে? হয়তো। ভাবিতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওর।

তিথীর নড়াচড়াতে ঘুম ভেঙে যায় কাব্যর।

চোখ ডলতে ডলতে ঠিক হয়ে বসে, কখন যেনো চোখ লেগে গেছিলো বুঝতে পারিনি। ব্যাথা আছে এখনো?

উহুম। এখন আর ব্যাথা নেই।

কাব্য ঘড়ি দেখে সাড়ে ৮ টা বাজে। আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি শেফালী কে বলি এখানেই নাস্তা দিতে।

কেনো ঠিক আছি তো আমি? ডাইনিং এই খাবো। একবারে কলেজের জন্য রেডি হয়ে।

উহুম আজ কলেজে যেতে হবে না তোমার।

অবাক হয়ে তাকায় তিথী। কেনো?🙄

তুমি সুস্থ না।

এবার লজ্জা পায় তিথী। চোখ নামিয়ে বলে এটাকে অসুস্থ বলে না।

যাই হোক আজ যেতে হবে না। ফ্রেশ হয়ে আসো। নাস্তা করবো এক সাথে।

তিথীও বাধ্য মেয়ের মতো ওয়াশরুমে চলে যায়।কাব্যর সব কথা শুনতে আজ ভালো লাগছে।

সত্যিই সেই দুদিন আর তিথী কলেজে যায়নি।

সব আবার আগের মতো চলছে, শুধু তিথী কাব্যর সম্পর্কটা আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।কাব্য কে এখন আপন আপন লাগে।ওর সবকিছুই যেনো ভালো লাগে তার। এখন আর কাবির সিং ভাব টা নেই। অন্য সবার সাথে গম্ভীর, কথা কম বলে, তবে ওর কাছে একে পুরাই অন্যরকম। বেশ ভালো লাগে এটা তিথীর।

সেদিন কলেজে ক্লাস শেষে ফেরার সময় তিথী কলেজ গেট থেকে বেরুচ্ছে, কাব্য অনেকটা দূরে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
দুটো মেয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে দেখনা ছেলেটাকে, কি জোসসস। আরেকটা বলছে পুড়াই আগুন। ইচ্ছে করছে ওর আগুনেই পুড়ে মরি।

ফার্স্ট মেয়েটা বলে চলে এটেনশন নেয়ার ট্রাই করি।( মেয়ে দুটো হয়তো সেকেন্ড ইয়ারের)
ওর কাব্যর দিকে এগিয়ে যাবে এমন সময় তিথী গিয়ে ওদের সামনে দাঁড়ায়।

ছেলে দেখলেই ওর আগুনে পুড়ে মরতে মন চায়? আচ্ছা কাল কলেজে আসার সময় কেরুসিন আর দিয়াশলাই নিয়ে আসবো নে।

এই মেয়ে কে তুমি? কোন ইয়ারে পড়ো?

সিরাত মুনজারিন তিথী, ফার্স্ট ইয়ার,সাইন্স গ্রুপ, সেকশন এ।

এক মেয়ে থাপ্পড় দিতে নেয় আর সাথে বলে, চিনিস আমাদের? আমরা সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আর তোর কি জ্বলে এত্তো ডেসিং একটা ছেলে তোর মতো সুন্দরী কে পাত্তা দিচ্ছে না আর তাকে আমরা পটিয়ে নিতে যাচ্ছি?

তিথী হাত টা ধরে মুচড় দিয়ে বলে, আমাকেও তোরা চিনিস না। হি ইজ মাই হাসবেন্ড এন্ড ডোন্ট ডেয়ার টু লুক এট হিম। ফারদার আই উইল পিক আপ ইউর আইস।
বলেই রাগে ফুসফুস করতে করতে মেয়ে দুটোর সামনে দিয়েই চলে যায় ও কাব্যর কাছে।

কি ব্যাপার? মহারাণী এতো রেগে আছে কেনো হুম?এক ভ্রু উঁচিয়ে।

কিছুনা চলুন, বলেই কাব্যর সাথে বাইকে উঠে যায়।মেয়ে দুটোর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দুই আংগুলে ওর চোখ বরাবর মেয়েদের চোখ তাক করে যায়।

হা হয়ে আছে ওই মেয়ে দুটো।




চলবে…….#মন_গহীনে

#পর্বঃ২০

#দোলন_আফরোজ

হেনা বেগম তিথীর মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে আর নানার কথা শুনাচ্ছে। কাব্যর দাদীর কথা শুনাচ্ছে।
জানিস আমার মা তোকে খুব ভালোবাসতো। উনার খুব ইচ্ছে ছিলো তোকে উনার নাতবউ এর রুপে দেখবে।

আমাকে?কেনো?

জানবি সব জানবি। সময় হলে সবটা জানতে পারবি তুই।

আমার থেকে কি কিছু লুকাচ্ছো তোমরা? বলো না ফুপ্পি।

নারে কি লুকাবো।

আচ্ছা দাদীর কথা বলো।

ভাবী তোকে প্রথম বার দেখে একজোড়া বালা দিয়েছিলো মনে আছে?ওটা আমার মা ই তোর জন্য গড়ে রেখেছিলো। তোরা তো চলে গেছিলি অন্য কোথাও, প্রথম যেদিন তোর মুখ দেখবে সেদিন নিজ হাতে পড়িয়ে দিবেন ভেবেছিলো। কিন্তু তা আর হলো না। তাই ভাবী ই তাঁর অপূর্ণ কাজ টা করে।

মামনী আগে থেকেই জানতো? অবাক হয়ে।

এবার হেসে দেয় হেনা বেগম।

তখনই ওখানে কাব্য এসে তিথীর পাশে বসে পড়ে।
গাল ফুলিয়ে বলে সবাই খালি ওকেই ভালোবাসো, আমার আর কোনো দাম নেই এখন। মেকি রাগ দেখিয়ে।

হিংসে হিংসে। বুঝলে ফুপ্পি হিংসে হচ্ছে। কি হিংসুটে ছেলে হয়েছে তোমাদের।সরুন তো বলে হালকা ধাক্কা দেয়।

উহুম, ফুপ্পি আমাকেও তেল দিয়ে দাও।

না ফুপ্পি দিবে না। হিংসের চুটে এমন করছে দেখেছো।

আচ্ছা ফুপ্পি তুমি নিচে, ওই দিয়ে দিবে বলে চোখ মারে তিথীকে।

বড় বড় চোখ করে ফেলে তিথী, এই না, আমি তো করবোই না।

ওদের খুনশুটি দেখে হেনা বেগম হেসে চলে যান নিচে।

তিথীও উঠতে নিলে কাব্য ওর হাত ধরে নেয়। তুমি কই যাও পাখি? তুমি তো আমায় তেল মেখে দিবে।

পারবো না আমি, বলেই মুখ বাঁকিয়ে চলে যায় তিথী।

কাব্য ওখানে বসেই হাসতে থাকে। তিথী এখন আর ওর সাথে আগের মতো চুপচাপ থাকে না। সারাক্ষণ খুনশুটি করে। আগের সেই জড়তা টা আর নেই। কারনে অকারণে কাব্যর পিছে লেগে থাকে। এসব খুব এনজয় করে সে। বুঝতে পারছে সে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওদের মাঝে দূরত্ব টা রয়েই গেছে। ওটাও কেটে যাবে সেই আশাতেই আছে সে।

রাতে কাব্য ঘরে এসে দেখে তিথী শুয়ে পরেছে। ঘড়িতে সময় দেখে মাত্র ১০ টা বাজে। কি ব্যাপার অসুখ করলো নাকি? মুখ থেকে কম্বল সরাতে গেলেই তিথী কম্বল সরিয়ে খুব জোরে ভোঁ করে উঠে। ভয়ে বুকে হাত দিয়ে দুপা পিছিয়ে যায় কাব্য। বুকে ফুঁ দেয় সে।

তা দেখে তিথী হেসে কুটিকুটি হয়ে যায়।

কি অদ্ভুত সুন্দর সেই হাসি।কাব্য এক মনে তা দেখছে। সে কখনো তার সামনে তিথীকে এমন মন খুলে হাসতে দেখেনি। কতোটা প্রান চঞ্চল লাগছে আজ তিথীকে। কাব্যর বুকের ভিতর এক অদ্ভুত সুখানুভূতি হচ্ছে। তার পুতুল বউ টা যেনো এরকম ই হাসিখুশি থাকে সবসময় এই প্রার্থনায় করছে সে।

ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।

হা হা হা কাবির সিং কেউ ভয় পাইয়ে দিয়েছে এই তিথী, এবার বুঝতে পারছেন তো তিথী কে!

আমি তো আগেই বুঝতে পেরেছি তিথী কে। কিন্তু এটাতো বুঝতে পারছি না কাবির সিং কে। এক ভ্রু উঁচিয়ে।

অবাক হয়ে, এম্না কেনো, আপনি।

কাব্যর মুখ দেখে তিথী বুঝতে পারে কি বলে ফেলেছে সে।তাই দাঁত দিয়ে জিভ কাটে সে।

আমি? আচ্ছা তো কেনো আপনার আমার সম্পর্কে এই ধারণা হলো শুনি।

মাথা নিচু করে আছে তিথী।

আরেহ বলুন না শুনি।

মাথা নিচু করেই বলে, এমন রাগী গম্ভীর ভিলেন টাইপ তো কাবির সিং ই হয়। যে একটু ও ভালোবাসতে পারে না, রোমান্স এর র ও বুঝে না। খালি রাগ দেখাতে পারে।

এবার কাব্য বড় বড় চোখ করে ফেলে। ওর সারা শরীর এ কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। সে যা শুনছে তা কি সত্যিই। তার পুতুল বউ কি সত্যিই চাইছে সে রোমান্টিক হয়ে যাক। ধপ করে বসে পড়ে তিথীর সামনে। নেশালো কন্ঠে বলে, তুমি সত্যিই চাইছো আমি রোমান্টিক হয়ে যাই?

ওর এমন কন্ঠে কেঁপে উঠে তিথী। বুঝতে পারে বেখেয়ালে কি বলে ফেলেছে সে। এখন? এখন যদি রোমান্স এর র দেখাতে আসে তখন কি করবে সে। তাই ভেবে ভয়ে চুপসে যায়।

কাব্য তিথীর হাত দুটো তার হাতের মুঠোয় পুরে চোখে চোখ রেখে বলে ভালোবাসো?

চোখ দুটো তে অদ্ভুত মাদকতা লেগে আছে। তিথীর সারা শরীর আবারো কেঁপে উঠে। এই চোখ দেখে না করতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু সে তো সত্যিই ভালোবাসে না কাব্য কে। তবে ও আশেপাশে থাকলে ভালোলাগে ওর। তবে তা তো ভালোবাসা নয়।

এদিকে কাব্য ঘোরের মাঝে চলে গেছে। তিথীর এই চোখে ডুবে মরতে ইচ্ছে করছে তার। তিথীর তিরতির করা কাঁপা ঠোঁটে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। তিথীকে নিয়ে সুখ সমুদ্র পাড়ি দিতে ইচ্ছে করছে। এতোদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে ইচ্ছে করছে।

অবস্থা বেগতিক দেখে তিথী তৎক্ষনাৎ মাথা নাড়িয়ে একটু জোরেশোরেই বলে ভালোবাসি না। ভালোবাসি না আপনাকে।

ঘোর কাটে কাব্যর। নিমিষেই সব ইচ্ছে গুলো চুপসে যায় তার। হাত দুটো ছেড়ে অবাক হয়ে তাকায় তিথীর দিকে। তিথীও অসহায় চোখে তাকায়। বুঝতে পারে কাব্য এখন এই কথাটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। কিন্তু তার ও তো কিছু করার নেই। মন থেকে ভালো না বাসতে পারলে তো মেনে নিতে পারবে না কাব্য কে।

কাব্য নিজেকে সামলে নেয়। সেই খুব বেশি ভেবেছিলো। তারাহুরো করে ফেলেছে খুব। আর কিছুটা সময় দিতে হবে তার পুতুল বউ টাকে। কিন্তু সে জানে একদিন ঠিক ই ভালোবাসবে তার পুতুল বউ তাকে।তাই মুখে আবারো হাসি এনে তিথীর দিকে ঝুকে বলে, একবার শুধু ভালোবেসে দেখো, তোমার এই কাবির সিং কতোটা রোমান্টিক। এতোটা রোমান্টিক হবে সে যে তখন তোমার সামলাতে কষ্ট হয়ে যাবে। কন্ঠে নেশালো ভাব টা রেখেই।

এবার বেশ লজ্জা পায় তিথী। কোনো রকমে নিজেকে সামলে আবারো তার আগের রূপে ফিরে গিয়ে বাচ্চামো কন্ঠে বলে, এই জন্যই তো ভালোবাসবো না কখনো।

হাসে কাব্য, দেখা যাবে। বলে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে একটা এশ কালার ট্রাউজার আর হোয়াইট টি শার্ট পরে বেরুয়।

হা হয়ে আছে তিথী। সত্যিই তো তার কাবির সিং খুব সুদর্শন। তাই তো মেয়েরা ক্ষণে ক্ষণে ক্রাশ খায়। একটু সাবধানে থাকতে হবে তিথীর। আর আরেকটা কথা ভাবছে সে। ইদানীং অকারণেই কাব্য কে দেখে মুগ্ধ হয় সে। এটা কি ভালোবাসা নাকি তার টিনেজার বয়সের ভালোলাগা মাত্র।

এভাবে তাকিয়ো না জান, নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হয়ে যায়।

জান কথাটা শুনে সারা গায়ে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায় তিথীর, সেই সাথে তার বোকামোর জন্য লজ্জা ও পায় সে। নিজের লজ্জা কাটাতে বলে, আপনি দিন কে দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন, সারাক্ষণ আজেবাজে কথা বলেন।

তুমি যে এরকম চাহনি দিয়ে আমায় পাগল করে দিচ্ছো তার কি হবে?ভ্রু নাচিয়ে।

যাহ, আর কোত্থাও তাকাবো না আমি, বলেই আবার কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরে সে। এই এই রাগ করলে নাকি?

একদম কথা বলবেন না আমার সাথে।

হাসতে হাসতে বিছানায় এসে বলে, রাগলে কিন্তু তোমায় দারুণ লাগে, পুরাই অন্যরকম। গাল নাক সব লাল হয়ে যায়, টমেটোর মতো।বলেই আবার হাসতে থাকে।

চুপ আছে তিথী। তিথীর চুপ থাকা দেখে কাব্য বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। বিছানায় বসে কম্বলের উপর দিয়েই তিথীর গায়ে হাত দিয়ে বলে খুব বেশি রাগ করলে কি।

কোনো কথা নাই। এবার কম্বল কিছুটা টেনে মুখটা বের করে কাব্য। তিথীর মুখ দেখে কাব্য ভিতর টা দুমড়ে মুচড়ে যায়। এই কি হলো? কাঁদছো কেন? স্যরি, এই দেখো কান ধরছি, আর বলবো না কখনো উল্টো পাল্টা কথা, আর রাগাবো না তোমায়। অসহায় মুখ করে।

কাব্যর এমন অবস্থা দেখে তিথী উঠে বসে। নাক টেনে বলে, আব্বু আম্মু কে মিস করছি খুব।

যাবে ওখানে?

উচ্ছ্বাসিত হয়ে যায় তিথী। এক বাক্যে মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানায়। খুশি হয় কাব্য ও।

*****************

আজ প্রায় ৭ মাস পর এ বাড়ি আসছে তিথী। হুম তিথী কাব্যর বিয়ের প্রায় ৭ মাস হতে চলেছে।
রান্না ঘরে প্রচুর ব্যাস্ত তানিয়া বেগম। আজ কতো মাস পর উনার ছোট মেয়েটা আসবেন। কক্ষনো যেই মেয়েটা মাকে ছাড়া থাকতো না আজ ৭ মাস হয় মায়ের সাথে ভালো করে কথা পর্যন্ত বলেনি। আর তাছাড়া জামাই হবার পর কাব্য ও আজ প্রথম আসছে এবাড়িতে। আর আসবে তমা আবির ও।
তানিয়া বেগম তিথী কাব্যর আর আবিরের পছন্দের সব খাবার রান্না করছেন। উনি চাইছেন মেয়েরা আসার আগেই রান্না কমপ্লিট করতে। তাই সকাল থেকেই রান্না শুরু করে দেয়। আরো আগেই হয়ে যেতো, কিন্তু কাব্য সকালেই জানায় যে আজ ওরা আসবে। তাই একটু দেড়ি হয়ে গেছে।
তারেক রহমান ও তানিয়া বেগম এর সাথে টুকটাক সাহায্য করেছে। আজ অফিস যাননি উনি। মেয়েরা আসবে বলেই যাননি। হাতে একটা চায়ের কাপ নিয়ে ড্রেসিং রুমে বসে টিভিতে নিউজ দেখছিলো। এমন সময় কলিং বেলের আওয়াজে ছুটে যান তিনি। জানেন উনার মেয়েরাই হয়তো। দরজা খুলতেই দেখেন উনার ছোট্ট তিথী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে কাঁঠাল কালার শাড়ি। মেয়েকে দেখে উনি কিছু সময়ের জন্য ভরকে যান। উনার ছোট্ট মেয়েটা কি তবে সত্যিই বড় হয়ে গেছে? অন্যরকম সুন্দর লাগছে আজ উনার মেয়েকে।
বাবাকে এতোদিন পর দেখে আবেগ সামলাতে পারেনি সে। বাবার বুকে পরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। আজ কতোদিন পর বাবাকে দেখেছে। জড়িয়ে ধরেছে। এতোদিনের সব কষ্ট যেনো নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেছে।

তারেক রহমান এক হাতে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে চশমার ভিতর দিয়ে চোখের পানি মুছে মেয়েকে নিয়ে এগিয়ে যান ড্রয়িং রুমের দিকে। কাব্য গাড়ি পার্ক করে আসছে বলে লেট হচ্ছে।
রান্নাঘর থেকে ছুট্টে আসেন তানিয়া বেগম। এসেই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরেন উনি।
মেয়েকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দেন। তিথী কেঁদেই যাচ্ছে। কান্না করতে করতে হেচকি উঠে গেছে তার।

আমায় তুই ক্ষমা করে দে রে মা, যা করেছি তোর ভালোর জন্যই করেছি। হয়তো একটু তাড়াহুড়া করে ফেলেছি, কিন্তু বিশ্বাস কর এতে তোর ভালোই হয়েছে।।

কথা বলছে না তিথী। এখনো ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।

এতোক্ষণে কাব্য ও এসে দাঁড়ায় সেখানে। তিথীর কান্না এমনিতেই তার সহ্য হয় না। কিন্তু এতোদিনের চেপে রাখা মান অভিমান সব কান্না হয়ে আজ বেরিয়ে যাক। তবু ও তার বুক টা হু হু করছে। হয়তো বেশি তাড়াহুড়ো করেই চাপিয়ে দিয়েছে এই বিয়েটা তিথীর উপর। কিন্তু এটা ছাড়া তখন সে আর বিকল্প কিছু ভাবতে পারেনি। তিথীকে আর কোনো মতেই একা ছাড়তে চায়নি সে।

ওদের কান্নাকাটির পালা শেষ হলে তানিয়া বেগম এর চোখে পড়ে কাব্য কে৷ ওহ বাবা তোমাকে খেয়াল ই করিনি। মনে কিছু করো না।

তুমি আমার সাথে এতো ফর্মাল হচ্ছো কেনো চাচী। একটা কথাতেই কেমন পর করে দিলে। বলেই মুখ ফোলায় সে।

তানিয়া বেগম অবাক হয়ে বলে, কি করেছি বাবা। আমার কোন কথায় তুমি কষ্ট পেয়েছো?

তুমি আমায় তুমি তুমি করে কেনো বলছো?

মেয়ের জামাই কে কি কখনো তুই করে বলা যায়?

আমি আগে তোমার ছেলে, তারপর মেয়ের জামাই।আর সেই হিসেব করলে তুমি আমার শ্বাশুড়ি হও আর তোমাকে আপনি করে বলতে হবে, যা আমি কখনোই পারবো না।

আর কে আগে তোমার কাছে এসেছে? আমি নাকি তিথী? আমি আগে এসেছি, তাই আমার প্রায়োরিটি ই বেশি, আর সেই হিসেবে আমি আগে তোমার ছেলে, তারপর জামাই।

ইশ দেখেছো আম্মু কি হিংসুটে।

হিংসুটে হবো না? সবখানে শুধু তুমি ই মেইন প্রায়োরিটি হবে তা কি হয় নাকি?

আচ্ছা যান যান, আপনি সব প্রায়োরিটি নিয়ে বসে থাকুন। কিচ্ছু লাগবে না আমার, কারো আদর লাগবে না আমার। যাও আম্মু তোমার ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে থাকো।

ওদের খুনশুটি দেখে তারেক রহমান তানিয়া বেগম মিটমিট হাসছেন।তানিয়া বেগম বলেন হয়েছে থাক থাক, আর ঝগড়া করতে হবে না। তোরা দুজনেই তো আমার কাছে সমান।

হাহ ঝগড়ার কথা বলছো? তোমার মেয়ে সারাক্ষণ ওঁত পেতে থাকে আমার সাথে ঝগড়া করার জন্য।

তার মানে আপনি কি বুঝাতে চাইছেন আমি ঝগড়ুটে? কোমড়ে হাত দিয়ে।

তা নয়তো কি।

আচ্ছা ঠিক আছে, দেখাচ্ছি আপনাকে বলেই নজের ঘরে চলে যায়।

ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে কাব্য।

তারেক রহমান বলেন, তুমি ও ফ্রেশ হয়ে এসো।

হুম তুই ও ফ্রেশ হয়ে আয়, আমি এদিকে হালকা নাস্তার ব্যবস্থা করি।

এতো অস্থির হয়ো না চাচী।

আরেহ কিচ্ছু করছি না ফ্রেশ হয়ে আয় তুই।

কাব্য ঘরে ঢুকতেই তিথী তেড়ে যায় তার দিকে। বের হন এক্ষুনি আমার ঘর থেকে। ঝগরুটে মেয়ের রুমে থাকতে হবে না আপনার। কাব্য বুঝতে পারে তার পুতুল বউ ভয়ংকর রকম রেখে গেছে।

আরেহ তুমি তো আমার দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়ুটে বউ। তোমার এই ঝগড়া করাটাই তো আমি পছন্দ করি। বলে জড়িয়ে ধরতে নেয়।

এই না বলেই তিথী ওয়াশরুমে চলে যায়।
মিটমিটিয়ে হাসে কাব্য। তুমি সব সময় এমনই থেকো আমার সাথে। তোমার এই বাচ্চামোতেই আমি পাগলপারা।

কিছুক্ষণ পরেই তমারা চলে আসে। সবাই গল্পে সল্পে খুব আড্ডা দেয়। আবির কাব্য দেখা হয় প্রতিদিন ই। আড্ডা ও দেয় তবে আড্ডার সময়ের পরিমান টা কিছুটা কমেছে। দুজনেই যেহেতু বিবাহিত।

রাতে ডিনারের পর কাব্য আর আবির ছাদে বসে গল্প করছিলো। আবির একটা সিগারেট ধরে কাব্যর সামনে।

জানিস তবে কেনো প্রতিবার ই এই কাজ টা করিস।

স্যরি রে, অভ্যেস বশত করে ফেলি। কিন্তু তুই কিভাবে পারিস।

যার বিরহে এই সিগারেট কে সিগারেট কে সংগি করেছিলাম আজ সেই তো আমার সাথে। আর এতে ওর কষ্ট হয়। নিজেকে কষ্ট দিতে পারি কিন্তু জেনে বুঝে ওকে তো কষ্ট দিতে পারি না।

ভালোবাসা সত্যিই সুন্দর।

তমা তোকে কিছু বলে না?

না করেনি, তবে বুঝতে পারি ওর এসব পছন্দ না। তাই সারাদিনে তিন বেলার খাবারের মতো তিন টা খাই, তাও আবার স্পেশাল পার্মিশন নিয়ে।বলেই হু হু করে হাসে। ছেলেটা খুব প্রানোচ্ছল। মিশুক স্বভাবের।

কাব্য বরাবর এর মতোই চুপচাপ। মানুষের সাথে সে সব সময় কম কথা ই বলে, এমনকি বন্ধু বান্ধব এর সাথেও। সেই তোলনায় আবিরের সাথে ই তার কথা জয় বেশি। আর কথার খই ফুটে সব তিথীর কাছে গেলে।

তখন তিথী আর তমা আসে ছাদে। দুই বন্ধুকে এক সাথে দেখে ওখানে যায় না আর। ছাদের এক কোণে গিয়ে দাঁড়ায়। দুই বোন ওখানেই গল্প করতে থাকে। তখন তমা ই ডেকে জিজ্ঞেস করে কফি খাবে তোমরা?

আবির বলে মন্দ হয় না।

তমা চলে যায় কফি আনতে। তিথী ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। তখন আবির গিয়ে ওর পাশে দাঁড়ায়।

কি শ্যালিকা, তোমার সাথে তো সেভাবে কথাই হয়নি, বলেই ওরা কথা বলতে শুরু করে দেয়। দুজনেই বাচাল টাইপ তাই তাদের গল্প জমে ক্ষীর। তিথী এক পর্যায়ে প্রশ্ন করে আপুটি এতো কম কথা বলে আর আপনি তো আমার টাইপ, কিভাবে ব্যালেন্স করেন।

আমি ওর নিরবতাকেই ভালোবাসি। ভালোবাসি তার লাজুক চাহনি। তার প্রতিটা কাজে আমি মুগ্ধ হই প্রতিনিয়ত।

এতোটা ভালোবাসেন আপুটিকে?

যতোটা ভালোবাসলে নিজেকে ভুলে থাকা যায় ঠিক ততটাই ভালোবাসি তমাকে।

প্রশান্তির শ্বাস ছাড়ে তিথী।

আচ্ছা জিজু, আমার প্রতি কি এখনো রাগ আছে আপনার?

চুল গুলো এলোমেলো করে, তোমার প্রতি কোনোদিন ও রাগ ছিলো না আমার, পিচ্চি।

হালকা হাসে তিথী।

তখন ২ মগ কফি নিয়ে আসে তমা একটা কাব্য কে দিয়ে আরেকটা আবিরকে দিতে আসে।আবির কফি মগে চুমুক দিতে দিতেই কথা বলছে। তখন কাব্য এসে তিথীর সামনে মগ টা বাড়িয়ে দিলে তিথী বিরক্ত হয়ে বলে দেখছি দেখছি। বলে মগটা নিয়ে এক চুমুক খেয়ে কাব্যর হাতে মগটা ধরিয়ে দিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে ঠিক আছে।(এটা কাব্যর পুরনো অভ্যাস, বিয়ের দ্বিতীয় দিন থেকেই রেগুলার তাই হয়ে আসছে। চা কফি যাই হোক আগে তিথীর খেয়ে দেখতে হবে চিনি ঠিক আছে কিনা। তিথী বিরক্ত হলেও এই কাজ টা তার করতে হয় রেগুলার ই। সে আগে চিনি চেক করে দেয়ার পর ই মুখে নেয় কাব্য। তিথী হয়তো এই কাজের পিছনের রহস্য টা জানেই না।

এদিকে তমা আবির একবার নিজেদের দিকে আরেকবার তিথী কাব্যর দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। কাব্য বুঝতে পারছে, এতে অবশ্য তার কিছু যায় আসে না, খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে সে এক মনে কফি খেয়ে যাচ্ছে। ওদের কান্ড দেখে তিথী বলে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?🙄 চিনি চেক করছিলাম।

এবার তমা আর আবির শব্দ করে হেসে দেয়৷ হেসে দেয় কাব্য ও। তিথী কিছুই বুঝতে পারে না হলো টা কি ওদের।

কি ব্যাপার সবাই কি এক যোগে পাগল হলে নাকি?

এবার হাসির মাত্রা বেড়ে যায়।

তিথী বিরক্ত হয় এবার। ধুর পাগলের দল। থাকো তোমরা এখানে, আর করো সারা রাতভর পাগলামি, আমি যাই। বলেই হন হন করে নিচে নেমে যায় সে।




চলবে…
( আমি কখনো গল্প লিখে রিচেক দেই না, আসলে সেই সময় টা হয়ে উঠে না। টাইপিং মিস্টেক যদি হয়ে থাকে ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here