মন পাথরে হঠাৎ ঝড় পর্ব -১১+১২

#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_১১
Tahrim Muntahana

সূর্যটা উঁকি দিয়েছে মাত্র। হালকা বাতাসে সকাল টা একদম স্নিগ্ধ লাগছে। যে কারোর মন ভালো করে দেওয়ার মতো মনোরম পরিবেশ। এই মনোরম পরিবেশে আদর দাড়িয়ে আছে ছাদের রেলিং ঘেসে। চোখ মুখে বিষাদের ছায়া। মনের মধ‍্যে ঘুরছে নানান কিছু। শান্তি লাগছে না মনে।
কালকে রাতের কথা মনে হতেই আদর শক্ত করে রেলিং টা ধরে রইলো। বিষণ্নতা যেন কয়েকগুন বেড়ে গেলো। ভাবতে লাগলো কালকের কথা,

হাসান শিকদারের মোবাইল চেক করে ওরা একটি প্রাইভেট নম্বর থেকে ম‍্যাসেজ পায়। যেখানে লিখা ছিলো,

‘আর খুঁজার চেষ্টা করো না আহনাফ চৌধুরীকে। সে এখন আমার বন্দী। আমার উদ্দেশ্য সফল না হওয়া পযর্ন্ত সে আমার খাঁচায় থাকবে। আর যেদিন আমার উদ্দেশ্যে সফল হবে সেদিন ইনফরমেশন পেয়ে যাবে। তোমার প্রতিশোধকে সেদিন তোমার খাঁচায় দিয়ে যাবো।’

ম‍্যাসেজটি পড়ে সবাই অবাক হয়েছিলো। কি উদ্দেশ্য লোকটির? হাসান শিকদার জানায় লোকটি আর কখনো ম‍্যাসেজ পাঠায়নি। তাই সবাই ধরে নেয় আহনাফ চৌধুরী এখনো বেঁচে আছে। রাত গভীর হচ্ছে বলে হৃদান আদর দের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। কোনো কথা বলে না সে। আদর ও নির্জিব ছিলো তখন। হাসান শিকদারের ঠায় হয় কোডেটে! ভয়ংকর সেই কসাই খানায়!

হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আদর ভাবনা থেকে বের হলো। নড়লো না, চুপটি করে রইলো। আতইয়াব এসেছে। আতইয়াব বোনের মলিনতা বুঝতে পারলো। তাই কথা বাড়ালো না; যদিও তার অনেককিছু জানার ছিলো। ঘুরে চলে যেতে নিবে আদর বলে উঠলো,

কালকে কেন মিথ‍্যে বলতে বললাম এটাই জানতে চাইছো তো?

আতইয়াব থেমে গেলো। হ‍্যাঁ তার এটাই জানার ছিলো। আদর ঘুরে তাকালো আতইয়াবের দিকে। মলিন কন্ঠে বলল,

জানতে পারবে। তবে এখন না! কিছুটা পর। সে পযর্ন্ত অপেক্ষা করো ভাইয়া।

আতইয়াব মাথা নাড়িয়ে নিচের দিকে হাটা ধরলো। তার মাথাটাও ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সে এমন ম‍্যাচিউর গম্ভীর বোন চায়না; কিছুঘন্টা আগের সেই চঞ্চল ইমম‍্যাচিউর বাচ্চা বোনটাকে চায়। কবে আবার সবকিছু আগের মতো হবে? কবেই বা সব রহস‍্যের উন্মোচন হবে?
____________________

আতইয়াব হৃদান মুখোমুখি বসে আছে। আগের মতো দুজনের চোখে রাগ নেই। দুজনের চোখেই প্রশ্ন। দুজন ই আদরের দিকে প্রশ্নাত্মক চোখে তাকিয়ে আছে। কারণ আদর ই তাদের আসতে বলেছে। আদর নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় চা বানিয়ে নিয়ে আসলো। কিছুক্ষণ নিরাবতা পালন করে হৃদান বলল,

সুপারহিরো যে ডায়েরীটা দিয়েছে সেটি কোথায় আদর? তোমার বাবা মানে আমার মামা! একটা রাতেই সম্পর্কের পরিবর্তনটা দেখার মতো! তুমি আমি সম্পর্কে মামাতো ফুফাতো ভাই-বোন!

কে মামাতো বোন আপনার? আহনাফ চৌধুরী আমার বাবা নয়!

চমকে উঠলো হৃদান। কি বলছে আদর? একেক সময় একেক কথা কেন বলছে? তাহলে আহনাফ চৌধুরীর মেয়ে কোথায়? হৃদান কিছু বলবে তার আগেই আদর বললো,

কালকে যা বলেছি তার কিছু সত‍্য ছিলো কিছু মিথ‍্যে ছিলো। আমার বাবা হলো জার্নালিস্ট রাতাফ আহমেদ। গোপনে কাজ করছিলেন আহনাফ চৌধুরীর মিসিং রহস‍্য নিয়ে। আমার বয়স তখন ১১ বছর। বাবা জানতেন এই রহস‍্য বের করতে তাকে অনেক বিপদের মুখে পড়তে হবে। কিন্তু আহনাফ আংকেল তো বন্ধু ছিলো। বেস্টফ্রেন্ড! কি করে পিছিয়ে যেতো। মা তো সেই কবেই মরে গেছে। আমার সেইফটির জন‍্য আমাকে এতিম খানায় রেখে আসলো। বাবা থাকতেও একটা মাস আমার এতিম হয়ে থাকতে হয়েছে। বাবার উপর অনেক অভিমান জমা হয়েছিলো। এক মাস পর বাবা আসলেন।সাথে আনলেন আতইয়াব ভাইয়াকে। বললেন সে আমার বড়ভাই। এতদিন লুকিয়ে রেখেছিলো কোনো কারণে। ছোট ছিলাম বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম। সেদিন ই বাবা আমাকে আর ভাইয়াকে অন‍্যত্র পাঠিয়ে দেয়। ভাইয়া তখন ভালোয় বড়। বাবার সরল কথায় সব বিশ্বাস করে বাবাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম। কিন্তু একদিন হঠাৎ করে খবর এলো আমার বাবা দুর্ঘটনায় স্পট ডেথ! মানতে পারছিলাম না। তাড়াহুড়োয় চলার সময় দেয়ালের সাথে জোরে ধাক্কা খাওয়ায় শর্ট টাইম মেমোরি লস ছিলো। মেমোরি তো তখন ফিরে পেলাম যেদিন দেখা হলো আহনাফ আংকেলের মেয়ের সাথে। ছয় মাস আগের কথা। ভার্সিটি তে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে আর মেয়েটি পড়ে যায়।অনেক গুলো ব‍্যাগ ছিলো মেয়েটির কাছে। মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। কিছু বলবো তার আগেই মেয়েটি নিজের ব‍্যাগটা ফেলে দৌড়ে চলে যায়। তার আগে আমার সামনে একটা চিরকুট ফেলে যায়। চিরকুটে লিখা ছিলো,

আমি জানিনা আপনি কে? কেমন মানুষ তাও জানিনা। শুধু বলবো আমার ব‍্যাগটি একটু যত্ন করে রাখবেন। ব‍্যাগের মধ‍্যে রাখা ডায়েরীটা খুলে দেখবেন। তারপর নাহয় আমাকে খুঁজে বের করবেন। রহস‍্যও খুঁজতে পারেন যদি আপনি ভালো মানুষ হোন!

অনিশ্চিত ছিলো ভাবনা। কার হাতে যেন পড়ে। আমি লুকিয়ে বাসায় এনে রাখি ডায়েরীটা। খোলার সাহস হয়নি। একদিন হঠাৎ করে মনে হতেই ডায়েরীটা নিয়ে বসি। যেখানে আহনাফ আংকেল নিজের কেসের সম্পর্কে বলেছিলেন। চৌধুরী পরিবারের কেসের সম্পর্কে বলেছেন। পারিবারিক শত্রুতা সম্পর্কেও বলেছেন। শুধু আপনাদের নামগুলো সাসপেন্স রেখেছেন। হয়তো উনি ভেবেছিলেন ডায়েরীটা খারাপ লোকের হাতে পড়লে আপনি বিপদে পড়তে পারেন। ডায়েরীর অর্ধেক পাতা আহনাফ আংকেল আর তার পরের পাতার লিখাগুলো সম্ভবত তার মেয়ের। বাবার বলা কিছু কথা মিলে যাচ্ছিলো ডায়েরীর সাথে। সেদিন ই হুট করে সম্পূর্ণট মনে পড়ে আমার। মেয়েটি পরের পাথাগুলোয় বলেছিলেন সেদিন হামলার রাতে তাকে আহনাফ আংকেল তার এক বন্ধুর কাছে রেখে যায়। বন্ধুটি ভালো হলেও তার বউ খারাপ ছিলো। মেয়েটিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মেয়েটি তখন হৃদানের সমবয়সী ছিলো। চারদিকে তো খারাপ মানুষের বালাই নেই। তার ই পাল্লায় পড়ে। সেদিন উদ্ধার করে একটা বৃদ্ধ মহিলা যিনি ছিলেন বড় ফ‍্যামিলের। সেই বাড়িতেই থাকতেন তিনি। কিন্তু বৃদ্ধটি মারা যাওয়ার পর মেয়েটিকে বাড়ির সবাই কাজের মেয়ে বানিয়ে দেয়। মেয়েটি ডায়েরী তে একবার ও ওই বাড়ির কথা উল্লেখ করেনি। নাহলে এতদিন আমি তাকে আমার কাছেই রাখতাম। মেয়েটি এত এত ধাক্কা সামলিয়েও নিজের বাবাকে খুঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওই বাড়িতে থেকে সম্ভব হচ্ছিলো না। তবুও সাহস করে বাড়ি থেকে বের হতো। যেদিন আমার সাথে দেখা হয় সেদিন ওই বাড়ির কাউকে দেখেই ভয় পেয়েছিলো হয়তো। তাই পালিয়ে গিয়েছিলো। এখন কথা হলো খুঁজবো কি করে তাকে।

এতকিছু ঘটেছে আতইয়াব হৃদান ভাবতেই পারছে না। আদর ছয়মাস ধরে এত প্ল‍্যান করে রেখেছে বুঝার উপায় ই নেই। হৃদান বলল,

কিন্তু তুমি নিজেকে সুপারহিরোর মেয়ে বললে কেন?

কারণ আমার সন্দেহ মতে আহনাফ আংকেল বেঁচে থাকলেও বা না থাকলেও অপরাধী আহনাফ আংকেলে মেয়েকে খুঁজ করতো। কারণ ডায়েরী অনেক কিছুই লিখা ছিলো। আর আপনি যার অপারেশন করিয়েছেন এসবের পেছনে কে জানার জন‍্য তার সাথে আমার একবার দেখা হয়েছিলো হসপিটালে। ফোনে সে বারবার কিসব বলছিলো। হাসান শিকদারের সাথে মেবি ঝগড়া করছিলো। আর রেস্টুরেন্টে হাসান শিকদারকে দেখে; তার উপর সুপারহিরো সুপারচ‍্যাম্প ডাক শুনে দুই এ দুই চার করলাম। আর আমার মনে হয়েছে হাসান শিকদার এসবে একা নেই। তার সাথে আরো একজন জড়িত।যে এসবের মূলে। তাই প্ল‍্যান করলাম আমি তো সব জানি তাহলে নিজেকে আহনাফ চৌধুরীর মেয়ে বললে কিছু রহস‍্য খুলতে পারে। আর আমি রেস্টুরেন্টের একদম ভেতরে দরজার পাশে একজন কে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। যে কান পেতে শুনছিলো সবকিছু। আমার মনে হয়েছে সে হয়তো শত্রুপক্ষের কেউ। তাই একটু রিস্ক নিলাম। সবটা সন্দেহের বশে করেছি। এখন ঢিলটা যদি ঠিক জায়গায় লাগে তাহলে আহনাফ আংকেল আর তার মেয়েকে খুঁজে পাবো। আর বাবার অসম্পূর্ণ কাজটা সম্পূর্ণ হবে। জার্নালিজম নিয়ে পড়াটা তো এর জন‍্যই।
আর ভাইয়া মিথ‍্যে বলেছে আমার কারণে। এক ফাঁকে ভাইয়ার কাছে গিয়ে হালকা করে বলেছিলাম এমন করে বলতে। আর আমার ভাইয়া তো কামাল করে দিয়েছে। কি এক্টিং টাই না করলো! আমি তো জাস্ট ফিদা।

আদর হেসে উঠলো। আতইয়াব বোনের মুখে হাসি দেখে নিজেও হাসলো। কিন্তু হৃদান তখনো গম্ভীর হয়ে বসে আছে। হয়তো ভাবছে কোথায় খুঁজবে তিনজন কে। তারা কি আদও বেঁচে আছে? আদর হাসি থামিয়ে আতইয়াবের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,

তোমার পরিচয় কি ভাইয়া?

আমি সবটাই বলেছি সেদিন। শুধু শেষের কথাগুলো মিথ‍্যে ছিলো। স‍ৎ মায়ের আত‍্যাচারে বাড়ি থেকে চলে আসি। হঠাৎ করেই তোমার বাবার সাথে দেখা হয়। কিছুদিনের পরিচয়ে বাবা আমাকে অনেকটা ভালোবাসা দিয়েছিলো। বাবা বলে ডাকতাম তোকে। তোমার কথা আমাকে বলতো। তোমাকে দেখার জন‍্য ছটফট করতাম। বাবা বলতো একদিন সময় হলে দেখা করাবে। সেদিন ই বললো বোন কে নিয়ে অন‍্যত্র চলে যেতে হবে। কথা দিয়েছিলাম বাবাকে তোমার কোনো ক্ষতি হতে দিবো না। জানতেও দিবো না তুমি আমার রক্তের কেউ না। কিন্তু আত্মার কেউ!

আদরের কাছে এবার সবটা পরিস্কার। এতকিছু শুনেও হৃদান চুপ। কোনো প্রতিক্রিয়া করছে না। আদর বুঝতে পারলো হৃদানের মনের অবস্থা। তাই বলল,

হৃদান শুনুন। আপনি হাসান শিকদার কে আরেকটু টাইটলি জিজ্ঞাসবাদ করেন। তার কাছেই আপনার বোনের মিসিং হওয়ার ইনফরমেশন আছে। কারণ সে এই ব‍্যাপারটা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছে।

এতকিছুর মাঝে হৃদান এটা খেয়াল ই করেনি। আদর ঠিক করেছে। একটা আশা খুঁজে পেলো যেন। হৃদানের মুখেও হাসি ফুটে উঠেছে। আতইয়াবের বিরক্ত লাগছে হৃদান কে। আদরের সাথে মেশাটা তার ভালো লাগে না। হৃদান উঠে চলে গেলো। তারিম বিরক্তি নিয়ে তাকালো আতইয়াবের দিকে। আতইয়াব কিছু বললো না। তার বোনের ক্ষতি সে হতে দিবে না!
_____________________

হৃদান দাড়িয়ে আছে কোডেটের সামনে। অপেক্ষা করছে সময়ের। সময়ের আগে কোডেটের দরজা খুলবেনা। সে একটু তাড়াতাড়িই চলে এসেছে। সময় হতেই কোড বসিয়ে ভেতরে চলে গেলো। যেখানে হাসান শিকদার কে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। হৃদান শান্ত হয়ে সোফায় বসলো। রেগে যাওয়া যাবে না। হাসান শিকদার হৃদান কে দেখেই ভয় পেয়ে গেলেন। হৃদান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

আমার বোন কোথায়?

চমকালেন মি. শিকদার। সে তো সুক্ষ্ম ভাবে এড়িয়ে গেছেন ব‍্যাপারটা। আবার নতুন করে চলে আসছে। হাসান শিকদার মুখ খুলছে না বলে হৃদান পিয়াস কে বলল,

ওর ঠিক নিচে আগুন জ্বালিয়ে দে। দেখি কতক্ষণ ঠিক থাকে!

হাসান শিকদার মিনতি করলেও কাজ হলো না। পিয়াস হৃদানের কথা মতো আগুল জ্বালিয়ে দিলো। প্রথম ঠিক ছিলো কিন্তু আগুনের শিখা যখন বাড়ছিলো আর হাসান শিকদারের শরীরটা একটু একটু করে লালচে হয়ে কালোতে রূপ নিচ্ছিলো তখন আর সইতে পারলেন না তিনি। চিৎকার করে বলে উঠলেন সে সব বলবে। হৃদান বাঁকা হাসলো। কাজ দিয়েছে! আগুন নেভানো হলো। হাসান শিকদার কে নামায়ি নিচে বসালো। তিন কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে বলল,

সেদিন মি চৌধুরী বাড়িতে ছিলেন। সাথে তোমার বোন। হামলা করি আমরা। তাকে মেরে তোমার বোনকেও মারতে চাই কিন্তু আমার লোক বুদ্ধি দিলো দ্বিগুন হারে বিক্রি করা যাবে। তাই করলাম। বিক্রির জন‍্যই নিয়ে যাচ্ছিলাম। ততক্ষণে আহনাফ চৌধুরী সব জায়গায় এসব খবর জানিয়ে দেয়। পুলিশ গাড়ি চেক করছে। ভয় পেয়ে তোমার বোন কে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। দৌড়াতে থাকি। কিন্তু হোচট খেয়ে রাস্তার একপাশে পড়ে যায় তোমার বোন। ওখান দিয়ে যাচ্ছিলেন একজন মধ‍্যবয়স্ক লোক। আমি লোকটিকে চিনি। পিজি কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। আমি অনেকবার গিয়েছি ওই কলেজে। লোকটির কি নাম যেন মনে নেই। সেই তোমার বোনকে নিয়ে যায়। ওইদিকেই যাবো কিন্ত আমি রাস্তার মধ‍্যে থাকায় একটা গাড়ি ধাক্কা মেরে দেয়। জ্ঞান হারায়। ফেরার পর অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি।

হৃদান আর দাড়ায় না। এক ছুটে বেরিয়ে যায় কোডেট থেকে। উদ্দেশ্য তার পিজি কলেজ। আজকেই এসব রহস‍্য বের করবে সে। এখান থেকে যেতে অন্তত দু’ঘন্টা লাগবে। স্পিড বাড়িয়ে দিলো। প‍ৌঁছাতে লাগলো দেড় ঘন্টা। মুখে মাস্ক পড়ে যাওয়ায় কেউ চিনে নি। আর আজ কে তাড়াহুড়োয় সে গার্ড নেয়নি। হেড অফিসে গিয়ে নিজের পরিচয় দিতেই সবাই ভয় পেয়ে যায়। হাসলো হৃদান। আজ সে যদি একজন সাধারণ পাবলিক হয়ে আসতো কিছু তেই তারা এতবছরের পুরোনো ফাইল চেক করতে দিতো না। দপ্তরি কে নিয়ে স্টোর রুমে চলে গেলো। খুঁজতে লাগলো ফাইল। কে জানে আছে কিনা। একেকটা সেকেন্ড যেন হৃদানের কাছে ঘন্টা মনে হচ্ছে। দপ্তরি হাক ছেড়ে জানান দিলো পেয়ে গেছে। দৌড়ে গেলো হৃদান। ফাইলের উপরের নামটা দেখে হৃদান অবাক হলো। সার নেইম টা তার খানিক টা পরিচিত। একটা ছবি দেওয়া আছে বাট সে চিনতে পারছে না। ফাইল টা নিয়ে দপ্তরির হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বের হয়ে এলো। গাড়ি নিয়ে ছুটলো আদর দের বাড়ির উদ্দেশ্যে। আদর কিছু হেল্প করতে পারে।

ফাইলের দিকে চোখ বড় বড় করে থাকিয়ে আছে আতইয়াব আদর। তারিম রান্না ঘরে রান্না করছে। হৃদান ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
এক্সপ্রেশন দেখে সে চিন্তায় পড়ে গেলো। আতইয়াব কিছু বলবে আদর থামিয়ে দিলো। ওদের কে ইশারা করে বাইরের দিকে যেতে লাগলো। আতইয়াব কিছুটা বুঝলেও হৃদান কিছুই বুঝলো না। তার এখন রাগ হচ্ছে। কিছু বললেও তো পারতো। এভাবে না বলে ছুটার কি আছে!

একটা একতালা বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো আতইয়াব। আতইয়াবের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে ভিষণ চিন্তিত। আর আদর সে তো আজানা কৌতুহলে ছুটেই চলছে। হৃদান মুখটা গম্ভীর করে ওদের পেছনে হাটতে লাগলো। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো একজন মধ‍্যবয়স্ক লোক সোফায় বসে আছে।
আদর গিয়ে সোফায় বসে পড়লো। মিসেস দেলোয়ারা রান্না করছিলেন। আদর কে দেখেই ছুটে এলেন। আদর কে তার একদম ই সহ‍্য হয়না। আদর কোনো দিক না তাকিয়েই বলল,

তারিমের প্রতি আপনাদের অবহেলার কারণ টা কি? নিজের মেয়ে তো আপনাদের?

চমকালো দুজন ই। হৃদানের রাগ হলো আরো। সে কি বর্তমানে তারিমের সমস‍্যা সমাধান করতে আসছে। আগে তার বোনকে খুঁজে বের করতে হবে। তারপর নাহয় তারিমের টা দেখবে সে। তারিমকেও সেখুব ভালোবেসে ফেলেছে। মিসেস দেলোয়ারা কিছু বলবে মি. তারেক চোখ রাঙিয়ে তাকালেন। শান্ত সুরে বললেন,

কে অবহেলা করেছে?

দেখুন আংকেল সোজাসাপ্টা উত্তর দেন। এমনিতেই মাথা ভনভন করছে। তারিম আপনার নিজের মেয়ে না তাইতো? আপনার বাবা তারিম কে কুড়িয়ে পেয়েছিলো তাইতো? তার জন‍্যই এত অবহেলা!

এবার মি. তারেক রেগে গেলেন। তাই তো পরের মেয়েকে সে কেন আদর করবে। কোথাকার কোন মেয়ে কে বলতে পারে? খারাপ কাজের ফল নাকি কে জানে? তাকে কেন ভালোবাসবে সে? রেগে বললেন,

হ‍্যাঁ তারিম আমার মেয়ে না। বাবা একদিন একটা মেয়েকে এনে বলে সন্তানের পরিচয়ে মানুষ করতে হবে। কোথাকার কোন মেয়ে। সম্পত্তিও লিখে দিলো মেয়েটিকে। তাই তো কিছু করতে পারিনি। বাড়ি থেকেও বের করতে পারিনি।

আদর আতইয়াব এবার হৃদানের দিকে তাকালো। হৃদান চোখ বড় বড় করে সব শুনছে। আদরের চোখ হৃদানের অবস্থা দেখে ছলছল করে উঠলো। মানুষটা কত কিছু সহ‍্য করেছে। আদর মাথা নেড়ে সম্মতি দিতেই হৃদান চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। তার এত বছরের অপেক্ষার আজ সমাপ্তি হয়েছে। আস্তে আস্তে হেটে বাইরে চলে গেলো। মি তারেক এবং মিসেস দেলোয়ারার উদ্দেশ্য আদর বললো,

কোথাকার কোন মেয়ে যাকে বললেন সে হলো নাবিল চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে। হৃদান চৌধুরী বোন। আরেকবার উল্টাপাল্টা বলে দেখেন কি হয়!

ওরাও চলে গেলো। মি তারেক আর মিসেস দেলোয়ারা মুখে হাত দিয়ে বসে আছে। চিন্তা করছে। ভয় হচ্ছে বোনকে অবহেলার জন‍্য তাদের মেরে ফেলবে না তো!

রান্না শেষ করে ড্রয়িং রুমে এসে কাউকে না পেয়ে তারিম ভড়কে গেলো। সদর দরজাটাও খোলা। কি হলো বুঝার জন‍্য দরজার দিকে যেতেই কেউ ঝড়ের বেগে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। তারিম আকস্মিক এমন হওয়ায় ভয় পেয়ে গেছে। কথা বলার সাহস টুকু পাচ্ছে না। নিজের ঘাড়ে গরম পানির আবাশ পেতেই ফট করে মাথা তুললো। হৃদান কে দেখেই অবাক হলো সে। হৃদান তারিমের কপালে শব্দ করে চুমু খেলো। তারিম হা হয়ে শুধু দেখছে। পাশেই আতইয়াব আদর দাড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে তারিম কে সব কথা জানালো সে। তারিম তো বিশ্বাস ই করতে পারছে না হৃদান তার আপন ভাই। একদম লেপ্টে আছে হৃদানের বুকে। ভাই-বোনের মিলনে আতইয়াব-আদরের মুখেও হাসি। কিন্তু হৃদান কে আতইয়াবের পছন্দ না। সে বোনকে হৃদানের হাত থেকে শতহাত দূরে রাখবে। বোনের ক্ষতি সে হতে দিবে না।

প্রায় সব রহস‍্য খোলাশা হয়েছে। শুধু আহনাফ চৌধুরী এবং তার মেয়েকে খুঁজে পাওয়া বাকি। সাথে এর মূলে আসল কালপ্রিটকে শাস্তি! ওরা কি আদও পারবে?
#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_১২
Tahrim Muntahana

সময় যেন যুদ্ধে নেমেছে। মানুষও তার সহযোগি। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে মানুষের পথ চলা। সভ‍্য সমাজে সময়ের দাম দিতে না জানলে বাঁচার জন‍্য অনেক মাধ‍্যম ই হাতের কাছে থাকে না। কেমন করে এক সপ্তাহ চলে গেলো বুঝই আসলো না। এই এক সপ্তাহে সবার মাঝেই ভিন্ন রকম অনুভূতির খেলা চলছিলো।

তারিম এখন হৃদানের সাথে থাকে। যদিও আতইয়াব মানছিলো না কিন্তু আদর তার ভাইয়াকে বোঝায়। ভাই-বোনের একটু আলাদা স্পেচ দরকার। একটু সময় কাটাক দুজনে। কতবছর পর ভাই-বোনের পরিচয় হলো। বোনের কথা ফেলতে পারেনি সে। কিন্তু এই এক সপ্তাহ তার কাছে নিরামিষ ছিলো। আমিষের কোনো বালায় নেই। বউ ছাড়া ঘরটা যেমন ফাঁকাফাঁকা লাগে তেমনি বুকটাও ফাঁকা ফাঁকা লাগে।

আতইয়াব তারিমের সময় কাটছে হাসি-মজায়। হৃদান যেন চোখে হারায় তারিম কে। ছোট থেকেই বোন কে সে অধিক ভালোবাসা দিয়ে আসছে। কাল হৃদান তারিমের সব লিগাল পেপারস গুলোর পুনারায় ঠিক করছে। তারিম এখন আর তারিম নেই। হৃদান চৌধুরীর বোন হৃদযা চৌধুরী। সে এখন বাঁচবে আহনাফ চৌধুরীর পরিচয়ে এবং আতইয়াবের পরিচয়ে ; অন‍্য কোনো পরিচয়ে নয়। নিজের জন‍্য বাঁচবে সে। কম কষ্ট তো সহ‍্য করেনি!

সব সম্পর্ক ঠিক থাকলেও ঠিক নেই হৃদার আদরের সম্পর্ক। দুজনের মধ‍্যেই কিছুটা জড়তা দেখা দিয়েছে। তার একমাত্র কারণ আতইয়াব। সে চায় না আদর আর কোনো সম্পর্ক রাখুক হৃদানের সাথে। হৃদানের পরিবর্তনের কারণ যে তার বোন সে বুঝে নিয়েছে। আর সে সত‍্যি সারপ্রাইজড ছিলো বাট আর সারপ্রাইজড সে হতে চায় না। তাই বোনকে দূরে রেখেছে। আদর কখনোই ভালোবাসার জন‍্য নিজের ভাইয়াকে ছাড়তে পারবে না। কয়েক দিনের ভালোবাসার জন‍্য কয়েকবছরের ভালোবাসাকে সে অস্বীকার করতে পারবে না। সে অপেক্ষায় আছে সেদিনের জন‍্য যেদিন তার ভাই নিজে তাদের ভালোবাসাকে স্বীকার করবে! আদরের থেকে দুরত্ব রেখে চলা হৃদানের সম্ভব না। ওই মেয়েটা তার হৃদয়ের স্পন্দন। কি করে থাকবে?

রেডি হয়ে নিচে নামছে আদর। মুখ তার বিষণ্ন। আতইয়াব একপলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। তার নরম হলে চলবে না। আজ আদর দের ভার্সিটিতে ১৫ ই আগস্ট উপলক্ষ‍্য শোক দিবস পালিত হবে। সবাইকেই কালোতে সাজতে বলেছে। আজ আদর কালো হাটুর নিচ পযর্ন্ত ফ্রক পড়েছে। নিচে কালো প্লাজো। মাথায় হিজাব পড়ে একপাশে উড়না দিয়েছে। কালো পরী লাগছে একদম। শুধু একটা কিছু মিসিং তা হলো মুখের হাসি! আদর আসতেই আতইয়াব ওকে নিয়ে বের হয়ে গেলো। আদরকে ভার্সিটি নামিয়ে দিয়ে সে হসপিটাল যাবে।

আদর ভার্সিটি আসতেই দেখতে পেলো সুবাহ তার জন‍্য দাড়িয়ে আছে। আজ সুবাহ’ও আদরের মতো ড্রেস পড়েছে। প্রত‍্যেক বছর ওরা তিন বান্ধুবী একই রকম ড্রেস পড়ে বিশেষ দিনগুলোতে। মুচকি হাসলো আদর। হাসিতে আদও প্রাণ আছে নাকি সুবাহ বুঝতে পারলো না। সুবাহ কে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো সে। মাঠে দাড়িয়ে অপেক্ষা করবে তারিমের জন‍্য। আতইয়াব অপেক্ষা করতে চেয়েও পারলো না। একপলক তারিম কে দেখার ইচ্ছে হয়েছিলো। ইমারজেন্সী কল আসায় চলে যেতে হলো। মনটা খুব খচ খচ করছে। কেন এমন হচ্ছে? ইদানিং সে তারিম কে খুব মিস করে। মনে হয় বুকের একপাশ টা খালি।

একসাথে তিনটি গাড়ি ঢুকতে দেখে সবাই এক জায়গা জটলা করে দাড়িয়ে দেখতে লাগলো। হৃদান চৌধুরীর গাড়ি দেখে অনেকেই ভয়ে দূরে চলে গেলেও কিছু কিছু মানুষ আছে যারা মরে গেলেও কৌতুহল মেটাতে পারে না ; এরকম ধাঁচের কিছু ছেলেমেয়ে থেকে গেলো। আদর সুবাহ সেখানেই দাড়িয়ে আছে। গাড়িটা তাদের পাশ ঘেসেই দাড়িয়েছে। হৃদান নামার আগেই তারিম ঝটপট নেমে গিয়ে আদর দের জড়িয়ে ধরলো। কয়েকদিন পর তাদের দেখা। যদিও ফোনে রিগোলার কথা হয়। হৃদান চৌধুরীর গাড়ি থেকে তারিম কে নামতে দেখে অনেকেই অনেক কিছু ভেবে নিলো।মানুষের ভাবনার তো আর শেষ নেই। হৃদান আদর দের সামনে গিয়ে দাড়ালো। একপলক আদরের দিকে তাকাতেই তার বুকের ভেতর টা কেমন চিনচিন করে উঠলো। তারিম সুবাহ ওদের একা ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাড়ালো। হৃদান দেরি করলো না আদরের হাত ধরে ভার্সিটির পেছন সাইড বাগানটাই নিয়ে গেলো। আদর তো হৃদান কেই দেখে যাচ্ছে। বাগানে যেতেই এক টানে নিজের বুকে ফেলে দিলো আদর কে। মাথা চেপে ধরলো বুকের সাথে। গভীর একটা শ্বাস নিলো হৃদান। ভালো লাগছে এখন না। এই মেয়েটা তার অক্সিজেন হয়ে দাড়িয়েছে। চারপাশ অন্ধকার লাগে মেয়েটাকে ছাড়া। হৃদানের পরম আদুরে স্পর্শে আদরের খুব কান্না পেলো। সে এখন কাঁদবে। নাহলে তার কষ্ট হবে অনেক। তাই করলো ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো আদর। হৃদান কিছু বললো না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

যদি ভালোবাসাকে পেতে হৃদান চৌধুরীর অস্তিত্ব মুছে ফেলতে হয় তবে তাই হোক! হৃদান চৌধুরী ভালোবাসার কাঙাল কলিজা! খুব ভালো হয়ে যাবো আমি। এত ভালো হবো যে তোমার ভাইয়া নিজে থেকে হাসিমুখে তুমি নামক ফুলটাকে হস্তান্তর করবে আমাকে। সেদিন ই সারা দেশ জানবে হৃদান চৌধুরীর নিষ্ঠুর দয়া মায়াহীন হৃদয়ের ভালোবাসার অব‍্যক্ত কথাগুলি। পাথর হৃদয়ে তুমি নামক ভালোবাসার ঝড়ের কাহানী। নতুন করে ভালোবাসা রচনা করবো সেদিন। শুধু তুমি আর আমি!

হৃদানের কথায় আদর কান্না থামিয়ে আবেগি চোখে তাকালো। হৃদান যত্ন করে আদরের চোখের পানি মুছে দিলো। কপালে দিলো ভরসার চুম্বন। আবেশে চোখদুটো বন্ধ করে নিলো আদর। মুখে ফুটে উঠলো সতেজতার হাসি। যে হাসিতে হৃদান ঘায়েল হয় বারংবার। হৃদানের গালে এক হাত রেখে আদর বলল,

আমি সেই আগের দয়ামায়াহীন হৃদানের ব‍্যক্তিত্বকেই ভালোবেসেছি। আপনি জানেন আপনার প্রত‍্যেকটা মডেলিংয়ের ম‍্যাগাজিন আমার কাছে আছে। কখনো সামনে থেকে দেখতে পারিনি আপনাকে। ম‍্যাগাজিনে দেখে ভাবতাম আপনি এতটাও সুন্দর না যতটা এখানে দেখা যায়। ইডিট করে হয়তো সুন্দর করে দেয়। তাই আমি আপনার চেহারার প্রেমে কম পড়েছি। ভালোলাগা ছিলো চেহারের প্রতি। ভালোবাসা না। আমি তো ভালোবেসেছি আপনার নিষ্ঠুর মনেও মেয়েদের প্রতি সম্মানের কথা শুনে। আপনার মনে আছে আপনি একদিন জিএম রেডিও তে বলেছিলেন,

‘মেয়ে রা মা! যাদের গর্ভে আমরা নামক ছেলেরা একটু একটু করে বড় হই। বড় হই মায়ের পেট ফুলে দ্বিগুন হয়। হাটতে অনেক কষ্ট তাইনা? আমি তো ওভাবে হাটিনি বলবো কি করে। কিন্তু উপলব্ধি করেছি।
মেয়ে রা বোন! মায়ের পরে যাদের স্থান হয়। বড় বোন যেমন মায়ের অনুপস্থিতে নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে রাখে তেমনি ছোট্ট সেই বোনটাও হালকা অসুস্থতায় কড়া শাসনে রেখে তেতো সব ঔষধ খাওয়ায়।
মেয়ে রা বউ! অর্ধাঙ্গিনী! জীবনের আরেকটি অংশ। যাদের ভালোবাসায়, যত্নে আমরা ভালো থাকি। যারা আমাদের বাবা ডাক শোনার প্রাপ্তিটা দান করে হাজার কষ্ট করে।
একজন আদর্শ মেয়ে একদিন আদর্শ বউ হয় আর সেই আদর্শ বউ একদিন মা হয়! তাই মা শব্দটির মর্মটা ভেবে দেখুন। তাহলে এত এত বৃদ্ধাশ্রমের জন‍্য টাকা খরচ করতে হতো না!
আমি হৃদান চৌধুরী। একজন নিষ্ঠুর দয়ামায়া হীন মানুষ। যার খুন করতে হাত কাঁপে না। একজনকে পরপর দশটা আঘাত করেও ক্ষান্ত হইনা সেই মানুষটা মা জাতিকে শ্রদ্ধা করে! সম্মান করে!’

এই কথা গুলো আমি এই চারবছরে কতশত বার শুনেছি বলতেও পারবো না। সেদিন থেকে আমি ভালোবেসেছি। একদিন হঠাৎ করে আমাকে কিডন‍্যাপ করলেন। পরে জানা গেলো ভুল করে কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছিলাম ভাইয়ার জন‍্য। আবার হঠাৎ একদিন দেখা। আপনার চুল টেনে ধরা। আর আপনার পরিবর্তন সবটা মিলিয়ে আরেক হৃদান চৌধুরীকে রচনা করলাম। ভালোবাসাটা কয়েকগুন বেড়ে গেলো। তাই আমি আগের হৃদানকেই ভালোবাসতে চাই। হ‍্যাঁ ভালো তো অবশ‍্যই হবেন। মদ খাওয়া বারণ, স্মোক করাও বারণ, মারপিট করাও বারণ, কোডেটের দরজা চিরকালের জন‍্য বন্ধ, অন‍্য মেয়ের দিকে তাকানো বারণ; নিজের সেইফটির জন‍্য হালকা মারামারি এলাউ করলাম, আপনার তো আবার শত্রুর অভাব নেই। আমার ভাইয়ার সাথে লাগা বারণ, কথায় কথায় রাগিয়ে দিবেন না তাকে, আমার ভাইয়াকে উল্টাপাল্টা নামে ডাকা বারণ; সবচেয়ে বেস্ট এলাউ হলো আমাকে দ্বিগুন থেকে কোটিকোটি গুন বেশী ভালোবাসতে হবে। তো মি. চৌধুরী কি সব শর্তে রাজি?

আদরের মনের কথাগুলো শুনে হৃদানের মনে হচ্ছে সে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। একটা মেয়ের মুখে ভালোবাসি কথা শুনতে এত ভালোলাগে বুঝি। শেষের শর্তগুলো শুনে হৃদানের মাথায় হাত। এ মেয়ে তো একদিনেই হৃদান চৌধুরী কে পাগল করে দিবে। এত শর্ত! শেষের শর্তটা ছাড়া একটা শর্তও হৃদানের ভালো লাগে নি। তাই মুখটা পানসে করে রেখে বলল,

তোমাকে তো বিলিয়ন বিলিয়ন ভালোবাসবো, মারামারি ছাড়বো, স্মোক ও করবো না, আমি কোনো মেয়ের দিকে তাকায় না…

হৃদানের বলা শেষ ই হয়নি আদরের চোখ বড় হওয়া দেখে থেমে গেলো। আদর অবাক হয়ে বলল,

ইউ মি. চৌধুরী ছিহ আমাকে নিয়ে আপনার সন্দেহ আছে? ছিহ ছিহ ছিহ! এ মুখ আমি কোথায় দেখাবো, কাকে দেখাবো, শেষমেষ এই কথা শুনতে হলো!

আদরের আহাজারিতে হৃদান একদম ভড়কে গেলো। সে কখন আদরকে সন্দেহ করলো। এরকম কথা সে মাথাতেই আনে নি! বিচলিত হয়ে বলল,

কিসব বলছো আন্ডাবাচ্চা। আমি কখন তোমাকে সন্দেহ করলাম। এ কথা আমি কল্পনাও করতে পারিনা।

আপনি আবার মিথ‍্যা বলছেন। আপনিই তো বললেন আপনি কোনো মেয়ের দিকে তাকান না কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি আপনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তো আমাকে আপনার ছেলে মনে হয়?

ফুসে উঠলো আদর। হৃদান এতক্ষণে ধরতে পারলো আদরের কথার মানে। হাইরে এ কার প্রেমে পড়লো সে। পরক্ষণেই হো হো করে হেসে দিলো হৃদান। হাসি যেন থামছেই না। আদর চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। হৃদান আদর কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,

আরে তুমি আমার কলিজা। অন‍্য মেয়েদের সাথে তোমার তুলনা হয়?
আচ্ছা অন‍্য কোনো মেয়ের দিকে তাকাবো না। মদ খাওয়া একদিনে বাদ দেওয়া সম্ভব না। আস্তে আস্তে আউট করবো। এখন তোমার ভাইয়ার সাথে আমার কি হবে না হবে সেটা তোমার ব‍্যাপার না। ওইটা আমি আর তোমার ভাইয়া দেখে নিবো। আর কোডেটের দরজা চিরতরে সেদিন ই বন্ধ হবে যেদিন আসল কালপ্রিটের রক্তে কোডেটের ফ্লোর লাল হবে!

শেষের কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে বলল হৃদান। আদর আর কথা বাড়ালো না। চুপ করে রইলো। রাগিয়ে দেওয়া উচিত হবে না।
___________________

আজ হৃদানের বাড়িতে পার্টি। কারণ তারিম। তারিম হৃদানের বোন সেটি সবার জানা উচিত। আতইয়াবের হসপিটালে গিয়ে কার্ড দিয়ে এসেছে হৃদান। আতইয়াব কিছু বলেনি। হাজার হোক বউয়ের বড় ভাই। রাগিয়ে দিলে নিজেই হেরে যাবে কারণ বউ তার ফেবারে না! তার থেকে বড় কথা পার্টিতে সে তারিম কে দেখতে পারবে। তাই খুশি লাগছে তাকে।

সন্ধ‍্যা ৬ টা বাজে। প্রায় সবাই চলে এসেছে পার্টিতে। হৃদান তারিম ওরা কেউ নিচে নামেনি। আদর রা দাড়িয়ে আছে হৃদানের বিশাল বাড়ির সামনে। আতইয়াব রা গেটের সামনে আসতেই ওদের সাধরে বরণ করা হলো। আলাদা রকম ছিলো। আদর তো অনেক খুশি। মুখে হাসি ঝুলেই আছে। সুবাহ’র সাথে কথা বলতে বলতে হাটছে । আতইয়াব আজ প্রতিজ্ঞা করেছে যেকরেই হোক তারিমের সাথে কথা বলবেই আজ। অনেক হয়েছে তারিমের অবহেলা সহ‍্য। সে আর করবে না। আর পারছে না সে। ভালোবেসে ফেলেছে সে। গভীর ভাবে উপলব্ধি করে তারিম কে। আদর রা এসেছে শুনেই তারিম নিচে নেমে এলো। সিড়ির একপাশে দাড়িয়ে ছিলো আতইয়াব। তারিমের কথায় ভাবছিলো সে। তারিম কে নিচে নামতে দেখে বাঁকা হাসলো সে। চারপাশ ভালো করে দেখে নিলো। তারিম এখনো আতইয়াব কে দেখেনি। যখন ই আতইয়াব কে ক্রস করতে যাবে আতইয়াব একটানে তারিম কে নিয়ে পাশের রুমে ঢুকে পড়লো।

পার্টির জন‍্য রেড়ি হচ্ছিলো পান্চু। গুনগুন করে গান গেয়ে প‍্যান্ট পড়ছিলো সে। সাথে হালকা নাচছিলোও। এত খুশির কারণ হচ্ছে তার বস তার সাথে রেগে কথা বলে না। বেশ ভালোও হয়ে গেছে। এখন আর তাকে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়না। তার জন‍্য আদর কে মন ভরে দোয়া করে দিয়েছে। দোয়াতে ভুলে সে আদরের বিয়ে যেন ইন্জিনিয়ারের সাথে হয় এটাও বলে ফেলেছে। এরপর পুরো একদিন ঘর থেকে বের হয়নি। কে জানে হৃদান চৌধুরী যদি শুনে ফেলে কথাটা তার আধা টাক মাথার আধা টাক খুলিটাও উড়িয়ে দিবে। সে এখনো বিয়ে করেনি, এত সহজে মরতে চায় না।
হঠাৎ করেই দরজা খুলার শব্দে ভয় পেয়ে প‍্যান্টের চেইন টা লাগাতে গেলেই চেইনের সাথে মেইন পয়েন্ট এমন সংঘর্ষ লেগে যায় আধা টাক মাথা টা ব‍্যাথায় একদম লাল হয়ে যায় পান্চুর। কথায় বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে। আতইয়াব ভাবেই নি এখানে পান্চু আছে। তারিম তো এমন অবস্থা দেখে চোখ বন্ধ করে যেই না চিল্লানি দিবে আতইয়াব মুখ হাত দিয়ে মুখটা বন্ধ করে দেয়। কেলো করেছে! চিৎকার করলে আজ তাকে গণদোলাই খেতে হবে।

পান্চু কিছু না বলেই রোবটের মতো ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। হাটতে লাগলো প্রশিক্ষণ রুমে। রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো এক চিৎকার। এতক্ষণ বহুত কষ্টে চিৎকার টা অফ করে রাখছিলো। এখন ভালো লাগছে। ঘরটা সাউন্ড প্রুফ তাই বাইরের কেউ শুনতে পায়নি। প‍্যান্ট ঠিক ভাবে পড়ে বের হতে নিবে ওমনি ধপাস করে কারো পড়ার শব্দে চমকে যায় সে। এগিয়ে এসে দেখে একজন অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। হয়তো তার ওমন চিৎকারেই ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে। বাহ পান্চু বাহ! তুই জিনিয়াস। তোর চিৎকারেও কেউ অজ্ঞান হয়। এসব ভেবে এগিয়ে গিয়ে ভালো করে চেক করে দেখলো এটা ওদের গার্ড না। মেইন গার্ড সে হওয়ায় তার প্রত‍্যেকটা গার্ডের মুখ মনে আছে। চিন্তায় পড়ে গেলো পান্চু। দুজন সিচিউরিটি কে ফোন করে আনিয়ে গোপন রুমে নিয়ে গেলো লোকটিকে। সিকিউরিটি বাড়িয়ে দিলো পান্চু। বসের ক্ষতি সে কিছুতেই হতে দিবে না। সিসিক‍্যামেরা লাগানো সব জায়গায়। যে এর দায়িত্বে আছে তাকে ফোন দিয়ে বলে দিলো দুজন গার্ড কে নিয়ে বাড়ির আনাচে কানাচে নজর রাখতে। সন্দেহ প্রবণ কাউকে দেখলেই ইনফর্ম করতে। মজার সেই স্বত্বা টা যেন পান্চুর মাঝে নেই। কাজের ক্ষেত্রে সে এমনি। ঘর থেকে বের হয়েই পান্চুর মুখ হা হয়ে গেলো। হৃদান চৌধুরী এদিক ওদিক তাকিয়ে নামছে। সে আজ পযর্ন্ত বসকে এভাবে তাকিয়ে হাটতে দেখেনি। এখন যে সব সম্ভব সে যেন ভাবতেও পারছে না। আতইয়াব কে না দেখে হৃদান খপ করে আদরের হাত ধরে নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো। যার সাক্ষি স্বরুপ ফালাহ-সুবাহ পান্চু দুজন মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। পরক্ষণেই তারা হেসে ফেললো। দুই শত্রু একই রকম পরিস্থিতিতে পড়েছে।

আতইয়াব কে দেখে তারিম রেগে গেলো। সহ‍্যই হয়না তার এই মানুষটাকে। তার ভাইয়ার প্রেমে ভিলেন হয়ে এখন আসছে ভাইয়ার বোনের সাথে পিরিত করতে। আতইয়াব অপলক দেখছে তারিম কে। সবুজ পার্টি গ্রাউনটাতে কি সুন্দর লাগছে মেয়েটিকে। তারিম খানিক টা ভড়কে গেলো আতইয়াবের চাহনী দেখে। নিজেও দুর্বল হয়ে পড়ছে। পরক্ষণে নিজেকে নিজেই বুঝালো,

না হৃদযা না! তোকে আজ নরম হলে চলবে না! এই ব‍্যাটাকে আজ উচিত শিক্ষা দিতে হবে। এতদিন তার সাথে করা সকল অন‍্যায়ের শিক্ষা দিবি। তোর ভাইয়ার সাথে কথা অন‍্যায়ের শিক্ষা দিবি। দেখুক ভালোবাসা থেকে দূরে থাকলে কতটা কষ্ট হয়।

মুখটা যথেষ্ট গম্ভীর করে তুললো তারিম। আতইয়াব যেন ঘোরের মধ‍্যে চলে গেছে। কপালের দিকে ঠোঁট টা এগিয়ে নিবে তারিম এক ঝটকায় সরিয়ে দিলো আতইয়াব কে। আতইয়াব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। তারিম বলে উঠলো,

আমি এখন আগের তারিম নই এখন আমি হৃদযা। হৃদান চৌধুরীর একমাত্র বোন হৃদযা চৌধুরী। তাই ভুলেও আমার কাছাকাছি আসবেন না। অর্ণাবির কাছে যান। এখানে কি করেন। ওও যখন জানলেন অর্ণাবি ভালো না, একসাথে অনেকজনের সাথে লুতুপুতু করে তখন তারিমের কথা মনে হলো? ঠিক তো বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন। যান যান বিয়ে করেন। একদম আমার কাছে ঘেসবেন না।

তারিমের এমন কথায় আতইয়াবের মুখ মলিন হয়ে এলো। তারিমের খুব খারাপ লাগলেও চুপ রইলো। আতইয়াব পাশের সোফায় বসে বলল,

জানিস আমাদের পরিবারটা ভলো ছিলো না। মা ছিলো গরিব ঘরের মেয়ে। বাবা পছন্দ করতেন না মা কে। এদিকে বংশের জন‍্য কোনো সন্তান ও হচ্ছিলো না। মা নিজের সংসার বাঁচাতে, মাতৃত্বের স্বাদ নিতে কত মোনাজাত করেছে। একটা বাচ্চা ওই বংশের জন‍্য প্রয়োজন। বাবাকে আরেকটা বিয়ে করাবে। বাবাও রাজি। তখনি খবর এলো আমি আসার। মা যেন হাতে চাঁদ পেয়ে গিয়েছিলো। একটা পবিত্র শিশুর জন্ম হলো। মায়ের কাছে তো সব সন্তান ই নিষ্পাপ,পবিত্র হয়। নাম রাখা হলো আতইয়াব তাযিন ইততেয়াজ!
অর্থ জানিস? আতইয়াব অর্থ পবিত্র। আর ইততেয়াজ অর্থ প্রয়োজন। মায়ের কাছে ছিলাম পবিত্র এক প্রয়োজন আর ওই বাড়ির আর সবার জন‍্য শুধুই প্রয়োজন ছিলাম । তাই তো মা এমন নাম রেখেছে। আমার আট বছরের মাথায় মা মারা গেলো। হঠাৎ করেই মরে গেলো। তাড়াতাড়ি কবর দিয়ে ঝামেলা শেষ করে দিলো ওরা। আট বছরের বাচ্চাটাকে কেউ দেখলো না। কয়েকমাস পরেই বাবা সুন্দরি দেখে বিয়ে করে আনলো। আমি হয়ে গেলাম উচ্ছিষ্ট। তাদের নানান প্রয়োজনে ব‍্যবহার হলাম। তবুও একটু দরদ ছিলো। কিন্তু যখন নতুন বউ এর ঘরে আবার ছেলে বাবু এলো আমি যেন ওই বাড়ির চাকর হয়ে উঠলাম। এভাবেই কেটে গেলো কয়েকটি বছর। মধ‍্যে তাদের ঘরে আরেকটি মেয়েও হলো। আমাকে আর তাদের দরকার নেই। প্রয়োজনেও লাগলাম না তাদের। অত‍্যাচার বেড়েই চলছিলো। বাবা নামক মানুষটাও কিছু বলতো না। পালিয়ে আসি ওই বাড়ি থেকে। দেখা হয় রাতাফ আংকেলের সাথে। তিনি আশ্রয় দেয়, ভালোবাসা দেয়, ভরসা দেয়।বাবা ডাকতে শুরু করি তাকে। কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়। আমাকে ভরসা করে সব বলতো। নিজের কাজ, বিপদ সব। বোনকে দেখে রাখতেও বলেছিলো। হটাৎ করেই বোনকে আমার কাছে দিয়ে অন‍্যত্র পাঠিয়ে দিলো। নিজের সম্পত্তি ভাগ করে দিলো দুজনের মাঝে। জানিস সেদিন আমি এত শকড ছিলাম বলতে পারবো না। এমন কখনো হয় কিনা জানি না আমার ক্ষেত্রে হয়েছে। বড় হতে থাকলাম। নিজের থেকে বেশী ভালোবাসা দিয়ে বড় করতে লাগলাম বোনকে। আমার সব ফোকাস পড়াশোনা আর বোন ই ছিলো। অনেকগুলো বসন্ত কাটিয়ে আমি ডক্টর হলাম। বোনের ইচ্ছে অনুযায়ী জার্নালিজম নিয়ে পড়তে দিলাম। হঠাৎ করেই আগমন ঘটলো অর্ণাবির। মেয়েটা এত পাগলামি করতো কে জানতো আমিও তার কাছে সাময়িক প্রয়োজন ছিলাম। হুট করেই তোকে বিয়ে করতে হলো। মনের মধ‍্যে তোর জন‍্য আলাদা ফিলিংস কাজ করছিলো। আবার তোকে রেস্টুরেন্টে পরশের সাথে দেখে জেলাসি হচ্ছিলো। পরশ যখন বলল প্রেমে পড়েছে তোর তুই ও একটু একটু তখন এত পরিমাণ খারাপ আর রাগ হয়েছিলো সিদ্ধান্ত নিলাম তুই পারলে আমি কেন পারবো না অর্ণাবিকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি তো জানি না পরশের সব কথায় আমার বোনের প্ল‍্যানে হচ্ছিলো। হঠাৎ এ সব ফাঁস হলো। তুই দূরে চলে এলি। আমি তো ভালোবাসা চেয়েছিলাম। কিন্তু সবাই শুধু প্রয়োজনেই ব‍্যবহার করলো। ভালোবাসা হতে পারিনি। যাই হোক ভালো থাকিস তুই। আর আসবো না তোর সামনে!

তারিমের চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। মানুষটা এতটা কষ্ট পেয়ে বড় হয়েছে সে ভাবতেই পারেনি। মন চাইছে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু এখন সে এসব করবে না। আগে তার ভাই সফল হোক তারপরেই সেই আতইয়াব কে পাত্তা দিবে। তবুও মনটা খচখচ করছে। না পেরে ছুটে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আতইয়াব থেমে গেলো। মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কিছু বলবে তার আগেই তারিম বলল,

আ’ম নট ইমপ্রেস। আমাকে ইমপ্রেস করতে পারলেই পাত্তা পাবেন। আর যতই বিয়ে হোক না কেন ভাইয়ার পারমিশন ব‍্যতিত আমি যাবো না আপনার কাছে!

তারিম মুখ ভেঙচি মেরে চলে গেলো। আতইয়াব পড়লো মহাঝামেলায়। তাকে এখন কাজ ছেড়ে এই মেয়েকে ইমপ্রেস করতে হবে সাথে আবার হৃদান চৌধুরীকে। ইমপসিবল!

চলবে….?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here