#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#সমাপ্তি_পর্ব
Tahrim Muntahana
সময়টা বছরের শেষের দিকে। শীত যেন গ্রামে ঝেঁকে বসেছে। গরম কাপড় পরিধান করার পরেও হালকা বাতাসে গা শিরশির করে উঠে। সূর্য উঠার তো নামই নেই। যে দুপুরে কড়া রোদে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হতো, রোদে চারপাশ জ্বলজ্বল করতো; সেই দুপুরেই আজ চারপাশ ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত হয়ে আছে। খালি চোখে তাকালে কুয়াশা ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। তারমধ্য থেকে আবছা আবছা ভাবে গাছপালা- ফসলের ক্ষেত কুয়াশার চাঁদরকে এড়িয়ে একটু উঁকি দেয়।
আদর রা সকল পরিবার গ্রামে এসেছে। পিঠাপুলির উৎসবে! নাসির চৌধুরী এইবার ঘটা করে পিঠাপুলির উৎসব করবে ভেবেছে। হৃদান-আদর, তারিম আতইয়াব, মামা-মামি রোহানি পরশ, পান্চু-আঞ্জুমান সবাই একসাথে থাকে। জবাফুল গাছটার পাশে বসে আছে আদর-তারিম। হৃদান-আতইয়াব নিজ নিজ কাজে গিয়েছে; রাতের আগে ফেরার সম্ভবনা নেই। তারিম একটু দূরে বসে আতইয়াবের সাথে ফোনে কথা বলছে আর হেসে উঠছে অবলিলায়। আদর সেদিকে একবার তাকিয়ে মুচকি হেসে উঠে পড়লো। ভালো লাগছে না। ভিষণ মনে পড়ছে মানুষটাকে। আজ গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিং রয়েছে নাহলে হৃদান আদর কে রেখে কখনোই যেত না। হাটতে হাটতে আদর নিচের একদম শেষ করিডরে এসে দাড়ালো। এখন আর ঘরগুলো তালা দেওয়া না। একটি রুমের সিটকিনি খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লো। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়লো নাবিল চৌধুরী ও রিদিমা চৌধুরীর অনেকগুলো ছবি। আদর বর্তমানে নাবিল চৌধুরীর ঘরে দাড়িয়ে আছে। শান্ত চোখে ছবিগুলা দেখতে লাগলো আদর। এক সময় বিছানায় বসে পড়লো। এই ঘরটা অকারণেই তার ভালো লাগে। এখানে আসলেই হৃদান ঘন্টার পর ঘন্টা ঘরটাই বসে থাকে। এই ঘরে নাকি সে বাবা-মা’র গন্ধ খুঁজে পায়। স্পর্শ অনুভব করতে পারে! ভাবতে ভাবতেই আদরের চোখ গেলো পাশে রাখা ফুলদানিটার উপর। সাদা গোলাপ গুলো শুকিয়ে মরে গেছে। ফুল গুলো দেখেই আদরের বিয়ের কথা মনে হলো। স্বশব্দে হেসে উঠলো সে;হাসির তালে গা দুলে উঠছে কেমন। স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠলো হৃদানের সাথে প্রথম রাত উদযাপনের সময়টুকু;
রাত বারোটার কাছাকাছি সময়। গেস্টরা ততক্ষণে নিজেদের বাড়ি পৌঁছে গেছে। হইচই টা একেবারেই কম। এমন সময় কিছু মেয়ে আদরকে একটি ঘরে বসিয়ে দিয়ে চলে যায়। আদর চোখ তুলে ঘরটা চিনতে না পেরেও যেন চিনে যায়। প্রচন্ড অবাক হয় সে। ঘরের বাইরে থেকে চেঁচামেচির শব্দ আসছে। টাকা নেওয়ার ধান্দায় আছে সুবাহ’স টিম ! আদর নিঃশব্দে পা ফেলে দরজাটা ধাম করে বন্ধ করে দিলো। দরজার বাইরে দাড়িয়ে সবাই বোকা দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো সেদিকে। তারিম নিজেও এসেছে ভাইয়ের বাসর ঘর আটকাতে। আদরের দরজা দেওয়ার শব্দে তারিম জোরে হেসে দেয়। সে আদরের প্ল্যান সম্পর্কে অবগত। আজ তার ভাই বাসর করে কেমনে সেটাই সে দেখতে এসেছে নিজের বাসর ফেলে। মিনিট পেরিয়ে ঘন্টা চলে যাচ্ছে হৃদানের আসার নাম নেই। রোহানি তারিম কে পাঠিয়ে দিয়েছে নিজের ঘরে। আতইয়াব দু তিনবার উঁকি দিয়েছে! বেচারা আর কত সহ্য করবে! তারপরেই সবাই ঘরের সামনে হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়েছে; আজ টাকা ছাড়া কিছুতেই নড়বে না।
অন্যদিকে আদর দরজা বন্ধ করে যেই না বসতে যাবে তখনি টের পায় সে কারো কোলের উপর বসেছে। চমকে দাড়িয়ে যেতে নিলেই এক বলিষ্ঠ হাত পেট আকড়ে ধরে। থরথর করে কেঁপে উঠে আদর। তার আর বুঝতে বাকি নেই তার মানুষটিই এসেছে। কিন্তু এলো কি করে। করিডর বেয়ে তো আসতে পারবে না; বারান্দার দরজা বন্ধ করে রেখেছে। তাহলে? আদরের মনোভাব হৃদান বুঝতে পারলো। হো হো করে হেসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
আজকে তোমাকে কে বাঁচাবে সুন্দরী! আজ তোমার প্রেমের সুধা পান করবো! হো হো হো!
হৃদানের কথায় আদর একদম ফুসে উঠে। ইশ কি করতে চেয়েছিলো আর কি হলো? হৃদান কে একটা শিক্ষা দিতে চেয়েছিলো উল্টো শিক্ষাটা সে পেয়ে গেলো। হৃদান কে রাগানোর জন্য বলে উঠলো,
উৎ পেতে ছিলেন রাতটার জন্য। এখনি ঝাপিয়ে পড়বেন!
হৃদানের হাত আলগা হয়ে এলো, আদরের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটার আগেই হৃদান আরো শক্ত হাতে আদরের পেট আকড়ে ধরলো। দুটো শরীর মিশে আছে একসাথে। হৃদান বাঁকা হেসে বলল,
আপনার এসব কথায় হৃদান চৌধুরী আজ রাগছে না। সে চিনে তার আদরপরীকে। আজ ভুমিকম্প, সিডর, ঘূর্ণিঝড়, সুনামি, এবং কি পৃথিবী উল্টে গেলেও বাসর হবে। বউ হারালে বউ পাওয়া যায় রে; কিন্তু বাসর রাত চলে গেলে আর পাওয়া যাবে না। বিয়ে তো আমি প্রত্যেক দিন করছি না! আর আমি এতটাও সাধু পুরুষ নয় যে বাসর রাতে বউকে ঢং করে বলবো তোমার সময় লাগলে সময় নাও। আমরা দুজন দুজনকে খুব করেই চিনি; সেই একঘন্টা আগে থেকে ঘরে ঘাপটি মেরে বসে আছি। সবাই জানে আমি বড়বাবার সাথে। হাহাহা কি বোকা টাই না বানালাম তোমাদের। নো ছাড়াছাড়ি!
হৃদানের কথায় আদর আর গম্ভীর মুখে থাকতে পারলো না। খিলখিল করে হেসে উঠলো। এই পৃদান চৌধুরী লোকটা কিসব বলতে শিখেছে। আদরের হাসি দেখে হৃদান বলে উঠলো,
হেসো না বউ
খু *!!!!!!!!* ন হয়ে যাবো
একবার এই রাত চলে গেলো
আর কি তা পাবো?
আদর চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। হৃদান তার দিকেই তাকিয়ে আছে হাসি মুখে। আদর আরেকটু কাছে গিয়ে হঠাৎ করেই হৃদানের বুকে মাথা রাখে। হৃদান ঠোঁট এলিয়ে হাসে। হৃদস্পন্দনটা স্বাভাবিক থেকে অস্বাভাবিক আকার ধারণ করছে। এই মেয়েটা আশে পাশে থাকলে কি হয় কে জানে! পাগল পাগল লাগে নিজেকে। আদর শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
আমাদের সম্পর্কের শুরু টা কেমন ছিলো বলুন তো। আদও এটাকে প্রেম করা বলে? আমরা কিন্তু প্রেম করিনি! ভালোবেসে ছিলাম একে অপরকে! আজ আমাদের ভালোবাসা বৈধ ভাবে পূর্ণতা পেলো। আমার কিন্তু একটা ছোট্ট মেয়ে পুতুল চাই!
আদরের কথায় হৃদান শক্ত করে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে ; যেন বুকের মধ্যে একদম ঢুকিয়ে রাখবে। ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠলো,
আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। মনে হচ্ছে অনেক দূরে তুমি!
আদর মায়া চোখে হৃদানের মুখশ্রী দেখার চেষ্টা করলো বাট পারলো না। হৃদান খুব শক্ত করে জড়িয়ে আছে তাকে। নিজেও হাত দুটো দিয়ে হৃদানের পিঠ আকড়ে ধরলো। এত শক্ত করে ধরেছে তবুও যেন হৃদানের মন মানছে না। সে তো বিশ্বাস ই করতে পারছে না তার জীবনে একটা মেয়ে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। এতটা ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটাকে ; হারানোর ভয় তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিতো। আদরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
তুমি আমার কাছে প্রজাপ্রতি, ফুল আর মাখনের মতো, জানো? প্রজাপ্রতি কে শক্ত করে ধরলে ম *!!* রে যাবে আবার হালকা করে ধরলে ছেড়ে যাবে কিন্তু তুমি যত্ন করে ধরো দেখবে কিছুসময়ের জন্য হলেও তোমার খুব কাছে তা বিচরণ করবে!
তেমনি ফুল কে শক্ত হাতে ধরলে পাপড়ি গুলো ঝরে গিয়ে একসময় নিস্তেজ হয়ে যাবে, অবহেলায় রেখে দিলে একসময় অভিমানে নিজেই ঝরে পড়বে কিন্তু তুমি যত্ন সহকারে পরিচর্চা করো ; ফুল গাছ টা তোমাকে প্রতিদান দিয়েই যাবে!
মাখন কেন বললাম শুনবে? মাখন কে হাত দিয়ে খুব সফটলি ধরো তোমার হাতে সমান ভাবে থেকে যাবে কিন্তু হালকা শক্ত করে ধরো পিছলে হাতের বাহিরে চলে যাবে এবং তোমার হাতটাকে নষ্ট করে দিবে। তেমনি ভালোবাসার মানুষটাকে অতি শক্ত নয়, অবহেলা নয় ; নরম, যত্নে এবং ভালোবেসেই ধরতে হয়। এতে যদি সে থাকে বুঝবে ভালোবাসা রয়েছে কিন্তু ফাঁক পেলেই বাহানা খুঁজলে বুঝে নিবে সে আর তোমার নেই!
আমি বলবো ভালোবাসা একটা ভুল! অবাক হবে? ভুল না হলে কেউ হুট করে প্রেমে পড়ে? ভুল করেই তো মানুষ ভালোবাসে। ভালোবাসাটা যদি সঠিক মানুষের জন্য হয় তাহলে ভুলটা সুখের হয়, ভালোবাসাময় হয়ে উঠে। কিন্তু মানুষটি সঠিক না হলে জীবন, মনের অনুভূতি, সময় সব নষ্ট। একটি ভুল জীবনে অনেক কিছু পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম। ভুল ভালোবাসা পিছলে যাওয়া মাখনের মতো; মাখন হাত নষ্ট করে, ভুল মানুষকে ভালোবাসা জীবন নষ্ট করে।
তুমি আমার জীবনে ভুল করে ভালোবাসার এক অনিন্দ সুখ। যে সুখে আমি ভাসতে চাই আজীবন। আমার হৃদয়ের ভালোবাসার ঝড় তুমি। যে ঝড় লন্ডভন্ড করে দিয়েছিলো আমার পাথর মন, নিষ্ঠুর মস্তিষ্ক, দয়াহীন সব অভিব্যক্তি! সেই ঝড়ই আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে জীবনের আসল সুখ, সুখকে নিজের হাতে ধরতে শিখিয়েছে। ভালোবাসি বউজান, ভালোবাসি আদরপরী, ভালোবাসি আন্ডাবাচ্চা, ভালোবাসি মাই লাইফ!
মন্ত্রমুগ্ধের মতো কথাগুলো শ্রবণ করছিলো আদর। আজ নিজেকে তার সর্বোচ্চ সুখীদের কাতারের প্রথম মানুষটি মনে হচ্ছে। মানুষটাকে জীবনে পেয়ে কতটা আনন্দিত সে ; তা নিজের বুকের ধুকধুকানিটাই বলে দিচ্ছে। পাল্লা দিয়ে যা সীমা অতিক্রম করছে। হৃদান আদরের মাথায় ছোট্ট চুমু দিয়ে বলে উঠলো,
বাট আদরপরী সব মেয়েরা তো নিজের বরের মতো একটা ছেলে চায়; আমিও ভেবেছিলাম তুমি তাই চাইবে আর আমি ঝগড়া করবো তোমার সাথে কিন্তু তুমি তো ঝগড়া করার সুযোগ ই দিলে না!
হিহিহি! আমার মেয়েবাবু এত এত এত পছন্দ। আমার সাথে ম্যাচিং করে পোশাক কিনে দিবো ওকে, ম্যাচিং জুয়েলারি কিনবো, চুল বেঁধে দিবো উফফফ কি কিউত না? আর আপনি যে খুব ঝগড়ুটে হয়ে গেছেন জানেন? আগে তো দরকার ছাড়া একটু শব্দও করতেন না; আর এখন খই ফুটে মুখে!
আদরের কথায় হৃদান শব্দ করে হেসে দেয়। যেন সে খুব খুশি এত এত কথা বলে। হঠাও করেই অবাক হয়ে বলে উঠে,
এই তুমি কি আমার বাসর রাতটা কে স্পয়েল্ড করে দিতে চাও। দেখো তো কয়টা বেজে গেছে। আসো বেবি বাসর করবো!
আদর হৃদানের পায়ের উপর ভর দিয়ে দাড়িয়ে যায়। হৃদানের মুখ একদম হা হয়ে যায়। নেশা ধরে যাচ্ছে তো! আদর মুচকি হেসে বলে উঠে,
আতেন আতেন বেপি বাথর কববো!
হৃদান আর এক সেকেন্ড ও দেরী করে না। রসালো ঠোঁট দুটো নিজের আয়ত্বে নিয়ে নেয়। ভেসে যেতে থাকে এক সুখের রাজ্যে। যে রাজ্যে শুধু দুটি মানুষ ই বিদ্যমান। রাত গভীর হতে থাকে; তাল মিলিয়ে গভীর হয় দুজনের ভালোবাসা। দুটো আত্মার মিলন তো আগেই হয়ে গেছে আজ দুটো শরীর মিলেমিশে এক হলো। ভালোবাসাময় গুঞ্জনগুলো সারা ঘরে ছড়িয়ে যেতে থাকে। একসময় থেমে যায় গুঞ্জন! একেঅপরকে জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় দুজন। আজ রাত দুজন দুজনার ছিলো!
সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিজেকে হৃদানের বিপরীত দিকে দেখতে পায় আদর। এই প্রথম আদর নিজের ঘুমের উপর বিরক্ত হলো।
এই ভাবে লাফিয়ে কেউ ঘুমাই? আজব মানুষ তুই! কই বিয়ের পরদিন সকালে নিজেকে বরের বুকে আবিষ্কার করবি তা না নিজের বরের পা জড়িয়ে, বুকের উপর পা দিয়ে ঘুমিয়ে আছিস! তোর কি আক্কেল পছন্দ বলতে কিছু নেই? মানুষ হইলি না এখনো? কতবার, কতবার মামি বলেছে ঘুমের বেশ ঠিক কর ; এভাবে কেউ ঘুমাই না অথচ আমি কি করেছি? এমন ভাবে ঘুমাই যেন ঘুমের মধ্যে যুদ্ধ করি। একপাশ করে ঘুমাই সকালে উঠে দেখি আরেকপাশে ঘুমিয়ে আছি। আজ আমার সকাল টাই শেষ রে।
নিজের মতো করে বকবক করে হতাশার শ্বাস ফেললো আদর। আজ সে খুব করে ভেবেছিলো ঘুম থেকে উঠে নিজেকে হৃদানের বুকে দেখবে। হৃদান তার দিকে মিষ্টি হেসে তাকিয়ে থাকবে, আর সে লজ্জামাখা হাসি দিয়ে হৃদানের বুকে মুখ লুকাবে। হৃদান এটা ওটা বলে লজ্জা দিবে। কিছুই হলো না এসবের। যা হলো সব উল্টো। বুক না তার কপালে পা জুটেছে! রেগে হৃদানের পায়ের বুড়ো আঙুলে দিলো এক খামচি! ধড়ফড় করে ঘুম থেকে উঠে বসে হৃদান। সে ভেবেছে কোনো পোকামাকড় বা সাপ কামড় দিয়েছে! এভাবে ঘুম থেকে উঠায় মাথায় একটু চাপ পেয়েছে। স্বাভাবিক হয়ে পাশে আদর কে খুঁজতে গিয়ে উল্টোপাশে চোখ যেতেই হৃদানের ভ্রু কুচকে আসে। আদর তার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে। সে ভেবে পাচ্ছে না আদর ওইপাশে কি করছে। আর এত সকালে রেগে আছে কিসের জন্য। আদর ধপ করে উঠে বসে হৃদানের চুল খামচে ধরে টানতে টানতে বলে উঠে,
আমি এপাশে আসলাম কি করে? আপনি থাকতে ঘুমের ঘোরে লাফাই কি করে আমি? হ্যাঁ? জড়িয়ে ধরতে খামচি দিয়েছিলো? ব্যাটা বেদ্দপ! আপনাকে উষ্টা দিয়ে আমাজনে পাঠানো উচিত!
কথাগুলো বলে রাগে ফুসতে ফুসতে ওয়াশরুমে চলে যায় আদর। আর হৃদান হ্যাবলার মতো তাকিয়ে ভাবতে থাকে কি থেকে কি হয়ে গেলো। পরক্ষণেই যখন আদরের কথার মিনিং বুঝতে পারে তখন ঘর কাঁপিয়ে হাসতে থাকে সে। এত হাসি পেয়েছে তার বিছানা থাপড়াচ্ছে কখনো, আবার কখনো শুয়ে পড়ছে হাসতে হাসতে। হৃদানের হাসির শব্দ আদরের কানে যেতেই রাগ করতে গিয়েও হেসে ফেলে! মানুষটা হাসুক, এইভাবেই প্রাণখুলে হাসুক, হাসির শব্দটাও যে মায়া মায়া লাগে!
দুজনে গোসল করে নিচে নামার প্রস্তুতি নেয়। প্রায় সবাই হয়তো উঠে গেছে। দরজা খুলে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পায়ের উপর ঢলে পড়ে পিয়াস! প্রথমে চমকে যায় হৃদান, পিয়াস ওদের নজরে আসতেই মাথায় হাত চলে যায় দুজনের! পিয়াসের পায়ের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে আছে রোহানি, ফালাহ-সুবাহ একেঅপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে, পান্চু হা করে ফ্লোরে শুয়ে ঘুমাচ্ছে আর তার বউ আঞ্জমান তার পেটের উপর পা দিয়ে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে, পরশ তো ফোন কানে রেখে মাথা কাত করে ঘুমাচ্ছে হয়তো রাহির সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গেছে, নাহার রিয়া পরশের পাশেই বসে বসে ঘুমাচ্ছে। হিয়ার কান্ডে হিমেল খুব আপসেট ছিলো তাই নিজের ঘরে একা ছিলো সে। কিছুটা সময় দরকার ছিলো। এরা সারা রাত এখানে ছিলো? ঘুমানোর সিস্টেম দেখে আদর-হৃদান হাসি আটকাতে না পেরে হো হো করে হেসে দিতেই ধড়ফড় করে ঘুম থেকে জেগে উঠে সবাই। পান্চু চোখ বন্ধ করে আঞ্জুমানের পা চেপে ধরে সমানে চোর চোর বলে চিল্লাচ্ছে। না পেরে আঞ্জুমান ঠাস করে টাক মাথায় চড় মারে!
পান্চুও ঠাস করে আঞ্জুমানের গালে ড় মারে। লে সমানে সমান! দুজনে বেজে যায় ঝগড়া!
শব্দ করে হাসছে আদর! এতক্ষণ এগুলোই ভাবছিলো সে। তার বিয়ে-বাসর রাত সবকিছুই ইউনিক ছিলো। পিয়াস ওদের কষ্ট দেওয়ার জন্য হৃদানের অবশ্য দ্বিগুন টাকা দিতে হয়েছিলো। হঠাৎ করেই মন ভালো হয়ে যায় আদরের। ঘর থেকে বেরিয়ে সিটকিনি লাগিয়ে হেলেদুলে গান গাইতে গাইতে এগোতে থাকে। রান্নাঘরে যেতেই চোখে পড়ে বীরহক একেরপর এক পিঠা খেয়েই যাচ্ছে। মিসেস রেহানার সাথে গাল গল্পও করছে। নিজেও মিসেস রেহানা কে সাহায্য করতে লেগে পড়ে। সংসার ভরা লাগছে। এভাবেই যেন থাকে সবসময়!
আতইয়াব-তারিম দুজনে সেই কখন থেকে কথা বলেই যাচ্ছে; ফোন রাখার নাম ই নেই। আতইয়াব তো পারেনা এখনি ছুটে আসে। কথা বলার একপর্যায়ে আতইয়াব বলে উঠে,
আচ্ছা তোমার মনে আছে তারিম? বাসর রাতে কি কান্ডটাই না করেছিলে! হো হো হো!
কথাটা বলতেই তারিম লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। আবার রাগ হয় তার। সবসময় কেন কথাটা বলতে হবে। তাকে লজ্জা না দিলে হয় না? তারিমের মনে পড়ে যায় সেই রাতের ঘটনা,
রোহানির জন্য নিজের ঘরে গিয়ে আফসোস করতে থাকে তারিম। তার যেন আতইয়াব কে খেয়াল ই নেই। আতইয়াব অপেক্ষা করতে করতে যখন দেখলো তারিম আসছে তখন ভেবেই নিয়েছে আর আসবে না। বিছানায় শুয়ে অপেক্ষা করবে বলে কখন ঘুমিয়ে গেছে নিজেও জানেনা। এই প্রথম হয়তো বাসর ঘরে বউ এর জন্য বর অপেক্ষা করতে দেখলো আতইয়াব! ভুক্তভোগী সে নিজেই! বিছানায় চোখ যেতেই তারিম অবাক হয়; সেই লেভেলের অবাক। ধপাধপ পা ফেলে আতইয়াবের কাছে যাবে তার আগেই পা পিছলে ঠাসসস করে পড়ে যায়! আল্লাহ গো বলে এক চিৎকার দিতেই আতইয়াব ঘুম থেকে জেগে উঠে। এভাবে তারিম কে পড়ে থাকতে দেখে হো হো করে হেসে দেয়। সে বুঝেছে তার বউ তার উপর রাগ করেই পা পিছলে পড়েছে। টেনে তুলবে কি হাসিই আটকাতে পারে না সে। তারিম নিজেই কষ্ট করে উঠে দাড়ায়। রাগ যেন সপ্তম আসমানে এসে ঠেকেছে। আবার তেড়ে আসতে নিবে আবার পা পিছলে সোফায় একদম শুয়ে পড়ে। আতইয়াব এবার হাসতে হাসতে নিচে বসে পড়ে। তারিম নিজেও নিজের কান্ডে হো হো করে হেসে দেয়। ঘরটাই শুধু হাসির শব্দ ভাসতে থাকে। একসময় হাসি থামিয়ে এগিয়ে আসে আতইয়াব। তারিম কে তুলতে নিবে তারিম এক টানে আতইয়াব কে নিজের উপর ফেলে দেয়। হালকা ব্যাথাও পায় সে। কিন্তু পাত্তা দেয় না। আতইয়াব কে চোখ মেরে বলে উঠে,
আতেন বাথর কববো!
আতইয়াব হাসে। সে জানে এটা তার বোনের প্ল্যান। কারণ মাঝে মাঝেই আদর ওমন করে কথা বলতো। বাসর রাতে বাসর করবে না কি করবে? শুরু করে দেয় তার কাজ। ভাসতে থাকে নিদারুণ সুখে!
আতইয়াবের ডাকে ভাবনা থেকে বের হয় তারিম। আতইয়াব বলে উঠে,
রোগি আসছে পরে কথা বলি।
হু বলে ফোন টা কেটে দেয় তারিম। কিছুক্ষণ ওখানে বসেই দিনগুলোর কথা ভাবতে থাকে। অধরে একচিলতে হাসি ফুটে উঠে। এ হাসি যেন সারাজীবন বজায় থাকে।
মিটিং রুমে বসে আছে হৃদান। তার পাশেই পিয়াস আর পান্চু দাড়িয়ে আছে একটু দূরে। অর্ধেক মিটিং হয়ে গেছে। মিটিং টা এতটা ইমপরটেন্ট না হলেও বিজনেসের জন্য সব দরকারি। হঠাৎ ফোনটা বাজতেই হৃদান অবাক হয়। আদর ফোন দিয়েছে। এই সময়ে ফোন দেওয়ার কথা না তাহলে ফোন দিচ্ছে কেন। চিন্তায় পড়ে যায় সে। মিটিং অফ করে ফোন রিসিব করে কানে ধরতেই মিষ্টি কন্ঠে ভেসে আসে,
কখন আসবেন হৃদ! মিস করছি আপনাকে।
হৃদানের মাথা একদম আউট হয়ে যায়। এইভাবে বউ ডাকলে থাকা যায় না গিয়ে? সে তো থাকতে পারবে না। এই মুহূর্তে তার বউকে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। বউ তাকে মিস করছে আর সে যদি না যায় এ তো ঘোর অন্যায়। উঠে দাড়ায় সে। মিটিং এ উপস্থিত সবার চোখ তার দিকে। হৃদান অবলিলায় বলে উঠে,
মিটিং ক্যান্সেল। আমার বউ আমাকে খুব মিস করছে, আমাকে যেতে হবে। বর্তমানে আমার বউ দরকার। নাহলে কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই কেজি শুকিয়ে যাবো!
বলেই ছুট লাগায় হৃদান। আর সবাই হো হো করে হেসে দেয়। যারা নিউ তারা হয়তো হৃদানের আচরণ সম্পর্কে জানে না কিন্তু যারা এখানের কলিগ তারা হৃদানের আচরণ সম্পর্ক পরিচিত হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর পরই আমার বউ কি করছে কে জানে, আমার বউ খেয়েছে কিনা কে জানে, আমার বউয়ের আমাকে মনে পড়ে না, আমার বউ লাগবে, এই শাড়িটা সুন্দর না আমার বউকে মানাবে, এই জুতোটা কিউট না আমার বউয়ের জন্য। ইতিমধ্যে বউপাগল হিসেবে খ্যাতিলাভ করে ফেলেছে হৃদান চৌধুরী। কিন্তু এতে তার আফসোস নয় বরং গর্ব হয়। বউকে ভালোবাসতে পারলে জীবন সুন্দর।
হৃদানের যাওয়া দেখে পান্চুর মুখটা একদম চুপছে যায়। চাপা শ্বাস ফেলে এক বুক হতাশা নিয়ে বসে পড়ে চেয়ারে। পিয়াস সেদিকে একপলক তাকিয়ে কাজে মন দেয়। পান্চুর মুডের ঠিক নেই। এই ভালো এই দেবদাসের মতো বসে থাকে। পান্চু ভাবছে তার বউয়ের কথা, তার বাসর রাতের কথা। বাসর রাতের কথা মনে হতেই পান্চুর বুকটা একদম ফালাফালা হয়ে যায়।
নাচতে নাচতে বাসর ঘরে ডুকে পড়ে পান্চু। আহা আজ তার বাসর রাত। সেই কবে বিয়ে করেছে অথচ আজ বাসর করতে পারবে! কি মজা। ঘরে গিয়েই দেখতে পায় তার বউ শাড়ি পড়ে হিজাব পড়ে বসে আছে। ভালোলাগায় ছেয়ে যায় তার মনটা। খুশি মনে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসতেই আঞ্জুমান মাথার হিজাব খুলতে শুরু করে। পান্চু তো খুশিতে বাকবাকুম। হিজাবের শেষ অংশ খুলে পান্চুর দিকে এগিয়ে যায় আঞ্জুমান। পান্চু তখন নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। টাক মাথায় টোকা পড়তেই সামনে দিকে তাকায়। দিন দুনিয়া ঘুরে উঠে পান্চুর। মনে হয় সে যেন এই দুনিয়া তে নেই; মারা গেছে অনেক আগেই। জোরে এক চিৎকার দিয়েই অজ্ঞান হয়ে ধুম করে মাটিতে পড়ে যায়। ঠুস করে টাক মাথায় ধাক্কা লেগে টুস একটা শব্দ হয়। আঞ্জুমান তাড়াতাড়ি চোখ মুখে পানি দেয়। জ্ঞান ফেরে না। পান্চুর চিৎকারে ততক্ষণ হৃদান রা সবাই এসে গেছে। হৃদান-আদর যেন জানতো এমন কিছুই হবে। তাই তো ডক্টর আগে থেকেই এরেঞ্জ করে রেখেছিলো। কিছুক্ষণ পর পান্চুর জ্ঞান ফিরতেই বিলাপ করতে থাকে,
ম্যামরে তুমি কি অভিশাপ দিলা গো। আধা টাকু পান্চু কাকু বলো ঠিক আছে। টাক মাথায় তবলা বাজাও ঠিক আছে কিন্তু তোমার ওই সোনার মুখ নিয়া কেন অভিশাপ দিলা আমার যেন টাক বউ হয়। আল্লাহ এখন তো আমার বউ টাক।
পান্চুর কথা শুনেই চারদিক হাসির শব্দে মুখোরিত হয়ে যায়। আঞ্জুমান নিজেও হাসছে। আদর বলে উঠে,
তুমি পান্চু অর্ধেক টাকু তোমার বউ আঞ্জু পুরো টাকু। খাপেখাপ মিলে গেছে। বাসর কিন্তু জমিয়ে করবে!
সবাই হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায়। সেদিন আর পান্চুর বাসর করা হয় না। বিলাপ বকতেই পুরো রাত শেষ হয় অথচ পাশেই আঞ্জুমান শান্তির ঘুম দেয়।
আবার হতাশার শ্বাস ফেলে পান্চু। টাক নিয়ে সমস্যা নেই তার। আঞ্জুমানকে সে ভালোবেসে ফেলেছে। কিছু হলেই টাক মাথা নিয়ে গুতাগুতি লেগে যায়। পান্চু আঞ্জুর টাক মাথায় লাগায়, আঞ্জু ও কম যায় কেন সেও পান্চুর আধা টাক মাথায় লাগায়। আদরের রেফারেন্সে পান্চু আঞ্জু কাপল’স অফ টাকু পুরস্কার পেয়েছে!
মূলত মজা করেই একটা অনুষ্ঠান করেছিলো আদর।
ফোনে রিং বাজতেই পান্চুর মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। টাক বউ ফোন দিয়েছে। একটু প্রেম করা যাক!
হৃদান চৌধুরী মঞ্জিলে এসেই রান্না ঘরে ঢুকে পড়ে। আদর পিঠা বানানো দেখছিলো। হৃদান কাউকে কিছু না বলেই আদর কে কোলে উঠিয়ে নেয়। মিসেস রেহানা দুজন কে দেখে হাসতে থাকে। এর আগে বহুবার হৃদান এমন করেছে। লজ্জা নেই! ড্রয়িং রুমে বসে ছিলো নাসির চৌধুরী ও আহনাফ চৌধুরী। হৃদান কে এভাবে দেখেই নাসির চৌধুরী কপট রেগে বলে উঠে,
এবার একটু লজ্জা রাখো। বাবা হই তোমার। ক’দিন পর নিজেও বাবা হবে।
হৃদান হিহি করে হেসে বলে উঠে,
রান্নাঘর ফাঁকা চুমু লাগলে চান্স নিয়ে নাও। আমার প্রেমে বাঁধা দিচ্ছো কেন? ভিলেন গিরি করতে এসো না। তোমার প্রেমে একবার বাঁধা হলে বউ পাবেনা। আর বাবা হওয়ার জন্যই তো বউ দরকার! কিছুই শিখোনি দেখি।
নাসির চৌধুরী গলা কেশে উঠে পড়ে। চুপিচুপি রান্নাঘরের দিকে যেতে শুরু করে। আহনাফ চৌধুরী মাথায় হাত দিয়ে দুইজন কে দেখে। এরা যে বাবা-ছেলে কে বলবে। ছেলে বলল ওমনি বাবা চলে গেলো। হাইরে দিনকাল! হৃদান আহনাফ চৌধুরী কে দেখে বলে,
তুমি ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আর কত অপেক্ষা করাবে মিস পুষ্পিতাকে। কম তো অপেক্ষা করেনি। নিজের মনেও যে লাড্ডু ফুটে অস্বীকার করতে পারবে? ইউ স্ট্রং না? হিমেলের জন্য শালী-শালা আনার ব্যবস্থা করো।
ও পুষ্পিতা গেছস কিনা ভুইলা আমারে
তোরে দেইখা লাড্ডু ফুটে আমার বুকেরি মাঝে!
হাসতে হাসতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায় হৃদান। আহনাফ চৌধুরী ততক্ষণে কানে হাত দিয়ে এদিকওদিক তাকাচ্ছে; কেউ শুনলো কিনা। এই ছেলের সব দিকেই নজর থাকে!
হৃদান নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। দেরী না করে টপাটপ কয়েকটা চুমু খেয়ে বিছানায় বসে। আদর রেগে তাকিয়ে আছে। খানিক পরেই হতাশার শ্বাস ফেলে। এই ক্যাবলাব্রিটিশ লোক কে কি করে বুঝাবে? যখন তখন যেখানে সেখানে এসব করে বসে। লজ্জায় পড়তে হয় তার! আদরের রাগি মুখশ্রী দেখে হৃদান বলে উঠে,
কাছে এসো কাছে এসো
দূরে কেন থাকো
আমার লজ্জা নেই
তা তো তুমি জানো
তাহলে রাগ করো কেনো?
মনটা আমার চুমু চুমু করে
তা কি আদও বুঝো?
আতো আতো বেপি বাথর কববো!
আদর শব্দ করে হেসে দেয়। লোকটা কিভাবে যে কবিতাগুলা মেলায় কে জানে। রেগে থাকতেই দেয়না। মনে মনে প্রে করে আদর, এমন ই যেন তারা সারাজীবন থাকতে পারে। লোকটা যেন এমন ই থাকে। ভালোবাসায় ঘেরা থাকবে সংসার। আস্তে আস্তে সময় চলে যাবে নিজ গতিতে, ভালোবাসাও একেকসময় একেক রূপ ধারণ করবে কিন্তু স্বচ্ছ ভালোবাসাটা আজীবন রয়ে যাবে। পাথর মনে হঠাৎ করে আসা ঝড় সারাজীবন বয়ে নিয়ে যাবে হৃদান। আহা জীবন! ভালোবাসাময়, সুখকর!
সমাপ্ত
(