#মহুয়া
#শারমিন_আক্তার_সাথী
পর্ব: ১
১!!
_” আচ্ছা রিদু মানুষ ভালো কেন বাসে? বিয়ে কেন করে?
_” সুখে থাকতে যারে ভূতে জোরে জোরে কিলায় তারা এমন কাজ করে।
_” তাহলে আমাকে কেন ভালোবাসলি হারামি?
_” তুই দেখতে যা সেক্সি প্রিয়তি! উফ পুরা কোকাকোলার বোতল! ৩৬/২৫/৩৬।
_” মানে? কী বললি?
_” কিছু না। জাস্ট তোর জামার মাপ নিলাম। তোর জন্য নতুন জামা বানাতে দিব।
_” দেখ রিদু তোর কথার মানে আমি বেশ ভালো করে বুঝি।
_” বুঝলে তো তোর উত্তেজিত হবার কথা। ঠান্ডা পানি কোথাকার!
_” উত্তেজিত তোকে দেখে? যা সর বমি পাচ্ছে। বমি দিব।
_” আজব মানুষ উত্তেজিত হলে, বেশি খুশি হলে, দুঃখ পেলে, তার পেটে প্রেশার পড়ে এবং টয়লেট ভালো হয়, আর তোর বমি পায়? আজব তো!
_” ইয়াক! রিদু তুমি ঠিক কী পরিমান খাচ্চর!
_” চুপ কর তো। কাল রাতে তোর টেনশনে আমার বাথরুম ক্লিয়ার হয়েছে। আহা তিনদিন পর আমার টয়লেট ক্লিয়ার হলো। আহ পেটটা পুরো শান্ত। বুঝলি প্রিয়তি ভোগে সুখ নাই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। খেয়ে যতটা শান্তি বাথরুম করে তার দ্বিগুন শান্তি।
প্রিয়তি মেজাজ গরম করে বলল,
_” অামি গেলাম। তুই থাক তোর টয়লেট এক প্রেম কথা নিয়ে।
রিদু প্রিয়তির হাত ধরে বলল,
_” নিজের বরকে সেই কখন থেকে তুই তুকারি করে যাচ্ছিস।
প্রিয়তি রাগ করে হাত ছাড়াতে চাইলে রিদু আরও শক্ত করে ধরে বলল,
_” আরে ময়না শোন না। কোথায় যাচ্ছিস? আচ্ছা যাচ্ছিস যা। তবে মুখটা কেমন তেতো হয়ে আছে। যাবার আগে ঠোঁটে একটা গভীর চুমো খেয়ে যা তো। তোর মিষ্টি ঠোঁটের ছোঁয়ায় মুখটা ঠিক করে দে।
প্রিয়তি রিদুর পেটে ঘুষি মারতে নিলে রিদু হাত ধরে প্রিয়তিকে নিজের কাছে টেনে বলল,
_” নিজের বরকে মারতে লজ্জা করে না তোর!
_” না করে না।
_” র্নিদয়, নিষ্ঠুর বউ।
বউ বর কথাটা শুনে প্রিয়তি মন খারাপ করে ফেলল। চোখ টলমল করতে লাগল। লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বলল,
_” রিদু আমি বাড়ি কবে যাব?
রিদু মাথা নিচু করে বলল,
_” আমার বাবা যখন চাইবে।
_” রিদু ছেলে হিসাবে তোমার বাবার প্রতি, তোমার পরিবারের প্রতি তোমার কর্তব্য অবশ্যই আছে। কিন্তু স্বামী হিসাবে আমার প্রতি তো তোমার কর্তব্য আছে।
রিদু প্রিয়তিকে বাহুবন্দী করে বলল,
_” আমি জানি আমার প্রিয়। কিন্তু তোমার বোন প্রেমার কারণে আমাদের দুই পরিবারে যে বিরাট ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধানই তো খুঁজে পাচ্ছি না। দোষী কে সেটাই তো বুঝতে পারছি না! তোমার বোনের দিক থেকে ভাবতে গেলে ও এমন জঘণ্য কাজ কেন করবে? আর আমাদের পরিবারের কথা তো——!
_” আমি বু্ঝতে পারছি রিদু। কিন্তু স্বামী স্ত্রী হয়েও আমরা দু মাস যাবত দূরে আছি। দেখা করছি লুকিয়ে লুকিয়ে। আমার ভালো লাগছে না রিদু। আমি আমার স্বামীকে সবসময় কাছে চাই। ঝামেলাটা হয়েছে অন্য কাউকে নিয়ে অথচ ভূগছি আমরা দুজন।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রিদু বলল,
_” হুঁ। কিন্তু সে অন্য কেউটা তোমারই বোন আর আমার—-। আর তুমি তো জানো আমাকে কিভাবে বন্দী করা হয়েছে!
_” সত্যি বলছি রিদু আমার ভালো লাগছে না আর। নিজের স্বামী সংসার ছেড়ে কতদিন দূরে থাকব।
_” আর কটা দিন সবুর করো। সব গোছানোর চেষ্টা করছি।
_” যেমন তোমার বাবা তেমন আমার বাবা। কেউ কারো থেকে কম যায় না। দুই ঘ্যাড়ত্যাড়া লোকের কবলে পড়ে আমাদের দুজনার জীবনটা তেজপাতা হয়ে গেল।
রিদু প্রিয়তির ঠোঁটে গভীর চুমো খেলো। তারপর বলল,
_” আর একটু। দেখি সত্যিটা বের করতে পারি কিনা।
_” হুঁ।
_” আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।
_” এখন তো তিনিই ভরসা।
২!!
সন্ধ্যার পর রিদু প্রিয়তিকে চুপি চুপি ওর বাড়ির গলিতে নামিয়ে দিয়ে নিজে বাসায় ফিরল। বাসায় ফিরতেই রিদুর বাবা হারুণ সাহেব বললেন,
_” হৃদয়!
রিদুর পুরো নাম হৃদয় আহমেদ। সবাই রিদু ডাকে।
_” বাবা কিছু বলবে?
_” আজ তো তোর অফিস বন্ধ। আর বন্ধের দিন তো তুই সারাদিন বাড়িতে থাকিস। বের হোস না কোথাও। তবে ইদানিং বন্ধের দিনও বাসায় তেমন থাকিস না কেন?
_” এমনি।
_” আগে তো এমনি এমনি কিছুই করতি না।
_” আগে তো কত কিছুই করতাম কিন্তু এখন করি না। তেমনি আগে কিছু কাজ করতাম না এখন করি।
_” সরাসরি বল ঐ মেয়েটার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি।
_” বাবা যাকে তুমি ঐ মেয়ে বলছ সে কিন্তু এ বাড়ির বড় বউ, আমার স্ত্রী।
_” সেটাই আমাদের শনির মূল কারণ।
_” বাবা প্রিয়তির সাথে কিন্তু আমার প্রেমের বিয়ে নয়, বরং তোমরা পছন্দ করে বিয়ে ঠিক করেছিলে। ঝামেলা তোমরা করেছ কিন্তু ভুগছি আমরা দুজন।
_” মুখে মুখে কথা কম বল।
_” চুপ করেই তো থাকছি দুই মাস যাবত। মেরুদন্ডহীন প্রাণীর মত তোমাদের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার হয়েছি। সেদিন যদি প্রিয়তিকে নিয়ে যেতে না দিতাম তবে ও আমাদের বাড়ি থাকত। অন্যায় তোমারা আমাদের দুজনার সাথে করছ। নিজেদের ঝামেলায় আমাদের সংসারটা ভাঙছো।
_” বড় বড় কথা না বলে, আগে তোর শালীর বিচার কর।
_” যে ঘটনার সত্যতাই জানি না তার বিচার কিভাবে করব!
_” তবে—–
রিদু আর সেখানে দাঁড়াল না। ওর এসব কথা শুনতে বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই। নিজের রুমে গিয়ে ওর বাবার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল।
প্রিয়তিও বাড়ি ফিরতেই একই প্রশ্ন। প্রিয়তির মা রেহেনা বেগম প্রিয়তিকে জিজ্ঞেস করল,
_” কোথায় গিয়েছিলি?
_” কাজ ছিল।
_” ঐ বলদ গাধাটার সাথে তোর কাজ ছিল? যার কিনা সত্যি কথা বলার মুরোদ নেই।
_” সত্যি জানলে না সত্যি বলত। সত্যিটা তো তোমার মেয়েই লুকাচ্ছে।
_” দিন দিন তোর সাহস বাড়ছে প্রিয়তি। তুই ঘন্টার পর ঘন্টা বাইরে গিয়ে একটা ছেলের সাথে সময় কাটাচ্ছিস।
_” সাহস না থাকার মত তো কোনো কাজ করিনি মা? চুরি করিনি, কোনো নোংরামি করিনি, কারও সাথে কোনো অবৈধ সম্পর্ক করিনি বরং নিজের স্বামীর সাথে দেখা করেছি। তার সাথে যা করার করেছি। তাছাড়া আমার উপর এখন সবচেয়ে বেশি অধিকার তার। তবে সমস্যা কোথায়?
_” বেহায়া মেয়ে মায়ের সাথে এমন কথা বলতে লজ্জা করে না তোর? ভুলে গেছিস সেদিন কী পরিমান অপমান করেছিল আমাদের? তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। লজ্জা করে না সে ছেলের সাথে সময় কাটাতে?
_” না করে না। কারণ ছেলেটা আমার স্বামী।
রেহেনা প্রিয়তির গালে কষে একটা চড় মেরে বলল,
_” বাবা, মা, বোন নিজের পরিবারের চেয়ে ঐ ছেলেটা তোর কাছে আপন হলো? যার সাথে কিনা তোর বিয়ে হয়েছে তিন মাসও হয়নি।
৩!!
গভীর রাত।
প্রিয়তি রিদুকে কল করে বলল,
_” তোমার মনে আছে রিদু আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার কথা!
মৃদু হেসে রিদু বলল,
_” বেশি ব্যথা পেয়েছো?
_” কেন?
_” তোমার মা তোমায় মেরেছেন।
প্রিয়তির চোখ টলমল করছে। ভারী গলায় বলল,
_” নাহ।
_” সত্যি।
আটকানো গলায় বলল,
_” হুঁ।
_” তোমার রুমের পিছনের দরজাটা খুলবে?
_” কেন?
_” আমি তোমার রুমের পিছনের দরজায়।
প্রিয়তি দ্রুত দরজা খুলল। রিদু অন্ধকারে দাঁড়িয়ে। প্রিয়তি রিদুকে রুমে টেনে এনে দ্রুত দরজা বন্ধ করল। সামনের দরজা বন্ধ কিনা আবার চেক করল। দরজায় পর্দা ছেড়ে দিল, জানালার পর্দাগুলোও দ্রুত ছেড়ে, রুমের চারপাশে চোখ বুলাল। রুমের বাতিটা বন্ধ করে মৃদু আলো জ্বালিয়ে রিদুর কাছে দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
_” এত রাতে তুমি এখানে?
_” তোমার হৃদয়ের হৃদয়কে কেউ আঘাত করেছে, তো তোমার হৃদয়টা বুঝি ভালো থাকে?
_” তোমাকে কে বলল?
_” তিথি বলল। (তিথি প্রিয়তির কাজিন)
প্রিয়তি রিদুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
_” আমি এই বাদামী চোখের, লম্বা, শ্যামলা ছেলেটাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি। যার কোকরা চুল আমার মন কেড়েছিল। আমি একে বড্ড ভালোবাসি।
_” আমিও এই ঘোলা চোখের মেয়েটাকে খুব ভালোবাসি। মেয়েটার রেশমী চুল আমাকে মহুয়ার মত টানে। মেয়েটার হৃদয় এই হৃদয় নামের ছেলেটাকে বেঁধে রেখেছে গভীর থেকে।
চলবে________
ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিলে উপকৃত হব। যেহেতু রোমান্টিক উপন্যাস সেহেতু প্রচুর রোমান্টিক এবং ১৮+ কথাবার্তা থাকবে। তাই আগে থাকতে সর্তক করে দিলাম। পর্ব রোজ দেবার চেষ্টা করব। তবে পর্ব বড় না হলে অভিযোগ করতে পারবেন না। গল্প কোনো প্রকার কপি করা যাবে না। প্রয়োজন হলে পেজ বা টাইমলাইন থেকে শেয়ার দিন। ধন্যবাদ।