#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পর্ব৪
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
” তোর জন্মের আগেই তোর বাবা মা*রা গেছে আর জন্মের পর মা।বুঝ তুই কেমন কুফা।বাপ মাকে তো খেয়েছিস ইই এখন আমাদের খাওয়ার ধান্দায় আছিস।”
খেতে বসেছিলো জুঁই। মামীর এমন কথায় জুঁই আর খাবার মুখে তুলতে পারে না।ঠিক ইই তো।একটা মেয়ে কতবড় কুফা হলে তার জন্মের আগে বাবা আর জন্মের পর মা মা*রা যায়।
” ভালোয় ভালোয় বলছি সম্পত্তিগুলা তোর মামা বা আমার নামে লিখে দে।”
” কখনোই না।এই সম্পত্তির লোভে অন্তত আমায় থাকতে দিয়েছো।লিখে দিলে আমায় রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিতে তোমরা দু বারও ভাববে না।”
” খুব চোপা হয়েছে দেখা যায়।”
” ছিলো ইই বা না কবে।চুপ করে কতদিন বা থাকবো।রেস্ট্রুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছি।শুধু মাথাগোঁজার ঠাই টুকু দিয়েছো।আগে তো দাদা বাড়িতেই থাকতাম।এসএসসিরর সময় দাদি মারা গেলো।দুটো বছর হলো তোমরা আশ্রয় দিয়েছো।অসুবিধা হলে বলো।আমি বেরিয়ে যাবো। ”
জুঁইয়ের কড়া কথায় মামীর কথার মোড় বদলে যায়।জুঁই তাদের কাছে সোনার ডিমপাড়া হাঁস। এভাবে হাতছাড়া হয়ে যায়।মামী কৃত্রিম হাসি দিয়ে জুঁইয়ের পাশে যান।মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেন,,,,
” দূর পাগলি! মজা করলাম।তুই এভাবে কষ্ট পাবি জানলে কখনোই অমন মজা করতাম না।”
” এতদিনও আমার সাথে যা যা করেছো সেগুলোও কি মজা মামী?কথা শোনানো,ম*রা বাপ-মাকে তুলে গা*লি*গা*লা*জ,এগুলোও তোমার মজা।সত্যি বলতে মামী তোমার মজা গুলো খুবই সস্তা আর নিম্ন মানসিকতার।”
_______💗
রাত প্রায় তিনটা।আনান বিছানায় শুয়ে আছে।ঘুম নেই তার চোখে।জুঁইকে দেখার পর থেকেই তন্দ্রা যেন তার অক্ষিযুগল থেকে চিরতরে বিদায় নিয়েছে।কিন্তু আনান এই অনুভূতিকে আগাতে দিতে চায় না।জেনে শুনে কেন আনান একটা মেয়েকে তার জীবনের সাথে যুক্ত করে মেয়েটার জীবন নষ্ট করে দেবে।বাবা নেই।মা থেকেও নেই।যদিও আশরাফ সাহেব আনানকেও যথেষ্ট স্নেহ করে। কিন্তু তারপরও সে লোকটাকে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি।আরিফ সাহেব রোড এক্সিডেন্টে গত হওয়ার পর আনানের আর কাওকে বাবা ডাকা হয়নি।আর হবেও না।কারণ বাবা তো বাবাই।পৃথিবীতে অনেক কিছুর বিকল্প থাকলেও মা-বাবার কোনো বিকল্প হয় না।
আনানের মা পেশায় একটি কলেজের প্রভাষক।আনানের বাবা বেঁচে থাকতেই তার চাকরিটা হয়।ত্যাড়া স্বভাবের আরিফ সাহেব স্ত্রীকে খুব কড়া নজরেই রাখতেন।আরিফ সাহেবের বড় ভাই আশরাফ সাহেব প্রবাসে থাকায় তার আর বিয়ে করা হয়ে উঠে নি।আরিফ সাহেবের গত হওয়ার পর আনানের দাদা-দাদি আনানের মায়ের সাথে তার বিয়ে দেন।আনানের তখন বয়স পাঁচ কি ছয় হবে।নতুন স্বামী পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন মিসেস লাকি।আশরাফ সাহেব আরিফ সাহেবের বিপরীত ছিলেন।যার দরূন তিনি স্ত্রীকে খুব একটা কিছু বলতেন না।বেতন শুরু হওয়ায় আনানের মায়ের আচার-আচরণ আরও উশৃংখল হয়ে উঠে।আগে বোরকা পরে বের হতেন যে মহিলা এখন সে মহিলা কোনো রকমে গলায় ওড়না ঝুলিয়ে যান। আনানের স্পষ্ট মনে আছে।আনানের দাদা-দাদি এ বিষয়ে কিছু বললেই আনানের মা তাদের সাথে বেয়াদবি করতেন।চিৎকার করে বলতেন,,,
” কারও কামাইয়ে খাই না।নিজের কামাইয়ে খাই।”
অযোগ্যরা ক্ষমতায় পেলে যা হয় আর কি!এই রকম আচার-আচরণের জন্যই আনানের মন থেকে ওর মা উঠে না।মিসেস লাকি শুধু আনান,আহান আর অহনাকে পেটে ধরে জন্ম ইই দিয়েছেন।তাছাড়া ওদের যাবতীয় কেয়ার মিসেস শান্তা অর্থাৎ শালিকের মা ইই করতো।যার দরূন মা বলতে আনান আহান মামীকেই চিনে।অহনা বাচ্চা মেয়ে।কাদামাটির মতো।বড় দুই ছেলেকে মন মতো গড়তে না পারলেও ছোট মেয়েকে ঠিক ইই নিজের মন মতো করে গড়ে নেওয়ার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন মিসেস লাকি।
মানুষের যে বেঁচে থাকার জন্য জীবনের প্রতি একটা আগ্রহ থাকে আনান সেটা বহু আগেই হারিয়ে ফেলেছে।এমন জীবনের সাথে জড়িয়ে একটা মেয়ের জীবনকে আনান নষ্ট করতে চায় না।মানুষ মাত্রই স্বার্থপর। কিন্তু জীবনের এক পর্যায়ে কিছু মানুষ কোনো স্বার্থ খুঁজে পায় না।
দেহের মৃত্যুর রেজিস্ট্রার রাখা হয়, আত্মার মৃত্যুর না।
– প্রমথ চৌধুরী
আনানের আত্মার মৃত্যু অনেক আগেই হয়ে গিয়েছে।এখন শুধু দেহের মৃত্যু বাকী। আ*ত্মহ!ত্যা মহাপাপ বলেই অনেক মৃত আত্মারা জীবন্ত দেহ নিয়ে এই পৃথিবীতে বেঁচে আছে।
______💗
” আম্মু?”
” হু।”
” একটা কথা বলবো?”
” হু বল।”
” আনি ভাইয়া ফুপাকে আব্বু ডাকে না কেন?”
মেয়ের চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছিলেন মিসেস শান্তা।মেয়ের প্রশ্নে চুল আঁচড়ানো থামিয়ে দেন সে।তটস্থ হয়ে বলেন,,,
” তুই কি এটা আনি বা আহিকে জিজ্ঞাসা করেছিলি নাকি?”
” নাহ।কিছু একটা ঘাবলা আছে।জিজ্ঞাসা করলে যদি কষ্ট পায় তাই জিজ্ঞাসা করিনি।কিন্তু অনেক দিন ধরেই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিলো মনে।”
মেয়ের কথায় হাফ ছেড়ে বাঁচেন মিসেস শান্তা।আনান আহান মিসেস শান্তার কাছে সাদের থেকে কোনো অংশে কম না।তিনি কিছুতেই চান না ওরা শালিকের দ্বারা কষ্ট পাক।কোলে পিঠে করে দুই ভাইকে মানুষ করেছেন।মায়া বলে কিছু একটা তো আছে।
” আম্মু প্রশ্নের উত্তরটা কি পাবো?”
” জানা দরকার।বড় হয়েছিস।আহি আনির মা এক হলেও বাবা আলাদা।”
” মানে?”
” আনির বাবা ও ছোট থাকতে মারা গেছে।তারপর আনির দাদা-দাদি তাদের বড় ছেলে যে প্রবাসে ছিলো অর্থাৎ আহি অহনার বাবার সাথে তোর ফুপুর বিয়ে দেন।”
” ফুপুর মতো মানুষকেও কেউ দু দুবার পুত্রবধূ করেন?এমন ব্রেইনলেস মানুষও দুনিয়ায় ছিলো?”
” মানে?”
” না মানে…ফুপি যে টাইপের মানুষ। জেনে শুনে কেউ খাল কেটে তার কুমির আনতো না।ব্রেইন নেই দেখেই তো….!”
” আনানের বাবা কড়া আর ত্যাড়া ধাঁচের মানুষ ছিলেন।তার ভয়ে তোর ফুপু সব সময় তটস্থ থাকতো।আর আহানের বাবা উলটো তার।চুপচাপ স্বভাবের।যত পারেন ঝামেলা এড়িয়ে চলেন।”
” বুঝেছি আর বলা লাগবে না।”
” চুল বেঁধে দিয়েছি।পড়তে বস।কয়েকদিন পরেই এসএসসি।”
শালিক আর কথা বাড়ায় না।উঠে গিয়ে পড়ার টেবিলে বসে।যেভাবেই হোক মেট্রিকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে।তামিমকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে শালিক ভেঙে পরেনি ওর ছলনায়।উলটো আরও শক্ত মনের মানুষ হয়েছে। তবে প্রথম প্রেম ভুলে যাওয়ার মতো নয়।তামিমের প্রতি যে আবেগ ভালোবাসা শালিকের ছিলো সে আবেগ ভালোবাসা হয়তো কারও প্রতি শালিকের আসবে না। হুমায়ুন আহমেদের ❝আজ রবিবার❞ নাটকের মুনা বলেছিলো,,,,
” আমরা সব সময় ভুল মানুষকে ভালোবাসি।”
আবেগ,ভালোবাসা এগুলো সবার জন্য বরাদ্দ নয়। কেবল মাত্র এক জনের জন্যই এগুলো বরাদ্দ আর সেই একজন যদি ভুল মানুষ হয় তাহলে কি জীবনে আফসোসের কোনো কমতি থাকার কথা?
____💗
” আহান আমার মনে হয় তোর ফোনের ওয়ালপেপারে শালিকের ছবি দেখেই কায়েস ওকে টার্গেট করে।”
নাবিলের কথা শুনে ভাবলেসহীন দৃষ্টিতে নাবিলের দিকে তাকায় আহান।সিগারেটের জলন্ত ফিল্টারটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে শান্ত শীতল কন্ঠে বলে,,,,
” তোর শুধু মনে হচ্ছে আর আমি শিউর। ”
” তাহলে কিছু বলছিস না যে!”
” কু*ত্তায় আমায় কাম*ড়ালে আমি কু!ত্তাকে কা!মড় দিতে যাবো?”
আহানের কথা শুনে নাবিল আকাশ থেকে পরে।বন্ধুবান্ধব কাওকে কেউ কিছু বললে যে আহান তেড়ে যেতো সে আহান ইই কি না আজকে এমন কথা বললো!নাবিল হাত দিয়ে আহানের শরীরের তাপমাত্রা চ্যাক করে।আহান বেকুব হয়ে যায়।
” কি হইছে?”
” চ্যাক করতেছি তোর জ্বর টর হলো নাকি!”
” আমার কিছু হয় নি।তুই ইই ব্রেইনটা ফেলে এসেছিস।”
” সিগারেটের সাথে গাঁ!জা টানা ধরলি কবে?”
” সঙ্গদোষে লোহা ভাসে।”
নাবিল কিছু বলে না।আহানের চাল চলন ইদানীং খুব অস্বাভাবিক লাগছে নাবিলের। ভেতর ভেতর কিছু একটা নিয়ে আহান বেশ গভীর ভাবে পরে আছে।এখন এগুলো নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে এই ত্যাড়া ত্যাড়া কথাই বলবে আহান।তার থেকে কিছু না জিজ্ঞেস করাই ভালো।যে চে কে পচানি খেতে যায়?
চলবে,,,,ইনশাআল্লাহ