#মেঘফুল_ফুটলো_মনে
#বোনাস_পর্ব
#লেখনিতেঃ আবরার আহমেদ শুভ্র
–তানিম আমি প্রায় দেখছি আপনি আমাকে কেমন যেন ইগনোর করছেন। ঠিক এর কারণ কি বলতে পারবেন আমায়?
রুমে ঢুকে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই অথৈয়ের কাছ থেকে এমন কথা শোনে চমকালো সে। কি জবাব দিবে সে সেটাই বুঝতে পারছে না। সত্যি কথা বলতে গিয়ে হয়তো সে নিজেকে না ছোট করে ফেলে। তাই খানিকটা ইতস্তত হয়ে অথৈয়ের কথার প্রতিত্তোরে বললো,
–কি বলছো এসব অথৈ? আ্ আমি কেন তোমাকে ইগনোর করতে যাবো? নিশ্চয় তুমি আমায় নিয়ে উল্টাপাল্টা কিছু ভাবো হয়তো।
–আমাকে কি আপনার পাগল মনে হয়? নাকি আমাকে বোকা ভাবেন আপনি? কোনটা?
–তা হবে কেন? তুমি ভুল বুঝছো আমাকে৷ খামোখা বাজে চিন্তাভাবনা করছো।
–আমি বাজে চিন্তাভাবনা করছি না। যেটা সত্যি সেটাই বলছি।
–খামোখা প্যাঁচাল করোনা অথৈ। ভাল্লাগছেনা আমার। লিভ মি এলোন প্লীজ।
–আমি যদি প্যাঁচাল করি তো এটাও বলবো নিজের বউ থাকতে অন্য মেয়েকে কেন নিজের করে পেতে চান? এতো আগ্রহ কেন আপনার পরনারীর প্রতি? আর এতোই যখন আসক্ত ওর প্রতি তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করেছেন আপনি? কেন আমা্…. বলতে দিলো না তাকে। তার আগেই চেঁচিয়ে উঠলো তানিম।
–স্পর্ধা আকাশ চুয়েছে তোমার! যা নয় তাই বলে যাচ্ছো। তুমি ও বলে কাকে বোঝাতে চেয়েছো? ক্লিয়ার করো কথাটা।
–সকালে কার দিকে ওমন তাকিয়েছিলেন? নিশ্চয়ই সেখানে তানজিমের দিকে তাকিয়ে ছিলেন? তাহলে আবার জিজ্ঞেসও করছেন!
–জাস্ট শাট’আপ, ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট ! মুখে মুখে তর্ক করা শিখে গেছো। এর ফল ভালো হবে না কিন্তু অথৈ।.. বলে রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো৷
খাটের কার্নিশের পাশে বসে নিঃশব্দে নিজের চক্ষুজল বিসর্জন দিচ্ছে অথৈ। মনে মনে বলে উঠল, ‘কেন আমার সাজানো জীবনটা এমন তছনছ করে দিয়েছেন আপনি? আপনার যদি এতোটাই কেউকে ভালো লাগতো তাকেই নিজের করে নিতেন এর মাঝে আমায় কেন টানলেন? আমার জীবনটা কেন নষ্ট করে দিলেন আপনি?’
_______
রাজশাহী থেকে এসেছে দুদিন হলো। আজ থেকে আবারও ভার্সিটিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তানজিম। রুম থেকে বেরুতেই তানিমের সাথে দেখা হয়ে গেলো তার। যাকে সবসময়ই এড়িয়ে চলতে চাইছে ঘুরেফিরে তাকেই নিজের সামনে দেখতে পাচ্ছে সে৷ সকাল সকাল মেজাজ বিগড়ে গেল তার। যথাসম্ভব শান্ত হয়ে তাকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই পথে আটকিয়ে দাড়ালো তানিম। এবার রাগটা আকাশচুম্বী হলো তানজিমের। দাঁতে দাত চেপে বলে উঠল,
–হাউ ডেয়ার ইউ? লজ্জা হওয়া উচিৎ আপনার মতো পুরুষদের। যারা বউ থাকতে অন্য মেয়েকে অযথা ডিস্টার্ব করে৷ ছিঃ!
–তোর যা ইচ্ছে বল, অন্তত আমার কথাটা একটিবার শোন প্লীজ। কাল সারারাত ঘুমুতে পারিনি তোকে কখন কথাটা বলবো ভেবে ভেবে। অন্তত আমায় পাঁচ মিনিট সময় দেখে কথাটা বলার।
–পাঁচ মিনিট কেন পাঁচ সেকেন্ডও সময় দিতে রাজি নয় আমি আপনাকে। সরে দাড়ান, আমার ক্লাসের লেট হয়ে যাবে।
–বিশ্বাস কর, জাস্ট পাঁচ মিনিট সময় চাইছি তোর কাছে। অন্তত এই রিকুয়েষ্টটা রাখ।
বিশ্বাসের কথা শোনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো তানজিম। যাকে অন্ধবিশ্বাস করে ধোকা খেয়েছে সেই কিনা এখন বিশ্বাস করতে বলছে তাকে! ঠিক যেমনটি করে চোর চুরি করেও নিজেকে সাধুবাদ বলে দাবি করে।
–বিশ্বাস তাও আপনাকে! স্যরি ভাই সম্ভব না। আর প্লীজ আমাকে যেতে দিন অযথ সিনক্রিয়েট করবেন না। নাম আপনারই খারাপ হবে।.. বলে চলে যেতে নিলে খপ করে তানজিমের হাত ধরে ফেলে তানিম।
তানিমের এমন বিহেভিয়ার মোটেও পছন্দ হয়নি তানজিমের। প্রচন্ড পরিমাণ রাগ হলো নিজের উপর। সে এমন একটা নির্লজ্জ বেহায়া ছেলে যাকে কিনা সে ভালোবেসেছিলো। যে তার প্রথম ভালোবাসা ছিলো। ভাবতেও তার ঘৃণা লাগছে নিজের প্রতি। যখনই সে তানজিমের হাত ধরে তাকে কাছে টেনে নিতে লাগল তখনই তানজিম নিজেকে তার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সশব্দে চড় মেরে দিলো তানিমকে। শুধু অবাক নয় বেশ অবাকই হলো তানিম। তানজিম চড় মেরে বলে উঠল,
–নিজের লিমিটের মধ্যেই থাকুন মিস্টার তানিম মাহমুদ। বড় বলেই দুটো চড় দিয়েছি। নাহয় এর চেয়েও বেশি দিতে দ্বিধাবোধ করিনা আমি। সো নেক্সট টাইম এমন বিহেভ করলে শুধু চড় নয়, পায়ের জুতো খুলে মারতেও দু’বার ভাববো না। গট ইট! .. বলে হনহনিয়ে নিচে চলে গেলো সে।
আর তানিম তানজিমের যাওয়ার দিকে একমনে তাকিয়েই রইল। মনে তার কিছু না পাওয়ার নিরব গ্লানি। যেটা কখনও ফুরাইবার নয়।
____
ক্লাস শেষে ভার্সিটির গেট দিয়ে বেরুতেই ফুয়াদকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে গেলো তানজিম। সাথে সারাহ ও। হঠাৎ ফুয়াদ তাদের ভার্সিটিতে কেন এলো সেটাই বুঝতে পারলো তারা। কেন যেন সারাহ-র ফুয়াদের প্রতি সন্দেহ হতে লাগলো। তাদের দিকেই এগিয়ে এলো সে। তানজিম আর সারাহকে এমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে বলে উঠল,
–এমন রোবটের মতো দাড়িয়ে হ্যাবলার মতোন কি দেখছিস?
–না মানে ফুয়াদ ভাই আপনি হঠাৎ এখানে সেটা দেখে অবাক হলাম।
–হা, আমি চট্টগ্রামেই শিফট হয়েছি। বাসার কাজ সব শেষ। তাই ভাবলাম এদিকটায় একটু ঘুরতে যায় সাথে তোদেরকেও নিয়ে যাবে একেবারে।
–ওহ্ আচ্ছা। তাহলে যাওয়া যাক।
এতোক্ষণ সারাহ কথা বললেও একটা টু শব্দও করেনি তানজিম। নিরব দর্শক হয়ে তাদের কথায় শুনে গেলো সে। খালি আড়চোখে কয়েকবার ফুয়াদের দিকে তাকালো সে। স্কাই ব্লু প্যান্টের সাথে ব্লাক শার্টের কম্বিনেশন। টাশকি খেয়ে গেলো সে। কেমন একটা আকর্ষণ বারংবার তানজিমকে ফুয়াদের দিকে তাকাতে বাধ্য করছে৷ সেটা ফুয়াদ বুঝতে পেরে মনে মনে হাসলো৷ তারপরেই বলে উঠল,,
–চল আগে কিছু খেয়ে নে। আর ওই ম্যাডাম তো আবার কিছু বলবে না৷.. বলে তারা রেস্তোরাঁর দিকে হাটা দিলো।
কিন্তু রেস্তোরাঁতে এসে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বে সেটা যদি আগেই জানতো তাহলে হয়তো কখনওই তানজিম আসতোই না রেস্তোরাঁতে। কারণ রেস্তোরাঁতে ডুকতেই সে মাঝবয়সী একটা ছেলে এসে তানজিমকে একটা চিরকুট দিয়ে চলে গেলো। সেটা দেখে খানিকক্ষণ বিস্ময়ের ন্যায় একবার চিরকুটের দিকে আর একবার ছেলেটার যাওয়ার দিকে তাকাচ্ছে সে। পরক্ষনেই মনে হলো কেউ একজন অগ্নি চক্ষু নিয়ে সেই চিরকুটের দিকে তাকিয়ে আছে। একবার শুকনো ঢুক গিলে সেই ব্যক্তির দিকে তাকাতেই তার হাত-পা শীতল হয়ে এলো। শুধু একবার তানজিমের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
–চিরকুটরা আমায় দে। আর তোরা বোস এখানে। আমি এখনই আসছি।
#চলবে~
[