মেঘের আড়ালে বৃষ্টি পর্ব -১১

#মেঘের_আড়ালে_বৃষ্টি
#এগারো
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা

রোদ ও প্রয়াসের বন্ধুরা একসাথে হাঁটছে। সুচি রাহাতের হাত ধরে হাঁটছে। তারা কী কী বলে দুজনে হাসছে। রোদ অনেক্ষণ ধরে ভাবছে এই জায়গাটার নাম ছেঁড়াদ্বীপ কেন হলো? কেন যেন তার খুব ইচ্ছে করছে এটা জানার। কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করবে?

সাবাকে বলে,
“আচ্ছা আপু এটার নাম ছেঁড়াদ্বীপ কেন?”

সাবা বলে,
“আমিতো জানিনারে আপু। এই সকাল তুই জানিস বলনা?”

“নারে আমি জানিনা। প্রয়াস জানতে পারে।
কিরে প্রয়াস জানিস তুই?”

“হ্যাঁ জানি।”

আসলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের একটা অংশ হচ্ছে এই ছেঁড়াদ্বীপ। ছেঁড়া দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের ভূখন্ড। প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ছেঁড়া দ্বীপ অবস্থিত। স্থানীয় মানুষের কাছে দ্বীপটি ‘ছেঁড়াদিয়া’ বা ‘সিরাদিয়া’ নামে পরিচিত। ছেঁড়া দ্বীপ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পাথর, প্রবাল এবং নারিকেল গাছে পরিপূর্ণ। জোয়ারের সময় ছেঁড়া দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ সাগরের পানির নিচে তলিয়ে যায়। সাগরের নীল ঢেউ যখন পাথরের গায়ে আঁচড়ে পরে তখন এক মোহনীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়।”

রোদ মুগ্ধ স্বরে বলল, “বাহ!”

সাবা বলল, “চল ওইদিকে যাই খেয়ে দেখি এই নারিকেল বিখ্যাত জায়গার, নারিকেল কেমন হয়?টেস্ট করে দেখতে হয়।”

“হুম চল।”

সবাই নারিকেল খেতে আসল। একে একে সবাইকে ডাব দেয়া হয়। খেয়ে বুঝা যাচ্ছে, আসলেই এখানকার নারিকেলের পানি অনেক মিষ্টি।

রোদ বলে,
” এই পর্যন্ত যত নারকেলের পানি খেয়েছি। তার মধ্যে এখানকার নারকেলের পানি সুপ্রিয়।”

এখানে প্রয়াস একটা কান্ড করে। রোদ ডাবে মুখ লাগিয়ে পানি খেয়েছে। যদিও ডাবওয়ালা মামা স্ট্র দিয়েছে। রোদ সেটা ফেলে দিয়ে ঠোঁট লাগিয়ে খায়। প্রয়াস তার কাছাকাছি থাকায় ইচ্ছে করে রোদের হেয়ার ক্লিপ খুলে দেয় খুব সাবধানে। চারপাশে তাকায় কেউ দেখেছে কি – না। না কেউ দেখেনি।

রোদ বিরক্তি নিয়ে বলল, “আমার ডাবটা একটু হাতে নিবেন, চুলগুলো খুলে গেছে।”

“দাও।” বলে প্রয়াস অন্যদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।

রোদ চুল আটকাতে ব্যস্ত থাকার সুযোগ নিয়ে প্রয়াস রোদের আধ খাওয়া ডাবটার সাথে পাল্টে ফেলে।
তারপর খুব তৃপ্তির সাথে,রোদের ডাব নিজে খায়।এমন তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে,মনে হচ্ছে ডাব নয়। অমৃত খাচ্ছে।

★★★

প্রেমে পড়লে যে মানুষ কত রকম অদ্ভুত কান্ড করে তা শুধু তারাই বুঝে যারা এসব করে। দুনিয়ার যত বোকা বোকা কাজ আছে সব করে মানুষ শুধু এই প্রেমের জন্য। জীবনের সাথে যখন ভালোবাসার রঙ মিশে যায় তখন জীবন হয়ে উঠে অর্থবহ। কিন্তু সে ভালবাসা যদি একপক্ষের হয়ে যায়। ভালবাসার মানুষ যদি ভালো না বাসে তাহলে জীবনের সমস্ত রঙ কালো রঙে চেয়ে যায়। একতরফা ভালবাসার যে কী কষ্ট তা শুধু এর ভুক্ত ভোগী ই জানে।এই ওয়ান সাইডেড লাভ কখনো কখনো সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেয়। আর যখন সেই ভালবাসার মানুষটি বেস্ট ফ্রেন্ডের তকমা লাগিয়ে দেয়। তখন তা আরও দুর্বিষহ হয়ে যায়।

এখন এমনি হচ্ছে রহিমের, তার ভালবাসার মানুষটি সবসময় তার সামনে থাকে। কিন্তু তাকে ভালোবাসার মানুষ বলে কোনো প্রকার অধিকার প্রকাশ করতে পারেনা সে। সনি সবসময় রহিমের কাছাকাছি থাকে।তার কোনো সমস্যা হলে সবার আগে রহিমকে জানায়। ইভেন কোনো মেয়ে ফেন্ডকে না জানিয়ে আগে জানায় রহিমকে। এসব কী ভালোবাসার লক্ষন নয়? তারপর ও কেউ কিছু বললে বলে রহিম আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তখন বন্ধুরা সবাই চুপ হয়ে যায়। প্রথম প্রথম সবাই বুঝাতে চাইত। কিন্তু যখন সে বুঝে না।তখন আর কেউ এটা নিয়ে সনিকে কিছু বলে না।কিন্তু প্রতিরাতে নিকোটিনের ধোঁয়ায় কালো করে চলেছে হৃদয় নামক যন্ত্রটাকে। সারাদিন সনির সাথে কথা বলে বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে থেকে ,রাতে নিজেকে বড্ড অগোছালো লাগে রহিমের নিজেকে। এমন কত রাত গেছে সনির সাথে টেক্সট করছে একহাতে। অন্যহাতে চোখের জল মুছছে। অথচ কোনোদিন জানতে পারলো না মেয়েটা! রহিম আজও তাকেই ভালবাসে।হ্যাঁ হয়তো সনির কাছে সেটা স্বীকার করে না। যদি স্বীকার করে সনি হয়তো এই ফ্রেন্ডশিপটা ও রাখবে না। তাই তাকে হারানোর ভয়ে। আর কখনো বলা হয়ে ওঠেনি। আমি আজও তোকে ভালবাসি সেই প্রথম দিনের মত।

আজও রহিম নিকোটিনের ধোঁয়ায় নিজেকে জ্বালাচ্ছে পোড়াচ্ছে। সনির সাথে কথা বলে না আজ দুইদিন হলো। সনিও বলেনা। তাই যন্ত্রণা হচ্ছে তার খুব যন্ত্রনা হচ্ছে। এই নিকোটিনের ধোঁয়া ও যেন নেশা ধরাতে পারছে না। ভুলিয়ে দিতে পারছেনা মেয়েটাকে।কারণ তার যে সনি নামক নিকোটিনের নেশা ধরেছে।কিন্তু সব চাইলে কী সম্ভব? জীবনের অলিতে গলিতে এরকম কত রহিম ও কত সনি আছে। যাদের জীবনটা এমন গতিতেই চলছে। হয়তো আমরা তার খবর জানিনা।

__________________________

প্রয়াস আজও বসে আছে রিসোর্টের সামনের দোলনায়। ভাবছে রোদের কথা আমার কী উচিত রোদকে বলে দেয়া। যে আমি তাকে……..
না যদি সে না করে দেয়? তখন হয়তো তাকে খারাপ মানুষ ভাববে। যদি এসব শুনে আর কখনো কথা না বলে? না রোদ কথা না বললে প্রয়াস তা মানতে পারবে না। কিন্তু রোদকে না বলে ও যে শান্তি পাচ্ছে না সে। নিজেকে নিজের কাছে কেমন অচেনা লাগছে প্রয়াসের। তার মত এমন পার্সোনালিটি সম্পন্ন মানুষ কী না একটা মেয়ের জন্য এমন ছটপট করেছে। ভালবাসা এই চার অক্ষরের শব্দটা হয়তো এমনি । নির্লজ্জ হয়ে যায় ভালবাসার জন্য। পৃথিবীর সব রকম এটিটিউড হার মেনে যায় এই ভালবাসার কাছে। পেছন থেকে কারো কথায় প্রয়াসের ভাবনায় ছেদ পড়ে।

“বসতে পারি?”

“হ্যাঁ”

আর কেউ না রোদ এসেছে। কী অদ্ভুত যার কথা ভাবছে সে এসে হাজির। আসলে আমরা সবাই সবার সাথে সংযুক্ত। যেমন মাঝে মাঝে আমাদের প্রতিটি মানুষের সাথে এমন হয় যে আমরা কারো কথা ভাবছি এমন সময় সে সামনে চলে আসে। আবার কাউকে কল দেয়ার জন্য ফোন হাতে নিয়েছি কিন্তু দেখা যায় সেই আগে কল দিয়ে দিয়েছে। এটার দ্বারাই প্রমাণ হয় মানুষ একে অপরের সাথে কানেক্টেটেড।

,”অবশ্যই, বসো। ঘুমাওনি আজও?”

“না। ”

“কেন?”

“ঘুম আসছিল না। কাল আমরা এখান থেকে কখন বের হবো? ”

“সারাদিন ঘুরে বিকেলে বের হবো। ”

“আচ্ছা।”

“মন খারাপ করছে?”

“হ্যাঁ একটু। আসলে সবার সাথে অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি। সবাইকে খুব মিস করব।”

“সবার সাথে ঘুরেছো বলে সবাইকে খুব মিস করবে।তাহলেতো বলা যায়, আমাকে বেশী মিস করবে।”

“সরি?”

আরে বুঝনি? তুমি এখানে আমার সাথে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছো। তাই তোমার কথা অনুসারে আমাকে সবচেয়ে বেশী মিস করার কথা নয় কী?”

রোদ একটু বিব্রতবোধ করে।

“না আসলে আপনাদের সবাইকে খুব মিস করবো।”

“আরে বুঝেছি। আমি তো শুধু মজা করে কথাটা বললাম। তুমি কিছু মনে করো না। আমি কিন্তু তোমাকে খুব মিস করব।” কথাটা শুনতেই রোদের চেহেরায় অন্যরকম আভা ফুটে উঠল।

“আমাকে?”

“হুম তোমাকে মানে তোমাদের সবাইকে। ”

“আচ্ছা। ”

“তুমি চট্টগ্রাম যাওয়ার পর কলেজে আসলে প্রতিদিন আমার সাথে দেখা করবে।”

“প্রতিদিন!”

হ্যাঁ। ”

“প্রতিদিন কেন দেখা করতে হবে?”

“কলেজের বড় ভাইয়ের খোঁজ খবর নিতে।”

“আসলে, আমি প্রতিদিন আপনার সাথে দেখা করলে অন্যরা কি বলবে?”

“কে কি ভাবে এটা আমি কখনোই ভাবি না। আর আমি তোমার মতামত চাইনি। আমি তোমায় আদেশ করেছি।”
প্রয়াসের কন্ঠে কেমন ঝাঁঝালো শোনালো।

“আচ্ছা।”

কি অদ্ভুত তাইনা রোদেলা। আমরা কেউ কাউকে চিনতাম না কয়দিন আগে অব্দি আর আজ সবাই কত আপন।

আসলেই, এটা আমারও মনে হচ্ছে।

তুমি চট্টগ্রাম গেলে আমাকে ভুলে যাবে না তো?

“কি?”

একটু অবাক হয়ে রোদ বলে।

আরে মানে আমাদের সবাইকে ভুলে যাবে না তো?

কি যে বলেন আমি সহজে কাউকে ভুলিনা।আর আপনাকে ভুলা তো অসম্ভব।

একটু অবাক হওয়ার স্বরে প্রয়াস বলে,

“কি বললে?”

না মানে, এই যে আপনাদের সবাইকে ভুলা তো সম্ভব নয়।

“তুমি সিউর তুমি এটাই বলেছিলে?”

একটু ইতস্ততভাবে রোদ বলে,
জি এটাই বলেছি।
রোদ নিজেই জানেনা হঠাৎ এমন একটা কথা সে কেন বললো।

প্রয়াস ভাবছে, না রোদেলা তুমি মিথ্যে বলছো।আমি জানি তুমি এটা বলো নি।যদি এটা বলে থাকো আরেকবার বলতে। এই সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মত, প্রয়াসের বুকের ভেতরে ঢেউ উঠেছে।পার্থক্য এটাই এই সমুদ্রের ঢেউ,অস্থিরতা সবাই দেখছে। কিন্তু প্রয়াসের ভেতরের ঢেউ কেউ দেখছে না।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here