মেঘের আড়ালে চাঁদ পর্ব ২

#মেঘের আড়ালে চাঁদ ❤
#writer:মহসিনা মুক্তি
#পর্বঃ দুই

রাফসান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। তার সামনে কোনো পাওয়ার ফুল লোকও আসতে চায় না জানের ভয়ে। তার সামনে পড়া মানেই নিজের বিপদ ডেকে আনা। এজন্য বেশির ভাগ মানুষই তার থেকে লুকিয়ে থাকে। ভায় পায় তাকে। কেউ তাকে দেখে ভয় পেলে তার পৈচাশিক আনন্দ হয়। সে যেখানে যায় তার এক মাইলের ভিতর ও কোনো লোকজনকে দেখা যায় না তার দলবল ছাড়া। আর সামনে থাকা পিচ্চি মেয়েটি কোনো ভয় ছাড়া অবলীলায় কতগুলো কথা তার সামনে থেকেই বলে ফেললো। তাও আবার পিস্তলের সামনে দাঁড়িয়ে। যেখানে তার সামনে দাঁড়িয়েই মানুষ কাঁপা-কাঁপি করে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিও থরথর করে কাপছে। মনে হয় বাকশক্তি ও কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে ফেলেছে ভয়ে। কিন্তু একে দেখে মনে হচ্ছে না যে কিছু হয়েছে। কেমন অবাক হয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সে আর শক্ত করে চেপে ধরে পিস্তল মেয়েটির গলায়। যেনো গুলি না পিস্তলই গলায় ঢুকে যাবে। এতে মেয়েটি শব্দ করে কেঁদে উঠে। কিন্তু ভয়ে নয়।

রাফসান বিরক্ত হচ্ছে। কেনো মেয়েটি ভয় পাচ্ছে না? মেয়েটির তো ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবার কথা। রাফসান চৌধুরী তার সামনে পিস্তল ঠেকিয়ে রেখেছে। তার তো কাঁপতে কাঁপতে বলা উচিত, স্যার আমাকে মারবেন না। আমাকে ছেড়ে দিন। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু না তা করছে না মেয়েটি। তার রাগ হচ্ছে। ভিষন রাগ হচ্ছে। কেউ তার সামনে ভয়হীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এবার সে আর মেয়েটিকে বাচিয়ে রাখবে না একে তো তার সামনেই তার নামে উল্টো পাল্টা বকেছে। আবার ভয়হীন ভাবে দাঁড়িয়ে তার উপর কেমন ভ্যা ভ্যা করে কাদছে। সে বন্দুকের ট্রিগারের ওপর আঙুল রাখে। এমন সময় আবির বলে উঠে-

-ভাই মেয়েটিকে ছেড়ে দিন। আপনাকে চেনে না তাই বলে ফেলেছে। স্কুল কলেজের মেয়ে হয়তো আপনার নামই শুনেনি। আর পাশের মেয়ে কেমন কাঁপছে আর এটা এতক্ষণ চেয়ে থেকে এখন ভ্যা ভ্যা করছে। হয়তো এবনরমাল নাহলে এর রিয়েক্টর বাটন দেরিতে কাজ করে।

আবিরের কথা শুনে রাফসান ভ্রু কুচকে কিছু ভাবে তারপর গলা থেকে পিস্তল নামিয়ে বলে – এখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে একদম নড়বে না আমি না বলা পযন্ত।

এরপর কিছুটা দূরে গিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দেখতে থাকে। মেয়েটির গায়ে কলেজ ড্রেস। চুলগুলো একবেণি করে সামনে দেওয়া। মুখের ওপর কিছু ছোট ছোট চুল পড়ে আছে। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। চোখ গুলো এখনো বড় করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কান্নার কারণে লাল হয়ে আছে। গালে চোখের পানি গুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। হাইট পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চির মতো হবে। গলায় পিস্তল ধরার জন্য লাল দাগ হয়ে আছে। চেহারা মোটামুটি সুন্দর বলা যায়। রাফসানের মনে হচ্ছে মেয়েটিকে কোথাও দেখেছে খুব চেনা লাগছে। যাক সে এগুলা আর ভাববে না তার কাজ শেষ হলে চলে যাবে ততোক্ষণ একে সামনে দাঁড় করিয়ে রাখবে। সে ভাবছে মেয়েটি নিশ্চয়ই এবনরমাল তাই তাকে দেখে ভয় পাচ্ছে না।

দিয়া এতক্ষণ কাঁপতে কাঁপতে এদের কে দেখছিল। একটুর জন্য তুলতুল বেচে গিয়েছে। তখন ওই ছেলে যদি ছেড়ে দিতে না বলতো তো এতক্ষণ তুলতুলের নিথর দেহ পড়ে থাকতো রক্তাক্ত ভাবে। আর প্রমাণ নিঃশেষ করতে হয়তো তাকেও মেরে ফেলতো। তারতো ভয়ে এখনো কথা বের হচ্ছে না। দিয়া তুলতুলের দিকে তাকালো। কেমন পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ ভ্যা ভ্যা করে এখন পাথর হয়ে গিয়েছে। উফফ এই মেয়েটার জন্য সে সব সময় ফেঁসে যায়। দিয়া একটু করে তুলতুলের কাছে এগিয়ে এসে তার পিঠে খোঁচা দিল। তাও এর কোনো নড়চড় নেই। কি মেয়েরে বাবা। সে এবার জোরে করে একটা চিমটি কাটে। এতে তুলতুলের হুশ আসে। সে শব্দ করে উঠে। আর তখন রাফসান তার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় এতে সে চুপ হয়ে যায়।

তুলতুলের এতোক্ষণ সবকিছুর খোয়াল হয়। সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সামনে অনেকগুলো গাড়ি রাখা হোয়াইট কালারের। তার আশেপাশে অনেকগুলো লোকজনও রয়েছে। হাতে ছুরি, চাকু,পিস্তল রয়েছে। এরা যে রাফসানের লোক তুলতুল তা বুঝতে পারছে। যখন সে এদিক দিয়ে আসছিল তখন এগুলো চোখে পড়েনি। পড়বেই বা কিভাবে সে তো এই গুন্ডা লোকের চিন্তায় ভিভর ছিল। সাথে গাছে চোখ রেখে হাটছিল দিয়ার কথা অনুযায়ী। নাহলে সামনে তাকালে এদের কে দেখে তারা উল্টো রাস্তা দিয়ে কেটে পড়তো। এখন কি হবে তাদের? এরা কি গাড়িতে করে উঠিয়ে নিয়ে যাবে নাকি অন্য কিছুর চিন্তা ভাবনা করছে? তুলতুল রাফসানের দিকে তাকায় সে কেমন তীক্ষ্ণ চোখে এখনো চেয়ে আছে তার দিকে। হাতে সিগারেট ধরানো।যেটা দুই আঙুলের মাঝে দিয়ে ধরে রেখেছে। আশেপাশের গাড়ি গুলো হোয়াইট হলেও সে যেটায় হেলান দিয়ে আছে ওটা ব্লাক।

তুলতুলে গলায় যখন পিস্তল ধরেছিল তখন সে একেবারে বরফের মতো জমে গিয়েছিল। তার এটা একটি জন্ম থেকেই। মানুষ ভয় পেলে কাঁপা-কাঁপি করে আর সে বরং সে নির্জীব হয়ে যায় আশেপাশের সব কিছু মাথা থেকে আউট হয়ে যায়। আর ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নড়াচড়া হীন ভাবে ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে। আবার এমনি চুপ হয়ে যায়। আরো উদ্ভট সব কাজ করে। এতে মানুষ মনে করে সে ভয় পাচ্ছে না কিন্তু তার ভয়ের চটেই ঐ অবস্থা হয়ে যায়।

আবিরের কাছে ফোন আসে। রুসান দলবল নিয়ে এরিয়ায় প্রবেশ করেছে। তার মানে কিছুক্ষন পরে আবার রক্তারক্তি হবে। বরাবরের মতো হয়তো এবারো তাদের দলই জিতে যাবে। রাফসানের সামনে কেউ টিকতে পারে না। সে কোনো বাস বিচার না করেই মারতে থাকে। প্রতিপক্ষ দল কেউ আহত হবে আবার কারো নিথর দেহ পড়ে থাকবে। কেউ আবার পালানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু তার রাফসান ভাই কাউকে ছাড়বে না। চার পাশে তেলের ট্রাঙ্ক আগুন জলবে তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলবে- সব প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করে দে আবির এখানে যেন একফোঁটা রক্তের দাগও না থাকে। এটা আবিরের কাছে নিত্য দিনের ঘটনা। চার বছরে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাফসান কে জানায় রুসানের দলবলের কথা।

এটা শুনে রাফসানের মুখে হিংস্রতার হাসি ফুটে উঠে। সে সোজা হয়ে দাড়ায় কিছুক্ষন। এরপর তুলতুলের দিকে এগিয়ে আসে। তুলতুল রাফসান কে এগিয়ে আসতে দেখে ভড়কে যায়। তাকে কি এখন মারতে আসছে? আবার এসে কি গলায় পিস্তল ধরবে? নাকি চাকু ঢুকিয়ে দেবে? সে দুই পা পিছিয়ে যায়। এটা দেখে রাফসান মুচকি হাসি দেয়। তখন ভয় পায়নি কিন্তু এখন তার আগানো দেখেই ভড়কে গেছে বাহ। রাফসান গিয়ে তুলতুলের সামনে দাড়ায় এরপর ঝুঁকে তুলতুলের কানের কাছে বলে-

-এবার ছেড়ে দিচ্ছি বলে ভাববে না পরের বার ছেড়ে দেব। আর কখনো যেনো আমার সামনে না দেখি। ভুল করেও সামনে অাসবে না। তাহলে আর বেচে ফিরতে পারবে না। আমার ভয়ংকর রুপটাও আজ দেখনি পরর্বতীতে সামনে এলে দেখবে তখন বুঝবে মানুষ কেন আমাকে ভয়ংকর বলে। আর কাউকে না দেখে তার চেহারা সম্পর্কে উল্টো পাল্টা বলবে না। বলা তো যায় না আবার কোথায় ফেসে যাও। বুঝতে পারছো। এটা বলে রাফসান সোজা হয়ে তুলতুলের মুখের সামনে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ে। আর তুলতুল কাশতে থাকে। রাফসান কিছু টা পিছিয়ে গিয়ে বলে – নাও গেট লস্ট

তুলতুলকে আর পায় কে সে দিয়ার হাত ধরে ভোঁ দৌড় দেয়। জান থাকতে এই খাটাশের সামনে আর যাবে না।
একদৌড়ে বাড়ির সামনে চলে যায় এর ভেতর কোথাও থামে নি। বাড়ির সামনে গিয়ে দিয়া মাটিতে বসে পড়ে। আজকে তারা মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছে। তুলতুল ও গিয়ে দিয়ার সামনে বসে আর বলে-

-দেখ আজকে আমার জন্য বেচে গিয়েছিস। আমি না থাকলে তোর কি হতো বুঝতে পারছিস ওরা তোকে মেরে প্যাকেট করে পাঠিয়ে দিত। আমি ছিলাম দেখে সব আমার ওপর দিয়ে গেছে। আমি না একদম ভয় পাইনি তাই আমাকে মারেনি। বুঝেছিস। আর এই কথা কাউকে বলবি না। তাহলে উষ্টা মেরে ঔ রাফসানের কাছে পাঠিয়ে দেব।

দিয়া চোখ মুখ কুচকে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে। তার জন্যই ঝামেলায় পড়েছে। সে যদি কোনো কথা ছাড়া চলে আসতো তাহলে কিছুই হতো না। আর সে যে ভয়তে জমে গিয়েছিল এটা দিয়া যানে। এখন ভাব নেওয়া হচ্ছে যাতে সে কাউকে না বলে। শয়তান মেয়ে। দিয়া তুলতুলের সামনে কিছু চুল টান দিয়ে বলে-

– ফাজিল আজকে তোর জন্য ওই রাফসাইন্নার খপ্পরে পড়ছি। আর তুই নিজেও ভয় পেয়েছিস ব্যাথাও পেয়েছিস। আর এখন ভাব নেওয়া হচ্ছে। এই তোর জন্য আমি স্কুল-কলেজে সব জায়গায় ফেসে যাই। কি জন্য যে তোকে আমার বেস্টু বানিয়েছিলাম। উফফ জীবনটা ভাজা ভাজা হয়ে গেলো।

-তোরা কার খপ্পরে পড়েছিস বললি?

তুলতুল আর দিয়া পেছনে তাকায়।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here