#মেঘের আড়ালে চাঁদ ❤
#writer: মহসিনা মুক্তি
#পর্বঃ ছাব্বিশ
তুলতুল বাড়ির সামনে অপেক্ষা করছে। কেউ আসছে না কেন? এদিকে তার পায়ে ব্যাথা করছে। তুলতুল বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। হঠাৎ করে রাফসানের করা কাজ গুলো মনে পড়ে গেলো তার। এতে সে আরো বিরক্ত হলো। যতো বিরক্তিকর জিনিস সব এখনই তাকে ঘিরে ধরতে হলো? রাফসানের বাড়িতে তুলতুলকে যখন সে বলে
-” ওদের সাথে এসেছো নিজের ইচ্ছায় এখন যাবে আমার ইচ্ছায় বেবি।” তখন তুলতুল চোখ মুখ কুঁচকে বলে
-” কেন আপনার ইচ্ছায় যাবো? আমি কি আপনার লোকেদের হাত ধরে লাফিয়েছিলাম এখানে নিয়ে আসার জন্য? ওরাই তো আমাকে হুমকি দিয়ে নিয়ে এসেছে। আর এদিকে আপনি বলছেন আমি এখানে কেন এসেছি? ব্যাপার কি বলুন তো?”
রাফসান তুলতুলের কথায় ভাবলো এখন যদি এই মেয়েকে বলে তাকে মনে পড়ছে এই কথা বলার জন্য তার লোকেরা তাকে তুলে এনেছে, তাহলে নিশ্চিত জিজ্ঞাস করবে আপনি কেন আমাকে মনে করেছিলেন? তখন রাফসান কি বলবে? আসলেই তো এই মেয়েকে তখন কেনো তার মনে পড়ছিল আর কেনোই বা ওদের সামনে বলেছিল তা সে নিজেই জানে না। তাই সে তুলতুল কে বললো
-” কেন ওরা বললো আর তুমি চলে আসলে? ওরা একটু কি বলেছে আর তুমি মিনমিন করে চলে আসলে। ভীতু একটা। ওদের একটা ধমক দিতে পারো নি? তা না করে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সুরসুর করে চলে এসেছে।”
-” আমি কি আপনার গার্লফ্রেন্ড হই, যে আমার ধমকে আপনার পাহাড়ের মতো লোকজন গুলো ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলবে “ম্যাম ভুল হয়ে গেছে আমরা আর আপনাকে জোর করবো না, আপনার ইচ্ছা হলে আসবেন না হলে? না হলেও কিছু করবো না” এমন বলবে? আজব!”
-” এই একদম বেশি বুঝবে না। রাফসানের এতো খারাপ দিন আসেনি যে তোমাকে গার্লফ্রেন্ড বানাতে হবে। আর তুমি ওদের কথা না শুনলেও ওরা আমার আদেশ ছাড়া কিছু করতো না। আর তোমার মাথায় এটা আসলো না যে, আমি কেনো একটা পাগল মেয়েকে আমার বাড়ি উঠিয়ে নিয়ে আসবো? এসে পাগলের মতো কতগুলো কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। মনে হচ্ছে যে ঠাটিয়ে দুইটা চড় মারি। আহাম্মক!”
-” আমি আহাম্মক না আপনার লোকজন আহাম্মক। মনে হচ্ছে ওরা আপনার অনুমতি ছাড়াই আমাকে নিয়ে এসেছে। আর আমি পাগলামি করিনি আপনার ওই যে বউ ওয়ালা গার্লফ্রেন্ড করেছে। হুহ্। ” বলে তুলতুল বিরবির করলো -” হুহ! এমন ভাবে বলছে যেনো আমি ওনার গার্লফ্রেন্ড হওয়ার জন্য মরে যাচ্ছি। বয়েই গেছে আমার এনার মতো গুন্ডার গার্লফ্রেন্ড হতে।”
-” বড্ড বেশি তর্ক করো তুমি। আমি অবাক হই যে আমিও তোমার মতো পাগলের কথা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনি। পাগল দেখেই তো এইযে বিরবির করো। এটার এফেক্ট টা আমার ভেতর ও ফেলার চেষ্টা করছো বুঝতে পারছি, কিন্তু এখন আর তা হচ্ছে না। ” বলে রাফসান পাশের বক্স থেকে ব্যান্ডেজ নিয়ে তুলতুলের মুখ আর হাত বেঁধে দিল শক্ত করে পেচিয়ে। এদিকে তুলতুল ছটফট করছে যাতে রাফসান এটা না করে। কিন্তু রাফসান শুনছে না উল্টো আরো টাইট করে বেঁধে পকেটে হাত দিয়ে তুলতুলের সামনে দাঁড়িয়ে বললো
-“এখন যতো ইচ্ছে ততো কথা বলো।”তুলতুল রাগী ভাবে রাফসানের দিকে তাকায়। তা দেখে রাফসান বলে
-” উফফ! এভাবে কেউ তাকায় নাকি? ভয় পাচ্ছি তো।” তুলতুল নিজের দিকে তাকায়। তার হাতে পায়ে তো ব্যান্ডেজ ছিলই এখন মুখেও ব্যান্ডেজ দিয়ে বাঁধা। তুলতুল কান্না কান্না ভাব নিয়ে রাফসানের দিকে তাকালো। তার এখন মমির কথা মনে পড়ছে। ওদের সারা শরীরে ব্যান্ডেজ করা থাকে। কিছুক্ষন পড়ে তুলতুলকেও মনে হয় ওমন করে দেয়া হবে। কিন্তু রাফসান তুলতুলকে পাত্তা না দিয়েই বাইরে চলে গেলো। আর তুলতুল তা দেখে জড়সড় হয়ে সোফায় বসে রইল। সে কি আর বাড়ি যেতে পারবে না? আধা ঘণ্টা পর রাফসান এসে তুলতুলকে কাঁধে তুলে নেয়। এতে সে হকচকিয়ে উঠে। এখন আবার কি করতে চাইছে এই লোক? তুলতুল কথা বলতে পারছে না, মুখ দিয়ে শুধু অস্পষ্ট শব্দ বের হচ্ছে। আর ব্যান্ডেজ করা হাত দিয়েই রাফসানকে আঘাত করছে। কিন্তু রাফসানের কিছু যায় আসে না। সে তুলতুলকে নিয়ে বসার রুমে রেখে আসলো। তারপর বাইরে থেকে দরজা লক করে দিল। তার এখন মিটিং আছে, তার বাড়িতেই হবে। আর মতামত না মিললে খুনাখুনি হবে তাই মেয়েটাকে এখন আটকে রাখাই ভালো। তুলতুল ভয় নিয়ে বসে আছে। ব্যাটা তার মুখের বাঁধন টাও খুলে দিয়ে যায় নি। সে কি এভাবে আটকা পড়েই থাকবে? কি করতে চাইছে গুন্ডাটা? তুলতুল চারপাশে চোখ বুলালো। এটাও ড্রয়িং রুমের মতো। তুলতুল একটা বড় সাদা সোফার ওপর বসে আছে। দুইপাশে ছোট দুইটা সোফা। সামনে সেন্টার টেবিল, টেবিলের ওপর টিভির আর এসির রিমোট রাখা। সামনের দেয়ালে বড় টিভি সেট করা। পাশে একটা বড় ফ্লাওয়ার বাস, তুলতুল তার পেছনের দেয়ালে তাকায় সেখানে অনেক গুলো ছোট বড় ফটো ফ্রেম, তাতে বিভিন্ন রকম সুন্দর ছবি রয়েছে। রুমের একপাশে ওয়াল শেল্ফস রয়েছে, ওখানে কিছু প্রাইজ আর দামি সোপিজ রাখা। রুম দেওয়ালের রংটা পুরো সাদা। তুলতুলের ভালো লাগলো রুমটা, সিম্পলের ভেতর সুন্দর করে সাজানো। তুলতুল যখন সবকিছু দেখতে ব্যাস্ত তখন গুলির আওয়াজে আঁতকে ওঠে। এখানেও সেই রক্তারক্তি ঘটছে নাকি। অবশ্য অসম্ভব কিছু না। তুলতুলের কাছে রাফসান মানেই হলো রক্ত, রিভলবার, গুলি,আর গুলির শব্দ। তুলতুল ভীতুভাবে বসে রইলো। অনেকক্ষণ পরে রাফসান এসে তুলতুলকে আবার উঠিয়ে গাড়িতে নিয়ে বসায়। তুলতুল ভাবে এখন কি তাকে মেরে গুম করে দিবে নাকি। রাফসানের দিকে তাকিয়ে হাফভাব বুঝার চেষ্টা করে। রাফসান গাড়িতে বসে তুলতুলের মুখ আর হাত থেকে বাঁধন খুলে দেয়। আর তুলতুল কাঁদো কাঁদো ভাবে বলে
-” আমাকে মারবেন না প্লিজ। আমি ইচ্ছা করে আসি নি।” তুলতুলের কথা শুনে রাফসান ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে
-” সবসময় তোমার মাথায় এগুলো ঘুরপাক খায় না? হ্যাঁ মেরে ফেলতে নিয়ে যাচ্ছি তোমায় বুঝেছো? এখন কি করবে করো। অসহ্য! ” রাফসানের কথায় তুলতুল ভয়ে চুপ মেরে যায়। কিন্তু পরে যখন দেখে গাড়ি তাদের বাড়ির রাস্তায় যাচ্ছে তখন নিশ্চিত হয় যে রাফসান তাকে মারবে না। পেছনে কারো আসার আওয়াজে তুলতুলের ভাবনার সুতো কাটে। তুলতুল ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে তিয়াস দ্রুত তার দিকে আসছে। তিয়াস এসে তুলতুলকে জড়িয়ে ধরে। আর উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে
-” এই কোথায় ছিলি তুই? কি হয়েছে, ঠিক আছিস তুই? কারা তোকে নিয়ে গিয়েছিল? কথা বলছিস না কেন?” তিয়াসের কথা শুনে তুলতুল ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। একমুহূর্তের জন্য তার মনে হয়েছিল সে আর বাড়ি ফিরতে পারবে না, কারো সাথে আর তার দেখা হবে না, তাকে হয়তো রাফসান আটকে রাখবে সারাজীবন। তিয়াস তুলতুলের কান্না শুনে ওকে ছেড়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? কিন্তু তুলতুল জবাব দেয় না। তিয়াসের তুলতুলের হাতে পায়ের ব্যান্ডেজের দিকে নজর যায়। ও তুলতুলের হাত ধরে দেখে। মূহুর্তেই ভয়ের ছাপ দেখা যায় তার মুখে। তার বোনের সাথে কে কি করেছে? আর হাত পায়ে এভাবে ব্যান্ডেজ কেন? তিয়াস কথা না বাড়িয়ে তুলতুলকে কোলে তুলে নিজের রুমে নিয়ে বিছানায় বসায়। কেউ বাইরে ছিল না বিধায় দেখেনি তুলতুলকে এই অবস্থায়। তিয়াস বিছানায় বসিয়ে ভেজা টাওয়াল নিয়ে এসে তুলতুলের মুখ মুছে দেয়। চোখ মুখ একদম ফুলে গিয়েছে। তারপর তুলতুলের সামনে বসে মাথায় হাত দিয়ে আস্ত করে বলে
-” কি হয়েছে তুলু? তোর এ অবস্থা কেন? বল, আমি বকবো না সত্যি।” তিয়াসের কথা শুনে তুলতুল ভরসা পায়। সে তিয়াসকে সবকিছু বলে দেয়। শুধু রাফসানের কথা আর কাজগুলো বলে না। সে তিয়াসকে এলার কথা বলে আর বলে রাফসান তাকে এলার থেকে বাঁচিয়ে বাড়ি দিয়ে গেছে। নাহলে তিয়াস রেগে গিয়ে যদি রাফসানের সাথে ঝামেলা করতে যায় তখন কি হবে? তিয়াস এতোটুকু শুনেই রাগে ফুঁসছে। কারো এতো সাহস হয়ে গেছে যে তার বোনকে এভাবে মারে। তারপরও সে আবার এলা! যে মেয়েকে সে দু-চোখে দেখতে পারে না। রাগে তার শরীর কাঁপছে, মনে হচ্ছে সবকিছু ভেঙে ফেলতে সামনের, কিন্তু তুলতুল রয়েছে দেখে পারছে না। এই মেয়ের জন্য সে কাউকে হারিয়ে ফেলেছে। তার কাছ থেকে তার.. তিয়াস উঠে দেয়ালে ঘুষি দেয়। তার রাগ কমছে না। আবার তার জীবন তছনছ করে দিতে এসেছে এলা। এবার আর তাকে ছাড়বে না। তুলতুল তিয়াসকে এমন করতে দেখে ভয় পেয়ে যায়। তিয়াস হাত দিয়ে দওয়ালে ঘুষি দিচ্ছে আর বলছে -” এলা, ফেলার সাহস কি করে হয় আমার বোনের গায়ে হাত দেওয়ার? ইউ ক্রেজি ওমেন! আমি তোকে পেলে একদম মেরে ফেলবো।” তিয়াসের এমন করা দেখে তুলতুল জোরে কান্না করে তিয়াসকে ডাক দেয় এতে তিয়াসে হুঁশ হয়। সে তুলতুলের কাছে যেতে নেয় কিন্তু আফসা বেগমের কথায় থেমে দরজার দিকে তাকায়।
-” হ্যাঁ রে তিয়াস তুলতুল কি..” এটুকু বলেই আফসা বেগম বিছানায় তুলতুলকে হাত পায়ে ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় বসে থাকতে দেখে হায়হায় করে রুমে ঢুকে তুলতুলের হাত ধরে অস্থির হয়ে বলে -” আমার মেয়ের কি হয়েছে রে? এ অবস্থা কি করে হলো? কোথায় গিয়েছিলি তুই? অনেক বেশি ব্যাথা করছে মা? এই বলিস না কেন? তিয়াস কি হয়েছে ওর, আর কখন হয়েছে?” এত দ্রুত সবকিছু ঘটায় তুলতুল ড্যাবড্যাব করে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আর তিয়াস বলে
-” মা একটা পাগল ওর এই অবস্থা করেছে। ”
-” কি বলিস? কোন ধরনের বেয়াদপ পাগল চলে আসলো এদিকে, যে মানুষের হাত পায়ের এ অবস্থা করে দেয়? আর তুই বা কোথায় গেছিলি? পাগল কিভাবে ধরলো তোকে?” তুলতুল তার মা আর ভাইয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কি থেকে কি বলছে এরা? এরইমাঝে দিয়া হুড়মুড় করে রুমে ঢোকে। তা দেখে তিয়াস ভ্রু কুচকে রাগী ভাবে তাকায়। দিয়া তা দেখে বোঝার চেষ্টা করে কেনো এভাবে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, হঠাৎই মনে পড়ায় দিয়া তিয়াসের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে। সে ধরা খেয়ে গেছে। পায়ের ব্যাথা তার কমে গেছে সে হাঁটতে পারে কিন্তু তিয়াস তা জানে না, সে নিজেই বলেনি। এজন্য তিয়াস তাকে কোলে নিয়ে রুমের বাইরে গেছে। রুমের বাইরে চিল্লাচিল্লি শুনে আর তুলতুল এতোক্ষণ বাড়ি না থাকায় সে সব কিছু ভুলে দৌড় দিয়েছে। কিন্তু এখন কি বলবে? তিয়াস রাগী ভাবেই বলে
-” তোর না পায়ে ব্যাথা? তো এভাবে দৌড়ে রুমে আসলি কিভাবে? নাকি আমাকে মিথ্যা বলেছিস?”
-” মিথ্যা বলবো কেন? ব্যাথা কমে গেছে তাই। হেহেহে”
-” একটা থাপ্পড় মারবো! সকালে আমি তোকে কোলে নিয়ে রুম থেকে ডাইনিং এ নিয়ে গিয়েছি আবার রুমে রেখে গিয়েছি। এতো তাড়াতাড়ি তোর ব্যাথা চলে গেলো? এটাকে তুই বিশ্বাস করতে বলছিস?”
-” ব্যাথার ইচ্ছের হয়েছে তাই চলে গিয়েছে। আমি কি তাকে আটকে ধরে রাখবো? কেন বলুন তো আপনি কি আমাকে কোলে নিতে চান? সেটা এমনিতেই পারবেন তার জন্য পায়ে ব্যাথার দরকার হবে না।” দিয়ার কথায় তিয়াস রেগে ওর দিকে তেড়ে যায়। গাঁধি মায়ের সামনে কিসব বলছে। আর দিয়া আফসা বেগমের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে
-” আন্টি দেখো তোমার ছেলে আমাকে মারতে আসছে আমার পায়ের ব্যাথা সেরে গেছে বলে।”
-” আহ! তিয়াস থাম! কি শুরু করলি? মেয়েটার এমন অবস্থা আর তুই রাগারাগি শুরু করে দিয়েছিস। আশ্চর্য! ” মায়ের কথায় তিয়াস রাগী ভাবে দিয়ার দিকে তাকায় মানে তোকে আমি দেখে নেব। দিয়ার তুলতুলের দিকে নজর যায় আর ও চিৎকার দেয়। তা শুনে তুলতুল কানে হাত দিয়ে বিরক্তি নিয়ে দিয়াকে বলে
-” তোর আবার কি হলো এমন চিৎকার করছিস কেন?” তুলতুল রুমের ভিতর সবাইকে এমন কথা বলতে দেখে বিরক্ত হয়ে গিয়েছে। তার এখন একা থাকতে ইচ্ছে করছে। দিয়া তুলতুলকে দেখে বলে
-“কি অবস্থা করেছিস? কিভাবে হলো এগুলো? যাইহোক তিয়াস ভাইয়া এখন থেকে তোকে কোলে নিবে। সো ডোন্ট ওয়ারি!”
-” হ্যাঁ আরো কিছু বল। জীবনটা আমার সবাইকে কোলে নিতে নিতেই যাবে। মা বিশ্বাস করো এখন যদি প্রান্ত ফোন দিয়ে বলে ” ভাইয়া আমি তুলতুলকে দেখবো, আমার পায়ে ব্যাথা আমাকে কোলে করে নিয়ে যাও” তাতে আমি একটুও অবাক হবো না। কারন এটা নরমাল ব্যাপার, এটা হতেই পারে। তিয়াসের কোলে যদি না চড়ো তো জীবনটাই বৃথা হয়ে যাবে। আজব!” বলে তিয়াস গটগট করে বাইরে চলে গেলো। এতে রুমে থাকা সবাই হেসে দিল। তিয়াস এই কারনে রাগ করছে।
.
গভীর রাতে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ও তুলতুলের মনে হলো কেউ তার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে আছে। তুলতুল অসস্থি বোধ করলো। তার এমনিও ভুতের ভয় আছে। আর এখন শরীর ভারী হয়ে যাচ্ছে ভয়ে। তুলতুলের ঘুম ভেঙে গিয়েছে কিন্তু তার তাকাতে মন চাচ্ছে না। যদি তাকিয়ে বিভৎস কোনো মুখ দেখে তাহলে কি করবে? ভূতই হবে কারন বারান্দার গেটে তো তালা লাগানো কেউ যদি খুলতে যায় তাহলে একটু হলেও শব্দ হবে। তুলতুল একবার ভাবছে চোখ খুলবে যা হওয়ার হবে আবার ভাবছে খুলবে না। ও পাশে হাতদিয়ে দিয়াকে খুজলো, কারন দিয়া ওর সাথেই ঘুমিয়েছিল। কিন্তু কি আশ্চর্য পাশে তো কেউ নেই। তুলতুল চট করে চোখ খুলে ফেললো। আশেপাশে তাকালো কেউ নেই, রুমের দরজা বন্ধ তাহলে দিয়া কোথায় গেলো? তুলতুল বারান্দার দরজা দিকে তাকায়। দরজাটা খোলা, গ্রিলের ওপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দেখতেই কেমন ভয় লাগে, তাহলে দিয়া কি এতো রাতে ওখানে গিয়েছে, কিন্তু কেন? তুলতুল বিছানা থেকে নামলো। তার পা ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। ব্যাথা জায়গায় চাপ পড়ে আরো ব্যাথা লাগছে, তারপরও সে কোনো মতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বারান্দার দিকে গেলো। বারান্দায় গিয়ে দেখলো দিয়া নেই বারান্দায়। হঠাৎ তুলতুলের গা ছমছম করে উঠলো। তার মনে হচ্ছে তার পেছনে কেউ আছে। তুলতুল ঘামতে লাগলো। সে পিছনে ফিরে দেখতে চাইলো কে রয়েছে কিন্তু পারলো না, তার আগের কেউ পেছন থেকে তার মুখ চেপে ধরলো। তুলতুলের পিলে চমকে উঠলো। তুলতুল হাত ছাড়ানোর জন্য ধস্তাধস্তি করতে লাগলো। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট শব্দ করছে। তার পা থেকে হয়তো রক্ত বের হচ্ছে সে বুঝতে পারছে। মুখ থেকে হাত সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। একটা বলিষ্ঠ হাত তার মুখ চেপে ধরেছে। মানুষটা লম্বায় তুলতুলের চেয়ে অনেক তা তুলতুল বুঝতে পারছে। তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। কোনো অজানা বিপদের আশঙ্কায়।
চলবে…