#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_10
#Ariyana_Nur
চুলোর উপর হাড়িতে বসানো পানি টগবগ করে ফুটছে।মাঝে মাঝে পানির ছিটে এসে গরম চুলোয় পরাতে কিছুটা আওয়াজ সৃষ্টি হচ্ছে।কিন্তু সেদিকে রাই এর কোন খেয়াল নেই।সে চুলোয় পানি বসিয়ে আনমনে কফির মগের মধ্যে কফি আর চিনি নিয়ে মিক্স করছে আর স্বপ্নের কথা ভাবছে।
—কিরে কি ভাবছিস?
হঠাৎ ফাইজার কথা শুনে রাই চমকে উঠল।ফাইজাকে সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা তুতলিয়ে বলল,
—ক-কই?কিছু না তো।
রাই এর কথা শুনে ফাইজা ভ্রু কুচকে রাই এর দিকে তাকিয়ে বলল,
—বললেই হল কিছু না।কিছু যদি নাই ভাবিস তাহলে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গ্যাস অপচয় করছিস কেন?
ফাইজার কথা শুনে রাই হাতে থাকা কফির মগটা রেখে তড়িঘড়ি চুলো বন্ধ করল।কিছুটা মিনমিনে গলায় বলল,
—কফি কবরো তো তাই একটু বেশি করে পানি ফুটিয়ে নিচ্ছিলাম।
রাই এর উওর ফাইজার পছন্দ হল না।ফাইজা কপালে ভাজ ফেলে বলল,
—তাই?
রাই,ফাইজার কথাটা যেন শুনেও শুনলো না।সে কফি বানাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।রাইকে চুপ থাকতে দেখে ফাইজা পূনরায় জিগ্যেস করল,
—কিরে কথা বলছিস না কেন?
রাই কফির মগটা হাতে নিয়ে ব্যাস্তটা দেখিয়ে বলল,
—তোর ভাইয়া কফির জন্য বসে রয়েছে আসছি।
কথাটা বলে এক মুহূর্ত দেড়ি না করে কিচেন থেকে বের হয়ে গেলো।রাই যে ফাইজার কথা এড়িয়ে চলে গেলো সেটা ফাইজার বুঝতে ভূল হলো না।
_________
বেডের মধ্যে কাচুমাচু হয়ে বসে রয়েছে দিপা বেগম।তার সামনেই ট্রেতে রয়েছে গরম সুপের বাটি।দিপা বেগম গরম সুপের বাটির দিকে তাকিয়ে বার বার শুকনো ঢোক গিলছে আর অসহায় চোখ পাশে টুলের উপর বসে ফাহাদ এর দিকে তাকাচ্ছে।কিন্তু সেদিকে ফাহাদ এর কোন ভাবান্তর নেই।ফাহাদ এক মনে তার হাতে থাকা ফোন এর মধ্যে স্কল করতে করতে বিরক্ত হয়ে বলল,
—ফুপি তোমার এই ভীতু চেহারা দেখতে দেখতে আমি টায়ার্ড হয়ে গেছি।প্লিজ এই নাটক অফ করো তো।অন্তত তুমি তো আমার সাথে একটু নরমাল ব্যবহার কর।
ফাহাদ এর কথা শুনে দিপা বেগম এর চোখ কোটার বাহিরে বের হয়ে আসার উপক্রম হয়ে গেলো।মনে মনে বলতে লাগল,
—বলে কি এই ছেলে?এর সাথে করবো নরমাল ব্যবহার? এ আমার সাথে যে ব্যবহার করেছে ভাবতেই আমার শরীর কেপে উঠে।মনে তো হয় না এর সাথে আর কোনদিন নরমাল ব্যবহার করতে পারবো।
সেদিন ফাহাদ দিপা বেগম এর হাতের এর উপর ছুড়ি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি।তার থেকে কথা গোপন করার জন্য জোর করে গরম সুপ তার মুখের মধ্যে ঢেলে দিয়েছে।সুপ যাতে ফেলে দিতে না পারে তার জন্য মুখ চেপে ধরে রেখেছি।তার কাজে দিপা বেগম গলা কাটা মুরগির মত ছটফট করেছে।পুরোনো কথা ভাবতেই দিপা বেগম এর শরীর পুনরায় কাটা দিয়ে উঠল।
—মনজুর মায়ের গ্রামের বাড়ির এড্রেস জানো?
হাতে থাকা ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে কথাটা বলল ফাহাদ।ফাহাদ এর কথা শুনে দিপা বেগম কিছুটা নড়েচড়ে বসল।ফাহার এর দিকে তাকিয়ে দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে না করল।মানে সে জানে না।সাথে সাথে ফাহাদ এর মুখটা রাগে লাল হয়ে গেলো।ফাহাদ এর রাগি চেহারার দিকে তাকিয়ে দিপা বেগম শুকনো ঢোক গিলে মিনমিনে গলায় জিগ্যেস করল,
—কি হয়েছে ফাহাদ বাবা?মনজুর মায়ের যে ঠিকানা দিয়েছি সেখানে তাকে পাওনি?
ফাহাদ দিপা বেগম এর কথা শুনে রাগি গলায় বলল,
—না পাইনি।আমার লোক যাওয়ার আগেই সে পালিয়েছে।আর এসব হয়েছে তোমার জন্য।তুমি যদি আমার থেকে কথাটা গোপন না করতে তাহলে কিছুই হত না।
কথাগুলো বলে ফাহাদ রাগ দেখিয়ে সেখান থেকে হনহন করে চলে গেলো।
__________
আলিশান বিশান বড় এক কামরার মধ্যে ফাহাদ এর একটা ছবির উপর ছুড়ি দিয়ে একের পর এক দাগ কাটছে একটি মেয়ে।মুখে রয়েছে তার রহস্যময়ী হাসি।মেয়েটি দাগ কাটছে আর বিরবির করে বলছে,
—খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার তাই না জান?আমার ও হয়েছিলো যখন তুমি আমার ভালোবাসা প্রত্যাক্ষান করে আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিলে।আমার কষ্টটা তখন অনুভব করতে না পারলেও এখন তো বুঝতে পারছো সেদিন আমার কতটা কষ্ট হয়েছিলো।তুমি জানো জান?তোমার কষ্ট দেখলে,তোমার ঐ অসহায় ফেসটা দেখলে এখন আর আমি আগের মত কষ্ট পাই না।কেন যেন মনের মধ্যে একটা শান্তির স্রোত বয়ে যায়।তুমি জানো?আমি এখন চাই খুব করে চাই তুমি আরো জ্বলে,পুড়ে ছারখার হও।তোমার পাখির বিরহে এতোটাই পুড়ো যে,তোমার মনের ঘরে তোমার পাখির জন্য তিলে তিলে গড়ে উঠা সব সুপ্ত অনুভূতি তার বিরহে জ্বলতে জ্বলতে বিলিন হয়ে যায়।তার পর না হয় আমি এসে তোমার সেই পোড়া ঘরে নতুন করে আমার পাগলাটে ভালোবাসা দিয়ে একটু একটু করে গড়ে তুলব।যেখানে থাকবে শুধু আমার জন্য সকল অনুভূতি।শুধু আমার জন্য।
___________
অবশেষে তীব্রর অপেক্ষার প্রহর শেষ করে রাই কফির মগ হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করল।রাই কে আসতে দেখেই তীব্র এমন একটা ভাব নিয়ে ল্যাবটবের দিকে তাকিয়ে রইল, মনে হচ্ছে সে খুব মন দিয়ে নিজের কাজে ডুবে রয়েছে।আশেপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই।রাই গুটিগুটি পায়ে তীব্রর সামনে গিয়ে কাপাকাপা হাতে কফির মগটা তীব্রর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
—আপনার কফি।
তীব্র ল্যাবটবের দিকে চোখ রেখেই ভাব নিয়ে বলল,
—তুমি তাহলে কফি নিয়ে এসেছো। আমি তো মনে করেছিলাম কফি বানাতে আজকের দিন পার হয়ে যাবে।
তীব্র কথাটা বলে ল্যাপটবের থেকে চোখ সরিয়ে মাথা উচু করে রাই এর চেহারা দিকে তাকালো।তীব্রর কথার প্রতি উওরে রাই কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।তীব্র রাইকে একটা মুচকি হাসি উপহার দিয়ে রাই এর হাত থেকে কফির মগটা নিতে গেলেই তীব্র হাসিখুশি মুখটা মলিন হয়ে গেলো।রাই এর হাতের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গম্ভীর গলায় বলল,
—হাতে কি হয়েছে?
তীব্রর গম্ভীর গলার কথা শুনে রাই নিজের হাতের দিকে তাকালো।হাতের এক জায়গায় কিছুটা লাল হয়ে গেছে।রাই মাথায় জোর দিয়ে মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো কিভাবে হাতের এখানে লাল হয়েছে?কিন্তু কোন ভাবেই মনে করতে পারলো না।রাই এর ভাবনার মাঝেই তীব্র নিজের কোল থেকে ল্যাপটবটা সাইডে রেখে উঠে দাড়ালো।বেড টেবিলের ড্রয়ার খুলে কিছু একটা খুজতে লাগলো।রাই গুটিগুটি পায়ে তীব্রর সামনে গিয়ে কফির মগটা বেড টেবিলের উপর রেখে কোন কথা না বলে চলে আসতে নিলেই তীব্র রাই এর হাত ক্ষপ করে ধরে ফেলল।তীব্রর কাজে রাই হকচকিয়ে গেলো।
—এতো ইডিয়েট কেন তুমি?একটা মানুষ নিজের প্রতি নিজে এতোটা কেয়ারলেস কি করে হয়?কফি করতে পারোনা মুখ ফুটে বললে কি হত তোমার?তার জন্য কি আমি তোমায় শুলে চড়াতাম?ইডিয়েট, স্টুপিট একটু নিজের খেয়াল রাখতে পারো না?
তীব্রর ঝাঝালো গলার কথা শুনে রাই এর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।সামান্য একটা বিষয় কে তিল থেকে তাল বানিয়ে কোথার থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তীব্র।রাই, তীব্রর দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলে উঠল,
—আপনি কি কচু খেয়েছেন?
#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_11
#Ariyana_Nur
—আপনি কি কচু খেয়েছেন?
রাই এর মুখে এমন কথা শুনে তীব্রর কপালে ভাজ পরে গেল।তীব্র ধমক দিয়ে বলল,
—স্টুপিটের মত কথা বলছো কেন?
তীব্রর ধমকে রাই কেপে উঠল।সাথে সাথে মিনমিনে গলায় বলল,
—স্টুপিটের মত কথা আমি না আপনি বলছেন।
তীব্র,রাই এর হাত টান দিয়ে অনেকটা নিজের কাছে নিয়ে এল।শীতল কন্ঠে বলল,
—আমি স্টুপিট?
হঠাৎ তীব্রর এমন কাজে রাই হকচকিয়ে গেলো।ভীতু ভীতু ফেস করে কাচুমাচু করে দাড়িয়ে রইল।রাই এর ভীতু ফেস দেখে তীব্র খুব হাসি পাচ্ছে।তার পরেও মুখের মধ্যে গম্ভীর্য বজায় রেখে গম্ভীর গলায় বলল,
—কি হল কথা বলছো না কেন?আমি স্টুপিট?
রাই সমানে দুদিকে মাথা নাড়িয়ে গরগর করে বলতে লাগলো,
—না না আপনি স্টুপিট হতে যাবেন কেন?আপনি তো…..।
রাই কে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই তীব্র ফোড়ন কেটে বলে উঠল,
—আমি কি?
তীব্রর পাল্টা প্রশ্নে রাই শুকনো ঢোক গিললো।তীব্রর দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে তুতলিয়ে বলল,
—আ-আপনি?
—হ্যা বল আমি কি?
রাই নিচের দিকে তাকিয়ে বার বার চোখের পলক ফেলতে লাগলো।কি বলবে রাই?কিছুই তো তার মাথায় আসছে না।মাথাটা কেমন ফাকা ফাকা লাগছে তার।রাই কিছু একটা ভেবে পূনরায় শুকনো ঢোক গিলে মিনমিনে গলায় বলল,
—আপনি!আপনি হলেন একটা…।একটা ভিলেন।মিঃভিলেন।
কথাটা বলেই রাই সাথে সাথে নিজের মুখ চেপে ধরল।ঘারবে গিয়ে ভূল করে একটা বলতে গিয়ে আরেকটা বলার কারনে মনে মনে নিজেকে বকতে লাগলো।কাদো কাদো ফেস করে তীব্রর দিকে তাকিয়ে বলল,
—আমি এটা বলতে চাইনি।মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে।
তীব্র,রাই কে আরেকটুকু জ্বালাতে রাই এর দিকে ঝুকে ফিসফিস করে বলল,
—মুখ ফসকে কিন্তু সব সময় মনের কথাই বের হয়।আমি কি ধরে নিবো তোমার ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছে?
তীব্রর কথা শুনে রাই এর কান্না করে দেওয়ার উপক্রম হল।দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না করল।যার মানে তার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি।সে ঘাবরে গিয়ে উল্টাপাল্টা বলে ফেলেছে।রাই এর কাদো কাদো ফেস দেখে তীব্র আর নিজের মুখে গম্ভীর্য বজায় রাখতে পারলো না।মুচকি হেসে ফিসফিস করে বলল,
—মিঃভিলেন।বাহ্ নামটা তো খুব সুন্দর। একেবারে আমার জন্য পারফেক্ট।
তীব্রর কথা শুনে রাই ছোট ছোট চোখ করে তীব্রর দিকে তাকিয়ে তীব্রর হাব ভাব বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো।মিঃ ভিলেন বলাতে কি তীব্র তার উপর রাগ করলো কি না।তীব্র রাই এর হাতে একটা এন্টিসেপটিক ক্রিম ধরিয়ে দিয়ে রাই এর নাক টেনে দিয়ে মুচকি হেসে সেখান থেকে চলে গেলো।রাই তীব্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বোকার মত তাকিয়ে রইল।মনে মনে ভাবতে লাগলো সে কি এমন বলল?যার জন্য তীব্র এতো খুশি হয়ে গেলো?
_________
—আমার বকবক রাণী এমন মুখ লটকে বসে রয়েছে কেন?কি হয়েছে তার?
কোলের মধ্যে কুশন নিয়ে মলিন মুখ করে ড্রয়িং রুমের সোফার বসে রয়েছে ফাইজা।রাই,ফাইজা কে মলিন মুখ করে বসে থাকতে দেখে ফাইজার পাশে বসে কথাটা বলল।
ফাইজা মিনমিনে গলায় উওর দিল,
—এমনি ভালো লাগছে না।
ফাইজার উওরটা রাই এর পছন্দ হল না।রাই,ফাইজার কোল থেকে কুশন টেনে নিয়ে নিজের কোলের উপর রাখলো।কুশনের উপর ভর দিয়ে দু’গালে হাত রেখে ফাইজার দিকে তাকিয়ে ফাইজাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।রাই এর কাজে ফাইজা ভ্রু কুচকে রাই এর দিকে তাকিয়ে বলল,
—তোর আবার কি হল?
—আমার আবার কি হবে?তোর কি হয়েছে সেটা বল।
রাই একি ভাবে বসে কথাটা বলল।
ফাইজা রাই এর থেকে কুশনটা কেড়ে নিয়ে মিনমিন করে বলল,
—বললাম তো ভালো লাগছে না।
রাই ফাইজার মাথায় গাট্টা মেরে ঝাঝালো গলায় বলল,
—ঐ ছেমড়ী আমি তোর ভালো লাগতাছে না শুনতে চাইছি?সকাল থেকে দেখছি মুখ লটকাইয়া রাখছোস।ব্যাঙ এর মাথা কি হইছে সেটা না বলে ভালো লাগতাছে না,ভালো লাগতাছে না, এক গান লাগাইয়া দিছোস।
রাই এর এমন রিয়েকশনে ফাইজা হা করে রাই এর দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলল,
—তুই ঠিক আছিস?
রাই ফোস করে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,
—আমার কিছুই হয় নাই। তোর কি হইছে সেটা বল।
—সত্যি বলছি এমনিতেই ভালো লাগছে না।
রাই,ফাইজার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল,
—সত্যি তো?
ফাইজা মুচকি হেসে বলল,
—হুম সত্যি।
__________
—শাড়ি পরে হাটতে পারো না তাহলে কেন শাড়ি পরে ধ্যাই ধ্যাই করে লাফিয়ে বেড়াচ্ছো স্টুপিট।
তীব্রর ধমক শুনে রাই এর হাসিখুশি থাকা মুখটা মুহূর্তের মধ্যে চুপসে গেলো।একটু আগে রাই আর ফাইজা বসে বসে ফাইজার ফোনে তাদের হাজারো স্মৃতি মিশ্রিত পুরোনো ছবিগুলো দেখছিলো।সেসব ছবির মধ্যে রাই নিজের একটি ছবি দেখে রাই এর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।ছবির মধ্যে রাই কোমড়ে আচল গুজে কোমরে দু’হাত রেখে কপালে ভাজ ফেলে দাড়িয়ে রয়েছে।ফাইজা সেই ছবিটা ইডিট করে রাই এর মাথায় শিং লাগিয়ে দিয়েছে।সব মিলিয়ে রাইকে ঝগড়াটে মহিলার চাইতে কম লাগছে না।রাই ফাইজার দিকে চোখ রাঙিয়ে কিছু না বলে ছবিটা ডিলেট করতে নিলেই ফাইজা ছোঁ মেরে রাই এর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো।ফাইজার কাজে রাই দাতে দাত চেপে বলল,
—তুই এই ছবি ডিলেট করবি নাকি আমি তোর ফোনে আমার যত ছবি আছে তা সব ডিলেট করবো।
রাই এর হুমকি শুনে ফাইজা ভেঙচি কেটে বলল,
—এহ আসছে ছবি ডিলেট করতে।যা ভাগ।না তুই কোন ছবি ডিলেট করবি আর না আমি।
রাই রাগি গলায় বলল,
—দেখ রাইজু!ভালোয় ভালোয় বলছি ছবিটা ডিলেট কর।তা না হলে ভালো হবে না কিন্তু বলে দিলাম।
ফাইজা ভাব নিয়ে বলল,
—এই ছবিতো আমি ভুলেও ডিলেট করবো না।বেশি কথা বলবি তো এটা আমি বাড়ির সবাইকে দেখাবো।
রাই দাতে দাত চেপে বলল,
—তুই ডিলেট করবি কি করবি না?
ফাইজা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
—করবো না।
রাই সুযোগ বুঝে ফাইজার হাতে থাকা ফোনটা থাবা মেরে নিতে চাইলো।কিন্তু তাতে সে সফল হলো না।তার আগেই ফাইজা হাত সরিয়ে নিল।রাই এর হাত থেকে বাচতে দৌড় লাগালো।রাই ও ফাইজার পিছু পিছু ছুটলো।রাই,ফাইজার পিছনে ছুটতে গিয়ে তীব্রর সাথে ধাক্কা লেগে পরে যেতে নিলেই তীব্র,রাইকে ধরে ফেলে।
—কি হল কথা বলছো না কেন?এখন যদি পরে যেতে তাহলে কে ব্যাথা পেতো শুনি?
পূনরায় তীব্রর ঝাঝালো গলার কথা শুনে রাই কেপে উঠল।মিনমিনে গলায় বলল,
—শাড়িতে বেঝে না আপনার সাথে ধাক্কা লেগে পরে যেতে নিয়েছিলাম।আপনিই তো সামনে…..।
রাইকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে তীব্র রাই এর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল,
—আমি তোমায় ধাক্কা দিয়েছি?
রাই সাথে সাথে দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে না করলো।মুখে কিছু বলার আগেই ফাইজা চেচিয়ে বলে উঠল,
—ভাইয়া স্মাই প্লিজ।
ফাইজার কথা শুনে রাই,তীব্র দুজনই একসাথে ফাইজার দিকে তাকাতেই ফাইজা ফটাফট কতোগুলো ছবি তুলে নিল।ফাইজার কাজে অবাক হয়ে তীব্র রাই একে অপরের দিকে তাকালো।নিজেদের অবস্থান বুঝতে পেরে তীব্র তাড়াতাড়ি রাইকে সোজা করে দাড় করালো।ফাইজা একে একে ছবিগুলো দেখতে লাগলো।মুখের মধ্যে লম্বা হাসি ঝুলিয়ে বলল,
—ছবিগুলো যা জোস হয়েছে না।পুরোই আগুন।ভাইয়া আপনি দেখবেন?
তীব্রকে প্রশ্নটা করে ফাইজা মিটমিট করে হাসতে লাগলো।তীব্র কোন কথা না বলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।তীব্র চলে যেতেই রাই,ফাইজার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে চোখ দিয়ে শ্বাশাতে লাগলো।যার অর্থ তোকে পরে দেখে নিব।
__________
দু’দিন পর…….
একের পর এক ফুচকো গপাগপ করে খেয়ে চলেছে ফাইজা।ঝালে তার চোখের কোনে পানি জমে রয়েছে।মাঝে মাঝে ঝালটক লাগার কারনে মুখ দিয়ে আওয়াজ সৃষ্টি করছে।ফাইজা এমন ভাবে ফুচকা খাচ্ছে মনে হচ্ছে এটাই পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে সুস্বাদু খাবার।আর তা আজই ফুড়িয়ে যাবে।হাতে ফুচার প্লেট নিয়ে ফাইজার ফুচকা খাওয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে ফাইজার থেকে কিছুটে দূরে থাকা একজন লোক।লোকটা ফাইজার খাওয়া দেখে নিজের খাওয়ার কথাই যেন সে ভুলে গেছে।রাই,ফাইজার পাশে বসে আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে আর ফাইজাকে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করার জন্য তাড়া দিয়ে।ফাইজা যেন রাই এর কথা শুনেও শুনতে পাচ্ছে না।সে আপন মনে ফুচকা গিলেই চলেছে।
ফাইজার,রাইকে সাথে করে তার এক আত্মীয়কে হাসপাতালে দেখতে এসেছিলো।রাই অবশ্য ফাহাদ এর ভয়ে বাসা থেকে বের হতে চায় নি।ফাইজা এক প্রকার জোর করেই রাইকে বোরকা, নিকাব পরিয়ে নিজের সাথে নিয়ে এসেছে।তারা রুগি দেখে হাসপাতাল থেকে বের হতেই রাস্তার পাশে ফুচকার দোকান দেখে ফাইজা আর নিজের লোভ সামলাতে পারেনি।
_______
রাতের আধারে রাস্তার এক পাশে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে রয়েছে ফাইজা আর রাই।রাস্তাটা একেবারেই জনমানবহীন।মাঝে মাঝে দু’একটা গাড়ি যাওয়া আশা করছে।
বাসায় যাওয়ার পথে মাঝ রাস্তায় তাদের গাড়ি নষ্ট হওয়াতে তাদের এমন এক পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছে।অনেকক্ষন ধরে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে থাকার পরেও তারা কোন গাড়ি পাচ্ছে না।রাই,ফাইজার হাত জরিয়ে ধরে দাড়িয়ে রয়েছে।ভয়ে সে ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে গেছে।ফাইজা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে গাড়ি খুজছে আর একটু পর পর হাতে থাকা ঘড়িতে সময় দেখছে।ফাইজা নিজেও অনেক ভয় পাচ্ছে।এমন পরিস্থিতিতে সে আগে কখনো পরেনি।নিজের চাইতে বেশি ভয় পাচ্ছে রাইকে নিয়ে।তারপরেও ফাইজা রাইকে নরমাল রাখতে বলল,
—রাইজু!তুই এতো ভীতু হলি কবের থেকে বলতো?রাত বেড়াতে আমরা কি নতুন চলাফেরা করছি?এর আগে তো কতবার দেড়ি করে বাসায় গিয়েছি।
রাই ভীতু গলায় বলল,
—তখনকার বিষয় আর এখনকার বিষয় আলাদা ফাইজু।তখন তো না ছিলো কোন ডর ভয় না ছিলো কোন মসিবত গলায় ঝুলানো।
রাই এর কথা মানে ফাইজা বুঝতে পারলো।রাই যে ভয়টা পাচ্ছে নিজেও রাইকে নিয়ে সে ভয়টাই পাচ্ছে।আগে যদি জানতো সে এমন কোন পরিস্থিতে পরবে তাহলে সে কখনোই রাইকে নিয়ে আসতো না।ফাইজা রাইকে আসস্থ দিয়ে বলল,
—আরে এতো চিন্তা করিস না।গাড়ি পেয়ে যাবো।তুই যেই ভয় পাচ্ছিস সেটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।এখানে ঐ সাইকো কেন সাইকোর ভূতও আসবে না।
সাইকো থাকে কই আর আমরা আছি ক…..।
কথাটা শেষ করার আগেই রাই এর নখ ফাইজার হাতে লাগতেই ফাইজা ব্যাথায় শব্দ করে উঠল।ফাইজার হাতের দিকে তাকিয়ে কিছুটা জোর গলায় বলল,
—ঐ ছেমড়ী আমায় খামছাইতাছোস কেন?জীবনে গোসত খাস নাই?
রাই মৃদু কাপতে কাপতে কাপাকাপা গলায় বলল,
—ফা-ফাইজু!
—কি হয়েছে তোর?এমন করছিস কেন?
রাই মুখে কিছু না বলে হাতের ইশারায় সামনে দিকে দেখালো।ফাইজা রাই এর দেখানো হাতের ইশারার দিকে তাকাতেই তার চেহারায় ভয়ের ছাপ ফুটে উঠল।অস্পস্ট গলায় বলল,
—সাইকো এখানে?
#চলবে,
(