#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_26
#Ariyana_Nur
দু’হাতে মাথা চেপে বসে রয়েছে ফাহাদ।মাথাটা কেমন ফাকাফাকা লাগছে তার।সামনেই পরে রয়েছে বিয়ারের খালি বোতল।আজ যেন বিয়ারেও তার নেশা হচ্ছে না।রাই এর বলা কথাগুলো শুধু বার বার মাথার মধ্যে ঘুরপাক করছে।
ফ্লাসব্যাকঃ
—তাহলে আপনি কেন আমার দিশা আপুকে ভালোবাসতে পারলেন না?
রাই এর কথা শুনে ফাহাদ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল।রাগি গলায় বলল,
—আমার জন্য কত মেয়েই তো পাগল।তারা আমায় ভালোবাসলেই কি আমায় তাদের ভালোবাসতে হবে নাকি?ভালোবাসা কি কোন সফটওয়্যার নাকি বললাম আর ডাউনলোড হয়ে গেলো।ভালোবাসার জন্য সামনের মানুষটার জন্য মন এর গভীর থেকে ফিলিং আশা প্রয়োজন।
ফাহাদ এর কথা শুনে রাই মিটমিট করে হাসতে লাগলো।রাই কে হাসতে দেখে ফাহাদ আরো রেগে গেলো।চেচিয়ে বলে উঠল,
—হাসছো কেন?আমি কি কিছু ভূল বললাম নাকি?দিশা আমার জন্য পাগল কিন্তু আমি না।ও আমার জন্য হাজার পাগলামো করে বলেই যে ওকে আমার ভালোবাসতে হবে এমন তো কোন কথা না।তাছাড়া দিশার প্রতি আমার কোন ফিলিংসই কাজ করে না।ওর ঐ সব আজাইরা পাগলামো দেখলে ভালোবাসা তো দূরে থাক আমার আরো বিরক্ত লাগে।
ফাহাদ এর কথা শেষ হতে না হতেই রাই উঠে দাড়ালো।টেবিলের উপর রাখা সাইড ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে নিয়ে বলল,
—আমার মনে হয় আপনি আপনার কথার মাঝেই আপনার প্রশ্নের উওর পেয়ে গেছেন।নেক্সট টাইম এসব প্রশ্ন না করলেই খুশি হব।তীব্র অনেকক্ষন ধরে বাহিরে অপেক্ষা করছে।আসি ভালো থাকবেন।আশা রাখি আমাকেও আর বিরক্ত না করে ভালো থাকতে দিবেন।
কথাগুলো বলে রাই সামনের দিকে কদম বাড়াতেই ফাহাদ সামনে চেয়ারে একটা লাথি দিয়ে চেচিয়ে বলল,
—তীব্র!তীব্র!তীব্র।কি আছে ঐ তীব্রর মাঝে?সে কি তোমায় আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে?
ফাহাদ এর কথা শুনে রাই এর পা থেমে গেলো।রাই পিছন দিকে ঘুরে দাড়িয়ে বলল,
—কেউ কখনো কারো মত ভালোবাসতে পারে না।একেক জনের ভালোবাসার রুপ একেক রকম।সত্যি কথা বলতে কি জানেন?আমার তীব্র এখনো মুখ ফুটে আমায় বলেনি সে আমায় ভালোবাসে।কিন্তু প্রতিনিয়ত তার কথা,কাজে আমার প্রতি তার কেয়ার ছোট ছোট শাষন আমায় নিয়ে তার পাগলামোর মাঝেই সে আমার বুঝিয়ে দিয়েছে যে,সে আমায় কতটা ভালোবাসে।একটু আগে বললেন না কাউকে ভালোবাসতে হলে তার জন্য মন থেকে ফিল করতে হয়।আমার মনের ঘরের প্রতিটা অনুভূতি তীব্রতে শুরু হয় আর তীব্রতেই শেষ।না আপনার জন্য আমার মনে বিন্দু পরিমান কোন অনুভূতি ছিলো আর না কখনো হবে।আপনি আপনার যেই ভালোবাসা রুপ আমায় দেখিয়েছেন আমি কেন অমন ভালোবাসা দেখলে ঘৃণা ছাড়া কোন মেয়েই সেই ভালোবাসা মেনে নিবে না।
কথাগুলো বলেই রাই গটগট করে হেটে চলে গেলো।এদিকে রাই এর যাওয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাড়িয়ে রইল ফাহাদ।ফাহাদ এর ভিতরটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে। রাই এর প্রতিটা কথা যেন ফাহাদ এর বুকে তীরের মত ফুটে রক্তক্ষরন হচ্ছে।না কেউ সেই ক্ষত দেখতে পারবে আর নাই বা কেউ ক্ষতের গভীরতা মাপতে পারবে।এক তরফা ভালোবাসা গুলো বোধহয় এমনি হয়?অবহেলা আর কষ্ট ছাড়া কিছুই মিলে না।
বর্তমানঃ
ফাহাদ এর চোখ এর কোনে জমে রয়েছে নোনা জল।জল গড়িয়ে পরার আগেই ফাহাদ হাত দিয়ে জলটা মুছে নিল।বিরবির করে বলে উঠল,
— হায়রে দুনিয়া!আজব এই দুনিয়ার নিয়ম বোঝা বড় দায়।তুমি যার জন্য পাগল সে তোমায় চায়।যে তোমার জন্য পাগল তাকে তুমি চাও না।
________
মন খারাপ করে বেলকনির এক কোনে দূর আকাশের পানে তাকিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে রাই।আকাশের বুকে মেঘেরা ছুটাছুটি করছে।কালো মেঘের ছায়া কেটে আকাশের বুক সুন্দর পরিষ্কার ঝলমলে রুপ ধারন করছে।রাই আকাশের দিকে তাকিয়েই আনমনে বলে উঠল,
—জীবনটা যদি আকাশের মত হত কতই না ভালো হত।কালো মেঘ হুট করে আসতো আবার হুট করেই চলে যেত।জীবনটা এতো জটিল হওয়ার কি খুবই দরকার ছিলো?
তীব্রর রাইকে রুমে না পেয়ে রাইকে খোজ করতে বেলকনিতে এসে দেখ রাই এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।রাই এতোটাই নিজের খেয়ালে ডুবে রয়েছিলো যে তীব্রর উপস্থিতি বুঝতে পারেনি।তীব্রকে না দেখেই রাই আনমনে কথাগুলো বলেছে।তীব্র রাই এর কথা শুনে গুটিগুটি পায়ে রাই এর সামনে এসে রেলিং এ হাত রেখে রাই এর মত দূর আকাশের পানে তাকিয়ে বলল,
—আমাদের জীবনটা আসলেই অনেক কঠিন।জীবনে কিছু পেতে হলে আমাদের অনেক কষ্ট,পরিশ্রম করে সেটা হাসিল করতে হয়।কষ্ট, পরিশ্রমের মাধ্যমেই আমরা আমাদের ঐ জিনিসটার মর্ম বুঝি।তাছাড়া কোন জিনিস যদি আমরা কষ্ট, পরিশ্রম ছাড়া এমনি এমনি লাভ করে থাকি তাহলে আমরা সেটার মর্ম সহজে বুঝি না।অবহেলার মাঝে সেটা আমরা হাড়িয়ে ফেলি।আমাদের মনের আকাশে যদি আমরা মেঘ জমতে দেই তাহলেই সেটা আস্তে আস্তে কালো মেঘে পরিনত হবে।আস্তে আস্তে মনের আকাশ পুরোটাই কালো মেঘে ছেয়ে যাবে।আর যদি মেঘ জমতে না দিয়ে সাথে সাথেই তা বর্ষন করে থাকি তাহলেই সকল মেঘ কেটে যাবে।জীবনটা আমাদের।আমাদের জীবনকে যদি আমরা সহজ ভাবে নেই তাহলেই সব সহজ।আর যদি জটিল ভাবে নেই তাহলেই সব জটিল।জীবনে চলার পথে অনেক বাধা বিপত্তি আসবেই।তাতে আমাদের থেমে থাকলে হবে না।সব বাধা বিপত্তি অবসর ঘটিয়ে,কঠিন কে সহজ করে,ভয়কে জয় করেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
তীব্রর কথা শুনে রাই কিছুক্ষন তীব্রর দিকে তাকিয়ে থেকে পূনরায় আকাশের পানে তাকিয়ে রইল।মুখে কিছু না বললেও মনে মনে হাজারটা কথা বলে চাপা একটা নিশ্বাস ফেলল।
_________
দিপা বেগম নিজের রুমে আধশোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে রয়েছে।রুমে কারো পায়ের শব্দ পেয়ে চোখ খুলে তাকাতেই দেখে মাহি দাড়িয়ে রয়েছে।মাহিকে দেখে দিপা বেগম অবাক হয়ে গেলো।মাহিকে সে এখানে কখনোই আশা করেনি।দিপা বেগম কিছু না বলে আবাক নয়নে মাহির দিকে তাকিয়ে রইল।মাহি গুটিগুটি পায়ে হেটে দিপা বেগম এর পাশে এসে বসল।কিছুক্ষন করুন চোখে দিপা বেগম এর মুখপানে তাকিয়ে থেকে কোমল গলায় বলে উঠল,
—কেমন আছো আম্মু?
মাহির কথা শুনে দিপা বেগম এর কপালে ভাজ চলে এল।সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মাহির মতিগতি বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো।মাহি তার রিয়েকশন দেখে মলিন হেসে বলল,
—শুনেছি মায়েদের কাছে নাকি সুপার পাওয়ার থাকে।সেই সুপার পাওয়ার দিয়েই তারা সন্তানের কোন বিপদ-আপদ হওয়ার আগেই নাকি তাদের মন বলে দেয় তার সন্তান এর কোন অমঙ্গল হতে চলেছে।এমনকি তাদের সন্তানরা তাদের সামনে যেই রুপেই আসুক না কেন তারা তাদের কাছে থাকা সুপার পাওয়ার দিয়ে মনের টান দিয়ে নিজের সন্তানকে চিনে নেয়।এদিকে দেখো তুমি!তোমার এতো কাছে থাকার পরেও আমায় চিনছো না।একটা কথা কি জানো আম্মু!তুমি কখনো আমায় মন থেকে ভালোইবাসোনি।যদি আমায় মন থেকে ভালোবাসতে তাহলে আজ তোমার এতো কাছে থাকা সর্তেও আমায় চিনতে তোমার অসুবিধে হত না।চেহারা না হয় পাল্টেছে আম্মু আমার চোখ আমার কন্ঠস্বর তো পাল্টায়নি?চোখ দেখে কন্ঠস্বর শুনেও কি তোমার কারো কথা একটুও মনে পরছেনা?
মাহির কথা শুনে দিপা বেগম এর কপালের ভাজ আরো বেড়ে গেলো।সে আরো গভীর ভাবে মাহিকে পর্যবেক্ষণ করতে।মাহির চোখ, কন্ঠস্বর এর সাথে তার পরিচিত একজনের খুব মিল পাচ্ছে।কিন্তু চেহারায় তার ছিটেফোটাও মিল খুজে পাচ্ছে না।তাই তো খুটিয়ে খুটিয়ে চেহারার মিল খুছতে ব্যাস্ত সে।দিপা বেগম কে চুপ করে থাকতে দেখে মাহি পূনরায় বলল,
—কোন মিল পাবে না আম্মু।মিন পাওয়ার জন্য মনের মিল থাকা দরকার।তোমার মনে তো আমার জন্য ছিটেফোটাও মায়া নেই।যা আছে সব তোমার ঐ আদরের ভাতিজা ফাহাদ এর জন্য।
দিপা বেগম গম্ভীর গলায় বলল,
—কে তুমি?বার বার আমায় আম্মু বলছো কেন?
দিপা বেগম এর কথা শুনে মাহি তাচ্ছিল্য হেসে বলে উঠল,
—এখনো জিগ্যেস করছো আমি কে আম্মু?ওহ আমি তো ভূলেই গিয়েছিলাম নিজের চোখে না দেখলে তুমি আবার কিছু বিশ্বাস কর না।ওয়েট তুমিই দেখে নাও আমি কে?
কথাটা বলেই মাহি নিজের মুখ থেকে হাইপার সিলিকন মাক্সটা খুলে ফেলল।মাহির চেহারা দেখে দিপা বেগম এর চোখে জল চলে এল।অস্পষ্ট গলায় বলে উঠল,
—দিশা!
#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_27
#Ariyana_Nur
অন্ধকার একটা রুমে বসে একের পর এক সিগারেট ফুকে চলেছে ফাহাদ।হাতে থাকা সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সিগারেটটা ফ্লোরে কার্পেট এর উপর ছুড়ে মারল।নাক মুখ দিয়ে ধোয়া ঊড়িয়ে দিয়ে কার্পেট এর দিকে তাকিয়ে রইল।কিছুক্ষনের মধ্যেই সিগারেট এর আগুন থেকে কার্পেটে আগুন ধরে কার্পেটটা পুড়তে লাগলো।ফাহাদ সেদিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো,
—সিগারেটের এই সামান্য আগুনের স্পর্সে কি সুন্দর কার্পেট টা নিজেকে পুড়িয়ে নিচ্ছে।আমার তীব্র ভালোবাসার আগুনে কেন তুমি নিজেকে পুড়াতে পারলে না পাখি?কেন তুমি আমায় হয়েও হলে না।আই হেট ইউ পাখি আই যাষ্ট হেট ইউ।আমি তোমায় আমায় খাচায় বন্দি করতে চেয়েছিলাম আর তুমি অন্যের খাচায় বন্দি হয়ে গেছো।মুক্তি চেয়েছিলে না যাও মুক্ত করে দিলাম।আর কখনো তোমার পথের কাটা হব না।ভালো থেকো পাখি।স্বামী,সন্তান নিয়ে খুব ভালো থেকো।
__________
রাই জামা-কাপড় ভাজ করছে।পাশেই ফাইজা বসে রাইকে কিছু বলার জন্য হাফসাফ করছে।কিন্তু জড়তা কাজ করার জন্য সে বলতে পারছে না।সে যেই কথাটা রাইকে বলতে চাচ্ছে কথাটা শোনার পর রাই কেমন রিয়েক্ট করবে?কথাটা শুনে কি রাই ফাইজাকে ভূল বুঝবে?একটা মিথ্যের জন্যই কি তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে?ভাবতেই ফাইজার সব কেমন তাল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে।রাই নিজের হাতের কাজ করছে আর আর চোখে বার বার ফাইজাকে পর্যবেক্ষণ করছে।ফাইজা যে তাকে কিছু বলতে চাচ্ছে তা রাই ভালো করেই বুঝতে পারছে।তারপরেও সে আগ বাড়িয়ে ফাইজাকে কিছু জিগ্যেস না করে নিজের মত কাজ করে চলেছে।
ফাইজা বহু কষ্টে নিজের জড়তা কাটিয়ে মিনমিনে গলায় বলল,
—রাইজু!কখনো যদি জানতে পারিস আমি তোর থেকে কিছু গোপন করেছি বা তোর সম্পর্কে তোর আগোচরে মিথ্যে বলেছি তাহলে কি আমায় কখনো ক্ষমা করবি?
ফাইজার কথা শুনে রাই এর হাত থেমে গেলো।সে ফাইজার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
—হঠাৎ এসব কথা কেন বলছিস?কি লুকিয়েছিস তুই আমার থেকে আর কিই বা আমায় নিয়ে মিথ্যে বলেছিস যার জন্য তুই অনুতপ্ত হচ্ছিস?
ফাইজা মাথাটা নিচু করে করুন গলায় বলল,
—আমার মাফ করে দিস রাইজু।আমি অনেক বড় একটা কথা তোর থেকে লুকিয়েছি।জানি মাফ করতে পারবি না তার পরেও মাফ চাইছি।পারলে আমায় মাফ করে দিস।
—ভনিতা না করে বলবি কি হয়েছে?
ফাইজা মাথা নিচু রেখেই মিনমিনে গলায় সব বলতে লাগলো,
—প্রথম যেদিন তোকে এই বাসায় নিয়ে আসি তখন তুই সেন্সলেস ছিলি।কোন মতেই তোর জ্ঞান ফিরানো যায় নি।তিহানের পায়ের তেরোটা তো তুই বাজিয়ে দিয়েছিলি তাই বাধ্য হয়ে ভাইয়া তোকে কোলে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে।মা দরজা খুলতেই ভাইয়ার কোলে বিয়ের পোশাকে এক রমনীকে দেখে তার বউ ভেবে বসে নিজের মত একেকটা বলতে শুরু করে।মা যে ভাইয়াকে বড় বাবা কবল থেকে ঐ শাকচুন্নিকে গলায় ঝুলানো থেকে বাচানোর জন্য ওসব বলেছিলো তা পরে জানতে পারি।কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়।এমনিতেই আমরা সবাই তোকে নিয়ে টেনশনে ছিলাম।মায়ের কথায় যেন আমরা সবাই আকাশ থেকে পরি।মায়ের কথা শেষ হতে না হতেই বড় বাবা আমাদের দিকে ইচ্ছেমত প্রশ্ন ছুড়ে বসে।বড় বাবার প্রশ্নের মুখে পরেই আমাদের সকলের অবস্থা নাজেহাল হয়ে যায়।তার হাজারটা প্রশ্ন শুনে আমাদের সবার মাথাই ফাকা হয়ে যায়। প্রথমে আমরা একে একে সব সত্যিটাই বলি কিন্তু বড় বাবা তাতে মানেন না।তার এক কথাই সে তোর বাসায় ফোন করে তোর পরিবারকে জানাবে তুই আমাদের কাছে আছিস।তোর জ্ঞান ফিরলেই তোকে বুঝিয়ে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।তুই না মানলে পুলিশে কম্পেইন করবে।বড় বাবার কথা শুনে সবার মাথা আরো হ্যাং হয়ে যার।হঠাৎ তিহান ফট করে বলে উঠে,বড় বাবা এতোক্ষন বিষয়টা ধামাচাপা দিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম।পরে ভেবেছিলাম শান্ত মাথায় সবাইকে খুলে বলল।এখন দেখছি বিষয়টা না জানালেই নয়।একটা মেয়ে কি বিয়ের আসর থেকে শুধু বান্ধবীর কারনেই পালিয়ে আসে বল।ভাবি মানে রাই আর ভাইয়া একে অপরকে ভালোবাসে।ভাবি ভাইয়ার জন্যই তার বাসা থেকে বিয়ের দিন পালিয়ে ভাইয়ার কাছে চলে এসেছে।তিহান এর কথা শুনে সবাই তাজ্জব বনে গেলেও বড় বাবা সাথে সাথে তিহানকে ধমক দিয়ে বলেছিল,
—তুই তো এমনিই মিথ্যেবাদী।তুই বানিয়ে বানিয়ে কিছু একটা বললি আর আমি বিশ্বাস করবো?তীব্র!তিহান যা বলছে তা কি সব সত্যি?
সেদিন ভাইয়াও সবার সামনে বলে দিয়েছিল সে তোকে ভালোবাসে।ভাইয়ার কথায় আমি যেন কথা বলার ভাষাই হাড়িয়ে ফেলেছিলাম।আমার মতে সেদিনই ভাইয়া তোকে প্রথম দেখেছিলো।প্রথম দেখায় একটা মেয়েকে বাচাতে কি কেউ এতো বড় মিথ্যে বলে?পরে অবশ্য তিহানের কাছে জেনেছি ভাইয়া নাকি আমাদের বাসায় তোকে প্রথম দেখেই নাকি তোর প্রেমে উষ্টা খেয়ে পরেছিলো।
ফাইজার কথা শেষ হতে না হতেই রাই ফাইজার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
—এখানে তোর দোষ কোথায়?তুই কি করেছিস?
ফাইজা মিনমিনে গলায় বলল,
—সেদিন আমায় ও জিগ্যেস করেছিলো ঘটনা সত্যি কিনা? আমিও সেদিন সবার হ্যা তে হ্যা মিলিয়ে মিথ্যে বলেছিলাম।ভাইয়াকে বিয়ে করতে তোকে মিথ্যে অজুহাত দিয়ে জোর করেছিলাম।এতোদিন কথাগুলো তোকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি।তোকে না জানিয়ে নিজেকে কেমন তোর কাছে অপরাধী মনে হচ্ছিলো।তাই তো আজ অনেক কষ্টে কথাগুলো তোকে জানালাম। আমায় ক্ষমা করে দিস রাইজু।
কথাগুলো বলতে বলতে ফাইজার চোখ ছলছল করে উঠল।টুপ করেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল।রাই ফাইজার মাথা উচু করে চোখের জল মুখে দিয়ে বলল,
—ভূল তো করেছিস।মস্ত বড় ভূল করেছিস আমার মত পাজি মেয়েকে নিজের জা বানিয়ে।শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে।তোর শাস্তি হল🤔শাস্তি সরুপ আজীবন আমার জ্বালাতন সহ্য করতে হবে।পারবি তো আমার জ্বালাতন সহ্য করতে?আমি কিন্তু অনেক জালাবো?চলবে?
রাই এর কথা শুনে মুহূর্তে ফাইজার মুখে হাসির ঝিলিক চলে এল।ফাইজা খুশিতে রাইকে জড়িয়ে বলে উঠল,
—চলবে না মানে দৌড়াবে।
__________
গাড়িতে চড়ে এয়ারপোর্ট এর দিকে যাচ্ছে দিশা।গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে শেষ বারের মত নিজের দেশের রাস্তাঘাট নিজের দেশের হাওয়া শরীরে লাগিয়ে নিচ্ছে।এবার সে ঠিক করেই নিয়েছে যাই হয়ে যাক না কেন দেশের মাটিতে আর কখনো পা দিবে না।কেনই বা দেশে ফিরবে সে?যেখানে তার বাবা,মা থাকতেও আজ নেই।যেই ভালোবাসার মানুষের জন্য এতো কিছু করল নিজের কলিজার টুকরা বোনকে পযর্ন্ত আঘাত করল সেও আজ তার হল না।রাই সব শুনে তাকে মাফ করে দিলেও সে নিজেকে কিছুতেই মাফ করতে পারছে না।নিজের প্রতি এখন নিজের ঘৃণা কাজ করছে?কি করে পারলো সে ফাহাদ এর মত একটা মানসিক রুগি, সাইকোকে ভালোবাসতে।যার নাকি মা সমান ফুফুকেও কষ্ট দিতে তার বুক কাপেনি সে কিভাবে অন্যের কষ্ট বুঝবে?যেই ফুপু নিজের দু’ হাতে ছোট থেকে তাকে আদর সোহাগ দিয়ে মানুষ করেছে সেই ফুফুর হাত কেটেছে,হাত পুড়ে দিয়েছে তাতেও যেন তার শান্তি হয়নি।নিজের মনের প্রতিশোধের জ্বালা মিটাতে তাকে উপর থেকে নিচে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আধমরা করে বেডে শুইয়ে রেখেছে।মনজুর মা যে রাইকে পালাতে সাহায্য করেছে তার জন্য কঠিন শাস্তি ঠিক করে রেখেছিলো।কিন্তু তাকে ফাহাদ এর হাত থেকে বাচাতে জীবত অবস্থায় সবার কাছে মৃত বানিয়ে রাখতে হচ্ছে।যাকে সে পাগলের মত ভালোবাসে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে তাকেও কষ্ট দিতে পিছ পা হয় না।সব ভাবতেই দিশার বুক চিড়ে দীর্ঘ নিশ্বাস বের হয়ে এল। এয়ারপোর্ট এর সামনে গাড়ি থামতেই দিশা মনের মধ্যে পাথর বেধে নিজেকে শক্ত করে নিল।সে আর কোন পিছুটান রাখবে না।নতুন দেশে নতুন করে সব শুরু করবে।জানে কিছুটা কষ্ট হবে তারপরেও সে এবার আর হাড় মানবে না।প্লেন আকাশের বুকে ঊড়ে অন্য দেশে পাড়ি দিতেই দিশার চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরল।সাথে সাথেই দিশা চোখ মুখে নিল।রাখবে না সে আর কোন পিছুটান কাদবে সে আর কোন হৃদয়হীন মানুষের জন্য।যে মানুষটা মানুষের কাতারেই পরে না তাকে ভালোবেসে কান্না করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।এতোদিন অনেক বোকামি করেছে সে।মরিচিকার পিছনে ছুটেছে আর কোন মরিচিকার পিছনে ছুটবে না সে।
#চলবে,
(