#যখন_আমি_থাকবোনা
#পর্ব_২ ও ৩
#লেখক_দিগন্ত
মুক্তি স্নেহাকে টেনে রান্নাঘরে নিয়ে যায়। স্নেহার হাতে হাতা খুন্তি ধরিয়ে দেয়। স্নেহা রাগী চোখে তাকালে মুচকি হেসে বলে,
-“তুমি তো শুনলাম বাড়িতে সারাদিন শুয়ে বসেই কা*টাও। আজ তার থেকে ভালো রান্নাবান্না করো। শরীরের ব্যায়াম তো হবে।”
স্নেহা হাতা খুন্তি ছুড়ে মে*রে বলে,
-“তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। আমার সাথে এমন ব্যবহার করার ফল কি হতে পারে সেটা তোমার জানা নেই।”
মুক্তি এতক্ষণ হাসি মুখ করে থাকলেও এখন তার চোখমুখ শক্ত হয়ে যায়। স্নেহাকে অনেকটা শাসানোর ভঙ্গিতে বলে,
-“তোমার ব্যাপারে আমি অনেক কিছুই জানি। সেগুলো অন্যরা জানলে কিন্তু ভালো হবে না।”
স্নেহার তেজ হঠাৎ কোথাও যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। মুক্তির এমন শক্ত কথায় স্নেহা অনেকটাই ভয় পেয়ে যায়। মুক্তি আর কিছু না বলে কাজে মন দেয়। আলেয়া বেগম আর মুক্তি একসাথে কাজ করছিল। স্নেহা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছিল। মুক্তি স্নেহাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
-“১০ মিনিট সময় দিলাম। হয় কাজে লেগে পড়ো আর নাহয় তোমার…”
স্নেহা আর কিছু না বলে কাজে লেগে পড়ে। জীবনে এই প্রথমবার কাজ করছে সে। বিরক্ত লাগছে খুব, সাথে রাগও হচ্ছে। কিন্তু স্নেহা অন্তত এতটুকু বুঝতে পেরেছে এই মুক্তিকে দেখে যতটা সহজ সরল লাগে আসলে ততোটা না। মুক্তি খুব ধুরন্ধর একটা মেয়ে। হয়তো সবার সামনে অভিনয় করে চলেছে। নিশ্চয়ই এই মেয়েটার এরকম কাজের পেছনে বড় কোন উদ্দ্যেশ্য আছে। সেই উদ্দ্যেশ্যটাই স্নেহাকে খুঁজে বের করতে হবে।
____________
বিপ্লব নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিল। একটা নতুন প্রজেক্ট নিয়ে খুব ব্যস্ত সে। এমন সময় বিপ্লবের বাবা বাকের চৌধুরী তার রুমের বাইরে এসে বলে,
-“ভেতরে আসবো বিপ্লব।”
বিপ্লব আরচোখে নিজের বাবার দিকে তাকায়। এমনিতে বাবার সাথে তার খুব ভালো সম্পর্ক। কিন্তু হঠাৎ করে তার অমতে মুক্তির সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য খুব রাগ হচ্ছে নিজের বাবার উপর। তবুও বিপ্লব বলে,
-“হ্যাঁ এসো।”
বাকের চৌধুরী রুমে এসে বিপ্লবকে কাজে ব্যস্ত দেখে বলে,
-“অফিসের কাজের প্রেশার নিশ্চয়ই বেড়েছে।”
-“হ্যাঁ একটা নতুন প্রজেক্টে কাজ করতে হচ্ছে।”
-“দেখো বিপ্লব আমি তোমার বাবা। আমি যা করি তোমার ভালোর জন্যই করি। আমি আগেও তোমাকে আর তোমার ভাইকে বলেছিলাম রাজনীতিতে এসো। তোমাদের সামনে অনেক সুন্দর ভবিষ্যত হবে। কিন্তু তোমরা যে যার নিজেদের মতো পেশা বেছে নিলে।”
-“তার প্রতিশোধ তো তুমি নিয়েছ আব্বু। আমাদের দুজনকেই আমাদের অমতে নিজের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য বিয়ে দিলে। প্রথমে ভাইয়ার অমতে মন্ত্রীর মেয়ের সাথে তার বিয়ে দিলে। আর এখন আমাকেও…”
-“তোমরা একটু কম বোঝো সবকিছু। যাইহোক এখন এইসব ব্যাপারে কথা বলতে আসিনি। সামনে ইলেকশন। আমি চাই তুমি এবার ইলেকশনে দাঁড়াও।”
-“হোয়াট? কি বলছ এসব তুমি? আমি আর ইলেকশন। আব্বু তুমি জানো আমার নিজস্ব একটা ক্যারিয়ার একটা স্বপ্ন আছে। এমনিতে জোর করে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলে। এখন আবার জোর করে আমাকে রাজনীতিতে যুক্ত করতে চাও। নো ওয়ে। আমি আর তোমার কোন কথা শুনব না।”
-“জানতাম তুমি এমন কথাই বলবে। কিন্তু ভুলে যেওনা আমি তোমার বাবা। তোমাকে কিভাবে রাজি করাতে হবে সেই উপায় আমার জানা আছে।”
কথাটা বলে অদ্ভুত ভাবে হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায় বাকের চৌধুরী। বিপ্লব বুঝতে পারে তার বাবার মনে কিছু একটা তো চলছেই।
________________
মুক্তি খাবার হাতে নিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। বিপ্লব বলে দিয়েছে সে এখন কাজে ব্যস্ত আছে। ডিনার করতে নিচে ডাইনিং টেবিলে যেতে পারবে না। তাই যেন বিপ্লবের খাবার উপরে তার রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বিপ্লব এখনো মুক্তিকে দেখেনি। মুক্তি সামান্য কেশে বলে,
-“ভেতরে আসবো।”
বিপ্লব মুক্তিতে দেখে বিরক্তির সুরে বলে,
-“আপনি কেন এসেছেন? এই বাড়িতে কি আর কেউ ছিলনা।”
মুক্তি বাঁকা হেসে বলে,
-“আছে তো। কিন্তু সবাই তো আর আমার মতো ফ্রি নয়। সবার কাজ আছে। যে যার কাজে ব্যস্ত। তাই আমিই আপনার খাবার নিয়ে এলাম।”
-“ভালো করেছেন। এখন খাবার রেখে চলে যান। আপনাকে আমার সহ্য হচ্ছে না।”
মুক্তি বিপ্লবের কথামতো তার টেবিলের উপর খাবার রেখে যায়। যাওয়ার সময় মুচকি হেসে বলে,
-“আজ আমাকে সহ্য হচ্ছেনা। একসময় হয়তো এমন সময় আসবে যখন আপনি আমাকে খুঁজবেন কিন্তু পাবেন না।”
মুক্তির কথাটা বিপ্লব গায়ে লাগায় না। মুক্তির নিজের মতো চলে যায়।
মুক্তি নিচে এসে ডাইনিং টেবিলে সবাইকে খাবার পরিবেশন করতে থাকে। এই সময় মুক্তি বুঝে যায় এই পরিবারে সম্পর্কগুলো ঠিক নেই। আলেয়া বেগমের সাথে বাকের চৌধুরীর দূরত্ব চোখে পড়বে সবার আগেই। স্বামীকে বেশ ভয় পান এবং মেনে চলেন আলেয়া বেগম। আর এই ভয়ের কারণেই তাদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি করেছে।
আশরাফের সাথেও স্নেহার সম্পর্ক ভালো নয় সেটাও বেশ ভালো বোঝা যাচ্ছে। আশরাফকে দেখে বেশ ভালো রুচিসম্মত মানুষই মনে হয়। স্নেহার মতো এতো অহংকারী মেয়ের সাথে তার বনিমনা না হওয়াটাই স্বাভাবিক। খাওয়ার টেবিলেও স্নেহা একটা প্রসঙ্গ টেনে আনে যার কারণে ঝগড়া শুরু হয়। স্নেহা বলে,
-“এই বছরই শীতে তো আমরা ঘুরতে যাচ্ছি তাইনা আশরাফ?”
আশরাফ বেশ রাগী গলায় বলে,
-“না। আমার সময় নেই। হসপিটালে ইদানীং রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। এই সময় ছুটি নেওয়া সম্ভব নয়।”
-“তোমার আর কখন সময় থাকে। যখনই কিছু বলি তোমার শুধু অযুহাত আর অযুহাত। এই দেশে মনে হয় তুমি একাই ডাক্তার।”
আশরাফ উত্তরে আর কিছু বলে না। কিন্তু তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল অনেক কষ্টে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে।
সবার খাওয়া হয়ে গেলে মুক্তি ও আলেয়া বেগম খেতে বসে যায়। আলেয়া বেগম প্রসন্ন হয়ে বলেন,
-“আজ অনেকদিন পর কারো সাথে বসে খাবার খাচ্ছি। এমনিতে তো একা একা বসে খেতে হয়।”
হঠাৎ করে বিপ্লব সেখানে এসে বলে,
-“মুক্তি আপনি একটু আসুন তো৷ আপনার সাথে অনেক জরুরি একটা কথা আছে।”
মুক্তি খাওয়া ছেড়েই উঠে যায়। বিপ্লব মুক্তিকে রুমে নিয়ে এসে বলে,
-“আপনার সাথে আরো একটা কন্ট্রাক করার ছিল।”
মুক্তি বলে,
-“কি কন্ট্রাক্ট?”
-“আজ থেকে এই রুমের অর্ধেক আপনার আর অর্ধেক আমার। আমি বিছানায় শোবো আর আপনি কাউচে।”
মুক্তি মাথা নাড়ায়। তারপর রুম থেকে যেতে যেতে বলে,
-“একসময় নিজের পুরোটা আমাকে দিতে চাইবেন। কিন্তু সেদিন আর আমাকে পাবেন না। কারণ তখন আমি আর থাকবো না।”
__________
খাওয়া দাওয়া শেষ করে মুক্তি একটু ছাঁদে এসে দাঁড়ায়। শীতকালে দুপুরের এই রোদে বেশ শান্তি লাগে। যাকে বলা যায় “মিষ্টি রোদ”
তন্মধ্যে মুক্তির ফোন বেজে ওঠে। ফোনটা বের করে ফুফুমনি নামটা দেখেই মুক্তির মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ফোন রিসিভ করেই সালাম বিনিময় করে নেয়।
ভালো মন্দর খোঁজ খবর নেওয়া শেষ হলে মুক্তির ফুফু তাকে বলে,
-“তুই যেই কাজে ওখানে গিয়েছিস, সেই কাজটা কি হয়েছে?”
-“না এখনো শুরু করিনি। আমাকে আগে অনেক কিছু শিওর হতে হবে। তারপর যা করার করবো।”
-“যাই করিস ভেবে চিন্তে করিস। কোন ভুল যেন না হয়।”
-“হুম। আচ্ছা এনাল ভাইয়ার খবর কি?”
-“এনালের কথা আর কি বলবো! তুই তো জানিস। এখনো ছেলেটা রেগে আছে।”
-“করুক রাগ। সবসময় এত হাসিখুশি থাকলে হয়না মাঝেমাঝে একটু রাগ করেও থাকতে হয়। তুমি এখনই এনাল ভাইয়াকে কিছু বলিও না। ও যা ছেলে সবকিছু জানতে পারলে এখানে এসে পুরো খেলাটা না ঘুরিয়ে দেয়।”
-“তা নাহয় বলবো না। কিন্তু তুইও নিজের খেয়াল রাখিস। সাবধানে সবকিছু করিস।”
-“আমি সব কাজ একদম ঠিক করে করব। রাখছি এখন।”
ফোনটা কে*টে দিতেই মুক্তি দেখে বিপ্লব তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। বিপ্লবকে দেখে বোকার মতো হাসে মুক্তি। বিপ্লব প্রশ্ন করে,
-“আপনার আসল উদ্দ্যেশ্যটা কি বলুন তো আমায়।”
মুক্তি সহজসরল ভাবে উত্তর দেয়,
-“আপনার মন জয় করা।”
বিপ্লব ভ্রু কুচকে তাকায়। মুক্তি এবার তার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
-“আমার উদ্দ্যেশ্য খুব একটা ভালো না। কিন্তু আপনার কোন ক্ষতি আমি করব না। আপনার কিছু করার আগে যে আমায় নিজেকে শে*ষ করে দিতে হবে।”
(চলবে)
#যখন_আমি_থাকবোনা
#পর্ব_৩
#লেখক_দিগন্ত
মুক্তি হাতে একটা ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিপ্লবদের বাগানে। বিভিন্নরকম ফুলের ছবি তুলছে। ছোটবেলা থেকেই বেশ প্রকৃতিপ্রেমী সে। ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে পুরো পৃথিবী ভ্রমণ করে দেখবে আর সবকিছু ক্যামেরাবন্দী করবে। ভাগ্যের খেলায় এখন সে এই চৌধুরী বাড়ির বউ। চার দেয়ালে বন্দি থাকতে হচ্ছে সবসময়।
হঠাৎ করে মুক্তি খেয়াল করে কেউ দূরে দাঁড়িয়ে গভীরভাবে তাকায় পর্যবেক্ষণ করছে। মুক্তি বুঝতে পারে সে কে। মুচকি হেসে বলে,
‘আমার উপর নজরদারি করে কোন লাভ নেই। আমার ডান হাতের খবর আমার বাম হাত জানে না। সেখানে অন্য কেউ আমার ব্যাপারে কিভাবে জানবে?’
মুক্তি ছবি তুললেই ব্যস্ত ছিল। কারো পায়ের শব্দে পিছনে ফিরে তাকাতেই আলেয়া বেগমকে দেখে মুক্তি। আলেয়া বেগম মুক্তিকে এভাবে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে দেখে বেশ খানিকটা অবাক হয়েছেন।
মুক্তি বলে,
-“আমার আসলে ছবি তুলতে খুব ভালো লাগে।”
আলেয়া বেগম কিছু না বলে চলে যান। মুক্তির কেমন যেন লাগে ব্যাপারটা। আলেয়া বেগম এভাবে কেন চলে গেল? হিসাবটা ঠিক মিলাতে পারছে না। আজকাল সবকিছুই মুক্তির কেমন জানি অদ্ভুত লাগে। মুক্তি নিজের ক্যামেরায় একটি ছবি দেখে বলে,
-“তোমার জন্যই তো এতকিছু করছি আমি। তুমি তো আমাকে ছেড়ে চলে গেছ। তোমার অসমাপ্ত কাজ তো আমাকেই সমাপ্ত করতে হবে। তুমি তো বলেছিলে আমায়, যখন আমি থাকবোনা তখন কিন্তু তোকে এসব করতে হবে। আমি তো তাই করছি। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও আমি করব।”
_____________
বিপ্লব রোজ সকালের মতো জগিং করতে বের হয়েছে। আজ সকালে উঠে মুক্তিকে দেখে নি। ব্যাপারটাকে একদম গুরুত্ব দেয়নি সে। এমনিতেও মেয়েটাকে সহ্য হয়না। কেন যে একমাসের জন্য চুক্তি করল। মেয়েটা মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলে যেন ওকে ছাড়া বিপ্লবের চলবেই না। সে যেন বিপ্লবের খুব কাছের কেউ।
বিপ্লব নিজের গলার চেইন থেকে একটা ছবি বের করে। একটা বাচ্চা মেয়ের ছবি। ছবিটা দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বিপ্লব। ভেতর থেকে অজান্তেই হাহাকার বেরিয়ে আসে। বিপ্লব আহত কন্ঠে বলে,
-“আমি কিন্তু এখনো তোমার অপেক্ষায় আছি বন্ধু। তুমি বলেছিলে তুমি আমার কাছে একদিন ঠিকই ফিরবে। আমি সেইদিনের অপেক্ষায় আছি। তুমি ছাড়া আর কাউকে নিজের মনে ঠাঁই দেবো না আমি। আর ঐ মেয়ে ভাবছে ওকে এক মাসে ভালোবেসে ফেলব। এক মাস তো দূরের কথা সারাজীবন এখানে পড়ে থাকলেও ওর জন্য আমার মনে কোন অনুভূতি তৈরি হবে না। কারণ আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।”
•
মুক্তি স্নেহার রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার কিছু কথা শুনতে পায়। স্নেহা কাউকে যেন বলছে,
-“আজকে রাতেই যা করার করবে। সবকিছু যেন ঠিকঠাক হয়। কোন ভুল কিন্তু আমি পছন্দ করি না।”
বিপরীত দিক থেকে উত্তর আসে,
-“আমি সবকাজ একদম ঠিক ভাবেই করব। কাকপক্ষীতে টের পাওয়ার আগেই খে*ল খতম করে দেব একদম।”
-“গুড। আমি তাহলে এখন রাখছি।”
স্নেহা ফোন রেখে দিয়ে রহস্যজনক হাসে। মুক্তি স্নেহার সেই হাসি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে,
-“এই হাসি যে আমার খুব চেনা। তাহলে স্নেহা ভাবিই কি সে? যার খোঁজ আমি এতদিন ধরে করছিলাম?”
মুক্তি দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল তখন হঠাৎ আশরাফ চলে আসে৷ মুক্তিতে নিজের রুমের বাইরে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
-“তুমি এখানে কি করছ?”
মুক্তি ভূত দেখার মতো চমকে যায়। আশরাফ যে এই সময় চলে আসবে সেটা তার একদম ধারণাতেই ছিল না। মুক্তি বলে,
-“এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। আসলে কিছু কাজ ছিল।”
মুক্তি আর সেখানে না দাঁড়িয়ে দ্রুত চলে যায়। আশরাফ ব্যাপারটাকে গুরুত্ব না দিয়ে রুমে প্রবেশ করে। আশরাফকে দেখে স্নেহা কিছু একটা লুকিয়ে রাখে। আশরাফ স্নেহাকে প্রশ্ন করে,
-“কি লুকাচ্ছ আমার থেকে?”
-“আমি কেন কিছু লুকাতে যাব? তুমি নিজের কাজ করো। এমনিতে তো এই রুমে আসো না। হসপিটালেই সারাদিন কা*টিয়ে দাও। তাহলে আজ কোন দুঃখে এলে?”
স্নেহার এমন কথায় আশরাফ রাগান্বিত হয়। অনেক কষ্ট কথা নিজের রাগটাকে দমিয়ে বলে,
-“আমার রুমে আমি কখন আসব, যাব সেটার পারমিশন তোমার থেকে নিতে যাবো না। তুমি আমার জীবনে এসে আমার জীবনটাকে একদম ন*ষ্ট করে দিয়েছ। নিজের রুমে আসতেও ভয় লাগে। তুমি যা ডেঞ্জারাস। কোথায় কি লুকিয়ে রাখ।”
স্নেহা প্রতিত্তোরে বলে,
-“ডেঞ্জারাস জন্যই আজ অব্দি টিকে আছি। নাহলে তো…”
-“নাহলে কি হতো?”
-“কিছু হতো না। আমি আসছি।”
স্নেহা বাইরে চলে যায়। আশরাফ স্নেহার কথাগুলো মনযোগ দিয়ে ভাবতে লাগে। আসলেই মেয়েটাকে ভালোভাবে বোঝা যায় না। কখনো খুব রহস্যময় ব্যবহার করে। বিয়ের পর থেকেই আশরাফ এসব দেখে আসছে।
স্নেহার অতীত সম্পর্কে যদিও বা তার কোন ধারণা নেই। তবুও সে এতটুকু আন্দাজ করতে পারে স্নেহার সাথে এমন কিছু হয়েছিল যার কারণে সে এমন অদ্ভুত ব্যবহার করায়। সে আসলে যেমনটা দেখায় তেমনটা নয়৷ কিন্তু স্নেহা ভালো নাকি খারাপ সেটা বোঝা আশরাফের দ্বারা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই সে বোঝার চেষ্টাও করে না।
____________
বিপ্লব অফিসের কাজ শেষে রাতে বাড়িতে ফিরে দেখতে পায় মুক্তি তার জন্য অনেক সুন্দর করে খাবার সাজিয়ে রেখেছে। বিপ্লবের কাছে এসবকিছু আদিখ্যেতা মনে হয়। তাই সে মুক্তির উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“এসব করে আমার মন জয় করতে পারবেন না। এরকম ট্রিকস আমার উপর কাজ করবে না।”
মুক্তি বিনিময়ে হেসে বলে,
-“এটা কোন ট্রিকস নয়। এটাকে কেয়ার বলে।”
-“এসব করে কি প্রমাণ করতে চাইছেন? আপনি খুব কেয়ারিং ওয়াইফ?”
-“প্রমাণ করার কি আছে? আমি তো কেয়ারিং। আপনি আমায় ভালো নাই বাসতে পারেন। কিন্তু এই সত্যটা তো অস্বীকার করতে পারবেন না।”
বিপ্লব কিছু বলে না। কারণ সত্যি মুক্তি খুব কেয়ারিং। এই মেয়েকে দেখে মনেই হয়না সে লন্ডনে বড় হয়েছে। বিপ্লব খাবার খেতে বসে যায়। মুক্তি একটু বাইরে আসে। এনাল ফোন করেছে। ফোনটা রিসিভ করে। এনাল বেশ রাগী গলায় বলে,
-“তুই এভাবে কি করে বিয়েটা করলি? তুই এভাবে ঠকাতে পারলি? ভালোবাসার কোন মূল্য নেই তোর কাছে? আজ ভালোবাসার থেকে তোর উদ্দ্যেশ্যটাই বড় হয়ে গেল?”
মুক্তি বলে,
-“শান্ত হও ভাইয়া। আমার কাছে ভালোবাসার মূল্য আছে। কিন্তু সবার আগে আমার উদ্দ্যেশ্য। তুমি তো জানো যে কত বড় একটা নোংরা স্বীকার হতে হয়েছিল আমায়। এখনো হতে হচ্ছে। আমি চাই এই নোংরা খেলাটা বন্ধ করতে। রাজনীতির এই নোংরা খেলায় কত মানুষের জীবন গেলো। তার মধ্যে আমার বাবাও অন্যতম। আমার মনে হয় না তার মৃত্যুটা স্বাভাবিক।”
এনাল অধৈর্য হয়ে প্রশ্ন করে,
-“ডাক্তারি রিপোর্ট তো তাই বলছে। তাহলে তোর কিসের সন্দেহ? আর কার উপর সন্দেহ?”
-“আমার সন্দেহ মিসেস জামিলার উপর। আমার সৎমা মিসেস জামিলা। মহিলাটাকে বরাবরই আমার সন্দেহজনক মনে হয়।”
এনাল বলে,
-“আমি খোঁজ নিয়ে তোকে বলছি। এরপর থেকে আমাকে না জানিয়ে কিছু করবি না। মনে রাখবি তোর প্রত্যেকটা নিঃশ্বাসের খবর আমাকে দিতে হবে।”
মুক্তি মুচকি হেসে ফোনটা কে*টে দেয়। তারপর বলে,
-“সেটা সম্ভব নয়। কারণ তোমাদের থেকে অনেক কিছুই আমি লুকিয়েছি। তোমরা আমার ব্যাপারে বা এই রহস্যের ব্যাপারে যা জানো সেটা তো সব নয়। আমার রহস্যের শিকর যে অনেক গভীরে লুকায়িত আছে। সেই শিকর পর্যন্ত তোমরা কেউ পৌঁছাতে পারবে না। আর আমি চাইওনা তোমরা পৌঁছাতে পারো।”
দূর থেকে দাঁড়িয়ে কেউ একজন মুক্তির উপর নজর রাখছিল। সে বলছিল,
-“তোমার ব্যাপারে সবকিছু আমি জানি। আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী নাকি শত্রু সেটা বলতে পারবো না। তবে এটা আমি জানি যে আমাদের উদ্দ্যেশ্য অনেকটা একই। তবে পথ আলাদা। তুমি যা করো গোপনে করো আর আমি সরাসরি। কিন্তু তুমি হয়তো জানো না আমি তোমার সব গোপন ব্যাপারে জানি।”
আগন্তুক কথাটা বলে রহস্যজনক হেসে চলে যায়।
(চলবে)