#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩২
বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে মোহের বাড়িটা একই রাস্তায় পড়লে বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তানিয়া। গেট খোলা দেখে মনে মনে ভেবে নেয় গিয়ে মোহের একটু খোঁজ নিয়ে আসবে। যেই ভাবা সেই কাজ। প্রধান দরজা খোলা দেখে ধীর পায়ে গিয়ে বাড়িতে ঢোকার দরজা হালকা খোলা দেখতে পায় সে। সেটির কাছাকাছি যেতেই ভেতর থেকে মিসেস সুফিয়ার কান্নাকাটি তানিয়ার কানে আসে। তানিয়া আঁতকে ওঠে। মিসেস সুফিয়া কাঁদতে কাঁদতে বাচ্চাদের মতো বলে যাচ্ছেন,
“আমি কিছু জানি না। তুমি আমার মেয়েটাকে এনে দাও। আমি ওকে এখনি আমার সামনে চাই। আমার কাছে এনে দাও আমার মোহকে।”
মিসেস সুফিয়ার কথাগুলো শুনে চমকায় তানিয়া। মোহের কথা ভাবতে ভাবতে আরো শুনতে পায় আজহার সাহেবের কথা।
“আমি তো বুঝতেই পারছি না কী করব। এখানে পুলিশের কাছে গিয়ে লাভও হয়ত হবে না। গ্রামে যেতে হবে। খোঁজ নিতে হবে।”
“আমি তোমাকে বারবার বলছি! ওই মন্ত্রীটা আমার মেয়ের কিছু একটা করেছে। নয়ত এতক্ষণে ও ফিরে যেত বাড়িতে। ওর কিছু একটা হয়েছে।”
“তুমি তো ওর কাছে ফোনও রাখো নি। রাখলে হয়ত যোগাযোগ করতে পারত।”
মিসেস সুফিয়া আরো ভেঙে পড়লেন। নিজেকেই দোষী বোধ করলেন। তানিয়া এবার নিজের অস্থিরতা সইতে না পেরে দরজা ঠেলে দিয়ে নিচু স্বরে বলল,
‘আসব আঙ্কেল আন্টি?”
অতি চিন্তার মাঝে মোহের মা-বাবা তানিয়ার গলা পেয়ে দরজার দিকে তাকালেন। তবে মিসেস সুফিয়ার অশ্রু ঝরানো থামছে না। আজহার সাহেব থমথমে গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
“তানিয়া মা! তুমি এখানে?”
তানিয়া ভদ্রতার সহিত সালাম দিয়ে বলল,
“আসলে মোহের খোঁজ নিতে এসেছিলাম। আপনাদের কথাবার্তা শুনে ফেলেছি। তার জন্য দুঃখিত। মোহের কি কিছু হয়েছে? কোনো সমস্যা?”
আজহার সাহেবের মুখটা আরো মলিন হলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“আমার মেয়েটা আজকে সকালে নাকি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল। মাথা ফেটে গিয়েছিল তাতে একটা মহিলা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারপর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।”
তানিয়া বিস্মিত হয়ে শুধায়,
“সে কী! মোহের চেনা কেউ যায়নি সাথে?”
“গেলে তো চিন্তা ছিল না। মোহকে এমনি গ্রামের মানুষ পছন্দ করে না। তাই হয়ত কেউ যায়নি। এখন ওর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ও বাড়ি ফিরে নি। কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।”
তানিয়ার মুখের ভঙ্গিও পাল্টে গেল এমন খবর শুনে। মুখ ভার হয়ে গেল তার। মিসেস সুফিয়া নিজের স্বামীর উদ্দেশ্যে বললেন,
“আমরা আর কতক্ষণ এখানে থাকব? চলো গ্রামে। এখনি চলো।”
তানিয়া ইতস্ততবোধ করে বলল,
“আমিও আসছি আঙ্কেল, আন্টি! মোহের খোঁজ পেলে জানাবেন দয়া করে। চিন্তায় থাকব।”
তানিয়া বেরিয়ে এলো। সে যতদূর জানে, মোহ এতটা দায়িত্বহীন মেয়ে নয়। সজ্ঞানে থাকলে সে নিশ্চিত নিজের পরিবারকে এতটা চিন্তায় ফেলবে না। তবে কী হলো মেয়েটার?
আবারও মস্তিষ্ক জুড়ে খেলে গেল দুঃস্বপ্ন। সেই দুরাকাঙ্ক্ষার চোটে কাঁপুনি দিয়ে উঠল শরীর। চোখ দুটো জোর করে মেলে চারিপাশে অস্পষ্ট দেখল মোহ। মাথায় তখন অসম্ভব য;ন্ত্রণা। মাথায় হাত দিতে গিয়ে সে বুঝল তার হাত নড়ানো যাচ্ছে না। সে চেষ্টা করল বারংবার। অবশেষে তার অচল মস্তিষ্ক বুঝে নিলো তার হাত বাঁধা শক্ত করে। শুধু হাত নয়। পা-মুখ সহ বাঁধা। বিনা বাতাসে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে শরীর। দুঃস্বপ্ন যেন দ্বিতীয় বারের মতো সত্যি হয়ে ধরা দিলো মোহের বাস্তবে। আতঙ্কে শিউরে উঠল গায়ের লোম, দুচোখে খুঁজতে থাকল বাঁচার উপায়। আশেপাশে কেউ নেই। তার মাথার ঠিক উপরে শুধু কম হোয়াটের টিমটিমে লাইট জ্বলছে। তাকে ফেলে রাখা হয়েছে একটা ময়লাযুক্ত মেঝেতে। প্রতিটা নিশ্বাসের সাথে উড়ছে ময়লাগুলো। মোহ মুখ থেকে আওয়াজ বের করতে থাকল। ছটফটিয়ে নিজের হাতের বাঁধন খোলার চেষ্টা করল। ভয়ে অবশ হয়ে এলো শরীর। চোখ দিয়ে বেরিয়ে এলো পানি। কতক্ষণ সময় অতিবাহিত হয়েছে তার জানা নেই। আচ্ছা, ইথান কি তাকে ছাড়া কান্নাকাটি করছে? মা-বাবা কি জেনে গেছে সে নিখোঁজ? এই ভেবে আরো বিপাকে পড়ল মোহ। কপালের পাশে টনটনে ব্যথায় মনে পড়ল তার জ্ঞান হারানোর কথা। সে এখন উপলব্ধি করতে পারল ওই কালো বোরখা পরিহিত মহিলাটির চক্রান্ত। ওই কাগজের গন্ধ তার জ্ঞান হারাতে বাদ্ধ করেছে। বহু চেষ্টার পরেও যখন নিজের বাঁধন খোলা হলো না অশ্রু আপনাআপনি বেরিয়ে এলো মোহের। সে যে বাঁচতে চায়। মনে এক প্রশ্ন এলো। এই কি/ডন্যাপিং পূর্ব পরিকল্পিত? কেন এই পরিকল্পনা?
বাড়ি ফিরে এসে চিন্তিত তানিয়া নিজের ঘরে প্রবেশ করতেই তার ফোন বেজে ওঠে। চকিতে তাকিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই দেখল সেখানে লেখা ‘মি. জুনিয়র’। সৌমিত্রের কল দেখে কিছুটা অবাক হয়েই কল রিসিভ করল তানিয়া। কোনোপ্রকার হাই হ্যালো ব্যতীত সৌমিত্র সরাসরি বলে বসল,
“মিস. গোলাপি! সামান্য রুমাল সুন্দর করে ধুয়েও দিতে পারেন না? বাড়ির আদরের দুলালি নিশ্চয়? নাকি মেয়েদের মেকআপ আমার রুমালে মুছে নিয়েছেন।”
হঠাৎ এসব কথা শুনেই তানিয়ার কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়ল। বলল,
“মানে কী?”
“মানেটা এই যে রুমালের একটা জায়গায় দাগ থেকে গিয়েছে।”
“সে কী! আমি যে এত সুন্দর করে ধুয়ে দিলাম। যাকগে, মানুষ মাত্রই ভুল। এখন কি আমাকে আবার রুমাল পরিষ্কার করে দিতে হবে?”
সৌমিত্র এক গাল হেসে দিয়ে বলে,
“তা অবশ্য না। আমার তো মনে হয় আমার রুমাল আপনার কাঁদা মাখা মুখ পছন্দ করেছে। তাই কাঁদার দাগ রেখে দিয়েছে।”
তানিয়া ভ্রু কুঁচকে মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“যত্তসব আজগুবি কথা!”
“আমার কথা এমনিতেও সকলের আজগুবি মনে হয়। পরে মিলে যায় কথাগুলো। ওইযে, বলে না? গরীবের কথা বাসী হলেও সত্যি হয়।”
এই কথাটা যেন তানিয়ার কানে পৌঁছায় না। অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছে সে। মনে শুধু বান্ধবীর চিন্তা ঘুরঘুর করছে। অপরদিকে উত্তর না পেয়ে সৌমিত্র গলা খাঁকারি দিলো।
“মিস গোলাপি! লাইনে আছেন? শুনতে পাচ্ছেন?”
তানিয়া হকচকিয়ে উঠে বলে,
“হুঁ, হুঁ। বলুন?”
“মনে হচ্ছে কারোর চিন্তায় গভীর মগ্ন ছিলেন?”
তানিয়া প্রথমে এড়িয়ে যেতে চায়।
“না তেমন কিছু না।”
“বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে বুঝি?”
তানিয়া এবার রাগে তেতে উঠে বলে,
“সবসময় প্রেমআলাপ ব্যতীত মাথায় অন্য কথা আসে না তাই না? আমি মোহের কথা চিন্তা করছিলাম। আচ্ছা, আপনার ভাই তো তার গ্রামের বাড়ির এড্রেস নিলো। তারপর কি সেখানে গিয়েছিল?”
সৌমিত্র অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে ওঠে,
“গিয়েছিল মানে? সেবাযত্ন থেকে শুরু করে লাঠির বাড়ি সব খেয়ে এসেছে। কিন্তু এ কথা কেন? কিছু হয়েছে নাকি?”
“মোহকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সকালে নাকি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল রাস্তায়। এক মহিলা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার নাম করে কোথায় গিয়েছে কেউ জানে না। আঙ্কেল আন্টি পাগল হয়ে যাচ্ছে! ওদিকে বাচ্চা ছেলে ইথানের কী অবস্থা কে জানে।”
সৌমিত্র হতভম্ব হলো। বিস্ময়ে মুখ থেকে কথা বের হলো না কিছু সময়। কিছুটা সময় পর জোরে বলে ওঠে,
“কী? এটা সত্যি? কালকেই দেখা হয়েছিল। আজকে সকালেই ওকে কে কিড/ন্যাপ করবে?”
তানিয়া একটু ইতস্তত বোধ করে বলল,
“জানি না। তবে আন্টি বারবার আপনার বাবার কথাই বলছিলেন। কারণ মোহের ঝামেলা একমাত্র উনার সাথে বোধহয়।”
সৌমিত্র আর কথা বলতে পারল না। বলার মতো কোনো অক্ষর পেল না। ফোন বিছানায় ফেলে ছুটল স্বচ্ছের ঘরে।
বদ্ধ ঘরে পড়ে থাকা মোহ নিজেকে শান্ত করল। চোখ বুজল। নিজের বাবা আজহার সাহেবের মুখটি ভেসে উঠল। তিনি একসময় মোহকে বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর কোনো বিপদই কঠিন নয়। বিপদ থেকে চাইলেই বেরিয়ে আসা যায় যদি সে ঠাণ্ডা মাথায় চেষ্টা করে। বিপদের সময় ভয় মানুষকে গ্রাস করে। এই ভয়টা যে কাটাতে পারবে, সে বিপদও কাটাতে পারবে।’
নিজের উত্তেজনা কমিয়ে আনে মোহ। নিজের মনে সাহসকে জায়গা দেওয়ার চেষ্টা করে। তৎক্ষনাৎ কর্ণকুহরে ভেসে আসে ক্যাচক্যাচ আওয়াজ। ওমনি চোখ বন্ধ করে মোহ। কারোর হাঁটা চলা এবং তার উপস্থিতি উপলব্ধি করে নিজের শ্বাসপ্রশ্বাস আঁটকে নেয় সে। মনে আঁটে কঠিন পরিকল্পনা।
ইয়াকীন এসে মোহের সামনে বরাবর বসে। ভালো করে একবার পরখ করে নেয় বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে থাকা মেয়েটিকে। বিড়বিড়িয়ে বলে,
“এতক্ষণে তো জ্ঞান ফেরার কথা! কড়া কিছু তো দেওয়া হয়নি।”
মোহের মুখের কাপড় অনেকটা নেমে গেছে নিচে। সেটা খেয়াল করে ভালো করে বাঁধতে গেলেই ইয়াকীন খেয়াল করে মোহের গরম শ্বাস পড়ছে না। আঁতকে ওঠে সে। চোখ বড়ো বড়ো করে মোহের দিকে একবার তাকিয়ে ফের নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখতে গেলে একই অবস্থা দেখে মাথায় হাত পড়ে তার।
“এখনো সাহেব কী করবে এই মেয়েটারে সেটা বলেন নাই। কল উঠাইতেছেন না। এর মধ্যেই মেয়েটার উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে যায় তাহলে…”
ইয়াকীন বিভ্রান্ত হয়ে পরে। পরক্ষণেই মনে হয় বিষয়টা ভালো করে চেক করে দেখা উচিত। তার জন্য হাতের পার্লস পরীক্ষা করতে হবে। মোহের হাত ধরতে গিয়ে ইয়াকীনের মোহের হাতের বাঁধন খোলার প্রয়োজন পড়ে। নিজের হাতের বাঁধন খোলা হচ্ছে জেনেই মোহ সুযোগ পেয়ে গেল। আগপাছ চিন্তা না করেই চোখ মেলেই ইয়াকীনের দিকে পা দিয়ে আক্র/মণ করে বসল। লা/থি দিয়ে ফেলল ইয়াকীনের প্রধান অঙ্গে সজোরে। ইয়াকীন য/ন্ত্রণায় চিৎকার দিতেই যেন ভুলে গেল। ছিটকে গিয়ে একপাশে পড়ে থেকে ব্যথায় ছটফট করতে আরম্ভ করে। সেই সুযোগে মোহ নিজের হাত দিয়ে তড়িঘড়ি করে নিজের পায়ের দড়ি খুলে ফেলে। দুর্বল শরীরে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে ব্যথায় কাতর ইয়াকীনের দিকে তাকায়। উপুড় হয়ে পড়ে থাকা ইয়াকীনের গলায় নিজের হাতে থাকা দড়ি দিয়ে ফাঁ/স দিয়ে ধরে এবং তার পিঠে এক পা তুলে দেয়। গলায় দ/ড়ির ফাঁ/সে অবস্থা বেগতিক হয় ইয়াকীনের। মোহ তীব্র ক্ষোভ ঢেলে শুধায়,
“আমাকে কিড/ন্যাপ করার কারণ কী? এটা কিসের পরিকল্পনা? কেউ আমাকে কিড/ন্যাপ করতে আদেশ করেছিল? নাকি অন্য উদ্দেশ্যে ধরে আনা হয়েছে?”
ইয়াকীন হাঁপাতে হাঁপাতে ওঠার চেষ্টা করে হিসহিসিয়ে মোহকে বলে,
“ছাড় আমাকে।”
“ছাড়ব না। যদি আমাকে সত্যিটা বলা না হয় তবে আমি ছাড়ব না। তোকে ফাঁ/স দিয়ে মে/রে রেখে যাব।”
বলেই মোহ আরো শক্ত করে দ/ড়ি চেপে ধরে ইয়াকীনের গলায়। নিজেকে ছাড়াতে গিয়েও যখন ইয়াকীন ব্যর্থ হয়, দম বন্ধ হয় তখনি অস্পষ্ট কণ্ঠে বলে,
“টাকা…টাকার জন্য এনেছি তোকে।”
মোহের বিন্দুমাত্র বিশ্বাস হয়না এ কথা।
“টাকা? টাকার জন্য যদি তুলতে হয় তবে তোরা বড়োলোকদের কিড/ন্যাপ করতি। আমাকে নয়। আর যদি কথা হয় খারাপ উদ্দেশ্যের তাহলে এতক্ষণে সেটা হাসিল করে ফেলা যেত যেহেতু আমি অবচেতন ছিলাম। তোদের উদ্দেশ্য অন্যকিছু। বলবি নাকি ম;রবি?”
ইয়াকীন ছটফটিয়ে বলে,
“মন্ত্রী সাহেব বলেছে তোকে তুলে আনতে। ছাড় এখন আমাকে বাঁচতে দে আমাকে। আমি ম/রে যাচ্ছি।”
মোহের সন্দেহ সত্যি হলো। চোখ বড়ো বড়ো করে চেয়ে রইল ইয়াকীনের দিকে। তবে সে ছাড়ল না ইয়াকীনকে অন্য পা দিয়ে সজোরে আ/ঘাত করে ইয়াকীনের মাথায়। শক্ত মেঝেতে মাথা লেগে সেখানেই মাথা ফে/টে গিয়ে র;ক্ত ঝরে ইয়াকীনের। গলায় থাকা ফাঁ/সের চোটে জ্ঞান হারায় সে। মোহ তাকে ছাড়ে। দৌড়ে দরজার পানে ছুটে যায়। আবারও কিছু মনে করে ফিরে আসে। বিড়বিড়িয়ে নিজে নিজেকে বলে,
“এত বড়ো সুযোগ পেয়ে আমি হাতছাড়া করব না।”
লোকাল বাসে চেপে যাচ্ছে শৌভিক আর তার সঙ্গীটা। তার গাড়িটা বেশ পুরোনো হয়েছে। মাঝে মাঝেই নষ্ট হয়। অতিরিক্ত ভীড়ের চোটে একপ্রকার হিমশিম খাচ্ছে শৌভিক। এরই মাঝে তার চোখ এড়ায় না তার সামনে থাকা এক যুবক বারংবার তার পাশে থাকা সিটের মেয়ের পিঠে হাত দিয়ে যাচ্ছে ইচ্ছাকৃত। মেয়েটি অস্বস্তিতে ভুগছে। সরে যাচ্ছে তবে জায়গা পাচ্ছে না। মুখে কিছু বলতেও পারছে না। হয়ত ভয়ে নয়ত লজ্জায়! এবার বাস ব্রেক কষলে ছেলেটি আবারও ইচ্ছেকৃতই মেয়েটার কাঁধ জোরে চেপে ধরলে শৌভিকের কান গরম হয়ে যায় মারা/ত্মক রাগে। ছেলেটিকে সামনে ফিরিয়ে নিজের হাতের পুরো শক্তি দিয়ে কষিয়ে থা;প্পড় বসায় সে। ব্যথায় যেন গাল জ্বলে যায় ছেলেটির। ঠোঁটের কোণ ফেটে বেরিয়ে আসে তাজা র/ক্ত। শৌভিক থামে না। ছেলেটির কলার ধরে বলে,
“জানো/য়ার শা/লা! কী পাইছিস ওই মেয়েটাকে? বাড়িতে বোনের সাথেও একই আচরণ করিস?”
সিটে থাকা মেয়েটি ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। চলন্ত বাসে সৃষ্টি হয় ঝামেলা। মেয়েটি দাঁড়িয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে শৌভিককে বলে,
“লোকটা আমার সাথে তখন থেকে অশ্লী/লতা করার চেষ্টা করছিল ভাইয়া। লজ্জায় মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিল না।”
শৌভিক তেতে উঠে বলে,
“কথা বের করতে কে বলেছে আপনাকে? আপনার পায়ে জুতো নেই? সেটা উঠিয়ে চালাতে শুরু করবেন। জুতো শুধু পায়ে দেওয়ার জন্য হয় না। মাঝে মাঝে শা/স্তি দিতেও ব্যবহৃত হয়।”
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩৩
চলন্ত বাসে শুরু হয়েছে অশান্তি। এক নারীর সাথে অ/শ্লীলতা করার পর শৌভিকের হাতে ধরা পড়ার কারণে সকলেই ধমকাচ্ছে তাকে। তবে সেই অপ/রাধ কৃত ছেলেটির মুখে কোনো প্রকার অনুশোচনার লেশ দেখতে পেল না শৌভিক। ছেলেটির ঘাড়ের দিকের কলার চেপে ধরে কাছে এনে বলে,
“কী রে! তোর মুখে সামান্য অনুশোচনাও দেখি না কেন আমি? কীসের এত দম্ভ দেখাচ্ছিস?”
ছেলেটি এবার ক্ষিপ্রতায় ফোঁস ফোঁস করে উঠল। উল্টো ধ;মকে বলল,
“ছাড় আমাকে। তুই জানিস তুই কাকে এমনে ধরছিস। তোরে কী হাল করতে পারি জানিস? একটা কল যাবে তোরে হসপিটালে পাঠানো হবে।”
শৌভিকের আরো ক্রুদ্ধ হলো। ছেলেটির গাল চেপে বলল,
“কোন রাজার পোলা তুই? শুনি তো আগে।”
ছেলেটি ছটফটিয়ে নিজেকে ছাড়াল। শৌভিকের মতো চওড়া গঠনের মানুষের সামনে নিজের সামান্য শক্তি দিয়ে পেরে ওঠা দায়। আঙ্গুল উঁচিয়ে শৌভিকের উদ্দেশ্যে বলল,
“কামালের ছেলে আমি। মন্ত্রী সরোয়ার সাহেরকে চিনিস তুই? তার সহযোগী কামালের ছেলে। এবার কী বলবি বল!”
মন্ত্রীর নাম শোনামাত্র সকলে তটস্থ হলো যেন। এতক্ষণ যে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল তাদের মুখের মাঝে ফ্যাকাসে ভাবের উদয় হলো। ছেলেটি ভাবল সকলের ন্যায় শৌভিকও নিভল বোধহয়। কারণ শান্ত দেখা গেল তাকে। তৎক্ষনাৎ শৌভিক নিজের পাঞ্জাবির হাতা ঠিক করতে করতে তার সাথে থাকা দুজন সঙ্গীকে বলল,
“রাতুল, নীরব! শুনলি তো? ভাইটা কিন্তু মন্ত্রী সাহেবের খাস লোক। আমাদের উচিত ভাইটির ভালো মতো আপ্যায়ন করা।”
শৌভিকের এ কথার মাঝে থাকা ইঙ্গিত বুঝে নিলো রাতুল এবং নীরব। এক গাল হেসে সম্মতি দিলো,
“অবশ্যই শৌভিক ভাই।”
বাস থেকে রাতুল আর নীরব ঘাড় ধরে নামালো ছেলেটিকে। দুজন দুদিকে ঘাড়ে হাত রেখে একপ্রকার জোর করে ধরে নিয়ে গেল সেলুনে। সেলুনে থাকা লোকটি শৌভিককে দেখামাত্র বলল,
“ভাই আপনে এখানে?”
শৌভিক ছেলেটিকে এনে ঘাড় ধরে বসিয়ে বলল,
“তেমন কিছু না। আপনার চুল কাটার মেশিনটা দেন তো ভাই।”
সেলুনের লোকটি কথা না বাড়িয়ে মেশিন এগিয়ে দেয়। উগ্র ছেলেটি চিল্লিয়ে বলল,
“দেখ, ভালো চাইলে ছাড় আমাকে। আমি ছাড় পেলে না তোকে পুঁ/তে ফেলব।”
শৌভিক সেসবে কর্ণপাত করল না। বরং রাতুল আর নীরবকে বলল,
“এই তোরা ভাইরে ধর ভালো করে। নড়তে যেন না পারে। নাহলে আপ্যায়ন ভালো মতো হবে না।”
নীরব আর রাতুল হেসে কুটিকুটি হয়ে ধরল ছেলেটিকে। শৌভিক মেশিন চালিয়ে দিলো ছেলেটির মাথায় আর চোখের ভ্রু-তে। ইচ্ছেমতো হাত চালিয়ে মাথার চুলের অবস্থা যা-তা করে ফেলল শৌভিক। আর বাম চোখের ভ্রু ছেটে ফেলে দিলো একবার। শেষমেশ তার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে একে অপরের গায়ে ঢলে পড়ে নীরব আর রাতুল। রাতুল বিনয়ী হবার ভান ধরে বলে,
“জোকার ভাই কেমন ফিল করছেন?”
ছেলেটি রাগে এবং অপমানে শরীর রি রি করে উঠলেও তখন বলার মতো কোনো পরিস্থিতিতে রইল না। শৌভিক তাকে টেনে তুলে বলল,
“তোর বাপের বাপ মানে মন্ত্রী মশাইকে আমি ভয় পাইনা। এরপর নিজের এসব আলগা ক্ষমতা আর মেয়েদের সাথে অসম্মানজনক কাজ করার আগে তোর চুল আর চোখের ভ্রুর এই দশা মনে পড়বে। যা ভাগ।”
শৌভিকের চেহারার দিকে একবার তাকাল ছেলেটি। মনে ভরা ক্রোধ নিয়ে একপ্রকার ছুটে বের হলো সেলুন থেকে।
গাড়িতে অনবরত নিজের মাথার চুল উন্মাদের মতো টানছে স্বচ্ছ। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে এটা ভেবে যে সে মোহকে কোথায় খুঁজবে? আদেও যদি কেউ কিড/ন্যাপ করে থাকে তাহলে তাকে এখনো গ্রামের কোথাও কি রেখেছে? এরই মাঝে পাশে থাকা সৌমিত্র মুখ খুলল,
“ভাই! পুলিশে একবার জানাই? হয়ত পুলিশ মোহের বাবা-মায়ের কথা শুনবে না। আমাদের কথা তো শুনতেই পারে।”
স্বচ্ছ তেতে ওঠে তৎক্ষনাৎ। জোর গলায় বলে ওঠে,
“মাথা খারাপ তোর? পুলিশ আমাদের বাপের কথা শুনবে। আমাদের নয়। অন্যকিছু ভাবতে হবে।”
সৌমিত্র চুপ রইল। তানিয়ার সাথে বলা কথোপকথন আবারও মনে করতে করতে তার মস্তিষ্কে এলো কিছু ঘটনা। ক্ষীণ সন্দেহ তখন নিজের বাবার বিরুদ্ধে। ঢক গিলে নিলো সে। ভাইকে বলা উচিত হবে কি হবে না সেটা ভেবে কূলকিনারা পেল না। অবশেষে ধীর গলায় বলে ওঠে,
“ভাই আমি না একটা জিনিস খেয়াল করেছি। জানি না ব্যাপারটা কতটুকু লজিক্যাল!”
“তুই লজিক দিয়ে কবে থেকে কথা বলিস? আজকে সিরিয়াস টাইমে তোর লজিকের কথা মাথায় আসলো?”
সৌমিত্র আমতা আমতা করে বলল,
“দ্যা ম্যাটার ইজ ভেরি সেনসিটিভ, ব্রাদার৷”
“কী সেটা তাড়াতাড়ি বল!”
“কালকেই আমি আমাদের বাড়িতে ইয়াকীনকে দেখেছিলাম। ওর সাথে দেখা হয় আমার।”
সৌমিত্রের কথায় টনক নড়ে স্বচ্ছের। বিভ্রান্ত হয়ে প্রশ্ন করল,
“ইয়াকীন মানে ওই গু/ণ্ডা?”
“হ্যাঁ ভাই। বাবার কাছে এসেছিল সম্ভবত। কিন্তু কেন এসেছিল জানি না। আমি জানি বাবার উপর সন্দেহ করা ঠিক হচ্ছে না তবুও মনে হলো তাই…”
স্বচ্ছ ক্রুদ্ধ হয়ে জবাব দিল,
” সন্দেহ করা ঠিক হচ্ছে না আবার কী? মানুষটা সাংঘাতিক। এই কয়দিনে যেন নতুন চিনছি তাকে। তার এই রূপ সম্পর্কে আমি অবগত ছিলামই না। আবারও বোঝাপড়া হবে! শুধু একবার উনি বাড়ি ফিরুক।”
সৌমিত্র এবার আর কিছু বলে না। সে নিজেও হতবাক হবে কাজটা যদি সত্যিই তাদের বাবা করে থাকে। স্বচ্ছ জিজ্ঞেস করল,
“ইয়াকীনের ডেরা কোথায় জানিস তুই?”
“আমি একবার শুনেছিলাম। কিন্তু এখনো ওখানে থাকে কিনা জানি না।”
“গাড়ি থেকে নাম।”
সৌমিত্র তব্দা খেয়ে তাকায় ভাইয়ের দিকে। অসহায় পানে বলে,
“তুমি সবসময় আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে কী মজা পাও ভাই?”
“নাম বলছি!”
সৌমিত্র এবার বাধ্য মতো নেমে গেল। জানালা দিয়ে উঁকি দিতেই স্বচ্ছ বলল,
“ফোনে ইয়াকীনের আগের ডেরার এড্রেস পাঠা। আর বাকিদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা এখন ও ওখানেই থাকে কিনা। আমার হাতে সময় কম। আমি চাইনা কোনোভাবে আমার বা বাবার জন্য মোহের সামান্যতমও ক/ষ্ট হোক।”
স্বচ্ছ তাড়াহুড়ো করে গাড়ি নিয়ে চলল। সৌমিত্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“হয়, হয়। প্রেম রোগে ধরলে এমনি হয়।”
ধীরে ধীরে দুচোখ খুলে ঝাপসা দেখল ইয়াকীন। টিমটিমে আলোতে শুধু অস্পষ্ট দেখল এক নারী অবয়ব। নড়েচড়ে ওঠে ইয়াকীন। মস্তিষ্ক তাকে মনে করায় জ্ঞান হারানোর আগের কাণ্ড। রাগে ফেটে পড়ে সে। উঠে বসতে গিয়ে খেয়াল করে তারই হাত-পা বাঁধা। মোহ তাকিয়ে তাকিয়ে ইয়াকীনের কর্মকাণ্ড দেখছে। হাতে তার ফোন। ফোনটা ইয়াকীনের। ইয়াকীন চিৎকার দিয়ে ওঠে,
“খুলে দে বাঁধন।”
মোহ স্পষ্টভাবে বলে,
“খুলব। একটা শর্ত আছে আমার।”
“তোর শর্তের গুষ্টির ***। তুই না খুললে তোর অবস্থা কী হবে জানিস? খুলে দে।”
“নিজের অবস্থার কথা চিন্তা করছি না মোটেই। ভয় দেখাতে আমিও পারি। আমার হাতে এখনো দড়ির কিছু অংশ আছে। এটা দিয়ে চেপে ধরলে এবার জ্ঞান আর হারাবি না। চিরতরে ঘুমিয়ে পড়বি। এখন পছন্দ তোর। আমার কথা মতো কাজ করবি নাকি আমি আমার আগের কাজটা পুনরায় করব।”
দড়ির ফাঁ/সের কথা মনে পড়তেই ইয়াকীনের যেন ম/রণ যন্ত্র/ণা অনুভব করে। কত কাছেই ছিল মৃ/ত্যু। সে ভয়ে পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বলে,
“না, না৷ আমি ম/রতে চাইনা।”
মোহ হাসে। হাসিতে তাচ্ছিল্য মিশে রয়েছে।
“যে নিজেই মৃ/ত্যুর ভয় কাটাতে পারে না সে আবার অন্যকে মা/রতে আসে।”
“আমাকে ছেড়ে দে।”
ইয়াকীনের কণ্ঠে এবার অনুরোধ। মোহ বলে,
“শর্ত মানবি?”
“কী শর্ত? সব মানব।”
“আমি ভিডিও করব সেখানে সমস্ত কীর্তির কথা স্বীকার করবি। তোকে কে কাজটা করতে বলেছে সব বলতে হবে। আমি মন্ত্রী সাহেবের পতন চাই।”
ইয়াকীন সঙ্গে সঙ্গে হাঁসফাঁস করে উঠে বলল,
“না৷ এটা আমি পারব না। আমি নিজের ভুল স্বীকার করতে পারব কিন্তু মন্ত্রী সাহেবের নাম নিতে পারব না।”
“তাহলে এখানেই ম;রতে হবে।”
মোহ শুধু আতঙ্কিত করতেই এগোয় ইয়াকীনের নিকটে। ছটফটিয়ে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে ইয়াকীন। মোহ দড়িটা ইয়াকীনের গ/লায় দিতেই ইয়াকীন বলে,
“আমি সব করব। আমারে মা/রিস না। বাসায় দুইডা পোলা আছে আমার। মা নাই তাদের। ছেড়ে চলে গেছে। আমি ম/রলে ওদের কে দেখবে? দুই বেলা খাবার তুলে দেওয়ারও লোক নাই।”
মোহ থমকায়। কথাগুলো হৃদয়ে সামান্য পীড়া দেয়। মায়া লাগে। তবে এই মায়া ক্রোধের ঊর্ধ্বে যায় না। পৃথিবীর সকল মানুষ নিজ স্বার্থে কাজ করে। লোকটি যদি কাজটি করে বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিতে তবে মোহও কাজটি করছে সরোয়ার সাহেবের আসল রূপ বের করতে।
“গু/ণ্ডামি, কিড;ন্যাপিং ছাড়াও অনেক কাজ করা যায়। যা অন্যায় ব্যতীত। তুই সেটা করিস নি। আজকাল মানুষ ময়লা সংগ্রহ করেও সংসার চালায়। তাই আমাকে এসব কথা বলে ভোলানো সম্ভব নয়।”
বহু তর্ক বির্তকের পর অবশেষে নিজের কাজ করতে সক্ষম হলো মোহ। শুধুমাত্র একারণেই সে এখনো পালিয়ে যায় নি। সে যদি পালিয়ে যায় তবে সত্যিটা কাউকে মুখ ফুটে বললেও বিশ্বাস করত না। সে শা/স্তি চায় নিজের সাথে করা অ/ন্যায়ের। কঠোর শা/স্তি।
মোহ কাঁচুমাচু করে বের হলো ছোট্ট কুঠুরি মতো ঘর থেকে। বাহিরে বিশাল বারান্দা। বারান্দায় পড়ে থাকা নেশার বোতল দেখে বোঝায় যাচ্ছে এখানে প্রতিদিন আড্ডা বসে নেশাখোরদের। মোহ বাহিরে গিয়ে বুঝল এই জায়গাটি ভালো নয়। চারিপাশে সব পুরুষ জু/য়া খেলতে বসেছে। এ সময় এক অল্পবয়সী নারীকে দেখে হতবাক হয়ে ঘুরে ঘুরে মোহকে দেখছে তারা। ওড়না দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টায় রইল মোহ। হাঁটার গতি বাড়াল। পায়ে নেই জুতো। নিচে থাকা ছোটো ছোটো ইটের টুকরো পায়ে বিঁধছে। গলি পেরিয়ে পাকা রাস্তায় এলো মোহ। এখানে দুয়েকটা গাড়ি চলছে। স্বস্তির শ্বাস ফেলল সে। জায়গাটি দেখে তার গ্রাম মনে হলো না আর। তবে কি সে ফের ঢাকা শহরে চলে এসেছে? ইথান কী করছে তাকে ছাড়া? দুর্বল শরীরে এসব ভাবনা চিন্তায় মাথা ঘুরল মোহের। পাশে এক দোকানের সাইনবোর্ড দেখে বুঝল জায়গাটি আসলেই শহরের মধ্যে। মোহ এবার ইয়াকীনের ফোনটা দেখে ভাবল, বাবার নম্বরে কল দেওয়া যাক। ফাঁকা অটো পায় কিনা সেটা ভেবে ভয়ে ভয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফোনের নম্বর ডায়াল করতে থাকল সে। অন্ধকার নেমে এসেছে আকাশে। সামনে দেখা গেল এক বড়ো গাড়ির আলোর ঝলকানি। বেশ জোরেই আসছে। নিজের শক্তি হারাচ্ছে মোহ। আগপাছ না ভেবে যেই না হাত বাড়িয়ে গাড়িকে দাঁড় করাতে চাইল গাড়িটি থেমেও গেল। গাড়ি থেকে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে আসা মানুষটিকে দেখে বিস্মিত হলেও যেন কোথাও স্বস্তির বাতাস এসে লাগল মনে। স্বচ্ছ ছুটে এলো। মোহের অবস্থা পরিলক্ষিত করল। পায়ে জুতো নেই, হাতে এখনো দড়ি দিয়ে বাঁধার দাগ স্পষ্ট। সুন্দর হয়ে সবসময় পরিপাটি হয়ে থাকা চুল এলোমেলো। গোল গোল সুন্দর আঁখি দুটো যেন কিছু ঘণ্টার ব্যবধানে গর্তে ঢুকে গিয়েছে। কপালের পাশে জমাট বাঁধা র;ক্ত। মোহ তাল হারায়। চোখ বুঁজে আসে। সে নিজেও জানে না এতক্ষণ কী করে সাহস ধরে রেখে কাজগুলো করেছে। এখন আর শক্তিতে কুলায় না। স্বচ্ছ চোট করে ধরে মোহের বাহু।
“ঠিক আছো তুমি? কী হয়েছে তোমার? কে করেছে অবস্থা?”
স্বচ্ছের শ্বাসরুদ্ধকর কণ্ঠ। কী যে উচাটন তার মনে সেটা তার কথাতেই স্পষ্ট। মোহ প্রায় নিভে যাওয়া কণ্ঠস্বরে বলল,
“আমাকে বাড়ি নিয়ে যাবেন প্লিজ? আমি বাড়ি যেতে চাই।”
“হ্যাঁ। চলো। আমায় ধরে হাঁটো। এখন আবার অস্বস্তি বোধ করো না।”
স্বচ্ছের কোথায় এক পলক তাকাল মোহ দুর্বল দৃষ্টিতে। স্বচ্ছ আস্তে করে মোহের হাত ধরল। মোহ পায়ের ধাপ ফেলে খুবই ধীর গলায় বিড়বিড়িয়ে বলল,
“হয় না অস্বস্তি এখন আর।”
স্বচ্ছের কান অবধি কথা পৌঁছায় না। সে নানান চিন্তায় দিশাহারা। মোহকে সাবধানে গাড়িতে তুলে বসাতেই মোহ বলে,
“পানি আছে? তেষ্টা পেয়েছে।”
“আচ্ছা দাঁড়াও। আমি দেখছি। বসো একটু।”
মোহ বন্ধ করে বসে রইল। স্বচ্ছ দোকানে গিয়ে পানি কিনে আনলো। পানি খেয়ে এবং মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে যেন ফিরে এলো চেহারায় সামান্য সজীবতা। শক্তি ফিরে পেল যেন মোহ। স্বচ্ছ এবার বলল,
“তোমার হাতটা দাও।”
মোহের নেত্রপল্লব বড়ো হলো। শুধাল,
“কেন?”
স্বচ্ছ জবাব ব্যতীত মোহের হাত ধরল। মোহের হাতে দাগ হয়ে যাওয়া অংশে ঠাণ্ডা পানি দিলো সে যত্নের সহিত। হাতটা ধরেছেও হালকাভাবে। যদি আবার আ;ঘাত পায়? ব্যস্ত কণ্ঠে স্বচ্ছ এবার বলে,
“একটু হলেও যন্ত্র/ণা থেকে রেহাই পাবে।”
এবার গাড়ির দরজা খোলে স্বচ্ছ। হাঁটু মুড়িয়ে বসে সে গাড়ির কাছে। মোহকে বলল,
“পা একটু বাড়িয়ে দাও।”
মোহ সাফ মানা করে।
“না, না। পায়ে দিতে হবে না। উঠুন। খারাপ দেখাচ্ছে বিষয়টা।”
“আমার বিষয় খারাপ দেখাক, ভালো দেখাক, বিশ্রী দেখাক তোমায় চিন্তা করতে হবে না। পা ধরে মা/রব এক টান। শুধু পা নয় পুরো বডি চলে আসবে।”
মোহ জেদ ধরে বলল,
“আমি বাড়ি যাব। আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এতটুকু সাহায্য কী করতে পারবেন? নাকি অন্য রাস্তা দেখব?”
স্বচ্ছের ঘোলাটে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এবার মোহের জেদ অতিক্রম করে। মোহকে জানান দেয়, এবার তার কথা না শুনলে সত্যিই পা ধরে দেবে টান। মোহ পা বাড়িয়ে দেয়। আস্তে করে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিলো স্বচ্ছ। বিড়বিড়িয়ে নিজ মনে বলল,
“সূর্যের সমান তেজ নিয়ে জন্ম নিয়েছে যেন!”
সবশেষে গাড়িতে উঠে বসে স্বচ্ছ। বুকের ধকধকানি কমানো যাচ্ছে না কিছুতেই। মন করছে বা/জে এক আবদার। এত সময় উদ্ভ্রান্ত হয়ে খুঁজে যাওয়া নারীটি তার সামনে থাকায় জড়িয়ে ধরে নিজেকে শান্ত করতে মন চাইছে। আচমকা স্বচ্ছ নিজের দুহাত দিয়ে নিজের দাড়ি যুক্ত গালে আলতো করে একের পর এক থা/প্পড় মা/রতে লাগলে অবাক পানে তাকায় মোহ। এই লোকটা আবার পাগল হলো নাকি? আকাশসম বিস্ময় নিয়ে বলল,
“এ কী! মাথা ঠিক আছে আপনার? নাকি যতটুকু ভালো তারগুলো ছিল সেটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে?”
স্বচ্ছ হাফ ছেড়ে বলল,
“তুমি ওসব বুঝবে না। তোমাকে খুঁজে পাওয়ার পর মনে অদ্ভুত চিন্তাধারা ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
“কী চিন্তাধারা?”
স্বচ্ছ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ঢক গিলে নির্লিপ্তে বলে ফেলল,
“অশ্লীল অসভ্য চিন্তাধারা।”
মোহের চক্ষুদ্বয় তখন কপালে। পুরো মুখশ্রীতে বিস্ময়ের ঝলকানি। থমতম খেয়ে শুধায়,
“মানে?”
“না, কিছু না। চুপ করো তো। আমার চিন্তার কথা বলতে গেলে আমি এক্সি/ডেন্ট করে বসব।”
স্বচ্ছের ধমকানিতে ভ্যাবাচেকা খেয়ে নীরব হয় মোহ। মিনিট দুয়েক পরেই স্বচ্ছ হুট করে শুধায়,
“আচ্ছা! কাউকে নিয়ে অসভ্য চিন্তা কখন ঘুরপাক খায়?”
মোহ বিরক্তি নিয়ে তাকায় স্বচ্ছের পানে। এই লোকের কথার আগামাথা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই মোহ সোজা উত্তর করে,
“যখন ভেতরের কুস্বভাব মেয়েদের দেখলে নাড়া দেয় তখন।”
“ছি, ছি। বহুবচনে যাইনি আমি। একবচনে আঁটকে আছি। আমার অসভ্যতা একবচনকে ঘিরেই।”
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]