#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩৮
ক্লাবে ফেরার পথে বিস্কিট, পাউরুটি কিনে খেতে খেতে এলো স্বচ্ছ। গাড়ি থেকে নামার পরে বেচে গিয়েছিল বিশ টাকা। তা দিয়েই খাবার কেনা। এত সময় পর খাবার পেটে যাওয়ার ফলে যেন হচ্ছে সে অমৃত খাচ্ছে। অথচ সে নিজে কখনো এসব খাবার খায়নি। তার প্রিয় ছিল দামী দোকানের টাটকা ব্রেড। খেতে খেতে ক্লাবের দরজার সামনে এসে দেখল সেটি হাট করে খোলা। স্বচ্ছের বুঝতে দেরি লাগল না সৌমিত্র এসে পড়েছে। সে ভেতরে ঢুকল তার মুখে পুরো পাউরুটি ঢুকিয়ে দিয়ে। গিয়ে দেখল সৌমিত্র সোফায় বসে রয়েছে অধীর আগ্রহে। স্বচ্ছকে দেখতে পাওয়ার সাথে সাথে সৌমিত্র তেতে উঠল।
“এই ক্লাবেই কি তুমি রাত কাটিয়েছ ভাই? এখানে এত মশা তার উপরে বেড তো নেই। এই ছোটো সোফায় ঘুমিয়েছ?”
স্বচ্ছ মুখের খাবার চিবুতে চিবুতে দায়সারাভাবে উত্তর করল,
“হুঁ, তো?”
“এভাবে কতদিন থাকবে বাইরে বাইরে? থাকতে পারবে? তোমার কাছে টাকা আছে? আমি জানি বাবা কত বড়ো ভুল করেছে। শুধু ভুল না ক্রা/ইম করে ফেলেছে। তার জন্য নিজেকে কষ্ট দিয়ে কী পাচ্ছো? বাবার ব্যাপারটা বাড়িতে থেকেই সমাধান করা যায় না?”
“তোর কাছে ব্যাপারটা অনেক সহজ তাই না? কারণ তুই সব বিষয় সহজভাবে মেনে নিতে পারিস। আমি পারি না। এটাই আমার সমস্যা। আজ যদি মোহর জায়গায় অন্যকেউ থাকত আমি ঠিক একই প্রতিক্রিয়া করতাম। ওই মানুষটা এখন আর বাবা নেই। বাবার মধ্যে নমনীয় একটা ভাব থাকে। সেটা উনার মধ্যে নেই। একজন ক্রি/মিনালের সাথে থাকতে আমার বাঁধবে সৌমিত্র।”
সৌমিত্র জানত সে নিজের ভাইকে বোঝাতে পারবে না। তবুও হতাশার শ্বাস ফেলল সে। বলল,
“ভাই, এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে। তোমার মুখের অবস্থা আয়নায় দেখেছ? কিছু খেয়েছ রাত থেকে?”
“হুমম খেয়েছি।”
ঢক গিলে বলল স্বচ্ছ। তার পেট এখনো পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়নি। সৌমিত্র জেরা করে বলল,
“কী খেয়েছ? কত টাকা ছিল তোমার কাছে সেটা দিয়ে কী কী খেতে পেরেছ?”
স্বচ্ছ ক্ষেপে উঠল এবার। তার ক্ষেপে ওঠা মূলত ইচ্ছে করে। সৌমিত্রকে জানাবে না তার টানাপোড়েনের ব্যাপারটা সেকারণেই।
“আমি যা ইচ্ছা তাই খাই। অমৃত খাই, বিষ খাই। তাতে তোর কী সমস্যা? তোকে এত কৈফিয়ত চাইতে কে বলেছে?”
সৌমিত্র এবার থেমে থেমে বলল,
“মা শুধু তোমার জন্য কাঁদছে। সকাল থেকে কিছু খেতে চাইছে না। তোমাকে না দেখলে সে খাবে না বলে রেখেছে।”
“তুই জোর করতে পারিস নি? জোর করে খাওয়াবি। মায়ের খেয়াল রাখার দায়িত্ব এখন তোরই। মাকে সামলাতে হবে তোকেই। আমার হেরফের যেন না হয়। আমি মায়ের সাথে কথা বলে নেব।”
“কিন্তু ভাই…”
স্বচ্ছ ধমকে উঠে বলল,
“বাড়ি যাওয়ার কথা আর বললে তোর সাথেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেব।”
“ওকে কুল ডাউন। বলব না বাড়িতে যাওয়ার কথা। ইয়াকীন কি এখনো এখানে আছে?”
উত্তেজিত এবং অস্থির স্বচ্ছের মাথায় তৎক্ষনাৎ ইয়াকীনের কথা আসে। বলে,
“হ্যাঁ। ও তো এখানেই আছে। ভেতরের ঘরে। মনেই নেই এতকিছুর মাঝে ওর কথা।”
এই বলেই তড়িঘড়ি করে উঠে গিয়ে ভেতরের ঘরের ছিটকিনি খুলে সেখানে প্রবেশ করে স্বচ্ছ। জানালা লাগিয়ে রাখার কারণে উটকো বাজে গন্ধ এসে জমাট বেঁধেছে ঘরে। কাশতে কাশতে ক্লান্ত, প্রায় নিষ্প্রাণ ইয়াকীনের পানে তাকাল স্বচ্ছ। ইয়াকীনের জ্ঞান নেই। স্বচ্ছ গম্ভীর কণ্ঠে সৌমিত্রকে আদেশ করল,
“বাহিরের ঘরে পানির বোতল আছে। নিয়ে এসে ওর মুখে ছিটিয়ে দে।”
সৌমিত্র বাধ্য মতো বাহির থেকে পানির বোতল এনে মুখে ছিটিয়ে দিতেই ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল ইয়াকীনের সারা শরীর। হাত-পা নাড়াতে নিয়ে দেখল তা বাঁধা। বোবার ন্যায় কথা বলার চেষ্টা করল সে। খুলে দিতে বলল বাঁধন। স্বচ্ছ শুধু মুখের বাঁধন খুলে দিতেই ইয়াকীন অনুরোধ করল,
“আমারে ছেড়ে দেন আপনারা। এভাবে থাকলে তো আমি ম/রে যাব।”
“নিজের কষ্ট, নিজের যন্ত্র/ণা ঠিকই উপলব্ধি করা যায় অথচ গত রাতে একটা মেয়েকে তুমি একই ক/ষ্ট দিয়েছিলে। আমি যদি আগে বুঝতে পারতাম তোমার পরিকল্পনা!”
জবাবে বলল সৌমিত্র। স্বচ্ছের মেজাজ এমনিতে চড়ে যাচ্ছে বারংবার। খিদে পেটে ঠিক নেই মাথা। ইয়াকীনের গাল চেপে ধরল সে। শাসিয়ে শুধাল,
“মোহকে কেন অপ/হরণ করেছিলে? কার কথার করেছিলে? আমার বাবার কথায়?”
ইয়াকীন আগের মতোই মাথা ঝাঁকাল। সে কিছুতেই স্বীকার করে না। রাগের চোটে ইয়াকীনের মাথার চুল চেপে ধরে স্বচ্ছ।
“স্বীকার কর নয়ত কোনোদিন আমি ছেড়ে দেব না। এখানে পচিয়ে মা/রব।”
“আপনার বাবার থেকে আদেশ পাইনি আমি। বিশ্বাস করেন।”
স্বচ্ছের ভেতরের র;ক্ত যেন টগবগিয়ে উঠছে। সে গায়ের শক্তি দিয়ে ইয়াকীনকে বেঁধে রাখা চেয়ারে লা/থি দিতেই তা পড়ে যায়। ইয়াকীন ব্য/থা পায়। স্বচ্ছ শান্ত হয়না। লা/থি মা/রতে থাকে একাধারে। সৌমিত্র তাকে ধরে। জোর করে আটকায়। বলে ওঠে,
“এভাবে হবে না। বরং কেউ জানতে পারলে আমাদের উপর উল্টা চোটপাট হতে পারে। পুলিশের কাছে ওকে নিয়ে গেলে তবেই ভালো হবে।”
স্বচ্ছ দৃষ্টি শক্ত করে সৌমিত্রের দিকে চেয়ে জানতে চায়,
“কোন পুলিশের কাছে যাব? যাকে স্বনামধন্য সরোয়ার সাহের কিনে রেখেছে?”
“এছাড়া কোনো উপায় নেই আমাদের কাছে। তুমিও ভেবে দেখো।”
স্বচ্ছ নীরব হয়। ভাবনায় নিভে যায় তার উত্তেজনা। তবে কমে না বিন্দুমাত্র ক্রোধ।
“তার মানে আপনার কথা অনুযায়ী সকলের প্রিয় মন্ত্রী সাহেব আপনাকে অপ/হরণ করার আদেশ দিয়েছিল তাই তো? সেই অনুযায়ী আপনাকে অপ/হরণ করা হয়েছে। আর আপনি বেঁচে ফিরে এসেছেন!”
মোহ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। শান্ত গলায় বলল,
“জি হ্যাঁ। সব তো আপনাকে বললাম। আমার কাছে যা এভিডেন্স ছিল সেটাও দেখালাম।”
শৌভিক তার হাতে থাকা ফোনটির ভিডিও ফের চালু করল যেখানে ইয়াকীন স্বীকারোক্তি দিচ্ছে৷ অতঃপর মৃদু হেসে বলল,
“নারী হিসেবে আপনার সাহস অত্যাধিক সেটা মানতে হবে। যেখানে এমন পরিস্থিতিতে পড়লে কোনো মেয়ে ঠাণ্ডা মাথায় পালানোর পরিকল্পনা করতে পারে না সেখানে আপনি কিড;ন্যাপারকে দিয়ে বিষয়টাকে স্বীকার করিয়েছেন।”
“আমার সাহসীকতার প্রশংসা করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি আজকে আপনার কাছে এসেছি শুধুমাত্র এই বিষয়গুলোর সমাধান খুঁজতে। আমি সহ্য করে থাকতে পারি না। এটা আমার সমস্যা। তাই সাধারণ কেউ হোক বা মন্ত্রী সাহেব আমি কাউকে ছাড় দিতে চাই না। পুলিশের কাছে যেতে পারছি না কারণ আমি নিশ্চিত ওরা আমার পক্ষ নেবে না। এটা আপনারও জানা কিছুদিন আগে কীভাবে আমার বাবাকে বিনা অপ/রাধে জে/লে অবধি টেনে নিয়ে গেছে।”
শৌভিক মাথা ঝাঁকাল। কিছুটা ভাবুক হয়ে বলল,
“কিন্তু আপনি আমাকে যেই এভিডেন্স দিয়েছেন সেটা আমি বিশ্বাস করলেও বাকিরা করবে না। কারণ আপনি যার বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলতে চাইছেন তিনি সরোয়ার সাহের। যিনি তুড়ি মে/রে সবকিছু উল্টে দিতে পারেন। উনাকে উনার উপযুক্ত জায়গা দেখাতে আপনাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।”
মোহের কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়ল। খানিকটা চিন্তিত হয়ে বলল,
“আমাকে যা করতে হয় আমি সব করব। তবুও আমি ছাড় দিতে রাজি নই। ওই লোকটা আমার সাথে, আমার পরিবারের যা যা করেছে সেটা হিসাব আমি গুনে গুনে নিতে চাই।”
“তবে এই ভিডিও উপরমহলে নিয়ে গেলে বিশ্বাস করবে না। এর জন্য শক্তপোক্ত প্রমাণ প্রয়োজন। তবে আপনার জন্য আমি যেটা করতে পারি সেটা আপনার মামার যেই ফ্যাক্টরির কেস আছে সেটা নিয়ে উপরমহলে যেতে। মন্ত্রী সাহেব আপনার মামার হাতে যেই কাগজ ধরিয়ে দিয়েছে সেটাতে টাকার পরিমাণ আর উপরমহল থেকে যেই টাকা দিতে বলেছিল সেটা জেনে মেলাতে পারলেই মন্ত্রী সাহেবকে একদিকের মুখোশ আমরা টেনে খুলে ফেলতে পারব। সকলের সামনে অন্তত এটা প্রমাণ হবে উনি কোনো সৎ মানুষ নন।”
মোহ যেন আশ্বাস পায়। সে তড়িঘড়ি করে বলে,
“তবে সেটাই করা হোক। আপনি কি আমায় সাহায্য করতে পারবেন?”
শৌভিক খানিকটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলে,
“আর ভোটের আগে কাজটা করতে পারলে উনার ভোটে জেতার আশা কমে যাবে। আপনার স্বার্থে এবং আমার স্বার্থে কাজটা করতে আমি অবশ্যই পুরো দমে সাহায্য করব।”
মোহ আশার আলো দেখতে পায়। নিজের অভ্যন্তরে থাকা প্রতিশোধের দাবানল মেলতে থাকে নিজের জায়গা।
ইন্সপেক্টরের টেবিলের সামনে ধা/ক্কা মে/রে ইয়াকীনকে ফেলে দিলো স্বচ্ছ। মুখ থুবড়ে পড়ল ইয়াকীন। ইন্সপেক্টর হকচকিয়ে উঠল। স্বচ্ছ শাসিয়ে বলল,
“একে এখনি কাস্টারি ঢোকান নয়ত আপনার সামনেই আমি একে শে/ষ করব।”
ইন্সপেক্টর দাঁড়িয়ে পড়ল। ইয়াকীনকে তিনি চেনেন। এর আগে বেশ কয়েকবার জে/ল খাটা আ/সামী। অস্থির ভরা কণ্ঠে বলে উঠল,
“কেন? কী হয়েছে স্যার? কী করেছে ইয়াকীন আপনাদের সাথে?”
“কি/ডন্যাপিং কেস।”
সৌমিত্রের সহজ উত্তর। ইন্সপেক্টর চোখ বড়ো বড়ো করে বললেন,
“কাকে করল আবার কিড/ন্যাপ ও?”
“একটা মেয়েকে অপ;হরণ করার দায়ে ওকে এখনি কাস্টারি ঢোকাবেন। নয়ত গতবার বলে গিয়েছিলাম তো মনে নেই? আপনার একদিন কি আমার একদিন?”
ইন্সপেক্টর গলা খাঁকারি দিয়ে জানতে চেষ্টা করল,
“কিন্তু ভিকটিম না বললে তো আমরা কাজটা করতে পারব না স্যার। ভিকটিম কে?”
“ভিকটিমের কথা শুনবেন আপনি? ভিকটিম মোহ যার বাবাকে আমার বাবার কথায় এখানে এনে কাস্টারিতে ঢুকিয়েছিলেন। আমার বাবা ভিকটিম না হয়ে যদি তার কথা শুনতে পারেন তাহলে আমার কথা কেন শুনবেন না?”
কড়া কণ্ঠ স্বচ্ছের। চোখমুখ লাল হয়ে এসেছে ইতিমধ্যে। স্বচ্ছ আবার হুংকার ছেড়ে বলল,
“আমার বাবার কথাতে ও একটা মেয়েকে অপহ/রণ করেছে। সেটা আপনাদের ওকে দিয়ে সত্যিটা স্বীকার করতে হবে। আবার জানতে চাইবেন না আমার বাবা যে কাজটা করতে বলেছে সেটা আমি কী করে জানলাম! সরোয়ার সাহেব নিজে স্বীকারোক্তি দিয়েছে আমার সামনে।”
সরোয়ার সাহেবের কথা শুনেই ইন্সপেক্টর আতঙ্কিত হলেন যেন। ঢক গিলে কিছুটা দূরে থাকা দুটো হাবিলদারকে ইশারা করলেন যেন ইয়াকীনকে ধরে রাখে। অতঃপর হাসার চেষ্টা করে বললেন,
“আমার একটা জরুরি কল করার আছে। শুধু দুই মিনিট সময় হবে?”
স্বচ্ছ দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠল,
“কলটা এখন মন্ত্রী সাহেবের কাছে যাবে তাই তো? যার কাছেই যাক একে আজকে ছাড়লে আমি কিছু মানব না। হেস্তনেস্ত করে ফেলব।”
ইন্সপেক্টর অনেকটা দূরে ওপ্রান্তের জানালার কাছে এসে দাঁড়ালেন। কল করলেন সরোয়ার সাহেবকে। রিসিভড হতেই জানালেন স্বচ্ছের কর্মকাণ্ডের কথা। ওপাশ থেকে সরোয়ার সাহেব শান্ত বাক্য করলেন,
“আমার ছেলের কথাই শোনো। ইয়াকীনকে কা/স্টারিতে নাও। আগে ইয়াকীন বাকিদের কাছে স্বীকারোক্তি দেওয়ার আগে তাকে বাকিদের থেকে দূরে করতে হবে।”
“জি, আচ্ছা।”
ইন্সপেক্টর কল কাটলেন। দ্রুত ফিরে এলেন স্বচ্ছের নিকটে। ইন্সপেক্টরে সিদ্ধান্ত জানতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে স্বচ্ছ। ইন্সপেক্টর কণ্ঠ ভারী করার চেষ্টায় হাবিলদার দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“ইয়াকীনকে এখনি নিয়ে যাও কাস্টারিতে।”
স্বচ্ছের ধারণা ভুল প্রমাণিত হওয়ায় কিছুটা অবাকই হলো সে। তবে তা প্রকাশ করল না। তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল ইন্সপেক্টরের মতিগতি।
গাড়িতে বসে থেকে উসখুস করছে স্বচ্ছ। তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে অস্থিরতা যেন বুক চিঁড়ে বেরিয়ে আসবে কখন যেন। সৌমিত্র গাড়ি ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিতে দিতে বলল,
“ভাই, তুমি কী ঠিক করলে? ক্লাবেই ওভাবে থাকবে? কষ্ট করে?”
স্বচ্ছ দাঁত কিড়মিড়িয়ে জবাব দিল,
“তাহলে আর কোথায় যেতে বলছিস?”
“তুমি বললে আমি ব্যবস্থা করে দেই? বাড়িতে না যাও অন্যকোনো হোটেল, আমার বন্ধুর মেস বা অন্যকোথাও…”
“তোর কী মনে হয় আমার বন্ধুদের সাথে আমি থাকতে পারব না? আসলে আমি থাকতে চাই না।”
সৌমিত্র একপ্রকার অতিষ্ঠ হয়ে বলল,
“এভাবে কতদিন?”
“যতদিন বেঁচে আছি। এসব বিষয়ে কথা বলতে আমার আর ভালো লাগছে না। চুপ করে ড্রাইভ কর। আমার মাথা এমনি ঠিক নেই।”
“আবার কী হলো?”
স্বচ্ছ হাত মুঠো করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“কী হয়নি সেটা বল! জানিস আজ মোহ শৌভিকের সাথে দেখা করতে গেছে?”
সৌমিত্র একবার ভাইয়ের দিকে উৎসুক হয়ে তাকাল। একটু নীরব থেকে বলল,
“ওই শৌভিক?”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ ওই শৌভিক। আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না ওখানে ওর কাজ কী!”
“থাকতে পারে হয়ত কোনো কাজ।”
স্বচ্ছ তেতে উঠে বলল,
“কী কাজ? ওর যাওয়ার কী দরকার! এর আগেও দেখেছিলাম একবার ওকে শৌভিকের সাথে। এই ছেলেটা নাকি মেয়েদের সাথে দরকার ব্যতীত কথা বলে না। এই তার নমুনা?”
সৌমিত্রের হাসি পায়। হাসি চেপে প্রশ্ন করে,
“জেলাসি?”
স্বচ্ছ চোখ গরম করে ছোটো ভাইয়ের দিকে চেয়ে জোর গলায় বলে ফেলে,
“কীসের জেলাসি রে? জানিস, ওই মেয়েটা আমার থেকে শৌভিকের সাথে দেখা করার বিষয়টাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। ওর জন্য জেলাস হবো? অসম্ভব!”
সৌমিত্র কোনোরকমে একহাত মুখে চেপে ধরে বলে,
“ওকে, ওকে।”
স্বচ্ছ এবার নীরব হওয়ার চেষ্টা করে। পারে না। ভেতরে ভেতরে যেন জ্বলে উঠছে একটু পরপরই। পরক্ষণেই সে চিল্লিয়ে বলল,
“সত্যি যদি মোহের সাথে ওর কিছু একটা থাকে তবে ওর মুখ ভে/ঙে দেব আমি।”
#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩৯
শৌভিকের বাড়ি থেকে তড়িঘড়ি করে বের হলো মোহ। রাস্তার এপাশ-ওপাশ তাকিয়ে দেখতে থাকল কোনো ফাঁকা অটো পাওয়া যায় কিনা। বাড়ি থেকে কল এসেছে। আজহার সাহেব, মিসেস সুফিয়া এবং ইথান ফিরে এসেছে। এখনি বাড়ি ফিরতে হবে। তবে এই সময়টা সকলের জন্য ব্যস্ততার। ফলে ফাঁকা অটো পাওয়া মুশকিল বটে। রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে ভাবুক হয়ে পড়ল মোহ। মস্তিষ্ক জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে স্বচ্ছের কথা। তার জানা নেই মোহের এবং শৌভিকের নেওয়া পদক্ষেপের পর স্বচ্ছের প্রতিক্রিয়া কী হবে! যত কিছুই হয়ে যাক সবশেষে সরোয়ার সাহের তারই বাবা৷ স্বচ্ছ কি কষ্ট পাবে? স্বচ্ছের খারাপ লাগার কথা ভেবেই শৌভিকের কাছে আসার কারণ জানায় নি মোহ। নাহলে সে স্বচ্ছের সাথেই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে পারত। কিন্তু স্বচ্ছের বিন্দুমাত্র খারাপ লাগার কারণ মোহ হতে চায় না। তার ভাবনায় বাঁধা পড়ল গাড়ির ব্রেক কষার শব্দে। মোহ উপলব্ধি করল তার একেবারে সামনে দাঁড়িয়েছে গাড়ি। মোহ মাথা উঠিয়ে তাকাল। জানালার গ্লাস খুলতেই দেখল একটি যুবক। প্রাণোচ্ছল চেহারা। গাঢ় নীল শার্টের সাথে সানগ্লাস ঝোলানো। চেহারায় স্বচ্ছের সঙ্গে অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মোহ মনোযোগ দিয়েও চিন্তা করে এই যুবকটিকে চিনতে না পারলে যুবকটি হাসি দিয়ে বলে,
“আপনার সাথে আমার দেখা শুধু একবারই হয়েছিল। তাও আবার আমার ভাইকে প্রথমদিন যখন চ/ড় মে/রেছিলেন। সেদিন বুঝিনি সেই থা/প্পড় এক ঝটকায় আপনাকে আমার ভাবী বানিয়ে দেবে। তাহলে আগের থেকেই খাতিরদারি করতাম।”
শেষ কথাগুলো শুনে মোহের কপাল কুঁচকে গেল। নজর হলো তীক্ষ্ণ। গমগমে সুরে জিজ্ঞেস করল,
“কিছু বললেন? শেষে কী বললেন বুঝলাম না!”
” না, না কিছু না। আমি আহিয়ান স্বচ্ছের সরল সিকা ছোটো ভাই সৌমিত্র।”
মোহ ছোটো করে উত্তর করল,
“ওহ। আমায় কিছু বলতে চান? মানে আমার সামনে এসে গাড়ি ব্রেক করলেন যে!”
সৌমিত্র গলা খাঁকারি দিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
“দরকার তো ছিল। আচ্ছা, আপনি নিশ্চয় কোথাও যাওয়ার জন্য গাড়ির অপেক্ষা করছেন? আমি পৌঁছে দিই?”
মোহ সরাসরি মানা করে দিলো,
“তার কোনো দরকার নেই। আমি অচেনা মানুষের সঙ্গে যাই না।”
“আমি তো পরিচয় দিলাম নিজের। তবুও অচেনা হয়ে গেলাম? এটা কোনো কথা বললেন আপনি?”
“হ্যাঁ এটাই কথা। আপনার কি কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার আছে? আচ্ছা, আপনি কি নিজে থেকে এদিকে এসেছেন নাকি আপনার ভাই পাঠিয়েছে আপনাকে?”
মোহের কড়া প্রশ্নে সৌমিত্র নিজের জিহ্বাতে কা/মড় দিয়ে বলে,
“ছি, ছি। না একদম না। ভাইয়া আমাকে পাঠায় নি। কসম করে বলছি।”
মোহ কিছুটা সময় নীরব থেকে গম্ভীর গলায় বলল,
“আচ্ছা তাহলে আপনি আপনার রাস্তায় যান। আমি আমার রাস্তায়।”
মোহ এবার সৌমিত্রের উত্তরের আশা না করে হাঁটা দিলো সোজা। তৎক্ষনাৎ সৌমিত্র তড়িঘড়ি করে নিজের সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“এবার বুঝেছি! কী কারণে আমার ভাই এনার প্রতি আসক্ত হলো। দুজনের মাঝেই ঘাড়ত্যাড়ামির রোগ আছে কিনা!”
সৌমিত্র এবার মাথা জানালা দিয়ে বের করে চিল্লিয়ে মোহকে ডাক দিলো,
“ও ভাবী! সরি! ও হবু ভাবী একটু শুনে যান। সত্যি গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল।”
বারংবার ভাবী ডাক শুনে ঘাড় ফিরিয়ে চোখ রাঙিয়ে তাকাল মোহ। পিছু ফিরে এসে কঠিন সুরে সৌমিত্রের উদ্দেশ্যে বলল,
“কী বলে ডাকলেন আপনি আমাকে?”
সৌমিত্র থতমত খেয়ে আকস্মিক হেসে বলল,
“আপনাকে ডাকিনি তো। আমি বলেছি ভারী! আপনি ভাবী শুনতে পেয়েছেন তাই না? আমি তো বলেছি আজকের আকাশটা ভারী হয়ে আছে। যখন তখন বৃষ্টি আসবে। আপনি ভিজে গেলে আমার খারাপ লাগবে। আমাকে ভাই ভেবে তার গাড়িতে লিফট নিলে ক্ষতি কী?”
সৌমিত্র শেষ কথাটা বেশ নমনীয় ভাবে। যেন মোহ কথাটা ফেলতে না পারে। তবে মোহ এবার উত্তর দিলো না। চুপ করে রইল এবং সৌমিত্রের পানে সরু দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। সৌমিত্র ফের অনুরোধ করল,
“আপনার সাথে সত্যি জরুরি কথা ছিল। তাও স্বচ্ছের ভাইয়ের ব্যাপারেই।”
মোহ আগের মতোই নিশ্চুপ রইল। স্বচ্ছের বিষয় ওঠায় এখন মন টানছে তার। দোটানায় পড়ে গিয়ে বলল,
“গাড়ির দরজা খুলুন।”
সৌমিত্র খুশিতে লাফিয়ে উঠে দরজা খুলে দিলো। মোহ উঠে বসল। সৌমিত্র গাড়ি স্টার্ট দিলো। মোড় নিলো মোহের বাড়ির রাস্তায়। মোহ সোজাসাপটা জিজ্ঞেস করে বসল,
“কী বলতে চান বলুন।”
“আমার আপনার কাছে একটা আবদার আছে। ভাইয়ার ব্যাপারেই। যদি পূরণ করে দিতেন!”
মোহের ভ্রু দুটো আপনাআপনি কুঁচকে যায়। কী এমন আবদার? যার কারণে এত হুটোপুটি? মোহ বেশ উৎসুক হয়ে বলল,
“কী আবদার?”
“ভাইকে বাড়ি যাওয়ার জন্য রাজি করাতে হবে। আমার মনে হলো এটা শুধু আপনি পারবেন।”
মোহের উদ্ভট লাগল সৌমিত্রের কথা। বুঝে উঠতে পারল না কিছুই। আগ্রহের সহিত জানতে চায়,
“মানে? বাড়ি যাওয়ার জন্য রাজি করানোর ব্যাপারটার মানে কী?”
“ওহ তাহলে আপনাকে এখনো ভাই বলেনি। আসলে সে গত রাতে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসে। বাবার সাথে ভীষণ কথা কাটাকাটি হয় তার! সেটা ধরেই সে শূন্য হাতে বেরিয়ে পড়ে। টাকাপয়সা, গাড়ি কিছু নেয়নি। গরমে, মশার কামড়ে আমাদের ক্লাবে রাত কাটাচ্ছে। আমি অনেকবার চেষ্টা করে বোঝাতে কিন্তু মহাশয় রাজি নয়। আর বাবা ও তার মাঝে তর্কের বিষয়বস্তু ছিলেন আপনি।”
বিস্ময়ে চক্ষু দুটো যেন কপালে উঠে গেল মোহের। মুখশ্রী ভরা কৌতূহল! অস্ফুটস্বরে বলল,
“আমি?”
“হুমম। ভাই জানে আপনার সাথে বাবা কী কী ভুল করেছে। সেটা নিয়েই কথা কাটাকাটি হয়। আর বাবা তো অন্যরকম একটা মানুষ। নিজের ভুল কখনো স্বীকার করতে রাজি হন না। কিন্তু আমার নাছোড়বান্দা ভাই! সে বলেছে নিজের ভুল স্বীকার করতে হবে নয়ত বাড়ি ছাড়বে আর সে তাই করেছে। তার কাছে বেশি টাকাও নেই এটা সিওর। গতরাত থেকে কিছু খায়নি হয়ত। এভাবে কী করে চলবে বুঝতে পারছিলাম না। তাই আপনাকে বলা উচিত মনে হলো।”
মোহ এবার একটু একটু করে বোধ করে অটোতে স্বচ্ছের মাঝে মাঝে পেট চেপে ধরার ব্যাপারটা, দামী গাড়ির বদলে অটোতে যাওয়ার ব্যাপারটা, গতদিন ধরে এক কাপড়ে থাকার ব্যাপারটা। সব কিছু ধরে ফেলে সে। অদৃশ্য অনুতাপ ঘিরে ফেলল তাকে। তারই কারণে একটা মানুষ এত কষ্ট সয়ে রয়েছে ভাবতেই মনে উচাটন শুরু হলো। দরদর করে ঘামতে শুরু করল সেখানেই। সে তো এসব কষ্ট দেবে না বলেই নিজে যা করার করছে! তবুও কেন ঘটল এমন অঘটন! বুক ভার লাগে মোহের এসব চিন্তায়। গভীর ভাবনার অন্ত ঘটে সৌমিত্রের কথায়।
“আপনার না হওয়া ভাই মনে প্লিজ আমার জেদি, রুক্ষ, মেজাজি ভাইটাকে বোঝান। নয়ত কয়দিন পর তার আর পাটকাঠির মাঝে কোনো পার্থক্য থাকবে না। এটা কি চান বলুন?”
মোহ আগের ন্যায় নীরবতা পালন করল। অনেকটা ভেবে বলল,
“আপনি উনার ছোটো ভাই! আপনার কথা উনি শুনল না। আমার কথা উনি কেন শুনবেন তবে?”
সৌমিত্র এবার ফট করে হেসে লাগামহীনের মতো মুখ ফসকে বলে ফেলে,
“আরে ভাইয়ের কথায় কে ওঠে-বসে? বউয়ের কথায় তো মানুষ ওঠে-বসে!”
কথাটা শেষ হতেই নিজেই তব্দা মে/রে রইল সৌমিত্র। চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে রইল সামনের দিকে। মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করল ড্রাইভিং-এ। তবে আঁড়চোখে না তাকিয়ে পারল না মোহের পানে। মোহ একপ্রকার ভ্যাবাচেকা খেয়ে মূর্তির ন্যায় বসে আছে। কান গরম হয়ে গিয়েছে তার সৌমিত্রের লাগামছাড়া কথা শুনে। মনে মনে সে বলে ফেলল, ‘দুই ভাই-ই চরম অসভ্য!’
অনেকক্ষণ সময় নিয়ে নিজেকে সামলে তুলে মোহ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“আপনার দুই ভাইয়েরই উচিত পাবনা থেকে একবার ঘুরে আসা।”
সৌমিত্র ফের বেশরমের ন্যায় দাঁত কেলিয়ে বলল,
“তার জন্য একটা অভিভাবক দরকার! আপনি না হয় আমাদের অভিভাবক হয়ে যাবেন।”
মোহ এবার বিষম খেল যেন। এবার যেন সে গাড়ি থেকে কোনোমতে নামতে পারলেই বাঁচে!
দুপুরবেলা বোতলে মুখ লাগিয়ে পানি খেয়ে পেট ভরাচ্ছে স্বচ্ছ। হাতের কাছে না আছে তেমন টাকা আর না আছে খাবার। পানির ঢক গিলতে গিলতে অন্যমনস্ক হয়ে চিন্তা করছে মোহের বিষয়ে। শৌভিকের বাড়ি যাওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে এখনো যেন গবেষণা শেষ করতে পারছে না সে। তার সকল মনোযোগ কেঁড়ে নিয়েছে এই নারী। শব্দ করে বোতল রেখে নিজের শার্ট খুলতে লাগল সে। সৌমিত্র কিছু টিশার্ট দিয়ে গেছে জোর করে তাকে। এখন শার্ট পরিবর্তন করতেই হবে। একটা একটা করে বোতাম খুলতে খুলতে সে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“আমার চিন্তাভাবনার শক্তি সব শুষে নিলে আমি এখন চলব কী করে মিস মোহময়ী! এমন চলতে লাগলে আমি সত্যি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ব।”
মেইন গেটে ঠকঠক আওয়াজ হলো। স্বচ্ছ ভাবল হয়ত তার বন্ধুরা এসেছে। টিশার্ট পরিধান করে স্বচ্ছ এগিয়ে গেল। দরজা খুলতেই ফারাহকে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। তৎক্ষনাৎ ফারাহ নিজের চুল হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিয়ে ভাব নিয়ে বলল,
“ওয়েলকাম মি! এখনকার বেস্ট ডিজাইনারকে ওয়েলকাম জানাও ব্রো! ফাস্ট, ফাস্ট।”
স্বচ্ছ মোটেও ফারাহর কর্মকাণ্ড কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। কারণ সে এসবে অভ্যস্ত। তবে এই মেয়েকে এমন আত্মবিশ্বাসী দেখতে স্বচ্ছের বেশ ভালো লাগে। ফারাহ স্বচ্ছের সাড়া না পেয়ে স্বচ্ছকে হাত দিয়ে ঠেলে দিয়ে ভেতরে ঢুকে বলল,
“নূন্যতম ডিসিপ্লিন নেই আহিয়ান স্বচ্ছের মাঝে। ফারাহর মতো একটা ডিজাইনার এসেছে তার কাছে সেধে। অথচ সে সামান্য ওয়েলকাম জানাতে পারছে না। নো প্রবলেম! ফারাহ এসবের তোয়াক্কা করে না।”
স্বচ্ছ এসবের কোনো উত্তর না দিয়ে ফারাহর পিছু পিছু এসে বলল,
“কেন এসেছ তুমি আবার? সৌমিত্র কি কম ছিল বোঝানোর জন্য? সে তুমিও এসেছ?”
ফারাহ চোখমুখ জড়িয়ে চেয়ারে পায়ে পা তুলে বসে বলল,
“আমি কেন তোমাকে বোঝাতে আসব? তোমাকে বোঝানো আর একটা গাছকে হাঁটার কথা বলা একই। কোনোটাই কাজ করবে না।”
“তাহলে কেন আসা হয়েছে?”
ফারাহ এবার সামনে থাকা লম্বা টেবিলে তার অন্যহাতের ব্যাগটা রেখে ব্যাগটা থেকে খাবার বের করতে করতে বলল,
“তুমি তো জানোই আমি অন্তত দয়ালু মনের মানুষ। একটি কোমল মনের নারী। তাই আমার মনে হলো বাড়ি ত্যাগ করা ভাইটার জন্য দয়ামায়া করে তার পছন্দের রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে আসা উচিত!”
স্বচ্ছের মুখ ভার হলো। খিদে পেলেও প্রকাশ করল না। বলল,
“আমি তোমাকে বলেছি এসব আনতে? কেন আমায় না বলে এসব আনতে গিয়েছ?”
ফারাহ চুপ করে রইল এবার৷ ভাইয়ের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল,
“আমিও গত রাত থেকে খাইনি, ভাইয়া।”
চলবে…
[