#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#সিজন_টু
#পর্ব_৪০ (অন্তিম পর্ব)
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
(১ম অংশ)
নতুন বউ দেখার আগ্রহ মানুষের বরাবর-ই বেশি থাকে। বাচ্চা-কাচ্চা থেকে শুরু করে কিশোরী কিংবা বয়স্ক যাদের কথাই বলি না কেন; কেউই এই আগ্রহের বাইরে নয়। এরই জের ধরে চেনা-অচেনা, দুঃসম্পর্কের, কাছের-দূরের আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই একটু পরপরই এসে বাড়িতে হানা দেয়। অর্ষার বেশিরভাগ সময়টা এইসব নতুন নতুন মানুষদের মাঝেই কাটে। তার আশেপাশে সর্বদা পুঁচকে বাচ্চাদের আনাগোনা রয়েছেই। এছাড়াও বন্ধুমহলের সঙ্গের কথা নতুন করে তো উল্লেখ করার কিছু নেই। সবার কাছে সবটা ভালো লাগলেও, এই সব ভালো সহ্য হচ্ছিল না আহনাফের। তার বারংবার মনে হচ্ছিল অর্ষার সাথে বিয়ে হওয়ার পর দূরত্ব কমার বদলে বাড়ছে আরও। সবার জন্যই মেয়েটার সময় হয়। কেবলমাত্র তার জন্যই কোনো সময় নেই। কেন রে মেয়ে, তুই বিয়ে করেছিস আমাকে। আমার জন্যই তোকে এই বাড়িতে আনা হয়েছে। আমায় সময় না দিয়ে দিচ্ছিস অন্যদের! এ তো ঘরতোর অন্যায় জানিস না? মনে মনে রাগের পাহাড় তৈরি করলেও সে না পারছিল অর্ষার সামনে প্রকাশ করতে, আর না পারছিল বাকিদের সামনে। উপরন্তু কারও সঙ্গে দেখা হলেই জোরপূর্বক হেসে জিজ্ঞেস করতে হচ্ছে,’ভালো আছেন?’ তার এই অতিরিক্ত স্বাভাবিক এবং ভালো মানুষ সেজে থাকার নাটকে সে নিজেই এখন অতিষ্ঠ এবং বিরক্ত। রুমের ভেতর হোক কিংবা ড্রয়িংরুম; কোথাও এখন আর তার কদর নেই। অর্ষা তো পাত্তা দিচ্ছেই না। এমনকি বাকিরাও নয়। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, তার যেই মা সারাক্ষণ ছেলে বলতে অজ্ঞান ছিল সেও এখন অর্ষাতে মজে আছে। ছেলের সঙ্গে দেখা হলেই একগাল হাসি উপহার দিয়ে বলছে,’তোকে ধন্যবাদ, এত সুন্দর পুতুল বউ এনেছিস!’ আহনাফের হাসি পায়, ভালো লাগে আবার বউকে কাছে না পাওয়ার জন্য আফসোসও হয়। মানুষ তো পড়ে দোটানায়। কিন্তু সে পড়েছে তিনটানায়। পাত্তাহীনতায় সে স্থান নিয়েছে বাড়ির ছাদে। একা একাই হাঁটছিল। এরমাঝে সঙ্গ দিতে সেখানে চলে আসে হাসিব। আহনাফের পিঠ চাপড়ে দিয়ে ছাদের রেলিঙে চড়ে বসে। আহনাফ বিরক্তিকর দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে আবারও নিশ্চুপ হয়ে হাঁটাহাঁটিতে মনোনিবেশ করে। হাসিব বোধ হয় বিষয়টা লক্ষ্য করেই বলল,
“তোর পায়ে কী হয়েছে?”
আহনাফ নিরুত্তর। হাসিব ফের জানতে চাইল,
“কিরে? কী হয়েছে তোর পায়ে?”
“কী হবে?”
হাঁটা না থামিয়েই পালটা প্রশ্ন করল আহনাফ। হাসিব বলল,
“পায়ে জং ধরেছে? হেঁটে, হেঁটে জং ছুটাচ্ছিস?”
“রাগ কমাচ্ছি।”
“সেকি! নতুন বিয়ে করেছিস। তোর তো এখন সুখের সময়। তুই কেন রাগ করবি?”
“আনন্দে। খুশির ঠ্যালায়। নতুন বিয়ে করেছি তাতে আমার কোন কচুটা হয়েছে? বউ কি আমি কাছে পাচ্ছি দু’দণ্ড কথা বলার জন্য?”
হাসিব শব্দ করে হেসে ফেলে। গা দুলিয়ে হাসতে হাসতে বলে,
“এই তাহলে তোর রাগ করার কারণ?”
“হাসিব,মজা নিস না।”
“মজা নিচ্ছি না বন্ধু। তোর দুঃখে কি আমি মজা নিতে পারি? শোন, তোকে একটা আইডিয়া দেই।”
“কী আইডিয়া?”
“হানিমুনে চলে যা।”
“এখনই? মাত্র বিয়ের চারদিন আজকে।”
“তাতে কী? দু/তিনদিনের ভেতরই যাওয়ার ব্যবস্থা কর। নয়তো বন্ধু,তোমার গোষ্ঠীদের হাত থেকে সহজে বউকে হাতছাড়া করতে পারবে না।”
“কিন্তু অর্ষা! ও কি রাজি হবে?”
“রাজি না হলে রাজি করাবি। তোর বউকে তুই কনভিন্স করবি না তো কি আমি করব শা-লা!”
আহনাফ মাথা চুলকে বলল,
“ঠিক আছে! আজ বলে দেখি।”
রাতের খাওয়া-দাওয়া, গল্প-গুজব শেষ করে অর্ষা সাড়ে এগারোটার দিকে রুমে এলো। তার হাতে খাবারের প্লেট। সবাই খেলেও আহনাফ খায়নি। অজুহাত হিসেবে দেখিয়েছে, তার ক্ষুধা নাই। আহনাফ খায়নি বলে অর্ষারও খেতে ইচ্ছে করেনি। কিন্তু শ্বশুড়-শাশুড়ি, খালা শাশুড়ি, ফুপু শাশুড়ি সবাই এমনভাবে চেপে ধরেছে যে অর্ষার না খেয়েও উপায় ছিল না। সবাই তাকে বেশ আদর-যত্ন করেই খাইয়ে দিয়েছে। আহনাফের জন্য তার মন উশখুশ করছিল। মানুষটা তো খেতে খুব পছন্দ করে। তাহলে হঠাৎ করে ক্ষুধা কেন থাকবে না? সে রুমে আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। অবশেষে সে এখন আসতে পারল।
আহনাফ ফোনে ফেসবুকিং করছিল। চোখ তুলে অর্ষাকে দেখে আবারও ফেসবুক স্ক্রল করতে থাকে। অর্ষা খাবারের প্লেট টেবিলের ওপর রেখে বলল,
“হাত ধুয়ে খেতে আসুন।”
“আমি তো তখন বললাম, আমার ক্ষুধা নেই।”
“মিথ্যে বলেছেন কেন?”
“মিথ্যা বলিনি।”
“অবশ্যই মিথ্যা বলেছেন। আমি এত কথা শুনতে চাই না। আপনি এখনই খেতে আসবেন।”
“আমি খাব না অর্ষা।”
“আপনি খাবেন।”
“শুধু শুধু জেদ কোরো না।”
“আপনি এমন করছেন কেন? আমি কি কোনো ভুল করেছি? তাহলে সেটা আমাকে বলুন। আমার ভুল আমি শুধরে নেব। তবুও না খেয়ে থেকে প্লিজ নিজেকে কষ্ট দেবেন না।”
আহনাফ ফোন রেখে অর্ষার দিকে তাকাল। বিষণ্ণতায় অর্ষার চোখ-মুখের রং বদলে গেছে। চোখ দুটোও ভাসা ভাসা। এরকম করলে সে রাগ করে কীভাবে থাকবে? মেয়েটা কি জানেনা, তার বিষণ্ণ মুখ দেখলে তার কতটা কষ্ট হয়? আহনাফ রাগ ভুলে গিয়ে বলল,
“বেশ! খাব। তবে এখন কষ্ট করে হাত ধুতে পারব না। তুমি যদি খাইয়ে দাও তাহলে খেতে পারি।”
অর্ষার ভীষণ লজ্জা লাগছে। কীভাবে সে খাইয়ে দেবে! আবার এখন যদি না করে দেয়, তাহলে সত্যি সত্যিই রাতে আর খাবে না। তাই লজ্জাকে পরোয়া না করে হাত ধুয়ে এসে প্লেট হাতে নিয়ে বলল,
“আপনি ফোন চাপেন। আমি খাইয়ে দিচ্ছি। আমার দিকে তাকাবেন না।”
আহনাফ অবাক হয়ে শুধাল,
“কেন?”
অর্ষা চোখ নামিয়ে বলল,
“আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে। আপনি তাকালে আরও লজ্জা পাব।”
আহনাফ হেসে ফেলে অর্ষার সরলতায়। বিছানা থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে বলল,
“ঠিক আছে। খাওয়ার সময় লজ্জা না হয়, না-ই দিলাম। খাওয়ার পর তো লজ্জা দেওয়ার জন্য সারা রাত পড়ে রয়েছে।”
এ কথা শুনে অর্ষার লজ্জার পরিমাণ দ্বিগুণ নয়, তিনগুণ বেড়ে গেছে। আহনাফ ফোনের দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসছে। অর্ষা মাঝে মাঝে ভেবে পায় না, মানুষটা এত অ-স-ভ্য আর বেশরম কেন?
আহনাফকে খাইয়ে দিয়ে মাত্র প্লেট নিয়ে উঠেছে অর্ষা তখনই রুমে হুড়মুড় করে বন্ধু মহল প্রবেশ করে।
মুন ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হ্যাঁ রে অর্ষা,নতুন বিয়ে করেছিস। তোর কি কোনো আক্কেল বুদ্ধি নেই?”
অর্ষা বিস্মিতকণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“আমি কী করেছি?”
“দরজা লক না করিস। এটলিস্ট চাপিয়ে তো রাখতে পারতি। দেখলি না, খোলা পেয়ে আমরা কেমন হুড়মুড় করে পারমিশন না নিয়েই ঢুকে পড়লাম।”
অর্ষা দীর্ঘশ্বাস নিল। বলল,
“আমরা কিছু করছিলাম না। সূতরাং তোরা হুড়মুড় কেন, দৌঁড়ে ঢুকলেও আপত্তি ছিল না। বোস, আমি আসছি।”
অর্ষা এঁটো প্লেট নিয়ে বাইরে গেল। এতদিন বাকিরা এই বাড়িতে থাকলেও মুন দ্বিতীয় দিনই আদিবের সঙ্গে চলে গিয়েছিল। আজ বিকেলে আবার এসেছে। আদিবের আর অফিস ছুটি নেই বলে সে আসতে পারেনি।
মুন বিছানার একপাশে বসে বলল,
“কেমন আছেন দুলাভাই?”
“ভালো আছি বোন। তুমি ভালো আছো?”
“এতদিন ভালো ছিলাম না। আজ আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি।”
.
অর্ষা প্লেট নিয়ে রান্নাঘরে যাওয়ার সময় দেখল আহিল এবং সকাল কিছু নিয়ে তর্ক করছে। রাফি বিচক্ষণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কার পক্ষ নেওয়া উচিত। আগে রান্নাঘরে গিয়ে অর্ষা হাত ধুয়ে এলো। ড্রয়িংরুমে এসে জিজ্ঞেস করল,
“এত রাতে তোরা কী নিয়ে ঝগড়া করছিস? বাকিরা ঘুমাচ্ছে তো!”
সকাল বলল,
“দেখ না আপু, আমি একটু সিরিয়াল দেখতে চাচ্ছি। কিন্তু সে রিমোট দিচ্ছে না। বোরিং খেলা দেখছে।”
আহিল গম্ভীর হয়ে বলল,
“অর্ষা, তোর ঝগড়ুটে বোনকে বলে দে, সিরিয়াল দেখে ঝগড়াঝাঁটি শেখার ইচ্ছে আমার নেই।”
সকাল তেতে উঠল,
“একদম ঝগড়ুটে বলবেন না বলে দিচ্ছি। আপনাকে কে বলেছে সিরিয়াল দেখতে? আপনার দেখার দরকার নাই। আমি একাই দেখব।”
“আমি খেলাই দেখব।”
অর্ষা দুজনকেই মৃদু ধমক দিয়ে বলল,
“থাম তোরা! কাউকেই সিরিয়াল, খেলা দেখতে হবে না। আমি আর রাফি মিলে এখন কার্টুন দেখব।”
এ কথা বলেই এক ছোঁ মেরে আহিলের থেকে রিমোট নিয়ে কার্টুনের চ্যানেল দিল অর্ষা। রাফি খুশি হয়ে অর্ষার কোলে বসে বলল,
“থ্যাঙ্কিউ বড়ো মামি!”
আহিল, সকাল দুজনই মুখ গোমড়া করে বসে রইল। তবে কেউই উঠল না। এদিকে অনেকক্ষণ হয়ে গেছে দেখে অর্ষা এখনও আসছে না। তাই বাধ্য হয়ে সবাই ড্রয়িংরুমে আসে। আসার সময় আহনাফকেও ধরে-বেঁধে আনতে ভোলে না। আড্ডা এখন তারা ড্রয়িংরুমেই দেবে। লামিয়া টিভি বন্ধ করে দিয়ে বলল,
“চলো সবাই, গানের কলি খেলি।”
রেশমি বলল,
“ভালো আইডিয়া।”
প্রথম গান গাইতে বলা হলো আহনাফকে। সে ভাবছে, সুযোগ যখন পেয়েছে তখন হাতছাড়া কেন করবে? হাসিবও কানে কানে বলল,
“এই সুযোগ! এমন একটা গান শুনিয়ে দে যাতে ভাবি তোর মনের কথা বুঝতে পারে।”
আহনাফ বুক ভরে শ্বাস নিল। শুরু থেকে নয়, গানের মাঝখানের কলি গাইল সে,
“হানিমুনে যাব তোকে নিয়ে আমি আর্জেন্টিনা,
তারপর তোর কোলে আসবে
ছোট্ট একটা মিষ্টি সোনা…”
গান শুনে অর্ষার বিষম খাওয়ার উপক্রম। অন্যদিকে বাকিরা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। আহিল হাসতে হাসতে বলে,
“ভাইয়া, তুমিও দেখি দেখি দিনদিন আমাদের মতো লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছ।”
আহনাফ মনে মনে বলে,
“লাগামছাড়া হবো কী রে? আমি তো আগে থেকেই লাগামছাড়া। তোর ভাবি জানে। তোদেরকে তো জাস্ট নমুনা দেখালাম।”
আশিক হেসে আহনাফের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে হেসে বলছে,
“ইউ আর সো ফাস্ট দুলাভাই,সো ফাস্ট!”
“আমাদের কিন্তু তাড়াতাড়ি খালা, মামা হতে আপত্তি নেই দুলাভাই। তো কবে আসবে মিষ্টি সোনা?” বলল জুঁই।
আহনাফ একটু ভাবসাব নিয়ে বলল,
“আগে তোমার বান্ধবী হানিমুনে যাওয়ার জন্য তো রাজি হোক।”
মুন বলল,
“যাবে না মানে? একশোবার যাবে দুলাভাই। ও যাবে, প্রয়োজনে ওর বন্ধু-বান্ধবসহ যাবে।”
আহনাফ পাংশুটে মুখে বলে,
“এটাকে তাহলে হানিমুন না বলে পিকনিক বলো। বেটার হবে।”
রাত বারোটা বাজতে চলল। ওদের হাসাহাসির শব্দ শুনে আহনাফের খালা রুম থেকে বেরিয়ে এলেন। সবগুলোকে ধমকে বললেন,
“একটারও আক্কেল-বুদ্ধি কিচ্ছু নেই। রাত কয়টা বাজে দেখেছিস তোরা? এখনও জেগে জেগে হাহা করছে। যা, যা সব ক’টা এক্ষুণী ঘুমুতে যা।”
ধমক-টমক খেয়ে একেকজন দৌঁড়াদৌঁড়ি করে নিজেদের রুমে চলে যায়। অর্ষা মাথা নত করে রুমে যাওয়ার পর খালা আহনাফের দিকে তাকিয়ে চোখ-মুখ পাকিয়ে বলল,
“বে’ক্ক’ল, বে’কু’ব একটা!”
আহনাফ অসহায়ভাবে তাকায়। সে কি সাধে জেগে জেগে এখানে গল্প করছিল? খালা তো আর জানেনা তার ভাগ্নে বউয়ের বন্ধু-বান্ধব একেকটা বো-ম! তাদের কথা না শুনলেই ফটাস করে জ্ব-লে উঠবে।
খালা ফের ধমক দিয়ে বললেন,
“তাকিয়ে দেখছিস কী? যা ঘরে যা।”
আহনাফ ঘরে গিয়ে দেখল অর্ষা শুয়ে পড়েছে। কিছুটা ঘুম ঘুম ভাবও বোধ হয় দু’চোখে ভর করেছে। আহনাফ আর ডাকল না। অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে সেও ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে তার আগে অর্ষাই ওঠে। ফ্রেশ হয়ে রেণুকে কাজে সাহায্য করে। আজ সে ইলিশ মাছের তরকারি রান্না করছিল। রাফি দৌঁড়ে এলো রান্নাঘরে। বলল,
“বড়ো মামা চা দিতে বলেছে মা।”
এতটুকু বলেই আবার সে দৌঁড়ে চলে গেল। রেণু অর্ষাকে বলল,
“আপনে চা নিয়া যান ভাবি। আমি তরকারি দেখতাছি।”
অর্ষা চা বানিয়ে রুমে গিয়ে দেখল আহনাফ রেডি হচ্ছে।
“কখন উঠেছেন?” জানতে চাইল অর্ষা।
হাতে ঘড়ি পরতে পরতে আহনাফ বলল,
“এইতো একটু আগেই। উঠে গোসল করলাম। এখন রেডি হচ্ছি।”
“কোথাও যাবেন?”
“হ্যাঁ, একটু বাইরে যাব। কিছু লাগবে তোমার?”
“না।”
ঘড়ি পরা শেষে আহনাফ অর্ষার হাত থেকে চায়ের কাপটি নিয়ে ড্রেসিংটেবিলের ওপর রাখল। তারপর অর্ষার হাত টেনে ধরে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। অর্ষার কাঁধের ওপর থুঁতনি রেখে বলল,
“ভালোবাসি।”
মুচকি হাসল অর্ষা। আহনাফ ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরল। অর্ষা ক্ষীণস্বরে বলল,
“দরজা খোলা। কেউ এসে পড়লে কী হবে বলেন তো? ছাড়েন।”
“কেউ আসবে না এখন। অবশ্য তোমার চূড়ান্ত ফা-জি-ল ফ্রেন্ড-সার্কেল আসলে আসতে পারে। তাতেও অবশ্য অসুবিধা নেই। ওরা তো আর বাচ্চা নয়। এর আগেও তো কতবার দেখল!”
“আপনি যেমন। ওরাও তেমন। কেউ কারও থেকে কম নয়। এখন আমাকে ছাড়েন। কোথায় না যাবেন আপনি? যান।”
আহনাফ ছাড়ল না। আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আলতো করে চুমু খেল অর্ষার গালে। সেই সময়েই রুমে প্রবেশ ঘটে রাফির। আহনাফ, অর্ষা দুজনই অপ্রস্তুত হয়ে দু’দিকে ছিটকে সরে যায়। রাফি মুখের ওপর দু’হাত রেখে বিস্মিত নয়নে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বলল,
“মামা মামিকে চুমু খেয়েছে।”
অর্ষা হকচকিয়ে যায়। আহনাফ রাফিকে কাছে এনে ভুলভাল বোঝাতে যাবে এর পূর্বেই রাফি দৌঁড়ে চলে যায়। যেতে যেতে চিৎকার করে বলছে,
“মামা মামিকে চুমু খেয়েছে, মামা মামিকে চুমু খেয়েছে…”
অর্ষা কপালে হাত রেখে বিছানায় বসে পড়েছে। মান-সম্মানের ফালুদা হবে আজ!
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ। ২য় অংশেই সমাপ্তি হবে ইন-শা-আল্লাহ্।]