#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#সিজন_২
#পর্ব_৪
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
দমকা হাওয়ায় শরীরে কাঁপন লাগে। এরকম শীতল আবহাওয়াতে রুমে কাঁথা গায়ে ঘুমানোর থেকে তৃপ্তি কিছু হতে পারে না। অর্ষার হুট করে এমন ইচ্ছেটি মনের ভেতর জাগল। কী অদ্ভুত! এটা কী করে হয়? একদিকে আহিলের এমন করুণ অবস্থা, অন্যদিকে তার ইন্টার্ভিউ দেওয়া হলো না সব মিলিয়েই সে ভীষণ হতাশ। তবে একটি ধ্রুব সত্য হচ্ছে, তার সকল চিন্তার অর্ধভাগেরও বেশি হচ্ছে আহিলকে নিয়ে। ও যেন সুস্থ হয়ে যায় সেই প্রার্থনাই আল্লাহর নিকট বারবার করছে।
পায়ের শব্দ পেয়ে দু’চোখের পাতা খোলে অর্ষা। তার দৃষ্টি ফ্লোরে নিবদ্ধ। একজোড়া পা দেখে সে মুখের দিকে তাকাল এবং বলাই বাহুল্য মুখ দেখে সে যারপরনাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। একটু নড়েচড়ে বসে বলল,
‘আপনি?’
আহনাফ অর্ষার কৌতুহলের সুধা নিবারণ করল না। কোনো রকম আগ্রহও তার মাঝে পরিলক্ষিত হয়নি। সে মৃদুস্বরে আমেনা বেগমকে ডাকছে,
‘মা, মা, মা!’
আমেনা বেগমের কর্ণকুহরে আহনাফের ডাক পৌঁছাচ্ছে কিনা সন্দেহ। সে গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন। এদিকে অর্ষা যেন একের পর এক ধাক্কা খেয়েই চলেছে। সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে আহনাফের দিকে। রাফিকে পড়াতে যে ক’দিন ও বাড়িতে গেছে, একদিনও সে আমেনা বেগমকে দেখেনি। কখনও জানারও প্রয়োজন মনে করেনি ঐ বাড়িতে কে কে আছে। তার চিন্তা-চেতনা জুড়ে থাকত চাকরি। একটা চাকরির প্রয়োজনীয়তা সে খুব ভালো করেই উপলব্ধি করত। টিউশন একসময় করাত নিজের টুকটাক খরচ চালানোর জন্য। ইদানীং চাকরির খোঁজ করতে গিয়ে সেটাও বাদ দিয়েছিল। একটা স্বল্প বিরতির পর রাফিকে দিয়ে টিউশনির পথযাত্রা আবার শুরু হয়েছে; তাও সেটা ছোটো বোনের অনুরোধে।
আমেনা বেগমের ঘুম ভাঙছে না দেখে আহনাফ এবার তার মুখের ওপর কিছুটা ঝুঁকে ডাকল,
‘মা? শুনছ? মা?’
আহনাফের মাথা এখন অর্ষার মুখের খুব কাছাকাছি। তার হৃদস্পন্দন বাড়ছে। কেমন যেন একটা অস্বস্তি তাকে জেঁকে ধরেছে। আহনাফ তার নিকটে এসে বুকের ধুকপুকানি কি শুনতে পাচ্ছে?
আহনাফের মৃদু ঝাঁকানিতে আমেনা বেগম নিভু নিভু দৃষ্টিতে চোখে মেলে তাকালেন। আহনাফের মুখটি দেখেই তিনি মিষ্টি করে হাসলেন। ঘুমন্ত বাচ্চারা যেমন ঘুম থেকে উঠে বাবা-মাকে কাছে দেখলে খুশি হয়, আমেনা বেগমের ক্ষেত্রেও সেরকম ঘটনা লক্ষ্য করল অর্ষা।
‘তুই এসেছিস বাবা!’ বললেন আমেনা বেগম।
আহনাফ তাকে ধরে উঠিয়ে বসাল। বলল,’হ্যাঁ, তুমি এখানে কেন ঘুমিয়ে পড়েছ?’
উত্তরে অর্ষা বলল,’উনি আসলে চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। নিজের ওপর কোনো ভারসাম্য ছিল না। যেকোনো মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে ভেবে আমিই তাকে আমার কোলে মাথা রেখে শুইয়ে দিয়েছিলাম।’
আহনাফ এতক্ষণ বাদে এবার অর্ষার দিকে তাকাল। স্থির দৃষ্টিতে কয়েক সেকেণ্ড তাকিয়ে থেকে বলল,
‘ধন্যবাদ আপনাকে।’
এরপর আমেনা বেগমকে নিয়ে সেই স্থান প্রস্থান করল সে। অর্ষা কতক্ষণ বোকার মতো সেদিকে তাকিয়ে থাকার পর আহিলের কেবিন থেকে ডাক্তার বেরিয়ে আসে। অর্ষা এগিয়ে যায় সেদিকে। ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে,
‘কী অবস্থা এখন ডাক্তার?’
‘খুব ভালো বলা যাচ্ছে না। হাতে আর পায়ে ক্ষ’ত বেশি হয়েছে। এমনিতে হাড় ভাঙেনি তবে প্রচুর র’ক্তক্ষরণ হয়েছে। আমাদের কাছে যা র’ক্ত ছিল তা দেওয়ার ব্যবস্থা আপাতত করা হয়েছে। এখনও আরও দু’ব্যাগ ও পজিটিভ (O+) র’ক্ত লাগবে। সেগুলোর ব্যবস্থা করুন দ্রুত।’
অর্ষা মাথা ঝাঁকাল। জিজ্ঞেস করল,’ওর কি জ্ঞান ফিরেছে?’
ডাক্তার জানালেন,’না।’
অর্ষা আবার আগের জায়গায় বসে পড়েছে। সে এখন র’ক্ত কোথায় পাবে? এখনও তো হাসপাতালের বিল দেওয়াও বাকি আছে। তার কাছে এত টাকাও নেই! যা ছিল তা তো কিছু মেডিসিন কিনতেই শেষ হয়ে গেল। আহিলের বাড়িও চেনে না যে কোনোভাবে যোগাযোগ করবে। কী রকম যেন অসহায় লাগছে এখন তার নিজেকে। সে পা দুটো টান টান করে রেখে চেয়ারের গায়ে পিঠ ঠেকাল। কী করবে না করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। ঐ সময়ে তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টসদের নিয়ে একটা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খোলা হয়েছে। সেখানে কেউ তো আহিলের পরিচিত থাকতেই পারে। সে দ্রুত ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ফেসবুকে ঢুকল। ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে সবাইকে মেনশন করে জিজ্ঞেস করল,
‘তোমাদের মধ্যে কেউ কি আহিলের বাড়ির ঠিকানা জানো? অথবা ওর বাড়ির কাউকে চেনো?’
বেশ কয়েকজন ম্যাসেজ সীন করেছে। কিন্তু কেউই জানে না বলল। হতাশ হয়ে ম্যাসেজের রিপ্লাই দেখছে অর্ষা। ঐ সময়ে আশিক রিপ্লাই করে,
‘হঠাৎ ওর বাড়ির খোঁজ করছ কেন?’
অর্ষা তখন গ্রুপেই বিস্তারিত যতটা সম্ভব ম্যাসেজে বলল। আশিক তখন হাসপাতালের ঠিকানা নিয়ে বলল,
‘তুমি থাকো হাসপাতালে। আমি আসছি।’
কিছুটা হলেও ভরসা পেল অর্ষা। সে চুপচাপ বসে অপেক্ষা করছে। মিনিট পনেরো বাদেই হাসপাতালে লামিয়া আসে। রিসিপশন থেকে সহজেই সে অর্ষাকে পেয়ে যায়। তড়িঘড়ি করে এসে অর্ষাকে জিজ্ঞেস করে,
‘আহিল এখন কেমন আছে?’
হঠাৎ আগমনে অর্ষা কিছুটা থমকাল। আশিকের আসার কথা ছিল। তবে লামিয়াকে সে আশা করেনি। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
‘ডাক্তার বলেছে ভয়ের কিছু নেই।’
‘তুমি যে বললে র’ক্ত লাগবে। রক্তের জোগার হয়েছে?’
অর্ষা মাথা নাড়িয়ে বলল,’না।’
‘আমার র’ক্তের গ্রুপও ও পজিটিভ (O+)। আমি র’ক্ত দেবো।’
অর্ষা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল লামিয়াকে। সেখান থেকে ফেরার পথে আশিকের সাথে দেখা হলো। ওর র’ক্তের গ্রুপও ম্যাচ করে যায়। দুজনের থেকেই দু’ব্যাগ র’ক্ত যোগার হয়ে যায়। হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচল অর্ষা।
কেবিন থেকে একজন নার্স এসে একটা প্রেসক্রিপশন অর্ষাকে ধরিয়ে দিয়ে বলল,’এই ইঞ্জেকশনটা নিয়ে আসুন।’
প্রেসক্রিপশন নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে অর্ষা। তার কাছে তো এখন গাড়ি ভাড়ার টাকাও নেই। সে ইঞ্জেকশন কিনবে কী করে? লামিয়া কিংবা আশিকের কাছে কি চাইবে?
‘অর্ষা?’
ডাক শুনে পেছনে তাকাল অর্ষা। দিদার দাঁড়িয়ে আছে। তার পরনের সাদা শার্টটি বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে। সে প্রথমেই আহিলের খবর নিল। অর্ষা ডাক্তারের বলা কথাগুলোই বলল এবং আশিক ও লামিয়ার আসার কথাও জানিয়েছে। একটু থেমে বলল,
‘তুমি তো একদম ভিজে গেছ। ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো।’
‘আমি তোমার ম্যাসেজ দেখেছি গ্রুপে। তখন আমাদের শো-রুমে ছিলাম। ছাতা তো ছিল না। তাই ওভাবেই বের হয়ে এসেছি। রিকশা খুঁজতে গিয়েই ভিজে গেছি।’
অর্ষা মলিন হাসল। ইন্টার্ভিউ দিতে না পারার জন্য কিঞ্চিৎ যেই আফসোসটা তার মাঝে হয়েছিল তার জন্য এখন সে নিজেকে মনে মনে ভর্ৎসনা জানাচ্ছে। সে তো একা আহিলের জন্য এগিয়ে আসেনি। আশিক, লামিয়া, দিদারও তো এসেছে।
দিদার অর্ষার চিন্তিত মুখটি খেয়াল করে বলল,’তুমি কি কিছু নিয়ে চিন্তা করছ?’
কোনো রকম রাখঢাক না করে সরাসরিই বলল অর্ষা,’আসলে নার্স এই ইঞ্জেকশনটা আনতে বলেছে। কিন্তু আমার কাছে যেই টাকা ছিল সব শেষ।’
দিদার হাত বাড়িয়ে বলো,’দেখি প্রেসক্রিপশনটা আমায় দাও। এখান থেকেই নিতে হবে?’
‘তা কিছু বলেনি।’
‘আচ্ছা তুমি টেনশন করো না। আমি নিয়ে আসছি।’
দিদার চলে যাওয়ার দশ মিনিটের ব্যবধানে জুঁই আর রেশমি আসে। সরাসরি অর্ষার কাছে এসে বসে। সব শুনে দুজনে ভীষণ আফসোস করছে আহিলের জন্য। ডিপার্টমেন্টের সবার মাঝে এই কয়েকজনের মধ্যে যেই সল্প বন্ধুত্বের আভাস ছিল তা পূর্ণমাত্রা নিতে পারেনি এ কথা যেমন সত্য। তেমনই প্রথমদিনের আলাপ এরা কেউই ভুলতে পারেনি। সেই থেকেই হয়তো একে অপরের প্রতি অদৃশ্য একটা টানের রেশ ধরে ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করেই আহিলের দুর্ঘটনার খবর শুনে ছুটে এসেছে সকলে।
লামিয়া আর আশিক র’ক্ত দিয়ে চলে এসেছে। দিদারও ইঞ্জেকশন এনে নার্সকে দিয়ে ওদের কাছে চলে আসে। রেশমি বলে,
‘তোমরা কেউই তো মনে হয় কিছু খাওনি। চলো ক্যান্টিনে যাই।’
লামিয়া, অর্ষা আপত্তি জানাল। জুঁই মৃদু ধমক দিয়ে বলল,’না মানে? তুমি সকাল থেকে হাসপাতালে দৌঁড়াদৌঁড়ির ওপরেই আছ। না খেলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।’
লামিয়া এবং আশিকের দিকে তাকিয়ে বলল,’আর তোমরা এমনিতেই দুর্বল। তোমাদের খাওয়ার দরকার আরও বেশি।’
জোরপূর্বক সবাইকে নিয়ে ক্যান্টিনে গেল রেশমি আর জুঁই। খাওয়ার বিল রেশমিই দিয়েছে। খেতে খেতে সবাই এক্সিডেন্ট নিয়ে অর্ষার থেকে এবার খুঁটিনাটি সব শোনে। সবাই আহিলকে নিয়ে চিন্তান্বিত।
আশিক বলল,’অর্ষা তুমি এবার বাড়িতে যাও। গোসল করে খেয়ে একটু রেস্ট নাও। তোমার এখন একটু রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন।’
বাকিরা সম্মতি জানাল। অর্ষাও ভাবল রেস্ট না নিক, অন্তত কাপড় পালটানো দরকার খুব। চলে আসার মুহূর্তে নার্স জানাল আহিলের জ্ঞান ফিরেছে। তাই অর্ষা চাইল যাওয়ার পূর্বে একবার আহিলের সাথে দেখা করেই যাবে। সে অনুমতি নিয়ে ভেতরে যায়। একটা টুল টেনে আহিলের মাথার পাশে বসে বলে,
‘খুব কষ্ট হচ্ছে?’
ব্যথিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আহিল। জ্ঞান ফেরার নার্স জানিয়েছিল ওর বন্ধুরা সবাই এসেছে। এ কথা শুনে অবাক হয়েছিল আহিল। সে কল্পনাও করেনি যে তার ডিপার্টমেন্টের এই ছেলে-মেয়েগুলো আসবে। সামনে শুধু অর্ষা। তাহলে কি বাকিরাও এসেছে?
অর্ষা নিজে থেকেই বলল,’এক্সিডেন্ট কীভাবে হয়েছে সেসব বিস্তারিত পরে শুনব। তার আগে তোমার বাড়ির ঠিকানাটা দাও। বাসায় এখনও খবর দেওয়া হয়নি।’
আহিল নিরুত্তর। অর্ষা বলল,’কী হলো?’
‘তুমি একাই এসেছ?’ ভাঙা ভাঙা স্বরে জিজ্ঞেস করে আহিল।
অর্ষা মুচকি হেসে বলল,’না। আশিক, দিদার, লামিয়া, রেশমি আর জুঁইও এসেছে। তুমি কত্ত লাকি! আমার তো রীতিমতো তোমায় নিয়ে হিংসা হচ্ছে। সবাই তোমায় কত ভালোবাসে।’
আহিল মলিন হাসল।
‘আচ্ছা শোনো, আমায় এবার উঠতে হবে। তুমি আশিকের কাছে বাড়ির ঠিকানা দিও। ও যোগাযোগ করবে। আমি পরে আবার আসব।’ বলল অর্ষা।
উঠে দাঁড়ি চলে যাওয়ার পূর্বে বলে গেল,’টেক কেয়ার।’
কেবিন থেকে বেরিয়ে বাইরের সবার থেকে বিদায় নিল সে। ওরা এবার আহিলের কাছে যায়। পেছন থেকে দিদার অর্ষাকে ডাকে। ডাক শুনে অর্ষা দাঁড়িয়ে পড়ে। দিদার এগিয়ে এসে মানিব্যাগ থেকে পাঁচশো টাকার একটা নোট বের করে অর্ষার হাতে গুঁজে দিয়ে বলে,
‘তুমি বলেছিলে তোমার কাছে টাকা নেই। এটা দিয়ে গাড়ি ভাড়া দিও।’
‘আরে না, না। লাগবে না।’
‘অবশ্যই লাগবে। এতদূরের পথ নয়তো যাবে কী করে?’
‘একটা ব্যবস্থা আমি করে নেব। টাকাটা…’
‘কাম অন ব্রো! এত ফর্মালিটির কী আছে? আমরা বন্ধু না? আর বন্ধু হয়ে কি বন্ধুর জন্য এতটুকু করার রাইট আমার নেই?’
অর্ষার কী জানি হলো, চোখ ফেটে অশ্রু বের হতে চাচ্ছে তার। সে নিজেকে সামলে নিয়ে স্মিত হাসল। দিদার বলল,
‘সাবধানে যেও। একা যেতে পারবে নাকি পৌঁছে যাব?’
‘পারব। তোমরা আহিলের কাছে থেকো।’
‘থাকব। তুমি চিন্তা ক’রো না। তোমার ফোন নাম্বার দিয়ে যাও আপত্তি না থাকলে।’
‘না, আপত্তি কেন থাকবে।’
এরপর দিদারকে নিজের নাম্বারটি দিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসে অর্ষা। বাইরে তখন ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টি হচ্ছে। হায় আল্লাহ্! এই বৃষ্টির মধ্যে বাড়িতে ফিরবে কী করে। রিকশা তাও যা চোখে পড়ছে একটাও খালি নেই। মুসিবতের ওপর মুসিবত। সে বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। পাশ থেকে একজন বলল,
‘এখানে কেন?’
অর্ষা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল আহনাফকে। বিস্ময় নিয়ে বলল,’যাননি এখনও?’
‘গিয়েছিলাম। বাড়িতে গিয়ে দেখলাম মা প্রেসক্রিপশন রেখে গেছে হাসপাতালে। তাই আবার আসতে হয়েছে।’
অর্ষার মনে হলো সে নতুন এক আহনাফকে আবিষ্কার করছে। আচ্ছা সত্যিই এটা আহনাফ নাকি তার ডুপ্লিকেট কেউ? নতুবা আসল আহনাফ তো কখনও এত কথা বলে না। অন্তত অর্ষার সাথে বলেনি কখনও!
আহনাফের খুব জানতে ইচ্ছে করছিল আহিল এখন কেমন আছে। প্রথম দিকটা এড়িয়ে যেতে চাইলেও এবার আর পারেনি। উপরন্তু বৃষ্টির মাঝে অর্ষাকে বাইরে একা দেখে নিজ থেকেই কথা বলা শ্রেয় মনে করল। এতে হয়তো আহিলের খবরটি নেওয়া যাবে।
‘সেই ছেলেটা কেমন আছে?’ জানতে চাইল আহনাফ।
অর্ষা বলল,’আহিলের কথা বলছেন?’
‘নাম জানিনা। আপনি যাকে র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় নিয়ে এসে ছিলেন।’
‘হ্যাঁ, ওর নাম-ই আহিল। ভার্সিটির ফ্রেন্ড। এখন কিছুটা ভালো। মাত্রই জ্ঞান ফিরেছে। বাকি ফ্রেন্ডসরা ওর কাছে আছে। তাই আমি বাড়িতে যাচ্ছি।’
এরপর একটু ইতস্তত করে বলল,’আপনি তো বাড়ির পথেই যাচ্ছেন। আমায় একটু বাস স্টপেজ অব্দি পৌঁছে দেবেন?’
আহনাফের মুখাবয়ব কঠিন ঠেকল। সে নির্জীব হয়ে বলল,
‘আসুন।’
অর্ষা পেছনে বসতে যাচ্ছিল তখন আহনাফ বলল,’সামনে বসুন।’
অর্ষা সামনেই বসল। গাড়ি ড্রাইভ করছে আহনাফ। প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছিল অর্ষার। সে একটু পরপর হাই তুলছে। মেইন রোডে গিয়ে জ্যামে পড়ল। এদিকে নিজের ঘুমকে কোনোভাবেই অর্ষা আটকে রাখতে পারছে না। এতবার হাই তুলতে তুলতে নিজেই নিজের ওপর বিরক্ত হচ্ছে। কখন এই জ্যামের সমাপ্তি ঘটবে কে জানে। অপেক্ষার প্রহর শেষ হওয়ার পূর্বেই তন্দ্রায় দু’চোখ বন্ধ হয়ে যায়। আহনাফ এতক্ষণ অন্যপাশ মুখ ফিরে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল। জ্যাম ছোটার পর গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার সাথে সাথে অর্ষা আহনাফের ওপর ঢলে পড়ে। দ্রুত বাম হাতে অর্ষার মাথা ধরে ফেলে আহনাফ; নয়তো এখনই স্টিয়ারিং-এ আঘাত লাগত। হলুদ হিজাবের সাথে সাথে কয়েক ফোটা শুকনো র’ক্ত অর্ষার গালেও লেগে রয়েছে। নিরবে দীর্ঘশ্বাস নিল আহনাফ। সযত্নে মাথাটি তুলে ধরে গাড়ির সিটের সাথে হেলিয়ে দিলো।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]