রাত্রির ভালোবাসা

এক্সাম হল থেকে বেরিয়ে এসে মেইনগেটের সিঁড়িতে পা ঝুলিয়ে বসলো অনিন্দিতা। সাদাকালো লম্বা গোল জামাটা টেনে তুললো হাঁটু আর পায়ের মাঝামাঝি। বাঁ পায়ে নুপূরটা চিকমিক করে উঠলো রোদে। ফোন বের করে ডাটা অন করলো। পেছন থেকে হুড়মুড় করে কয়েকজন এসে পাশে বসলো ওর। রুপু, মিশু, চিত্রা, রাবু, শামীম। সবাই একই সাথে ‘ল’ পড়ে।রুপু জিজ্ঞেস এক্সাম হল থেকে বেরিয়ে এসে মেইনগেটের সিঁড়িতে পা ঝুলিয়ে বসলো অনিন্দিতা। সাদাকালো লম্বা গোল জামাটা টেনে তুললো হাঁটু আর পায়ের মাঝামাঝি। বাঁ পায়ে নুপূরটা চিকমিক করে উঠলো রোদে। ফোন বের করে ডাটা অন করলো। পেছন থেকে হুড়মুড় করে কয়েকজন এসে পাশে বসলো ওর। রুপু, মিশু, চিত্রা, রাবু, শামীম। সবাই একই সাথে ‘ল’ পড়ে।রুপু জিজ্ঞেস করলো,
-কি রে অনি! বের হয়ে এলি যে?
-দূর । কিচ্ছু পড়ে আসি নাই। এত ধারা কে পড়ে।
আচমকাই মেসেঞ্জার টুংটাং করে উঠলো। বিরক্ত হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে ডাটা অফ করতে যেয়ে চমকে গেলো অনিন্দতা। বিট মিস হলো পরপর দুটো। মাথা থেকে চশমা নামিয়ে চোখে দিলো। ঠিক। ‘একাদের শহর’ ওকে পাঠিয়েছে টেক্সট। ‘অনি, তোমার সাথে খুব ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে। তোমার আগের তিনটা নম্বরই বন্ধ। তুমি কি এই নম্বরে একটু ফোন দিবা? ‘ অনিন্দিতার হাত কেঁপে গেলো মেসেজ টাইপ করতে যেয়ে। ‘এইটা আমার নম্বর। ফোন দিয়েন।’ তিনটা বছর এই মানুষটার জন্য অপেক্ষা করেছে ও। জানতো না শহর ছেলেটি ওকে ভালোবাসে কি না। শুধু চুপচাপ অপেক্ষা করেছে। অনিন্দিতা বুকের মধ্যে ইউক্যালিপটাসের পাতা ঝরার শব্দ শুনতে পেলো।বুকের অতল থেকে যেন একটা নাম ভেসে এলো ইথারে ‘শহর! শহর!!শহর!!!’
.
এক.
আইসিটি এক্সামে একেবারে সাদা খাতা জমা দিয়ে বের হলো অনিন্দিতা। ‘ প্রিটেস্টে ফেল করলে কিছু হবে না ‘ বলে নিজেকে শান্তনা দিচ্ছিলো। অনিন্দিতা বের হয়ে আসার পর পরই হল একেবারে খালি। মিশু, রুপু,চিত্রা, রাবু, শামীম সবাই এক এক করে বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে এসে দেখলো অনিন্দিতা লতিফ ভবনের সিঁড়িতে গিটার নিয়ে বসেছে। সব জড়ো হলো ওখানেই।শামীম জিজ্ঞেস করলো,
-এক্সাম কেমন দিলি?
-চোপ শালা! প্রিটেস্টে ফেল করলে কিছু হয় না।
হেসে ফেললো সবাই।
রাবু বললো,
-ইয়া নফসি জপে জপে ইন্টারটা যদি পাশ করে যাইতাম রে!
রুপু বললো,
– বিয়ের পাত্রী হিসেবে তোর দাম একটু বাড়বে তাইলে।
রাবু ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছিলো রুপুর ওপর। সবাই থামালো। মিশু বললো,
-অনি, একটা গান ধর তো।
-কোনটা?
-তামাক পাতা চলুক, নাকি?
বলে অন্যদের সমর্থনের আশায় তাকালো। সবাই সায় দিলো।
রুপু আর অনি দারুণ কম্বিনেশন করে গানটাতে। রুপু শুরু করলো,
‘মামা তামাক ধরো, তামাক। ‘
আস্তে আস্তে জমে উঠলো। অনার্সের কিছু আপুরা জুটে গেলো। আচমকা সুর ভঙ্গ হলো। আটটা বাইক নিয়ে ক্যাম্পাসের মধ্যে ঢুকে পড়েছে কিছু ছেলে। লতিফ ভবনের সামনে এসে থামলো। প্রথম বাইক পালসার থেকে নামলো সুদর্শন একটি ছেলে। ফর্সা, লালচে কোকড়া চুল, বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, শার্টের বোতাম খুলে রেখেছে বুকের ওপরের দিকে।ঠোঁটে সিগারেট। ছেলেটিকে দেখলেই বুকে ধাক্কার মতো লাগে। ছেলেদের এত সুন্দর হতে নেই। সোজা অনিন্দিতাদের সামনে এসে একটি মেয়ের সামনে দাঁড়ালো। ছেলেটিকে দেখেই মেয়েটির চেহারা পান্ডুর হয়ে গেছে। মিশু অনিন্দিতার কানে ফিসফিস করে বললো ‘ছেলেটার নাম শহর। এমপির ছেলে। মেয়েটার নাম বিলকিস। মেয়েটাকে নিলো আজকে….’। অনিন্দিতা উঠে দাঁড়িয়েছে মিশুর কথা শেষ হওয়ার আগেই। ওদিকে ছেলেটি মেয়েটির হাত চেপে ধরেছে শক্ত করে। টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। অনিন্দিতাকে থামানোর আগেই ও শহরের সামনে যেয়ে দাঁড়িয়েছে। বরফ শীতল গলায় বললো ‘ হাত ছাড়ুন ‘। শহর প্রথমটায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। তারপর হেসে উঠলো উচ্চশব্দে। অনিন্দিতা টের পেলো বেহেড মাতাল হয়ে আছে ছেলেটি। আর মাতাল মানেই ভয়ংকর। ‘ আচ্ছা! না ছাড়লে? ‘ আচমকা যেন বজ্রপাত হলো। শহরের গালে বাঁ হাতে ঠাঁটিয়ে একটা চড় মেরেছে অনিন্দিতা। তারপর আরো ভয়াবহ কাজ করলো। ওদের কলেজে নতুন ভবনের কাজ চলছিলো।সেখানে ছোট একটা চৌবাচ্চা করা হয়েছে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই শহরকে নিয়ে গেলো সেখানে। মাথা ঠেসে ধরলো ময়লাপানিতে। প্রিন্সিপাল গন্ডোগোলের খবর পেয়ে এগিয়ে আসছিলেন দ্রুত। ব্যাপারটা দেখে থমকে গেলেন। বিড়বিড় করে বললেন ‘আমার চাকরি যাওয়াটা এবার আর কেউ আটকাতে পারবে না। ‘
শহরের নেশা কেটে যেতে মেয়েটির দিকে তাকালো। মেজেন্টা রঙের গোল জামার সাথে খয়েরী ওড়না। বাঁ হাতে বড় ডায়ালের ঘড়ি। ডান হাতে বাঁধা রুমাল। লালচে কালো চুল কোমর ছাড়িয়ে নেমেছে। শহর চিবিয়ে চিবিয়ে বললো ‘তোমাকে দেখে নেবো মেয়ে। ‘
.
দুই.
অনিন্দিতা জানতো বিপদ আসবে। কোনদিক দিয়ে আসবে তা জানতো না। এমপির ছেলেকে মারার গল্পটা শহরে ছড়িয়ে যায় দ্রুতই। অনিন্দিতা নামটা উঠে আসে মুখে মুখে। ও বুঝতে পারছিলো শহরের সাথে একটা শোডাউন ওর হবেই। সেদিন ছিল হেমন্তের পাতাঝরা বিকেল। ইংলিশ রোড থেকে মাত্রই পড়ে বের হলো ওরা। তক্ষুনি বাইকটা একেবারে অনির প্রায় গা ঘেঁষে ব্রেক করলো। জলদগম্ভীর কন্ঠে আদেশ এলো,
-বাইকে ওঠো।
মিশুরা কিছু বলার আগেই অনিন্দিতা বাইকে উঠে বসলো। শহর উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ালো কতক্ষন। তারপর কি মনে করে অনুকূল ঠাকুরের আশ্রমের দিকে গেলো। পিএমসির সামনের মাঠে শহরের বাইকে ভর দিয়ে দাঁড়ালো অনিন্দিতা।শহর ওর সামনে দুহাত ভাঁজ করে বুকের কাছে রেখে উদ্ধত ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে।
-আমাকে মারলা কেন?
-আপনি মেয়েটাকে অসম্মান করলেন কেন?
-আমার বন্ধুর ওকে ভালোলেগেছিলো।
-এক রাতের জন্য মেয়েটিকে অসম্মান না করে আপনার বন্ধু কোনো বারবণিতার কাছে যেতে পারতো।
শহর চুপ করে রইলো। কম মেয়ে ও দেখেনি। প্রত্যেকেই কোনো না কোনো স্বার্থ নিয়ে ওর লাইফে এসেছে। এই মেয়েটাকে কেন জানি শহরের খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। আপন করে পেতে ইচ্ছে করছে। শহর বুঝলো এই মেয়েটা ওকে বদলাতে পারবে। অনিন্দিতা বললো,
-আপনার সাথে দাঁড়ায়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না। আমি হাঁটবো আশ্রমের রাস্তায়।আসলে আসতে পারেন।নইলে টিউবলাইট হয়া দাঁড়ায় থাকেন।
বলেই ও হাঁটা শুরু করলো। শহরও হাঁটছে সাথে। ইউক্যালিপটাস গাছে হলুদ ফুলে ছেঁয়ে আছে। অনি থেমে একটা গাছের নীচ থেকে পাতা কুড়িয়ে নিয়ে বইয়ের ভাঁজে রাখলো। ইউক্যালিপটাসের পাতার গন্ধ অনির ভীষণ প্রিয়। শহর আচমকা আবৃতি করলো,
‘ তবুও এ দুঃসাহস। বসন্তের সঞ্চিত সংগীত
যদি তুমি ভেঙে দাও, ছিঁড়ে দাও জিয়ানো কুসুম
স্রোতগ যাত্রার ছায়া ফেলে দাও।
দুর্বাদল ঘুম যদিই জ্বালিয়ে দাও দীপ্ত লঘু কৈলাসের শীতে
তবুও এ দুঃসাহস।। ‘
.
তিন.
শহর আঠার মত অনিন্দিতার পেছনে লেগে রইলো। অনি খাচ্ছে কি না। পড়ছে কি না।ঘুমুচ্ছে কি না। সব। তবুও অনি ভীষণ নির্লিপ্ত। একদিন মিশু বলেই ফেললো,
-ছেলেটা তোকে ভীষণই ভালোবাসে।
-টু বি অর নট টু বি।
-ফর গডস সেক অনি। কিছু তো বল।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো অনিন্দিতা। নরম, বিষণ্ণ গলায় বললো।
-আমার বাবা মা ডিভোর্সী।আমি একটা ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে। বাবা মা দুজনেরই আলাদা সংসার আছে।সমাজে ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়েদের জায়গা বেশ্যার চেয়েও নীচে। আমাকে কেউ ভালোবাসবে বল মিশু?
অনিন্দিতার ডাগর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে গালে। এত কষ্ট কেনো চাপিয়ে রাখে মেয়েটি? মিশুর কেন জানি মনে হলো মেয়েটি আসলে রক্তে-মাংসের কোনো শাপভ্রষ্টা দেবী।
.
চার.
অনিন্দিতাদের বোর্ড ফাইনাল এক্সাম সামনেই।এখন প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হয় না ও। সারাক্ষন শহর লেগে আছে সাথে।’অনি, তোমাকে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে। ‘ রোজকার মতো সকালে উঠে বায়োলজি বইটা হাতে নিলো ও। বায়োলজিতে তেমন কোনো সমস্যা নেই। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। টেলিফোন নাম্বার শো করছে।
-হ্যালো অনিন্দিতা
-বলছি
-একটু থানায় আসতে হবে আপনাকে
-কেন?
-শহরকে থানায় আনা হয়েছে।
-আমি আসছি
অনিন্দিতা মিশুকে সাথে নিয়ে থানায় গেলো।ওসি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,
-তুমি অনিন্দিতা?
-জ্বি
-শহর তোমার কি হয়?
-কিছুই না
-কিছুই না?
-না
-তুমি কি শহরকে একবার দেখতে চাও?
অনি ঘাড় কাত করলো। একজন সেন্ট্রি অনিন্দিতাকে নিয়ে গেলো। ও একনজর শহরকে দেখে হনহন করে ফিরে এলো।
-ওকে মাদক আইনে ধরা হয়েছে। ইয়াবা খাওয়ার সময়।

-এমপি খবর পাওয়ামাত্র ছেলেকে ছুটিয়ে নেবেন। কিন্তু যতবার ওকে কারো কথা জিজ্ঞেস করা হয়েছে তোমার নাম বলেছে। এখন বলো নেশাগ্রস্থ অবস্থাতেও যে স্পেসিফিক একজনকে মনে রাখে সে কি স্পেশাল কেউ না?
-না। আপনি উনার বাবাকে খবর দিন।
বলেই ফিরে এলো অনিন্দিতা।
.
-অনি বলছো?
-বলছি
বুকের মধ্যে হার্টবিট দ্রুত হওয়ার শব্দ পেলো অনি।
-কই হারাইছিলা তুমি? তুমি জানো আমি তোমাকে খুঁজেছি কি ভীষণ। তোমার সব নম্বর অফ। তোমার কোনো বন্ধুরা তোমার খোঁজ জানে না। তোমার বাবা-মায়ের থেকে তো আগে থেকেই আলাদা থাকতা। তারা জানে না তুমি বেঁচে আছো কি না।

-আমি ঘুমাইতে পারিনাই,খাইতে পারি নাই। আমার এই হাজার দিনে নরক দেখে ফেলেছি। আমি তোমাকে চাই অনি। আর হারাইতে পারবো না।তুমি কই আছো বলো। আমি দেখা করবো।

-আমি করবো না
-কেন?
-ইচ্ছা
-অনি তুমি এইরকম করতে পারো না। আমি শুনেছি তুমি থানায় গেছিলা। বিশ্বাস করো। সেদিন যা ঘটেছিলো সব আমার অগোচরে।
-বিশ্বাস করলাম
-তুমি, তুমি আমাকে বিশ্বাস করছো না অনি। তুমি এইরকমটা করতে পারো না।
-পারি শহর। গত তিনবছরে আমি অসংখ্যবার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত কষ্ট পেয়েছি। কাউকে বলতে পারিনি। আমার প্রচণ্ড কষ্টে কাউকে বলতে পারিনি ‘আমার মাথায় হাতটা রাখো। ‘ কেনো জানো? আমি কিছু না বলার আগেই তুমি বুঝে যেতা আমাকে। ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে আমি। ভালোবাসা কি ভুলে গেছিলাম। তুমি আমাকে আগলে রেখেছো। সেই তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলা নেশা করবা না । তোমাকে যখন থানায় নেশাগ্রস্থ অবস্থায় দেখি, তখন আমার পৃথিবী ভেঙে গেছিলো শহর।
ফোনের ওপাশে শহর চুপচাপ শুনছে। বুঝতে পারছে মেয়েটি ওকে কি প্রচণ্ড ভালোবাসে।কতটা কষ্ট পেয়েছে মেয়েটি।আবার বলতে শুরু করলো অনি।
-আমার এক্সামটা কোনোভাবে শেষ করি আমি। আমি জানতাম প্লাস হবে না আমার।অথচ আমি সেইরকম স্টুডেন্টই ছিলাম। কোনো পাবলিকে আমার চান্স হলো না। আমার আর পাবনা থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না। আমি পাবনাতে পালিয়ে থাকতাম যেনো তুমি আমাকে না পাও। তারপর ঢাকায় চলে আসি। ভর্তি হই ল তে। ছোটোখাটো এক প্রাইভেট ইউনিতে। একটা ছোটো অনলাইন পত্রিকার এডিটর হিসেবে জব নিই। তারপর এইতো চলে যাচ্ছে দিন।
-তুমি ঢাকায়! কোথায়?আমি এক্ষুনি দেখা করবো।
-এখন মাঝরাত শহর। কাল মানিক মিয়া এভিনিউতে চলে এসো পাঁচটায়।
.
মাঝরাতে ফোনের শব্দে বিরক্তই হলো শরিফুল ইসলাম।এত রাতে কোন আহাম্মক ফোন দিলো ভাবতে ভাবতে ফোন হাতে নিলো। অনিন্দিতা। এত রাতে!
-কি রে?তুই এত রাতে?কোনো সমস্যা?
-স্যার। বাইরে যাওয়ার জন্য যে অফারটা ছিলো আমার। সেটা কি এখনো আছে?
-আছে। কিন্তু কালকেই ডেড লাইন। এম্ব্যাসিতে ইন্টার্ভিউ কালকে চারটের মধ্যে দিতে হবে।
-আমি রাজি স্যার।
-আচ্ছা ঘুমা।
-থ্যাংক ইউ স্যার।
.
অনিন্দিতাকে দেখছে শহর। মেয়েটি হেঁটে হেঁটে আসছে। আগের মতই সুন্টনীমুন্টনী আছে এখনো। ধূসর তসরের একটা শাড়ি পরেছে। নিরাভরণ। বাঁ হাতে সোনালী চেইনের ঘড়ি। চুলে বকুল ফুলের মালা জড়িয়ে দেয়া হয়েছে হাত খোপা করে। বিষণ্ণ দেবীর মতো লাগছে ওকে।
-অনি
শহর আচমকা এসে জড়িয়ে ধরলো ওকে।
-ডোন্ট লিভ মি আগেইন প্লিজ। আই কা’ন্ট লিভ উইদাউট ইউ অনি।
.
মস্কো এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করবে বিমানটি। ফ্লাইট এটেনডেন্ট সবাইকে সিট বেল্ট বেঁধে নিতে বললো। অনিন্দিতা চুপচাপ সিট বেল্ট বেঁধে নিলো। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো । অচেনা, অজানা একটা দেশ বলে মনে হচ্ছে না ওর। লেলিন, গোর্কির দেশ রাশিয়া। ওর প্রিয় দুই আইডল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ও। বহুদূরে নিজের প্রিয় সবুজ দেশটাকে ফেলে এসেছে । ফেলে এসেছে ভালোবাসা, হৃদয়ভাঙার মতো ব্যাপারস্যাপার।
আর কোনোদিন দেশে ফেরা হবে না ওর। দ্বিতীয় আর কাউকে ভালোবাসতে চায় না অনিন্দিতা। শহরকেও
আর চায়না। এক জীবন একাকীত্ব নিয়ে ও চলে এসেছে। একা থাকার বীজমন্ত্র জপে। শহরকে যেদিন থানায় দেখেছিলো সেদিনই অনিন্দিতার ছেলেমানুষি হৃদয়টা ভীষণ অভিমানে মরে যাওয়ার আগে বলেছিলো ‘অনিন্দিতা, এভাবে কাউকে চাইতে নেই। এভাবে কাউকে চাইতে হয় না। এতটা ভালো কাউকে বাসতে হয়না অনিন্দিতা।। ‘
.

গল্প- রাত্রির ভালোবাসা
-ইশরাত জাহান অনিন্দিতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here