#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৩
#Saiyara_Hossain_Kayanat
“জানি না কাকে চিঠি লিখছি, তবে একটা অনুরোধ প্লিজ এই পাখি গুলোকে দেখে রাখবেন। বেশি কিছু করতে হবে না শুধু মাঝে মধ্যে সময় করে এসে দেখে যাবেন পাখিগুলো ঠিক আছে কি না। আমি খুবই দুঃখিত আপনাকে এভাবে বিরক্ত করার জন্য।”
আরশি চিরকুট টা পড়ে খানিকটা অবাক হলো। এভাবে অচেনা কাউকে পাখি দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেয় কেউ তা-ও আবার চিরকুট লিখে!! আরশির কাছে এটা নেহাতই একধরনের বাচ্চামি মনে হচ্ছে। আরশিও ভদ্রতা বজায় রাখতে রুমে এসে প্রতিত্তোরে একটা চিরকুট লিখলো-
“আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা বাসায় থাকলে অবশ্যই আপনার পাখিগুলো দেখে রাখবো।”
চিরকুটটা লিখে মুচড়ে গোলাকার করে পাশের বারান্দায় ছুড়ে মারলো। পাখি গুলো এখনো চেচামেচি করছে সেটা দেখে আরশি পাখিগুলোর উদ্দেশ্যে বলল-
“এতো ঝগড়া করিস কেন তোরা!! তোদের নাম লাভ বার্ড তোরা সব সময় ভালোবাসায় ডুবন্ত থাকবি তা না করে সব সময় শুধু ঝগড়াঝাটিই করিস।”
কথা গুলো বলে আরশি নিজের রুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে আসলো কাসফিয়াকে বসে থাকতে দেখে কিছুটা উৎসুক কন্ঠে বললো-
“জানিস কাসফি আমার পাশের বারান্দায় দুটো পাখি আছে।”
কাসফিয়া ফোনে স্কিনে দৃষ্টি রেখেই ভাবলেশহীন ভাবে বললো-
“তো কি হয়েছে!!”
আরশি কাসফিয়ার হাত থেকে থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে বলল-
“পাখিগুলোর মালিক আমার বারান্দায় একটা চিরকুট লিখে দিয়েছিল। আমি যেন পাখিগুলো মাঝে মাঝে দেখে রাখি।”
কাসফিয়া এবার কিছুটা আগ্রহ নিয়ে বললো-
“তারপর তুই কি করলি?”
“আমিও একটা চিরকুট লিখে দিয়েছি পাখিগুলোকে নিয়ে যেন চিন্তা না করে।”
আরশির এমন নির্লিপ্ত উত্তর শুনে কাসফিয়া বিস্ময়ের সাথে বললো-
“পাখিগুলোর মালিক ছেলে নাকি মেয়ে??”
আরশি ছোট্ট করে উত্তর দিল-
“জানি না”
কাসফিয়া কিছুটা সময় চুপ থেকে সন্দেহের দৃষ্টি আরশির দিকে নিক্ষেপ করে বললো-
“তুই কি নব্বই দশকের মতো চিরকুটের প্রেম শুরু করলি না-কি আশু!!”
আরশি বিরক্তি নিয়ে বলল-
“কি সব যা-তা বলছিস!! বাদ দে এসব এখন নাস্তা কর।”
কাসফিয়া আর কথা বাড়ালো না। এই মেয়েটা কখন কি করে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না কাসফিয়া।
———————
সারারাত হসপিটালে নাইট ডিউটি করে দুপুরের দিকে রৌদ্র বাসায় ফিরেছে। ফ্রেশ হয়ে বিকেলের দিকে বারান্দায় আসলো তার শখের পাখিগুলোকে দেখতে। বারান্দার মেঝেতে পরে থাকা একটি মোচড়ানো গোলাকার কাগজ দেখে রৌদ্রর ভ্রু জোড়া কুচকে এলো। বারান্দায় কাগজ আসলো কি করে সেটা ভাবতে ভাবতেই কাগজটা হাতে তুলে দেখতে লাগলো। আরশির দেওয়া চিরকুটটা পরে রৌদ্র বেশ অবাক হলো পরক্ষণেই পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো।
কাল ভুলে পাখিগুলোকে রুমের ভিতরে রেখেই চলে গিয়েছিল রৌদ্র। তাই আজ সকালেই তার কাজিনকে বলেছিল যেন বাসায় এসে পাখিগুলো বারান্দায় রেখে দিয়ে যায়। কিন্তু নির্বান যে পাখি দেখাশোনার জন্য চিঠি লিখে মানুষদের বিরক্ত করবে বুঝতে পারেনি রৌদ্র। কিন্তু কে এই চিঠির মানুষটা?? এখন কি তাকে সব খুলে বলা দরকার?? এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই রৌদ্র কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে একটা চিরকুট লিখে ফেলল। কাঁপা কাঁপা হাতে চিরকুটটা পাশের বারান্দায় ছুড়ে মারলো। জীবন প্রথম সে এভাবে কাউকে চিরকুট লিখে দিচ্ছে। নির্বানের এমন একটা বাচ্চামির জন্য এখন তাকেও এসব করতে হচ্ছে ভাবতেই রাগ লাগছে রৌদ্রর। ফোন দিয়ে কিছুক্ষন নির্বানকে না ধমকালে তার এই রাগ যাবে না।
———————
রাতে বারান্দায় এসে আবারও একটি চিরকুট দেখতে পেল আরশি। কৌতুহল নিয়ে চিরকুটটা তুলে দেখলো-
“আমি আসলে খুবই দুঃখিত আমার কাজিন কিছুটা ছেলেমানুষী করেই আপনাকে চিঠি লিখে বিরক্ত করেছে। আমি বুঝতে পারছি অচেনা মানুষের কাছ থেকে চিঠি পাওয়া খুব অস্বস্তির তবুও বলছি প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।”
আরশি মুচকি হাসলো তবে কেন তার কারন জানা নেই আরশির। বেশ কিছুক্ষন বারান্দায় সময় কাটিয়ে রুমে এসে আবারও চিরকুটের উত্তর হিসেবে একটা চিরকুট লিখলো কিন্তু আজ লিখেছে লাল কাগজে। আগের মতো করেই চিরকুটটা পাশের বারান্দায় ছুড়ে মারলো। তারপর পাখিগুলোর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে রুমে এসে শুয়ে পরলো।
সকালে ঘুম ভাঙেতেই তারাহুরো করে রেডি হয়ে কাসফিয়া সাথে বেড়িয়ে পরলো আরশি। আজ একটা অনুষ্ঠান আছে ভার্সিটিতে একদমই ভুলে গিয়েছিল। কথায় আছে তাড়াহুড়ো সয়তানের কাজ। তাড়াহুড়ো করলে ঝামেলা হবেই এখনো ঠিক সেটাই হলো। তাড়াতাড়ি করে বাস থেকে নামতে গিয়েই পা মচকে গেল। ব্যথায় মৃদুস্বরে আর্তনাদ করে উঠলো আরশি। কাসফিয়া সাথে সাথে আরশির কাছে গিয়ে আঁকড়ে ধরলো। কিছুটা দূরে নিয়ে একটা বেঞ্চিতে বসিয়ে আরশির পা টা দেখে চিন্তিত গলায় বললো-
“পা মচকে গেছে মনে হচ্ছে আশু। তুই এতটা বেখায়ালি কেন!! এখন লেংরা হয়ে বসে থাকবি খুব ভালো হয়েছে।”
আরশি অসহায়ের মতো মুখ করে মিনমিনিয়ে বলল-
“এমনিতেই ব্যথা পেয়েছি, এখন আবার তুইও বোকা দিচ্ছিস এটা কি ঠিক করছিস কাসফি!!”
আরশির কথায় কাসফিয়া খানিকটা রেগে গেল। আরশিকে দাঁড় করিয়ে শক্ত গলায় বললো-
“একদম চুপ থাক। চল এখন হসপিটালে যাবো। ভার্সিটিতে যেতে হবে না আজ।”
আরশি আর কিছু বলার সাহস পেল না। কারন আরশি জানে কাসফিয়া একবার রেগে গেলে তার অবস্থা খুবই খারাপ হবে। তাই চুপচাপ কাসফিয়া সাথে হসপিটালে চলে গেল।
————————
ডক্টরের অপেক্ষায় বেশ কিছুক্ষন ধরে বসে বসে অপেক্ষা করছে কাসফিয়া আর আরশি। হঠাৎ করেই কাসফিয়া কিছুটা চেচিয়ে বলে উঠলো-
“দোস্ত এটা তো ওই চুমু দেওয়া ছেলেটা।”
আরশি চমকে উঠে কাসফিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখলো একটা লোক সাদা এপ্রোন পরে এদিকেই এগিয়ে আসছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি এখানের ডক্টর। আরশি ওইদিনের ঘটনা মনে করেই এখান থেকে পালানোর জন্য অস্থির হয়ে পরলো যেন এই লোকের মুখোমুখি হতে না হয়। লজ্জা আর অস্বস্তিতে দ্রুত বসা থেকে উঠে পেছন ঘুরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো। তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাবে এমন সময় রৌদ্র দৌড়ে এসে আরশিকে আঁকড়ে ধরলো। আরশির ডান হাত রৌদ্রর ডান হাতে আর আরশির বা বাহুতে রৌদ্রর আরেক হাত রেখে আরশিকে ধরে ফেললো।
আরশির হঠাৎ এমন করায় কাসফিয়ার হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর কথা শুনে আরশি আচমকা এভাবে উঠে চলে যাবে সেটা কাসফিয়া বুঝতে পারেনি।
আরশি মনে মনে নিজেকেই গালি দিচ্ছে। কথায় আছে ‘যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।’ আরশির সাথেও সেটাই হলো। যার কাছ থেকে লজ্জায় পালাতে চাচ্ছে আবারও সেই মানুষটার কাছে এসেই ধরা পরলো। আবারও সেই একই লজ্জাজনক পরিস্থিতি। ভাবতেই লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে আরশি।
চলবে….