রৌদ্রর শহরে রুদ্রাণী পর্ব -৬০+৬১

#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৬০
#Saiyara_Hossain_Kayanat

আধঘন্টা ধরে আরশিকে কেবিনের বেডে শুয়িয়ে রাখা হয়েছে। এখনো জ্ঞান ফেরেনি তার। বেডের পাশেই বসে আছে ধ্রুব। চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। সবাইকে যেন বিষন্নতার কালো ছায়া আঁকড়ে ধরেছে। ধ্রুবর বুকের ব্যথাটা বেড়েছে। শ্বাস নিতে খানিকটা কষ্ট হচ্ছে। তবুও নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছে এই পরিস্থিতিতে। ধ্রুবর কাছের মানুষ বলতে শুধু তার মা। বাবাও আছে তবে সারাক্ষণ বিজনেস নিয়েই ব্যস্ত থাকেন উনি। ছোট বেলা থেকেই একাকিত্বের মাঝে বড় হয়েছে ধ্রুব। বাবা-মা দুজনেই নিজেদের পেশায় ব্যস্ত থাকতেন। তাদের এতো বড় বিজনেস থাকা শর্তেও ধ্রুব মা শিক্ষকতার পেশায় যুক্ত হয়েছিলেন শুধুমাত্র শখের বশে। যখন শুনলেন ধ্রুব হৃদরোগে আক্রান্ত তখনই তিনি তার শখের পেশাকে বিসর্জন দিলেন। তারপর থেকে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টাই ধ্রুব আগেপিছে লেগেছিলেন। তবে ধ্রুবর বাবার মধ্যে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি বরাবরের মতোই নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ছেলেকে নিয়ে তেমন চিন্তাও করে না। তিনি মনে মনে ভেবেই নিয়েছেন তার ছেলে সুস্থ হয়ে উঠবেন। এতো টাকার মালিক সে সব তো এই একমাত্র ছেলের জন্যই! তার ছেলেকে দেশের বাহিরে বড় নামি-দামি হসপিটালে চিকিৎসা করাবেন। যত টাকার প্রয়োজন হয় সব খরচ করবেন। তখন নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে যাবে ধ্রুব!
আরশিদের সাথে দেখা হওয়ার পর ধ্রুবর একাকিত্ব ভাব কেটে গেছে। সব সময় আরশিদের সাথে হাসিঠাট্টায় মেতে থাকতো। তাদের সবার সাথে থাকলে যেন ধ্রুবর সকল অসুস্থতা নিমিষেই দূর হয়ে যায়। আরশিকে খুব ভালোবাসে ধ্রুব। সব সময় তার মায়ের সাথে আরশিকে নিয়ে গল্প করে। সব সময় একটা কথাই বলে- ‘মা আমার কোনো বড়বোন থাকলে নিশ্চয়ই আরুদি’র মতো হতো তাই না! জানো তো আরুদি আমাকে অনেক আদর করে, কেয়ার করে আবার মাঝে মাঝে শাসন করে বকাও দেয়। কখনো মনেই হয় না তার সাথে আমার অল্পদিনের পরিচয়।’ বিশ বছর বয়সী ধ্রুবর ছেলেমানুষী কথায় তার মা শুধু হাসে। ছেলেকে তেমন কিছু বলে না। সব সময় একাকীই তো থেকেছে ছেলেটা, এখন না হয় মানুষদের সাথে মিশুক। এই সুন্দর পৃথিবীর কিছু সুন্দর চরিত্র গুলোর সাথে নিজেকে পরিচিত করুক। এতে তেমন কোনো সমস্যা তো নেই। অনিশ্চিত জীবনে এবার না হয় নিজের মতো করেই বাঁচুক।
কেবিনে দরজা খুলে নীল ভেতরে আসলো। আরশির দিকে একঝলক তাকিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে। ধ্রুবর কাধে হাত রেখে স্নেহের গলায় বলল-

“ধ্রুব তুই এখন বাহিরে যা এখানে আমি আছি। সেই কখন থেকেই তো বসে আছিস। এখন যা একটু হাঁটাহাঁটি কর।”

ধ্রুব নীলের তাকালো। তেমন কোনো কথা বলল না। সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। দরজার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতেই নীলের গাম্ভীর্যপুর্ণ ডাক শুনতে পেল। ধ্রুব ঘাড় বাকিয়ে নীলের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকাতেই নীল শাসনের সুরে বলল-

“মনে করে কেন্টিন থেকে কিছু খেয়ে নিস। সকালে তো নাস্তা করিস নি। দিন দিন তোর কি হাল হচ্ছে দেখেছিস!”

ধ্রুব ক্ষীণ গলায় বলল-

“তোমরাও তো খাওনি। তোমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসবো?”

নীল কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে ভেবে বলল-

“আচ্ছা নিয়ে আয়।”

ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে গম্ভীর পায়ে বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে। আদ্রাফ আর নীলা কেবিনের বাহিরের চেয়ারে বসে আছে। রৌদ্রকে দেখা যাচ্ছে না। হয়তো ডক্টরের সাথে কথা বলতে গেছে। আরশির বাবা-মা’কে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা সাথে সাথেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছে। কয়েকঘন্টার মাঝেই হয়তো ঢাকা পৌঁছে যাবে।

————————

আতংকিত মুখে বসে আছে রৌদ্র। আরশির কি হয়েছে জানার জন্য বিচলিত হয়ে উঠেছে তার মন। প্রচন্ডরকম উত্তেজিত হয়েই একগাদা প্রশ্ন ছুড়ে দিল টেবিলের সামনে বসে থাকা ডক্টরের দিকে-

“আরুর কি হয়েছে ডক্টর? হঠাৎ করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে কেন? আরু ঠিক আছে তো! এখনো জ্ঞান ফিরছে না কেন! বাবু ভালো আছে তো! আপনি কিছু বলছেন না কেন ড.শৈলী।”

বিস্ময়ে ড.শৈলীর কপাল কুচকে এলো। তিনি এই হসপিটালে শিফট করেছে প্রায় চার-পাঁচ মাস। এই কয়েকমাসে রৌদ্রকে কখনো এতটা উত্তেজিত হতে দেখেননি। তিনি রৌদ্রর দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলল-

“শান্ত হোন ড.রৌদ্র। একজন ডক্টর হয়েও এতো উত্তেজিত হওয়া আপনাকে মানায় না।”

রৌদ্র নিজেকে সামলিয়ে নেয়। চুপচাপ শান্ত হয়ে বসে রইলো। প্রতিত্তোরে কিছু বলল না। নিজেকে শান্ত করে উদাসীন গলায় বলল-

“আরুর কি হয়েছে! এভাবে হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে কেন!”

ড.শৈলী হাতের কলমটা দু’হাতে নাড়িয়ে চাড়িয়ে শান্ত গলায় বলতে লাগলেন-

“আপনার কাছে যতটুকু শুনেছি আর আপনার ওয়াইফের আগের রিপোর্ট গুলো দেখে বুঝলাম মিসেস আরশির আগে থেকেই গর্ভধারণের ক্ষেত্রে প্রব্লেম ছিল। মানে গর্ভধারণের চান্স খুব ছিলো তাই তো!”

রৌদ্র হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। ড.শৈলী আবারও বলতে লাগলেন-

“মিসেস আরশির আগের ডক্টর নিশ্চয়ই বলেছিলেন ওনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা আছে তবে সেটায় রিস্কও আছে!”

রৌদ্র থমকালো। থমথমে চেহারায় নিয়ে চেয়ে আছে ডক্টরের দিকে। আতংকিত গলায় বলল-

“আরুর কি হয়ে সেটা বলুন।”

“আমাদের ডক্টরদের ভাষায় মিসেস আরশির কেসটা হলো হাই রিস্ক প্রেগ্ন্যাসি। হাই রিস্ক প্রেগ্ন্যাসির কারন বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। কারও কারও প্রেগন্যান্ট হওয়ার পরের প্রব্লেম গুলোর কারনে হয়। আবারও কারও প্রেগন্যান্ট হওয়ার আগের কোনো জটিলতা বা প্রব্লেম থাকার কারনে হয়। মিসেস আরশির আগে থেকেই প্রব্লেম ছিল। আর এখন ওনার শরীরের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে, শরীর খুব দূর্বল হয়ে পরেছে। বাচ্চা আর মা দুজনের লাইফই রিস্কে আছে। সামনে কি হবে বাকিটা আল্লাহ ভরসা।”

রৌদ্র কিছু বলছে না। কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখা যাচ্ছে না তার মধ্যে। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে টেবিলের দিকে। চোখদুটো নামিয়ে রেখেছে। ড.শৈলী রৌদ্রর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে রৌদ্রর ভাবগতিক। কিন্তু রৌদ্রর চেহারা সম্পূর্ণ অনুভূতিহীন লাগছে। ড.শৈলী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করল-

“আপনি ঠিক আছেন তো ড.রৌদ্র!”

রৌদ্র মাথা তুলে তাকালো। প্রতিত্তোরে কিছু না বলে বিনয়ের ভঙ্গিতে পালটা প্রশ্ন করল-

“আরুর জ্ঞান কখন ফিরবে?”

“চিন্তার কিছু নেই কিছুক্ষনের মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে।”

“আচ্ছা আমি তাহলে আসছি!”

রৌদ্র বিনয়ের গলায় কথা গুলো বলেই উঠে দাঁড়ালো। পেছন ফিরে যেতেই ড.শৈলী শালীন কন্ঠে বললেন-

“আপনার মিসেসের খেয়াল রাখবেন। আর ওনাকে এসব বলে অযথা দুঃশ্চিন্তায় ফেলার দরকার নেই। আপনি নিজেও ওনাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না। মানসিকভাবে ওনাকে সাপোর্ট দেওয়া খুব প্রয়োজন। আপনাকেই সাপোর্ট দিতে হবে। আর একটা কথা মাথায় রাখবেন রিস্ক থাকলেই যে সব সময় খারাপ কিছু হবে তা কিন্তু না। আপনি নিজেও একজন ডক্টর৷ আশাকরি আপনি এসব খুব ভালো করেই জানেন।”

রৌদ্র বেশ মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনলো। মাথাটা হাল্কা নাড়িয়ে একটা মলিন হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেল। আরশির কেবিনে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রৌদ্র। তার মাথা পুরো ফাঁকাফাঁকা লাগছে। নিজেকে জ্ঞানশূন্য মানুষ মনে হচ্ছে। না মাথা কাজ করছে, আর না শরীর কাজ করতে চাইছে। পুরো শরীর অসাড় হয়ে আসছে। পা দুটো যেন চলতে চাইছে না। চোখের সামনে শুধু আরশির লাজুক চেহারাটা ভেসে উঠছে বার বার। কিছুটা সামনে আসতেই ধ্রুবকে দেখতে পেল। চেয়ারে বসে আছে। মাথা নিচু করে বড় বড় করে শ্বাস নিচ্ছে। বিস্মিত হয়ে দ্রুত পায়ে ধ্রুব পাশে এসে বসলো। ধ্রুবর কাধে হাত রেখে থমথমে গলায় জিজ্ঞেস করল-

“ধ্রুব তুই ঠিক আছিস তো!”

ধ্রুব বিদ্যুৎগতিতে মাথা তুলে তাকালো। রৌদ্রকে পাশে বসে থাকতে দেখে থতমত খেয়ে গেল। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে আমতা-আমতা করে বলল-

“আমার আবার কি হবে! আমি তো ঠিকই আছি।”

রৌদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব মুখ ফ্যাকাসে বর্ণের হয়ে গেছে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে চেয়েও পারছে না। ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। চোখেমুখে ভয়। রৌদ্র কড়া গলায় বলল-

“বেশি বড় হয়ে গেছিস? নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে করিস! না-কি আমাকে বোকা মনে হয় তোর কাছে?”

ধ্রুব একটা কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলল-

“এসব কি বলছো ভাইয়া? আমি কেন তোমাকে বোকা মনে করবো!”

রৌদ্র আবারও গম্ভীর গলায় বলল-

“সত্যি করে বল তোর কি হয়েছে! তোর সার্জারি ঠিক মতো হয়েছিলো তো! কিছুদিন ধরে তোকে খুব দূর্বল দেখাচ্ছে।”

ধ্রুব চুপসে গেল। মাথা নিচু করে বসে আছে। দৃষ্টি হসপিটালের সাদা টাইলস লাগানো মেঝেতে। রৌদ্র একটা জোড়ালো শ্বাস ফেলে বলল-

“আমি তোর প্রথম ডাক্তার ছিলাম। আমি তোর চিকিৎসা করেছিলাম অনেক দিন। আর আমিই তোকে সাজেস্ট করেছিলাম দেশের বাহিরে চিকিৎসা করানোর জন্য। আমি জানি তোর কেস খুব সেনসেটিভ ছিল। আর এটাও জানতাম যে সার্জারি মাধ্যমে তোর হার্টের প্রব্লেম ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল অনেকটাই। এখন বাকি যতটুকু আমি জানিনা সেটা তুই আমাকে খুলে বল।”

ধ্রুব মাথা তুলে সোজা হয়ে বসলো। বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে শান্ত গলায় বলল-

“সার্জারি সাকসেসফুল হয়নি। আমার হার্ট ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নতুন হার্ট বসানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। আব্বু ওনার টাকার ক্ষমতা দিয়েও হার্টের জোগাড় করতে পারেননি। এখন আর সম্ভব না কোনো কিছুর। আমার লাইফটাইম অনিশ্চিত। কতদিন বাঁচবো জানি না।”

ধ্রুব জড়িয়ে যাওয়া গলায় অগোছালো ভাবে কথা গুলো বলল। রৌদ্র স্তব্ধ হয়ে আছে। কি বলবে সে! কিভাবে সান্ত্বনা দিবে ধ্রুবকে? মনে মনে ভাবছে রৌদ্র। আজকের দিনটা তার জীবনে না আসলেই হয়তো জীবনটা খুব রঙিন হতো। একদম রঙিন চিরকুট গুলোর মতো। প্রিয় মানুষ গুলোর অনিশ্চিত জীবন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না রৌদ্র। মস্তিষ্ক কাজ করা থামিয়ে দিয়েছে। সব কিছু এলোমেলো আর ঝাপসা ঝাপসা লাগছে। কিভাবে সামলাবে সে সব কিছু? কিভাবে আগলে রাখবে এই মানুষ গুলোকে?

“ভাইয়া তুমি চিন্তা করো না। আমি ঠিক আছি। একটা রিকুয়েষ্ট রাখবে আমার?”

ধ্রুব করুণ সুরে শেষের কথাটা বলল। রৌদ্র নিজেকে সামলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে অস্পষ্ট ভাবে ছোট্ট করে বলল-

“কি?”

ধ্রুব চট করে রৌদ্র ডান হাত নিজের দু’হাতের মুঠোয় বন্দী করে নিলো। বাচ্চাদের মতো আকুতিভরা টলটলে চোখে রৌদ্র দিকে তাকালো।

“প্লিজ ভাইয়া এই কথা তুমি আরুদি’কে বলো না। এমনিতেই আরুদি খুব ইমোশনাল। আমার কথা শুনলে অল্পতেই ভেঙে পরবে। আমি আরুদি’কে কষ্ট দিতে পারবো না। প্লিজ আমার কথাটা তুমি রেখো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। তবে তুই ভয় পাস না। আমি আরও বড় বড় সার্জানদের সাথে কথা বলবো। তোর কিছু হবে না দেখিস। তুই একদম ঠিক হয়ে যাবি।”

“তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি ঠিক হবো কি-না! শুধু শুধু কেন নিজের মনে মিথ্যে আশার আলো জ্বালাচ্ছো?”

ধ্রুবর গম্ভীর গলায় রৌদ্র মিইয়ে যায়। কিছু বলল না। ধ্রুব তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল-

“চল এখন আরুদি’র কাছে যাই।”

ধ্রুব চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। রৌদ্র চুপচাপ কাঠের পুতুলের মতো ধ্রুব সাথে হেঁটে যাচ্ছে। আরশির কেবিনের কাছে আসতেই নীলা দ্রুত রৌদ্রর কাছে এসে জিজ্ঞেস করতে লাগলো ডক্টর কি বলেছে। নির্বানও এসে পরেছে হসপিটালে। সবাই একসাথে ঘিরে ধরেছে রৌদ্রকে।

“ডক্টর বলেছে তুলতুল আর আরু দুজনের লাইফ রিস্কে আছে। কথা গুলো যেন আরুর কান অব্দি না পৌঁছায় মাথায় রেখো সবাই।”

রৌদ্র গম্ভীরমুখে কথা গুলো বলেই দরজা ঢেলে ভিতরে চলে যায়। নীলা, আদ্রাফ, নির্বান আর ধ্রুব সবাই আগের জায়গাতেই স্থির দাঁড়িয়ে আছে। রৌদ্রকে দেখেই নীল উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল-

“ডক্টর কি বলেছে ভাইয়া! আরু ঠিক আছে তো?”

রৌদ্র আরশির দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে ক্ষীণ গলায় বলল-

“বাহিরে যাও নীল। আদ্রাফদের কাছ থেকে সব জেনে নিও। আমি এখন আরুর কাছে একা থাকতে চাই।”

রৌদ্রর থমথমে চেহারা দেখে নীল আর পালটা প্রশ্ন করার সাহস পেলো না। চুপচাপ রুমের বাহিরে চলে যায়। রৌদ্র চেয়ারটা টেনে আরশির বেডের একদম কাছে এনে বসে পরলো। রৌদ্র অপলকভাবে তাকিয়ে আছে তার রুদ্রাণীর দিকে। রৌদ্র কি তাহলে ভুল করলো! তার রুদ্রাণীর মা হওয়ার ইচ্ছে-পূরণ করতেই তো কতো চেষ্টা করেছে এতদিন। এখন কি এই ইচ্ছে পূরণের বিনিময়ে সে তার রুদ্রাণীকেই হারিয়ে ফেলবে? কি বলবে সে তার রুদ্রাণীকে? আর ধ্রুব! তাকেই বা কিভাবে বাঁচাবে! আরু ধ্রুবর কথা জানলেই বা কী করবে?
#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৬১
#Saiyara_Hossain_Kayanat

ছেলেদের না-কি কান্না করতে নেই! কেন এই নিয়ম তৈরি করেছে সমাজ রৌদ্র তা জানে না। কিন্তু কেন যেন এই মুহূর্তে রৌদ্রর ইচ্ছে করছে সমাজের তৈরি এই নিয়ম ভেঙে চুরমার করে দিতে। হ্যাঁ তাই হলো। ভেঙে দিলো সমাজের নিয়ম। ছেলেরাও কাঁদে। ছেলেরাও ভেঙে পড়ে। তারাও একটা সময় পরিস্থিতির কাছে অসহায় হয়ে পরে। কাছের মানুষগুলোকে হারানো ভয়ে বুকের ভেতর অসহ্য ব্যথা হচ্ছে। চোখে থেকে গড়িয়ে পরলো কয়েক ফোটা তপ্ত অশ্রুজল। এই কান্নার কোনো শব্দ নেই। নিশ্চুপ কান্না। রৌদ্র তার কাঁপা কাঁপা হাতে আরশির ডান হাতটা চেপে ধরলো। তার কম্পিত ওষ্ঠদ্বয় আরশির হাতে আলতো ছুঁয়ে দিল। হাতের উপর মাথা ঠেকিয়ে নিঃশব্দে চোখেরজল ফেলছে। সবার সামনে নিজেকে শক্ত রাখতে পারলেও এখন পারছে না। কোনো মতেই নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারছে না সে। একটু পর পর রৌদ্র বড় বড় শ্বাস নিয়ে কিছুটা কেঁপে উঠছে। আরশির জ্ঞান ফিরছে। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকিয়েছে। আশেপাশে নজর বুলিয়ে নিলো। সব কিছু বুঝে উঠতে দু-এক মিনিট সময় লেগেছে। হঠাৎ করেই আরশি আবিষ্কার করলো সে তার ডান হাত নাড়াতে পারছে না৷ মাথা খানিকটা উঁচু করে ডান দিকে ফিরে তাকালো। রৌদ্রর অগোছালো চুল দেখতে পাচ্ছে। পিঠ অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করছে। আরশি রৌদ্রর মাথায় বাম হাত রাখলো। আরশির হাতের ছোঁয়া পেয়ে রৌদ্র ঝট করে মাথা তুলে তাকালো। আরশি ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে চেয়ে আছে। রৌদ্র উত্তেজিত হয়ে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালো। আরশির গালে,কপালে হাত ছুঁয়ে দিয়ে অস্থিরতার সাথে বলতে লাগল-

“আরু তুমি ঠিক আছো তো? এখনো কি মাথা ঘুরাচ্ছে? খারাপ লাগছে তোমার! কি হলো চুপ করে আছো কেন? আমার কথার উত্তর দাও আরু। কিছু তো বলো।”

আরশি রৌদ্র দিকে মিনিটখানেক সময় স্থির চোখে চেয়ে থাকলো। মুহুর্তেই গাল ভর্তি হাসির রেখা টেনে নিয়ে বলল-

“ডাক্তার বাবু আপনি এতো উত্তেজিত হয়ে পরলে আপনার রোগীর কি হবে!”

রৌদ্র ভ্রু কুচকালো। সরু চোখে আরশির দিকে চেয়ে একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে। আবারও চেয়ারে বসে পরলো রৌদ্র। গম্ভীর গলায় আরশিকে বলল-

“আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আপনি মজা করছেন মিসেস আরু!”

আরশি হাসি থামিয়ে গোমড়া মুখে বলল-

“আপনি শুধু শুধু রেগে যাচ্ছেন কেন রোদ?”

“কবে থেকে দূর্বলতা অনুভব করছেন আপনি?”

আরশির প্রশ্নের জবাবে পালটা প্রশ্ন করলো রৌদ্র। আরশি ছোট্ট করে উত্তর দিল-

“বেশি না অল্প কিছুদিন ধরে।”

“আমাকে আগে বলেন নি কেন?”

রৌদ্র কড়া গলার প্রশ্নে আরশি কোনো প্রতিত্তোর দিলো না। চুপ করে আছে। অপরাধবোধ কাজ করছে মনে। রৌদ্র তার গাম্ভীর্যপূর্ণ চাহনিতে আরশির দিকে চেয়ে বলল-

“এতো বড় মেয়ে হয়েছেন। সরি মেয়ে বললে ভুল হবে। কিছুদিন পরই তো মা হতে চলেছেন। অথচ এখনো মিনিমাম কমন সেন্স বলতে কিছু নেই আপনার এত্তো বড় একটা মাথায়। আপনার মনে রাখা উচিত এখন আপনি একা নন। আপনার মাঝেই তুলতুল বেড়ে উঠছে। কীভাবে নিজেকে আর এই অনাগত বাচ্চাটাকে সুস্থ রাখা যায় তার খেয়াল রাখতে হবে। অথচ আপনি সবসময় বেপরোয়া ভাব নিয়ে থাকেন। প্রেগ্ন্যাসির সময় অসুস্থতা, দূর্বলতা, মাথা ঘুরানো এসব বিষয় সামান্য ব্যাপার মনে করে অবহেলা করলে যে কত বড় অঘটন ঘটাতে পারে তার কোনো ধারনা আপনার মধ্যে আছে? আপনাকে কতবার বলেছি আপনার খারাপ লাগলে আপনি সাথে সাথেই আমাকে বলবেন! কোনো কিছুর দরকার হলে আমাকে জানাবেন। আমার সাথে শেয়ার করবেন সব কিছু। কিন্তু নাহ আপনি তো আমার কোনো কথাই রাখলেন না। নিজের মর্জি মতো চলে বেড়ান সব সময়। দেখলেন তো আপনার এমন বেখেয়ালির জন্য আজ কি হলো? ধ্রুব পাশে না থাকলে কি হতো! যেখানে সাখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতেন। তুলতুলের কি হতো ভেবেছেন?”

আরশির উঠে বসলো। তীক্ষ্ণতার সাথে রৌদ্রর দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত গলায় বলল-

“আর কতো বকবেন রোদ? একটু থামুন এবার। আপনার গলাটাকে একটু বিশ্রাম দিন। বেচারা কথা বলতে বলতে হয়তো ক্লান্ত হয়ে পরেছে। বেশি না অল্প কিছুক্ষণের জন্য শান্ত হোন। একটু পর না হয় আবার বকবেন।”

রৌদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কেবিনের বাহিরে যাওয়ার জন্য হাঁটা শুরু করলো। কেবিনের দরজা খোলার আগেই আরশি অবেগী কন্ঠে রৌদ্রকে ডাক দিলো-

“রোদ!”

রৌদ্র নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে পেছন ফিরে আরশির দিকে তাকালো। আরশি তার মায়াবী চোখে রৌদ্রর দিকে চেয়ে আছে। যে চোখের মাঝে এক সমুদ্র ভালোবাসা বিদ্যমান। রৌদ্র এই চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে রাগ করে থাকতে পারলো না। বিস্ময়ের গলায় জিজ্ঞেস করল-

“কিছু বলবে আরু!”

আরশি লাজুক হেসে মিহি কন্ঠে বলল-

“ভালোবাসি রোদ।”

রৌদ্র অপলকভাবে আরশিকে দেখছে। সে কোনো মতেই এই মেয়েটাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। একদিনও থাকা সম্ভব হবে না এই মেয়েটাকে ছাড়া। আরশির লাজ্জা, অস্থিরতা, মুচকি হাসি এসব না দেখে থাকা তার পক্ষে মৃত্যুর সমান। এই মেয়েটা তার অর্ধাঙ্গিনী নায় বরং সম্পূর্ণাঙ্গিনী। এই মেয়েটার মাঝেই তো তার প্রানভ্রমর আটকে আছে। রৌদ্র আরশির দিকে চেয়ে হাল্কা হেসে কেবিন থেকে থমথমে পায়ে বেরিয়ে গেল। কেবিনের বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে কতোগুলো বিষন্ন ভগ্নহৃদয়ের মানুষ। কারও মুখে কোনো কথা নেই, আছে শুধু উদাসীনতা আর ভয়। খুব কাছের কাউকে হারিয়ে ফেলার ভয়। কিন্তু রৌদ্রর মাঝে আছে তার ভালোবাসার মানুষ, অনাগত সন্তান আর ছোট ভাই সমতুল্য ধ্রুবকে হারিয়ে ফেলার তীব্র আশংকা। এই তিন তিনটে মানুষের অনিশ্চিত জীবনের কষ্টের ভার নিয়ে সে কিভাবে থাকবে? রৌদ্র চুপচাপ গম্ভীর পায়ে রিসিপশনের দিকে চলে গেল। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করেনি তাকে। হয়তো কিছু জিজ্ঞেস করার মতো ভাষা তাদের নাই। বাকরুদ্ধ হয়ে আছে সবাই। আরশিকে কয়েকঘন্টার মধ্যেই বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। নীল ওরা সবাই আরশির সামনে স্বাভাবিকভাবেই থাকার চেষ্টা করছে। আরশি যতক্ষণ সামনে থাকে ততক্ষণ নিজেদের হাসিখুশি ভাবেই উপস্থাপন করেছে। আরশি এখন নিজেদের ফ্ল্যাটের সোফায় বসে আছে। সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীল আর আদ্রাফ। পাশে বসে আছে নীলা। রৌদ্র, নির্বান আর ধ্রুব এখানে নেই। তারা হয়তো খাবারের ব্যবস্থা করতে গেছে। আরশির বাবা-মা কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। কিছুটা সময় পর নিরবতা ভেঙে আরশি অসহায় কন্ঠে বললো-

“সরি রে। আমার জন্য তোদেরকে এত কষ্ট করতে হচ্ছে। তোদের নতুন বিয়ে হয়েছে আর তার মধ্যে আমি ঝামেলা পাকিয়ে ফেললাম।”

নীল রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আরশির দিকে। চোয়ালে শক্ত করে কঠিন গলায় বলল-

“শোন আশু সব সময় বেশি পাকনা পাকনা কথা বলবি না বলে দিচ্ছি। আমরা কি কেউ বলেছি আমাদের কষ্ট হচ্ছে? আর আমাদের বিয়েতে ঝামেলা পাকিয়েছিস মানে কি! আমাদের বিয়ে হয়েছে একদিন বা দুদিনের জন্য না। সারাজীবন একসাথেই থাকবো সেখানে একদিন একসাথে সময় না কাটালে তেমন কোনো বড় ঝামেলা হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। আগে তোর স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে হবে। তুই অসুস্থ হয়েছিস এটা দেখে নিশ্চয়ই পাষণ্ড মানুষের মতো ঢেং ঢেং করে বউ নিয়ে ঘুরে বেড়াবো না!”

আরশি চুপসে গেল। গাল ফুলিয়ে মলিন কন্ঠে বলল-

“আজ একটু অসুস্থ হয়েছি বলে তোরা সবাই একের পর এক এভাবে বকাবকি করেই যাচ্ছিস আমাকে। কোথায় একটু সেবা করবি তা না উল্টো লেকচার দিয়ে দিয়ে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছিস।”

“ওহহহ তাই না-কি!! আয় তাহলে তোকে কোলে নিয়ে আদর করি।”

আদ্রাফ দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলো বলল। আরশি ভ্রু কুচকে ক্ষীণ গলায় বলল-

“যত্তসব হারামির দল।”

নীলা এবার প্রচন্ডরকম বিরক্ত হয়ে মুখ খুললো-

“এই তোরা চুপ কর তো। সব সময় কি তোদের ঝগড়া না করলে ভালো লাগে না না-কি!! অসহ্যকর।”

সবাই চুপ হয়ে গেল। যে যার মতো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আর বসে আছে। রৌদ্র আর নির্বান এসে পরেছে। ধ্রুবকে দেখাতে না পেয়ে আরশি সন্দিহান কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-

“ধ্রুব কোথায়? ও তো আপনাদের সাথেই ছিলো।”

“আন্টির কিছু জরুরি কাজ ছিলো তাই তাড়াতাড়ি চলে যেতে হয়েছে ধ্রুবকে।”

রৌদ্র স্বাভাবিকভাবেই আরশির প্রশ্নের উত্তর দিল। আরশি আর তেমন কিছু জিজ্ঞেস করেনি। রৌদ্র একপ্রকার জোর করেই ধ্রুবকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে। ধ্রুবর অবস্থাও তেমন ভালো দেখাচ্ছিলো না। তাই রৌদ্র কড়া গলায় বলে দিয়েছে বাসায় যেয়ে বিশ্রাম করার জন্য। ধ্রুব বাধ্য ছেলের মতোই রৌদ্রর কথা মেনেছে।

—————————

সময় নিজের মতোই যেতে থাকে। দিনের পর দিন পেরুতে থাকে। এখন আরশির প্রেগন্যান্সির আটমাস চলছে। রৌদ্র এখন দিনের বেশির ভাগ সময় আরশির খেয়াল রেখেই কাটিয়ে দিচ্ছে। নীল, ধ্রুব ওরা সবাই প্রতিদিনই আরশির সাথে সময় কাটিয়ে যাচ্ছে। তবুও সব কিছুর মাঝে কেমন যেন একধরনের চাপা কষ্টের উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। এই কষ্ট কারও সামনে প্রকাশ করা যায় না। আর না কারও সাথে শেয়ার করে কমানো যায়। মনের মধ্যেই গুনে পোকার মতো কুড়ে কুড়ে খায়। আরশির মা চেয়েছিলেন আরশিকে তাদের বাসায় নিয়ে যেতে। কিন্তু আরশি আর রৌদ্র কেউ রাজি হয়নি। আরশির প্রায় পেইন হয়। মাথা ঘুরায়। তবে কিছুক্ষনের মধ্যেই আবার ঠিক হয়ে যায়। সময়ের সাথে সাথে যেন রৌদ্রর মনে ভয়েরা এসে কড়া নাড়তে শুরু করেছে। রৌদ্র আরশিকে এখনো কিছু বলেনি। সব কিছু সে নিজের মধ্যেই রেখে দিয়েছে। সারাদিন আরশির সাথে স্বাভাবিক ভাবেই থাকে কিন্তু রাত হলেই সব ভয়, আশংকা, বিষন্নতা চারপাশ থেকে রৌদ্রকে আঁকড়ে ধরে। সারারাত আরশির দিকে তাকিয়ে নির্ঘুম কাটিয়ে দেয়। বুকের মধ্যে তীব্র অসহ্য ব্যথা আর হাহাকার অনুভব করে আরশির ঘুমন্ত দেখলেই। এই কদিনে রৌদ্রর মাঝে অনেক অবনতি ঘটেছে। স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে আগের থেকে খুবই অবনতি হয়েছে। চোখের নিচে কালি পরেছে। শরীর কেমন যেন বর্ণহীন ফেকাসে হয়ে গেছে। রৌদ্র তাকিয়ে আছে তার পাশে শুয়ে থাকা রুদ্রাণীর দিকে। আরশি নিশ্চিন্তমনেই ঘুমিয়ে আছে।

———————

আরশির পেইন হচ্ছে। অসহ্য ব্যথায় বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। আরশির গোঙানির শব্দে রৌদ্র আসলো। আরশিকে এই অবস্থায় দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েছে রৌদ্র। পাগলের মতো করছে। দ্রুত আরশিকে পাঁজকোলে নিয়ে বেরিয়ে পরলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে দুজনের। একজন ব্যথায় কাতরাচ্ছে আরেকজন ভালোবাসা হারিয়ে ভয়ে নিঃশব্দে অশ্রু ফেলছে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here