#লঙ্কাবতী
#পর্বঃ০২
#Arshi_Ayat
“এই যে,মিস শুনেছেন?”
সাদিয়া ঘুরে তাকাতেই দেখলো একটা ছেলে হাসি-হাসি মুখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।সাদিয়া ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো”আমাকে ডাকছেন?”
“জ্বি,আপনাকেই ডাকছি।”
সাদিয়া এটা শুনে ছেলেটার কাছাকাছি এসে দাড়িয়ে বলল”কিছু বলবেন?”
“জ্বি,তবে এখানে না।কাছেই একটা কফি শপ আছে।আপনার আপত্তি না থাকলে আমরা ওইখানে গিয়ে কফি খেতে খেতে কথা বলতে পারি। বাই দ্য ওয়ে আপনি কফি খান তো?”
সাদিয়া অবাক হয়ে গেলো ছেলেটার কথা শুনে।কি বলে ছেলেটা!চেনা নাই জানা নাই একটা মেয়েকে কফি শপে ডাকছে।ব্যাটার মতলব মনে হয় খারাপ!দেখি একটু বাজিয়ে।সাদিয়া মনে মনে এগুলো বললেও মুখে বলল”আমি অপরিচিত কারো সাথে কফিশপে যাই না।”
“আরে আমাদের এর আগেও একবার দেখা হয়েছিলো।মনে নেই?”
“না তো!কবে হলো?”
“ওই যে সেদিন শপিংমল থেকল বের হয়ে আপনি আর আপনার একটা বান্ধবী যে ছিলেন ওইদিন সাথে আমার বন্ধুও ছিলো।”
আদিবের কথা শুনে সাদিয়ার মনে পড়লো।তারপর বলল”তো,এখন আমি কি করবো?একদিন দেখা হয়েছে বলে এখন কি আমি আপনার সাথে ড্যাংড্যাং করে কফি শপে চলে যাবো নাকি!আমি আপনার মতো ছ্যাচড়া না।”
আদিব সাদিয়ার কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।সামন্যতো কফিশপেই যেতে বলেছে।এতে এতো কথা শুনানোর কি আছে!আজব!আদিব নিজের বিরক্তি প্রকাশ না করে বলল”আচ্ছা সরি।কিন্তু আপনার নাম টা জানতে পারি?”
“কেন?যাতে রাস্তায় দেখা হলে নাম ধরে ডাক দিতে পারেন তাই?”
“হ্যাঁ তাই।আর এতো এক্সট্রা পার্ট নেওয়া লাগবে না।নামটাই জানতে চাইছি।ফোন নাম্বার চাই নাই।”
“চাইলেও দিবো না।”
এটা বলে সাদিয়া মুখ ঘুরিয়ে হাটা শুরু করলো।সাদিয়ার এহেন কান্ডে আদিব ভ্রু কুঁচকে মনে মনে বলল”দেখতে যতোটা সহজসরল ভেতরে ভেতরে একদম উল্টো।কিন্তু যাই বলি মেয়েটারে ভাল্লাগছে।”
এটা বলে মুচকি হেসে আদিবও হাটা ধরলো।
আর এদিকে সাদিয়া আদিবকে ইচ্ছেমতো গালি দিতে দিতে যাচ্ছে।ওর জন্যই এখন কোচিং এ যেতে দেরি হবে।এমনিতেই স্যার বকে এখন আরো দেরি করে গেলে ক্লাসের বাইরে দাড় করিয়ে রাখে কি না আল্লাহ মালুম।কিন্তু কোচিং এ পৌঁছানোর পর স্যার না বকেই ওকে ঢুকতে দিলো।সাদিয়া কাঠের মতো গিয়ে ভেতরে বসলো।প্রভা সাদিয়ার পিঠে গুতা দিয়ে ফিসফিস করে বলল”কি রে,সাদি আজকে দেরি হলো কেনো?”
“আরে আর বলিস না।ওই যে মনে আছে ওইদিন আমরা শপিং মল থেকে বের হওয়ার পর দুইটা ছেলে আসলো যে।একটা ছেলে তোর সাথে তর্ক করছিলো না?ওইটার পাশের ছেলেটা আজকে আমাকে পিছন থেকে ডাক দিয়ে কফিশপে যেতে বলছিলো।সে নাকি আমাকে কি বলবে!”
এতটুকু শোনার পর প্রভা ভ্রু কুঁচকে বলল”তুই কি বললি?”
“অনেক কথা শোনায় দিছি।তারপরেও ছ্যচড়া পোলায় আমার নাম জিগ্যেস করছিলো।”
“তারপর তুই কি বলছিলি? ”
“নাম বলি নাই।আর দু’চারটা কথা শুনায় দিয়ে চলে আসছি।”
“ভালো হইছে।এসব ছেলেদের লাই দিতে নাই।পুরা মাথায় উঠে বসবে।”
সাদিয়া কিছু বলার আগেই স্যার ধমক দিলো তাই আর কিছু বলল না।দুজনই চুপচাপ পড়ায় মনযোগ দিলো।
দু-ঘন্টা পরই কোচিং ছুটি দিলো।কোচিং পড়া শেষ করে বের হতেই প্রভা বলল”আজকে কলেজে যাবি?”
“হ্যাঁ,আজ যেতেই হবে।এমনিতেই নানি আসায় দুইদিন যাই নাই।”
“আচ্ছা আরেকদিন না গেলে কিছু হবে না।আজকে আমরা একটু ঘোরাঘুরি করবো।”
“আমার কাছে তো টাকা নাই।টাকা নিয়ে আসি নাই।”
“সমস্যা নাই,আমার কাছে আছে।”
“আচ্ছা তাইলে চল।”
তো প্ল্যানমতো দুইবান্ধবী বেরিয়ে পড়লো।প্রথমে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে নাস্তা করতে বসলো।ওয়েটার ছেলেটা অর্ডার নিতে আসলো।প্রভা ছেলেটার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আর সাদিয়া অর্ডার দিয়ে প্রভার দিকে চেয়ে ওর হাতে খোঁচা দিয়ে বলল”আরে,এমন হা করে তাকিয়ে আছিস কেনো?ছেলে কি জীবনে দেখিস নাই?”
“দোস্ত এই ছেলেটা হেব্বি।একটু চেষ্টা কর না ওর আইডি অথবা নাম্বার জানতে পারিস কি না।”
“আমি পারতাম না।”
“এই যে এমন করেলে তোর বিল কিন্তু আমি দিমু না।একটু বান্ধবীর জন্য কষ্ট কর না।প্লিজ।”
“আচ্ছা,আসুক আগে তারপর দেখি।”
সাদিয়া বিরক্ত হয়ে বলল।সাদিয়া প্রভাকে ভালে মতোই চেনে।কোনো সুন্দর একটা ছেলে দেখলেই ক্রাশ খাবে আর ছেলেটার আইডির জন্য লাফাবে।আর মাঝখান থেকে সাদিয়াকে মাইনকাচিপায় পড়তে হয়।কখনো গিয়ে ফোন নম্বর কালেক্ট করতে হবে নয়তো ছেলেটাকে চিঠি দিতে হবে।আর নিরুপায় সাদিয়াও ট্রিটের লোভে এগুলো করে।আজও তাই হবে।
ওয়েটার ছেলেটা এসে ওদের টেবিলে খাবার রাখাছিলো।এদিকে প্রভা চোখ দিয়ে সাদিয়াকে ইশারা দিচ্ছিলো।সাদিয়া কিছুটা ইতস্তত বোধ করে বলল”এক্সকিউজ মি ভাইয়া।আপনার নামটা কি জানতে পারি?”
ছেলেটা মৃদু হেসে জবাব দিলো”হাসান।”
“হাসানের আগে পরে কিছু নেই?”
“হাসান মাহমুদ।”
“ও,আচ্ছা।ধন্যবাদ।”
ওয়েটার টা সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলো।ছেলেটা যেতেই প্রভা বলল”কুত্তি শুধু নাম দিয়া কি বাল ফালামু?নাম্বারটা নিতে পারলি না?”
“আরে বিলাই শোন এতো ছ্যাচড়ামি একসাথে করা যাবে না।আপাতত ফোনে হাসান মাহমুদ লিখে সার্চ দে।দেখ আইডি পাস কি না!আইডি পাইলে আর কিছু লাগবো না।”
“হুম দাড়া দেখি।”
প্রভা সার্চ দিয়ে দেখলো কিন্তু হাসান মাহমুদ নামে অনেকের আইডি পেলেও এই ছেলেটার আইডি পাওয়া যাচ্ছে না।প্রভা বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে খেতে লাগলো।সাদিয়া খেতে খেতে বলল”পাস নাই?”
“না রে।”
“আরে ‘প্রেমের বাতাসে লুঙ্গি আকাশে’ এই নাম দিয়া খুললে আইডি পাবি কেমনে!”
“সবাইতো আর তোর মতো না যে ” এঞ্জেল জরিনা” দিয়া আইডি খুলিস।”
“আরে ওইটা ফেক আইডি।”
“ফেক আইডি হোক আর যা হোক।খুলছিস তো!”
আর কিছু বলার আগেই ছেলেটা আবার এসে ওদের টেবিলের সামনে দাড়িয়ে বলল”আপনাদের কি আর কিছু লাগবে?”
“না মানে আপনার আইডিটা পেলে আর কি…”
এটা বলে সাদিয়া একটা মেকি হাসি দিলো।
ছেলেটাও মৃদু হেসে বলল”হাসান মাহমুদ বাংলায় লিখলেই পেয়ে যাবেন।”
“ধন্যবাদ।”
এটা বলেই সাদিয়া বিলটা দিয়া প্রভাকে টানতে টানতে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।বের হওয়ার পর দুজনই ট্রেন লাইন ধরে হাঁটতে লাগলো।আজকে অনেকদূর হাটবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো দুজনে।
হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর আসার পর দুজনই ট্রেন লাইনের ওপর বসে পড়লো।হঠাৎ সাদিয়া বলল”দোস্ত শুধু ডেয়ার খেলবি?”
“ওকে।কি করতে হবে বল?”
সাদিয়া দূরে একটা ছেলেকে দেখিয়ে বলল”ছেলেটাকে গিয়ে একটা ধাক্কা দিবি।যদি দিতে পারিস তাইলে কালকে তোরে কাচ্চি খাওয়ামু।”
“ওকে ডান।”
প্রভা উঠে দাড়ালো ছেলেটাকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য।কিন্তু ছেলেটার চেহারা দেখা যাচ্ছে না।চেহারা ঘুরানো।হোক! তাতে কি!প্রভা ধাক্কা দিবেই।
এদিকে সাদ আদিবের জন্য অপেক্ষা করছে।আদি আসলে দুজনে মিলে পাশের প্লট টায় যাবে দেখতে।এই জায়গাটা সাদ রা কিনবে।তাই আজকে সাদের বাবা ওকে জায়গা দেখার জন্য পাঠালো।তো একা যাওয়ার থেকে আদিকে নিয়ে গেলেও ভালো হয় তাই আদির জন্য অপেক্ষা করছিলো।
এদিকে প্রভার সাদের প্রায় কাছাকাছিই চলে এসেছে।যেই সাদকে ধাক্কা দিবে তখনই….
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।দেরি হওয়ায় ক্ষমা করবেন।সমস্যা আমার পিছু ছাড়ে না।ভেবেছিলাম এই গল্পটা প্রতিদিন দিবো কিন্তু তার আর হলো কই হাত কেটে যাওয়ায় টাইপ করতে কষ্ট হয় এইজন্য অনেক কষ্টে টাইপ করে দিলাম।এখন থেকে একদিন পরপর দিবো।আর হাত ভালো হয়ে গেলে প্রতিদিন।তবে গল্পটা বেশি বড়ো হবে না দশ পর্বের মধ্যেই শেষ হবে।)