লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পর্ব -১০+১১+১২

লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
* পর্ব ১০
সামিরা আক্তার

চৈতালী ভাবনায় ডুবে আছে। আজীবনই সিনেমার ন্যাকা কাহিনী তার অপছন্দ ছিলো। কিন্তু তার জীবনটাই বাংলা সিনেমার মত হয়ে গেলো। আর খুবই দুঃখজনক ভাবে সে এখানে শাবানার ভূমিকায় আছে।
চৈতালী একটা জিনিস বুঝলো না এই বড়মা এটা কেন ভাবছে সে সব কিছু ঠিক করে দিতে পারবে। আশ্চর্য সে কি ম্যাজিক জানে না কি??
কিন্তু এগুলো বলা যাবে না। কষ্ট পাবে। সেই বা কি করতে পারে। কেন যে বিয়েটা করতে গেছিলো। নিজেকে জুতা দিয়ে পিটাতে মন চাইছে। অবশ্য তখন কি জানতো এই কাহিনী হবে।
তার বাবা তার বিয়ে দিয়ে হজ্বে যেতে চাইলো। সে প্রথমে আপত্তি করলেও পরে করেনি। কারণ আজ বা কাল বিয়ে করতেই হতো।
কিন্তু এখন সে করবেটা কি?? সিধান্ত নিতেই পারছে না। অনেক ভেবে সে তার কয়েকজন বান্ধবী, বড় আপু দের সাথে কথা বললো।
তাতে লাভের লাভ কিছু হলো না। কারণ বেশির ভাগই বলেছে ডিসিশন চৈতালীকেই নিতে হবে। কারণ জীবনটা চৈতালীর।

রাফসান একটা ফাইলে মুখ গুজে বসে ছিলো। এর মাঝে ফোন বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখলো রাফিয়া কল করেছে। বুঝলো তার বোনের কাছে গতকালের সব ঘটনা পৌছে গেছে। যেহেতু তখন জানানোর মত সিচুয়েশন ছিলো না।
রাফসান ফাইলের কাজ শেষ করে আস্তে ধীরে বোন কে ফোন করলো। ওপাশ থেকে এক প্রকার চিৎকার করে ভাইয়া বলে ডেকে উঠলো রাফিয়া। বোনের উচ্ছ্বাস দেখে হাজার মন খারাপের মধ্যে ও মন ভাল হয়ে গেলো রাফসানের।
– ভাইয়া আমি খুব বেশি খুশি হইছি। এত খুশি শেষ কবে হয়েছিলাম আমার মনে নেই।
রাফসান বুঝলো কিসের জন্য খুশি হয়েছে তার পরও বললো – এত খুশির কারণ কি??
একটু দমে গেলো রাফিয়া। নিজের উপরই রাগ হলো।গাঁধা না কি সে? একটা পাথরের কাছে খুশির কথা বলতেছে। পরহ্মণেই বললো – ভাইয়া এবার সিরিয়াস হও প্লিজ। নিজের জীবনটা গোছাও।
– তোর কি মনে হয় আমি অগোছালো লাইফ লিড করছি??
– তুমি যে জীবন পার করছো সেটাকে জীবন বলে না। তুমি যে দিন দিন সমাজের বাইরে চলে যাচ্ছ বুঝতে পারছো??
হেঁসে ফেললো রাফসান। তার বললো -তোকে এই বড়দের মত কথা কে বলতে বলেছে?? মা?
– মা বলবে কেন?? তোমার কি ধারণা আমি বড় হই নি?? ভাইয়া চৈতালী ভালো মেয়ে। তোমাকে ভাল রাখবে।
– চৈতী আমার থেকে ১৬ বছরেরে ছোট রাফু। একটা বাচ্চা মেয়ে। ওর যখন জন্ম হইছে আমি তখন কলেজে পড়ি। ঐ সময় বিয়ে করলে আমি চৈতীর বয়সী একটা মেয়ে থাকতো আমার।
– শোনো ভাইয়া ১৭ বছরে কেউ বাচ্চা থাকে না। মেয়েরা ১৩-১৪ বছর হলেই দুনিয়াদারী চিনে যায়। সব কিছুই বুঝে। দেখো এখনকার ১৪-১৫ বছরের মেয়ে গুলো কেমন পালিয়ে যায়। মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় তাড়াতাড়ি বাড়ে বুঝছো?? তাছাড়া চৈতালীর সমস্যা না হলে তোমার সমস্যা হবে কেন?
– তুই কি একটু পানি খাবি রাফু,?? জুনায়েদ কে বল তোকে একটু পানি দিতে। এত কথা কিভাবে বলিস তুই? আহারে আমার বন্ধুটার কান বোধহয় ঝালাপালা করে দিস তুই।
রাফিয়া বুঝলো তার ভাই কথা ঘুরাতে চাইছে। এজন্য তার সাথে মজা করছে। তাই সেও আর কথা এগুলো না। আজ যেটুকু বলেছে এনাফ। বাকি কথা চৈতালীর সাথে কথা বলার পর বলবে। এমনিতেই তার শরীর ভাল না। প্রেগনেন্সির সময় চলছে।
তারপর বললো- তোমার বন্ধু আমার কান বেশি ঝালাপালা করে। এসব কথা বাদ দাও। জীবনটাকে নিয়ে সিরিয়াস হও।
– আচ্ছা এখন রাখ। নিজের খেয়াল রাখিস। এত স্ট্রেস নিস না। তোর জন্য হ্মতিকর।

রাফিয়ার সাথে কথা বলার পর রাফসান বুঝলো তার মা দায়িত্ব নিয়ে সবাইকে তার বিয়ের খবরটা দিয়ে দিয়েছে। এখন ফোন আসতেই থাকবে। সে ফোনটা সাইলেন্ট করে দিলো।
একটা বিষয় শান্তুি দেয় তাকে তার জীবনে যাই হোক রাফু ভালো আছে। জুনায়েদ তার বহু পুরোনো বন্ধু। মধ্যবিত্ত ছেলে। বাবা অনেক আগেই মারা গেছিলো। কলেজ পাস করার পর মাও মারা গেলো।
রাফসানের সাথে ঘনিষ্ঠতা থাকায় তাদের বাড়িতে আসা যাওয়া ছিলো। সেখান থেকেই রাফুকে দেখে। না ওরা প্রেম করে নি। বরং জুনায়েদ পড়ালেখা শেষ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেই তার কাছে তার বোনকে চেয়েছিলো।
ততদিনে রাফসান নিজেও বিয়ে করে সম্পর্কের টানাপোড়েনে ছিলো। ঐ অবস্থাতেই ওদের বিয়ে দেয়। বিয়ের পর রাফিয়া কে নিয়ে জুনায়েদ উড়াল দেয় ইউরোপে।
এর মাঝে রাফসানের ডিভোর্স হয়ে গেলো। রাফিয়া তখন ফোনে ভাইয়ের জন্য ছটফট করতো। তারপর প্রতি বছর দেশে এসে ভাইয়ের অবস্থা দেখে মিইয়ে গিয়েছিল সে। রাফসানের সাথে এত উচ্ছ্বাস নিয়ে অনেকদিন পর কথা বললো সে।
রাফসান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার ফুফু ফোন করছে।
এইবার ফোনটা বন্ধ করে দিল সে। তার এখন কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না।

এর মাঝে ২ দিন কেটে গেলো। চৈতালী এখন ও আয়শা বেগম কে কিছু জানায় নি। আয়শা বেগম চৈতালীর উত্তরের আশায় বসে আছে। আজ হঠাৎ চৈতালী এসে বললো – বড়মা আমি সিধান্ত নিছি আমি ঢাকা যাব। রাফসান ভাইয়ের সাথে সংসার করবো। তবে তোমার কাছ থেকে আমার কিছু জানার আছে। আশা করি বলবে।
আয়শা বেগম খুশিতে কেঁদে ফেললেন। বললেন – সব বলবো মা যা জানতে চাইবি।
(ক্রমশ)লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ১১
সামিরা আক্তার

রাফসান যেদিন বিয়ে করে নিয়ে আসে সেদিন স্বভাবতই সবাই চমকে গেছিলো। রাফসানের থেকে এরকমটা কেউ আশা করে নি। রাফসানের বাবার ইচ্ছে ছিলো বোনের মেয়ে আলিয়া কে পুত্রবধু করে আনার। নিজের ইচ্ছার কথা তিনি নিজের কাছেই রেখেছিলেন। কাউকে বলেন নি। বললে হয়তো গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো।

আফরিন কে রাফসানের বাবার প্রথমে পছন্দ হয় নি। রাফসান বৌ নিয়ে আসলো যেদিন সেদিন নিচ তলার হল রুমে বসে আসমাত শিকদার প্রথম কথা বলেছিলেন -দাদার আমলের ব্যবসা আমাদের রাফসান। আমরা মানুষ চড়িয়ে খাই। এই মেয়ের মধ্যে আমি তোমার জন্য ভালবাসা দেখছি না। আমার খুবই দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে তুমি মানুষ চিনতে ভুল করেছো।
– বাবা তুমি ভুল করছো আফরিন ভাল মেয়ে। ও শুধু আমাকে না তোমাদের সবাইকে ভালবাসবে।
– দেখো রাফসান তুমি আমার ছেলে তুমি জীবনে সুখী হও আমি চাই। বিয়ে যখন করেই ফেলেছো তখন আর কিছু করার নেই। তবে…
– তবে কি বাবা??
– তুমি কাল থেকে অফিসে যাবে। তোমার যোগ্যতা অনুযায়ী একটা পদ তোমাকে দেওয়া হবে। সাধারণ কর্মচারীর মত বেতন ও পাবে। এবং তোমার বৌয়ের সব দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে। অন্তত এক বছর। মনে করো এটা তোমাদের পরীহ্মা। তবে এই কথা তুমি তোমার বউকে বলতে পারবে না।

রাফসান সেদিন তার বাবার সব কথা মেনে নিয়েছিলো। মূলত আসমাত শিকদারের চিন্তা ছিলো তার পুত্রবধু কতটা খাটি তা পরীহ্মা করা। তা না হলে তিনি এরকম উদ্ভট শর্ত দিতেন না।
তারপর থেকে রাফসান অফিসে যেতে শুরু করলো। আর বাকি সময় বৌ। ভালই চলছিলো। কয়েক মাস যেতেই ওদের রুম থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতেন তিনি। তারপর…
– তারপর কি বড়মা??
আয়শা বেগম চুপ করে আছেন। আজ তার কাছে এই বিষয় গুলোই জানতে চেয়েছে চৈতালী।
– কি হলো বড়মা বলো? দেখো এই বিষয় গুলো না জানলে আমি রাফসান ভাইয়ের ওখানে গিয়ে কিছু করতে পারবো না।

ওদের ঝামেলা বাড়ছিলো। কি নিয়ে তা আয়শা জানেন না। এরপর একদিন আফরিন এসে আসমাত শিকদারের কাছে বললো সে মডেলিং করতে চায়। কি ভেবে যেন আসমাত শিকদার অনুমতি দিলেন। এরপর থেকে শুরু হলো আফরিনের অযাচিত চলাফেরা। অনেক রাত করে বাসায় ফিরতো। এতদিনের ঝামেলা এবার বিস্ফোরেণে রুপ নিলো।
তারপর একদিন ব্যাগপত্র গুছিয়ে আফরিন চলে গেলো। রাফসান ফিরিয়ে আনতে গিয়েছিলো। কিন্তু ফিরে এলো খালি হাতে। বাড়ি এসে পুরো একদিন নিজের রুমে বন্দি ছিলো। তার রুম থেকে বেরিয়ে আসমাত শিকদারের কাছে গেলো। আসমাত শিকদার কাছ থেকে এসে আফরিনের সমস্ত জিনিস বাগানে নিয়ে আগুন ধরিয়ে পুরিয়ে দেয়।
তারপর দিন থেকে রাফসান পুরো বদলে গেলো। যা এখন পর্যন্ত চলছে। এর বেশি আয়শা বেগম কিছু জানেন না। এমনকি আফরিন কে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে ওদের মধ্যে কি কথা হয়েছিল তাও রাফসান কাউকে বলেনি।

চৈতালী একটু ভাবনায় পরে গেলো। তার বয়স তখন না হলেও ৮-৯ ছিলো। অথচ সে এসব ঘটনার কিছুই জানতে বা বুঝতে পারে নি। একটু চিন্তা করে সে বললো
– বড়মা আমি কালই যেতে চাই। বড়আব্বু কে ব্যবস্থা করতে বল।

রাফসানের দিন কাটছে ব্যাস্ততায়। বিয়ের কথা সে এই তিন চার দিনে ভুলেই গেছে বলা চলে। তার হয়তো মনেই পড়তো না যদি বাসায় ফিরে ডাইনিংয়ের সোফায় শুয়ে চৈতালী কে কার্টুন দেখতে না দেখতো।

রাফসান যেন অবাকের শীর্ষ স্থানে পৌছে গেছে চৈতালী কে দেখে। একবার মনে হলো ভুল দেখছে?? না কি ও গাড়ি চালাতে চালাতে বাড়ি চলে আসছে। কিন্ত আশে পাশে তাকালে তো এটা ওর নিজের বাসাই মনে হচ্ছে।
তাহলে চৈতী এখানে কি করে এলো??
ঘাড় ঘুড়িয়ে রাফসান কে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে চৈতালী বললো- ওতো অবাক হবার কিছু নেই। আমি সত্যিই এসেছি।
– তোকে কে নিয়ে এলো?? থমথমে গলায় বললো রাফসান।
– বড়মা আর বড়আব্বু দুজনেই এসেছে। একটু বাইরে গেছে। কি কি যেন কেনাকাটা করার আছে।
রাফসান রাগে দপদপ করতে লাগলো। তার বাবা মাযের এখানে চৈতী কে নিয়ে আাসার উদ্দেশ্য তার কাছে পরিষ্কার। রুমে ঢুকে সে বিষ্ময়ে কথা বলতে ভুলে গেলো। কারণ ডেসিংটেবিল, আলমারি, সব জায়গাতে চৈতী নিজের জিনিস দিয়ে ভরে ফেলেছে।
কপালে হাত দিয়ে বসে পড়লো রাফসান। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। বুঝাই যাচ্ছে তার বাবা মা হাত ধুয়ে তার পিছনে পড়েছে। এখন একমাত্র ভরসা এখন চৈতী। চৈতীর সাথেই খোলাখুলি কথা বলতে হবে।

রাতে খাবার টেবিলে কথা তুললেন আসমাত শিকদার। বললেন- তাহলে আমি আর তোর মা কাল চলে যাচ্ছি বুঝছিস। চৈতালীকে দেখে শুনে রাখিস।
যদিও মা বাবার উদ্দেশ্য আগেই জানতো রাফসান তারপরও বললো – চৈতী কে দেখে রাখবো মানে?? ও যাচ্ছে না তোমাদের সাথে?
– না। এতহ্মণে মুখ খুললেন আয়শা বেগম।
– না মানে??
– না মানে চৈতালী এখন থেকে এখানেই থাকবে। বলে উঠলেন আসমাত শিকদার।
– এটা কিন্তু অতিরিক্ত হচ্ছে বাবা।
– কোন কিছুই অতিরিক্ত হচ্ছে না। তোমার বউ তোমার কাছে থাকবে এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বরং তুমি ব্যাপারটা জটিল করে তুলছো। তাছাড়া চৈতালী নিজের ইচ্ছায় এখানে এসেছে।

বাবার কথায় রাফসান এবার প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চৈতালীর দিকে তাকালো। চৈতালী চুপচাপ খাচ্ছিলো আর বাবা ছেলের কথা শুনছিলো। রাফসান কে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো- আমি এখানে ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হবো। তাছাড়া তুমি আমাকে বিয়ে করে ফেলে চলে আসছো শুনলে লোকজন ছি ছি করবে না?? তাই আমি দায়িত্ব নিয়ে চলে আসছি। আমি তো কোন দোষ করি নাই। আমি কেন আমার জামাই থেকে দুরে থাকবো?? তাই না বড়আব্বু?
– একদম তাই। বলে উঠলেন আসমাত শিকদার।
রাফসান হতভম্ব হয়ে গেলো। ভেবেছিলো চৈতীর সাথে কথা বলে বিষয়টার সমাধান করবে। কিন্তু এই মেয়ে তো উল্টো সুর গাইছে।
(ক্রমশ)লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ১২
সামিরা আক্তার

রাফসানের গুলশানের বাড়িটা ২ ইউনিটের। ২ টা ফ্ল্যাট। নিচতলায় গ্যারেজ আর দারোয়ান ও ড্রাইভারের থাকার জন্য রুম আছে। দোতালার এক একটা ফ্ল্যাটে দুটো রুম, দুটো বাথরুম, একটা ডাইনিং আর একটা কিচেন।
একটা ফ্ল্যাট সে বাসায় থাকলে অফিস রুম হিসাবে ব্যবহার করে, ওখানে অফিসের দরকারি জিনিস দিয়ে ঠাসা। আর সেখানে আছে তার পার্সোনাল জিম। আর এই ফ্ল্যাটটায় রাফসান থাকে।

কে জানতো আজকের মত শোচনীয় অবস্থা তার হবে। তাহলে জীবনেও ঐ ফ্ল্যাটের ওমন অবস্থা করে রাখতো না। এখন যদি চৈতী তার রুমে ঘুমায়? তাহলে সে কোথায় ঘুমাবে? ফ্লোরে?? অসম্ভব তার শরীর ব্যাথা হয়ে যায়। তাহলে কি সোফায়?? তাও না হাত পা না ছড়িয়ে শুলে তার জীবনেও ঘুম আসবে না।
আবার ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে যে ওর মাঝেই ঘুমাবে তাও সম্ভব না তার মা দেখলেই নায়িকা শাবানার মত ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কাঁদবে। রাফসানের সব রাগ চৈতালীর উপর গিয়ে পড়লো।

রাফসান কে বাঁচাতেই বোধ হয় চৈতালী আয়শা বেগম কে নিয়ে রাফসানের রুমে ঘুমালো। আর আসমাত শিকদার ও রাফসান কে এক রুমে দিলো। রাফসান মনে মনে আল্লাহ কে ধন্যবাদ দিলো। চৈতালীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভুললো না।
রাফসানের মুখ দেখে চৈতালী মৃদু হাসলো। মনে মনে বললো আজই তোমার শেষ শান্তির ঘুম রাফসান ভাই। কাল থেকে বুঝবা আমি কি জিনিস।

পরদিন সকালে আয়শা বেগম আর আসমাত শিকদার চলে গেলেন। যাওয়ার আগে চৈতালীর মন খারাপ ছিলো। ওনারা বলে গেছেন পনের দিন পর পর এসে চৈতালী কে দেখে যাবেন।
রাফসান ও ওনাদের সাথে একবারে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেছে।
ওনারা বেরিয়ে যাবার পর চৈতালী পুরো বাসা ঘুরে দেখলো। ছিমছাম বাসা। পরিষ্কার। আর প্রচন্ড নিরিবিলি। রাফসানের রুমটা বেশ বড়। একপাশে একটা বইয়ের ছোট খাট তাক। বেডরুমে বইয়ের তাক দেখে চৈতালী একটু অবাক হলো। সেখানে বেশ অনেক গুলো বই। বেশির ভাগই হুমায়ূন আহমেদের লেখা।বই দেখে মনে হচ্ছে না কেউ পড়েছে। একদম নতুন।

চৈতালীর ঘুম পাচ্ছে। সারারাত তেমন ঘুমায় নাই। শুয়ে শুয়ে রাফসান কে বাগে আনার প্লান করেছে। সে জানে এই সম্পর্ক থেকে সে বের হতে পারবে না। কারণ এর সাথে পরিবারের আবেগ, ভালবাসা, সম্মান জরিয়ে আছে। একমাত্র রাফসান ছাড়া কেউ চাইবে না সে এই সম্পর্ক থেকে বের হোক।
তাই সে ভেবে নিয়েছে এই এক জীবন সে বাংলা সিনেমার নায়িকা হয়ে কাটিয়ে দেবে। সবার ভালোর জন্য নিজে একটু খারাপ থাকলে কিছু হয় না।

রাফসান ফিরলো বিকেল বেলা। অভ্যাসবসত নিজের রুমে ঢুকে গেলো। আর ঢুকেই থমকে গেলো। বিছানায় চৈতী শুয়ে আছে। গাঁয়ে একটা গেন্জি আর প্লাজু। কোলবালিশ কে জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে স্বাভাবিক ভাবে।
রাফসান একটু হ্মুব্ধ হলো এই মেয়ে এই রুমেই কেন ঘুমালো? আবার নিজের জিনিস দিয়ে রুম ভরিয়ে ফেলেছে।
ভাবখানা দেখে তো মনে হচ্ছে না এই রুম ছাড়বে। ফাজিল মেয়ে। বেঁছে বেছে ওর পছন্দের রুমটাই দখল করেছে। মনে হচ্ছে ওরই এই রুম ছাড়তে হবে।
রাফসান একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলো। চৈতীর সম্পর্কে ওর ধারণা কম। এই মেয়েটা বলতে গেলে ওর আড়ালেই বড় হয়েছে। তাই ওর কি করা উচিত বুঝতেছে না।

চৈতালীর যখন ঘুম ভাঙলো তখন আসর আজান দিয়েছে। উঠে অজু করে নামাজ টা পড়ে বাইরে বেরিয়ে দেখলো রাফসান মনোযোগ দিয়ে নিউজ দেখছে আর কফি খাচ্ছে। চৈতালী ধপ করে রাফসানের পাশে বসে পড়লো।
রাফসান একটু সরে বসলো। চৈতালী হঠাৎ রাফসানের হাত থেকে কফি নিয়ে চুমুক দিলো।
হাত থেকে কফি নেওয়াতে রাফসান একটু হকচকিয়ে গেল। তার চেয়ে বেশি অবাক হলো যখন ওকে কফি খেতে দেখলো।
এই মেয়ে কি পাগল। অন্যের মুখের জিনিস মানুষ কিভাবে খায় ও ভেবে পেলো না।

চৈতালী কফি মুখে নিয়ে মুখ কুঁচকে ফেললো। এইটা কোন খাওয়ার জিনিস হলো। মুখে বললো- তুমি এরকম আলতু ফালতু জিনিস খাও?
– এটা ফালতু না। ব্ল্যাক কফি। গমগমে স্বরে উত্তর দিলো রাফসান।
– ওই একই হলো। আর এসব কি দেখো নিউজ ফিউজ। নিউজ দেখে তোমার লাভ কি?
– লাভের জন্য কেউ নিউজ দেখে না। দেশ- বিদেশের পরিস্থিতি জানার দেখে।
– চৈতালী হেঁসে ফেললো। বললো- দেশ বিদেশের পরিস্থিতি জেনে তুমি কি করবা?? দেশরে উদ্ধার করবা??
রাফসান কোন জবাব দিলো না। বরং এবার নিউজে এমন মনোযোগ দিলো যেন সে নিউজের মধ্যে ঢুকে যাবে।
– এই টিভিতে ওয়াইফাই কানেক্ট?? জানতে চাইলো চৈতালী??
– হুম।
চৈতালী কি যেন একটু ভাবলো। তারপর রাফসানের পায়ের উপর পা দিয়ে উল্টো দিকে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো।তারপর পাশ থেকে রিমোট নিয়ে সার্চ অপশনে গিয়ে গান খুজতে লাগলো।
চৈতালীর এমন কাজে রাফসানের কথা বন্ধ হয়ে গেছে। চেষ্টা করেও কথা বলতে পারছে না। হাঁসফাঁস লাগছে। কি সাংঘাতিক মেয়ে। মুরুব্বি মানে না। কেমন পায়ের উপর পা দিয়ে শুয়ে আছে। তার এখন কি করা উচিত?
রাফসান ঘামতে শুরু করলো।
রাফসানের এই করুন অবস্থার বিস্ফোরণ ঘটলো যখন টিভিতে আশিক বানায়া গান বেজে উঠলো। রাফসান এই মুহুর্তে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ হিসাবে আখ্যায়িত করলো। কি অসভ্য মেয়ে। ফাজিলের ফাজিল।
চৈতালী আড়চোখে রাফসানের অবস্থা পর্যবেহ্মণ করছে। রাফসানের অবস্থা দেখে তার হাঁসিতে পেট ফেটে যাচ্ছে কিন্তু সে বহু কষ্টে হাঁসি চেপে আছে। এখন হাঁসলে পুরো ঘেঁটে ঘ হয়ে যাবে। সে ভাল করে পা দিয়ে পা চেপে ধরলো।

ঘরে এসি চলছে। তার মধ্যে ও রাফসান ঘেমে চলেছে। এমনিতে এই চৈতীর পা তার উপর এই গান। বহু কষ্টে সে গলা দিয়ে আওয়াজ বের করে বললো- চৈতী পা সরা। আমি রুমে যাবো।
– এতহ্মণ তো এখানে দিব্যি বসে ছিলে।এখন রুমে যাবে মানে? আমি পা টা সরাতে পারবো না।একটা রোমান্টিক গান দেখছি। দেখতে দাও
-এটা রোমান্টিক গান?
– অবশ্যই! তোমার কি মনে হয়??
-অসভ্য গান। ফালতু। এসমস্ত গান দেখিস তুই??
চৈতালী এবার উঠে আয়েশ করে বসলো। তারপর রাফসানের দিকে ঝুকে বললো- তার মানে তুমি গানটা দেখেছো? এখন আমার সামনে সাধু সাজছো??

রাফসান পুরোই বোকা বনে গেলো। চৈতালী কথাটা এভাবে পেঁচিয়ে নিবে সে বুঝতে পারে নি। গানটা ইউনিভার্সিটি তে পড়াকালীন বন্ধুরা মিলে দেখেছিলো। ভাগ্যিস দেখেছিল। দেখেছিলো বলেই আগেই বুঝতে পেরেছে। না হলে আজ চৈতীর সাথে বসে এই গান তার দেখতে হতো। ভেবেই ভিতরে ভিতরে আর একবার ঘেমে গেলো সে। দ্রুত পায়ে ওখান থেকে চলে গেলো সে।
রাফসান যেতেই ঘর কাঁপিয়ে হেঁসে উঠলো চৈতালী। বাংলা ছবির নায়িকা যখন সে হয়েই গেছে তখন এই ছবি সুপার ডুপার হিট করানোর দায়িত্ব ও তার
(ক্রমশ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here