#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৬
মিতালির এভাবে জড়িয়ে ধরায় চরম বিরক্ত রাত। তার চেয়েও মহাবিরক্ত শিশির।কিন্তু সে তার হাত-পা নাড়ানোর শক্তি তার নেই। নয়ত এই মুহুর্তে সর্বপ্রথম সে যেই কাজটা করত সেটা হলো মিতালিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া।রাত হয়ত বিষয়টা বুঝতে পারলো।সে কিছু বলার আগেই হন্তদন্ত হয়ে একটা ছেলে কেবিনে ঢুকে পড়লো। সে মিতালিকে শিশিরের থেকে সরিয়ে বললো,
-“কি করছো মিতালি!”
মিতালি মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটাকে বলছে,
-” দেখো না নুশান!আমার শিশিরের কি অবস্থা! ”
রাত এতক্ষণে বুঝতে পারলো যে এটা নুশান। সে চটজলদি গিয়ে শিশিরের মাথার কাছে বসে পড়লো।রাত ভ্রু কুঁচকে ফিসফিস করে বললো,
-“এখানে কি করছে ও?”
শিশির রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“আমি জানি? আশ্চর্য! ”
রাত চুপ মেরে গেল। শিশির যে ভীষণ রেগে আছে। তাকে আর রাগানো উচিত হবে না। মিতালি নুশানের কলার ধরে বলছে,
-“আমি আরো আগে আসতে চেয়েছিলাম। তোমার জন্য আসতে পারিনি!”
নুশান মিতালিকে চেপে ধরে বললো,
-“চলো এখান থেকে।”
-“না,আমি আমার শিশিরকে ছেড়ে কোথাও যাব না।”
বলেই সে আবারো শিশিরের দিকে এগিয়ে গেলো।রাতের হাত ধরে উঠাতে নিলেই রাত আরেক হাত দিয়ে মিতালির হাতটা চেপে ধরলো।মিতালি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
-“কি হলো?উঠো?”
রাত মিতালির হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে মিতালির হাতটা ছুঁড়ে মেরে বললো,
-“ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট মিতালি।”
মিতালি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।রাত এমন বিহেভিয়ার কেন করছে ওর সাথে?সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে। শিশিরকে উদ্দেশ্য করে বলছে,
-“শিশির! রাত তোমার সামনে আমায় এসব কি বলছে?”
শিশির মুখ ঘুরিয়ে বললো,
-“আমি তোমার মত মেয়েদের সাথে কথা বলতে চাই না মিতালি। তোমার মত মেয়েদের সাথে কথা বললে আমাকে আরো ১০ বার গোসল করতে হবে নিজেকে পরিত্র করতে।”
মিতালি কয়েক ধাপ পিছিয়ে গেলো।রাত শুধু ভ্রু কুঁচকে মিতালির নাটকখানা দেখছে। মিতালির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।নুশান মিতালিকে পিছন থেকে চেপে ধরে বললো,
-“বাসায় চলো।এখানে থাকতে হবে না।”
মিতালি নুশানের হাতটা ঝটকা দিয়ে ফেলে দিয়ে বললো,
-“চুপ করো তুমি। আমি আমার শিশিরের কাছে থাকব।”
বলেই ও শিশিরের দিকে এগুতে নেয়।রাত শিশিরের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে লাগে,
-“দেখেন,উনি অসুস্থ। তাই আপনাদের উচিত বাহিরে যাওয়া। ”
মিতালি রাতের দিকে তেড়ে এসে বললো,
-“আমি কেন যাবো? তুমি বাহিরের মানুষ রাত। সরো। তোমার ভাইয়া অসুস্থ। ”
রাত হেসে ফেললো। মিতালি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। রাত হেসেই বললো,
-“আপনাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে মিতালি।”
মিতালি যেন ভীষণ বিরক্ত হলো। চোখমুখ কুঁচকে বললো,
-“তুমি বাহিরের মানুষ হয়ে…”
হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো রাত। মুচকি হেসে বললো,
-“বাহিরের মানুষ আপনারা। আমি ওনার স্ত্রী রাত চৌধুরী। ”
মিতালি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। শিশিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“এই শিশির তুমি বিয়ে করেছো?”
শিশির জাস্ট মুখটা ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো। মিতালি কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-“নাহ!আমি এটা বিশ্বাস করি না। শিশির শুধু আমায় ভালোবাসে। ”
বলেই ও শিশিরের গায়ে হাত দিতে যাবে এমন সময় রাত খপ করে হাতটা ধরে ফেললো। মিতালিকে টেনে কেবিনের বাহিরে নিয়ে যেতে যেতে পিছনে ফিরে বললো,
-“আপনি একটু রেস্ট নিন। আমি আসছি।”
শিশির রাতের গলা শুনে রাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। রাত মিতালিকে টেনে নিয়ে হাসপাতালের একদম খালি জায়গাটায় নিয়ে এলো।নুশানও পিছনে পিছনে এলো।মিতালি রাতের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলো। হাতটা লাল হয়ে গেছে। মিতালি রেগে বলতে লাগলো,
-“তুমি আমার সংসার ভাঙলে রাত!মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সংসার ভাঙতে বাঁধলো না?”
রাত ঠাস করে চড় মেরে দিলো মিতালির গালে। মিতালি গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে। নুশান রাতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আপু আপনার কিন্তু আমার ওয়াইফকে চড় মারার রাইট নাই।”
রাত নুশানের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
-“বাহ রে!আপনার ওয়াইফের আমার বরকে জড়িয়ে ধরার রাইট আছে বুঝি?”
মিতালি চেঁচিয়ে বললো,
-” ওটা তোমার বর নয়। আমি মানি না এই বিয়ে।”
রাত চোখ বড় বড় করে বললো,
-” আস্তে চেঁচান। এসব এখানে চলবে না। এটা হাসপাতাল।আর আপনার থেকে আমরা পারমিশন চেয়েছি যে আপনি মানেন কি মানেন না?আমাদের মধ্যে সব ঠিক তো আপনি কোথাকার কে?”
মিতালি কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-“আমার সায়ান কই? ওকেও কি নিজের করে রাখতে চাচ্ছো?”
রাতের বুক ধক করে উঠলো। সে সায়ানের ভাগ দিতে চায় না।কোনোমতে নিজেকে সামলে বললো,
-“আপনার সায়ান মানে?”
-“আমার ছেলে। আমার কলিজার টুকরা সায়ান।”
রাত তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
-” আমার ছেলের নামটা নিজের অপবিত্র মুখে ভুলেও আনবেন না।”
মিতালি রেগে বললো,
-” সায়ান আমার ছেলে। ওকে ১০ মাস গর্ভে রেখেছি আমি।কই ও?”
-” ও সেফ জায়গাতেই আছে। আপনার কাছে ও সেফ নয়।”
-” তুমি বেশি জানো? ও আমায় পেলে আর কারোর কাছে যাবে না।”
-“সেই আশা বাদ দেন।”(তাচ্ছিল্য হেসে)
-“মানে?”(ভ্রু কুঁচকে)
-“সায়ান আমার ছেলে। আর ও আমারি থাকবে। এখন যান তো। আমাদের আপনার সাথে কোনো সম্পর্ক নাই।কোন রাইটে এখানে দাড়িয়ে এসব করছেন?”
মিতালি দাঁড়িয়ে হাত কচলাতে শুরু করলো। রাগে চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে তার। নুশান মিতালি কে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“চলো মিতালি। কেন এসব করছো? তোমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। ”
মিতালি নুশানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।রাতের দিকে আঙুল তুলে বললো,
-“তোমাকে আমি দেখে নিবো রাত। তুমি আমার শিশিরকে কেড়ে নিছো। আমি আসবো আবার। অবশ্যই আসবো।”
রাত মিতালির আঙুলটা হাত দিয়ে নামিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো,
-” স্বপ্ন দেখা ভালো।”
মিতালি দাঁত কটমট করতে করতে চলে গেলো। রাত মুখ ভেংচি কেটে শিশিরের কেবিনের দিকে পা বাড়ালো।
রাত দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই চোখ খুললো শিশির। বারকয়েক চোখের পলক ফেলে বললো,
-“এতক্ষণে এলে।”
রাত মুখ টিপে হেসে বললো,
-“মিস করছিলেন নাকি?”
-“বাজে কথা।”
বলেই শিশির মুখ ঘুরিয়ে নিলো। সে যে রাতকে চোখে হারাচ্ছিলো সেটা কোনোমতেই বুঝতে দেয়া চলবে না। রাত শিশিরের হাতটা ধরে বললো,
-“মিতালিকে আপাতত একটা ছোট শাস্তি দিছি।”
-” কি শাস্তি?”(ভ্রু কুঁচকে)
-” একটা চড়।”
-” মাত্র!!”
-” তো কি। হাসপাতাল এটা।”
-“আজ এই অবস্থা বলে। নয়ত ওই চরিত্রহীনটাকে চড়াইতে চড়াইতে কি যে করতাম।”
বলেই শিশির রাগে ফুসফুস করতে লাগলো।রাত শিশিরকে থামিয়ে বললো,
-” হইছে এত হাইপার হতে হবে না। আমি দেখে নিবো। উনি নাকি আবার আসবেন। ব্লা ব্লা ব্লা।”
বলেই রাত মুখের বিভিন্ন ভঙ্গিমা করতে লাগলো। শিশির হো হো করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বললো,
-” ওহ রাত!তুমি পারোও।”
রাতও হাসলো। তারপর ভাব নিয়ে বললো,
-” নো টেনশন স্যার। যখন রাত ইজ হেয়ার সো নো ফেয়ার। মিতালির ছায়া আমি আমার পরিবারে পড়তে দিবো না। চৌধুরী কে নিজের পরিবার বানিয়েছি কি ন্যাকামোর জন্য নাকি?”
শিশির মুচকি হেসে বললো,
-” সুস্থ হই শুধু। মিতালির একটা ব্যবস্থা করছি।”
-” হু।”
-” আচ্ছা রাত?”
-” কি?”( প্রেসকিপশন দেখতে দেখতে)
-” গোসল করা যাবে?”
রাত প্রেসকিপশন রেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,
-” মানেহ? মাথা গেছে? একটু আগে আইসিউ থেকে বের হইছেন।”
শিশির জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
-“মিতালির ছোয়াটা ঘৃণা লাগছে। ও কেন ছুলো আমাকে? ওর শরীরে পরপুরুষের ছোঁয়া। যদিও এখন ওর হাসবেন্ড। কিন্তু তবুও।”
-“বুঝতে পেরেছি। কিন্তু গোসল করা যাবে না তো।”
-” হু।”(মন খারাপ করে)
রাত শয়তানি হেসে বললো,
-“বাট আই হেভ এন আইডিয়া। ”
-“যেমন?”
-” আমি তো পবিত্র নাকি?আমি জড়িয়ে ধরি?”
বলতে বলতে সে শিশিরকে জড়িয়ে ধরে ফেললো। শিশির অবাক হয়ে গেছে। রাত মিটমিটিয়ে হাসছে। শিশির কি বলবে বুঝতে পারছে না। রাত বুক থেকে মাথা তুলে বললো,
-” নাও ফিলিং বেটার?”
শিশির হাসি কন্ট্রোল করে বললো,
-” হু একটু একটু।”
রাত মুখ ফুলিয়ে ফেললো।।শিশির বাম হাতটা উঁচু করে রাতের গালটা টেনে দিলো।তারপর বললো,
-” কিউটিপাই।”
রাত হেসে ফেললো।তারপর শিশিরকে উদ্দ্যশ্য করে শয়তানি হেসে বললো,
-” জিতে গেলাম যে।”
-“কি?”(অবাক হয়ে)
-“প্রথম শর্ত।”
শিশিরের এতক্ষণে খেয়াল হলো। আসলেই তো। রাত প্রথম শর্ত জিতে গেছে।রাত দাত কেলিয়ে বললো,
-“আ’ম দা উইনার।”
শিশির আর কি বলবে। রাতের হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর বললো,
-” কনগ্রেস।”
-” হু হু।”(ভাব নিয়ে)
রাত শিশিরের মাথায় হাত দিয়ে ফোন বের করে সায়ানের খবর নিতে দাঁড়িয়ে পড়লো। এদিকে শিশির সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে,
-“রাত মেয়েটা আসলেই এত মায়াবী। এত স্নিগ্ধ। এর মুগ্ধতা ওর মধ্যে। মা ঠিকই বলেছিল। ওর মত মেয়ে হয় না। রাত ইজ দা বেস্ট মাদার এন্ড বেস্ট ওয়াইফ।”
চলবে….
(