#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_61
#Writer_NOVA
৪ দিন পর…….
দেখতে দেখতে দিন কেটে যাচ্ছে। আগামীকাল ভাইয়ার সাথে নূর আপির কাবিন (আকদ)। সকালে নূর আপির পরিবারের সবাই এখানে চলে এসেছে। সন্ধ্যার দিকে আম্মু,আব্বু, ইভা আসছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এমনি যে ভিড় থাকে। সেই ভিড় ঠেলে তারা যে আসতে পেরেছে এটাই অনেক বেশি। মগরিবের নামাজের কিছু সময় পর এনাজকে সোফায় বসে থাকতে দেখে ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো আমার। তার সাথে এনাম ভাইয়া, ইমরান হাশমি ভাইয়া সাথে আরো দুজন বয়স্ক লোক। তায়াং ভাইয়ার সাথে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে এনাজ। আমাকে দেখে বললো,
— আব্বু কোথায়?
— কার আব্বু?
— তোমার?
— রুমে আছে। কেন?
— তাকে ডাকো।
— কি কারণে?
— বলো আমি পাঁচজন নিয়ে চলে এসেছি।
— আমি তো চারজন দেখছি। এই দুজন কি আপনার আপন চাচা।
— না একজন আমাদের বাড়িওয়ালা। আরেকজন দালানের দারোয়ান। দুজনই আমার চাচার সমতুল্য।
— ওহ আচ্ছা।
বয়স্ক লোকদের দিকে তাকিয়ে বড় করে সালাম দিলাম। উনারা মিষ্টি হেসে সালামের উত্তর দিলো।ইমরান হাশমি ভাইয়া, এনাম ভাইয়ার সাথে কুশলাদি বিনিময় করলাম। তায়াং ভাইয়া আমাকে তাড়া দিয়ে বললো,
— খালুকে ডেকে নিয়ে আয়।
— যাচ্ছি।
— আর শোন, বাসার সবাইকে ডেকে আনিস। এমনকি তন্বীকেও।
— ওকে।
আমি আব্বু,আম্মু, খালামণি,তন্বী, মামী, নূর আপি দাদী মোট কথা বাসার সবাইকে ডেকে নিয়ে এলাম। আব্বু গম্ভীর মুখে তাদের অপজিটের সোফায় বসলো। হাসিমুখে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— নোভা যাও আমাদের সবার জন্য চা করে নিয়ে আসো।
আমি মাথা হেলিয়ে সম্মতিতে প্রকাশ করে সেখান থেকে কিচেনে চলে এলাম। আমার সাথে নূর আপি, ইভাও চলে এলো। ইভাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
— ইভু, চুলোয় চায়ের পানি বসা তো।
ইভা কোন দ্বিধা না করে পাতিলে পানি নিয়ে চুলোয় বসালো। আমি নূর আপিকে বললাম,
— ও নূর আপি, আমার না ভীষণ ভয় করছে। আব্বু যদি এনাজকে রিজেক্ট করে দেয়? তাহলে কি হবে বলো তো? আমি কখনো বাসা থেকে পালাবো না। এমনি একবার যে মান-সম্মান খুইয়েছি। এখন আর আম্মু-আব্বুকে কষ্ট দিতে পারবো না।
নূর আপি আমার দুই হাত ধরে আস্বস্ত গলায় বললো,
— চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
— তুমি চিন্তা করতে মানা করছো? আর এদিকে আমার হাত-পা কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। হৃৎপিণ্ডটা অনরবরত লাফালাফি করছে।আমার ভীষণ ভয় করছে। আব্বুর মুখ দেখে কিছুই বুঝতে পারছি না।
— খামোখা টেনশন না করে আল্লাহকে ডাক।
— তুমি জানো আমি গত দুইদিন ধরে তাহাজ্জুদের নামাজ পরি। আল্লাহর কাছে মোনাজাত করে বলি সব যেন ঠিক হয়। এখন আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করলেই হলো।
— তুই শান্ত হো।
— আমি শান্ত হতে পারবো না। আমার অস্থির অস্থির লাগছে।
নূর আপি আমাকে টুলে বসিয়ে দিলো। নানাভাবে সান্ত্বনা দিচ্ছে। কিন্তু আমার মন তা মানতে নারাজ। সে এখন আজগুবি চিন্তাভাবনা করছে। যার দরুন ভয়ে আমার হাত-পা জমে যাচ্ছে। চায়ের ট্রে নিয়ে তাদের সামনে গেলাম। হাত আমার ঠকঠক করে কাঁপছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি ট্রে পরে গিয়ে সব ভেঙেচুরে গেলো। কোনরকম তাদের সামনে গিয়ে টি-টেবিলে ট্রে রেখে কিছুটা দূরে দাঁড়ালাম। আব্বু সবাইকে চা সার্ভ করে দিলো। এনাজ কুচোমুচো করে বললো,
— আঙ্কেল আমি আপনার কথা মতো আমি পাঁচজন নিয়ে হাজির হয়েছি।
আব্বু সবার দিকে চোখ বুলিয়ে কপালে ভাজ ফেলে আমার মতো প্রশ্ন করে বললো,
— আমি তো চারজন দেখছি।
— কিন্তু আমি সাতজন দেখছি আঙ্কেল।
— কিভাবে?
— আগে চা শেষ করুন তারপর বলছি।
সবাই আস্তেধীরে চা শেষ করলো। আমি তন্বীর এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে ভয়ার্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছি। তন্বী আমার হাত ধরে আস্বস্ত দিয়ে বললো,
— তুমি ভয় পেয়ো না তো নোভাপু। এনাজ ভাইয়া দেখবে সব সামলে নিয়েছে। তাছাড়া আমাদের ভাইয়া তো আছেই।
— তবুও ভয় করছে তন্বী।
আমাদের ফিসফিস করে কথা বলার মাঝে আব্বু চায়ের কাপ ট্রে তে রেখে এনাজের দিকে তাকিয়ে বললো,
— এবার বলো।
এনাজ একটু নড়েচড়ে বসে নার্ভাস কন্ঠে বললো,
— আঙ্কেল, আপনি পাঁচজন নিয়ে আসতে বলেছেন যাতে আপনার মেয়েকে সিকিউরিটির সাথে আমার হাতে তুলে দিতে পারেন। আমি যদি আমার ফ্যামেলির পাঁচজন আনতাম তাহলে তাদের থেকে আমার বিষয় খোঁজ নিয়ে বিবেচনা করতেন আমি আপনার মেয়ের উপযুক্ত নাকি অনুপযুক্ত। বিয়েটা কিন্তু তাদের কারোর সাথে হতো না। বরং আমার সাথেই হতো। তারা বিয়ে অব্দি থাকবে তারপর যে যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে যাবে। আপনার মেয়ে কিন্তু সংসার করবে আমার সাথেই। এরপর আমার কোন আত্মীয়ের খবর থাকবে না। আপনারাও তাদের খবর নিবেন না। তাই আমি আমার পরিবার হিসেবে এমন পাঁচজনকে এনেছি যারা আমাকে একেবারে ছোট বেলা থেকে না জানলেও কিশোর বয়স থেকে চিনে। তাদের জিজ্ঞেস করে দেখবেন আমি কীরকম?
আব্বু,আম্মু, মামা-মামী, খালামণির ভ্রু কুঁচকে গেছে। আম্মু জিজ্ঞেস করলো,
— তুমি যদি একটু খুলে বলতে তাহলে সবকিছু বুঝতে সুবিধা হতো বাবা।
— জ্বি আন্টি বলছি। উনি আমাদের বাড়িওয়ালা চাচা, সেই ১৬ বছর বয়সে যখন তার থেকে ফ্ল্যাট কিনেছিলাম তখন থেকে সে আমায় চিনে। আজ অব্দি তার সাথে কোন বেয়াদবি করিনি। সে কখনও আমাকে নিয়ে নালিশ করেনি। আসলে আমি নালিশ করার কোন উপায় রাখিনি করবে কি করে!ইনি আমাদের দারোয়ান চাচা। আমি ফ্ল্যাটে ওঠার তিন বছর আগের থেকে সেই দালানের পাহারাদার হিসেবে কাজ করে। উনি বলতে পারবে আজ অব্দি কখনও অনিয়ম করে কিংবা তার কাজের ব্যাঘাত ঘটাতে পেরেছে কিনা। আমি স্বভাবতই সুশৃঙ্খল থাকতে পছন্দ করি। এরা দুজন হলো আমার ভাই,বন্ধু এনাম ও ইমরান। আমি ওদের দুজনের বিষয় কিছু বলতে চাইছি না। কারণ ওরা আমার ভাই, বন্ধু। ওরা কিছু বললে আপনি ভাবতে পারেন আমার পক্ষে সব বলবে। তাই ওরা বাদ।
💖💖💖
এনাজ একটু থামলো। আব্বু মুখে গম্ভীরতা রেখে বললো,
— সবেমাত্র দুইজন হলো। আরো তিনজন কে?
এনাজ সোফা থেকে উঠে খালামণি,তন্বী, তায়াং-কে সামনে এগিয়ে এনে বললো,
— আর বাকি তিনজন হলো এই তিনজন। প্রথমে আসা যাক আন্টির কথায়।উনি আমাকে ও তার ছেলেকে কখনো আলাদা চোখে দেখেনি। সেই ক্লাশ নাইনে যখন নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছি তখন থেকে তায়াং-এর সাথে আমার বন্ধুত্ব। আন্টিকে তখন থেকেই চিনি। উনি আমার মায়ের মতো নয় বরং নিজের মা। আমার মা মরে গিয়ে বোধহয় তাকেই পাঠিয়ে দিয়েছে। উনি আজ অব্দি বাসায় ভালো কিছু রান্না করলে আমায় ছাড়া খাননি। আমি অসুস্থ হলে তার মুখও আমি শুকনো দেখেছি। লাস্ট যেবার জ্বর এসেছিলো সেবার নিজে আমাকে সেবা করে সুস্থ করে তুলছে। সত্যি আমার মতো পোড়া কপালের ছেলের জন্য এটা অনেক বড় পাওয়া। আমি নিজের মায়ের প্রতিচ্ছবি তার মাঝে খুঁজে পাই।
খালামণির চোখ দিয়ে পানি পরছে। এনাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। এনাজও নিজের চোখের পানি মুছে বললো,
— এই তন্বীকে তো আপনি চিনেন ছোট বেলা থেকে। ওকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন আমি কিরকম! আজ অব্দি ওর সাথে আমি কোন মিস বিহেভ করেছি কিনা। আমি ওকে নিজের বোনের চোখে দেখি। ও আমাকে ভাইয়ের মধ্যে শ্রদ্ধা করে। ওর ভাইয়ের পর আমি ওকে খেয়াল রেখেছি নিজের বোন মনে করে। সবার শেষে এই তায়াং। যাকে আপনারা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেন। সে কিন্তু শুধু আমার বন্ধু নয়। বরং আমার আরেক ভাই। আমার বিপদে যে সবার আগে ঝাপিয়ে পরে। ও কখনো আমার কাছে মিথ্যে বলে না। আমি সত্যি গর্বিত ওর মতো একটা ভাই পেয়ে। ওকে জিজ্ঞেস করুন আমি আপনার মেয়েকে ঠিক কতটা ভালোবাসি! ওর জন্য কতশত পাগলামি করেছি। তার সাক্ষ্যি একমাত্র তায়াং। ও আপনাদের মিথ্যে বলবে না। ওর থেকে ভালো আমাকে কেউ জানে না, চিনে না। এমনকি আমি নিজেও না। যা সত্যি তাই স্বীকার করবে। আঙ্কেল আমি পাঁচজন হাজির করেছি। এবার এই পাঁচজনের থেকে আপনাদের যা জিজ্ঞেস করার তা করে নিন। এরপর যদি এদের কথায় আপনি সন্তুষ্ট হতে না পারেন তাহলে আমার বিষয়ে খোঁজ নিন। তারপর না হয় আপনার মেয়েটা আমার হাতে তুলে দিবেন।
এনাজ কথা শেষ করে চাতক পাখির মতো আব্বুর মুখ পানে তাকিয়ে রইলো উত্তরের আশায়। আব্বু কিছু সময় চুপ থেকে বললো,
— তোমার বুদ্ধির তারিফ করতে হয় এনাজ। তুমি সত্যিই বুদ্ধিমান ছেলে। তুমি চাইলে ধূর্ত কিংবা কুটিলতার সাহায্য নিতে পারতে। কিন্তু তুমি তা করোনি। এই বিষয়টা আমাকে মুগ্ধ করেছে। কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার দরকার নেই আমার। তোমার মুখের কথা বিশ্বাস করলাম আমি। তবুও এখানে কিন্তু একটা রয়ে যায়। সেটা হলো সিকিউরিটি।
তায়াং ভাইয়া বললো,
— খালু, আজকাল কোন বিষয়ে সিকিউরিটি দিতে পারবো আমরা বলুন তো। যেখানে মৃত্যুরই এক সেকেন্ডের ভরসা নেই সেখানে অন্য কিছুর সিকিউরিটি খোঁজা বোকামি নয়তো কি? সারা গ্রাম, চৌদ্দ গুষ্টির আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বিয়েটাও তো বছর ঘুরতেই ভেঙে যায়। সেখানে তো পরিবার ছিলো,আত্মীয়-স্বজন ছিলো। তাহলে কেন ভেঙে গেলো বলুন তো? বিয়ে একটা প্রবিত্র বন্ধন। এখানে দুটো মনের মিলন। দুজন যদি মিলেমিশে তাদের সংসার পরিচালনা করে তাহলে তো কোন সিকিউরিটির প্রয়োজন নেই। তবু্ও যদি আপনি সিকিউরিটি চান তাহলে সেই রিস্ক আমি। আমাকে তো বিশ্বাস করেন আপনি তাই না? অবশ্যই করেন। নয়তো নোভাকে এখানে আমার ভরসায় পড়াতে পাঠাতেন না। আমি আপনার বিশ্বাস কিন্তু রাখতে পেরেছি। ও এখনও আমার ভরসায় এখানে আছে। আপনারাও নিশ্চিন্তে আছেন। এবার তাহলে আরেকবার ভরসা করুন। আমার ভরসায় নোভাকে এনাজের হাতে তুলে দিন। নোভার পুরো সিকিউরিটি আমি দিবো। যদি আমার বোনের কোনরকম সমস্যা হয় তাহলে পরবর্তীতে সকল রেসপন্সিবিলিটি আমার।আমার বিশ্বাস নোভা, এনাজের সাথে অবশ্যই ভালো থাকবে। কারণ এনাজ ওকে রাণী করে রাখবে। আমার থেকে ভালো এনাজকে কেউ চিনে না। তারপরেও যদি আপনার ভয় থাকে তাহলে রিস্ক আমি নিবো। ওর কিছু হলে আমাকে ধরবেন। ওদের বিয়ের দায়বদ্ধতা আমি নিজে।
আমি ওদের দুজনের বন্ধুত্ব দেখে সত্যি এবার মুগ্ধ হলাম। এমন বন্ধুত্ব খুব কম দেখা যায়। একে অপরের বিপদে কিরকম প্রধান ভুমিকা রাখছে। এবার কি আব্বু মেনে নিবে নাকি মানা করে দিবে? সেই টেনশন জেঁকে ধরলো। আব্বু ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
— আমাকে একটু সময় দাও। আমি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিবো।
এনাজ খুশিমনে বললো,
— আপনি যতখুশি সময় নেন আঙ্কেল। আমার কোন সমস্যা নেই। তবে শেষে উত্তরটা যেন হ্যাঁ হয়। নয়তো আমি শেষ।
আব্বু মাথা ঝাকিয়ে ধীর পায়ে রুমে চলে গেল। সাথে আম্মুকেও ডাকলো। একে একে সবাই চলে গেল। ড্রয়িংরুমে আমরা কয়েকজন মাত্র। এনাজ এগিয়ে এসে তায়াং ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো
— এত বিশ্বাস করিস আমাকে? এখন মনে হচ্ছে এই পর্যন্ত পৃথিবীর ভালো কাজের মধ্যে একটা ভালো কাজ ছিলো আমার তোর সাথে বন্ধুত্ব করা।
ভাইয়া ওর পিঠে চাপর মেরে বললো,
— আমার বিশ্বাস আছে আমার বন্ধু কখনও আমায় নিরাশ করবে না। তোর থেকে ভালো কেয়ার আমার বোনকে আর কেউ করতে পারবে না। জানি নিরাশ করবি না তারপরও যদি বাই চান্স করিস তাহলে তোকে পিটিয়ে হসপিটালে ভর্তি করবো।
ইমরান ভাইয়া মুখটা গোমরা করে বললো
— হু ভালো তো😒। তোরাই কোলাকুলি কর। আমি তো বানের জলে ভেসে আসছি।
তায়াং ভাইয়া ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
— দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এদিকে আয় শালা।
ইমরান ভাইয়া এগিয়ে আসতেই তিনজন একে অপরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তাদের বন্ধুত্বের পালা শেষ করে এনাজ আমার সামনে এসে বললো,
— আরেকটু অপেক্ষা করো। তোমাকে বউ সাজিয়ে ঘরে তুলবো।
আমি মুচকি হাসলাম। তবে তার কথার কোন উত্তর দিলাম না। মুখে হাসি থাকলেও ভেতরে ভেতরে আমি এখনো ভয় পাচ্ছি। যদি তীরে এসে তরী ডুবে। তাহলে কি হবে আমাদের? সেই ভয় ঘিরে ফেলেছে আমাকে।এবার আল্লাহ, আল্লাহ করে আব্বু রাজী হলেই চলে।
#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Extra_Part
#Writer_NOVA
— বলো মা, আলহামদুলিল্লাহ কবুল!
কাজী নূর আপিকে কবুল বলতে বলছে। কিন্তু নূর আপি মাথা নিচু করে কখন থেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আমার মনে হচ্ছে সে বোধহয় এক ঘন্টা লাগিয়ে কবুল বলবে। মনে মনে এমন পণ করে রেখেছে।ভাইয়া তো একদমে তিনবারের জায়গায় পাঁচবার কবুল বলে ফেলেছে। ওর বলার স্প্রীড দেখে কিছু সময় আগে সারা বাসায় হাসির রোল পরে গেছে। এখন সবাই কবুল বলার জন্য আপিকে খোঁচাখোঁচি শুরু করছে। কিন্তু সে মাথাও উঠাচ্ছে না, কবুলও বলছে না। কাজী সাহেব আবারো তাড়া দিয়ে বললেন,
— কি হলো মা বলো, আলহামদুলিল্লাহ কবুল?
এনাজ নিচুস্বরে সবার দিকে তাকিয়ে বললো,
— আমি দেখছি।
ভাইয়ার পাশ থেকে উঠে আপির সামনে এলো। আমি আপির পাশ থেকে সরে গিয়ে তাকে বসার জায়গা করে দিলাম। তায়াং ভাইয়ার মুখ শুকিয়ে একটুখানি হয়ে আছে। মনে মনে নিশ্চয়ই দোয়াদরুদ পড়ছে। যাতে নূর আপি দ্রুত কবুল বলে রেজিস্ট্রি পেপারে সিগনেচার করে তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে নেয়।বেচারার আর তর সইছে না। এনাজ নূর আপির পাশে বসে ফিসফিস করে কানের কাছে মুখ নিয়ে কি জানি বললো। মুহুর্তেই নূর আপি কান্না থামিয়ে ফিক করে হেসে উঠলো। দেরী না করে ধীরে ধীরে তিনবার কবুল বললো। কাজী সাহেব রেজিস্ট্রি পেপার এগিয়ে দিতেই সাইন করে দিলো দুজনেই। তারপর তাদের নতুন জীবনের জন্য সবাই মোনাজাত ধরলো। মোনাজাত শেষ হতেই মিষ্টি খাওয়ার ধুম পরে গেলো। আমি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখতে লাগলাম।
— এই নোভাপু, কি হয়েছে তোমার?
— কিছু না রে তন্বী।
— কিছু তো একটা হয়েছে।
— সত্যি কিছু হয়নি।
— তাহলে ভাইয়াকে মিষ্টি খাইয়ে দিতে গেলে না কেন?
— ঐখানে ভাইয়ার সব বন্ধুরা আছে। তাই যেতে ইচ্ছে হলো না।
— চলো নূর আপির সাথে ছবি তুলি।
— তোরা তুলতে থাক। আমি পরে তুলে নিবো।
— কালকের রাত থেকে তোমাকে অনেক মনমরা লাগছে। কি হয়েছে তোমার?
— এমনি ভালো লাগছে না।
— তুমি এনাজ ভাইয়াকে নিয়ে অনেক টেনশনে আছো তাইনা? আমি জানি।
— ছাড় তো এসব কথা।
— আমি জানি তো এই কারণে আপসেট তুমি। ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে কতশত প্ল্যান ছিলো তোমার। অথচ আজ তোমার কোন আগ্রহই দেখতে পাচ্ছি না আমি।
— অনেক বেশি আশা করেছিলাম তো তাই সব ভেঙে গেছে। যাকগে, মন খারাপ করিস না। অনুষ্ঠান করে যখন আপিকে তুলে নিয়ে আসবে তখন সব উসুল করে নিবো।
আমি কিছুটা জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে কথাগুলো বললাম। তন্বী আমার মুখের দিকে তাকিয়ে নিরাশ কন্ঠে বললো,
— অন্যদিনের থেকে তোমার হাসিটা আজ এতো মলিন কেন লাগলো বলো তো?
আমি তন্বীর কথার উত্তর দিলাম না। কথা ঘুরানোর জন্য মুখে কৃত্রিম হাসিটা ঝুলিয়ে রেখেই বললাম,
— জানিস তন্বী, মেয়েদের সবচাইতে বড় প্যারার মধ্যে একটা হলো বিয়ের প্যারা। এই প্যারা যখন তোর মাথায় আসবে তখন তুই হাজার চেষ্টা করলেও স্বাভাবিক থাকতে পারবি না। মাথায় শতশত টেনশন এসে ঘিরে ধরবে। কোনকিছু ভালো লাগবে না। এখনো এই প্যারায় পরিসনি তো তাই বুঝিস না।
— হুম বুঝলাম। তুমি এখন আমার সাথে চলো।
— কোথায়?
— আমরা একসাথে ছবি তুলবো।
— আমি তুলবো না।
— আমি কোন কথা শুনছি না।
তন্বী টেনে নিয়ে নূর আপির পাশে বসালো। শ-খানিক ছবি তুলে তবেই ছাড়লো। চুপচাপ বসে রয়েছি। এনাজের সাথে একটা কথাও হয়নি। গতকাল রাত থেকে কেমন জানি অশান্তি লাগছে। কোনকিছুই ভালো লাগছে না। নয়তো ভাইয়ার বিয়ের আনন্দে সারা বাড়ি আমি একাই তুলে ফেলতাম। অথচ আমারি আজ সবকিছু বিরক্ত লাগছে। বাসাভর্তি মানুষ। কোথাও যে একটু নিরিবিলি থাকবো তারও উপায় নেই। রাত হয়ে গেছে নয়তো ছাদে যাওয়া যেতো। মাথায় হাত দিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে সবার আনন্দ দেখছিলাম। এত হৈ-হুল্লোড়ে অলরেডি মাথা ধরে গেছে। পাশে তাকাতে দেখি ইফাত দাঁড়িয়ে। আমার দিকে মাথাব্যথার বাম বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
— তোমার মাথাব্যাথা করছে তাই না? নাও এটা কপালে লাগিয়ে নাও।
— কি এটা?
— মাথাব্যাথার বাম।
— সেটা তো জানি। আমি জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম কে পাঠিয়েছে? তার বদলে বলে ফেলেছি কি এটা🤦♀️।
— ভাইয়া পাঠিয়েছে।
— কোন ভাইয়া?
— ঐযে তায়াং ভাইয়ার সাথে প্রায় যে ভাইয়া আসে।
— এনাজ!
— হ্যাঁ, হ্যাঁ ঐ ভাইয়াই।
— আচ্ছা।
ইফাত দৌড়ে তায়াং ভাইয়ার বন্ধুদের ঐখানে চলে গেলো। আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে এনাজকে খুঁজলাম। একসময় পেয়েও গেলাম। মোবাইলে কারো সাথে কথা বলছে। আমার সাথে চোখাচোখি হতেই হাত দিয়ে ইশারা করলো। প্রথমে কিছু বুঝলাম না। আরেকবার ইশারা করতেই বুঝলাম কপালে বাম দিতে বলছে। আমার মাথাব্যথা করছে সেটাও সে খেয়াল করে ফেলছে। তাই বাম পাঠিয়ে দিয়েছে। মনটা কিছুটা ভালো হলো। শাহেদ ভাইয়া এনাজকে ডাকতেই তায়াং ভাইয়ার রুমে চলে গেলো। আমি সেদিক থেকে ফাঁক বুঝে আমাদের রুমের বারান্দায় গিয়ে চুপ করে বসে রইলাম।
💖💖💖
গ্রীলে হেলান দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছি। কিছুই ভালো লাগছে না। ইচ্ছে করছে হাত-পা ছড়িয়ে জোরে জোরে কাঁদতে। তাহলে হয়তো মনটা একটু ভালো হতো। কিন্তু সেই সুযোগও নেই। মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলাম। তাকিয়ে দেখি তায়াং ভাইয়া শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। ভাইয়া কিছুটা ধমক মিশ্রিত কন্ঠে বললো,
— আমার বিয়ের আনন্দ মাটি করে এখন হাসছিস?
— কোথায় তোর বিয়ের আনন্দ মাটি হলো?
— তোর কোন চঞ্চলতা আমি আজ দেখলাম না। সকাল থেকে মন খারাপ করে রেখেছিস। তোকে এভাবে দেখলে কি আমার ভালো লাগে বল?
আমি ওর কথার উত্তর না দিয়ে এক হাত উঠিয়ে মুরব্বিদের মতো করে বললাম,
— তোর নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা ভাইয়া। দোয়া করি তুই ও নূর আপি ইহকাল ও পরকালে একসাথে যেন থাকতে পারিস। আমার দোয়া সবসময় তোর সাথে থাকবে😁।
— আমার কথার উত্তর দে।
— আমি চঞ্চল থাকলেও তোদের সমস্যা, আমি চুপচাপ থাকলেও তোদের সমস্যা।বল তো আমি যাবো কোথায়? চঞ্চল থাকলে বলিস বেশি বাড়াবাড়ি করছি, বাচাল, বেশি বুঝি কতকি! আবার নীরব থাকলে বলবি চুপ করে কেন থাকি! আমি থাকবো কিভাবে তা কি তোরা আমায় বলবি?
— এনাজের বিষয় নিয়ে তুই অনেক চিন্তিত আমি জানি। কিন্তু তোকে এভাবে আমার ভালো লাগছে না। তুই নিশ্চিন্তে থাক আমি থাকতে তোদের কেউ আলাদা করতে পারবে না। সব ঠিক করে দিবো আমি।
— তোকে সবাই খুঁজবে। চলে যা। আমার ভালো লাগছে না। আমাকে একটু একা থাকতে দে।
— কিন্তু আমার….
ভাইয়ার কথা শেষ হওয়ার আগে ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
— কোন কথা নয়। প্লিজ, আমাকে একটু একা থাকতে দে। আমার কিছু ভালো লাগছে না।
ভাইয়া যেভাবে নিঃশব্দে এসেছিলো সেভাবে চলে গেলো। আমি দূর আকাশে থাকা ঝলমল করা তারকারাজিদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। কতখন সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম খেয়াল নেই। ধ্যান ভাঙলো ইভার ডাকে।
— বোইনে!
— হুম বল।
— আব্বু তোমাকে ডাকে।
— কেন?
— জানি না। আমাকে বললো, “বড়কে ডেকে দিস।” আর কিছু বলেনি।
— আচ্ছা, তুই যা আমি আসছি।
ইভা চলে যেতেই আমিও উঠে আব্বুর কাছে চলে এলাম। দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বললাম,
— আব্বু ডেকেছিলে?
আব্বু গম্ভীর মুখে বললো,
— হুম, খাটে বসো।
আমি চুপচাপ খাটে বসতেই তায়াং ভাইয়াকে সামনে দেখতে পেলাম। ইশারা করে কারণ জিজ্ঞেস করতেই তায়াং ভাইয়াও ইশারায় বললো সে কিছু জানে না। আব্বু তায়াং ভাইয়ার দিকে ঘুরে বললো,
— এনাজকে বিয়ের ব্যবস্থা করতে বলো। আমি এই বিয়েতে রাজী আছি।
আমি ও তায়াং ভাইয়া দুজন দুজনের দিকে বিস্মিত চোখে তাকালাম।তারপর দুজনে অবিশ্বাস্য চাহনিতে আব্বুর দিকে তাকালাম। আমরা দুজনের কেউ এই খবরটা পাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। খুশিতে চোখ দুটো চকচক করে উঠলো। মুহুর্তেই মনের আকাশে রাতের আঁধারের মধ্যে থাকা ঘন কালো মেঘ কেটে গিয়ে চাঁদের আলো দেখা দিলো। তায়াং ভাইয়া খুশিমনে জিজ্ঞেস করলো,
— আপনি সত্যি বলছেন তো খালু? আমার সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে স্বপ্নে দেখছি।
— তুমি ঠিকই শুনেছো তায়াং। আমার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে, তোমার ওপর ভরসা করে আমি এনাজের সাথে নোভার বিয়েটা দিতে চাইছি।তোমার কথা বিশ্বাস করেই অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম। এনাজকে আমারও পছন্দ ছিলো। আমি ওর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যি মুগ্ধ। ওর মতো ছেলের কাছে যদি আমার মেয়েকে বিয়ে না দেই তাহলে হয়তো আমাকে সারাজীবন আফসোস করতে হবে। এতটুকু ভালোই বুঝেছি আমি। তাই দেরী না করে ঝটপট রাজী হয়ে গেলাম। গতকাল এনাজের বুদ্ধি ও সহজ সরল স্বীকারক্তি আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। ওর প্রতি ভালো লাগাটা আরেকধাপ বেড়ে গেছে। তাই আমি চাই দুই সপ্তাহের মধ্যে ওদের চার হাত এক করে দিতে।
আমার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে ঘুম ভেঙে গেলেই সব শেষ হয়ে যাবে। হাতে একটা চিমটি কেটে পরখ করে দেখলাম বাস্তবেই আছি। ভাইয়া খুশিতে আত্মহারা। ওকে এতো খুশি আমি একটু আগে বিয়ের আসরেও দেখিনি। যতটা এখন দেখাচ্ছে। ভাইয়া বললো,
— আমি এনাজকে নিয়ে আসছি।
ভাইয়া দ্রুত বের হয়ে গেলো। আমি দৌড়ে গিয়ে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
— এত্তগুলা ভালোবাসা তোমাকে আব্বু। আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। তুমি আমার পৃথিবীর সেরা আব্বু।
— ওরে পাগলী মেয়ে। দেখ তো এই কয়দিনে চেহারার কি হাল করেছিস? তোর অবস্থা দেখে তো আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
— চিন্তা করো না তুমি। এখন সব ঠিক হয়ে যাবে।
—আমি চিন্তা না করলে কে করবে?
—এখন আর করো না। আমি পুরো ঠিক আছি।
— শোন মা-মণি। সবসময় একটা কথা মনে রাখবি, যে তোকে খুব সহজে পেয়ে যাবে সে কখনও তোর মূল্য বুঝবে না। কিন্তু যে তোকে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পাবে সে তোর মূল্য দিবে। রোশান তোকে খুব সহজে পেয়েছে বলে তোর মূল্য দেইনি। এখন যদি এনাজও খুব সহজে পেতো তাহলে তোকে দূরে ঠেলে দিবে না তার গ্যারান্টি কি বলো তো? তাই আমি ইচ্ছে করে এতকিছু করেছি। যাতে এনাজ তোর মূল্য বুঝে।এছাড়া এসব এনাজের জন্য পরীক্ষা ছিলো। তাতে ও পাস করেছে। এখন পুরষ্কার হিসেবে তো আমার মেয়েকে ওর হাতে তুলে দিতেই হয়। এনাজকে আমার প্রথম থেকে পছন্দ ছিলো। সেবার তুই জ্বর বাঁধিয়ে হসপিটালে থাকা অবস্থায় আমি খুব কাছ থেকে ওকে দেখেছি। তোর প্রতি ওর কেয়ার, চিন্তিত হওয়া সবকিছুই দেখেছি আমি।তখুনি আমার ওকে ভালো লাগে। আমি সবদিক বিবেচনা করে ওকে তোর জন্য পছন্দ করেছি মা। আমি দোয়া করি তোরা সারাজীবন যেন সুখী হোস। আমার আর কোনকিছু চাওয়া নেই। আমার ওপর রাগ করিস না। বাবা হিসেবে মেয়ের সুখের জন্য এতটুকু তো করতেই হয় আমাকে। তাই এতটা কঠোর হয়েছিলাম।
— কোন সমস্যা নেই আব্বু। তুমি মেনে নিছো তাতেই আমি খুশি। আর কোনকিছু লাগবে না আমার।
— পাগলী মেয়ে আমার।
💖💖💖
— আঙ্কেল আমি যা শুনেছি তা কি সত্যি?
এনাজ দৌড়ে রুমে ঢুকে অবিশ্বাস্য কন্ঠে আব্বুকে কথাটা বললো। আমি আব্বুকে ছেড়ে দাঁড়ালাম। আব্বু মুচকি হেসে আস্বস্ত গলায় বললো,
— হ্যাঁ, ১০০% সত্যি।
— থ্যাংকিউ আঙ্কেল। আমি বোধহয় এখন খুশিতে পাগল হয়ে যাবো।
এগিয়ে এসে আব্বুকে সালাম করতে গেলে আব্বু এনাজের হাত ধরে বললো,
— আরে করছোটা কি? পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে হয় না,এটা গুনাহ। এটা কখনো করবে না।
এনাজ অপরাধী ভঙ্গিতে মাথা চুলকে বললো,
— এটা তো আমি জানি। কিন্তু খুশিতে মাথা ঠিক নেই। আপনি যদি কিছু মনে না করেন আমি আপনাকে একবার জড়িয়ে ধরতে পারি?
— নিশ্চয়ই।
আব্বু অনুমতি দিতে দেরী এনাজের জড়িয়ে ধরতে দেরী নয়। আমি ও তায়াং ভাইয়া তাদের দিকে খুশিমনে তাকিয়ে আছি।এনাজ কিছু সময় পর আব্বুকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
— আপনি আমাকে বিশ্বাস করে আপনার কলিজার টুকরোকে আমার হাতে তুলে দিচ্ছেন। আমি সর্বদা চেষ্টা করবো ওকে রাণী করে রাখতে। কখনো ওকে কষ্ট করতে দিবো না।
— ও একটু বেশি অভিমানী ও পাগলী মেয়ে। ওকে একটু বেশি আগলে রেখো।
— আপনি কোন চিন্তা করবেন না। ওর সব দায়িত্ব এখন থেকে আমার।
— বিয়েটা দুই সপ্তাহ পর হলে কি তোমার কোন সমস্যা হবে এনাজ?
— না না আঙ্কেল। আমার কোন সমস্যা হবে না।
— আমার বড় মেয়ের বিয়ে তো। তাই একটু বড় করে অনুষ্ঠান করে দিতে চাইছি। তাতে কি তোমার কোন আপত্তি আছে?
— একটুও নেই। আপনি যা ভালো মনে করেন তাই করেন। নোভা শুধু আমার হলেই হবে।
আব্বু মুচকি হেসে বললো,
— আচ্ছা বিয়ের ডেট নিয়ে সবাই একসাথে বসে ফিক্স করে নিবো। তোমার ছোট ভাইকেও তখন থাকতে বলো।
তায়াং ভাইয়া বললো,
— হ্যাঁ তাই ভালো হবে খালু।
— আমি তাহলে নোভার আম্মুকে সবকিছু বলে আসি।
— আচ্ছা যান খালু।
আব্বু বেরিয়ে গেলো। তায়াং ভাইয়া আমাদের সামনে এসে বললো,
— বলেছিলাম না সব ঠিক হয়ে যাবে। এবার বিশ্বাস হয়েছে তো? এবার দয়া করে তোদের মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে রাখিস না।সেটা দেখতে আমার ভালো লাগে না। তোরা থাক, আমি আসছি। ঐদিকে বোধহয় আমাকে খোজাখুজি শুরু করে দিয়েছে। সবাইকে গিয়ে সুখবরটাও তো দিতে হবে।
তায়াং ভাইয়া এনাজের বাহুতে দুটো চাপর মেরে চলে গেলো। এনাজ এগিয়ে এসে আমার দুই হাত তার দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো। তারপর মুখে খুশি ভাব রেখে বললো,
— বিশ্বাস করো টিডি পোকা, তায়াং যখন বললো তোমার আব্বু আমাদের মেনে নিয়েছে তখন এক মিনিটের জন্য আমি স্তব্ধ হয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছিলো আমি ভুল শুনেছি। তায়াং-কে আবার জিজ্ঞেস করে সিউর হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিয়েছি। আমার এখনো মনে হচ্ছে সবকিছু স্বপ্ন।
— আমারও প্রথম মনে হয়েছিলো এনজিও সংস্থা। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা অবশেষে সফল হলাম। আমার প্রতিমুহূর্তে মনে হয়েছিলো আব্বু বোধহয় আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিবে না। কিন্তু আমাকে ভুল প্রামাণিত করে আব্বু রাজী হয়ে গেলো।
এনাজ হাত ছেড়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললো,
— আর কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে তোমাকে আপন করে পেতে। এই কয়টা দিনও আমার সবুর হচ্ছে না।
— সবুরে মাওয়া ফলে।কি এবার বিশ্বাস হলো তো?
— জ্বি আমার টিডি পোকা।
সে আরেকটু শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি খুশিমনে তার পিঠে আলতো করে হাত রাখলাম। তার বুকের বা পাশের থাকা হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। নিশ্চয়ই আমার নাম নিচ্ছে।আমার নামই নিতে হবে। না নিলে কি তাকে আস্ত রাখবো নাকি, হুহ😒।
#চলবে
#