শুধু তুই পর্ব ৪+৫

#শুধু তুই
#পর্বঃ৪
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুলির দিকে।

“যাহ বাবা আমি কি করলাম? জাস্ট টাকা চাইলাম তাতেই এতো রেগে গেলো। মনে হয় টাকা নাই কাছে তাই রেগে গেছে।
বিরবির করে বলছে তুলি।
ধীর পায়ে সায়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে সায়ানের কানে ফিসফিস করে বলে

” আপনার কাছে টাকা নাই বলে রেগে যাচ্ছেন? বেপার না আমি আংকেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসছি

তুলি এবার লম্বা চুল ওয়ালা লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে

“বলছিলাম কি আপনার বউ কি টাকলা?

টাকলা। লোকটা উচ্চারণ করে। তুলি এবার লোকটার কাছে গিয়ে বলে

” হুম টাকলা। শুনুন এরকম লম্বা চুল এ আপনাকে পুরো উগান্ডার প্রেসিডেন্ট লাগে। এভাবে ঘুরে বেড়ালে উগান্ডার লোকজন আপনাকে তুলে নিয়ে যাবে।

“মিস্টার সায়ান উনি কি বলছেন? লোকটা তার ভাষায় সায়ানকে জিজ্ঞেস করে। সায়ান তুলির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে

” সি ইউ ম্যাড

তুলির মুখটা আপনা আপনি হা হয়ে যায়

“আমাকে পাগল বললো। আমি পাগল

বিরবির করে বলে তুলি। সায়ান লোকটাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

” আস্ত একটা করলার বংশধর। আমাকে পাগল বললো। তুই পাগল তোর বউ পাগল তোর চোদ্দো গোষ্ঠী পাগল।

তুলি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে

“What’s your problem?

দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ান

” অনেক পবলেম। আপনি আমাকে পাগল বললেন কেনো?

“পাগলের মতে ননস্টপ বকবক করলে পাগল বলবো না তো কি বলবো?

” আমি তো ঠিকই বলেছি

“সাট আপ। আমার খাবার কোথায়?

তুলি সায়ানের টেবিলে ঠাস করে খাবার রাখে। সায়ান খাবারে হাত দিতে গেলেই তুলি খাবার সরিয়ে নেয়। সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে বলে

” হোয়াট

“আগে টাকা

” মানে

“রেস্টুরেন্টের মালিক তো আর আমার জামাই হয় না যে ফ্রী তে খাবার দেবে।

সায়ান একশো টাকা বের করে দেয়

” ওরে আল্লারে। চিকেন বিরিয়ানি আনছি আপনার জন্য ডাল রুটি না

“তো

” তো মানে আরও টাকা লাগবো

সায়ান এবার পাঁচশত টাকার নোট দেয়। তুলি সেটা নিয়ে বাইরে চলে যায়।

“কি কিপ্টারে বাবা। ভাবছিলাম হাজার টাকা দেবে তা না পাঁচশত টাকা দিলো। ধুর

তুলি এসব বকবক করছে আর হাঁটছে। হঠাৎ তুলি সেই পিচ্চিটাকে দেখে দৌড়ে সায়ানের কেবিনে যাচ্ছে। তুলিকে দেখে পিচ্চিটা থামে তুলির কাছে আসে

” হেলো পাপার আপু

“আমি তুলি। আমাকে এই নামে ডেকো না প্লিজ

” কেনো?

“জামাইয়ের বউ হওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নাই

” জামাই কি?

তুলি দাঁত দিয়ে জিভ কেটে পিচ্চিটাকে কোলে নেয়

“নাম কি তোমার?

” জুজু

“এতো কিউট তোমার নাম? তো তুমি এখানে একা কেনো?

” মামনি দিয়ে গেছে। আমি পাপার কাছে যায়

জুজু তুলির কোল থেকে নেমে চলে যায়।

“আমাকে এবার সতিনের ঘর করতে হবে। এ জ্বালা আর প্রাণে সহে না

সন্ধায় তুলি আর সায়ানের বাবা বাড়িতে আসে।

” তুলি তুই

“জিসান

তুলি দৌড়ে গিয়ে জিসানকে জড়িয়ে ধরে। সায়ানের মা বাবা মনা কাকিমা ডলি সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সায়ানের মা তো রাগে ফুঁসছে।

” কি হচ্ছে এসব?

সায়ানের মা রাগী গলায় বলে। তুলি জিসানকে ছেড়ে দেয়।

“মা ওই তো তুলি আমার একমাত্র কিউট বেষ্টু। তোমাকে তো ওর কথা বলেছিলাম।

” জিসান ও আর এখন তোর বেষ্টু তুলি না। তোর বড় ভাইয়ের বউ

“কিহহহহ

জিসান হো হো করে হাসতে থাকে।

” সিরিয়াসলি মা তোমার ওই বোরিং ছেলের বউ তুলি

জিসান হাসিটা কন্টোল করে বলে।

“জিসান শোন

” শোন মানে কি? জিসান তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়। তো ছোট ভাই বলে ডাকবে

তুলি মাথা নিচু করে বলে

“হুম

” ওর সাথে কথা শেষ হলে আমার রুমে আসিস জিসান কথা আছে

“ওকে মামনি

” আর তুমি (তুলিকে ইশারা করে) বাড়ির বউ তুমি সারাদিন ঘুরে বেড়ালে হবে না। রাতের রান্নাটা তুমি করবে।

“তুলি মাথা নারায়। সায়ানের মা চলে যায়। এক এক করে সবাই চলে যায়।

” তুলি

“হারামি কুত্তা তোর ভাই আমার লাইফটা হেল করে দিলো

” আমার ভাই কি করে রে বল আমিও একটু শুনি

তুলি জিসানকে মারতে থাকে।

জিসান তুলির ফ্রেন্ড। জিসান তুলির বেষ্টুকে পছন্দ করতো সেই থেকে ওদের বন্ধুত্ব।

“মারছিস কেনো?

তুলি থামে

” দোস্ত আমি রান্না করতে পারি না

তুলি অসহায় মুখ করে বলে

“খেতে পারিস

” একদম এক্সপার্ট

“সেটাই। শোন যা পারিস তাই কর। আমি খাবার অর্ডার দিচ্ছি যখন কেউ তোর খাবার মুখে তুলতে পারবে না তখন আমার খাবার গুলো খাবে

” বাবা এতো বুদ্ধি তোর মাথায়

“মাথাটা কার দেখতে হবে না

” কার বেষ্টু দেখতে হবে না

দুজন একসাথে হেসে ফেলে।

তুলি কোমরে ওড়না বেধে রান্নায় নেমেছে। কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে। তখন জিসান আসে।

“দোস্ত পেঁয়াজ কাটে কেমনে

” পেঁয়াজটা হাতে নিয়ে ছুড়িটা হাতে নিয়ে কাঁটতে হয়।

“ওয়াও আমি তো জানতামই না।

” শোন ইউটিউবএ সার্চ দে

“পাওয়া যাবে

” কি বলছিস এখন তো ইউটিউব দেখে বড় বড় ডাক্তাররা সার্জারী করছে

“কি বলছিস

” হুম। আমি তো শিখতেছি। কদিন পরে একটা চেম্বার দেবো। কতো নাম হবে বল তো

“হুম আগে রান্না করি তারপর তোর আশারের গল্প শুনবো

ইউটিউব দেখে পেঁয়াজ কাটে কোনোরকম। তারপর মাংস রান্না করে

” এই এরকম কালার হলো কেনো?

“গাধী হলুদ দেস নাই তুই

” ওহহ

তুলি অনেকটা হলুদ দেয়।

ডাইনিংএ খাবার সার্ভ করে জিসান আর তুলি। সবাই খেতে বসেছে। খাবারের চেহারা দেখে সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে

“খাবারের চেহারা দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই অনেক ইয়াম্মি হয়েছে খেতে। কি রে জিসান সরি ছোট ভাই বলেন

” হ্যাঁ

সায়ান খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে। তুলি সবার প্লেটে খাবার দেয়। সবাই খাবার নারছে। সায়ান খাবারটা মুখে দেয়

“কে রান্না করছে?

তুলি বলতে চায় জিসান এগিয়ে গিয়ে বলে

” আমি রান্না করছি। তুলি জাস্ট একটু হেল্প করেছে। খুব ভালো হয়েছে না খেতে। দেখতে হবে না কে রান্না করছে#শুধু তুই
#পর্বঃ৫
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ান জিসানকে টেবিলে বসায়।

“এবার তুই খা

তুলি মুখ টিপে হাসছে। বাহবা পাওয়ার জন্য এতোকিছু উল্টে মুরগি হয়ে গেলো।

” ভালো হয় নাই
জিসান মুখটা ছোট করে বলে

“খুব ভালো হয়েছে খা

সায়ান জোর করে জিসানের মুখে খাবার ঢুকিয়ে দেয়।। জিসান দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সায়ানের মা আর সায়ান তুলির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। তুলি মাথা নিচু করে বলে

” আমি তো রান্না করতে গেছিলামই কিন্তু জিসান বললো ও করবে

“কেউ আপনার কাছ থেকে এক্সকিউজ চায় নাই। আর মা তুমি জানো না ছাগল দিয়ে কখনো হাল চাষ হয় না।

” আমি তো ভেবেছিলাম একলিস্ট রান্না বারাটা পারে

“কেনো ভাববে তুমি? এই তোমার ভাবনার জন্য রাতের খাবারটা খাওয়া হলো না।

সায়ান রেগে মেগে রুমে চলে যায়।

” তোমার জন্য আমার ছেলে না খেয়ে চলে গেলো। আর তুমি (সায়ানের বাবা) কি মেয়ে ঘরে এনেছো দেখো

সায়ানের মাও চলে যায়।

“তুমি রান্না পারো না আগেই বলতে পারতে এমন সিনক্রিয়েট টা না করলেই পারতে। মনা তুলিকে বলে চলে যায়।

” তুলি কোনো বেপার না আমি তোমায় রান্না শিখিয়ে দেবো। সায়ানের কাকিমা হাসিমুখে বলে।

“তুমি আমায় বকলে না কেনো? তুলি সায়ানের বাবাকে বলে। সায়ানের বাবা তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

“সব ঠিক হয়ে যাবে।

ছাঁদে বসে আছে তুলি। মনটা ভীষণ খারাপ। ইউটিউব দেখে বেশ কয়েকটা রান্না শিখে নিয়েছে।

” কিউটি পাখির মন খারাপ কেনো?

তুলি পেছনে তাকিয়ে দেখে জিসান।

“এমনি

জিসান তুলির পাশে বসে বলে

” আমার বাড়ির মানুষরা এমনই। তেতো তেতো কথা বলে

“হুম করলার বংশধর

জিসান ফিক করে হেসে ওঠে

” সিরিয়াসলি তুলি তুই আমাদের করলার বংশধর বানিয়ে দিলি

“তা নয়ত কি? সবাই মুখটাকে পেঁচার মতো করে রাখে।

” ঠিক আছে বুঝলাম। তুই এখন রুমে চলে যা নাহলে কিন্তু ভাইয়া তোকে রেখেই দরজা লক করে দেবে

“জিসান আমি তোর ভাইয়ের সাথে থাকতে চায় না। প্লিজ কিছু কর

তুলি জিসানের হাত ধরে বলে

” কি হচ্ছে এখানে?

সায়ানের রাগী গলার কথা শুনে চমকে ওঠে জিসান আর তুলি। তুলি জিসানের হাত ছেড়ে দেয়। জিসান সায়ানের কাছে গিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বলে

“তোর বউ তোর সাথে থাকবে না তাই বলতে এসেছে আমার কাছে

” কেনো তুই কি উকিল না কি?

“তা না বাট আমাকে ডিভোর্সে ব্যবস্থা করতে বলছে

” ঠিক আছে তুই মন দিয়ে কাজটা কর

সায়ান চলে যায়। জিসান মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে

রাত দুটো ছুঁই ছুঁই। তুলি সোফায় শুয়ে আছে। ঘুম আসছে না। সায়ানের ফোনটা বেজে ওঠে।

“হেলো
……

” আমি এখুনি আসছি

সায়ান তারাহুরো করে বিছানা থেকে নেমে আলমারি থেকে শার্ট নিয়ে চলে যায়।

“কোথায় গেলো উনি? কি এমন কাজ তাও আবার এতো রাতে?
ধুর এসব ভেবে আমার কি? যা খুশি করুক।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তুলি রুটি আলুর দম বানায়। তারপর চায়ের পানি চুলায় বসিয়ে খাবার টেবিল সাজায়। একে একে সবাই খাবার টেবিলে চলে আসে। তুলির শাশুড়ী একবার সরুচোখে তুলির দিকে তাকায়। জিসান খাবার খেতে খেতে বলে

” জান্টুস কোথা থেকে আনিয়েছিস?

“আমি বানিয়েছি

জিসান বিষম খায়। জিসানের মা পানি এগিয়ে দেয়।

” আস্তে খেতে পারিস না? সব কিছুতেই এতো তারাহুরো কেনো তোর?

জিসান পানি খেয়ে একটু শান্ত হয়ে বলে

“এখোনো তো বিয়ে করলাম না আর তুমি বলছো তারাহুরো করি

” জিসান থুক্কু ছোট ভাই মেয়ে দেখবো না কি?

“তোমার দাঁত কেলাতে হবে না। সায়ান কোথায়?

শাশুড়ীর কথায় তুলির মুখটা কালো হয়ে যায়।

” কি হলো বলো?

“জানি না। মাথা নিচু করে বলে তুলি

” জানি না মানে? তোমার স্বামী কোথায় গেছে তুমি জানো না। কেমন বউ তুমি

“আহ তুমি থামবে (বাবা)

” কেনো থামবো? কেমন মেয়ে ও

“মা তুমি জানো তোমার ছেলে কোথায় গেছে? জিসানের কথায় সায়ানের মা চুপসে যায়।

” তুমি মা হয়ে জানো না তোমার ছেলে কোথায় যাচ্ছে কি করছে? আর তুলি তো দুদিন হলো এসেছে ও কি করে জানবে?

জিসানের কথায় তুলি খুশি হলো

“বেশ বলেছে তো। করলা শাশুড়ী এখন কথা বলো

মনে মনে তুলি বলছে আর হাসছে।

” খেতে বস

সবাই চুপ চাপ খেয়ে চলে যায়।

“নাহহ আজ ওনার থেকে জেনেই ছাড়বো উনি কোথায় যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলে তো বলবে না। বুদ্ধি দিয়ে জানতে হবে। ভাব তুলি ভাব কি করা যায়।

তুলি এবার রেডি হয়ে অফিসের জন্য বের হয়।
একটা ফার্মেসির সামনে সায়ানকে দেখে তুলি গাড়ি থেকে নেমে সায়ানের পিছু নেয়। পিছু নিতে নিতে একটা হাসপাতালে চলে আসে। সায়ান ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।

সায়ান তুলির দিকে তাকাতেই তুলি পায়ে ব্যাথার নাটক করতে যায় আর পেছন থেকে কেউ ধাক্কা মারে। তুলি মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। সায়ান তুলির কাছে আসে। তুলি উঠার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।

” আপনি এখানে?

“পপপায়ে ব্যাথা তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছি।

” এতো এতো হাসপাতাল থাকতে আপনি এখানেই কেনো এলেন? সায়ান চিৎকার করে বলে। তুলি ভয় পেয়ে যায়। কি বলবে ভাবছে

“আআআআআআ

” সাট আপ
নার্স নার্স। জোরে জোরে ডাকে। দুটো নার্স দৌড়ে আসে

“এই পাগলটাকে বের করে দিন এখুনি

তুলি চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরে। নার্স দুটো তুলিকে টেনে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যায়।

রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছে তুলি। আনমনে হাঁটছে।

” কেনো এমন করলো উনি? কি আছে ওই হাসপাতালে? জানতে হবে আমাকে? আমি তো চলে যাবোই তবে তার আগে সায়ানের সব কেচ্ছা ফাস করবো। করবোই

“তুলি মা তুমি এখানে?

কারো কথায় তুলি থেমে যায়। পেছনের মানুষটাকে দেখে তুলি হু হু করে কেঁদে ফেলে।

তুলির বাবা তুলিকে জড়িয়ে ধরে।

” মামনি কাঁদে না

“কেনো করলে এমনটা বাবা? ও বাড়ির কেউ আমাকে ভালোবাসে না। আমি থাকতে চাই না বাবা ওখানে। প্লিজ বাবা

হেঁচকি তুলে বলে তুলি।

চলবে 😎

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here