শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব -২২

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২২

” জ্বর আসলো কীভাবে?”

শুভ্রতা ঠিকমতো দাঁড়ালে নিহান তার হাতটা ছেড়ে দেয়। শুভ্রতা আমতা আমতা করে বলে, ” ফ্রিজের পানি খেয়েছিলাম আর আজ তো খুব গরম ছিল ঘেমে যাওয়ার জন্য হয়তো ঠান্ডা লেগেছে।”

” এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না বাসায় দিয়ে আসি চল। আবিরা ওখানে গেছে তোর মা জানতে পারলে এমনিতেও চলে আসবে। ওষুধ আমার রুমেই আছে, আমি এনে দিচ্ছি। ”

” না না লাগবে না, আমি বাবাকে বললেই মিয়ে আসবে।”

” কেন আমি দিলে সমস্যা? আমি বাড়তি কথা শুনতে চাইছি না। চল তোকে বাসায় রেখে আমার মিটিংয়ে বসতে হবে সময় হয়ে যাচ্ছে।”

” কীসের মিটিং?”

” কাজের কথা হবে, তুই ওসব বুঝবি না। চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি।”

তৎক্ষনাৎ শুভ্রতার মা, আবিরা, স্নিগ্ধা চলে আসে। মিসেস আয়েশা তাড়াতাড়ি করে এসে মেয়ের জ্বর কেমন দেখেন। নিহান সবকিছু জানায় এবং শুভ্রতাকে তার মায়ের কাছে রেখেই ওষুধ নিয়ে আসতে যায়। শুভ্রতাকে নিয়ে মিসেস আয়েশা বাসায় ফিরেন। তার মাথায় এখন একটাই চিন্তা এই রাতের মাঝেই শুভ্রতাকে সুস্থ করতে হবে জ্বর বাড়তে দেয়া যাবে না। তিনি গিয়ে শুভ্রতার জন্য দুধ গরম করে নিয়ে আসেন, জলপট্টি দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন। নিহান এসে দরজায় নক করলে স্নিগ্ধা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। নিহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,

” ভাইয়া!”

” শুভ্রা কোথায়?”

” আপু তো রুমেই, আম্মু তো জলপট্টি দিচ্ছে। কাল আপুর পরিক্ষা জ্বর বাড়তে দেয়া যাবে না। জ্বর বাড়লে পরিক্ষা দিতে পারবে না। তুমি ভেতরে আসো না প্লিজ।”

নিহান ভেতরে ঢুকলে স্নিগ্ধা দরজা বন্ধ করে দেয়। নিহান সোজা শুভ্রতার রুমে চলে যায়। শুভ্রতা তখন মায়ের কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়েছিল। কয়েক মিনিট সময়ের মধ্যেই শুভ্রতার শরীরের তাপমাত্রা বেশ খানিকটা বেড়ে গিয়েছে। মাথাটা কেমন খালি খালি লাগছে!
নিহান বাড়িতে জ্বরের কোন ওষুধ খুঁজে না পেয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়েছিল শুভ্রতার জন্য ওষুধ আনার জন্য। স্টেশনের পাশেই একটা ডাক্তার বসে। উনাকে জানাতেই উনি ওষুধ দিয়ে দিয়েছেন।
নিহান এসে মিসেস আয়েশার কাছাকাছি দাঁড়ায়।

” ছোটমা…”

” নিহান! হ্যাঁ বাবা বল।”

” ওর জ্বর কি বেড়েছে?”

” হ্যাঁ শরীরটা অনেক গরম। মাথাও নাকি ধরেছে, মাথা থেকে হাত নামাতে দিচ্ছে না। চোখ ও খুলছে না চোখ নাকি জ্বা*লাপোড়া করছে। ওর বাবার ফোন বন্ধ হয়তো কাজে ব্যস্ত আছে। নইলে একটু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বলতাম মেয়েটাকে।”

” আমি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। সবকিছু বলার পর ওষুধ দিয়েছে। কিছু খেয়ে ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে রাতের মধ্যেই।”

” আমার খুব চিন্তা হচ্ছে নিহান, কাল ওর টেস্ট পরিক্ষা। মেয়েটা পরিক্ষার সময় অসুখ বাধিয়ে বসে থাকে।”

” কিছু হবে না ছোটমা রাতের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। ওকে কিছু খাইয়ে দিন তারপর ওষুধ খেতে হবে ওর।”

” তুমি একটু ওর মাথার এখানে বসো আমি প্লেটে খাবার নিয়ে আসছি।”

” ঠিক আছে।”

মিসেস আয়েশা রুম থেকে চলে যান শুভ্রতার জন্য খাবার নিয়ে আসতে। নিহান গিয়ে শুভ্রতার পাশে বসে। কপালে হাত দিতেই বুঝতে পারে জ্বর প্রচন্ড বেড়েছে। সে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
দুই মিনিটের মাঝেই আয়েশা বেগম খাবার এনে শুভ্রতাকে ডেকে তোলেন। শুভ্রতা খেতে না চাইলেও অল্পকিছু জোর করে খাইয়ে দেন তিনি। আয়েশা বেগম আজকের রাতটা মেয়ের কাছেই থাকবেন। নিহান এবার জায়গা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।

” ছোটমা..”

” হ্যাঁ নিহান বল।”

” রাতে কোন অসুবিধা হলে প্লিজ আমাকে কল করবেন। আমার রাতে এমনিতেও ঘুম হবে না।”

” শুভ্রতার জন্য খুব চিন্তা হয় না রে বাবা?”

নিহান কিছু না বলে মাথা নিচু করে থাকে। মিসেস আয়েশা আবার বলেন, ” মেয়েটা কেন যে মানুষ চিনতে ভুল করল! ঠিক মানুষকে চিনলে এতদিনে আমার মেয়ের একটা ঘর হতো। ”

” অতীতের কথা তুলে কী লাভ ছোটমা! ও আমাকে কথা দিয়েছে ও এবার আমার হবে। শুধু আমার কয়েকটা মাস অপেক্ষা করতে হবে। আমি শুভ্রার জন্য অপেক্ষা করব ছোটমা। ভালোবাসার মানুষের জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করা যায়।”

” দোয়া করি, আল্লাহ তোদের দুজনকে এক করে দিক। এখন যাও ঘুমানোর চেষ্টা করো। ওকে তো ওষুধ খাইয়ে দিয়েছি। ইন শা আল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।”

” ছোটমা একটা কথা বলব?”

” হ্যাঁ বল। অনুমতি নেয়ার কি আছে?”

” আপনি একটু ওকে বলবেন আমার সাথে যেন পরিক্ষা দিতে যায়। প্রয়োজনে ওকে আর শাকিরা দুজনকেই নিয়ে যাব। এই অবস্থায় আমি কোন রিস্ক নিতে চাই না।”

” আচ্ছা ঠিক আছে বলব।”

” ঠিক আছে আমি আসছি তাহলে।”

” হ্যাঁ, চিন্তা করিস না বাবা।”

” হুম।”
~~

প্রায় আধাঘণ্টা যাবৎ আবিরা অভীকের জন্য অপেক্ষা করছে। ক্লিনিকের ঠিক পিছনটায় একটা রেস্টুরেন্ট আছে। অভীকের চেম্বারও তার ঠিক বা’পাশে। রেস্টুরেন্টের সামনে এসে নামার সময় আবিরা অভীকের ক্লিনিকের দিকে খেয়াল করেছে তাকে দেখা যায়নি অথচ অভীককে কল করে তাড়াতাড়ি আসতে বলার পর অভীক বলেছে সে পাঁচ মিনিটের মধ্যে চেম্বার থেকে বের হবে। সেই পাঁচ মিনিট আধাঘণ্টায় গিয়ে ঠেকেছে। বসে বসে একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে অভীককে কিন্তু অভীক বারবার কল কেটে দিচ্ছে। আবিরা ঠিক বুঝতে পেরেছে অভীক তাকে মিথ্যে বলেছে সে হয়তো চেম্বারে নেই। আবিরা ফোনটা ব্যাগে নিয়ে অভীকের চেম্বারের দিকে যায়।

আবিরা এসেছিল কাজে আর সেই কাজটা হচ্ছে শাকিরাকে নিয়ে পার্লারে যেতে হবে যেহেতু কাল ওর বিয়ে ত্বকের একটু যত্নের ব্যাপার আছে। শুভ্রতা আর শাকিরা দুজন একা একা সবকিছু পারবে না তাই আবিরা এসেছে। শুভ্রতা আর শাকিরা পরিক্ষা দিচ্ছে তাই সে ভেবেছে এই সময়টা অভীকের সাথে থাকবে কিন্তু অভীক কোথায়!

আবিরা পায়ে হেটেই অভীকের চেম্বারে চলে যায়। সে যা ভেবেছিল তাই, অভীক চেম্বারে নেই। সে তাকে মিথ্যে কথা বলেছে। কিন্তু হঠাৎ মিথ্যে কেন বলল সেটাই ভেবে পাচ্ছে না আবিরা। মন খারাপ করে চেম্বার থেকে বের হবে ঠিক তখনই অভীকের কল আসে।

” হ্যালো আবিরা, কোথায় আছো?”

” সেটা আপনার জানতে হবে না।”

” স্যরি আবিরা, জ্যামে আটকে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম পাঁচ মিনিটে পৌঁছে যাব কিন্তু জ্যামের কারণে হয়ে ওঠে নি। এই রাস্তায় যে আজ এত জ্যাম হবে সেটা বুঝতেই পারি নি। কোথায় আছো তুমি? আমি রেস্টুরেন্টে এসে দেখলাম তুমি নেই। ”

” চলে এসেছি ওখান থেকে।”

” চলে গেছো! কেন? ”

” ওখানে বসে বসে কারো জন্য অপেক্ষা করতে ভালো লাগছিল না।”

” এখন কোথায় আছো?”

” জানি না।”

” জানো না মানে? বলো না কোথায় আছো? ”

” বলেছি তো জানি না। ফোন রাখুন আপনি।”

” প্লিজ সোনা রাগ করো না। আমি স্যরি বললাম তো।”

” আমি আপনাকে কতবার বলেছি আমাকে এসব বলে ডাকবেন না!”

” রাগ করছো কেন? আচ্ছা যাও এসব বলে ডাকব না। এবার বলো কোথায় আছো?”

” আপনার চেম্বারে এসেছিলাম দেখতে যে আপনি সত্যি বলছেন নাকি মিথ্যে বলছেন। এসে দেখি আমি যা ভেবেছিলাম তাই আপনি মিথ্যে বলেছেন।”

” আচ্ছা তুমি ওখানেই অপেক্ষা করো আমি আসছি।”

আবিরা কল কেটে দিয়ে সামনের রাস্তাটায় গিয়ে দাঁড়ায়। সে রাগে এখনো ফুঁসছে। কি হতো সত্যি কথাটা বললে? বললেই হতো যে আমি একটু দূরে আছি তুমি কয়েকটা মিনিট অপেক্ষা করো। সত্য কথা শোনার পর আধাঘন্টা কেন সারাজীবনও অপেক্ষা করা যায় কিন্তু কয়েক মিনিট অপেক্ষা করার পর যখন জানা যায় সে মিথ্যে বলেছে তখন আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করার ইচ্ছে থাকে না।

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here