#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৩
রায়ানের ঘর তছনছ করে ফেলেছে শান্ত!!!
সকাল হতেই রায়ানদের বাড়িতে হানা দিয়েছে!!
ঘরের জিনিসপত্র লন্ডভন্ড করার একপর্যায়ে ঘুমঘুম কন্ঠে রায়ান বলল–নেই তোর হবু বউ এখানে!!!!টাইম ওয়েস্ট করছিস!!!
শান্ত তেড়ে এসে বলে –আমি জানি ও এখানেই আছে!!
রায়ান হাই তুলে বলে–ওকে রাখার হলে আগেই রাখতাম,,নতুন করে তুলে এনে ওকে কি দেখব!!!
শান্ত রাগে ফুসে আরও খানিকক্ষণ ঘর এলোমেলো করে তারপর চলে যায়!!
শান্ত বেরিয়ে যেতেই রায়ানের বাবা বলল–বেয়াদব ছেলে!!আয়ানা এখানে কেন থাকবে??আজব!!
রায়ান–হুমম বাবা!!তুমি ঘরে যাও!!ফালতু ঝামেলা!!
সবাই যার যার ঘরে চলে গেল!!
রায়ানের মা–চল ভেতরে!!!
রায়ান আর তার মা ঘরে ঢুকে,রায়ানের মা দরজা বন্ধ করে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে–কই ও??
রায়ান ধীরে পায়ে গিয়ে আলমারির ওপর বোঝাই করে রাখা কম্বলের পেছন থেকে সেন্সলেস আয়ানাকে কোলে করে নামিয়ে নিয়ে আসে!!
বেডে শুইয়ে দিয়ে বলে–একটা ডাফার বেস্টফ্রেন্ড তোমার!!খাটের নিচে খুঁজল অথচ আলমারির ওপর দেখলই না!!ছাগল একটা!!
রেশমি আহমেদ –সর!!সেন্সলেস করেছিস কখন ওকে??আর ওখানে রাখলি যদি খুঁজে পেয়ে যেত??
রায়ান মায়ের হাত ধরে বলে –চিল মা!!ডাফার ও!!
রায়ানের মা ঘরটা কোনোরকম ঠিকঠাক করেই বেরিয়ে যায়!!
রায়ান আয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে–সরি!!ঘুমের মধ্যে তোমাকে যদি না লুকোতাম তাহলে ঝামেলা হয়ে যেত!!
রায়ান আয়ানার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলল–১০ দিন সময় দাও আমায় সব ঠিক করে তোমাকে আবার আমার কাছে নিয়ে আসবো!!গতবারের ষড়যন্ত্রে আমরা দুজন খুব কষ্ট পেয়েছি!!আর না!!
রায়ান আবারও আয়ানার ঠোঁটের কোণে চুমু দিয়ে বলল–নকল পেপার টা হাতে একবার পেলেই সব ঝামেলা চুকে যাবে!!
তারপর আয়ানার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল!!এখনো বেলা পড়তে বেশ সময় বাকি!!
শান্ত ভোর ৪ টে বাজতে না বাজতেই রায়ানের বাড়ি চলে এসেছিল!!
শান্ত বাড়িতে পৌঁছে ও কোনো শান্তি পাচ্ছে না!!
শান্ত–পুরো ঘরই তো খুঁজলাম!! আয়ু তো নেই!!তাহলে কোথাও ও!!!
ওকে খুঁজতে হবে!!রায়ানটা ই কিছু করেছে!!!
আয়ানার বাবা শান্তর কাঁধে হাত রাখতেই শান্ত ঝটকা দিয়ে হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলে–সব আপনার জন্য হয়েছে!!!আপনি কেনো আয়ু কে ওর সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন!!!
আয়ানার বাবা–আমি তখন বুঝিনি বাবা!!ও এমন ছেলে!!
শান্ত বিরক্ত কন্ঠে বলে–যখন বোঝেননি তখন আর বুঝতে হবে না!!এখন আমি বুঝে নিবো!!
আয়ানার বাবা শান্তর কাঠ গলা শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়!!!
আয়ানার বাবা ঘরে এসে ধপ করে বিছানাতে বসে পড়ল!!
আয়ানার মা বাথারুম থেকে বেরিয়ে আয়ানার বাবা কে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল–কি হয়েছে??
আয়ানার বাবা ফিচেল কন্ঠে বলল–কি হওয়ার বাকি আছে!!আয়ু কে রায়ানের বাড়িতে খুঁজে পাওয়া যায়নি!!
আয়ানার মা আয়ানার বাবার পাশে বসে বলল–আমার বিশ্বাস আয়ু রায়ানের সাথেই আছে!!!
আয়ানার বাবা–জানি আমি!!
অপরদিকে,,
সকাল ৮ টার দিকে আয়ানার ঘুম ভাঙতেই আয়ানা টিপটিপ করে চোখ খুলে দেখল পাশে ঘুমন্ত রায়ান!!
আয়ানা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল–আপনার এই ঘুমন্ত চেহারার মায়াতে আমি আগেও পড়েছি!!আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আপনার এই চেহারাটা মনে করেই রাতে ঘুমিয়েছি!!!
তারপর মাথা ঝিম করে ওঠাতে বালিশে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ২ বছর পুরানো স্মৃতি আওড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আয়ানা!!!!
২ বছর আগে,,,
আয়ানা খান,,বয়স ২০!! শ্যাম বর্ণ মায়াবী চেহারার এক শান্ত কিশোরী!!
বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে!!
আয়ানা সবে কোচিং থেকে বাড়ি ফিরে দেখল তার বাবা চিন্তিত মুখে বসে আছে!!
আয়ানা বাবার কাছে এসে বলল–বাবা তুমি কি টেনশনে আছো??
আয়ানার বাবা–না রে মা!!তেমন কিছু না!!
আয়ানা–ওহহ!!বাবা আমার বায়োলজির জন্য নতুন হোম টিউটর দরকার!!বায়োলজি কিছুতেই কোচিং এ পড়ে ইমপ্রুভ হচ্ছে না!!
আয়ানার বাবা–ওকে মা!!দেখছি আমি!!
আয়ানা বাবার সম্মতি পেয়ে ধীর পায়ে ঘরে চলে যায়!!
আয়ানার বাবা আবারও চিন্তাতে ডুব দেয়!!
আয়ানার মা–কি ভাবছো বলোতো??কোনো সমস্যা??
আয়ানার বাবা–আমার কোম্পানির শেয়ার সব লস হয়ে গিয়েছে!!! এখন নতুন কোনো ইনভেস্টারও পাচ্ছি না!!
আয়ানার মা ভ্রু কুচকে বলল–শান্তর বাবা??
আয়ানার বাবা–উনি লস প্রজেক্টে ইনভেস্ট করতে রাজি নন!!
আয়ানার মা–তাহলে??
আয়ানার বাবা–খুব সমস্যা তে আছি গো!!সবার টাকা দিতে না পারলে পথে বসতে হবে!!
আয়ানার মা আকুল হয়ে বললেন–আমার আয়ুর কি হবে তাহলে??
আয়ানার বাবা–আমি ১ সপ্তাহ দেখব সব ম্যানেজ করতে পারি কিনা!!না পারলে আয়ুকে বিয়ে দিয়ে আমরা দূরে কোথাও চলে যাবো!!
আয়ানার মা–মা – বাবা হীন শ্বশুরবাড়িতে আয়ু কি ভালো থাকবে??
আয়ানার বাবা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল–জামাইকে সব খুলে বলে তারপর আয়ুকে ওর হাতে তুলে দিবো!!
আয়ানার মা–আচ্ছা!!শান্ত টা ও তো দেশে নেই যে ওর বাবাকে একটু বুঝিয়ে সাহায্য করবে!!
আয়ানার বাবা–হুমম!!!
সপ্তাহ কাটলেও আয়ানার বাবা তেমন কোনো সমাধান বার করতে সক্ষম হলো না!!!
আয়ানার বাবা নিজের সমস্যা তার বিশ্বস্ত কর্মচারী রেদোয়ান কে খুলে বললে রেদোয়ান তার একমাত্র ছেলের জন্য আয়ানার প্রস্তাব রাখে!!
আয়ানার বাবা বেশ খুশি হয়ে যায় কারণ রেদোয়ান বেশ ভালো মানুষ!!রেদোয়ানের ছেলে রায়ান ও ভালো চাকরি করে!!
রেদোয়ান ও বেশ খুশি বাড়িতে এসে খাবার টেবিলে সবাইকে ডেকেছেন!!!
রায়ান আহমেদ,, বয়স ২৫,,উজ্জ্বল শ্যামলা,ফিট আর বেশ স্মার্ট একটা ছেলে!!রায়ান ও তার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে!!তার মা একজন এ্যাসিসটেন্ট ডাক্তার!!
বাবার ডাক শুনে গেম খেলা বাদ দিয়ে রায়ান টেবিলে চলে আসে!!!
রেদোয়ান টেবিলে বসে তার মা কে উদ্দেশ্য করে বলল–মা আমি তোমার নাতির জন্য একটা মেয়ে দেখেছি!!!এই সপ্তাহের মধ্যে আমি বিয়েটা দিতে চাই!!
কথাটা শুনেই রায়ানের চোখ বড়বড় হয়ে গেল!!
রায়ানের মা ও খাওয়া বন্ধ করে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল!!!
রায়ানের দাদি–তা তো বেশ!!মেয়ের ছবি আছে নাকি??
রায়ানের বাবা–আছে!!দেখাচ্ছি!!
রায়ানের মা আমতা আমতা করে বলল–এতো তাড়াতাড়ি মেয়ে!!বিয়ে!!
রায়ানের বাবা–মেয়ে ভালো!তাই আমি চাইছি দ্রুত বিয়ে সারতে!!
রায়ান তার মাকে ইশারা করছে কিছু একটা বলার জন্য!!! কারণ রায়ান নিজের বাবাকে বেশ ভয় পায়!!
রায়ানের বাবা এবার রায়ানকে জিজ্ঞেস করে–তা তোমার কি কোনো পছন্দ আছে??
রায়ান ঘাবড়ে যায় কারণ সে যাকে পছন্দ করে যে কখনোই বাবার পছন্দের হবে না!! ০৪ নং পর্ব আমার আইডিতে পাবেন। ফ্রেন্ড লিস্টের বাইরে থেকে যারা গল্প পরেন তারা রিকুয়েস্ট দেন একসেপ্ট করবো।
রায়ান হালকা মাথা ঝাকিয়ে কিছু একটা বললো!!
রায়ানের বাবা ভ্রু কুঁচকে বলল–তারমানে নেই!!!তাহলে বিয়ে ফাইনাল!!
রায়ান দ্রুত কোনোমতে খেয়ে ঘরে চলে আসে তারপর পায়চারি শুরু করে!!!
সব কাজ সেরে তার মা আসতেই রায়ান বলে–মা,,এবার কি হবে??নাবিলাকে তো বাবা কোনোদিন পছন্দ করবে না!!নাবিলার চলাফেরা তো বাবার একদম পছন্দ নয়!!তারওপর ও একদিন ভুলে বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে রাস্তায়!!!
রায়ানের মা চিন্তিত মুখে বলে–বুঝতে পারছি সমস্যা!! তুই একবার নাবিলাকে বল তোর বাবার কাছে ক্ষমা চাইতে!!তারপর বাকিটা আমি দেখছি!!!
রায়ান ঢোক গিলে বলে–আচ্ছা মা!!!
রায়ানের মা যেতেই রায়ান নাবিলার নম্বরে ফোন দেয়!!
কিন্তুু বিগত ২ ঘন্টা থেকে তার নম্বর ব্যস্ত বলছে!!
রায়ান রেগে বিছানাতে বসে পড়ল!!!
#চলবে
১০১৭ শব্দ♥️♥️
বিঃদ্রঃ কেমন হলো জানাবেন??