#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২৪
রায়ান কাঁধে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলল–জামাটা চেন্জ করে শাড়ি পরো।তোমার চুড়ি,চেইন আর নাকফুল আলমারির ড্রয়ারে আছে পরে নেও।
আয়ানা অবাক ভাবে ঘুরে–মানে?
রায়ান–মানে একদম নতুন বৌ এর মতো রেডি হয়ে যাও আগে যেমন থাকতে।
আয়ানা–কিন্তুু?
রায়ান–কোনো কথা না।রেডি হও তারপর বাকিটা বলবো।
আয়ানা মাথা ঝুকিয়ে আলমারি থেকে শাড়ি সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাথরুমে চলে যায়।
রায়ান একবার দরজা খুলে একবার সোফার ঘরটা দেখে নিলো।
সোফাতে বাবা,দাদি আর মা কে এক ঝলক দেখে আবার ভেতরে চলে এলো।
সোফাতে বসে আয়ানার অপেক্ষা করতে লাগলো।
আয়ানা একটু সময় নিয়ে শাড়ি পরে বের হলে সোফাতে বসে থাকা রায়ান উঠে সামনে এসে দাঁড়ায়।
রায়ান–এই শাড়িটা গতমাসে কিনেছিলাম।আমাদের ২য় বিবাহবার্ষিকী তে।বাট এতো ঝামেলার মাঝে ১ম বা ২য় কোনো বিবাহবার্ষিকী পালন করা হলো না।
আয়ানা মুচকি হেসে আঁচল ঠিক করে বলে–ইনশাআল্লাহ হবে।আর শাড়িটা খুব সুন্দর।
রায়ান–চেইন,চুড়ি আমি পরিয়ে দেই চলো।
আয়ানা আয়নার সামনে দাঁড়াতেই রায়ান চেইন,চুড়ি,দুল পরিয়ে দিলো।
নাকফুল পরাতে নিলেই,,
আয়ানা–নাকের ফুটানো ছিদ্র তো সম্ভবত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অনেকদিন নাকফুল পরা হয় না।
রায়ান একটু ভালো করে দেখে নিয়ে বলল–থাক পরে ফুটিয়ে নাকফুল পরিয়ে দিবো।
আয়ানা ঠিক হয়ে দাঁড়াতেই রায়ান বেশ শক্ত করে আয়ানাকে জড়িয়ে নিলো।
আয়ানা–সকাল সকাল জড়িয়ে ধরার জন্য বুঝি শাড়ি পরালেন।
রায়ান–নাহ। কাজ আছে বাট তোমাকে শাড়িতে দেখে মনে হলো একটু জড়িয়ে ধরি।
আয়ানা–এবার বলুন কি কাজ??
রায়ান আয়ানাকে ছেড়ে আয়ানার শাড়ির আঁচল টেনে মাথায় দিয়ে দিলো।
হাত ধরে দরজা খুলতেই আয়ানা রায়ানের হাত টেনে ফিসফিস করে বলল–আমায় নিচ্ছেন কেন?সবাই জেনে যাবে তো!
রায়ান–জানানোর জন্যই নিচ্ছি।চলো।
আয়ানা আর কিছু বলার আগেই রায়ান হাত ধরে টেনে সোফার ঘরে এসে দাঁড়ালো।
আয়ানাকে রায়ানের সাথে দেখে রেদোয়ান তো চমকে গিয়েছেন।
চায়ের কাপ রেখে উঠে দাঁড়িয়ে,,
রেদোয়ান –কেমন আছিস মা?
আয়ানা কান্না চেপে রাখার চেষ্টা করে না পেরে কেঁদে দিয়ে রেদোয়ান কে জড়িয়ে ধরে বলল–তুমি কেমন আছো বাবা?
রেদোয়ান –ভালো রে মা।তোকে কতদিন পর দেখলাম।
সবার সাথে কথার পর রেদোয়ান জিজ্ঞেস করলেন–বাবু,,বৌমা তোর ঘর থেকে এতো সকালে??রাতে তো দেখলাম নাহ ওকে নিয়ে আসতে?
রায়ান এদিক ওদিক তাকিয়ে মাথা চুলকে বলে–আসলে বাবা,তোমার বৌমা কে আরও ১ সপ্তাহ আগে তুলে নিয়ে এসেছি বাড়ি থেকে।
রেদোয়ান মাথায় হাত রেখে জোড়ে হেসে বলেন–হায় খোদা!!আমার ছেলের কান্ড দেখো।
রায়ান–আমার বৌ কে ওরা বিয়ে দেবে তা আমি মানবো কেনো?তাই তুলে নিয়ে এসেছি।
রেশমি –খুব বীরত্বের কাজ করেছেন।
সবার হাসিতে আবারও ঝলমল করে উঠলো রায়ানদের বাড়ি।
রায়ানের মনে হচ্ছে বহুদিন পর এভাবে তারা হাসছে।
সকালের নাস্তা ৬.৩০ টার দিকে শেষ করে আয়ানা ঘুমানোর জন্য একটু ঘরে এসেছে।।
মন ভালো থাকার দরুণ আজ তার শান্তিতে ঘুম হবে বলে তার ধারণা।
এসব চিন্তা করে কাথা ঠিক করে নিতেই রায়ান ঝড়ের গতিতে এসে কাথাসহ আয়ানাকে জাপটে ধরে বিছানাতে শুয়ে পড়ে।
আয়ানা নড়াচড়া করতে পারছে না।।
আয়ানা–কি হলো?
রায়ান–শুয়ে পরা হলো।
আয়ানা–এভাবে?
রায়ান–বউকে নিয়ে এভাবে ঘুমোতে হয় আয়ু সোনা।
আয়ানা–এসব তো কোনোদিন দেখি নি বাপু।
রায়ান আয়ানার কাধে কামড় বসিয়ে দিয়ে বলল–দেখবে কি করে?বিয়ে তো একবারই হয়েছে তোমার।
আয়ানা–হু।
রায়ান–ঘুমাও এবার আমিও ঘুমাই।
আয়ানা–আমরা কতোদিন এমনে লুকিয়ে থাকবো?
রায়ান–আর বেশি সময় না।
আয়ানা–আমার আর ৪ দেয়ালের মাঝে ভালো লাগছে না।
রায়ান–আর একটু সহ্য করো প্লিজ।
আয়ানা রায়ানের দিকে ঘুরে বলল–হুমম।।
বেশ কিছু কথা বলতে বলতে আয়ানা গারো নিশ্বাসের আভাসে বুঝলো রায়ান ঘুমিয়ে পড়েছে।
আয়ানা আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে আস্তে রায়ানের হাত ছাড়িয়ে ধীরে উঠে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৮.১০ বাজে।
আয়ানা চোখে মুখে পানি দিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।।
আয়ানা দরজার কাছে দাঁড়াতেই,
দাদি–তর এইহানে কি কাম??যা আরাম কর।
আয়ানা–ঘুম আসছে না গো টেনিস বুড়ি।
দাদি–ছুড়ি তুই এহনো আমারে টেনিস বুড়ি কইবি?
আয়ানা ফিক করে হেসে দেয় সাথে দাদি ও।
রেশমি–কি রে মা?একটু রেস্ট নিলে পারতি।
আয়ানা–নাহ গো।কি করতে হবে দাও আমি করে দেই।
রেশমি–কিচ্ছু করতে হবে না আপনার।।এই নিন(হাতে খেজুর আর কাটা আপেল ভর্তি বাটি দিয়ে)।সব খাবি।
আয়ানা–মামনি।
রেশমি–বাটি খালি চাই।
অগত্যা আয়ানা একটা চেয়ার টেনে বসে খেতে শুরু করলো।
রেশমি–বাবু কি ঘুম নাকি রে আয়ু?
আয়ানা আপেল মুখে রাখা অবস্থায় বলল–হুমম মামনি।তোমার ছেলে মহাঘুম দিচ্ছে।
রেশমি–একটু ঘুমোক।ছেলেটার ঘুম দরকার।
আয়ানা আবারও খাওয়াতে মনোযোগ দিলো।
আরো কিছু টুকটাক গল্প করতে লাগলো।
রায়ান ১২ টা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে দেখে আয়ানা গোসলে যাবে বলে জামা কাপড় নিচ্ছে।।
আয়ানা–উঠেছেন?এবার তাহলে আপনি আগে ফ্রেস হয়ে নেন।
রায়ান চোখ মুখ মুছে,,–এখনই যাইতে হবে?
আয়ানা–১২ টা বাজে।নামাজ পড়তে যাবেন তো।
রায়ান–কপালে হাত দিয়ে দেখোতো আমার মনে হচ্ছে শরীর ভালো না।
আয়ানা দ্রুত কাপড় সোফাতে রেখে এগিয়ে এসে রায়ানের কপালে হাতে তলপিট দিয়ে চেক করে বলল–জ্বর তো নেই।
রায়ান আয়ানার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে বলল–এখন শরীর ভালো লাগছে।
আয়ানা–কি পাজি আপনি!
রায়ান–এখনই পাজি বললে তো হবে না।কিছুই করিনি এখনো।
আয়ানা–দেখি ছাড়ুন,,ফ্রেস হয়ে নেন।
রায়ান–যাবো।
কথাটা বলেই আয়ানাকে টেনে বিছানাতে ফেলে চেপে ধরলো।
আয়ানা–আরে কি করছেন আপনি?
রায়ান–আমাকে ঘুম রেখে চলে গেলে কেন?
আয়ানা–আমার তো ঘুম আসছিলো না।আর নড়াচড়া করলে আপনার ঘুমে ব্যাঘাত হতো।তাই।
রায়ান নাকে নাক ঘষে বলল–বুঝলাম।
আয়ানা–তাহলে ছাড়ুন আমায়।
রায়ান আয়ানার গালে চুমু দিয়ে উঠে গেলো।
দিনটা তাদের বেশ গেলো।।বহুদিন পর বাড়ির সবার মুখে হাসি দেখে রেদোয়ানের ও শান্তি লাগছে।সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে রায়ানকে হাসি খুশি দেখে।
রাত ৯ টা,,
আয়ানা–একটা মুভি দেখবো চলুন না দেখি।
রায়ান–খেলা শেষ করে যাচ্ছি।
আয়ানা খপ করে টিভির রিমোট দিয়ে টিভি বন্ধ করে দিয়ে বলল–ল্যাপটপে দেখবো মুভি।রাতে আর কেউ খাবে না।।তাই মুভি দেখবো চলুন।।
রায়ান –ওকে চলো।
ঘরে এসে সোফাতে ঠিক বসলো দুজনে।
হরর মুভি বলে রায়ান ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়েছে।
পাশাপাশি বসে ল্যাপটপে মুভি অন করলো।
মিনিট ১৫ যেতেই আয়ানা রায়ানের বুকে মাথা রেখে একদম চেপে বসলো।
রায়ান একহাতে আগলে বলল–২ ঘন্টার মুভি,,১৫ মিনিটেই এই হাল।।
আয়ানা কোনো কথা বলল না।
রায়ান আয়ানার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে আবারও মুভি দেখাতে মনোযোগ দিলো।
দুজনেই বেশ মনোযোগ দিয়ে মুভি দেখছে।
আয়ানা বারবার কেঁপে উঠছে, হুটহাট ভৌতিক আওয়াজে।
রায়ান ব্যাপারটা খেয়াল করেছে,বেশ মজাও পাচ্ছে।
একপর্যায়ে মুভির ভয়ঙ্কর চেহারা ভুতকে দেখে আয়ানা আরো কেঁপে উঠলো।।
রায়ান –ভয় যখন পাচ্ছো তখন এই মুভি দেখার কি দরকার?
আয়ানা–আপনি আছেন বলে আজ দেখছি বহুবার একা চেষ্টা করেছি পারিনি।(ইনোসেন্ট ফেস করে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল)
রায়ান ল্যাপটপের আলোতে আয়ানার এমন ফেস দেখে কেমন ঘোরের মধ্যে চলে গেলো।
আয়ানার থুতনি ধরে নিজের ঠোঁট দিয়ে আকড়ে নিলো আয়ানার ওষ্ঠদ্বয়।
আয়ানা ও পরম আবেশে চোখ বুজে নিলো।
দুজনের নিশ্বাস একে অপরের মুখে বারি খাচ্ছে।
রায়ান আয়ানার কোমড় টেনে আরো এনে আয়ানাকে জড়িয়ে ধরলো।
আয়ানাও আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে আছে।
রায়ান এক হাতে মুভি পজ করে দেয় তারপর বলে–আয়ু,তুমি আমাকে তোমার জীবনে আরও একটা সুযোগ দিয়েছো।এখন আমি চাই আমাদের সম্পর্ককে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে,,তুমি কি রাজি??
#চলবে
১১০০শব্দ😊