শেষ পাতার তুমি পর্ব ৪

#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৫

আয়ানা দ্রুত ফ্রেস হয়ে ঘর থেকে বের হলো!!

বেরিয়ে দাদির সামনে পড়তেই দাদি কটাক্ষ চোখে তাকিয়ে বলল—বাড়ির বউ তুমি মাইয়া!! এই বেলা বাধাইয়া ওঠলা!!তোমার মায় আর বাপে কি কিছু শিক্ষায় নায়!!আর এইয়া কি পরছো!!!!!

কথাটা শোনা মাত্র সদ্য রান্নাঘর থেকে বের হওয়া রায়ানের মা আয়ানার দিকে তাকালেন!!

দেখল আয়ানা থ্রি পিচ পড়ে আছে!!

রায়ানের মা ছোট্ট ঢোক গিলে নিল কারণ সে জানে তার শাশুড়ীর রেকর্ড এবার চলতেই থাকবে!!

রায়ানের দাদি শাড়ি ছাড়া অন্য পোশাক পড়া তেমন পছন্দ করেন না!!

দ্রুত পায়ে রায়ানের মা এসেই আয়ানার হাত টা ধরে বলল–মাফ করে দিন মা!!ছোট মানুষ তো!!বুঝতে পারে নি!!

রায়ানের দাদি উঠে দাঁড়িয়ে বলল–বিয়ার পর আর কেউ ছোড থাহে না বউমা!!বুঝাইয়া দিও তোমার পোলার বউরে!!

রায়ানের মা–হুমম মা!!আপনি একটু বিশ্রাম নিন ঘরে গিয়ে!!

রায়ানের দাদি যেতেই রায়ানের মা হাফ ছাড়ল!!

আয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখল শ্যামলা মুখখানা ইতিমধ্যে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে!!

চোখ দুটো ভেজা!!

রায়ানের মা আয়ানার মাথায় হাত রেখে বলল–কাঁদে না মা!!তোমার দাদি আদিকালের মানুষ তো তাই!!

আয়ানা ভাঙা কন্ঠে বলল–আমাকে কেউ কখনো বকে নি এভাবে!!

রায়ানের মা হালকা হেসে বলল–আরে পাগলি যে ভালোবাসে সেই শাসন করে!!

আয়ানা মুখ ফুলিয়ে রইল!!

রায়ানের মা আয়ানার হাত ধরে রায়ানের ঘরে নিয়ে এলো!!

এসে দেখে রায়ান ফোন ঘাটছে!!

রায়ানের মা–এই!! তুই বের হ ঘর থেকে!!!

রায়ান বিনাবাক্যে বের হয়ে যেতেই রায়ানের মা দরজা আটকে দিল!!

একটা শাড়ি ধরে বলল–শাড়ি পড়তে জানিস তুই??

আয়ানা আমতা আমতা করে বলল–না আন্টি!!

রায়ানের মা –আচ্ছা আমি পরিয়ে দিচ্ছি, তুই ফ্রেস হয়ে আয়!!!

আয়ানা একটু ফ্রেস হয়ে এসে দাড়ালে রায়ানের মা শাড়ি পরিয়ে দিল!!

রায়ানের মা–গহনা গুলো পরে নে!!আর খেতে চল!!

আয়ানা–আন্টি,একটা কথা বলবো?

রায়ানের মা ভ্রু কুঁচকে বলল–বলবি!! তবে আন্টি ডাকলে কথা শুনবো না!!

আয়ানা মুচকি হেসে বলে–আমাকে ঘরে পরা একটা স্লিপার দিতে পারবে!!আমি খালি পায়ে কখনো ঘরে হাঁটিনি!!মামনি

রায়ানের মা–হুমম দিচ্ছি!! আয় আমার সাথে!!

আয়ানা গুটি গুটি পায়ে রায়ানের মায়ের পিছনে চলে গেল!!

রায়ানের মা একজোড়া স্লিপার দিয়ে আয়ানাকে পড়তে বললেন!!

আয়ানা স্লিপার খানার দিকে একঝলক তাকিয়ে স্লিপারটা পড়ে নিল!!

তারপর রায়ানের মায়ের পিছু পিছু রান্নাঘরে গেল!!!

রায়ানের মা–সবজি কাটতে পারিস??

আয়ানা ঘরের কোনো কাজই জানে না তাও বলল–জি মামনি পারি!!

রায়ানের মা সবজির ঝুড়ি আর বটি দিয়ে বলল–আলু পরে কাটবি আগে পটল টা কাট!!রায়ানের পটল ভাজা বেশ পছন্দের!!!

আয়ানা ছুড়ি দিয়ে শখের বসে মাঝেমধ্যে কাটাকাটি করলেও বটি তে কখনোই কোনো কাজ করেনি!!

আয়ানা ১ টা পটল হাতে নিয়ে কাঁপা-কাঁপি হাতে মাঝখান দিয়ে ফাল দিলো!!

বাকিপটল গুলোও সে একি কাজ করলো!!

রায়ানের মা মুরগির ঝোল টা নামিয়ে ঘুরতেই সে হতবাক!!

মুচকি হেসে আয়ানার সামনে বসে বলল–পারিস না বললেই হতো!!!

আয়ানা মাথা নিচু করে নিল!!

আর বলল–এখন কি হবে??সব তো ফেলে দিতে হবে!!

রায়ানের মা বটি টা নিয়ে বলল–মোটেই না!!দে আমি ঠিক ব্যবস্হা করে নিবো!!তুই দেখ বসে!!!

আচমকা রায়ানের কাশির শব্দে ধ্যান ফেরে আয়ানার!!

সে এতোক্ষণ অতীতে ডুবে ছিল!!!

রায়ানের দিকে ফিরে দেখল চোখ বন্ধ করে কাশি দিয়েই যাচ্ছে!!

আয়ানা উঠে ধীর হাতে পানির গ্লাস এগিয়ে বলল–এইযে পানি!!!

রায়ান কিছুটা পানি মুখে নিতেই আবারও কাশি শুরু হয়!!!

আয়ানা এবার রায়ানের পিঠে হাত বুলাতে থাকে আর মাথায় ফু দিতে থাকে!!!

বেশখানিকপর কাশিটা একটু কমলো!!তবে ইতিমধ্যে রায়ান নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলেছে!!

রায়ান একটু শ্বাস নিয়ে নিল,, আয়ানা রায়ানের মাথা থেকে হাত টা সরিয়ে নিতে গেলেই রায়ান খপ করে হাতটা ধরে ফেলে!!

তারপর আয়ানার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে–আমায় কি একবার সুযোগ দেওয়া যায় না আয়ু??আমিতো তোমাকে ছাড়তে চাইনি!!ইভেন ডিভোর্স টাও ন—

মাঝেই আয়ানা থামিয়ে দিয়ে বলল–আমাকে বাড়ি কবে দিয়ে আসবেন??

রায়ান আবারও আয়ানাকে নিজের সাথে চেপে ধরে বলল–বাড়িতেই তো আছো!!তোমার বাড়ি!!দেখো ঘরটা এখনো তুমি যেভাবে সাজিয়েছিলে তেমনই আছে,কিচ্ছু পাল্টাই নি!!

আয়ানাকে জোড়াজুড়ি করতে দেখে রায়ান মুচকি হেসে বলল–আগের বার থাপ্পড় দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়েছেলে,,এবার কোনোমতেই ছাড়ব না,,ছাড়া পেতে হলে আমার মৃত্যুর অপেক্ষা করতে হবে!!

আয়ানা একদৃষ্টিতে রায়ানের দিকে চোখ রেখে বলল–খুব বেশি সিনেমা দেখছেন আজকাল??

রায়ান হালকা হেসে বলল–হুমম বউ!!দেখছি তো তুমি নামক আমার সিনেমা!!!

আয়ানা–ভুলবেন না ডিভোর্স হয়ে–

রায়ান আয়ানার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলল–চুপ!!হয়নি কোনো তালাক!!আমি তোমাকে তালাক দেইনি!!

আয়ানা–আপনি!!

রায়ানা–হুমম আমি বাজে, খারাপ,অসভ্য!! লাস্ট কয়েকমাসে কয়েকশো বার বলেছো!!নিজের বাচ্চার বাবাকে এসব বলো!!ছি!!

আয়ানা অবাকের সুরে –বাচ্চা—কই দিয়ে আসলো??

রায়ান আয়ানাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল—আসেনি তবে আসবে!!

আয়ানা কথাটা বোঝামাত্রই বলল–অসভ্য!!

রায়ান বাথরুমে চলে গেল!!!

আয়ানা সোফাতে গিয়ে বসে পড়ল!!

রায়ান বেরিয়ে দেখল আয়ানা সোফাতে বসে আছে, বিছানা টাও ঠিক করেনি!!

রায়ান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলল–বিছানাটা ঠিক করো নি কেন??

আয়ানা–আমি কি আপনার বউ যে কাজ করবো আপনার!!!?

রায়ান–বউ না তো কি??

আয়ানা–এক্স বউ!!

রায়ান ধমক দিয়ে বলে–চোপ!!আর একবার ফালতু কথা বললে খবর আছে!!!

আয়ানা এবার চুপ করে সোফাতে পা উঠিয়ে বসে রইল!!

রায়ান চুল ঠিক করে আয়ানার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল–একটু সময় চাই আয়ু!!আর তোমার কাছে একটা সুযোগ চাই!!প্লিজ!!আমি একটা কাজে যাচ্ছি!! তুমি ঘরে থাকো!!বাবা আর দাদিরজানে না তোমাকে তুলে এনেছি!!তাই ঘর থেকে বেরিও না প্লিজ!!যা দরকার মা দিয়ে যাবে!!

আয়ানা মুখটা ঘুরিয়ে নিল!!রায়ান উঠে আয়ানার মাথায় হাত রেখে বলল–আমার পিচ্চি!!!

আয়ানাকে ঘরে লক করে রায়ান বেরিয়ে গেল!!

আয়ানা ওয়াশরুম এ গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে দেখল টেবিলের ওপরে খাবার!!

খাবার হাতে ব্যালকোনির দরজার কাছে যেতেই বুঝতে পারে দরজা বন্ধ!!

হতাশ হয়ে এসে বসে সোফাতে!!

আচমকা কি যেন মনে হতেই আয়ানা রায়ানের টেবিলের কাছে গিয়ে কিছু একটা হাতড়ে খুঁজতে লাগল!!!

কিন্তুু খানিক খোঁজার পরও কাঙ্ক্ষিত নীল ডায়েরী উদ্ধার করতে পারলো না!!

শেষ বার চেষ্টা করবে ভেবেই আরও কিছু সময় হাতড়ে “আশবরী” (হুমায়ুন আহমেদ)বইয়ের নিচে আবিষ্কার করল লাল মলাটে বাঁধা ডায়েরী!!!

আয়ানা সাথে সাথে ভ্রু কুঁচকে বলল–২ বছরের মধ্যে কি ডায়েরির রঙটাও বদলেছে??!!নাকি নতুন ডায়েরি??

আয়ানা ডায়েরি খুলে দেখল সব পাতা ফাঁকা!!

তবে শেষ পাতার আগের পাতায় বেশ ভার মনে হতে লাগল!!শেষ পাতা সামনে এনেই চমকে গেল আয়ানা!!

এতো রায়ান আর তার বিয়ের দিনের ছবি!!

ছবির নিচে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,,

তুমি কি আমার আকাশ হবে?
মেঘ হয়ে যাকে সাজাব
আমার মনের মত করে।

তুমি কি আমার নদী হবে?
যার নিবিড় আলিঙ্গনে ধন্য হয়ে
তরী বেশে ভেসে যাব কোন অজানা গন্তব্যের পথে।

তুমি কি আমার জোছনা হবে?
যার মায়াজালে বিভোর হয়ে
নিজেকে সঁপে দেব সকল বাস্তবতা ভুলে।

তুমি কি আমার কবর হবে?
যেখানে শান্তির শীতল বাতাসে
বয়ে যাবে আমার চিরনিদ্রার অফুরন্ত প্রহর।

(আবুল হাসান)

হঠ্যাৎ করে দরজাতে খট করে আওয়াজ হওয়ায় ঘুরে তাকায় আয়ানা,,,

সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে লাল ডায়েরি হাত থেকে পরে যায়,,

আয়ানার চোখ ভিজে আসে,,—

#চলবে
১০৬৭ শব্দের পর্ব♥️♥️

বিঃদ্রঃ উরাধুরা কমেন্টকারি পাঠক ধৈর্য ধরে পড়ুন!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here