#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#পর্ব_২৪
#Tahmina_Akhter
-ভাইয়া!
ডাকটি অনুসরণ করা সামনে তাকাতেই আদিল দেখতে পেলো তার আদরের বোন টুকি দাঁড়িয়ে আছে। চোখে পানি কিন্তু ঠোঁটে উপচে পড়া হাসি।
-টুকি?
এই ডাকটির জন্য বোধহয় অপেক্ষা করছিলো কাজল। দ্রুতগতিতে ছুটে নিজের ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কেমন আছো,ভাইয়া? এতদিন পর মনে হলো তোমার একটি বোন আছে?
বলে কেঁদে ফেললো কাজল। আদিল,বোনের চোখে পানি দেখে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে ।কাজলের মাথায় হাত রেখে বললো,
-আমার সবসময় তোর কথা মনে পড়ে কারণ আমার আম্মার সবচেয়ে আদরের কন্যা তুই।তাছাড়া, তুই ছাড়া আমার আপন বলতে কে আছে?
কথাগুলো বলে আদিল রায়হান সাহেবের দিকে তাকালো।
রায়হান সাহেব ছেলের মুখে এই কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেললেন। আসলেই তো নিজের করা কাজে আজ তিনি এই শেষ বয়সে এসে সঙ্গী হারা। একটিমাত্র ছেলে সে কি না তার সামনে মানতে চাইছে না যে তার জন্মদাতা এখনো বেঁচে আছে। বড্ড আফসোস হয়, কেন সেদিন তিনি তার অহমিকা ত্যাগ করেনি?
কাজল,তার ভাইয়ের কথা শুনে বুঝতে পারলো তার ভাই এখনো রেগে আছে তাদের আব্বার উপর। কাজলের চোখ গিয়ে পড়লো আয়াতের দিকে। মনে পড়ে গেলো থাপ্পড়ের কথা,আদিলকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-ভাইয়া, তুমি আসার পর এখানে কি যেন একটা শব্দ হয়েছিল?
-তোমার আব্বার পছন্দের জামাইয়ের গালে থাপ্পড় মেরেছি আমি। জিজ্ঞেস করো ওকে, কেন তার আগে হাত তুলেছি?
কাজল অবাক হয়ে একবার আয়াতের দিকে তাকালো, আয়াত কাজলকে ইশারা দিয়ে বললো,
সে কিছুই করেনি।
-ভাইয়া, তুমি বলো। আয়াত কি করেছে?
-মি.নুর আহমেদ আয়াতের সাথে রুশা হাসানের কি সম্পর্ক? আমি তো জানতাম এখানে রুশা হাসান থাকে কিন্তু এখানে আসার পর দেখেছি তোরা সবাই আছিস। নাকি তোর স্বামী তোর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে একটা এতিম মেয়েকে নিজের দিকে আর্কষন করার চেষ্টা করছে?
-ভাইয়া, কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলছো? আয়াত এরকম ছেলে না। আসলে রুশাকে আব্বা এই বাড়িতে নিয়ে এসেছেন, তাই না আব্বা?
মেয়ের কথায় সায় দিয়ে রায়হান সাহেব বললেন,
-রুশাকে আমি এই বাড়িতে এনেছি। কিন্তু, তুমি রুশাকে চেনো কীভাবে? আর কি এমন দেখছো আয়াত আর রুশার মাঝে যে একেবারে একটি ফালতু ব্যাপার ওদেট ঘাড়ে চেপে দিচ্ছো?
-ফালতু ব্যাপার নয়। নয়তো, ওদের দু’জনের মাঝে যে সম্পর্ক আছে কলেজের প্রায় স্টুডেন্ট লক্ষ্য করেছে, তাহলে কি ওরা ভুল কিছু দেখেছে?
-জানি না তুমি কাদের কথা বলছো? কিন্তু, একটা কথা বলতে পারি আমার স্বামী আয়াত সেরকম মানুষ নয় যেরকমটা তুমি ভাবছো, ভাইয়া।আসলে, রুশাকে মাঝে মাঝে হসপিটালের সামনে পৌঁছে দিয়ে ও অফিসে চলে যায়। আর আমার যতটুকু মনে হচ্ছে, যার কাছ থেকে তুমি এই উদ্ভট কথা শুনেছো, সে নিশ্চয়ই রুশার ব্যাপারে তোমার কাছে নেগেটিভ কথা বলেছে যেন তুমি রুশাকে ভুল বুঝো।
কাজলের কথা শুনে এবার আদিলের টনক নড়লো। আসলেই তো সে কিভাবে রিধিমার কথা বিশ্বাস করে নিলো যাচাই-বাছাই ছাড়া!
আদিল আয়াতের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আমি যা জেনেছি তা যেন ভুল হয় নয়তো তোমার কি হাল হবে তুমি নিজেও জানো না?যেহেতু আমার বোন তোমার সাপোর্টে আছে অতএব তোমার মাঝে কিছু একটা আছে। তাই তো আমার বোন তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বামীর পক্ষে কথা বলেছে।
এবার, কাজলের দিকে আদিল বললো
-সরি কাজল, হয়তো আমার জানাতে ভুল হয়েছে।আর তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে রুশার ব্যাপারে. ভাইয়ার কার্ডটি রাখ রাতে ফ্রি হলে কল দিস এই নম্বরে।তাছাড়া, রুশাকে এই ব্যাপারে কিছু বলিস না।
-আমার ব্যাপারে কি বলবে না,আদিল স্যার? আর আপনি এখানে? আমাদের বাড়ি চিনলেন কিভাবে?
রুশা অবাক কন্ঠে বলে ফেললো আদিলের উদ্দেশ্য।
পরিচিত কন্ঠ পেয়ে সামনে অনুসরণ করে তাকাতে দেখতে পেলো রুশা ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে আছে। রুশার মুখে আদিল স্যার শুনে রায়হান সাহেব আর কাজল যেন অবাকের সপ্তম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো।
কাজল পায়ে হেটে গিয়ে দাঁড়ালো রুশার সামনে এরপর, ওকে জিজ্ঞেস করলো,
-তুমি উনাকে চেনো কিভাবে, পুতুল?
-আরে,উনি আমাদের প্রথম বর্ষে কয়েকটি ক্লাস করিয়েছিলেন কিন্তু পরে রংপুর মেডিকেলে চলে যান।
কাজল একবার আদিলের মুখের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার ওর আব্বার মুখের দিকে তো একবার আয়াতের মুখের। মানে ওর মাথায় কাজ করছে না। কিভাবে কি হলো!
-আসলে রুশা হয়েছে কি, আমি আবারও শিশু হাসপাতালে জয়েন করেছি। একটি কাজ ছিল এই এলাকায় তখন মনে হলো তুমি তো এইখানে থাকো
তাই তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম কিন্তু তোমার পরিবারের সাথে দেখা হলো।আর তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে তোমার আপুকে বলছিলাম যেন তোমাকে কিছু না জানায়।তাহলে, আমি এখন আসছি পরে দেখা হবে রুশা, আল্লাহ হাফেজ।
বলে বাড়ি থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে গেলো আদিল।
এতক্ষণ ধরে আদিলের মুখে এতগুলো মিথ্যা শুনে কাজল হা করে তাকিয়ে রইলো আর আয়াত সে তো পারছেনা হেসে গড়াগড়ি খায়। রায়হান সাহেব যেন বেকুব বনে গেলেন মানে উনার ছেলে আদিল একসময় রুশার স্যার ছিলেন।
আদিল চলে যাবার পর রুশা হালকা হেঁসে উপরে তার ঘরে চলে গেলো কেন যেন আজ তার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। হয়তো বেশি রাত জাগার ফল।
————————–
-আয়াত, আপনি তাহলে জানতেন ভাইয়া শিশু হাসপাতালের ডক্টর ছিলো, তাই না?
-হ্যাঁ আমি জানতাম। এইজন্যই তো রুশাকে সেখানে এডমিট করিয়েছি। যাতে তোমার ভাই তার হারানো প্রিয়াকে খুঁজে পায়।
-কিন্তু, রুশা তো পর্দা করে ক্লাস করেছে তাহলে ভাইয়া ওকে চিনতে পেরেছে কিভাবে?
-রুশার, গায়ে আগুন লাগার কারণে রুশা যখন বার্ণ ইউনিটে এডমিট ছিলো তখন তোমার ভাই এসেছিলো রুশাকে হসপিটালে দেখতে।
-তুমি জানো কিভাবে!
-তখন আমি নিচে গিয়েছিলাম কিছু ঔষধ কিনতে। আর রুশার যে ম্যাম আছে না সুলতানা উনি হয়তো তোমার ভাইয়ের কলিগ। তো যখন আমি ঔষধ নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করি তখন দেখতে পাই কে যেন রুশার শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। যখন দেখলো আমি কেবিন এসেছি তখন একপ্রকার দৌঁড়ে কেবিন ছেড়ে বের হয়ে যায়।আমি পিছু পিছু গিয়ে বাইরে যেতেই দেখতে পেলাম তোমার ভাই সুলতানা ম্যামের সাথে করিডর দিয়ে হেটে চলে যাচ্ছে। ঠিক তখনি বুঝতে পেরেছিলাম কোনো একপ্রকারে তোমার ভাই জানতে পেরেছে তার মাধুর্যই হচ্ছে রুশা।
-এতকিছু নিজেই করে ফেলেছো অথচ আমাকে একটিবারও জানানোর প্রয়োজনবোধ করলে না।
-তুমি তখন অসুস্থ ছিলে তাই তোমাকে শিশু হসপিটালের ব্যাপারটি বলতে চেয়েও পারিনি।আর রইলো সেদিনের হসপিটালের কথা সেটা আমার মাথা থেকে কিভাবে যেন বের হয়ে গিয়েছিলো। এখন তুমিই বলো ভুলে যাওয়া কথা তোমাকে জানাই কি করে?
-যা করেছো বেশ করেছো। কিন্তু, আমার এখন ভীষণ চিন্তা হচ্ছে রুশা কি ভাইয়াকে মেনে নিবে আর ভাইয়া তার মনের কথা কিভাবে জানাবে তার মাধুর্যকে?
আর কতদিন অপেক্ষা নামক অনুভূতিতে ডুবে থাকবে আমার ভাইটা!
কাজলের কন্ঠে যেন কান্নার আভাস পেলো আয়াত।
এরইমধ্যে কাজলের মনে পড়লো আদিলের বলা কথাটি, ওকে তো বলে গিয়েছিলো রাতে কল করতে। এখন তো রাত নয়টা, তাহলে একটি কল দিতেই হয়। আদিলের কার্ড থেকে মোবাইল নাম্বার টুকে নিয়ে কল করলো কাজল। দুবার রিং হতেই ওপাশ থেকে কল রিসিভ হলো।
——————————
-জানিস নাজ, আজ না আমাদের বাড়িতে আদিল স্যার এসেছিলো।
-আদিল স্যার তোদের বাড়িতে! কিন্তু, কেন?কিভাবে? উনি তো রংপুরে।
-আসল কথা তো এইখানে। আদিল স্যার আবারও আমাদের হসপিটালে জয়েন করেছে।
-ও মাই গড।এইটা তো অনেক খুশির খবর। বাই দি ওয়ে তোর কপাল কিন্তু আরও খুলে গেছে রুশা।
-কিভাবে আমার কপালে খুলে গেলো?
-কারণ, আদিল স্যারের প্রিয় ছাত্রী আমার প্রাণপ্রিয় সখী রুশা হাসান।
বলে খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠলো নাজ। আর এদিকে নাজকে সমানে বকে যাচ্ছে রুশা।
এতক্ষণ ধরে মোবাইল দুই বান্ধবীর কথোপকথন চলছিলো।
রুশা কথা শেষ করে ঘুমাতে চলে গেলো কারণ কাল সকাল থেকে আবার কোচিং আছে।
———————–
-কি,সুন্দর করে আমার ঘুম কেঁড়ে নিয়ে তুমি শান্তির ঘুম দাও, মাধুর্য!কেউ এইভাবে হুট করে ঘুম থেকে জেগে ফোলাফোলা চোখ নিয়ে কারো সামনে চলে আসে! কেউ যদি তোমার ঘুম চেহারার প্রেমে পড়ে যায় তখন কি হবে? ভাগ্যিস, আমি দেখেছিলাম।
আমি,তোমার কাছে আমার ভালোবাসা এত তাড়াতাড়ি প্রকাশ করতে চাই না। ধীরে ধীরে তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করতে চাই আমি। এরপর,তুমি জানতে পারবে তুমি আদিলের কি হও?
আমিও চাই না তুমি আমার এতদিনের ভালোবাসার গল্প শুনে আমার উপর করুনা করে বা হিসাব মেটাতে যেয়ে আমাকে গ্রহন করো।আমি চাই আমি যেমন তোমায় ভালোবেসে প্রতিটা ক্ষণে ভালোবাসার অনুভূতির অনুতাপে পুড়ছি তুমিও ঠিক একইভাবে আমায় ভালোবেসে অনুভূতির অনুতাপে পুড়ে কয়লা হয়ে আমায় ভালোবাসো। কারণ,ভালোবাসায় যত নিজেকে পোড়ানো যায় ঠিক ততখানি সেই সম্পর্কে নিজেকে বেঁধে রাখা যায়।
অফুরন্ত ভালোবাসা থাকলে কি হবে যদি তুমি আমার সাথে বাঁধাই না পড়লে!
#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#পর্ব_২৫
#Tahmina_Akther
হেমন্তের দিনগুলোতে দিনের প্রথম প্রহরে গা কাটা দিয়ে উঠে শীতল হাওয়ায়।এইসময়ে গ্রাম অঞ্চলে নবান্নের উৎসব চলে,কৃষকের বাড়িতে তখন গোলাভরা ধান,বাড়ির নারীরা মিলে তখন হরেকরকমের পিঠা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাতাসের গতির সাথে মিশে যায় নানান পিঠার মুখরোচক মৌ মৌ করা মিষ্টি গন্ধ।
হেমন্ত আসে আসন্ন শীতের অগ্রীম আহ্বান নিয়ে।
ঝলমলে রোদ্দুরে চারপাশ জুড়ে আলোয় পরিপূর্ণ।
জানালার কোল ঘেষে বসে আছে আদিল। তাপমুক্ত রোদের পরশে বেশ আরাম বোধ করছে আদিলের শরীর।ফজরের নামাজ শেষে আজ আর ঘুমায়নি আদিল,মনে মনে কি যেন ভাবছে? তবে চিন্তা বিষয়ক কিছু নয়,কারণ আদিলের মুখটায় আজ হাসির রেখা দেখা যাচ্ছে একটু পর পর।
টুং শব্দ করে বেজে উঠলো আদিলের মোবাইলটা। এতেই কল্পনাচ্যুত হলো আদিল, উঠে গিয়ে ড্রেসিটেবিলের সামনে থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো, কাজলের মেসেজ এসেছে। মেসেজ ওপেন করতে দেখলো কাজল লিখেছে,
“ভাইয়া,আমি জানি না তোমার মনে কি চলছে। কিন্তু, হলফ করে বলতে পারি, তুমি এত সহজে রুশার কাছে ধরা দিবে না।এখন, রুশাকে পটাতে হলেও তোমার কিছু তো করতে হবে যেন সে তোমার কথা কিছুটা হলেও ভাবতে বাধ্য হবে। তাই তোমার কাছে মাধুর্যের মোবাইল নাম্বার সেন্ড করে দিলাম। আশা করি তোমার প্রেমের শুরুটা হোক আমার সাহায্য দিয়ে। ০১৮******** এই নাম্বারে কল দিলে তোমার বহুল কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির সাথে তোমার সংযোগ স্থাপন হয়ে যাবে। ভালো থেকো ভাইয়া এন্ড বেস্ট অফ লাক”
মেসেজটি পড়তে পড়তে কখন যেন আদিলের ঠোঁটের কোণে হাসি দেখা দিলো।মোবাইলটা রেখে ওয়াশরুম যেয়ে গোসল সেড়ে বের হয়ে এলো।
কার্বাড থেকে শার্ট-প্যান্ট বের করে তৈরি হতে লাগলো আদিল। সাদা শার্ট,কালো প্যান্ট, চুল গুলো একেবারে ছোট করে ছাটাই করা তাই চুল গোছানোর প্রয়োজন হয়নি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে আদিল বলে উঠলো,
-এখন তো আর সেই টিনএজ বয়সের নই আমি পরিপূর্ণ যুবকের কাতারে নাম উঠেছে বেশ কয়েকবছর হয়ে গেলো।কিন্তু, মাধুর্যকে নিজের করে পাবার নেশা যখন মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠে ঠিক তখনি নিজেকে আবারও সেই বয়সের আদিল হতে ইচ্ছে জাগে, যে সময়ে আদিলের চোখ প্রথম মাধুর্যের দেখা পেয়েছিলো । কিন্তু, আফসোস সেইদিন, সেই চলে যাওয়া সময়গুলো আর কখনো ফিরে পাওয়া যাবে না।
বিধাতা, বুঝি আমার ভাগ্যের চাকা ঘুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে, আমার হারিয়ে যাওয়া মানসপ্রিয়াকে বুঝি আবারও ফিরে পাবো।
নয়তো, এত কিছুর পর সে কেন আমার বাড়ির লোকের কাছে থাকবে তাও এত আদর-সোহাগ নিয়ে!
আয়নার সামনে থেকে সরে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে মাধুর্যের নাম্বারে কল ডায়াল করলো আদিল।ওপাশ থেকে কল ধরছে না তৃতীয় বারের সময় কল রিসিভ হলো।
-হ্যালো,কে আপনি?বারবার কল দিচ্ছেন কেন? দেখছেন কল রিসিভ করছি না তারপরও বারবার কল দিয়ে বিরক্ত করছেন।
-রুশা, আমি তোমার আদিল স্যার বলছি।
আদিলের কথাটি ওপাশের ব্যক্তির কর্ণগোচর হতেই কল কেটে গেলো।
আদিলের অবস্থা তখন অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে মানে ওর স্যার কল করেছে এটা শুনে ও কিভাবে কল কেটে দিতে পারলো? হাউ ইট পসিবল!
—————————–
মোবাইলে কল এসেছে শুনে ভীষণ বিরক্ত লাগছে কারণটা হচ্ছে ঘুম। সারারাত ঘুমিয়ে থাকার পরও এখনও বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চাইছে না। বালিশের পাশ থেকে মোবাইল নাম্বার নিয়ে চোখ খুলে তাকাতেই দেখলাম আননোন নাম্বার তাই মোবাইল আবারও রেখে দিলাম। আবারও কল এলো কিন্তু রিসিভ করলাম না । কিন্তু, তৃতীয়বারের সময় যখন কল এলো তখন আর রাগ সংবরণ করতে না পেরে আচ্ছা মতো ঝেড়ে নিলাম। কিন্তু, ওপাশ থেকে যখন বলে উঠলো, উনি নাকি আদিল স্যার। তখন ভয় পেয়ে কল কেটে দিলাম। মানে, আমি আমার স্যারের সাথে উচ্চ গলায় কথা বলেছি। হায় আল্লাহ, এখন এই মুখ আমি স্যারকে দেখাবো কি করে? একটা কল দিয়ে স্যারকে সরি বলি নয়তো স্যার কি মনে করবে কে জানে?
উপরোক্ত,কথাগুলো নিজেকে নিজে বলে আদিলের নাম্বারে কল দিলো রুশা। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে আর বলছে,
-আল্লাহ, এবারের মতো রক্ষা আর কখনো যদি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এলে ভদ্রের সহিত কথা বলব।
দু’বার রিং হতেই কল রিসিভ হলো। ভরাট পুরুষালি কন্ঠে বলে উঠলো,
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম,স্যার আমি রুশা বলছি। আসলে স্যার আমি বুঝতে পারিনি আপনি আমার কাছে কল করেছেন। যদি জানতাম স্যার কখনো ওভাবে কথা বলতাম না। আ’ম এক্সট্রিমলি সরি, স্যার।
রুশা অপরাধী কন্ঠে কথাগুলো বললো।
রুশার কথা শুনে এপাশ থেকে আদিল মুচকি হেসে বললো,
-রুশা, আমাকে সরি বলতে হবে না তবে একটি কাজ যদি করতে পারো তবে মাফ করে দেয়া যায় তোমাকে।
-কি কাজ স্যার?
বেশ উৎফুল্ল কন্ঠে বলে উঠলো রুশা।
-কষ্ট করে আজ তোমাদের গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকবে আমি ঠিক আধঘন্টার মাঝে তোমাদের বাড়ির সামনে আসছি। তোমাকে নিয়ে আজ হসপিটালে যাব।
আদিলের প্রস্তাব শুনে রুশা জড়বস্তুর মতো ন্যায় সম্মতি দিয়ে কল রেখে একদৌঁড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো।কারন,এখন সকাল সাড়ে সাতটা আর আদিল স্যার আসবে আনুমানিক আটটায়। কখন গোসল করবে?কখন নাশতা খাবে? মানে এক হুলুস্থুল অবস্থা।
তাড়াহুড়ো করে গোসল সেরে ভেজা চুলগুলো ক্লিপ দেয়ে আটকে ইন্নার ক্যাপ পড়লো মাথায়, এরপর বোরকা, নিকাব পড়ে ব্যাগ নিয়ে নিচে ডাইনিংয়ে চলে গেলো রুশা। গিয়ে দেখলো, আগে থেকেই রায়হান সাহেব, আয়াত আর কাজল বসে আছে হয়তো রুশার অপেক্ষা করছিলো। রুশা একটি চেয়ারে বসে কাজলকে তাগাদা দিয়ে বললো,
-আপু, তাড়াতাড়ি নাশতা দাও। দেরি হয়ে যাচ্ছে আজ ডাক দিলে না কেন আমায়? দেখলে তো এখন আমার তাড়াহুড়ো করতে হচ্ছে।
কাজল, রুশার নাশতার প্লেট সাজিয়ে রুশার দিকে বাড়িয়ে বললো,
-কই তোমার দেরি হচ্ছে? তুমি তো প্রতিদিন সাড়ে আটটায় বের হও তবে আজ এত তাড়াহুড়ো করছো কেন?
-আসলে, হয়েছে কি আপু? আদিল স্যার আছে না, উনি আমাকে একটু আগে কল দিয়ে বলেছেন, উনি আজ আমাকে সাথে নিয়ে হসপিটালে যাবে। এতক্ষণে হয়তো বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছেন স্যার।
আদিলের কথা রুশার মুখ থেকে শুনে আয়াতের মুখ থেকে ফুস করে চা বেরিয়ে এলো আর রায়হান সাহেব তো অবাক চাহনিতে কাজলের দিকে তাকিয়ে আছেন। কাজল, তার আব্বার নজর থেকে বাঁচার জন্য পারছে না টেবিলের তলায় ঢুকে পড়ে।
কিন্তু,কাজলের বেশ হাসি পাচ্ছে তার ভাইয়ের আর রুশার কান্ড শুনে।
এমন সময় জনি বাড়ির ভিতরে এসে রুশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-আফা মনি,আপনারে একজন খুঁজতাছে। সাদা শার্ট আর কাল প্যান্ট পরনে। আফামনি, আফনারে যে খুঁজতাছে হে যেমনে লম্বা হেমন ঢক সুন্দর! আমার তো হের দিকে মাথা উঁচা কইরা কথা কওন লাগযে।
-আপু, আমি আসি। স্যার বোধহয় চলে এসেছেন।
বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে যাচ্ছিলো কিন্তু পেছন থেকে রায়হান সাহেব রুশাকে ডেকে উঠলেন।
রুশা ঘাড় ঘুরিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে বললো,
-কিছু বলবেন, আঙ্কেল?
-কিছু বলবো না কিন্তু আজ টাকা নিবি না।
রায়হান সাহেবের কথা শুনে রুশা হেসে ফেললো। রায়হান সাহেব চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে রুশার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কিছু টাকা রুশার হাতের মাঝে গুঁজে দিয়ে বললো,
-আল্লাহ হাফেজ, ভালো থাকিস। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসিস আর তোর এই স্যারকে বারণ করে দিবি যেন তোকে আর নিতে না আসে। এলাকার কেউ দেখলে ব্যাপারটা কেমন দৃষ্টিকটু দেখাবে, বুঝতেই পারছিস মা।
রুশা রায়হান সাহেবের কথায় হ্যাঁসূচক মাথা নাড়িয়ে বাড়ির বাইরে চলে গেলো।
রুশা গেটের কাছাকাছি যেতেই দেখলো আদিল কারের একপাশের ডোর খুলে রেখেছে, হয়তো রুশার জন্যই খোলা রেখেছে। রুশা কারে না উঠে প্রথমেই আদিলকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-সরি স্যার, আমি আসলেই বুঝতেই পারিনি।
-আমি বুঝতে পেরেছি। এখন জলদি কারে উঠে বসো। দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের।
রুশা কাঁপা শরীর নিয়ে কারে উঠে বসলো। রুশার সিট বেল্ট বেঁধে নেয়া শেষ হতেই কার স্টার্ট করলো আদিল।
————————
-আব্বা, আপনি কিন্তু এবারও ভাইয়ার ব্যাপারে বেশ বাড়াবাড়ি করছেন।
-কিসের বাড়াবাড়ি করছি আমি, কাজল?
-আদিল যদি রুশার সাথে ফ্রেন্ডলি চলতে চায় তবে প্রবলেম কোথায়,আব্বা?
#চলবে
#