শেষ বিকেলে তুমি আমি-১৮

#শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#আলিশা
#বোনাস_পার্ট

স্মরণ নিজের কথাকেই শেষ কথা করে নিয়ে আমাকে বদ্ধ অবস্থাতেই রেখে দিলো। সে মিথ্যা কিছু বলেনি। হয়তো সত্যিই আমি চলে যেতাম। বড্ড মন খারাপ বুকে চেপে তার বহু কথার এক কথাও না শুনে পারি জমাতাম নিজ গন্তব্যে।

— ওন্ট ইউ গো উইথ মি, খেয়া?

আবেগে যেন সিক্ত স্মরণের কন্ঠ। আমি দ্বিধার পাহাড় বেয়ে নেমে এলাম, দ্বন্দ্বের দেয়াল ভেঙে দিয়ে তার স্থির চোখে দৃষ্টি রেখে বললাম

— এম আই ইউর বিলাভ অর নিড?

আমার হঠাৎ করা প্রশ্নই দিলো স্মরণ মোটেও প্রস্তুত ছিল না এহেন পরিস্থিতির জন্য। আমি স্থির তাকিয়ে রইলাম। স্মরণ তৎক্ষনাৎ জবাব দিতে পারলো না। বেশ কিছু সময় সে অপলক দৃষ্টিতে দেখে গেলো আমাকে। আমার আঁখি জোড়া ছলছল করে উঠলো। স্মরণ হিমায়িত। সে হিম শীতল কন্ঠে জবাব দিলো

— কি মনে হয়? আমার অনুভূতি গুলো তো আমি বলে দিয়েছি। সেসব শোনার পর যদি তোমার মনে হয় তুমি শুধুই আমার প্রয়োজন তবে তাই।

বিষন্ন স্বরের কন্ঠ তার।

— ভালোবাসা বা না বাসা সম্পূর্ণই আপনার বিষয়। আমি কখনো জোর করে কারো ভালোবাসা চাই না। তবে আপনি কি জানেন? আমার ভালোবাসার সময়সীমা?

স্মরণ বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো আমার দিকে। আমি তার দৃষ্টি অনুসরণ করে বললাম

— ক্লাস নাইন থেকে ভালোবাসি আমি আপনাকে। অনেক বেশি ভালোবাসি। কখনো ভাবিনি আপনাকে এভাবে পেয়ে যাবো। আবার পাওয়ার পর কখনো ভাবিনি আপনি এভাবে আমাকে কষ্ট দিয়ে এতোটা পর করবেন।

কখন যেন আমার গলার স্বরটা উদাসীনতায় নিমজ্জিত হয়েছে। চোখের জল গাড়িয়ে গেছে কোনো এক সময়। স্মরণের মুখাবয়ব স্পষ্ট বলে দিলো সে আমার কথায় দারুণ অবাক। বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ। আমি তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে দূর সমুদ্রে চাইলাম। ভয়ঙ্কর বাতাস। জলন্ত মোমের অগ্নি শিখাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।

— আমার পক্ষে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। সরি। কারো প্রয়োজন হতে আমার আপত্তি নেই। তবে পাশাপাশি প্রিয়জনও হতে চাই।

— প্রিয়জনই মানুষের প্রয়োজন হয়।

— উঁহু! প্রয়োজন মিটে গেলে প্রয়োজনের জিনিসটাকে ফেলে দেওয়া হয়।

স্মরণ স্তব্ধ হয়ে গেলো। সে আগেরই মতো করে বসে আমাকে পর্যবেক্ষণ করলো কিছু সময়। অতঃপর হঠাৎ বলল

— গুরুত্ব না দিয়ে দূরত্বটা বাড়াচ্ছ।

— আমার মনে হয় আমাদের মাঝে সবসময় দূরত্বটাই ছিলো।

— ঘুচে দিতে চাইলাম কিন্তু….

— আমার হাত খুলে দেন। চলে যাবো। রাত হচ্ছে।

স্মরণ কথা বাড়ালো না। তবে যেন ক্ষিপ্ত হলো প্রকাশ্যে। উপচে পরতে লাগলো তার রাগ। তবে বেশ শান্ত ভঙ্গিতে খুলে দিয়েছে আমার হাতের স্কচটেপ। মুক্তি পেয়ে আমি উঠে দাড়ালাম। শাড়ির আচল ঠিক করে একবারও স্মরণের পানে দৃষ্টি না দিয়ে হাঁটতে চাইলাম সম্মুখ পথে। ঠিক তখনই বাঁধা পরলো। আচমকা শাড়ির আচলে টান অনুভব করলাম। অসীম কৌতুহল মনে বসিয়ে পেছন ফিরে চাইতেই সে আমাকে উপেক্ষা করলো পুরোদমে। আমাকে এড়িয়ে দৃষ্টি নিয়ে গেলো সামনের কারো দিকে। কিছুটা উঁচু কন্ঠে হাঁক ছেড়ে বলল

— গাড়িতে একটা প্যাকেট আছে নিয়ে আসো।

আমি ততক্ষণে কপাল ভাজ অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছি। লোকটা হুটহাট কাজ করে বসে। আজ বেজায় বিরক্ত লাগছে তার এই কাজ। শারির আচল টেনে ধরার মানেটা কি? তার উদ্দেশ্য কি?

— ছাড়ু…

সম্পূর্ণ কথা ব্যাক্ত করার পূর্বেই সে হঠাৎ যেন একশো নিউটন বলে টেনে আমায় ধপাস করে ফেলে দিলো চেয়ারে। কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই পকেট থেকে বের করলো দু’টো চুড়ি। আমি সরু চোখে তাকিয়ে রইলাম।

— হাত দাও।

— কেন?

সে জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। ফুঁসে উঠলো ভেতর থেকে। নিজ থেকেই আমার হাত টেনে নিলো নিজের কাছে। মোটা, ভাড়ি চুড়ি একে একে পরিয়ে দিলো হাতে। আমি বাজখাঁই গলায় বলতে চাইলাম কিছু। কিন্তু সে আমাকে দ্বিতীয় বারের মতো নিশ্চুপ করে দিয়ে আমার নাকের নাকফুলে হাত দিলো। আমার অন্তরাল এবার ছেয়ে গেলো বিস্ময় ও বিরক্তিতে।

— আমার নাকের ফুল খুলছেন কেন?

— প্রয়োজনে খুলছি বলবো নাকি প্রিয়জনকে সেইভ রাখার জন্য খুলছি বলবো? কোনটা বললে খুশি হবে? প্রয়োজন শব্দটা তো তোমার পছন্দ না।

আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম তার প্রতিক্রিয়ায়। প্রথমত তার নিশ্বাস আমার চোখে আছড়ে পড়ে অস্বস্তিতে ডুবিয়ে রেখেছে। দ্বিতীয়ত তার এমন কান্ডগুলো। আমার নাক ফুলখুলে সে নিজের আনানো নাকফুল পরিয়ে দিলো। অনেক বড়। নাকের পাটার অর্ধেকটা জুড়ে তার অবস্থান। হাতে মোটা দু’টো চুড়ি। অনেক মোটা। নাকে পুরু বড় নাকফুল।

— এবার যাও। পৃথিবীর যেখানে যেতে ইচ্ছে করে যাও। এবার অঙ্কনের মা কেন? যে কেউ দেখলে বুঝে যাবে তুমি বিবাহিত। তুমি ভাবতে পারো তুমি ফিরতে না চাওয়ার কারণে আমি ভেঙে পরবো দূরে চলে যাবো। অনেক অনেক দূরে। বাট আমি এটা করবো না। প্রশ্নই আসে না। আমি তোমার প্রতি আসক্ত হতে চাইনি। আর না চেয়েছিলাম তোমার জন্য বুকের মধ্যে একটা ব্যাথা। কিন্তু তুমি এগুলো জোর করে স্থাপন করলে। সো, এবার অনেক কিছুই হতে পারে।

কথাগুলোর ফাঁকে ফাঁকে যেন লুকিয়ে ছিলো তীব্র জেদ। আমি শঙ্কিত তার ভঙ্গিতে।

— জাহিন, দ্রুত খেয়ার জান্য মেয়ে গার্ডের ব্যবস্থা করো। আর আজ তুমি রেখে আসো।

কথাটা বলেই স্মরণ অগ্রসর হলো সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে। জাহিন নামের ছেলেটা আমাকে বলল

— ম্যাম প্লিজ আসুন।

চলবে….#শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#আলিশা
#পর্ব_১৮

জাহিন নামের ছেলেটা আমাকে গাড়িতে করে পৌঁছে দিয়ে গেলো প্রিয়াদের বাসায়। মাঝপথে আমি তাকে বড্ড বিরক্তি ছুড়ে দিয়ে বলেছিলাম আমার কোনো গার্ড লাগবে না। আমি কি ভিআইপি কেউ? ছেলেটা শঙ্কিত, ভীতু চোখ নিয়ে আমাকে সাবধান করে বলেছিল

” গার্ড ছাড়া চলার কথা মাথাতেও আনবেন না, ম্যাম। স্যারের আগের ভুলের জন্য অথৈ ম্যাম… এবার আপনি এসব বলছেন? গত কাল স্যার যে ক্রিমিনালদের ধরেছে ওরা অথৈ ম্যামের খুনি। স্যারের সাথে ওদের শত্রুতা ছিলো স্যার ওদের কাজে বাঁধা দেওয়া থেকে। একবার ডিউটি করতে গিয়ে স্যারের থেকে ভুলবশত একটা গুলি লেগেছিল পাচারকারীর ভাইকে। তখন থেকে ওর ভাই হাঁটাচলা করতে পারে না। পঙ্গু হয়ে যায় । এই জেদ থেকে প্রতিশোধ নিলো ওরা। অথৈ ম্যামকে তুলে নিয়ে গিয়ে মে*রে ফেলেছে। ওরা অমানুষের মতো ম্যামকে অত্যাচার করেছে। শারীরিক, মানুষিক। এমনকি ম্যামের গলায় ছুড়ি দিয়ে আঘাত করার আগে স্যারের কাছে ভিডিও কলে আসে। স্যারের সামনেই মা*রা হয়। আপনি দেখবেন স্যার মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক আচরণ করে। স্যার তখন থেকে প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত। ”

আমি শুধু বলবো জাহিনের প্রতিটা বাক্যের দৃশ্য যেন আমার চেখে ফুটে উঠেছিল। আঁতকে উঠলাম আমি এমন খবর শুনে।

বাসায় পৌছালাম এশার নামাজেরও পর। জাহিন যাওয়ার পূর্বে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেলো নতুন একটা ফোনের প্যাকেট। আমার পুরোনো ফোনটা সেই সমুদ্রের তলেই হয়তো হাবুডুবু খাচ্ছে সুখে। নতুন ফোন নিতে আমি আপত্তি করলাম। জাহিন মানলো না। বলল

— আপনি নেওয়ার পর না হয় ফেলে দিয়েন। কিন্তু প্লিজ ম্যাম এখন নিন। নাহলে স্যার আমাকে আস্ত রাখবে না। এমনিতেই সারাদিন বলে, আমি কোনো কাজ ঠিকঠাক করতে পারি না।

একথা শোনার পরও নিতে আমার ঘোর আপত্তি ছিলো। কিন্তু জোর করে আমার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে জাহিন দ্রুত চলে গেলো। আমি হাতে ফোন নিয়ে কিছুটা বিরক্ত মুখে কলিং বেলে চাপ দিলাম। খুব অল্প সময়ের মাঝেই ওপাশ হতে দরজা খুলে দেওয়া হলো। প্রিয়া দরজা খুলেই হৈ হৈ শুরু করে দিয়ে বলল

— খেয়া, কই ছিলি তুই? ঠিক আছিস তুই? আমি তো ভয়ে মরছি এখানে। কোথায় গিয়েছিলি?

আমি নম্র কন্ঠে জবাব দিলাম

— একদল স্মার্ট, ভদ্র, সভ্য ছেলে আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়েছিল।

ও আঁতকে উঠলো।

— রিয়েলি? তোর কোন ক্ষতি করেনি তো?

নীলিমার কন্ঠ। বুঝলাম বাকি দু’জনও হয়তো আছে। শান্ত আর সজিব কি আমাকে খুজতে বেরিয়েছে? ভাবনা সত্যি প্রমাণ করে দিলো প্রিয়া। সে ফোনে বলছে

— দোস্ত বাসায় চলে আয়। চলে আয়, চলে আয়। যার বিয়া তার চিন্তা নাই, ঘুম খালি আমরা করলাম ক্ষয়। সবাই কিডন্যাপ হলে জিনিসপত্র হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে আসে। আর খই একটা নতুন ফোন পাইছে, সোনার মোটা মোটা দু’টো চুড়ি পাইছে। নাকের ওপর বিবাহিত মহিলাদের বড় লোক বউয়ের মতো নাকফুল পাইছে। বুঝলাম না ও কিডন্যাপ হইছিল নাকি ও কাউকে কিডন্যাপ করছিলো। হ্যা দোস্ত….. আমিও ঐটাই বলছি, যদি ডাকাতিই দিবি আমাদের নিয়ে যেতি। আরো বেশি কিছু নিয়ে আসতাম। সিলেটে টুর দিতাম সবাই মিলে।

প্রিয়ার কথার ভঙ্গিতে আমি চোখে উপচে পরা রাগ নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর পানে। কিন্তু প্রিয়া তো পাত্তা দেয় না। আমার চোখের এই দৃষ্টিতে তার এক বিন্দুও হেলদোল হলো না। বরং সে আরো বাজিয়ে নিলো কথার মারপ্যাচ। আমিই খ্যান্ত হয়ে প্রস্থান করলাম ওর সামনে থেকে। ভেবে পেলাম না একটা মেয়ে এতোটা খচ্চর কি করে হতে পারে?

.
প্রথম রোজার জন্য রাতের শেষ প্রহরে ওঠা। অনবদ্য অনুভূতি। নীলিমা গত রাতে প্রিয়াদের বাসায় থেকে গেছে। প্রিয়া ও আমার জোরাজোরিতে। শান্ত আর সজিব আমাকে এক গাদা গালি উপহার দিয়ে চলে গেছে। সবটা যখন সকলে জানলো তখন যেন পারলে আমাকে চোখের ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে ভস্ম করে দেয় ওরা। ওদের একটাই ধারণা জন্মে গেছে, আমি স্মরণের সাথে স্বইচ্ছায় দেখা করতে গিয়েছিলাম। হোক না প্রেমালাপ করতে নতুবা করলার জুস পান করাতে।

.
সেহেরির পর নামাজ পরে শুয়ে পরার দরুন আজ আর সূর্যের প্রথম আভা ঘরে ঢোকেনি। দেখা হয়নি প্রিয়া আর আমার ভোরের সৌন্দর্য। মেহেদী পায়ে কণ্যা যেমন চলে ঢিমা তালে, সে তালে আর হাঁটতে বের হওয়া হয়নি। একদমে ঘুম ছুটে যায় সকাল এগারোটার নাগাদ। তবুও আমার ছোট মুঠোফোনের চিৎকারে। নিভু নিভু চোখের পাতা ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে খুলতেই চোখে ভেসে উঠলো আননোন নাম্বার। মনে দ্বিধা না রেখে রিসিভ করে নিলাম। হতে পারে কোনো স্টুডেন্টের ফোন। কিন্তু ভবনা আমার ভুল হয়ে ধরা দিলো যখন ওপাশ হতে ভেসে এলো চাচা আম্মার কন্ঠ।

— হ্যালো খেয়া? আজ কে একটু তোকে আসতে হবে এবাড়িতে। জলদি চলে আসিস। ঠিক আছে? ইফতারের আগেই। এখানে এসে ইফতার করবি।

ভীষণ ব্যাস্ত কন্ঠ। আমিও ব্যাস্ত হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে বসলাম

— কিন্তু কেন?

— আহা! এতো কথা বলিস কেন? এলেই বুঝবি। তাড়াতাড়ি আসিস।

কথাটা বলেই উনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেন। আমি কিছুটা সময় ভাবনায় ডুবে রইলাম। কিসের এতো জরুরি আহ্বান? যাবো? নাকি যাবো না? যদি যাই তবে আমার নতুন বাসায় ওঠা হবে না আজ।

.
চিন্তার সমুদ্রে পারি দিয়ে অবশেষে ঠিক করলাম যাবো। কিছু জরুরি জিনিস পত্রও আনতে হবে আমার। আমার ঘরের বিছানা, ড্রেসিং, টেবিল, আলমারি ছাড়া নতুন বাসায় আমি থাকবো কিভাবে? কিছুই তো নেই আমার। প্রিয়া আমার সাথে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলো। বাড়িতে ও একা পরে থাকবে। আঙ্কেল আন্টি আজও আসেননি আত্মীয় বাড়ি থেকে।

দু’জনে আছরের পর তৈরি হয়ে নিলাম ওয়ারেসিয়াদের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। একটু হলেও মন খুশিতে নেচে উঠলো। কত মাস হবে নিজের ঘর, নিজের জায়গার ছায়াও মারাইনি? প্রায় দুইমাস। ঘর ছেড়ে, গেট পেরিয়ে প্রশস্ত রাস্তার পাশে দাড়িয়ে রইলাম একটা রিকশার আশায়। খা খা রোদ্দুরের মাঝে তখন হুট করে হাজির হলো একটা প্রাইভেট কার। অনেকটা আমাদের পাশ ঘেঁষে। প্রিয়া চমকে উঠে বুকে থু থু দিলো। আমিও অনেকেই ঘাবড়ে গেছি। এই ঘাবড়ানো অনুভূতির সময়সীমা দীর্ঘ হতে দিতে নারাজ ছিলো যেন জাহিন। গাড়ির দরজা খুলে সে বেরিয়ে এলো। হুটহাট এসে ঝটপট অনুমতি বিহীন ফোনটা লম্বালম্বি ধরে ক্লিক করে বসলো ছবি নেওয়ার উদ্দেশ্যে। আমি পরপর দু’টো অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তের সম্মুখীন হয়ে স্তব্ধ। প্রিয়া বেজায় খেপে গেলো। ক্ষুব্ধ হয়ে বলল

— এই কি করলেন এটা আপনি? সুন্দর মেয়ে দেখলেই হুঁশ থাকে না?

জাহিন যেন চরম অস্বস্তিতে পরে গেলো। সে নিজের জিহ্বা দাঁতের নিচে রেখে বলে উঠলো

— তওবা, তওবা। রোজা রমজানের দিন ম্যাম। আর আমি যে যার তাকে তার কাছেই ছবি তুলে পাঠিয়েছি। সে দুশ্চিন্তায় আছে তার ‘সে’ কেমন করে যাচ্ছে? চুড়ি, নাকফুল আছে কিনা? তার ‘সে’ কে নিয়ে সে ভীষণ সেনসেটিভ। একটা ‘সে’ হারিয়ে সে এখন আরেকটা ‘সে’ হারাতে চায় না। আগের ‘সে’ শ্যামলা ছিলো তবুও অনেক লোক পিছু ঘুরতো। এখনকার ‘সে’ পরির মতো। তাই এবার ডাবল চিন্তা তার।

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম জাহিন নামক ছেলেটার দিকে। বিষয়টা কি? ভাবতে লাগলাম। আমার ভাবনার মাঝে প্রিয়া মৃদু চিৎকার সহিত বলল

— ওরে… খেয়া রে… আমাকে ধর ধর। ইনি কি ‘সে’ ‘কে’ ‘এফ’ ‘যে’ এর কাহিনি শুনালো? মাথা ঘুরছে আমার। কে কার সে? কে আবার যে?

— আপনার না বুঝলেও চলবে। ম্যাম গাড়িতে উঠুন।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here