শেষ বিকেলে তুমি আমি-১৯+২০

#শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#আলিশা
#পর্ব_১৯

মনে এক ঝাঁক প্রশ্ন, পাশে কথার ফোয়ারা চালিয়ে রাখা চঞ্চল প্রিয়াকে নিয়ে হাজির হই চাচার বাড়িতে। বাবার বাড়ি তো আর বলতে পারছি না। সূত্র টেনে চাচার বাড়ি বলে সম্বোধন করলাম। যেহেতু বিয়ের পর আর মেয়েদের ঘরবাড়ি বলে কিছু থাকে না। এখানে এসে আমি সামান্য নয়। বেশ খানিকটা অবাক হই। ভাবনার জোয়ারে ভেসে যাই। এত্তো কিসের আয়োজন? রান্নঘরে যেন এলাহি কারবার। খাবার টেবিলটা সাজানো হয়েছে যেন রাজকীয় সজ্জায়। বাড়ির দেয়াল থেকে শুরু করে আসবাবপত্র ঝকমক করছে এমন করে, মনে হচ্ছে যেন আজ কোনো বিশেষ দিন। আমি খোঁজ করতে শুরু করলাম ওয়ারেসিয়ার। এঘর, ওঘর ড্রয়িং রুম উঁকিঝুঁকি দিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগোলাম। প্রিয়া তখন শরীরের ভার ছেড়ে সোফার মধ্যে গড়াগড়ি খাচ্ছে ড্রয়িং রুমে বসে। সে যে সদর ঘরে ওমন করে গা এলিয়ে বসে আছে তা যেন তার ভাবনাতেই নেই। প্রথম রোজা তাকে কাবু করে ছেড়েছে বেশ। তার সুন্দর ছিপছিপে মিষ্টি মুখটা জুড়ে নিস্তেজ ভঙ্গির ছোটাছুটি চলছে।

আমি রান্নাঘরে উঁকি দিতেই নজর বন্দী হলাম চাচি আম্মার। সে যেন এবারই প্রথম আমাকে দেখে ভীষণ খুশি হলো। প্রফুল্ল চিত্তে, একগাল হাসি নিয়ে তিনি বললেন

— কখন এলি? যা তোর ঘরে গিয়ে বোস। চুলোর কাছে থাকিস না। ওয়ারেসিয়ার কাছে যা।

— ও কোথায় চাচি আম্মা?

— তোর ঘরে।

এরপর আমি একটু কুশল বিনিময় করলাম। তার সাথে রান্নার কাজে হাত লাগানোর ইচ্ছেটাও ব্যাক্ত করলাম কিন্তু সে ছিটেফোঁটাও প্রাধান্য দিলো না আমার ইচ্ছেকে। আমি ফিরেই আসছিলাম রান্নাঘর থেকে। দু কদম সামনে এগিয়েছিলাম এমন সময়ই হঠাৎ চাচি আম্মা ডেকে উঠলেন। পিছু ফিরে চাইলাম। সে অদ্ভুত অভিব্যাক্তি মুখে এঁটে হাতে চামচ নিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন। আমি কুঞ্চিত কপাল নিয়ে তাকে পরখ করে বললাম

— বলেন।

— আজ অঙ….

পুরো কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই হঠাৎ দরজার ওপাশ থেকে কেউ বাঁধা দিলো। সুর তুলে বেজে উঠলো কলিং বেল। চাচি আম্মা তাড়া দিলেন আমাকে। দ্রুত দরজা খোলার তাড়া। আমিও চলে গেলাম। তার অসমাপ্ত কথাখানি যেন ছিলো দরজার ওপাশে। আমি বিস্মিত, অবাক। অবুঝ চোখে তাকিয়ে রইলাম দরজার ওপাশে দাড়ানো মেরুন রাঙা পাঞ্জাবি পরিহিত অঙ্কনের পানে। চমকে উঠলাম যেন।

— আরে আপু? ভেতরে যেতে দেবে না নাকি? দরজা থেকেই আমাদের সাথে চলে যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে বুঝি? কিন্তু আমি তো আমার একমাত্র ভাইয়ের বিয়ের আগা টু গোড়া, গোড়া টু আগা না খেয়ে ছাড়বো না।

মুহূর্তেই অট্টাহাসির রোল পরলো। ওরা মোটে প্রায় দশজন। আমি যেন কাঠের পুতুলে রূপান্তরিত হলাম। যে মেয়ে ভীষণ শখের বসে গড়গড় করে বলল ভাইয়ের বিয়ে খাবে, তার পানে একবার দৃষ্টি রাখলাম। হাত পা যেন অবস হয়ে আসছে আমার। মেয়েটার কথা মস্তিষ্কে পুনরাবৃত্তি করলাম। তৎক্ষনাৎ শরীর অবস হওয়ার পথ ধরলো। চাচি আম্মার প্রতি রাগে কিংবা ভীষণ দুঃখে চোখ নালিশ করতে আহ্বান জানালো অশ্রুবিন্দু কে। এমন কিছু করাটাই বুঝি বাকি রেখেছিল আম্মা?

.
— তোরে কি আমি অঙ্কনের সাথে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি? এমন করছিস কেন? আমি তোকে ছোট থেকে বড় করলাম এর বিনিময়ে একটা কিছু চাইছি তোর কাছে। তুই এমন করছিস।

অবাকের আরো কয়েক ধাপ ওপরে পৌছে গেলাম আমি। অতিথিরা আসন পেতে বসতেই আমি ঝটপট এসে চাচি আম্মার কাছে জবাব চাইতেই সে এমন কথা বলে দিলো নিরদ্বিধায়। ওয়ারেসিয়া আমার পাশেই ছিলো। ও জোর মিনতি করে আমাকে বলল

— আপু তুই আম্মুকে বোঝা প্লিজ। আমি রিফাতকে ভালোবাসি।

চাচি আম্মা ফুঁসে উঠলেন। উনি তেড়ে এসে ওয়ারেসিয়ার গায়ে হাত তুলতে চাইলেন। আমি ওকে আড়াল করে দিলাম। আমার ওপর এবার শুরু হলো তর্জন-গর্জন।

— তুই সরে দাঁড়া। ও আমার মানসম্মান নষ্ট করবে। একটা বস্তির ছেলের সাথে প্রেম করছে। দুনিয়ায় ছেলের অভাব ছিলো? বেকার, বেয়াদব, লাফাঙ্গা, গুন্ডার সাথে সে…

আমি তাদের মা মেয়ের মাঝে দাড়িয়ে ভীষণ অসহায়ত্ব অনুভব করলাম। মুখের ভাষা, শরীরের শক্তি আর মনের জোর সবই হারিয়ে যেন সর্বশান্ত হয়ে গেছি। অঙ্কন আমাকে ভালোবাসে। আমার সমস্ত খোঁজ খবর নিয়ে সে আমার চাচার বাড়ি অব্দি পৌছে গেছে। বিয়ের প্রস্তাব দিতেও তার দেরি হয়নি। পরিবার সমেত আজ প্রথম রোজায় উপস্থিত। এতোকিছু ঘটে গেছে আমার চোখের আড়ালে। কিছুই জানি না আমি। চাচি আম্মা এখানে স্বার্থ খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমার এখন অঙ্কনের সামনে গিয়ে বলতে হবে

” আমি বিবাহিত। আমাকে বিয়ে না করে আপনি ওয়ারেসিয়াকে বিয়ে করে নিয়ে যান। সুখী হবেন। ”

এমনই পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য তাড়া দেওয়া হচ্ছে আমাকে। আমার কথা সে জীবন বাজি রেখেও মানবে। এমনই ধারণা মনে পুষে রেখেছে ওয়ারেসিয়ার মা। আমি মনে মনে খুঁজে গেলাম ছোট আব্বুকে। এই একটা মানুষই পারে পারতো আমাকে এমন অপ্রতিভ অবস্থা থেকে বের করতে। কিন্তু আফসোস। উনি নেই। হয়তো চাচি আম্মা ইচ্ছে করে তার অনুপস্থিতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন।

.
দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড় ছিলো আমার। হাশফাশ করে গেলাম পুরোটা সময়। ঘরে ওয়ারেসিয়ার কান্না। আমার মাথা ভার্তি চিন্তা। একটা সময় গিয়ে মনে পরলো স্মরণের কথা। আপনা আপনি দোষগুলো একে একে চেপে গেলো তার ঘাড়ে। সে যদি সেদিন আমাকে ‘দুঃসম্পর্কের বোন’ বলে পরিচয় না দিতো তবে আজ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। সেই মানুষটা যদি আজ এসে সব খোলাসা করে দিতো তবে সব ধোয়া উবে স্বচ্ছ হতো পরিস্থিতি। আমার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। আমি কিভাবে যাবো এরপর অঙ্কনের সামনে? কিভাবে বলবো, কি বলবো আমি তাকে? প্রিয়ার মুখের দিকে তাকালাম একটু আশা নিয়ে। নীরবে আমি প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম

” কি করবো এখন?”

ও যেন নীরবে পাল্টা উত্তর দিলো

” আমি বুঝতে পারছি না।”

চোখ মুখ শুকিয়ে উঠছে আমার। একটু পর মাগরিবের আজান পরবে। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসছে। আমি হুট করে চাইলাম আমার হাতের দিকে। স্মরণের পরিয়ে দেওয়া চুড়ি। মোটা দু’টো চুড়ি। মনে পরে গেলো গত রাতের কথা। স্মরণ কি তবে জানতো? সে কি জানতো আজ এমন কিছু হবে? ভাবতে গিয়ে মনে হলো সে অবশ্যই জানতো। আর জানতো বলেই সে আমার হাতে অস্বাভাবিক দুটো চুড়ি আর নাকে ফুল পরিয়ে দিয়েছে। জানতো বলেই আমি বাড়ি থেকে বের হওয়ার মুহূর্তেই সে গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।

— খেয়া….. তুই এটা কি করলি?

আচমকা কানে পৌঁছালো চাচি আম্মার ক্ষুব্ধ কন্ঠ। তিনি শুকনো মুখ নিয়ে এগিয়ে আসছেন আমার দিকে। আমার কানের নিকটে মুখ দিয়ে চাপা গলায় বললেন

— তুই স্মরণকে আসতে বলেছিস কেন? তুই কি ওয়ারেসিয়ার ভালো চাস না?

আমি চমকে উঠলাম। স্মরণ এসেছে? চাচি আম্মাকে পাশ কেটে আমি ছুটলাম সদর ঘরের দিকে। মনে মনে স্থির করেই বসলাম আজ নিজের পরিচয় দেবোই আমি। মাঝের দু’টো ঘর পেরিয়ে যেতে হয় ড্রয়িং রুমে। মনে সাহস সঞ্চয় করতে করতে চলছিলাম পথে। আচমকা যেন ধাক্কা খেলাম আমি। কিছুটা চমকে অগোছালো মন মস্তিষ্ক নিয়ে সামনে তাকাতেই চোখে পরলো স্মরণকে। মুখে তার কিঞ্চিৎ বিরক্তি। আচমকা তার দেখা পাওয়ার কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম আমি। পরক্ষণেই আবার সে অপ্রস্তুত ভাব উবে দিয়ে তার কাছে প্রশ্ন করে বসলাম

— ‘দুঃসম্পর্কের বোনের’ বিয়ে খেতে এসেছেন বুঝি?

মনে থোকা থোকা রাগ চেপে রেখে একথা বলতেই সে মুখে জমাতে চাইছিল কোনো এক অভিব্যাক্তি। কিন্তু তৎক্ষনাৎ ভেসে এলো আজানের ধ্বনি। সে এই মুহূর্তে একটা অকল্পনীয় কাজ করে বসলো। প্রথমে নিজের মুখে কিছু একটা নিলো অতঃপর তার একাংশ আচমকা দিয়ে দিলো আমার মুখে। আমি মুহূর্তেই হতভম্ব হয়ে গেলাম। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার পানে। সে পাঞ্জাবির হাতা গুটানোর কাজে ব্যাস্ত হয়ে হয়ে গিলো বলল

— যাক, প্রথম রোজা এক খেজুর দিয়ে ডান। তোমার মনে হয় এমন একটা ইচ্ছেই ছিলো তাই না? এজন্যই দৌড়ে আমার কাছে যাচ্ছিলে। নট ব্যাড।

একথা বলেই সে পা বাড়ালো সামনের দিকে। দুকদম এগিয়ে গিয়ে আবার হঠাৎ পিছু ফিরে বলল

— নামাজ পরে এসে হিসাব বুঝিয়ে দিচ্ছি। আমি দুঃসম্পর্কের বোনের নয় দুঃসম্পর্কের বউয়ের বিয়ে ভাঙতে এসেছি।

চলবে…..#শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#আলিশা
#পর্ব_২০

অবাকের আস্ত একটা পাহাড়, দুশ্চিন্তার নদী আর কেমনতর এক অনুভূতি আমার হাতে তুলে দিয়ে স্মরণ চলে গেলো। চাচি আম্মা ব্যাস্ত পায়ে হেঁটে এসে আবারও জবাব চাইলেন

— তুই কেন জামাইকে ফোন দিয়েছিস?

আমি দিশে হারা দৃষ্টিতে তাকালাম ওনার দিকে। সত্যিটা হলো আমার কাছে আছে একটা ছোট মুঠোফোন। তাতে স্মরণের নাম্বারের অস্তিত্বও নেই। সে যে দামি এক ফোন আমাকে জাহিনের মাধ্যমে দিয়েছে তা এখনো ইনটেক করাই আছে। তাকে আমার ফোন দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

— আমি ফোন করিনি আম্মা।

চাচি আম্মা মানতে নারাজ। সে চাপা গলায় শুরু করলেন তর্জন গর্জন। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে তাকে দেখে গেলাম। এখনো তিনি আগেরই মতো স্বার্থপর। আজও সে আমার প্রতি অন্যায় করে নিজেকে পার করতে চাইছে স্বচ্ছ স্থানে।

.
মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর প্রতীক্ষা, ভাবনা। চাচি আম্মা আমাকে এভাবে ডেকে এনে ফেঁসে দিলো? আমি কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই। কম্পমান হৃদয় নিয়ে স্থির বসে রইলাম। লজ্জার সাগরে ডুবে গেছি অনেক আগে। আমার কাছে অঙ্কন কিংবা স্মরণ দুজনের উপস্থিতই দূরকল্পনার।

অপেক্ষার গন্ডি হলো দশ মিনিটের পথে। আমাকে ডাকা হলো। ছোট চড়ুয়ের মতো আমার ইচ্ছে হলো জানালা দিয়ে সব এড়িয়ে উড়ে যাই দূরে কোথাও। চাচি আম্মা স্থির বসে রইলেন। আমার কেন জানি না চোখে জল নেমে এলো। এক বিন্দু স্বস্তি মনে অবশিষ্ট নেই এসবের কবলে পরে। স্মরণকে মনে মনে দোষারোপ করে গেলাম। আমার করা অভিযোগের পাল্লাটা ক্রমেই ভারি হচ্ছিলো যখন। ঠিক তখনই হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ এলো পাশে। আমার হাতটা ধরলো খুব শক্ত করে অতঃপর যথাসম্ভব দ্রুত বেগে হাঁটা দিলো। কিছুটা চমকে তাকালাম পাশের মানুষটার দিকে। চোখে পরলো অফ হোয়াইট রঙের পাঞ্জাবিওয়ালাকে। কানে বাজলো

— বিয়ে করার ইচ্ছে আছে নাকি? হাঁটতে এতো কষ্ট হচ্ছে কেন? কি মনে হয় তোমার? দাড়িয়ে দাড়িয়ে বউয়ের বিয়ে দেখবো? তারপর প্যানিক অ্যাটাক করে বাসায় যাবো? নেভার ইভার। যেটা আমার ওটা আমারই।

তার কথাগুলো শুনে আমি চলতি পথে হতভম্ব হয়ে গেলাম। সে একপ্রকার টেনে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। ড্রয়িং রুমে পৌঁছেই সে স্থির হলো। তখন আমি এক পলক সকলের মুখ দর্শন করে নিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলাম। কয়েক জোড়া উৎসুক চোখ তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে। আচমকাই আমার মনে হলো স্মরণ ঘামছে। অপ্রস্তুত সে। আমি ঝট করে তার পানে তাকালাম। উপলব্ধিটা মিথ্যা ছিলো না। তার বুকের কম্পিউটার যেন আমি পাশে দাড়িয়ে শুনছিলাম। সে বেজায় অপ্রস্তুত ভাব ঠেলেঠুলে সরিয়ে দিয়ে বলল

— অঙ্কন, খেয়া আমার বউ।

এটুকু বলেই স্মরণ থামলো। আমি চোখ তুলে তাকালোর সাহস করলাম না অঙ্কনের পনে বা উপস্থিত অন্য কারো দিকে। শুরু বুকে দূর্বল একটা জোর নিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম স্মরণের পানে। নজর কাড়া সৌন্দর্যের, গম্ভীর স্বভাবের, আমার সাথে অল্প সল্পতেই রাগ দেখানো লোকটা আজ আমার মনের অবস্থা বড্ড দুরূহ করে দিচ্ছে। নতুন নতুন কাজে কথায় চমকে দিচ্ছে আমাকে।

— আমাদের বিয়ের সময় তুই আন্টি আঙ্কেলের কাছে ছিলি। কানাডাতে। আমাদের বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হয়নি। তাই কাউকে জানানোর কথা ভাবিনি। বাবার জোরাজোরিতে বিয়ে করা। কিন্তু এখন সি মিনস অ্যা লট টু মি।

আমি চোখের পলক না ফেলে এখনও তাকিয়ে রইলাম স্মরণের দিকে। উপস্থিত সকলে বিষ্ময়কর দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে। অঙ্কনই যেন কেবল স্থির, নিষ্প্রাণ হয়ে তাকিয়ে রইলো।

.
যথারীতি একটা ভুল বোঝাবুঝির ইতি হলো। তবে অঙ্কনের মা খালি হাতে ফিরতে বেজায় নারাজ ছিলেন। হুট করে তিনি সকলকে অবাক করে দিয়ে প্রস্তাব করে বসলেন, তার একটা মেয়ে চাই। আজই চাই। যে উদ্দেশ্যে আসা হয়েছে সে উদ্দেশ্য পূরণ করা চাই৷ আর এতোসব ‘চাই’ পূর্ণতা পাবে যদি প্রিয়াকে পাওয়া যায়। প্রিয়া লাফিয়ে উঠলো এ প্রস্তাব শুনে। ভীষণ আপত্তি তার। অঙ্কনের সম্মুখে আপত্তি লুকাতে না পেরে সে বলেই উঠলো

— অসম্ভব, আমি কোনো ছ্যাকা খাওয়া ব্যাক্তিকে বিয়ে করবো না। নেভার।

অঙ্কন প্রতিবাদ করতে ভোলেনি। ধমকে ওঠে। মুহূর্তেই তর্কাতর্কি শুরু হয়ে যায় দুজনার। সকলেই শুধু বিনাবাক্যে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। কেউ বাঁধা বা নিষেধ করতে গেলো না। একটু টক, একটু ঝাল, একটু মিষ্টি কথা দিয়ে তারা যেভাবে ঝগড়া করছিলো তাতে আমার মনে হলো, ওদের সন্ধিটা খারাপ হবে না। সংসারটা জমবে। জানি না আমার প্রতি অঙ্কনের ভালোলাগা আছে নাকি ভালোবাসা। তবে যাই থাকুক। আমি বলবো সব উবে যাক।

.
স্মরণ উৎসাহ নিয়ে ক্ষণিকের মাঝেই ফোন করে কথা বলে নিয়েছে প্রিয়ার মা-বাবার সাথে। খচ্চর মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য বেশ কিছুদিন হলো আঙ্কেলের প্রচেষ্টা ছিলো। ঠিকঠাক ছেলে মিলছিলো না যেন। আজ প্রস্তাব পেয়ে তিনি আসছেন এবাড়িতে। সব দেখে মুখটা শুকিয়ে গেলো চাচি আম্মার। ওয়ারেসিয়াকে নিয়ে চিন্তিত থাকলেও মুখে কিছু বলার সাহস যেন করে উঠতে পারলেন না স্মরণের কারণে। তবে তাকেও অবাক করে দিলো স্মরণ। প্রিয়ার মা বাবার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নিজে হঠাৎ লাপাত্তা ছিলো মিনিট বিশের মতো। এক যোগে সবার যখন আগমন ঘটলো তখন সাথে ছিলো ওয়ারেসিয়ার প্রিয় মানুষটাও। ছেলের মা বাবা বাকি ছিলো না। চাচি আম্মা ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু বলার পূর্বেই স্মরণের উক্তি হলো

— ছোট মানুষ দু’জনেই। বাদ দিন। ওদের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। আপাতত শুধু ওদের বিয়েটা না হয় আমরা দিয়ে রাখি। তারপর যোগ্য হলে ওরা সংসার করবে না হয়৷

চাচি আম্মা আপত্তি জানানোর কথা ভুলে গেলেন। কেন যেন মেনে নিলেন স্মারণের কথা। ছোট আব্বুকে ফেন করা হলো। মুহূর্তেই বাড়িতে উৎসব আমেজ ভর করলো। রোজার দিনে বিয়ে হচ্ছে। যুগের দুষ্কর, গণ্যমান্য ব্যাপার। আমি দেখে যাচ্ছি ব্যাপার গুলো। কিছু বলার ছিলো না আমার। সকলের বাড়িতে এসে জমতে জমতে রাত দশটা পেরিয়ে গেলো। সকলে ভীষণ ব্যাস্ত আলোচনা নিয়ে। গুরুজনদেের ভাবনা। প্রিয়া এরমাঝে আমার নিকট দৌড়ে এসে বলে গেলো

— দোস্ত আমি বলেছিলাম এই ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হওয়া বেডারে বিয়ে করবো না। কিন্তু তোর বুইড়া জামাই আব্বুকে নিয়ে এলো। আমার মা তো ডাক্তার বলতে পাগল। আরো ভয়াবহ কথা হলো আম্মু নাকি এই হৃদয় পোড়া ডাক্তারের পেশেন্ট। আমাকে তো বিয়ে দিয়েই ছাড়বে। নিলীমা, শান্ত, সজিবকে কি ফোন করা উচিত দোস্ত? যদি বিয়েটা সত্যিই হয়ে যায়? আমারও কেন জানি মনে হচ্ছে দশ মিনিটের ঝগড়ার মাঝে আমি আমার বিশ বছরের হৃদয়টা হারিয়ে ফেলেছি।

চঞ্চলতায় যেন প্রিয়া দিশেহারা। আমি কিছুটা বিরক্ত ওর কিছু শব্দে। সোজা কানে আঙুল ঢুকিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম অন্যদিকে। সময় ফুরিয়ে রাত বারোটায় ঘড়ির কাটা। সকলের সিদ্ধান্ত স্থির হলো আজ বিয়ে পরিয়ে রাখা হবে। কাজি হাজির করা হলো। প্রিয়া আর ওয়ারেসিয়াকে সাজিয়ে গুছিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পরলো আমার ওপর। হালকা সাজ। শুধু শাড়ি পরাতেই সমাপ্ত। ছেলেদের কবুল বলার পালা শেষে এঘরে কাজি এলো মেয়েদের মতামত নিতে। আমি দাড়িয়ে ছিলাম প্রিয়া আর ওয়ারেসিয়ার নিকট। বেশ স্বাভাবিক ছিলাম। আমার স্বাভাবিক ভাবটা হত্যা করা হলো। স্মরণ আচমকা আমার পাশ ঘেঁষে এসে দাঁড়িয়ে গাল পরিষ্কার কারার ভঙ্গি করে চাপা কন্ঠে বলল

— তোমার কি বিয়ে বিয়ে ফিলিংস হচ্ছে? আমার কেন জানি বিয়ে বিয়ে পাচ্ছে। তোমাকে আবার বিয়ে করে শক্ত করে বাঁধন দিতে মন চাইছে।

আমি যেন ঠাস করে চমকে উঠলাম। দ্রুত গতিতে মাথা তার দিকে ফেরাতে চাইলাম। সেখানে ঘটলো বিপত্তি। ঘুরতে গিয়ে সংঘর্ষ হলো তার থুতনির সাথে। সে এক ঝাঁক বিরক্তি আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে বলল

— হোয়াট রাবিশ খেয়া? বিয়ের জন্য কেউ এতো পাগল হয়? আমি জাস্ট মজা করছিলাম। কাজি সাহেব বউ ক্ষেপে গেছে। সবার বিয়ে দেখে তারও নাকি বিয়ে করার ইচ্ছে হয়েছে। আমাদের বিয়েটাও পরিয়ে দিন।

স্মরণের কথা শুনে যেন আমি সপ্তম আকাশ থেকে ছিটকে পরলাম। চোখ চরক গাছ হয়ে গেলো। এতো রীতিমতো কৌশল করে ফাঁসানো হচ্ছে আমাকে!

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here