#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_৮
#নন্দিনী_চৌধুরী
১৫.
আজকে মুগ্ধদের কলেজে অনুষ্ঠান।সাদিয়া সেই ১ঘন্টাযাবত বসে আছে মুগ্ধের রুমে সোফায়।কারন মুগ্ধ বুজতেই পারছেনা ও কি পরবে।একবার শাড়ি হাতে নেয় তো একবার থ্রিপিজ।সাদিয়া এভার রেগে বলে উঠে,
সাদিয়া:তুই কি আজকে ঘরে বসে এই কাজ করবি নাকি যাবিও কোনটা?
মুগ্ধ:কি করবো বল বুজতেই তো পারছিনা কি পরবো।
সাদিয়া:ওই খারা আমি তোরে চুজ কইরা দেই। নাইলে তুই চুজ করলে আজকে অনুষ্ঠান শেষ হইবো। তারপর তোর চুজ করা হইব।
সাদিয়া সব জামাশাড়ি চেক করে একটা লাল সোনালি রং মিশানো শাড়ি পছন্দ করলো।
সাদিয়া:এই নে এটা অনেক সুন্দর।তুই এটা পর।
মুগ্ধ শাড়িটা দেখে দেখলো এটা আরিশের দেওয়া বিয়ের প্রথমদিকের শাড়ি।মুগ্ধ শাড়িটা হাতে নিয়ে মুখ মলিন করে বলে,
মুগ্ধ:নারে এই শাড়ি আমি পরতে পারবোনা।
সাদিয়া:এ কেন এতো কষ্ট করে খুজে বেরকরলাম। আর তুই বলস পরবিনা।
মুগ্ধ:বইন দেখ ওখানে অনেক গরম লাগবে। তার মধ্য এই শাড়ি পরলে আমি মরে যামু।তার থেকে আমি বরং এই নীল রং এর শাড়িটা পরি।
সাদিয়া:উম আচ্ছা তাড়াতাড়ি কর।
মুগ্ধ শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।একটু পর চ্যাঞ্জ করে বেরিয়ে আসলো।এরপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে হালকা সেজে নিলো।তারপর চুলগুলা খোপা করে খোপার মাঝে একটা গাজরা লাগালো।
সাদিয়া:বাপরে তোকে তো একদম নীল পরী লাগতাছে রে মুলা😲।
মুগ্ধ:তোকেও কিউট লাগতাছে সাদু পাদু🥱।
সাদিয়া:আচ্ছা চল।
এরপর মুগ্ধ সাদিয়া নিচে আসে।মেহের আর রুহি যাবে পরে।আগে সাদিয়া আর মুগ্ধ যাচ্ছে।
মুগ্ধ:আচ্ছা ভাইয়া আমরা গেলাম।
মেহের:আচ্ছা এই ধর টাকা। আর আমরা পরে আসছি সাবধানে যাবি কেমন।
মুগ্ধ:আচ্ছা ঠিক আছে আসি।
এরপর মুগ্ধ আর সাদিয়া চলে আসলো কলেজে।
সাদাফ আজকে অনেক আগে এসেছে কলেজে।সাদাফ গেটে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো ফোনে। হঠ্যাৎ সামনে তাকিয়ে থমকে যায় সে।একটা নীল পরী এগিয়ে আসছে তার দিকে।সাদাফ অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে মুগ্ধের দিকে।আপনা আপনি মুখ থেকে বের হয়,,
মাসাল্লাহ মেয়েটার নামটাই শুধু মুগ্ধনা মেয়েটার মাঝেও একটা মুগ্ধতা আছে।
মুগ্ধ সাদাফকে খেয়াল না করেই ভিতরে ডুকে যায়।সাদাফ ও তারপর ফোনে কথা বলায় মোনোযোগ দেয়।
সায়মা নিজের রুমে বসে রেডি হচ্চে।আরিশের সাথে তাকে যেতে হবে কলেজের অনুষ্ঠানে।সায়মা রেডি হচ্চিলো তখন ওর ফোনে ওর মায়ের কল আসে।
সায়মা:হ্যা মা বলো।
সালমা:শোন আগামিকাল তোর বাবা কিছুদিনের জন্য বাহিরে যাচ্ছে।তুই আরিশকে কিছু একটা বাহানা দিয়ে বাসায় আসিস।
সায়মা:আচ্ছা দেখি।আরিশ তো বেবির খবর শুনে আমাকে চোখে চোখে রাখে।আমার একদম এসব ভালোলাগছেনা।
সায়মা:এইতো মা আর কিছুদিন একটু ম্যানেজ করে নে এরপর এই বেবির ঝামেলাও চুকে যাবে।
সায়মা:আচ্ছা ঠিক আছে রাখছি।
সালমা ফোন রেখে খাটে বসে বলতে লাগে,
এই মেহেজাবিনের জন্য না আমি জীবনে সুখি হতে পেরেছি। মরে গিয়েও শান্তি দেয়নি।আর এখন ও মেয়ের জন্য আমার মেয়েটা সুখি হতে পারছেনা।উফফ কই যে রেখেগেছে মরার আগে পেপারগুলা।
মুগ্ধ সাদিয়া আর কলেজের বাকি সবাই মিলে কলেজে সব গুছিয়ে ঠিকঠাক করে নিলো।চিপ গেস্টদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা দিতে গেটে মুগ্ধ সাদিয়া আর চারজন দাঁড়াবে।সেই মতো মুগ্ধ,সাদিয়া আর বাকি চারজন ফুল নিয়ে গেটে এসে দাঁড়ালো।একটু পর চলে আসলো অনুষ্ঠানে চিপ গেস্টরা।প্রথমে এসেছে সাদাফের বাবা মুগ্ধ তাকে ফুল দিয়ে স্বাগতম জানালো।এরপর আসলো মেহের রুহি মুগ্ধ আর সাদিয়া ওদের হাতে ফুল দিয়ে স্বাগতম জানালো।এভার পালা আরিশ সায়মার।আরিশ সায়মাকে দেখে মুগ্ধ সাদিয়াকে বললো,
মুগ্ধ:শোন আমার একটু কাজ আছে তুই বাকিরা মিলে এদের সামলা আমি আসছি।
বলেই মুগ্ধ চলে আসলো।সে কোনো আরিশের সামনে পরতে চায়না।আরিশ সায়মাকে বাকিরা ফুল দিয়ে স্বাগতম জানালো।
স্টেজে গিয়ে যে যার যার আসনে বসলো।বসার সময় মেহের আরিশের চোখাচোখি হয়।মেহেরের তো আরিশকে দেখেলেই রাগ উঠে যায়।কিন্তু এটা একটা অনুষ্টানের জায়গা এখানে সে কোনো ঝামেলা করতে চায়না।তাই চুপচাপ বসে পরলো।
এরপর যথারীতো অনুষ্ঠান শুরু হলো।সবাই যার যার মতো পার্ফম করছে।মুগ্ধ সাদিয়া বসে বসে দেখছে।মুগ্ধ যেনো আরিশেএ নজরে না আসে তাই সএ স্টেজের থেকে অনেক দূরে বসে আছে।মুগ্ধ সাদিয়া অনুষ্টান দেখছে তখন মুগ্ধের শাড়িতে জুস ফেলে দিলো রিজবি।
রিজবি:সরি সরি মুগ্ধ আমি খেয়াল করিনি।ধাক্কা লেগে পরেগেছে আমি সরি।
মুগ্ধ:ইটস ওকে।সাদিয়া তুই এখানে থাক আমি এটা ধুয়ে আসছিম
রিজবি:এটাইতো চাই(মনেমনে)
মুগ্ধ ওয়াশরুমে গেলো শাড়িটা পরিষ্কার করতে।মুগ্ধ এক খেয়ালে শাড়ি পরিষ্কার করছে যে ওর খেয়াল নেই কেউ ওয়াশরুমে এসেছে।মুগ্ধ কোমরে কারো স্পর্শে চমকে উঠে পিছনে তাকিয়ে দেখে রিজবি দাঁড়ানো। রিজবিকে দেখে চমকে উঠে মুগ্ধ। একদম ধাক্কায় শরিয়ে দেয় রিজবিকে।
মুগ্ধ:একি রিজবি তুমি এখানে আর তুমি আমার কোমরে হাত দিচ্ছো কেন?
রিজবি:জানেমান এখন তো শুধু কোমরে হাত দিয়েছি একটুপর সব জায়গায় হাত দেবো।
বলেই মুগ্ধের দিকে এগোতে লাগলো।
মুগ্ধ:দেখো রিজবি তুমি আমার দিকে এগোবে না। তুমি ইচ্ছা করে জুশটা আমার শাড়িতে ফেলছো।
রিজবি:রাইট জানেমান।তোমাকে দেখার পর থেকে ঘুম উড়ে গেছে।আই লাভ ইউ জানেমান।
মুগ্ধ:রিজবি আমি কিন্তু চিৎকার করবো বলছি।
রিজবি:করো অনূষ্টানের কাইকের সাউন্ডে তোমার গোলার সাউন্ড শুনা যাবেনা।
বলেই রিজবি মুগ্ধের দিকে হাত বাড়াতে লাগলো।মুগ্ধ ভয়ে শেষ সে কি করবে বুজতে পারছেনা চোখ থেকে পানি পরছে।সব সময় কেন তার সাথেই এমন হয়।রিজবি মুগ্ধের শাড়ির আঁচলে হাত দিতেই পিছন থেকে কেউ ওকে পিঠে ঘুষি মারে রিজবি ছিটকে শরে যায় রেগে চিৎকার করে বলে,
রিজবি:কোন কুত্তা*****আমার গায়ে হাত দিছে।
রিজবি পিছনে ফিরে দেখে সাদাফ দাঁড়ানো।সাদাফের চোখ রাগে লাল হয়ে আছে।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আছে।রিজবি কোনারকম ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,
রিজবি:স.স্যার আপনি।
সাদাফ:পালানোর জন্য দুই মিনিট দিচ্ছি দুই মিনিটে পালাবি। এরপর যেনো কলেজে না দেখি।আজকে কলেজে অনুষ্ঠান বলে বেঁচে গেলি।
রিজবি সাদাফের কথা শুনে একদম ভোঁ দৌড়।
সাদাফ এভার মুগ্ধের দিকে এগিয়ে চিৎকার করে বলে,
সাদাফ:মিনিমাম কোমন সেন্স নেই আপনার মাঝে। একা একা আসছেন ওয়াশরুমে সাদিয়াকে নিয়ে আসতে পারতেন। ডু ইউ হেব এনি আইডিয়া যে আমি যদি এখন না আসতাম তাহলে কি হতো।ভাগ্য ভালো সাদিয়া আমাকে বলেছিলো আপনি একা ওয়াশরুমে আসছেন। আর রিজবি আপনার পিছনে আসছে।এখন কান্না কাটি অফ করে নিচে যান।
মুগ্ধ:জ জি স্যার।
মুগ্ধ আর ওখানে না দাঁড়িয়ে নিচে চলে গেলো।
সায়মা বসে বসে অসয্য লাগছে তাই উঠে কলেজটা ঘুরে দেখছিলো তখন ওর চোখ গেলো একজনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সে মানুষটার দিকে তারপর মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো,
মুগ্ধ!!
সায়মা আরেকটু ভালো করে তাকিয়ে দেখে মুগ্ধ হেটে আসছে আর সাদাফ ওর পিছনে।
সাদাফ মাস্ক পরে থাকায় ভালো করে চেহারাটা বুজা যাচ্ছেনা।সায়মা এভার মুগ্ধের সামনে এসে দাঁড়ায় তারপর মুখ বাকিয়ে বলতে লাগলো
সায়মা:অহ তাহলে তুই এই কলেজে পরিস।আচ্ছা আপু তুই কি বলতো একটু লজ্জা করেনা জানিশ আজকে এখানে আরিশ আসবে জেনেও এভাবে বেহায়ার মতো সেজে এসেছিস।উম তা কাকে দেখাতে এসছিস আরিশকে নাকি অন্য কোনো প্রেমিককে।আহ আমিও না কাকে কি বলছি।
১৬.
সায়মা মুগ্ধকে কথা গুলো বলছে সাদাফের কান তা এড়ায়নি।কিন্তু সাদাফ কিছু বলবে তার আগে সেখানে আরিশ আসে সায়মাকে খুজতে খুজতে এখানে এসে দেখে সায়মা এখানে।
আরিশ:সায়মা তুমি এখা.. আরিশ আর কিছু বলবে তার চোখ যায় মুগ্ধের দিকে।অনেকদিন পর সেই চেনা মুখটা সে দেখলো।আরিশ নিজেকে স্বাভাবিক রেখে সায়মার কাছে এগিয়ে এসে বললো,
আরিশ:এখানে কি করছো তুমি?তোমাকে আমি তখন থেকে খুজতেছি।
সায়মা:এমনি ভালো লাগছিলোনা তাই হাটছিলাম আর হাটতে হাটতে আপুর সাথে দেখা।দেখোনা আরিশ আপুকে দেখে মনেই হচ্ছেনা তোমাকে ছেড়ে আপু খারাপ আছে।দেখো কত সেজেগুজে আসছে।
আরিশ:লোভি মেয়েরা এমনি হয়।এরা হাজার জনকে ছেড়ে আসলেও কষ্ট লাগেনা।এদের চরিত্রটাই এমন।
আরিশের কথা গুলো শুনে মুগ্ধের কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে।আরিশ তাকে চরিত্রহীনা লোভি বললো।সাদাফ এত্তখন লক্ষ্য করছিলো যে সায়মা আরিশকে মুগ্ধকে কিছু বলছে হয়ত খারাপ কিছু বলছে তাইতো মুগ্ধ কান্না করছে।সাদাফ এভার ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলে,
সাদাফ:এক্সকিউজ মি এখানে কি হচ্ছে?
সায়মা:কিছুনা কথা বলছিলাম আমরা ওর সাথে আপনি কে?
সাদাফ:আমি এই কলেজের প্রফেসোর সাদমান হাসান সাদাফ।আপনারা আমার ছাত্রীকে কি বলেছেন যার কারনে সে কাঁদছে?
সায়মা সাদাফ নামটা শুনে চমকে যায়।কপালে ঘাম ঝরতে শুরু করে।
আরিশ:কিছুইনা।উনি কেন কাঁদছে আমরা সেটা জানিনা।
সাদাফ:মিস মুগ্ধ কি হয়েছে আপনি কাঁদছেন কেন?
মুগ্ধ:কিছুনা স্যার আমি আসছি।
বলেই মুগ্ধ দৌড়ে চলে গেলো।সাদাফ আরিশ সায়মার দিকে তাকিয়ে চলে আসলো।আরিশ সায়মাকে নিয়ে আবার স্টেজে আসলো।সায়মার মাথায় এখন একটাই কথা ঘুরছে।
সাদাফ এই কলেজের প্রফেসোর।আর মুগ্ধ এই কলেজেই পড়ে।যদি সাদাফ জেনে যায় সত্যিটা যে আমি মুগ্ধ সেজে ওর সাথে নাটক করেছিলাম।মুগ্ধ কিছুই করেনি।না না এটা হতে দেওয়া যাবেনা।যেভাবেই হোক এই কলেজ থেকে মুগ্ধকে বের করতে হবে।
মুগ্ধ কলেজ থেকে বের হয়ে এসে চিৎকার করে কান্না করছে।যেই কান্না আল্লাহ বেতিতো কেউ দেখছেনা।
আল্লাহ হয় আমাকে নিয়ে যাও নাহলে এসব থেকে মুক্তি দেও আমি আর পারছিনা।যারা অন্যায় করছে তারা দিব্বি ভালো আছে।কিন্তু আমি কোনো অন্যায় না করেও কষ্ট পাচ্ছি। হ্যা আল্লাহ আমাকে নিয়ে যাও আমার মায়ের কাছে নিয়ে যাও।মাকে যে বড্ডো মনে পরছে।
মুগ্ধ একা একা কথা গুলো বলতে বলতে রাস্তার মাঝে এসে পরছে খেয়াল করেনি হঠ্যাৎ একটা গাড়ির স্প্রিডে আসলো মুগ্ধ কিছু বুজে উঠার আগেই……….।
সবাই কলেজের অনুষ্ঠানে মগ্ন এমন সময় দাড়োয়ান দৌড়ে চিৎকার করতে করতে এসে বলছে,
দাড়োয়ান:স্যার স্যার আমাগো কলেজের একটা মাইয়া অই রোডে গাড়ি এক্সসিডেন্টে কইরা পইরা আছে।
দাড়োয়ানের কথা শুনে সবাই চমকে যায় প্রিন্সিপাল সাহেব চিন্তিত হয়ে বলে,
কার এক্সসিডেন্টে হয়েছে?
দাড়োয়ান:মুগ্ধ নামের মেয়েটার এক্সসিডেন্টে হয়েছে।
মুগ্ধের নাম শুনে মেহের বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।সাদাফ না দাঁড়িয়ে দৌড়ে বাহিরে এসে দেখে মুগ্ধ পরে আছে আর রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা।সাদাফ সাথে সাথে মুগ্ধের কাছে গিয়ে ওকে কোলে উঠিয়ে নেয়।মেহের ও দৌড়ে এসে দেখে মুগ্ধের অবস্থা খারাপ মেহের সাদাফকে বলে মুগ্ধকে নিয়ে গাড়িতে উঠতে।সাদাফ মুগ্ধকে নিয়ে পিছনে সিটে বসে মেহের ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।সাদিয়া আর রুহি সাদিয়াদের গাড়িতে করে অদের পিছনে ছোটে।আড়াল থেকে একটা লোক বেরিয়ে আসে ফোন হাতে নিয়ে কল দেয় একজনকে,
লোকটা:কাজ হয়েগেছে মেডাম।মনে হয়না বাঁচবে।
মেহেরের হাত খুব কাঁপছে।সে পারে তো উড়ে যায় হাসপাতালে।চোখ থেকে পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে।সাদাফ মুগ্ধের মাথা কোলে নিয়ে বসে আছে মনে হচ্ছে খুব কাছের কেউ দুড়ে চলে যাচ্ছে।
আরিশ সায়মা দুজনের এখনো দাঁড়ানো কলেজে।মুগ্ধের এক্সসিডেন্টে হয়েছে শুনে আরিশের বুকটা ধক করে উঠেছে।কিন্তু ইগোর কারনে সে যেতে পারছেনা।আর সায়মা ভাবছে সাদাফকে কিভাবে মুগ্ধের থেকে দূরে রাখা যাবে।
২০মিনিটের মাথায় ল্যাবেইট হাসপাতালে এসে পৌছালো মেহেররা।সাদাফ মুগ্ধকে কোলে করে হাসপাতালের ভিতরে ডুকলো।মেহের আগেই কল করে দিছে হাসপাতালে।মুগ্ধকে ইমার্জেন্সিতে নেওয়া হয়েছে।সাদাফের কালো শার্ট রক্তে ভিজে গেছে।রুহি আর সাদিয়া এসে কান্না ভেংগে পরেছে।মেহের চেয়ারের এক কোণায় বসে ডুকরে কাঁদছে।মাকে যেভাবে হারিয়েছে।বোনটাকেও কি আল্লাহ সেভাবে কেরে নেবে।ভাবতেই মেহেরের চোখ বারবার ভিজে যাচ্ছে।
#শেষ_থেকে_শুরু🦋
#পর্ব_বোনাস
#নন্দিনী_চৌধুরী
১৭.
অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে মেহের।চোখ দুটো স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে উপরের লাল বাতিটার দিকে।কখন লাল বাতিটা বন্ধ হবে আর ডাক্তার বের হয়ে তার চড়ুইপাখির খবর দেবে।রুহি সাদিয়ার কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে।চোখ মুখ ফুলে গেছে তিনজনেরই।সাদাফ বসে আছে চেয়ারে।না চাইতেও অচেতন মনে বার বার মুগ্ধের জন্য ভয় লাগছে।মেয়েটাকে সে ভালোমতো চেনেও না অথচ তাও কত কষ্ট লাগছে।একটু পর নার্স বেরিয়ে আসলো থিয়েটার থেকে।নার্সকে আসতে দেখে মেহের সাদাফ এগিয়ে গেলো নার্সের কাছে।
মেহের:নার্স আমার বোন।
নার্স:দেখুন আমাদের AB+ রক্ত লাগবে।কিন্তু এই রক্ত আমাদের ব্লাড ব্যাংকে নেই।আপনাদের মধ্য যার AB+ সে রক্ত দিন।পেসেন্টের অনেক রক্তক্ষরন হয়েছে।
মেহের:আমার তো AB+না এখন কই পাবো এই রক্ত।
সাদাফ:আমার রক্ত AB+।আমি দিবো রক্ত।
নার্স:ওকে আসুন আপনি আমার সাথে।
নার্স সাদাফকে নিয়ে গেলো।আর মেহের গিয়ে সোফায় বসে পরলো।AB+ শুধু ওদের মায়ের ছিলো সেই ব্লাড গ্রুপ পেয়েছে মুগ্ধ।মেহেরের A+.
সাদাফ রক্ত দিয়ে কিছুক্ষনের মাঝে চলে আসলো।মেহের উঠে ওর কাছে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরে বলে,
মেহের:ধন্যবাদ ভাই।আমার বোনকে রক্ত দেওয়ার জন্য।
সাদাফ:এখানে ধন্যবাদের কিছু নেই।একজন মানুষকে বাঁচানো মানুষ হিসাবে আমার কর্তব্য।আপনি মুগ্ধের ভাই?
মেহের:হ্যা আমি আরিয়ান ইসলাম মেহের।ও আমার বোন মেহরুবা ইসলাম মুগ্ধ।
সাদাফ:ওহ আচ্ছা আমি সাদমান হাসান সাদাফ।মুগ্ধের ক্লাসের প্রফেসোর।
মেহের:আই সি আচ্ছা তুমি কি মিস্টার সায়েদ হাসানের ছেলে নাকি?তোমদের নামের অনেক মিল চেহারার অনেক মিল।
সাদাফ:জি উনি আমার বাবা।কিন্তু আপনি ওনাকে চিনেন কিভাবে?
মেহের:আরে ওনার সাথে আমার প্রায় বিজনেস এর ডিল হয়।খুব ভালো মানুষ উনি।
সাদাফ:অহ আচ্ছা।আচ্ছা আমাকে বাসায় যেতে হবে।আমি বাসায় যাচ্ছি বিকালে আবার আসতেছি।সাদিয়া আয়।
সাদিয়া:আচ্ছা।
সাদাফ আর সাদিয়া বাসায় চলে আসলো।সাদাফের মাতো সাদাফের গায়ে রক্ত দেখে ভয় পেয়েযায়।সাদাফ পরে বলবে বলে রুমে এসে গোসল করে নেয়।গোসল করে নিচে এসে দেখে বাবা সোফায় বসা।সাদাফ গিয়ে সোফায় বসে।সাদাফের মা কফি নিয়ে আসে দুজনের জন্য।সাদাফ মাকে বলে,
সাদাফ:মা আমাকে দুটো লাঞ্চ বক্সে খাবার পেক করে দেওতো।
সাদাফের মা:কেন কার জন্য নিবি?আর তোর জামায় তখন রক্ত ছিলো কেন?
সাদাফ:অইজে আমার কলেজের একটা মেয়ে এক্সসিডেন্টে করেছে।তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছি।মেয়েটার বাবার পরিচিত একজনের বোন।
সাদাফের বাবা:কার বোন।
সাদাফ:তোমার কম্পানি যার সাথে প্রায় ডিল করে। আরিয়ান গ্রুপ ওফ কম্পানির মালিক আরিয়ান ইসলাম মেহেরের বোন মুগ্ধ।
সাদাফের বাবা:আচ্ছা মেহের।হ্যা ভিষন ভালো ছেলে।মেহেরাব খানের বড় ছেলে।খুব অল্প বয়সে নিজেকে এই জায়গায় এনেছে।অনেক কষ্ট করে আজ এখানে।
সাদাফ:মেহেরাব খান!
সাদাফের বাবা:হ্যা মেহেরাব খান মেহের বাবা মুগ্ধের বাবা।মেহেরাব আমার অনেক আগের বিজনেস কলিগ ছিলো।এখন আবার তার ছেলেও হয়েছে।মেহেরাব খানের প্রথম পক্ষের ছেলে মেয়ে মেহের মুগ্ধ।তার দ্বিতীয় পক্ষের ঘরে খালি একটা মেয়ে আছে।মেহেরের মা মারা যাওয়ায় তিনি আবার বিয়ে করেছিলেন।
তোমারতো মেহেরাবকে চেনার কথা।
সাদাফ:হ.হ্যা চিনি।মা তোমাকে যা বললাম সেটা করো।আমি একটু আসছি।
বলেই সাদাফ নিজের রুমে এসে ফোন হাতে নিলো।চলে গেলো তার বন্ধ ফেজবক আইডিতে যেটা দুইবছর ধরে বন্ধ।লাস্ট প্রেয়শীর সাথে কথা বলে আইডি অফ করে দিয়েছিলো।সাদাফ প্রেয়শীর আইডিতে গেলো।হ্যা এখানে দেওয়া ডোটার অফ মেহেরাব খান।তার মানে এই মুগ্ধই তার প্রেয়শী।কিন্তু তার প্রেয়শীর তো বিয়ে হয়ে গেছে তারতো স্বামীর বাড়ি থাকার কথা সে এখানে কেন?সাদাফ তড়িঘড়ি করে কলেজে ফোন লাগায়।কলেজের পিয়ন কল রিসিভ করতেই।
সাদাফ:শোনো এই বছর ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে একটা মেয়ে আছে নাম মুগ্ধ। আজকে এক্সসিডেন্টে করেছে। ওর ফরমটা আমাকে মেইল করে পাঠাও ৫মিনিটের মধ্য।
পিয়ন:জি আচ্ছা স্যার।
সাদাফ ফোন হাতে নিয়ে বসে পরলো।সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার মুগ্ধ এখানে তার সামনেই ছিলো কিন্তু সে চিনতে পারেনি কিভাবেই বা পারবে ছয় মাস তো শুধু চোখ দেখেই প্রেম করেছে।ফুল ফেস তো দেখেনি।চিন্তার মাঝেই মেইল আসলো সাদাফের ফোনে।সাদাফ মেইল চেক করে দেখে মুগ্ধের ছবি নাম বাবা মায়ের নাম সব মিলে গেছে।
সাদাফ:যদি এই মুগ্ধ আমার মুগ্ধ হয় তোবে সে এখানে কেন তার স্বামী কোথায়?না আমাকে জানতে হবে ব্যাপারটা।
সাদাফ জলদি করে মায়ের কাছ থেকে খাবার আর সাদিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে পরে হাসপাতালের উদ্দেসে।
সাদাফ হাসপাতালে আসলো রিসিপশোন থেকে জানালো যে মুগ্ধের অপারেশন শেষ তাকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে।সাদাফ রুম নাম্নার জেনে কেবিনে গেলো।কেবিনে গিয়ে দেখে রুহি মুগ্ধের পাশে বসা আর মেহের পাসের সিটের বেডে বসা।মেহের সাদাফকে আসতে দেখে উঠে গেলো ওর কাছে।
মেহের:আরে আসো।
সাদাফ:এখানে আপনাদের জন্য খাবার আছে খেয়ে নেন।
মেহের:এগুলা কি দরকার ছিলো।
সাদাফ:আমি জানি বোনের শোকে আপনারা দুজন সারাদিন না খাওয়া না খেয়ে থাকলে তো আর বোন ঠিক হবেনা।তাই আমি বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসেছি।আপনারা দুজন খেয়ে নিন আমি আর সাদিয়া বসছি এখানে।
মেহের:ধন্যবাদ।তুমি আসলে তোমার বাবা মতো ভালো একজন মানুষ।
মেহের আর রুহি খাবার খেতে লাগলো।আর সাদিয়া আর সাদাফ রুহির পাশে।সাদাফ দাঁড়ানো আর সাদিয়া রুহির পাশে চেয়ারে বসা।মাথায় ব্যান্ডেজ করা মুগ্ধের।হাতে পায়েএ আঘাত লেগেছে সেখানেও ব্যান্ডেজ করা।মেহের খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে আসলো।সাদাফ মেহেরের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেশ করলো,
সাদাফ:ডাক্তার কি বললো কোনো সমস্যা নেই তো?
মেহের:না সমস্যা নেই।কিন্তু মাথায় আঘাতটা কিছু গভির।সারতে সময় লাগবে।আল্লাহ রহমতে আল্লাহ আমার বোনটাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
সাদাফ:আচ্ছা কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
মেহের:হ্যা বলো।
সাদাফ:না আসলে আজকে বাবাকে যখন আপনার আর আপনার বোনের কথা বলি তখন বাবা বললেন আপনারা নাকি মেহরাব আংকেলের ছেলে মেয়ে।আমার জানা মতেতো মুগ্ধের বিয়ে হয়েগিয়েছিলো তো ও এখানে ওর হাজবেন্ড কোথায়?
মেহের:তুমি মিস্টার খানকে কিভাবে চেনো?
সাদাফ:আমার বাবার একসময়ের বিজনেস ফ্রেন্ড ছিলেন তারা।আংকেল প্রায় বিজনেসের কাজে আমাদের বাসায় আসতো বাবাও যেতো তাই চিনি।
মেহের:অহ আচ্ছা হ্যা আমরা মিস্টার খানের সন্তান।আর এটাও ঠিক আমার বোনের বিয়ে হয়েছে।ওকে জোর করে একটা জানোয়ারের কাছে বিয়ে দিয়েছিলো মিস্টার এন্ড মিসেস খান।ছেলেটা দুই বছরের মাথায় আমার বোনকে ছেরে পরোকিয়া করে সেই মেয়েটাকে বিয়ে করেছে।
সাদাফ:জোর করে!
মেহের:হুম আমার বোন যখন এসেসি এক্সাম দেয় তখন ওকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।আমি তখন দেশের বাহিরে ছিলাম তাই বিয়েটা আটকাতে পারিনি।দেশে আসার পর শুনি অই ছেলে আমার বোনকে ছেড়ে পরোকিয়া করে।আমার বোনকে ডিভোর্স দিয়ে ডিভোর্সের চারদিনের মাথায় অন্য একজনকে বিয়ে করেছে।
সাদাফ:অহ আচ্ছা আপনি বসেন আমি আসছি।
সাদাফ বাহিরে এসে কপালে আজ্ঞুল ঘষছে আর মনে মনে বলছে,
জোর করে বিয়ে দিয়েছে।যদি ওকে জোর করে বিয়ে দেয়। তাহলে মুগ্ধ সেদিন কেন আমাকে ম্যাসেজে বলছিলো ও নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করছে আমাকে ও ভালোবাসেনা আমি ওর টাইমপাস।আমার সামার্থ নেই ওর মতো মেয়েকে বউ হিসেবে পাওয়ার।তাহলে অগুলা কি ছিলো।তাহলে কি অইটা মুগ্ধ ছিলোনাহ।কিন্তু সেটা কিভাবে হতে পারে।নাহ মাথায় কিছু আসছেনা।জানতে হবে আমাকে সব যে আসলে ব্যাপারটা কি।এই অংকের হিসাবে কোনো একটা ভুল আছে।সেই ভুলটা কি সেটা আমাকে জানতে হবে।মুগ্ধ যদি অই মুগ্ধ না হয় তাহলে সে কে যে আমার সাথে ছয় মাস ছিলো আমাকে জানতে হবে।
সাদাফ আসতে করে মুগ্ধের কেবিনে আসে মেহের বাহিরে গেছে কিছু মেডিসিন আনতে।রুহি আর সাদিয়া গেছে পাশের দিকটায়।সাদাফ আসতে করে এসে মুগ্ধের পাশে বসলো।মুগ্ধের ক্যানোলা করা হাতের উপর হাত রেখে বললো,
যদি তোমার ভাইয়ের কথা সত্যি হয়। আর যদি সত্যি তুমি সে না হউ। তাহলে তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি তোমাকে কোনো কষ্ট পেতেদেবোনা।আর যদি তুমিই সে হউ তাহলে তোমাকে আমি কষ্ট ফেরত দেবো যা আমি গত দুইবছর পেয়েছি।আমার কেন জানি মনে হয় তুমি সেনা একজন ভাই কোনোদিন বোনের ব্যাপারে মিথ্যা বলবেনা আর দ্বিতীয়ত তুমি যদি সে হতে তাহলে আমাকে দেখার পর তোমার চোখে একটা ভয় অনুশোচনা থাকতো কিন্তু আমি তা দেখিনি।কথা দিচ্ছি মুগ্ধ। তোমার আর আমার সাথে যারা এই কাজটা করেছে তোমাকে আমার থেকে আলাদা করেছে তাদের আমি ছাড়বোনা।সবার আগে আমাকে জানতে হবে মুগ্ধ সেজে আমার সাথে নাটক কে করেছিলো।এরপর জানতে হবে এর পিছনের কারন।
সাদাফ কথা গুলো বলে উঠে দাঁড়ালো।আসতে করে মুগ্ধের কপালে একটা চুমু দিলো।এর মাঝে রুহি সাদিয়া চলে আসছে।সাদাফ সাদিয়াকে নিয়ে মেহেরকে বিদায় জানিয়ে বাসায় চলে আসলো।
নিজের রুমে বসে পাইচারি করছে সায়মা।হাত পা বার বার ভয়ে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে,,,
সাদাফ যদি জানতে পেরেযায় সত্যিটা তাহলেতো সব শেষ।যদি সাদাফ জেনে যায় তাহলে ও সবকিছু জেনে যাবে।আমার এতোদিনের করা প্লান সব নষ্ট হয়ে যাবে।এখন আমি কি করবো।যদি সাদাফ জানতে পারে আমি মুগ্ধ হয়ে ছয় মাস রিলেশন করে ওকে ধোঁকা দিয়েছি তাহলে তো সব খেলা শেষ।উফ গড এই মুগ্ধ আমার জন্য একটা কাঁটা না পারছি গিলতে না পারছি ফেলতে।এখন একটাই উপায় আছে মগ্ধকে সরিয়ে দিতে হবে।নাহলে আমি মা ধোরা পরে যাবো।না মুগ্ধকে বাঁচিয়ে রাখা যাবেনা।কিছুতেই না।
#চলবে