শ্রাবনের মেঘ পর্ব -১৩ শেষ

গল্পের নাম : #শ্রাবনের_মেঘ
লেখিকা : ফারিয়া
পর্ব : ১৩ ( প্রথম খন্ডের সমাপ্তি)

পরেরদিন ভোরেই শ্রাবন মেঘা হ্যালিপ্যাডে গিয়ে সূর্যদয় দেখলো, সূর্যের আলো মেঘার মুখে পড়তেই যেনো মেঘার মায়াবী ভাব দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলো। শ্রাবন একনজরে তার প্রেয়সীকে দেখতে লাগল। সেখান থেকে রুমে যাবে তারা, নাস্তা করে একটু পরে বেড়োবে। বেড়োনোর আগে হুট করে মেঘার পেটে ব্যাথা শুরু হলো। ব্যাথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগলো। তারপর, শ্রাবন অস্থির চিত্তে জিজ্ঞেস করলো,
” মেঘপরী, কি হলো তোমার? হঠাৎ এতো অসুস্থ হয়ে গেলে যে, তোমার কি কোনো সমস্যা আছে? ”

মেঘা বেচারি ব্যাথায় কথা বলতে পারছে না, খুব কষ্ট করে কাপা গলায় বললো,
” আসলে আমার একটা সমস্যা আছে, আমি ওষুধ খেতে ভুলে গিয়েছিলাম। পরে দেখলাম ওষুধ ভুলে ফেলে এসেছি ”

শ্রাবন অনেক কষ্টে নিজের রাগ সামলিয়ে বললো,
” পরে তোমার বিচার আছে, এখন বলো ওষুধের নাম কি? এখানে আশেপাশে কোনো ফার্মেসী আছে কিনা সন্দেহ। ”

মেঘা নাম বলার পর, শ্রাবন রিসিপশনে সেটা বলতেই ওরা বললো, ওদের নিজস্ব ফার্মেসী আছে। ভাগ্যক্রমে সেখানেই ওষুধটি পাওয়া গেলো, শ্রাবন নিয়ে মেঘাকে খাওয়ানোর কিছুক্ষন পরেই মেঘা স্বস্তি পেলো। শ্রাবনের ভয়ানক দৃষ্টি মেঘার রুহ কাপিয়ে দিচ্ছে, অনেক ইনিয়ে বিনিয়ে শ্রাবনকে ম্যানেজ করলো যে ঢাকা গিয়ে বলবে। যদিও শ্রাবন ছাড়ার পাত্র নয়, তবুও মেঘাকে ভ্রমন ইনজয় করার সুযোগ দিলো। তবে ঢাকায় গিয়ে চরম এক বিচার করবে মেঘার। কিছুক্ষন পর মেঘা একটু সুস্থবোধ করতেই ওরা ঘুরতে বের হলো। কংলাক পাহাড়, গোলাপের বাগান ইত্যাদি সব জায়গায় ঘুরলো। বিকাল হতে হতেই আবার রিসোর্টে ফিরে এলো।
🍂
আজ রাজ ঢাকায় স্যাটেল হয়েছে, বিদায়বেলায় তার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা তার প্রিয়তমার কান্নাভেজা চোখ সে দেখেছে। কিন্তু, কিছুই করার নেই। অনেকসময় আমরা সত্যিই খুব নিরুপায় হয়ে পড়ি। সেই ছোট্টবেলা থেকে এই পরীটাকে পছন্দ করে সে। একদিন এক ছেলে রাস্তায় তাকে উত্যক্ত করায়, খুব মা”র মে”রে”ছিলো রাজ। তখন থেকে মেয়েটিও তাকে খুব পছন্দ করা শুরু করে৷ সবধরনের বিপদ থেকে মেঘাকে যেমন রক্ষা করতো, তেমনই তার প্রিয়তমাকেও রক্ষা করতো সে। ওদিকে ইফতি শত চেষ্টা করেও নিশিকে ভুলতে পারছে না। সেই ডাগর ডাগর চোখে দেওয়া কাজল, চুলের মনমাতানো সুঘ্রান কাউকে পা”গ”ল করে দিতে সক্ষম৷ কিন্তু, ইফতির কমতি কি? নিশি কেনো মানা করলো? ও কি অন্য কাউকে ভালোবাসে নাকি নিজের পরিবার মধ্যবিত্ত তাই তার সাথে সম্পর্ক করতে চাইলো না? উফ, আর ভাবতে পারছে না। ইফতি ভাবলো, মেঘা ফিরে এলে ওকেই একটা ব্যবস্থা করতে বলবে এবং মেঘার কাছেই আসল ঘটনা শোনা যাবে৷ এসব ভাবতে ভাবতে রোগী চলে আসায়, চিকিৎসা দিতে মনোযোগী হয়ে গেলো সে।
🍂
পরেরদিন সকালে, মেঘা ভোরে বেলকনিতে দাড়ালো৷ যেনো মনে হচ্ছে মেঘের উপরে দাঁড়িয়ে আছে, এতো সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে সে বিমোহিত হয়ে গেলো৷ হঠাৎ করে গায়ে কিছু মোড়ানো টের পেলো, একটু পিছাতে গিয়ে কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলো। তাকিয়ে দেখলো শ্রাবন তার গায়ে চাদর মুড়িয়ে দিয়েছে, শ্রাবন পিছন থেকে মেঘাকে জড়িয়ে ধরলো। এই প্রথম এমন উষ্ণ আলিঙ্গনে মেঘা কিছুটা কেপে উঠলো, শ্রাবন বুঝতে পেরে ঠোটে একটা দুষ্টুমি হাসি ঝুলিয়ে মেঘাকে বললো,
” এইযে ম্যাডাম, এতো কাপাকাপির কি আছে? এমন কাপাকাপি করলে তো আমার বাবুগুলো আসবে কিভাবে? শুনো, আমার কিন্তু টুইনস বেবী লাগবে ”

মেঘার কান গরম হয়ে গেলো, ভাবা যায়! কিরকম লু”চু এই ব্যক্তি৷ এখনো জড়িয়ে ধরলোই না সে, আর তাতেই উনি টুইনস বেবীতে চলে গিয়েছে। বুঝেও না যে লজ্জা পায়, ধুর। মেঘাকে চুপ থাকতে দেখে শ্রাবন আবারও বললো,
” আচ্ছা ওসব পরে হবে, এখন বলো তুমি চাদর ছাড়া এসেছিলে কেনো? ঠান্ডা লেগে যাবে তো ”

মেঘা বললো,
” আরে এতো সুন্দর লাগছে জায়গাটা! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম চাদরের কথা৷ ঠান্ডা লাগলেও ঘরে ফিরে নিয়ে আসার ইচ্ছে করছিলো না ”

শ্রাবন বললো,
” যেদিন ধ”লা”ই খাবা, সেদিন বুঝবা ব”দ”মা”ই”শ। আচ্ছা এখন কি পেটে ব্যাথা করছে? ”

মেঘা মাথা নাড়িয়ে ঠোটে আঙুল দিয়ে ইশারায় চুপ করে সামনে তাকাতে বললো। সুন্দর এই নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যটি দুজন মানুষ ভালোবাসার আলিঙ্গনে উপভোগ করতে লাগলো। আজ বিকেলে রওনা দেবে ওরা, কক্সবাজার যাওয়ার জন্য। তারপর ওখানে দুদিন ঘুরে নিলগিরিতে যাবে, তারপর সোজা ঢাকায়।
বিকাল বেলা ওরা রওনা দিলো, সময়মতো পৌছিয়ে বিচের কাছের হোটেলে গেলো ওরা। এই হোটেলের নিজস্ব বিচ সাইড ও আছে, সাজেকের মতো কক্সবাজারের এই রুমটির বেলকনি ও খুব সুন্দর। দাড়ালে চাঁদ দেখা যায়, চাদের স্নিগ্ধ আলোতে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ দেখছে শ্রাবন এবং মেঘা। হাতে ধোয়া উঠা কফির মগ, পাশাপাশি কাছাকাছি নববিবাহিত দম্পতি আবারও নিজেদের ব্যক্তিগত সময় উপভোগ করছে।
রাজ ভিডিও কল দিয়েছে, রিসিভ করতেই বললো,
” কিগো মেঘরানী, নিজের রাজ্যে গিয়ে কেমন অনুভূতি? ”
মেঘা হেসে বললো,
” ভাই তুমিও মজা করছো! হুম আমার অনুভূতি ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। এতো ভালোলাগা বলে বোঝানো সম্ভব নয়, আর আজ তো কক্সবাজারে এসেছি৷ দেখ ”

এই বলেই মেঘা ক্যামেরা ঘুরিয়ে দৃশ্যটি দেখালো, রাজ বললো,
” আমি ওখানে গেছিলাম মেঘরানী ”
ওরা আরও কিছুক্ষন কথা বললো, তারপর নিজেদের পরিবারের সাথেও কথা বললো। ওদের আনন্দে সবাই খুব খুশী।
🍂
পরেরদিন সকালে মেঘারা বিচে এসেছে, শ্রাবন মেঘার হাতটি ধরে হাটছে এবং বার বার বলছে,
” মেঘপরী, তুমি কিন্তু পানির বেশী কাছে যাবে না৷ যদি তোমার কিছু হয়ে যায়? আমি নিজেকেও শেষ করে দেবো। আমার কথার একটুও অবাধ্য হবে না বলে দিলাম, নয়তো আমি খুব রেগে যাবো ”

মেঘা বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে বললো,
” আমি কি ছোট বাচ্চা? এতো শাসন করছেন যেনো আমি প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চা আর আপনি হেডস্যার ”

শ্রাবন মেঘার গাল টেনে বললো,
” হ্যাঁ গো, তুমি তো পিচ্চি। তুমি আমার পিচ্চি বউ, আর আমি তোমার হেডস্যার তবে প্রেম এবং রোমান্সের হেডস্যার। বুঝলে পিচ্চি বউ? ”

মেঘা শ্রাবনের বাহুতে থা”প্প”ড় দিয়ে বললো,
” অ”স”ভ্য, এতো অ”ত্যা”চা”র মানা যায় ”

শ্রাবন বললো,
” সবে তো শুরু, সারাটা জীবন সহ্য করতে হবে ”

শ্রাবনের কল আসায় শ্রাবন কলটি ধরলো, কিন্তু আশেপাশে মানুষের শোরগোল থাকায় কথা ঠিকমতো শোনা যাচ্ছিলো না। মেঘাকে পানির কাছে যেতে মানা করে শ্রাবন একটু সাইডে গেলো, ফিরে এসে দেখলো মেঘা সেখানে নেই। আশপাশে অনেক খুজলো কিন্তু পেলো না, হঠাৎ কানে কথা এলো একটা মেয়ে নাকি ডুবে গিয়েছে। শ্রাবনের বুকটা ধক করে উঠলো, তার মেঘপরীকে কি হারিয়ে ফেললো সে? দোষটা তারই, কেনো যে ওকে রেখে গেলো৷ শ্রাবন দিকশূন্য হয়ে রইলো।

সমাপ্ত
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here