সন্ধ্যামালতী পর্ব -শেষ

#সন্ধ্যামালতী
#অন্তিম_পর্ব
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_____________

সন্ধ্যার বাবা মায়ের কথা উঠতেই পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়। সন্ধ্যা দৃষ্টি এদিক ওদিক করতে থাকে। বাদল কিছুটা সময় আয়াশের দিকে আর কিছুটা সময় সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আমি সন্ধ্যার বাবা-মা কাউকে কিছু করিনি।’

আয়াশ শান্ত গলায় বলে, ‘সন্ধ্যার বাবা মা, দাদা কারোরই মৃ’ত্যু টা স্বাভাবিক ছিলো না তা আপনিও জানেন আমিও জানি। তাছাড়া এতগুলো মা’র্ডা’র আপনি করছেন তাহলে এগুলো করেননি কথাটা বিশ্বাসযোগ্য?’

‘বিশ্বাসযোগ্য না হলেও এটাই সত্যি তাছাড়া সন্ধ্যার বাবাকে সন্ধ্যার মা কু’পি’য়ে মে’রে’ছে। আমি না।’

আয়াশ যেনো আকাশ থেকে পড়ে। অবাক দৃষ্টিতে তাকায় পাশে বসাা সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা মাথা নিচু করে বসে আছে কিন্তু তার মধ্যে অস্বাভাবিক কোনো ভাব দেখা যায় না। বাদল হেঁসে বলে, ‘ওর দিকে কি দেখছেন? ‘ও’ নিজেও সবটা জানে।’

এই কথাটার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিলো না আয়াশ। এতো বেশি অবাক হয়েছে যে কথা বলতেই ভুলে গেছে। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রয় সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যার চোখের কোণে তখন অশ্রুর ভীড়। নিজেকে সামলে জড়ানো গলায় সন্ধ্যা বলে,

‘হ্যাঁ। আম্মাই আব্বাকে মে’রে’ছে। বাদল ভাইয়ের অপারেশনের দিন আমি বাড়ি এসে পুরোনো ট্রাঙ্কে একটা কাগজ খুঁজতে খুঁজতে একটা র’ক্তে মাখা দা হাতে পাই। সেদিন আম্মা আমাকে সবটা বলে।’

আয়াশ অবাক কন্ঠে বলে, ‘আন্টি আঙ্কেলকে মা’র’লো কেন?’

সন্ধ্যা তাচ্ছিল্যের সুরে হেঁসে বলে, ‘আপনি জিজ্ঞেস করেছিলেন না আমি আব্বাকে কেন ঘৃ’ণা করি! জানেন আমি আমার আব্বাকে বেষ্ট মনে করতাম। কিন্তু সেদিন যখন তার বিষয়ে আগা গোড়া জানলাম তখন ঘৃণার এক শহর তৈরী হলো। আমার আব্বা ছিলো ওই চ’রি’ত্র’হী’ন গুলোর আরো একজন। আব্বা প্রায়ই নেশা করে আম্মাকে মা’র’তো। অনেক মেয়ে, মহিলাকে বি’রক্ত করতো আম্মা সব মুখ বুজে সহ্য করতো। আমি কখনোই এসব জানতে পারিনি। মূলত আম্মাই জানতে দেয়নি। একদিন রাতে আমার আব্বা নেশা করে পাশের গ্রামের এক মেয়েকে…’

কন্ঠ জড়িয়ে যায়। কথাগুলোও আটকে যায়। চোখ গুলো তিরতির করে কাঁপতে থাকে। আয়াশ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সন্ধ্যা দম নিয়ে ফের বলে, ‘পাশের গ্রামের এক মেয়ের সাথে বা’জে কাজ করে তাকে মে’রে গাছের সাথে ঝু’লি’য়ে দেয়। আব্বা নেশার ঘোরে আম্মাকে এসব বলেও ফেলে। আম্মার সেদিন প্রচুর রাগ হয়, ঘৃ’ণা হয়। এমন নোং’রা মানুষ তার স্বামী মাথায় আসতেই ঘৃ’ণায় গা গুলিয়ে ওঠে। করে বসে এক ভয়ং’কর কাজ। দা দিয়ে কু’পি’য়ে দেহ থেকে মা’থা আ’লাদা করে দেয়। আম্মার যদি জে’ল হয় তাহলে আমার কি হবে ভেবেই আব্বার মৃ’ত্যু এক্সি’ডেন্ট বলে দেয়।’

সন্ধ্যা ফুঁপিয়ে ওঠে। আয়াশ আগলে নেয় সন্ধ্যাকে। কয়েক মিনিট পর সন্ধ্যা ধাতস্থ হতেই আয়াশ আবার বাদলকে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি কিভাবে জানলেন আন্টিই আঙ্কেলকে মে’রে’ছে?’

‘সন্ধ্যার কাছেই শুনেছিলাম।’

‘সন্ধ্যার বাবাকে নাহয় ওর মা মে’রে’ছে কিন্তু ওর মা আর দাদাকে!’

বাগানের ভেতর থেকে মেয়েলী কন্ঠে কেউ বলে, ‘আমার আব্বা আর তার সাঙ্গোপাঙ্গো মিলে সন্ধ্যার মা আর দাদাকে মে’রে’ছে।’

আয়াশ, সন্ধ্যা, বাদল তাকিয়ে দেখে রিনি। রিনি শান্ত ভাবে এগিয়ে এসে বাদলের পাশে বসে। সন্ধ্যা ব্যস্ত কন্ঠে বলে, ‘কি বললি তুই? চেয়ারম্যান কাকা আমার আম্মা আর দাদারে!’

রিনি দীর্ঘশ্বাস নেয়। বলে, ‘হ্যাঁ। আমি আব্বার মুখে নিজে শুনছি।’

সন্ধ্যা শব্দ করে কেঁদে উঠে। ভাঙা ভাঙা ভাবে বলে, ‘আমার আম্মা আর নিরপরাধ দাদা কি করছিলো? চাচা এমন কেন করলো?’

আয়াশ জড়িয়ে ধরে সন্ধ্যাকে। সন্ধ্যা আয়াশকে আকড়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। রিনি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘ফরিদ কাকাকে সবার সামনে জু’তা পি’টা করায় তোর সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো সন্ধ্যা। আব্বা মনে করেন ফরিদ কাকার খু’নের পেছনে তোর কোনো হাত আছে তাই সে সেদিন তোকে মা’র’তে গেছিলো কিন্তু কাকি আর দাদাকে মে’রে’ছে শুধুমাত্র তোকে শিক্ষা দিবে বলে। এমন মেন্টালি সিক মানুষদের কি বলবো বল!’

আয়াশের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। শুধুমাত্র শিক্ষা দেয়ার জন্য কেউ কারো পরিবারকে এভাবে শেষ করে দিতে পারে! জ’ঘ’ন্য মানসিকতরা লোকগুলোর জন্যই আজ সমাজের করুণ অবস্থা। আয়াশ গম্ভীর কন্ঠে বলে, ‘আপনার বাবা মানষিক ভাবে অসুস্থ। ডক্টর দেখান। বাই দ্যা ওয়ে আপনি আপনার কাাকা আর নিজের ভাইকে মা’র্ডার করতে সাহায্য করলেন কেন?’

রিনি তাচ্ছিল্যের সুরে হাসে। চোখে মুখে কাঠিন্যতার ছাপ স্পষ্ট। একবার সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ন’র’প’শু’রা কখনো কারো আপন হয় না ভাইয়া। আমার নিজের ভাইয়ের জন্য যখন দুইটা মেয়ে প্রা’ণ দিয়ে দিলো তখন আমার ছোট সত্ত্বা যেনো বলে উঠলো ‘এরাও বাঁচার অধিকার রাখে না’। ব্যাস! আর কাকার কথা বলতেছেন! ওটা তো আরেকটা জা’নো’য়া’র। বাইরের মেয়েদের কে তো ছাড়েনি সাথে আমাকেও ছাড়েনি। নিজের কাকা হয়ে আমার দিকে কু’ন’জ’র দিয়েছে। সন্ধ্যা যখন ভরা বিচারে ওই প’শুটা কে জু’তা পি’টা করলো তখন প্রচন্ড রকম শান্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু রাতে আব্বা আর কাকার আলোচনা শুনে ফেলেছিলাম। জানতাম তারা এতো সহজে সন্ধ্যাকে ছা’ড়বে না কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি ওর ক্ষ’তি করার চিন্তা করবে ভাবতেও পারিনি। দ্রুত সবটা বাদল ভাইকে জানালে উনি আর আমি মিলে কাকাকেও টু’ক’রো টু’ক’রো করে দিয়েছি।’

আয়াশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সন্ধ্যা তখনো তার প্রশস্ত বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে চলেছে। আয়াশ আরো একবার বাদলের দিকে তাকায়। তার দৃষ্টি আয়াশের বুকে মাথা রাখা সন্ধ্যামালতীর দিকে। আয়াশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। জিজ্ঞেস করে, ‘আপনাকে তাহলে কে এ’ট্যাক করেছিলো? আপনার যা অবস্থা ছিলো তাতে ওভাবে নিজেকে আ’ঘা’ত করা খুবই কঠিন ব্যাপার।’

এবারও উত্তরটা রিনিই দেয়। মাথা নিচু করে মিনমিনে স্বরে বলে, ‘আমার আব্বাই উনাকে মা’রা’র জন্য লোক পাঠিয়েছিলো। আব্বা জেনে গেছিলো আমি বাদল ভাইকে ভালোবাসি এটা তার ইগো হার্ট করেছিলো তাই তো আমার ভালোবাসার মানুষটাকে এক রাতেই মে’রে র’ক্তা’ক্ত করতেও দ্বিধা করেনি।’

আয়াশের যেনো আজ অবাকের ওপর অবাক হওয়ার পালা। রিনি বাদলকে ভালোবাসে বিষয়টা তার বোধগম্যই হয়নি৷ আয়াশ অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, ‘তাহলে বাদল ভাই সন্ধ্যাকে কেন বিয়ে করতে চেয়েছিলো?’

বাদল আস্তে করে বলে, ‘নয়নার প্রাণ প্রিয় ছিলো এই মেয়ে। সন্ধ্যা! এই মেয়েটার আশে পাশে সারাক্ষণই ছিলো বিপদের মেঘ। তাই তো সবসময় বটগাছের মতো ছায়া হয়ে থাকার চেষ্টা করেছি যাতে করে মেয়েটার বিপদ না হয়। বিয়ে করতে চাওয়ারও এই একটাই কারণ ছিলো। আমার হৃদয়ে কিশোরী নয়না ব্যাতীত কারোর জায়গা হয়নি আয়াশ ভাই।’

নয়নার প্রতি ভালোবাসার তীব্র প্রখরতা দেখে রিনির চোখ ভিজে আসে। সাথে তাার ব্যর্থতার হাহাকার। আয়াশের ভীষণ শ্রদ্ধা আসে মানুষটার ভালোবাসার প্রতি। সন্ধ্যা তো আগে থেকেই সবটা জানে তাই সে তেমন অবাক হয় না। তবে বরাবর নয়নার প্রতি বাদলের ভালোবাসা দেখে সম্মান, শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। প্রণয় তো এমনি হওয়া উচিত যেখানে প্রণয়ের মানুষটা না থাকলেও প্রণয় থাকবে আজীবন। পুরোটা জুড়ে না থাকলেও অন্তত এক কোণে সন্তর্পণে ভালোবাসাটা থাকুক চিরকাল। চারদিকে আযানের শব্দে সবাই চুপ করে যায়। আযান শেষ হলে চারজনই উঠে পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে। আয়াশ সন্ধ্যা সামনে গেলে রিনি বাদলকে ডাকে। বাদল চোয়াল শক্ত করে তাকায় তার দিকে। রিনি অসহায় ভাবে বলে,

‘আর কতটা নি’ষ্ঠু’র হবেন বাদল ভাই? আমি তো নয়নার জায়গা চাইনি। আজীবন শুধু আপনাকে নিজের করে চেয়েছি। তবুও কেন আমাকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিচ্ছেন?’

বাদল ভালো করে তাকায় রিনির দিকে। আর মাত্র কয়েকদিন পরই মেয়েটার বিয়ে অথচ সে এখনো বাদলের আশায় বসে আছে। বাদল শীতল কণ্ঠে আওড়ায়,

‘সবাই নিজের হয় না রিনি। তুমি নিজেকে বুঝাও আর বিয়েটা খুশি মনে করে নাও। তোমার বয়সটা এখনো অনেক কম যখন তুমি ম্যাচিউর হবা তখন বাদল নামের কাউরে তোমার মনেও পড়বে না। আবেগে গা ভাসিয়ো না। জীবনের এখনো অনেক বাকি।’

বাদল আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ায় না। গটগট শব্দ তুলে সামনে এগিয়ে যায়। রিনি ছলছল দৃষ্টিতে ভাঙা গলায় আওড়ায়, ‘আপনি আমার না পাওয়া এক আক্ষেপ বাদল ভাই!’

বাদল যখন সন্ধ্যা আর আয়াশের পাশাপাশি আসে তখন সন্ধ্যা ধীর কন্ঠে বলে, ‘মেয়েটা আপনাকে অনেক ভালোবাসে বাদল ভাই। ওকে মেনে কেন নিচ্ছেন না?’

বাদল নিঃশব্দে হাসে। সহজ গলায় বলে, ‘এক হৃদয়ে কি দুই নারীর স্থাান হয় সন্ধ্যা? আচ্ছা একটা কথা বল তুই তো আয়াশ ভাইকে ভালোবাসিস তুই পারবি উনাকে হৃদয়ে রেখে অন্য কাউকে ভালোবাসতে?’

সন্ধ্যা থম মে’রে যায়। আসলেই কি এক হৃদয়ে দুজনের স্থান হয়? কি জানি! পাশ থেকে আয়াশ বলে, ‘এক হৃদয়ে হয়তো দুজনের স্থান হয় না তবে আপনি যাকে হৃদয়ে রেখেছেন তাকে পাওয়া তো দুনিয়ার নিয়মের বাইরে তাই অন্য এক নারীকে ভালোবাসা যায় কি না একবার চেষ্টা করে দেখতেই পারেন!’

বাদল দীর্ঘশ্বাস নেয়। চোখ বন্ধ করে পুরোনো স্মৃতি গুলো মনে করে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে নয়নার সাথে কাটানো খুনশুটি গুলো। চোখ মেলে আয়াশ সন্ধ্যার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার আকাশের দিকে তাকায়। মনে মনে আওড়ায়,

‘আয়াশ সন্ধ্যার জুটি অটুট থাকুক। আজ তুই থাকলে আমি আর তুইও এমন মিষ্টি সম্পর্কে থাকতাম! তুই ওপারে আমাকে ছাড়া আছিস কিভাবে নয়না? তোর কি আমাকে ছাড়া কষ্ট হয় না? তুই ভীষণ পা’ষা’ণ রে। কিন্তু আমি তবুও তোকে ভীষণ ভালোবাসি নয়ন ভীষণ।’

____
পরিশিষ্ট:______________

সন্ধ্যা আয়াশের বিয়ের ৫ বছর পরিপূর্ণ হলো। ৭ মাসের ফোলা পেট নিয়েও সে এসেছে মা, দাদার কবর জিয়ারত করতে। এ নিয়ে মুখ ফুলিয়ে আছে আয়াশ। কতবার নিষেধ করলো এসময় যাওয়ার দরকার নেই সামনে বার যেও কিন্তু সন্ধ্যার জিদের কাছে সে হার মানতে বাধ্য। সন্ধ্যা আর আয়াশকে দেখে এগিয়ে আসে বাদল, রিনি, বকুল, বকুলের স্বামী, বকুলের বাবা-মা। গ্রামে এই গুটিকতকই তার আত্মীয়। ফিরোজ চেয়ারম্যানের ফাঁ’সির আদেশ হয়েছে। সন্ধ্যার মা, দাদার মা’র্ডারের দায় আর বিভিন্ন বে’আইনি কাজের জন্য তাকে ফাঁ’সি দেওয়া হয়েছে। সেদিনের রহস্য গুলো ওই সন্ধ্যা বেলার সাথে সাথেই হারিয়ে গেছে। কিন্তু অকারণে সন্ধ্যার মা, দাদার মৃ’ত্যু মানতে পারেনি আয়াশ। তাই তো অনেক কষ্টে প্রমাণ জোগাড় করে ফিরোজকে আইনী হেফাজতে দিয়েছে। রিনির পরিবারের তখন বেহাল দশা। রিনির বিয়েটাও ভে’ঙে যায়। গ্রামে একটা মেয়ের বিয়ে ভে’ঙে যাওয়া মানেই হাজারটা অ’পমানের শিকার হওয়া। সন্ধ্যা আর আয়াশ অনেক বুঝিয়ে শেষে বাদলকে রাজি করায় রিনিকে বিয়ে করতে। এবং অবশেষে রিনিকে সে বিয়ে করে। নয়না হৃদয়ের এক কোণায় থেকে গেলেও রিনির প্রতি দায়িত্বের কমতি রাখেনি বাদল। যথেষ্ট ভালোবেসে আগলে রাখার চেষ্টা করে। সন্ধ্যাকে দেখেই এক এক করে জড়িয়ে ধরে রিনি, বকুল আর বকুলের মা। বকুলের মা সন্ধ্যার পেটে হাত রেখে বলে,

‘এই পেট নিয়া তোর আওনের কি দরকার আছিলো সন্ধ্যা?’

সন্ধ্যা হেঁসে বলে, ‘ওমা তুমিই তো বলো প্রথম সন্তান মায়ের বাড়িতে হয় তাই তো তোমার কাছে চলে আসলাম। তুমি ছাড়া আমার আর কে আছো বলো কাকি!’

বকুলের মা স্নেহ ভরা চোখে তাকায়। পেছন থেকে একদল কন্ঠে ভেসে আসে, ‘আমরাও আছি আন্টি। বিনা দাওয়াতে চইলা আসছি।’

সবাই পেছনে ফিরে দেখে রানা, আকাশ, তমাল, সাফি, লিজা, জেরিন এবং এদের সবার লাইফ পার্টনারও দাঁড়িয়ে আছে। সবগুলার ৩২ টা দাত দেখে আয়াশ অবাক কন্ঠে বলে, ‘তোরা এখানেও হাজির! তোরা দেখি বউ নিয়ে শ্বশুরবাড়িও আসতে দিবি না।’

লিজা দাত বের করে হেঁসে বলে, ‘বা’সর ঘরে কিন্তু যাইনি। তাই সব জায়গায় যাই এটা কিন্তু বলতে পারিস না তুই।’

আয়াশ দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘বাসর ঘরে না এসে আমাকে উদ্ধার করছিস বইন। এবার মুখ বন্ধ রাখ।’

সবাই ঠোঁট চেপে হাসে। সন্ধ্যা লজ্জায় লাল হয়। রানা এগিয়ে এসে আয়াশের কাঁধে হাত রেখে দাঁত বের করে বলে, ‘তোমার বন্ধুরা যতদিন আছে ততদিন তোমার পিছে পিছে যামুই। কি কস তোরা?’

সবাই একসাথে হৈ হৈ করে ওঠে। এরপর এগিয়ে চলে কবরস্থানের দিকে। সবাই যখন কবর জিয়ারত করতে ব্যস্ত তখন সন্ধ্যা এক দৃষ্টিতে মায়ের কবরের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে আওড়ায়,

‘আমি পরিপূর্ণ আম্মা। দেখো আমার ভরা সংসার। তোমার সন্ধ্যামালতী আর একা না। শুধু তোমারই দেখার সৌভাগ্য হলো না। তুমি ওপার থেকে দোয়া করো তোমার সন্ধ্যামালতী যেনো এভাবেই সব আঁকড়ে বাঁচতে পারে।’

কবর জিয়ারত শেষে আয়াশ আসে সন্ধ্যার কাছে। সন্ধ্যার পেটে হাত বুলিয়ে বলে, ‘কষ্ট হচ্ছে?’

সন্ধ্যা হেসে বলে, ‘জ্বি না শহুরে ডাক্তার। আপনার সন্ধ্যামালতী এবং জুনিয়রের একটুও কষ্ট হচ্ছে না।’

আয়াশও হেঁসে বলে, ‘তোমার মনে আছে প্রথম দেখার কথা? তোমাকে যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমার নাম কি! তুমি তখন কিভাবে খিলখিলিয়ে হেসে উত্তর দিয়েছিলে মনে আছে?’

সন্ধ্যা আয়াশের প্রশস্ত বুকে মাথা রেখে প্রশান্তির হাসি হেঁসে বলে, ‘আমি এক স্নিগ্ধ সন্ধ্যাবেলার সন্ধ্যামালতী শহুরে ডাক্তার। শহুরে ডাক্তারের সন্ধ্যামালতী।’

সমাপ্ত..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here