#সন্ধ্যামালতী (১৯)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
______________
পুরো বাড়ি মেহমানে গিজগিজ করছে। চারদিকে মরিচ বাতির লাল, নীল আলো। অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত আয়াশ, রানা, আকাশ, তমাল আর সাফি। তাছাড়াও রানার কাজিনরাও আছে। আয়াশ সন্ধ্যাকে রানার বোন রুনার কাছে বসিয়ে নিজে কাজ করতেছে। সে ইচ্ছা করেই রুনার কাছে সন্ধ্যাকে রেখে গেছে। লিজা, জেরিনকে দিয়ে তার বিশ্বাস নাই। মেয়ে দুটো মারাত্মক রকমের বুদ্ধি নিয়ে ঘোরাফেরা করে। এসব বুদ্ধিতে মানুষ খুশি কম টাস্কি খায় বেশি। তাই রিস্ক না নিয়ে সন্ধ্যাকে রুনার কাছে রেখে গেছে। রুনা মেয়েটাও বেশ ভালো। এতো ধকলের মধ্যেও সে সন্ধ্যার দিকে পুরো নজর রেখেছে। রানার মুখে যখন সন্ধ্যার কথা শুনেছিলো তখন থেকেই তার ভীষণ ইচ্ছে ছিলো সন্ধ্যাকে দেখার। সন্ধ্যা সুন্দরী বুঝেছিলো কিন্তু এতো ভয়ংকর রকম সুন্দরী তা সে ভাবেনি। সন্ধ্যা এতো লোকজনের মধ্যে হাসফাস করছিলো বসে বসে। উপায় না পেয়ে রুনার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলে,
‘আপু আমি একটু ওদিকটায় যাই? ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে এখানে।’
রুনা হয়তো বুঝলো। প্রথমে যেতে না দিতে চাইলেই পরে আর নিষেধ করলো না। উল্টো সাবধান বাণী জুড়ে দিলো সাথে। সন্ধ্যা রুনার পাশ থেকে উঠে চুপচাপ একপাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তেমন লোকজন না থাকায় সন্ধ্যা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো। সেসময় পাশ থেকে ভেসে আসে পুরুষালী কন্ঠ। সন্ধ্যা পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে অপরিচিত এক পাতলা গঠনের ছেলে ৩২ টা দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে আছে। সন্ধ্যা দৃষ্টি এদিক ওদিক করে চোখ পিটপিট করে তাকায়। অপরিচিত ছেলেটি বলে,
‘হেই সুন্দরী! আমি তুহিন। তুমি?’
সন্ধ্যা জবাব দেয় না। আশে পাশে নজর বুলিয়ে তুহিনের সামনে দিয়ে চলে যেতে নেয়। ঠিক তখনই হাত টেনে ধরে তুহিন। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে সন্ধ্যার। গ্রামের সেই ঘটনাগুলো মনে পড়ে যায়। কোনো রকম হাত ছাড়ানোর জন্য জোড়াজুড়ি করে। তারপর শক্ত গলায় বলে, ‘হাত ছাড়ুন। এগুলো কি ধরনের বেয়া’দবি!’
তুহিন দাঁত বের করে বলে, ‘ওমা! বেয়া’দবি কেন করবো? আমি তো তোমার সাথে গল্প করতে আসলাম।’
সন্ধ্যা কিছু বলতে যাবে তার আগেই শান্ত গম্ভীর কন্ঠ কানে আসে, ‘শুধু ওর সাথে গল্প করলে চলবে! আমাদের সাথেও গল্প করো।’
তুহিন কন্ঠ শুনেই ঝট করে হাত ছেড়ে দেয়। সন্ধ্যা পেছনে ঘুরে আয়াশকে দেখে দ্রুত পায়ে তার কাছে যায়। তুহিন ফাঁকা ঢোক গিলে হাসার চেষ্টা করে। বলে, ‘আ-আরেহ আয়াশ ভাই! ত-তুমি?’
আয়াশ বাঁকা হাসে। সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ওদিকে দেখো লিজা আর জেরিন আছে ওদের কাছে যাও!’
সন্ধ্যা কথাটা শোনা মাত্রই হাঁটা লাগায়। আয়াশ তুহিনের কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বলে, ‘তোতলাচ্ছো কেন ভাই? তুমি তো সামান্য গল্পই করবে বলেছো এতে তোতলানোর কি আছে বলো! আমিও তো গল্প করতেই আসলাম। তা কোন হাত দিয়ে যেন সন্ধ্যার হাত ধরেছো!’
তুহিন ভয়ে কাঁপতে থাকে। তার অজানা নয় আয়াশ কি ধরনের মানুষ! আয়াশের রাগ সম্পর্কে তার যথেষ্ট ধারণা আছে। তুহিন বার বার ঢোক গিলতে থাকে। আয়াশ হুট করেই তুহিনের ডান হাত মুচড়ে ধরে। ব্যাথায় আর্তনাদ করে ওঠে তুহিন। আয়াশ ঠান্ডা গলায় বলে,
‘আমার জিনিসের দিকে কেউ তাকালে তার চোখও সহ্য হয় না আমার আর তুই তো সরাসরি আমার সম্পত্তিতে হাত দিয়েছিস! কত্ত বড় কলিজা রে তোর?’
সেসময় দৌড়ে আসে রানা। ব্যস্ত গলায় বলে, ‘কি করছিস আয়াশ! কি হয়েছে?’
আয়াশ তুহিনের হাত ছেড়ে দেয়। রানার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তুহিনের শার্টের ময়লা ঝাড়ার মতো করে বলে, ‘সন্ধ্যার দিকে তাকালে তোর চোখ তু’লে নিতেও আমি দুইবার ভাববো না। আর যদি হাত বাড়াস তোকে মাঝখান দিয়ে কে’টে রেখে দিবো। মাইন্ড ইট!’
আয়াশের ঠান্ডা গলার হুমকিতে কেঁপে ওঠে তুহিন। রানাও বেশ ভয় পায়। ভয়ে ভয়ে কিছু বলতে গিয়েও বলে না। তুহিন ততক্ষণে পালিয়েছে। আয়াশ বড় করে শ্বাস নিয়ে গম্ভীর গলায় রানার উদ্দেশ্যে বলে, ‘এসব জা’নো’য়া’র আসবে আগে বলতি! অন্তত সন্ধ্যাকে আনতাম না।’
রানা কিছু বলতে গেলে আয়াশ ফের বলে, ‘সন্ধ্যাকে আনতে বলছিস আনছি। ওর দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও তার যা হাল হবে সেই একই হাল তোরও হবে। সো সন্ধ্যাকে সেইফ রাখার দায়িত্ব তোর। কি করবি না করবি তোর ব্যাপার!’
শিষ বাজাতে বাজাতে হাঁটা লাগায় আয়াশ। রানা শুকনো ঢোক গিলে বিড়বিড় করে বলে, ‘এই ছেলে আমাকেও থ্রেট দিয়ে গেলো! হায় আল্লাহ। আজ মনে হয় আমার চোখ দুটোরও ইন্না লিল্লাহ হবে।’
রানা দ্রুত লিজা আর জেরিনের কাছে আসে। সেখানে সন্ধ্যাও আছে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলে। তারপর লিজা আর জেরিনকে চাপা স্বরে বলে, ‘বইন জীবনে প্রথম বারের মতো একটা হেল্প কর। সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকমু।’
লিজা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে, ‘কি হেল্প লাগবো তোর!’
রানা খানিকটা অবাকই হয়। এতো সহজে তো মানার মেয়ে এরা না। বিষয়টা হজম করতে কষ্ট হলেও হজম করে নেয়। তারপর বলে, ‘একটু সন্ধ্যাকে এই অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে সাবধানে রাখ। সন্ধ্যার দিকে কেউ তাকালেও আয়াশ বলছে ওদের সাথে সাথে আামার অবস্থাও খারাপ করবে।’
লিজা আর জেরিন আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে তারপর আবার নিজেদের মতো দাঁড়ায়। হাই তুলতে তুলতে বলে, ‘আমরা কাউকে ফ্রি তে হেল্প করি না।’
রানা দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘কি লাগবো তোদের?’
জেরিন ৩২ টা দাঁত বের করে বলে, ‘বেশি কিছু না। দুজনের দুইটা আইফোন।’
রানা কটমট দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর বলে, ‘এটুকু সাহায্যের জন্য ঘুষ নিবি তোরা! ছিঃ তোরা বান্ধবী নাকি শ’ত্রু?’
লিজা আর জেরিন একসাথে বলে উঠে, ‘শত্রু!’
রানা দাঁতে দাঁত চেপে ‘আচ্ছা’ বলে চলে যায়। লিজা আর জেরিন হাইফাই করে হাসতে থাকে। তারপর সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে দেখে বেচারী সন্ধ্যা হা করে তাকিয়ে আছে। লিজা আর জেরিন আরো একদফা হেঁসে নেয়। তারপর সন্ধ্যাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘চলো ছাদে যাই!’
সন্ধ্যা প্রথমে মানা করলেও পরে রাজি হয়ে যায়। লিজা জেরিনকে চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করলে জেরিনও আঙুল দিয়ে ‘ওকে’ বোঝায়। তারপর লিজা আর সন্ধ্যা ছাঁদের দিকে পা বাড়ায়। জেরিনকে না আসতে দেখে সন্ধ্যা বলে, ‘জেরিন আপু কোথায় গেলো?’
লিজা দাঁত বের করে বলে, ‘ও’ একটু জুস আনতে গেছে।’
‘ওহ।’ বলে দুজনে হাঁটতে শুরু করে। ছাঁদে দাড়ানোর কিছুক্ষণ পরই হাতে গ্লাস, বোতল নিয়ে হাজির হয় জেরিন। লিজা ছাঁদে বসে সেসব নিয়ে। সন্ধ্যা আর জেরিনও বসে। সন্ধ্যা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে, ‘এগুলো কি ধরনের জুস আপু?’
‘এগুলো একটু স্পেশাল বুঝলে!’
সন্ধ্যা শুধু ফ্যালফ্যাল করে দেখে গেলো লিজা আর জেরিনের কাজ। গ্রামের মেয়ে হওয়ায় সে কখনোই দেখেনি এসব। লিজা একটা গ্লাস সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘টেস্ট করো সন্ধ্যা। দারুণ মজার এগুলো।’
সন্ধ্যা একবার গ্লাসের দিকে তো একবার লিজার দিকে তাকায়। তারপর হেঁসে বলে, ‘নাহ আপু। তোমরাই খাও আমি খাবো না।’
‘এই কথা বললে তো শুনবো না। রানা যদি শোনে তোমার যত্ন করিনি আমরা তাহলে ছাঁদ থেকে ফে’লে দিবে। তুমি কি চাও অকালে আমাদের প্রা’ণ যাক!’
সন্ধ্যা মাথা দুদিকে নাড়ায়। জেরিন হেঁসে বলে, ‘তাহলে এটা খাও। প্রথমে একটু খারাপ লাগবে তারপর দেখবে দারুণ টেস্ট।’
‘তোমরা কখনো খেয়েছো?’
লিজা আর জেরিন ৩২ টা দাঁত বের করে একসাথে বলে, ‘নাহ গো। আজই প্রথম।’
সন্ধ্যা আর কিছু বলে না৷ গ্লাস মুখের কাছে আনতেই গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে। দ্রুত গ্লাস সরিয়ে বলে, ‘ছিঃ এটার কি বাজে গন্ধ!’
‘আরে এক চুমুক খাও তো আগে। দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে।’
জোড় করে লিজা আর জেরিন সন্ধ্যাকে খাইয়ে দেয়। প্রথম দিকে গন্ধ আর গলা জ্বালা করলেও পরে ভালো লাগতে শুরু করে। একের পর এক গ্লাস শেষ করে ফেলে। বেচারী সন্ধ্যা বুঝতেও পারে না সে জুস নয় ওয়াইন খাচ্ছে। প্রথম বার খাওয়ার জন্য বেশ অল্পতেই নেশা হয়ে যায়। সন্ধ্যা নেশার ঘোরে লিজা আর জেরিনের থেকে বোতল কেড়ে নেয়। ভাঙা ভাঙা ভাবে বলে, ‘আমি পুরোটাই খাবো। তোমাদের একটুও দেবো না।’
‘নাহ নাহ। আর খেয়ো না।’
লিজা আর জেরিনের কথা পাত্তা না দিয়ে বোতল মুখে লাগায় সন্ধ্যা। লিজা আর জেরিন কোনো রকমে বোতল টেনে অন্য জায়গায় সরিয়ে দেয়। সন্ধ্যা ঠোঁট উল্টে ফ্লোরে পা মেলে বসে। বাচ্চাদের মতো করে বলে,
‘আমি তোমাদের সাথে কথা বলবো না৷ তোমরা পঁচা!’
লিজা মাথা চুলকে বলে, ‘বান্ধবী রে এইটা কি আকাম করে ফেললাম রে! আয়াশ আর রানা আজ আমাদের ক’ল্লা কা’ইটা হাতে নিয়া ঘুরবে।’
জেরিন কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে, ‘সব তোর দোষ। তোকে কতবার বলছি মেয়েটা কখনো এসব খায়নি ওর বেশি নেশা হয়ে যাবে। তুই তো কানেই তুললি না।’
ওদের কথার মধ্যে সন্ধ্যা বলে ওঠে, ‘এই তোমরা কি ফিসফিস করতেছো! আচ্ছা তোমরা ৪ জন কে? এই তো এটা লিজা আপু, এটা জেরিন আপু আর এই দুটো কে! ওমা এখন তো ৬ টা মেয়ে।’
লিজা আর জেরিন কপালে হাত দেয়। সন্ধ্যা এক, দুই করে গুণতেছে। সন্ধ্যা হুট করেই আকাশের দিকে তাকিয়ে কান্না করে ওঠে। ভয় পেয়ে যায় লিজা আর জেরিন। ব্যস্ত গলায় সন্ধ্যাকে বলে, ‘কাঁদছো কেন? কি হয়ছে!’
সন্ধ্যা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে, ‘আমি আম্মার কাছে যাবো! আম্মা আমাকে একা ফেলে ওই আকাশের তাঁরা হয়ে গেছে। আমি আম্মার কাছে যাবো।’
লিজা আর জেরিনের কোনো কথায় শুনছে না সন্ধ্যা। বার বার বলছে ‘আম্মার কাছে যাবো’। কোনো উপায় না পেয়ে জেরিন শুকনো ঢোক গিলে বলে, ‘দেখ মা’ইর এমনেও খাওয়া লাগবে ওমনেও খাওয়া লাগবে তার থেকে ভালো হবে আমরা আগে আয়াশকে ডাকি। সন্ধ্যাকে ওই সামলাতে পারবে।’
লিজা উপায় না দেখে সায় দেয়। জেরিন উঠে দ্রুত আয়াশকে খুঁজে। আয়াশ তখন রানার সাথে কথা বলতেছিলো। জেরিন ভয়ে ভয়ে আয়াশের কাছে এসে বলে, ‘আয়াশ একটু ছাঁদে চল!’
আয়াশ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। গম্ভীর কন্ঠে বলে, ‘ছাঁদে কেন যাবো! কি হয়ছে?’
জেরিন আমতা আমতা করে বলে, ‘আসলে স-সন্ধ্যা!’
আয়াশ ব্যস্ত গলায় বলে, ‘কি হয়েছে সন্ধ্যার?’
‘তুই আগে ছাঁদে চল।’
আয়াশ আর দেরী করে না। ব্যস্ত পায়ে ছুটে যায় ছাঁদে। রানা আসতে চেয়েছিলো জেরিন আটকে দিয়েছে। আয়াশ ছাঁদে এসে দেখে সন্ধ্যা বাচ্চাদের মতে কাঁদছে আর বলছে ‘আমি আম্মার কাছে যাবো’। আয়াশ ভয় পেয়ে যায়। হঠাৎ সন্ধ্যার কি হলো! দ্রুত পায়ে সন্ধ্যার কাছে এসে হাঁটু মুড়িয়ে বসে সন্ধ্যাকে নিজের দিকে ফিরায়। লিজা আর জেরিন ভয়ে আয়াশের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। সন্ধ্যা আয়াশকে দেখেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বলে,
‘আপনি খুব পঁচা শহুরে ডাক্তার। আমি আপনার কাছে থাকবো না। আমি আম্মার কাছে যাবো!’
সন্ধ্যার মুখের গন্ধ আর কথার ধরনে ভ্রু কুঁচকে যায় আয়াশের। পেছনে তাকিয়ে দেখে লিজা আর জেরিন আহম্মকের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াশ গম্ভীর গলায় বলে, ‘কি খাইয়েছিস ওকে?’
লিজা শুকনো ঢোক গিলে বলে, ‘আ-আসলে আ-আমরা…
‘আসলে নকলে বাদ দিয়ে যা জিজ্ঞেস করেছি তার আন্সার দে!’
জেরিন কোনো রকমে বলে, ‘আমাদের পরে বকিস। এখন ওকে সামলা প্লিজ।’
আয়াশ ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। আসলেই এদের মাথায় বুদ্ধি সুদ্ধি নাই। আয়াশ সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তোরা যা। আমি ওকে নিয়ে আসতেছি।’
‘তুই পারবি?’
আয়াশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় দুজনের দিকে। দুজনে ভয়ে দুই মিনিটেই হাওয়া হয়ে যায়। সন্ধ্যা এতক্ষণ আয়াশের পাঞ্জাবির কলার টানতেছিলো। আয়াশ কলার থেকে সন্ধ্যার হাত ছাড়িয়ে বলে,
‘উঠো। বাড়ি যাবো।’
সন্ধ্যা নাক মুখ কুঁচকে বলে, ‘কিসের বাড়ি? কোথাকার বাড়ি? আমার তো বাড়িইই নাই।’
‘আমার বাড়ি যাবো।’
সন্ধ্যা ঠোঁট উল্টায়। আয়াশের বুকে আঙুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলে, ‘আপনার বাড়ি যাবো না। আপনি ভীষণ পঁচা। আমাকে একটুও ভালোবাসেন না।’
আয়াশ কিছু বলে না। সন্ধ্যাকে টেনে দাঁড় করায়। সন্ধ্যা উঠতে নারাজ। সে কোনোমতেই উঠবে না। আয়াশ জোড় করে টেনে তুলার পর সন্ধ্যা আয়াশের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ায়। ড্রাংক হওয়ার জন্য ঠিক মতো দাড়াতেও পারছে না। সন্ধ্যা আয়াশের বক্ষে মাথা রেখে দু হাতে আঁকড়ে ধরে। বিড়বিড় করে বলে, ‘এই শহুরে ডাক্তার!’
আয়াশ ছোট্ট করে ‘হু’ বলে। সন্ধ্যা আয়াশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আমি আপনাকে ভালোবাসি শহুরে ডাক্তার। আপনি আমার হবেন? ভালোবাসবেন আমাকে?’
হার্টবিট বন্ধ হওয়ার উপক্রম আয়াশের। সন্ধ্যামালতীর মুখে ‘ভালোবাসি’ শুনে যেনো শহুরে ডাক্তারের দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। সন্ধ্যা মাথা তুলে তাকায় আয়াশের মুখের দিকে। তখনো সে আয়াশকে দুহাতে আঁকড়ে ধরে আছে। আয়াশের মুখের দিকে তাকিয়েই জড়ানো গলায় বলে,
‘ভালোবাসবেন না?’
আয়াশ শ্বাস আটকে মাথা নাড়ায়। সে ভালোবাসবে তার সন্ধ্যামালতীকে। সন্ধ্যা ফের জড়ানো গলায় বলে, ‘আমাকে কেউ ভালোবাসে না। আর যারা ভালোবাসে তারা আমাকে একা করে দিয়ে আকাশের তাঁরা হয়ে যায়। আপনি কখনো আমাকে একা করে দিয়ে হারিয়ে যাবেন না তো শহুরে ডাক্তার!’
আয়াশ আগলে নেয় সন্ধ্যাকে। দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘নাহ। আমি কখনোই তোমাকে একা করে হারাবো না। আমি আজীবন তোমার হয়ে তোমার সাথে থাকবো সন্ধ্যামালতী।’
সন্ধ্যা হাসে। আয়াশের হাতের বেড়াজালে থেকে মাথা ঘুরিয়ে দু হাত মেলে বলে, ‘আমার শহুরে ডাক্তার। শুধু আমার!’
হঠাৎ করেই মিইয়ে যায় সন্ধ্যা। আয়াশের দিকে মাথা উচু করে তাকিয়ে ভাঙা গলায় বলে, ‘আমার আব্বা যেমন করে আমার আম্মাকে ভালোবাসতো আপনি কখনোই আমাকে তার মতো করে ভালোবাসবেন না শহুরে ডাক্তার।’
আয়াশ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। বলে, ‘কেন? তুমি তো তোমার বাবাকে অনেক ভালোবাসো তাহলে!’
সন্ধ্যা অদ্ভুত ভাবে হাসে। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু। ভাঙা ভাঙা ভাবে বলে, ‘ভীষণ ঘৃণা করি আমি আমার আব্বাকে। ভীষণ রকম ঘৃণা। যাকে আমি পুরো পৃথিবীর থেকে বেশি ভালোবাসতাম ওই মানুষটাকেই আমি সবথেকে বেশি ঘৃণা করি।’
আয়াশ অবাকের সপ্তম পর্যায়ে। মাথা যেনো ঘুরিয়ে আসে। কি এমন হলো যার জন্য সন্ধ্যা তার বাবাকে এতো ঘৃণা করে! সন্ধ্যা তো ওর বাবাকে ভীষণ ভালোবাসতো তাহলে হঠাৎ কি হলো! কি হয়েছিলো সন্ধ্যার বাবা আর মায়ের! চারদিকে হাতড়েও কোনো উত্তর পেলো নাা আয়াশ। সন্ধ্যা তখনো আওড়াচ্ছে একই কথা। একসময় ক্লান্ত হয়ে আয়াশের বুকে মাথা রেখেই চুপ হয়ে যায়। আয়াশ বার বার সন্ধ্যাকে ডেকেও সাড়া পায় না। ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোলে তুলে নেয়। অগ্রসর হয় ছাঁদের দরজার দিকে সাথে নিয়ে যায় অনেক প্রশ্ন যার একটা উত্তরও তার কাছে নেই। সন্ধ্যা কি এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর আদৌও দেবে নাকি সব রহস্য ঢাকা পড়ে যাবে ধীরে ধীরে! সেটাও জানা নেই আয়াশের..
#সন্ধ্যামালতী (২০)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
____________
সকালে সন্ধ্যার ঘুম ভাঙে অনেক বেলায়। আকাশ মেঘলা থাকার দরুণ ঠিক কয়টা বাজে তা ঠাহোর করতে পারে না সন্ধ্যা। প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। কোনো রকমে উঠে বসে। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকে। তারপর ধীরে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। কাল রাতের কোনো কথায় মনে পড়ছে না। বাড়ি কখন এসেছে! কিভাবে এসেছে কিছুই মনে নেই। সন্ধ্যা আয়নাতে নিজের অবয়ব দেখে খানিকটা অবাকই হয়। সে শাড়ি কখন পাল্টালো! কনফিউজড হয়ে থম মেরে বসে থাকে। মাথাটা এখনো কেমন করছে। কোনোরকম আগে উঠে নিচে হাঁটা লাগায়। আফরা লিভিং রুমে বসে তখন টিভি দেখছে। সন্ধ্যাকে আসতে দেখে মৃদু হাসে। হাসি মুখেই বলে,
‘শুভ সকাল। এতক্ষণে উঠলি! কিচেনে যা। গিয়ে দেখ লেবুর শরবত রাখা আছে ওটা খেয়ে নাস্তা করে নে।’
‘এতো সকালে নাস্তা করবো! তোমার এতো সকালে সব নাস্তা রেডি করা শেষ?’
আফরা অবাক চোখে তাকিয়ে বলে, ‘এতো সকাল কোথায় রে! ১১ টা বাজে। আকাশের অবস্থা আজ খুব একটা ভালো না তাই বলে তুই একদম সকাল ভাবলি!’
সন্ধ্যা আর কিছু বলে না। কিচেনে গিয়ে লেবুর শরবত খেয়ে নাস্তা প্লেটে নিয়ে আফরার কাছে আসে। আফরা হেঁসে দেয়। সন্ধ্যা মুখে কিছু না বলে প্লেট হাতে মাথা নিচু করে বসে। আফরা হাতটা ধুয়ে সন্ধ্যার থেকে প্লেট নিয়ে সন্ধ্যাকে খাইয়ে দিতে শুরু করে। সন্ধ্যা খানিকটা অবাকই হয়। সে মুখে বলেনি খাইয়ে দিতে তাও মানুষটা বুঝলো কিভাবে! আবার বিরক্ত না হয়ে হাসি মুখে খাইয়ে দিচ্ছে। আচ্ছা মানুষ এতো ভালোও হয়? আবেগে চোখ ছলছল করে উঠে। নিজেকে সামলে চুপচাপ খেতে থাকে। একবার আশে পাশে তাকায়। আফরা খাইয়ে দিতে দিতে বলে,
‘আয়াশ নেই। রানাদের বাড়িতে গেছে। বিয়ের কতো কাজ ওখানে জানিসই তো।’
সন্ধ্যা মিইয়ে যায়। খেতে খেতে আমতা আমতা করে বলে, ‘একটা কথা জিজ্ঞেস করবো আন্টি!’
‘হ্যাঁ বল!’
‘আসলে আ-আমার না ক-কাল রাতের কথা কিছু মনে নেই। কিভাবে বাড়ি এসেছি? আমার শাড়ি!’
আফরা মুচকি হাসে। বলে, ‘কাল অনেক রাতে বাড়ি ফিরেছিস দুজন। তুই তো ঘুমে বিভোর ছিলি তাই আয়াশ তোকে কোলে করে রুমে দিয়ে আসছে। আর শাড়ি আমি পাল্টে দিয়েছি। এখন চুপটি করে খেয়ে নে তো। খেয়ে গোসল করে রেডি হয়ে নে। জুম্মার পর আয়াশ তোকে নিয়ে যাবে।’
সন্ধ্যা চমকে উঠে বলে, ‘আজ শুক্রবার!’
‘হ্যাঁ।’
‘হায় আল্লাহ। আমার আজকেই ফজরের নামাযটা কাযা হয়ে গেলো!’
আফরা কিছু না বলে নিঃশব্দে হাসে। সন্ধ্যা পুরোটা খেয়ে নেয়। আফরা প্লেট নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। সন্ধ্যাও পিছু পিছু যায়। আফরা প্লেট রাখতে রাখতে বলে, ‘কিছু বলবি!’
সন্ধ্যা আমতা আমতা করে বলে, ‘আসলে আন্টি!’
‘কিছু হয়ছে সন্ধ্যা?’
‘বলছিলাম যে বিয়েতে কি যেতেই হবে?’
আফরা হেঁসে সন্ধ্যার চুলে হাত বুলিয়ে বলে, ‘কেন? যাবি না! রানা অনেক রাগ করবে। তাছাড়া আজ আমিও তো যাবো। তুই এখন যা গোসল করে নে। নামায পড়ে রেডি হয়ে নিবি। কেমন!’
সন্ধ্যা মাথা নাড়ায়৷ দুপা এগিয়ে বলে, ‘আচ্ছা আন্টি এ বাড়িতে কি আর কেউ থাকে না?’
আফরা আফসোসের সুরে বলে, ‘নাহ রে৷ আমি, তোর আঙ্কেল আর আয়াশ থাকি। তোর আঙ্কেল একটা কাজে গেছে। দুদিন পরই চলে আসবে।’
সন্ধ্যা হেঁসে সিড়ি দিয়ে উপরে যায়। আয়াশের বাবা কেমন মানুষ কে জানে! তার যদি এ বাড়িতে থাকা নিয়ে কোনো সমস্যা হয়! গভীর চিন্তায় মগ্ন হয় সন্ধ্যা।
জুম্মার নামায শেষে আয়াশের দেখা পায় সন্ধ্যা। আয়াশ নামায শেষ করে বাড়িতে ঢুকে প্রথমেই সন্ধ্যার ঘরে আসে। গায়ে এখনো পাঞ্জাবি জড়ানো। সন্ধ্যা তখন নামায শেষ করে মাত্রই উঠেছে। আয়াশ এসে ব্যস্ত গলায় বলে, ‘তাড়াতাড়ি রেডি হও। রানাদের বাড়িতে যেতে হবে। আর আম্মু যাবে তুমি সব সময় উনার সাথে সাথে থাকবে।’
সন্ধ্যা আচমকা এতো কথা শুনে খানিকটা ভড়কায়। নিজেকে সামলে বলে, ‘একটু দম নিয়ে বলুন।’
আয়াশ ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘দম নেওয়ার টাইম নাই। ওদিকে বরপক্ষ চলে আসছে প্রায়। দ্রুত রেডি হও!’
সন্ধ্যার জবাবের অপেক্ষা না করেই পা বাড়ায় দরজার দিকে। দরজা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে। গম্ভীর স্বরে বলে, ‘কাবাডে বোরকা, হিজাব, নিকাব সহ পিন, সেফটিপিন যা যা লাগে সবই আছে। অবশ্যই ওগুলো পড়বা।’
সন্ধ্যা নিঃশব্দে মাথা নাড়ায়। কাল তো এমন কোনো রুলস ছিলো না আজ হঠাৎ এমন রুলসের কারণ! সন্ধ্যার ছোট মাথায় এই কথাটা ঢোকে না। আপনমনে কাবাড থেকে বোরকা, হিজাব, নিকাব নিয়ে নেয়। হিজাব বাধতে পারে না বলে বোরকা পড়লেও হিজাব হাতে দাঁড়িয়ে থাকে। ঠোঁট উল্টে একবার এপিঠ তো একবার ওপিঠ দেখে। একবার মাথায় দেয় আরেকবার হাতে নেয়। আয়াশের ততক্ষণে রেডি হওয়া শেষ। এসে দেখে সন্ধ্যা হিজাব হাতে দাঁড়িয়ে আছে। পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে বলে,
‘হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
সন্ধ্যা মাথা নিচু করে বলে, ‘এগুলো কখনো পড়িনি।’
আয়াশ ফোস করে নিঃশ্বাস নেয়। তারপর কিছু একটা ভেবে ইউটিউবে হিজাব টিউটরিয়াল সার্চ দিতে দিতে সন্ধ্যার উদ্দেশ্য বলে, ‘দেখে দেখে পারবা?’
সন্ধ্যা মাথা নাড়ায়। আয়াশ ইউটিউবে খুবই সহজ নিকাবসহ হিজাব বাঁধার টিউটরিয়াল বের করে সন্ধ্যাকে ফোন ধরিয়ে দিয়ে নিজে আবার বাহিরে চলে যায়। সন্ধ্যা দেখে দেখে হিজাব আর নিকাব পড়ে নেয়। একটু সমস্যা হলেও পেরেছে। সন্ধ্যা আয়াশের ফোন নিয়ে রুম থেকে বের হয়। আফরার ঘর বন্ধ দেখে সে দ্রুত নিচে নামে। আফরা আর আয়াশ রেডি দাঁড়িয়ে আছে। আফরা সন্ধ্যাকে দেখে অবাক হলেও আয়াশ স্বাভাবিক। আফরা আয়াশের মুখের দিকে তাকিয়ে যা বোঝার তা বুঝে নেয়। গাড়ি করে দ্রুতই এসে পড়ে রানাদের বাড়ি। আয়াশদের ঢুকতে দেখে লিজা আর জেরিন কাচুমাচু মুখ নিয়ে এগিয়ে আসে। আফরা হেঁসে বলে, ‘কি রে তোদের মুখ এমন কেন?’
লিজা বলে, ‘এমনিতেই আন্টি। বেশি লাফাইলে তোমার ছেলে আমাদের পা ভে’ঙে দিবে বলছে।’
আয়াশ পাশ থেকে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, ‘উল্টা পাল্টা কাজ করলে শুধু পা না তোদের মাথাটাও ভা’ঙবো।’
জেরিন ভেংচি কাটে। বলে, ‘সন্ধ্যা কোথায়? আন্টি ওকে আনোনি!’
সন্ধ্যা কিছু বলতেই যাচ্ছিলো তার আগে আয়াশ বলে, ‘না রে। ওকে আনিনি। তোরা দুরে সর যা!’
লিজা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে, ‘তুই আমাদের জন্য বেচারী সন্ধ্যাকে একা একা রেখে আসলি!’
সন্ধ্যা পাশ থেকে বলে, ‘আরেহ না আপু। এই তো আমি।’
লিজা আর জেরিন আশে পাশে তাকায়। দুজনে একসাথে বলে, ‘এটা সন্ধ্যার কন্ঠ না!’
একবার নিজেদের দিকে আরেকবার আয়াশের দিকে তাকায়। সন্ধ্যা এগিয়ে এসে বলে, ‘আরেহ এই তো আমি।’
লিজা আর জেরিন হা করে তাকায়। আয়াশ ওদের পাত্তা না দিয়ে বলে, ‘তোরা ওর থেকে অন্তত ৫ হাত দুরে থাকবি। আর সন্ধ্যা আই ওয়ার্ন ইউ তোমাকে যেন ওদের সাথে না দেখি। সবসময় আম্মুর সাথে থাকবা। আমি গেলাম।’
কথাটুকু শেষ করেই আয়াশ হাঁটা লাগায়। লিজা আর জেরিন আহম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে। আফরা শব্দ করে হেঁসে দেয়। তারপর সন্ধ্যার হাত ধরে বলে, ‘আমিও প্রথমে অবাকই হয়েছিলাম আম্মাজানেরা। এবার নিজেদের মুখ বন্ধ করে ওদিকে যাও। সন্ধ্যা আমার সাথে থাকবে।’
‘আন্টি তুমিও! ‘
‘জ্বি আমিও। কারণ আমার ছেলে যদি জানে আমি তার সম্পত্তির দেখভাল না করে তোমাদের সাথে ঘুরতে দিছি নির্ঘাত আমার ক’ল্লা যাবে।’
শব্দ করে হাসে। সন্ধ্যা অবুঝের মতো তাকিয়ে থাকে। লিজা আর জেরিন শোক কাটিয়ে বলে উঠে, ‘আয়াশ তো দিন দিন জোস হয়ে যাচ্ছে ভাই!’
______________
রাতে ভালো লাগছিলো না বলে সন্ধ্যা ছাঁদে এসে দাঁড়ায়। সাফির মতো ভুতের ভয় নেই সন্ধ্যার। রানাদের বাড়ি থেকে এসে সন্ধ্যা সেই যে রুমে ঢুকছে আর বের হয়নি। আয়াশও ঘুমিয়েছে বাড়ি এসে। সন্ধ্যা ছাঁদে এসে চোখ বন্ধ করে বাতাস অনুভব করছিলো। সে সময় পাশ থেকে পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসে,
‘রাতে ছাঁদে আসতে নিষেধ করেছিলাম!’
সন্ধ্যা কেঁপে উঠে। চোখ খুলে গভীর দৃষ্টিতে তাকায় আয়াশের দিকে। আয়াশের দৃষ্টি তার উপরেই নিবদ্ধ। চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নেয় সন্ধ্যা। দৃষ্টি এদিক ওদিক করে। আয়াশ সন্ধ্যাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে শান্ত কন্ঠে বলে, ‘তোমাকে একটা প্রশ্ন করি!’
সন্ধ্যা ছোট করে ‘হু’ বলে। আয়াশ পকেটে হাত গুজে রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। চোখ দুটো তখনো তার সন্ধ্যামালতীর চোখের দিকে। ভীষণ শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি তোমার বাবাকে ঘৃণা করো কেন?’
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হলো যেনো সন্ধ্যার। বিস্ময়, নির্বাক দৃষ্টিতে তাকায় আয়াশের দিকে। আয়াশ ভীষণ স্বাভাবিক। সন্ধ্যা অবাক কন্ঠেই জিজ্ঞেস করে, ‘আপনাকে কে বললো!’
আয়াশ নিঃশব্দে হাসে। বলে, ‘তুমিই তো বললে কাল।’
‘আমি! কখন? আমার তো মনে নেই।’
‘মনে থাকবে কিভাবে! ওয়াইন খেয়ে তো পুরাই মা’তাল হয়ে গেছিলা।’
সন্ধ্যা চোখ মুখ কুঁচকে বলে, ‘ওয়াইন কি?’
‘অ্যালকোহল।’
সন্ধ্যা সাথে সাথেই ওয়াক ওয়াক করে। আয়াশ অবাক কন্ঠে বলে, ‘কি হলো সন্ধ্যা? তোমার কি খারাপ লাগছে?’
সন্ধ্যা মুখ বিকৃত করে বলে, ‘ইয়াক ছিঃ! আমি ওইসব খেয়েছি! আল্লাহ।’
আয়াশ শব্দ করে হেঁসে দেয়। বলে, ‘ওগুলো তোমার হজম হয়ে গেছে। এখন ওয়াক ইয়াক ছিঃ করেও বের হবে না। আরো যাও লিজা আর জেরিনের সাথে।’
‘আপুরা আমাকে এসব খাইয়েছিলো!’
আয়াশ কথা ঘুরিয়ে বলে, ‘তুমি কথা ঘুরিয়ো না। আমার প্রশ্নের উত্তর দাও!’
সন্ধ্যা অন্যদিকে তাকিয়ে মলিন গলায় বলে, ‘নেশার ঘোরে কি না কি বলেছি তা ধরে বসে আছেন কেন?’
‘নেশার ঘোরে মানুষ সত্যি কথা বলে। তাই ধরে বসে আছি।’
‘আপনি কখনো চেষ্টা করেছেন শহুরে ডাক্তার?’
আয়াশ ভ্রু কুঁচকায়। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে, ‘বুঝছি। আচ্ছা বাদ দাও। রুমে যাও!’
সন্ধ্যা মাথা নাড়িয়ে একটু এগিয়ে আবার পিছনে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে, ‘আমি কি আরো কিছু বলেছি শহুরে ডাক্তার?’
সন্ধ্যা মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছে। না জানি কিছু বলেছে কি না! আয়াশ সন্ধ্যার চিন্তিত মুখ দেখে হাই তুলে বলে, ‘বলেছো তো অনেক কিছু। পেটের অনেক গোপন কথা উগলে দিয়েছো।’
সন্ধ্যার বুক ধড়াস করে ওঠে। মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। চোখ পিটপিট করে জড়ানো গলায় বলে, ‘ক-কি বলেছি?’
‘যা বলেছো তা শুনতে হবে না। রুমে যাও!’
সন্ধ্যা কিছু বলতে গিয়েও বলে না। দ্রুত পায়ে ছাঁদ থেকে নেমে যায়। আয়াশ সেদিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অনেক হিসাব কষতে থাকে। সে সময় পেছন থেকে কেউ ডাকে,
‘আয়াশ!’
আয়াশ পেছনে তাকায়। সানজিদাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খানিকটা চমকায়। নিজেকে সামলে বলে, ‘তুমি এতো রাতে!’
সানজিদা মুচকি হেঁসে বলে, ‘কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে।’
আয়াশ ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘আমার সাথে?’
‘হ্যাঁ।’
‘নিচে চলো!’
‘এখানেই বলি!’
‘আচ্ছা বলো।’
সানজিদা কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে, ‘আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।’
চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 🙂)
চলবে…
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)