” অফিসে কী প্রেমলীলা করতে এসেছেন, মিস ঐরাবতী?
সহসা কর্কশ উচ্চধ্বনির আওয়াজে সন্ধ্যার কর্ণকূহর ফেটে যাওয়ার উপক্রম। নিস্তব্ধ অফিসের প্রতিটা দেয়ালে সেই উচ্চধ্বনি বাড়ি খেয়ে প্রতিধ্বনির সৃষ্টি করছে। অফিসের উপস্থিত সকল কর্মচারী নিজেদের স্থানে দণ্ডায়মান হয়ে আছে। সকলের মুখশ্রীতে প্রশ্নবোধক চিহ্ন। কোনো কোনো কর্মচারী উঁকিঝুঁকি মেরে মূল ঘটনা দেখার বৃথা প্রচেষ্টায় ব্যস্ত। অফিসের সুদর্শন বসের রক্তিম বর্ণ চোখ দেখে সম্মুখে দণ্ডায়মান দুজন যুবক-যুবতী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আছেন।
পুনরায় বসের উচ্চাস্বর কর্ণধারে আসে মুহূর্তে কেঁপে উঠে সম্মুখে দণ্ডায়মান দুজন। ” আমার কথা কী আপনাদের কানে পৌঁছায়নি? কাজের সময় একসাথে কী করছেন?”
চারিপাশে নিস্তব্ধতা। আকস্মিক যুবতীর কান্নার স্বর সকলের কর্ণধারে প্রবেশ করে। এহেন সময়ে বসের মেজাজ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। যুবতীকে আবারো ধমকে বলে,” কান্না করলেই অফিসে রিজাইন লেটার লিখতে হবে।”
যুবতীর কান্না থেমে যায়। নাক ফুলিয়ে, মুখ কুঁচকে প্রত্যুত্তরে বলে, ” আমার নাম সন্ধ্যাবতী, আপনি সবসময় আমাকে ঐরাবতী ডেকে হাতিনী উপাধি দেন।”
আতঙ্কিত অফিসের পরিবেশ এক নিমেষেই পরিবর্তন হয়ে গেল। এবার অফিসের দালানে অট্টহাসির প্রতিধ্বনি হচ্ছে। সন্ধ্যা রেগে যায়। বক্ষঃস্থল বরাবর হাত গুটিয়ে বাহিরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। আকস্মাত বসের কথায় স্তব্ধ বনে যায়, ” তোমার নামের শেষে ‘বতী’ কে সংযুক্ত করেছে শুনি? নামের শেষে ‘বতী’ শব্দদুটো ভদ্র মেয়েদের বুঝায়। কিন্তু তুমি তো অভদ্রের রাণী, ঐরাবতী।”
” আর আপনি অসভ্য দুর্লয়।”
” কি বললে?”
কর্কশ আওয়াজ এবার কেউ কর্ণে নিল না। সকলে নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কেননা সন্ধ্যাবতীর দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে একবেলা বসের বকা না খেলে দিন ভালো কা’টে না। এদিকে সন্ধ্যা নিজের ভুল কথার জন্য জিহ্বায় কামড় বসায়। ছলছল আঁখিতে চারপাশ দৃষ্টিপাত করে। সকলেই কাজে মগ্ন। আজ সন্ধ্যাবতীকে অসভ্য দুর্লয়ের হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
নিলয় নীলাভ চেয়ারে বসে বাঁকা হাসছে। অনেকদিন পর ঐরাবতীকে শা’স্তি দিতে পারবে বলে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে। টেবিলের উপর কালো রঙের গোল পাথর ঘুরিয়ে ফন্দি আটছে সে। এই পাথরটা সেবার সিলেটে থেকে ফেরার সময় এনেছিল। অবশ্য সেটা চুরি হয়েছিল, পরবর্তীতে শত ঝড় ঝাপটা পার করে উদ্ধারও করেছিল নিলয়। পাথরের কাহিনী আরেকদিন না হয় বলি!
দরজা খোলার ধরাম শব্দে নিলয়ের ভ্রু যুগল কুঁচকে আসলো। পরক্ষণে সন্ধ্যার চিৎকার কর্ণধারে প্রবেশ করলো, ” নিজেকে কী মনে করেন হুম? অফিসের বস হয়েছেন বলে অবলা নারীর উপর অত্যাচার করবেন? একদম নারী নির্যাতনের মামলায় জেলে ঢুকিয়ে দিবো। তখন আপনার বাপ দাদা এসেও আমার কিচ্ছুটি করতে পারবে না।”
সন্ধ্যা নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। তিনমাসের ঝাল এক মিনিটে মিটিয়েছে বলে। অনার্স শেষ করে একদিনের জন্যও ঘরে বসে থাকতে পারেনি সন্ধ্যাবতী। নিলয় ভাই নামক বসের সাথে পাল্লা দিয়ে অফিসে জয়েন হতে হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ সন্ধ্যাবতী নিজের দাদার অফিসের সাধারণ কর্মচারী হয়ে পড়ে আছে আর নিলয় হয়েছে অফিসের বস।
সন্ধ্যা মনের সমস্ত রাগ ঝেড়ে নিলয়ের পানে তাকিয়ে দেখলো রক্তিম বর্ণ চোখ করে তাকিয়ে রয়েছে তার পানে। সন্ধ্যা শুকনো ঢোক গিলে জিহ্বা ভিজিয়ে বলে,” এভাবে তাকিয়ে রয়েছেন কেন? খেয়ে ফেলবেন না-কি ?”
” বের হও।”
নিলয়ের শান্ত স্বর। সন্ধ্যা বের হলো না উল্টা রাগ দেখিয়ে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো। নিলয়ের রাগ আরো বেড়ে যায়। টেবিলের উপর জোরে আঘাত করে বলে,” কথা কানে যায়নি? আমি কেবিন থেকে বের হয়ে অনুমতি নিয়ে আবারও প্রবেশ করতে বলেছি।”
সামান্য উচ্চ আওয়াজে সন্ধ্যাবতী কেঁপে উঠে। ভীষণ ভয় পেয়েছে। চোখে জল চলে এসেছে। নিলয় সন্ধ্যার কান্না উপেক্ষা করে বিরক্তিকর স্বরে বলল, ” গো!”
অশ্রুশিক্ত নয়নে সন্ধ্যা তাই করলো । দরজায় দুইবার করাঘাত করে উচ্চাস্বরে বলল, ” আসবো?”
নিলয় জবাব দিলো না। সন্ধ্যা আবারো করাঘাত করে বলল, ” আপনি আচ্ছা বদমাইশ বস তো দেখছি? অর্ডার দিয়েছেন পালন করতে চাইলেও উত্তর পাওয়া যায় না। পাওয়ার দেখান আমাকে? এই সন্ধ্যাবতীকে?”
নিলয় ফোঁস করে নিশ্বাস ত্যাগ করলো। সে জানে এই মেয়েকে বাগে আনা এতো সহজ নয়। রাগে চোয়াল শক্ত করে জোরে বলল, ” সম্মানে, অনুনয়ে অনুমতি চাইতে বলেছি। এটা তোমার বাবার আড্ডাখানা না যে উচ্ছৃঙ্খলভাবে কথা বলবে।”
সন্ধ্যার বর্তমানে খুব রাগ চেপেছে। ইচ্ছে করছে সবকিছু ভেঙে তছনছ করে দিতে। সন্ধ্যার হাতে যদি ক্ষমতা থাকতো, তাহলে অসভ্য দুর্লয়কে তার আসল স্থান দেখিয়ে দিতো। শুধুমাত্র বাবার কথা ভেবে সন্ধ্যা চুপ হয়ে যায়। সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করে মুখে জোর পূর্বক হাসির রেখা টেনে বিনয়ের স্বরে বলে, ” আসতে পারি, স্যার?”
নিলয়ের মুখে জয়ী হাসি। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পায়ের উপর পা তুলে প্রত্যুত্তরে বলল, ” আসো।”
সন্ধ্যার ঠোঁট থেকে হাসি সরছেই না। তা দেখে নিলয়ের কপাল কুঁচকে আসে। পরক্ষণে সন্ধ্যার প্রশ্ন শুনে ভরকে যায়, ” স্যার কি করতে হবে? আপনার টেবিল পরিষ্কার করে দেই? না না, আপনার পা টিপে দেই! সাথে আপনার গলাও,,,,,
” কি বললে?”
সন্ধ্যা জিহ্বা কে’টে হাতের আঙুল ফোটাতে লাগলো। নিলয় চরম বিরক্ত সন্ধ্যার উপরে। টেবিলের উপর শব্দ করে সাতটা ফাইল রেখে আদেশের স্বরে বলে, ” অভ্যাস পরিবর্তন কর, ঐরাবতী। তোমার ফালতু কথা শেষ হলে ফাইলগুলো উঠাও আর বিদেয় হও।”
” এতগুলো ফাইল কি করব? সবাইকে বিলাবো? আচ্ছা! কাকে কোন ফাইলটা দিব। বলুন তো অভদ্র দুর্লয়।”
নিলয়ের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। সন্ধ্যার কাছে এসে হাত মুচরে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। নিলয়ের গরম নিশ্বাস সন্ধ্যার ঘাড়ের উপর পড়ছে। সন্ধ্যার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
” এভাবে রাগিও না সন্ধ্যাবতী, অঙ্গার হয়ে যাবে। কয়লা হয়েও তখন আফসোস করবে।”
সন্ধ্যার নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। নিলয় এতটাই শক্ত করে হাত ধরেছে যে ব্যাথায় সন্ধ্যার চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। নিলয় সন্ধ্যার হাত ছেড়ে দিয়ে পিছনে ঘুরে তাকায়। পকেটে হাত রেখে সুদূরে দালান পর্যবেক্ষণ করে বলে, ” দাদাজানের কাছে ওয়াদাবদ্ধ বলে প্রতিবার বেঁচে যাও সন্ধ্যাবতী। তবে ভেবো না তোমাকে প্রতিবার ছাড় দিব। সময় আসলে তোমাকে সঠিক মানুষ হিসেবে রূপান্তরিত করব।”
সন্ধ্যার কর্ণধারে নিলয়ের একটা বাক্যও প্রবেশ করেনি। নিজের রাগ, অহংকারে ক্ষুব্ধ সে। টেবিলের উপর থেকে ফাইলগুলো নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।
নিলয় পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করল। চোখের সামনে দৃশ্যমান হয় মিষ্টি হাসিতে একজন মেয়ে। ছবির উপর হাত বুলিয়ে নিলয় বিড়বিড় করে বলল, ” ফিরে আসো ইরাবতী!”
————-
সন্ধ্যা ছয়টা। অফিসের কর্মচারীদের ছু’টি’র আগ মুহূর্ত। কাজ শেষ করে অনেকেই জিনিস পত্র গুছিয়ে তৈরি হচ্ছেন অনেকেই বসের আড়ালে গল্প গুজব করছেন। সন্ধ্যাবতীর অবস্থা সংকটজনক। রাগ, অহংকার একজন মানুষের জীবনে খুব খারাপ দিক হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে। রাগ এবং অহংকার একজন মানুষকে নিঃশেষ করে দিতে পারে। যা সন্ধ্যাবতী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। বাহ্যিক দিক থেকে যতই শক্তপোক্ত থাকুক না কেন অভ্যন্তরীণ দিক থেকে ততটাই বিরক্ত। সাতটা ফাইলের মধ্যে এই অব্দি মাত্র দুইটা ফাইল সম্পূর্ণ করেছে। প্রতিটা ফাইলই গুরুত্বপূর্ণ এবং হাজার হাজার ভুল। সন্ধ্যাবতীর সন্ধ্যা আজ এই ফাইলগুলো ঠিক করতে করতেই পাড় হবে।
অফিস ছুটি হয়ে গেছে। অফিসের সদস্যরা জনে জনে বের হয়ে যাচ্ছেন। সন্ধ্যাবতীর সমবয়সী একজনই এই অফিসে কাজ করে। নাম আকাশ। কয়েকঘণ্টা পূর্বে আকাশের সহিত কথা করার জন্য সন্ধ্যাবতী শাস্তি পায়। আকাশের সাথে সন্ধ্যাবতীর মতামতে যেমন মিলে তেমন আচার আচরণের চাঞ্চল্যতাও মিলে। বিগত তিন মাসে দুজনের মধ্যে বন্ধু সুলভ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে যা তুই তোকারি সম্বোধন পর্যন্ত চলে গেছে।
আকাশ কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে সন্ধ্যাবতীর কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়, ” সন্ধ্যা রে, তোদের বংশে কী সবাই এমন রগচটা? মানে নিলয় স্যার যেমন রেগে যায় তুইও তেমন রেগে যাস? আমি তো শুধু তোর কাছে সময় জানতে এসেছিলাম আর স্যার তোকে যা তা বলে শাস্তি দিলো। খুবই খারাপ করেছে রে সন্ধ্যা!”
সন্ধ্যাবতী গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে ডুবে ছিল। আকাশের আগমনে ব্যাঘাত ঘটায় বিরক্ত হয়ে ফাইল থেকে চোখ না তুলেই প্রত্যুওরে বলে, ” বিরক্ত করিস না তো আক্কাইস্সা। কাজ করছি।”
” বিরক্ত কই করলাম। আমি তো আমার বন্ধুর কষ্টে কষ্টিত বলে সমবেদনা দিতে এসেছি।”
” তাহলে বান্ধবীর কষ্ট লাঘব করতে আপনিও কাজ করতে বসে পড়ুন, মিস্টার আকাশ।”
পকেটে হাত গুঁজে নায়ক সেজে নিলয় দাঁড়িয়ে আছে। রক্তিম বর্ণ চোখে দাঁতে দাঁত চেপে সন্ধ্যাবতীর দিকে তাকিয়ে আছে। সন্ধ্যা জানে এই চাহনির অর্থ।
” আমি আকাশকে কিছু বলিনি। আপনি অযথা আমাকে শা’স্তি দিবেন না।”
” তোমাকে কিছু বলেছি?”
সন্ধ্যাবতী নিশ্চুপ হয়ে আকাশকে মনে মনে বকা দিচ্ছে,
“শা’লা উগান্ডার হাতি, নাইজেরিয়ার জলহস্তী। আজ যদি তোর জন্য আমার কিছু হয় তো কসম আমার ফাইলগুলোর; তোকে গুন্ডা দিয়ে যদি মাইর না খাইয়েছি তো আমার নাম সন্ধ্যাবতী না।”
নিলয়ের ধমকে সন্ধ্যা কেঁপে উঠে। আকাশকে মনে মনে বকা বাদ দিয়ে নিলয়ের দিকে মনোনিবেশ করে।
” মিস্টার আকাশ, আমাদের চেহারা দেখা শেষ হলে আপনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারেন। আর যদি বাড়িতে যেতে না হচ্ছে করে তাহলে আমাকে বলুন, আমি আপনার জন্য দারুণ কাজের ব্যবস্থা করব।”
আকাশের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। ভয়ে মূত্র এখানেই ত্যাগ করে দিবে অবস্থা। সন্ধ্যা হাসছে যেন সে এই মুহূর্তটা খুব উপভোগ করছে। নিলয়ের তীক্ষ্ম দৃষ্টি সর্বাগ্রে। আকাশ মিনমিন করে প্রত্যুওরে বলে, ” আপনাকে কষ্ট করতে হবে না, স্যার। বাসায় বউ, বাচ্চা অপেক্ষা করছে। আসি।”
” এই তুই বিয়ে করলি কবে? দাওয়াত দিলি না, শা’লা।”
আকাশ এক মুহূর্তও দাঁড়ায়নি। সন্ধ্যার কথা উপেক্ষা করে অফিস থেকে বের হয়ে গেল।
সন্ধ্যা নীচু দৃষ্টিতে মনে মনে ছক কশে নিল। পরবর্তীতে নিলয়ের কর্ম কেমন হবে মোটামুটি ধারণা করতে পেরেছে।
” ব্রেকিং নিউজ, প্রেমে পড়তে না পড়তেই মন তৃখণ্ডিত হয়ে গেল মিস ঐরাবতীর। আমরা মিস ঐরাবতীর কষ্টের জন্য খুবই কষ্টিত।”
ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে সন্ধ্যা তাকিয়ে রয়েছে যেন এখনই নিলয় নামক বসকে কাঁচা মরিচ খাইয়ে দিবে।
” আপনার মনে যে অসুখ তা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম, কিন্তু মাথার অসুখটা আজ জানলাম। ভাবছি আরিফ সরকার কতোটাই না বোকা, এমন একজনকে উনার অফিসের দায়িত্ব দিলেন যে নাকি সবদিকেই অসুস্থ। সো সেড!”
” কি বললে, মিস ঐরাবতী। আমার অসুখ?”
” এমা, এখন দেখি আপনার কানেও অসুখ আছে। এত টাকা পয়সা দিয়ে কি করবেন দুর্লয়! যদি অসুখ সারাতে না পারেন! যাই হোক, আমাকে কাজ করতে দিন। বাড়ি ফিরতে হবে। আমার আপনজন অপেক্ষা করছে।”
” তোমাকে আমি ছাড়বো না, মিস ঐরাবতী।”
নিলয় ভেবে এসেছিল সন্ধ্যাকে ছুটি দিয়ে দিবে। কিন্তু তার বেয়াদবি দেখে মত পালটে নিলো। কিছুক্ষণ ভেবে নিলয়ের মুখে বাঁকা হাসির রেখা ফুটে উঠলো। সন্ধ্যাবতীর উদ্দেশ্যে বলল,
” আবারো শা’স্তি পাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নাও, মিস ঐরাবতী।”
————–
রাত দশটা পেরিয়ে এগারোটা বাজতে চলেছে। শহরের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। উঁচু উঁচু দালানগুলোতে আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। চারপাশে নিস্তব্ধ পরিবেশ। সন্ধ্যা একমনে কাজ করছে। সময়ের দিকে খেয়াল নেই। চার নাম্বার ফাইলটা শেষ করে পাঁচ নাম্বার ফাইল হাতে নিয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে সন্ধ্যাবতী ফাঁকিবাজ না নিষ্ঠার সাথে কাজ করে। প্রায় দশ মিনিট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সন্ধ্যার মুঠোফোনে আলো জ্বলে উঠে। হাতের কাছেই ফোন ছিল বিধায় সন্ধ্যা সেদিকে নজর দেয়। ছোট্ট একটি বর্তা দেখে সন্ধ্যার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে। সন্ধ্যাবতী উওরে কিছু বার্তা লিখে কাজে মনোনিবেশ করে।
নিলয় গভীর মনোযোগে ল্যাপটপে কিছু দেখছে। আকস্মাত সিসি টিভি ক্যামেরায় কিছু একটা দেখে ” নো নো শিট ” বলে দৌড়ে বের হয়ে যায় কেবিন থেকে। সন্ধ্যাবতীর ডেক্সের সামনে এসে নিলয় দাঁড়িয়ে যায়। কাজে ডুবে থাকা সন্ধ্যার হাত ধরে অফিস থেকে বেরিয়ে যায় নিলয়।
অফিসের গোপন কক্ষপথ খোলা। দরজার সামনে র’ক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সন্ধ্যা নিলয়ের কোমড় জাপটে ধরে রেখেছে। নিজে সামনে যাচ্ছে না নিলয়কেও যেতে দিচ্ছে না। নিলয় এতে খুবই বিরক্ত।
” এভাবে ঝুলে আছো কেনো, ঐরাবতী? তোমার হাতিনীর মতো শরীরের ভাড়ে আমি তো ঝুলে যাচ্ছি।”
ভীত হরিণী চোখে চঞ্চলতা, এদিক সেদিক ভীত দৃষ্টিতে র’ক্ত দেখছে। নিলয়ের কথা শুনে ভীত স্বরে প্রত্যুত্তরে বলল, ” দেখছেন না! র’ক্ত। এখানে গরু জবাই তো আর হয়নি। নিশ্চয়ই মানুষকে আ’ঘা’ত করা হয়েছে।”
” তুমি তো খুব বুদ্ধিমতী, মিস ঐরাবতী। এত বুদ্ধি কীভাবে এসেছে? নিশ্চয়ই তোমার প্রেমিক সাংবাদিক, তার কাছ থেকেই শিখেছো।”
সন্ধ্যাবতী কিছুক্ষণের জন্য চমকাল। নিলয়ের মুখশ্রী অবলোকন করে বুঝতে চেষ্টা করল ভাবভঙ্গি। আন্দাজে ঢিল ছুঁড়েছে নিলয় বুঝতে সময় নেয়নি সন্ধ্যা। নিলয়কে জ্বালাতন করার ইচ্ছা পোষণ করল সে।
” আমার প্রেমিকের পরিচয় জানতে দেখছি খুবই আগ্রহ মিস্টার অভদ্র দুর্লয়। তা কি করবেন তাকে পেলে।”
” খু’ন করব।”
সন্ধ্যাবতী অগ্নিরুপ ধারণ করে। নিলয়ের সঙ্গে বোঝাপড়া করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু নিলয় সন্ধ্যার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হয় সাথে সন্ধ্যাও।
গোপন কক্ষপথের র’ক্ত ছাড়া আর কোথাও র’ক্তের ছিটেফোঁটা বা লা’শ কিছুই দেখতে পায়নি তারা। নিলয় ভাবছে, “তাহলে সিসি টিভিতে কাকে দেখলাম, গোপন কক্ষপথে কাকে বেরিয়ে যেতে দেখলাম!”
চলবে………
#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
|সূচনা পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না।]❌