সম্পর্কের__দেয়াল পর্ব ১৫

#সম্পর্কের__দেয়াল
#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa
#পর্ব__১৫
পরের দিন সকাল হতেই সব প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে বাড়ির বাহিরে চলে আসে রিধি আর তার বাবা মা। তাদের স্থান ত্যাগ করতে দেখে অলরেডি পাড়া প্রতিবেশী রা হাজির। কয়েকজন তো কানাঘুষা ও শুরু করেছে। কিন্তু রিধি আর তার বাবা মায়ের কোনো উত্তর নেই। শেষ বার বাড়ি টার দিকে একবার ফিরে তাকালো ৩ জন। অনেক পুরোনো স্মৃতি এই বাড়ি কে ঘিরে রয়েছে। সেই সব সুখময় স্মৃতি কে দুঃখের গ্লানি থেকে বাঁচতে পিছনে ফেলে সামনে অগ্রসর হতে হচ্ছে তাদের। সময় মানুষের জীবন কে ঠিক কখন কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় বা করাবে এটা মানুষ ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারে না। প্রত্যেক মানুষ কে ঘিরে গড়ে উঠে একটা গল্প! আর সময় সেই গল্প কে মাঝে মাঝে নিয়ে দাঁড় করায় সুখের মুহুর্তে আবার কখনো বা দুঃখের গ্লানি তে। মানুষ বরাবর ই দুঃখ কাতর। কথায় বলে মানুষ অতি দুঃখে কাতর আর কঠিন দুঃখে পাথর। দুঃখ তো দুঃখ-ই! সুখ কে মানুষ খুব সহজে যেভাবে অনুভব ও উপভোগ করতে পারে ঠিক তেমন করে দুঃখ কে তারা অতো টা সহজে গ্রহণ করতে পারে না। ফলে দুঃখ মানুষের জীবন কে নষ্ট করে দেয়! তাই বলে এই নয় যে মানুষের জীবনে দুঃখ থাকতে পারবে! মূলত দুঃখ আছে বলেই মানুষ সুখ কে এতো সুন্দর করে উপলব্ধি করতে পারে। সুখ বিনে দুঃখ, দুঃখ বিনে সুখ পুরোপুরি অচল ও একঘেঁয়ে!

কয়েক ফোঁটা চোখের পানি রিধির চোখ থেকে শেষ বারের মতো ঝরে পড়ে। রিধির বাবা মা পাথরের মতো হয়ে আছেন। তারা রিধি কে কাঁদতে বারণ ও করছেন না কারণ তারা চান রিধি কান্না করুক। কাঁদলে মন ফ্রেশ হয়। এবং উনাদের বিশ্বাস রিধি এই কান্না থেকেই নিজেকে শক্ত করার সূচনা ঘটাবে। উপসংহার ওবধি যাতে রিধি কে আর কাঁদতে না হয় এই জন্য ই…..

ভালোবাসা ও প্রাণের শহর ছেড়ে অনেক দূরের পানে পাড়ি জমায় রিধি ও তার বাবা মা। সব মানুষ তো আর খারাপ নয়। পরিবার টার জন্য কয়েক জন আফসোসের সঙ্গে বলছেন,
‘ওরা এমন না করলে ও পারতো!’

আবার কারো বা মত ভিন্ন!
‘চলে গেছে ভালো করেছে। এখানে থেকে মানুষের কটু কথা শোনার থেকে দূরে গিয়ে কষ্টে থাকা ও অনেক ভালো।’

‘হ্যাঁ ঠিক বলেছো। নতুন ঠিকানায় গেলে হয়তো ক’দিন, ক’মাস বা বড়জোড় ক’বছর কষ্ট পাবে তারপর তো সব ঠিক ই ভুলে গিয়ে ভালো থাকবে। আর এখানে থাকলে আশে পাশের খারাপ মানুষ গুলো বার বার পুরোনো ক্ষত কে সামনে টেনে নিয়ে আসবে।’

‘থাক এখন আর আফসোস করে কি হবে!’

এভাবেই অনেকে আফসোস করতে করতে বাড়ি চলে যায়।

————————-
রাতে আর পাভেলের মা রিধি দের খোঁজ খবর রাখলেন না কারণ উনি ভেবেছিলেন সকালে এক বার ওদের বাড়ি যাবেন ফোনে কথা বলার চেয়ে বাড়ি গিয়ে সরাসরি কথা বলা শ্রেয়। যেই ভাবা সেই কাজ রাতে আর কিছু করলেন না। চিন্তা করতে করতে অনেক রাত ওবধি উনার ঘুম আসে নি। এক পর্যায়ে কখন ঘুমিয়ে যান নিজেও টের পান নি। অনেক সকালে ঘুম ভাঙ্গে তার! এতো দেরি কিভাবে হয়ে গেলো বুঝতে পারলেন না। উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখে কেউ নেই।

পাভেল আর রিমি কোথায় সেটাই তিনি ভাবছিলেন। নিচে আসতেই লক্ষ্য করলেন পাভেল রান্না ঘর থেকে বেরোচ্ছে। ক্ষণিকের মধ্যে রাগ উঠে গেলো! উনি চোখ গরম করে ক্রুদ্ধ স্বরে বললেন,
‘পাভেল??’

‘হ্যাঁ মা উঠেছো তুমি? আসো নাস্তা করতে দেখো তোমার নতুন বউ মা কি বানিয়েছে আজ!’

পাভেলের হাসি খুশি চেহারা। খুব সম্ভবত স্বার্থপর মানুষ গুলো এমন ই হয়। একজন কে দুঃখের নোনাজলে ভাসিয়ে দিয়ে তারা সুখে আর আরামসে দিন কাটায়। পাভেল ও সেই মানুষ গুলোর দলের ই একজন!

‘তুই রান্না ঘরে কেন গিয়েছিস?’

‘কেন মা কোনো সমস্যা?’

‘ছেলেদের রান্না ঘরে যেতে নেই জানিস না! আমাদের বংশে কোনো ছেলে কখনো রান্না ঘরে যায় নি। ছেলেদের কাজ বাহিরে রান্নাঘরে নয়!’

‘কেন যেতে নেই? ছেলেরা কি শুধু বাহিরের কাজ করবে!’

‘হ্যাঁ!’

‘আমি এই নিয়ম মানি না!’

‘পাভেললল…!’

রিমি সব শুনে দুজনার মাঝখানে এসে বললো‌‌‌,
‘আচ্ছা মা আজ ভুল হয়ে গেছে পাভেলের হয়ে আমি মাফ চাচ্ছি স্যরি!’

পাভেল কিছু বলতে যাবে রিমি নিষেধ করে দেয়। পাভেলের মা দাঁতে দাঁত চেপে আর কিছু বললেন না। রিমির বানানো নাস্তা খেতে তার এক দন্ড ও ইচ্ছা হলো না। কিন্তু এই মুহুর্তে আর কিছু করার ও নেই তাই তিনি কোনো ভাবে অল্প কিছু খেয়েই উঠে নিজের ঘরে চলে যান। পাভেল তা দেখলো!

‘মা খেয়ে যাও! রাগ আমার উপর খাবার তো কিছু করে নি তাই না?’

‘আমার খাওয়া শেষ..!

নিজের রুমে গিয়ে যথারীতি উনি তৈরি হয়ে নেন রিধির বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ড্রয়িংরুমে পাভেল আর রিমি বসা ছিলো। রিমি পাভেলের মা কে দেখে বুঝতে পারলো উনি কোথাও যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে! কিন্তু এটা বুঝতে পারলো না কোথায় যাচ্ছে এই সময়ে! তাই রিমি বললো,

‘মা কোথাও যাচ্ছেন?’

পাভেল রিমির কথা শুনে তার মায়ের দিকে তাকায়। রিমির মতো এখন তার মাথায় ও সেইম প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকলো! তার মা যাচ্ছে টা কোথায়?

‘কি হলো মা চুপ করে আছো যে! বলবে তো কোথায় যাচ্ছো এই সাত সকালে!’

‘আমার যেখানে ইচ্ছা যাবো এখন কি সেক্ষেত্রে আমার তোদের থেকে অনুমতি নিতে হবে নাকি?’

পাভেল বুঝতে পারলো তার মা এখনো তাদের উপর পুরোপুরি রেগে আছে তাই সে তার মায়ের কাছে এগিয়ে এসে মায়ের দুই হাত ধরে বললো,

‘মা প্লিজ এবার তো সব ভুলে যাও! কেন অযথা রাগ দেখাচ্ছো?’

‘তুই ভুলে গেলেও আমি কিছু ভুলতে পারবো না!’

রেগে তিনি হনহন করে হেঁটে চলে যায় বাড়ির বাহিরে। পাভেল ঠায় দাঁড়িয়ে তা দেখছিলো শুধু। রিমি মন খারাপ করে এগিয়ে আসে পাভেলের দিকে। মাথা নিচু করে বললো,

‘তোমার মা আমাকে মানবেন না তাই না পাভেল?’

পাভেল এবার রিমির দিকে ফিরে তাকায়। রিমির মুখে ছোট হয়ে আছে। আর সে নিচের দিকে তাকিয়েই পাভেল কে এই কথা টা বলেছে। পাভেল রিমির দু গালে আলতো করে হাত রেখে হেসে বললো,

‘এমন কিছু না। মা একটু রেগে আছে তুমি মায়ের মন জয় করে নাও দেখবা সব ঠিক হয়ে গেছে!’

‘কিন্তু!’

‘কোনো কিন্তু নয় এখন এখানে বসো তো!’

পাভেল রিমি কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। আর পাভেলের মা সোজা রিমিদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রিমির মাথায় ঘুরতে থাকে পাভেলের মা কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে হাজারো চিন্তা! পাভেল কাছে আছে ঠিকই কিন্তু রিমির মন অন্য দিকে!

প্রায় ১ ঘন্টা পর পাভেলের মা রিধিদের বাড়ি তে আসে। উনি দেখেন সব কিছু নিরিবিলি। আশে পাশের পরিবেশ টা শুনশান আর একেবারে স্তব্ধ। মনে কোনো মানুষ জন নেই এখানে। পাভেলের মা গেট ক্রস করে বাড়িতে ঢুকে দরজায় তালা মারা দেখতে পেলেন। আর একটাও নয় ৩ টা। পাভেলের মা কিছু টা আন্দাজ করতে পেরে এদিক ওদিক হকচকিয়ে তাকাতে লাগলেন। কাউকে দেখতে না পেয়ে পুরো বাড়ির আশেপাশে পাশে ঘুরতে থাকেন। অতো ঘুরে ও কাউকে পাওয়া তো দূরের কথা কারো কথা ওবধি শুনতে পেলেন না। পাভেলের মা কে দেখে রিধিদের প্রতিবেশী কুসুম বানু এগিয়ে আসে।

‘আপনি রিধির শাশুড়ি না?’

‘হ্যাঁ কিন্তু ওরা কোথায়? কাউকে দেখছি না যে কোথাও গিয়েছে?’

কুসুম কেঁদে উঠলো,

‘আর বলবেন না। রিধি তা আজ সকালে এই বাড়ি ছেড়ে কোথায় যেনো চলে গেছে!’

পাভেলের মা হতভম্ব হয়ে জবাব দেন…
‘কিহহহ…!

‘হ্যাঁ সত্যি.(তারপর কুসুম পাভেলের মা কে সব খুলে বলে সকালের ঘটনা! পাভেলের মা সব শুনে মনে বেশ দুঃখ পান।)

‘কোথায় গেছে বলতে পারো?’

‘কাউকে কিছু বলে যায় নি! তাই আমরা এই সম্পর্কে কিছুই জানিনা!’

পাভেলের মা এক পর্যায়ে নিরাশ হয়ে পড়েন। মন উত্তাল পাতাল ঝড় বয়ে যায়। মনে হচ্ছে রিধি কে তিনি সারাজীবনের জন্যই হারিয়েছেন। নিজেকে নিজে ধিক্কার দিতে থাকলেন রাতে কেন এলেন না তিনি তাহলে তো পেতে পারতেন! হতাশার চরম পর্যায়ে গিয়ে সূর্যের আলোর মতো রিধিদের খোঁজ পাওয়ার একটা উপায় উদিত হলো। তিনি ঝটপট রিধি কে কল দেওয়ার জন্য ফোন টা বের করতে গিয়ে দেখেন তাড়াহুড়ো তে তিনি ফোন সাথে করে নিয়ে আসতেই ভুলে গেছেন! এবার উনার রাগের মাত্রা চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকলো!

তিনি দ্রত বাড়ি যাওয়ার জন্য পা বাড়ান।‌ কেননা উনার মনে হচ্ছে আর একটু দেরি হলে এই‌ শেষ আশার আলো টাও নিভে যাবে।

অন্যদিকে গাড়ি তে বসে আছে রিধি আর রিধির বাবা মা। আত্নীয় স্বজন রাও কটু কথা শোনাতে বাদ রাখে নি। ফোন কলে সবাই ঝেড়েছেন। গাড়ি তে উঠা থেকে নিয়ে শ’ খানেক কল এসেছে ফোনে। এক পর্যায়ে রিধির রেগে গিয়ে ৩ টা ফোন থেকেই সিম ৩ টা খুলে ভেঙ্গে চুরমার করে রাস্তায় ছুড়ে মারে। ব্যাস কাহিনী খতম। যে আত্নীয় রা এই খারাপ সময়ে কথা শোনাতে দু বার ভাবলো না তাদদর সাথে যোগাযোগের কোনো দরকার নেই। সব কিছুর ইতি টেনে দিলো রিধি! নতুন করে সূত্রপাত ঘটাবে বলে…. এবার যা হবে ভালোর জন্য-ই হবে খারাপ আর কিছুই হবে না!… অবশ্য খারাপ তো যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে আর কি ই বা বাকি আছে!

রিধি কানে এয়ার ফোন লাগিয়ে আনমনে অন্যদিকে তাকিয়ে একটা গান প্লে করে দেয়। গান টা বাজতে শুরু করে। গানের কথা গুলো এমন…

ভালোবেসেছি তোমায় যত
আজ মনে ঠিক ততই ক্ষত,

ছিলো যে হৃদয় পরিপাটি
আজ সে হৃদয় পোড়া মাটি!

কি হবার ছিলো কি হয়ে গেলো,
ভালোবেসে মন কি পেল!……

প্রত্যেক টা কথা যেনো পাভেল কে ঘিরে রিধির মন বলছে। চোখ বন্ধ করে গান টা অনুভব করা কালিন কয়েক ফোঁটা চোখের পানি আবারো গড়িয়ে পড়লো রিধির চোখ থেকে। কারণ প্রত্যেক কথা সত্য! পাভেল কেও রিধি ভালোবেসেছিলো! কিন্তু পাভেল তার ভালোবাসার এই মূল্য দিবে ভাবে নি কখনো! এই জন্যই বলে সত্যি কারের ভালোবাসা সবার কপালে সয় না! ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে রিধি কিছু একটা হলো সে চোখ খুলে রেগে গিয়ে গান টা বন্ধ করে দিলো। শুধু বন্ধ করাতেই সীমাবদ্ধ থাকলো না রিধি গান টা ফোন থেকেই ডিরেক্টলি ডিলেট করে দিলো। নিজেকে কঠোর ও স্ট্রং করে নিজেই নিজের মন কে বললো ঠিক এভাবেই সে পাভেল কেও তার থেকে পারমানেন্টলি ডিলেট করে দিবে! কারণ পাভেল তার অযোগ্য!

—————–

পাভেল রিমি কে নিয়ে খুনসুটি তে ব্যস্ত ছিলো হঠাৎ করে তার ফোন টা বেজে উঠে। কে কল করেছে তা দেখে পাভেল আচমকা অপ্রস্তুত ভাবে ফোন টা রিসিভ করে কানের সাথে চেপে ধরলো। এরপর সে ওপাশ থেকে যা শুনলো তাতে পাভেলের হাসি খুশি মুহুর্তেই গায়েব হয়ে গেলো। আর সে মুষড়ে পড়লো….

চলবে__________________

আপ লোক ইদার দেখিয়ে… জুম কারকে দেখিয়ে… এই পর্বে এক হাজার পাঁচশ+ শব্দ লিখেছি। এর পর ও যদি রিডার্সগন বলে পর্ব ছোট হয়েছে! আপ বাতাও ইছলিয়ে ম্যা কেয়া কারু??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here