সাইকো বর পর্ব ১৫

#সাইকো_বর
#Writer_Tabassum_Tajnim

#part_15

কোনো মানে হয় নাকি, মান সম্মান সব গেলো। আহারে বৃষ্টির কাছে কিভাবে যাবো এখন। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি মেঘ রুমে নাই। যাক ভালোই হলো। আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম। অনেক ক্লান্তি লাগছে,, কিন্তু আমি সারাদিন কোনো কাজ করি নি। খুব ঘুম পাচ্ছে,,

কখন যে ঘুমিয়ে পড়ছি জানি না। হঠাৎ মনে হলো কেউ খুব জোরে চিৎকার করলো। আমি প্রায় লাফ দিয়েই বিছানায় উঠে বসলাম। আমার সামনে মেঘ বসে আছে হাতে প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে। মেঘ আমাকে চোখ বড় বড় করে দেখছে,,
এইভাবে তাকিয়ে আছে কেনো??

অথৈ—কি,, কি হয়েছে তোমার???

মেঘ— কি হয়েছে তোমার???

এখন আমার খুব রাগ উঠছে। এত জোরে কেউ চিৎকার দেয় নাকি,,, আবার এখন আমাকে জিজ্ঞাস করছে কি হয়েছে??

অথৈ— আরে এতো চিৎকার করলে কেনো?কি হয়েছে??

মেঘ আমার হাতে প্লেটটা ধরিয়ে দিলো।

মেঘ— ওহ্, এই কথা,, তোমাকে অনেকক্ষণ আস্তে আস্তে ডাকলাম,,কিন্তু তুমি উঠলে না। তাই আর কি,, জোরে,,,

উফফ,, আমার ঘুমটা নষ্ট করে দিলো,, সাইকোর বাচ্চা সাইকো,

মেঘ— এবার খেয়ে নাও।

মেঘ প্লেটের দিকে ইশারা করে বললো। খাবার দেখেই আমার কেমন জানি লাগছে,,, মনে হচ্ছে খাবার খেলেই আমি বমি করে দিবো। নাহ্,, আমি এখন খেতে পারবো না। অবশ্য দুপুরেও কিছু খাই নি,, কিন্তু এখনও ক্ষুধা লাগছে না। হয়তো চা খেয়েছি তাই ক্ষুধা চলে গেছে।

একবার বলছি আচ্ছা অল্প খেয়ে নেই। আরেকবার বলছি নাহ্ খাবো না। খাবো,,
খাবো না,,
এইসব বিড়বিড় করছিলাম।

মেঘ— ঐ প্লেট হাতে নিয়ে কি বিড়বিড় করছো??? পাগল হয়ে গেছো নাকি??

আমি মেঘকে একবার দেখলাম,, ও আমাকে দেখে হাসছে। হুহ্ মজা নিচ্ছে,, আমি পাগলে হলে তো ভালোই হবে তোমার, তাই না।

অবশেষে ঠিক করে ফেললাম,, আমি খাবো না।

মেঘ— কি হলো খাচ্ছো না কেনো?

অথৈ— আমি খাবো না।

মেঘ— কেনো?

অথৈ— এমনি,,খেতে ইচ্ছা করছে না।

গলাটা একদম শুকিয়ে গেছে। বিছানা থেকে নেমে গ্লাসে পানি নিয়ে খেতে লাগলাম।

মেঘ— Sorry

মেঘের সরি শুনে আমি বিষম খেলাম। মেঘ তারাতারি আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিলো। আমি নিজেকে চিমটি দিলাম,, আমি জেগে আছি নাকি ঘুমিয়ে আছি। উহ্ খুব ব্যাথা পেয়েছি, অনেক জোরে দিয়ে ফেলছি।

মেঘ— ঠিক আছো তো তুমি?? হঠাৎ করে বিষম খেলে যে,,,,

বিষম তো খাবোই,, হঠাৎ করে সরি বললে। এর আগে তো কোনোদিন সরি বলে নাই,, আজ কেনো বলতাছে,,, মাথাটা মনে হয় পুরোই গেছে।

মেঘ— ঐ,,কি হলো??

অথৈ— নাহ্, কিছু না হঠাৎ ভূতের মুখে রাম রাম শুনছি তো,, তাই আরকি বিষম খেলাম।

মেঘ— ভূতের মুখে মানে,,, বুঝলাম না,,,

অথৈ— আরেহ্,,, তুমি হঠাৎ করে সরি বললা তো তাই,, তোমার মুখে তো আমি কোনোদিন সরি শব্দটা শুনি নাই। তাই হঠাৎ করে শুনে বিষম খেলাম। তা sorry টা কারে বলছিলা??

মেঘ অনেকক্ষন ধরে কি যেনো ভাবছে।

অথৈ— ঐ বলো না,,, কাকে বলছিলা?? আমাকে!!!
মেঘ আমাকে দেখলো।।

মেঘ— চুপপপ,,,, এত কথা বলো কেনো তুমি???

হুহ্,, আমি নাকি বেশি কথা বলি। যা আর কথায় বলবো না তোর সাথে। মেঘ প্লেট টা আমার সামনে ধরলো। আমি মুখ অন্য পাশে ঘুরিয়ে নিলাম।

মেঘ— খেয়ে নাও,,, দুপুরে তো খাও নি।

আমি মাথা নেড়ে জানিয়ে দিলাম আমি খাবো না।

মেঘ— তুমি তো দেখছি কথা শুনার মানুষ না। দাড়াও,,,,

মেঘ উঠে চলে গেলো। তারপর এসে ভাত মাখিয়ে একটা লোকমা আমার মুখের সামনে ধরলো। উঠে যেতে চাইলে টান দিয়ে আবার বিছানায় বসিয়ে জোর করে আমার মুখে লোকমা দিচ্ছে। আর আমি খাবো না।। অনেক কষ্ট করে মেঘ আমাকে খাওয়াতে সক্ষম হলো। বেচারা আমাকে খাবার খাওয়াতে গিয়ে হাঁপিয়ে গেছে।
ও প্লেট টা গিয়ে নিচে রেখে আসে। ও এসে দেখে আমি শুয়ে পড়েছি। মেঘ আর কিছু বললো না। ও আমার পাশে শুয়ে পড়লো। আমার তো ঘুৃমে ধরছে না। দুপুরে এতক্ষণ ঘুমানোর পরে এখন ঘুম না আসার কথায়। অনেকক্ষন চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি, কিন্তু ঘুম আসছে না। আমি পাশ ফিরলাম। ভেবেছিলাম সাইকো ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু না,, ও তো চোখ বড় বড় করে আমাকে দেখছে।

মেঘ— কি,, এখনো ঘুমাও নি যে??

অথৈ— ঘুম আসছে না,

মেঘ আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। আমি নিজেকে ছাড়িয়ে একটু দূরে সরে শুয়ে পড়লাম। হুহ্,,, দরকার নাই আমার এত্ত ভালোবাসার,,
মেঘ আবার আমাকে টেনে ওর বুকের উপর ফেলে দিলো , শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমি প্রথমে উঠার জন্য বৃথা চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। তারপর ওর বুকেই মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম। মেঘ আমার মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম।

ভাবি,,, ভাবি,,,

এত্ত সকালে কে ডাকছে। দূর ভালো লাগে না। এত ভালো ঘুমটা নষ্ট করে দিলো।

ভাবি!!! সাথে দরজায় টোকা পড়লো তিনটা। ঘুম ভেঙ্গে গেলো। বৃষ্টি ডাকছে!! হুম বৃষ্টি। দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালাম। সাড়ে সাতটা বাজে। এখন উঠবো কিভাবে সাইকো তো আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। আমি আস্তে আস্তে উঠার চেষ্টা করলাম। মেঘ আমাকে আরোও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

মেঘ— কোথায় যাচ্ছো???

আমি চমকে গেলাম। ও জেগে আছে!!

অথৈ— বৃষ্টি ডাকছে। তাই,,,

মেঘ আমাকে নিচে ফেলে দিলো। ও আমার উপর,,,,
আমার নাকের সাথে ওর নাক ঘসতে লাগলো।

মেঘ— তুমি নিশ্চয় কোনো ঝামেলা পাকাচ্ছো বৃষ্টির সাথে মিলে ,,,

আমি চমকে গেলাম। হুম ঝামেলা তো পাকিয়ে ফেলেছি। সবাই যখন জানবে তখন এইটা কিভাবে নিভে আল্লাহয় জানে।
মেঘ— ঐ কি ভাবছো,, তুমি,??
অথৈ— না,, কিছু না। ছাড়ো,, বৃষ্টি সেই কখন থেকে ডাকছে।

মেঘ অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো। আমি উঠে দরজার দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে গেলো। আমি আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না। পড়েই যাচ্ছিলাম,, হঠাৎ কেউ আমাকে ধরলো। মেঘ আমাকে ধরেছে।

মেঘ— আর একটুর জন্যই তো পড়ে যাচ্ছিলে। কি হয়েছে তোমার,,,?? তুমি কি অসুস্থ??

মেঘের চোখেমুখে আমার জন্য টেনশন দেখে আমার হাসি পেলো। আমি হেসে ফেললাম।

মেঘ— আমি কি বলছি,, তার উত্তর না দিয়ে তুমি হাসছো?? হাসি বন্ধ করে বলো কি হয়েছে।
মেঘ একটু রেগে বললো।

অথৈ— কই কিছু হয় নাই। আমি তো একদম ঠিক আছি।।

মেঘ— হুম,, তা তো দেখতেই পাচ্ছি। এখুনি পড়ে যেতে যদি আমি তোমাকে না ধরতাম।

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আবার বৃষ্টির ডাক।

বৃষ্টি— ভাবি,, ও ভাবি,, এখনো ঘুমুচ্ছো নাকি,,৷ সেই কখন থেকে ডাকছি।
আমি উঠে রুমের দরজাটা খুলে দিলাম। বৃষ্টি রুমে ডুকে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো। হয়তো মেঘকে দেখে।

মেঘ— কিরে কি বলতে গিয়ে আটকে গেলি??

বৃষ্টি— নাহ্ কিছু না।। ভাবি,, আজকে এত্ত দেরি করলে যে ঘুম থেকে উঠতে?? সেই কখন থেকে ডাকছি,,,

বৃষ্টি কথার প্রসঙ্গ পাল্টে দিলো। আমার দিকে ঘুরে একটা চোখ টিপ দিলো।

মেঘ— যা তো এখন,, কফি নিয়ে আয়।।

মেঘের কথা শুনে আমিও বৃষ্টিকে ইশারা করলাম। ও চলে গেলো। যাই আমিও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিই।

মেঘ— এই যে ম্যাম,,, আপনি কই যাচ্ছেন।। আর যাওয়ার আগে বলে যান আপনার কি হয়েছে??

ও আমার একটা হাত ধরে বললো। আমাকে টেনে ওর পাশে বসিয়ে দিলো।

অথৈ— কই,, আমার তো কিছু হয় নি। আমি তো ভালোই আছি।

মেঘ— ওওওও,,, তাহলে তো,,,,

মেঘ আমার দিকে আস্তে আস্তে এগুচ্ছে। আমি পিছুতে পিছুতে,, বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
মেঘ এগুচ্ছে,,,

অথৈ— ঐ তো বৃষ্টি এসে গেছে।।।

মেঘ উঠে বসে পড়লো। আমি এক দৌড়ে ওয়াশরুমে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি বৃষ্টি কফি নিয়ে এসে গেছে।

বৃষ্টি— ভাবি চলো,, আম্মু তোমাকে ডাকছে।

বৃষ্টি আমার হাত ধরে প্রায় একপ্রকার টেনেই নিয়ে যাচ্ছে।বৃষ্টির রুমে নিয়ে দরজা আটকে দিলো।

বৃষ্টি— ভাবি,,কাল রাত্রে আমি আর ও ঠিক করলাম আমরা বিয়ে করবো। তুমি আম্মু আব্বু আর ভাইয়াকে রাজি করাবে, এই দায়িত্ব তোমার।

আমি বৃষ্টির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। কিছু বলতে পারছি না। আমি সবাইকে রাজি করাবো কিভাবে….

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here