#সাতরঙা_প্রজাপতি
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
||পর্ব:০২||
“ওহ ফিরেছো তাহলে? এদিকে আমি তো ভাবলাম একেবারে ভাইয়ের বাড়িতে চলে গেছো আর হয়তো ফিরবেই না শ্বশুর বাড়িতে।”
সবেমাত্র বাড়ি পৌঁছেছে জ্যোতি।হল ঘর পার হওয়ার সময় শাশুড়ির কথায় পথিমধ্যে থমকে দাঁড়ালো সে। আনোয়ারা বেগম এগিয়ে এলেন। প্রসঙ্গ বদলে আদেশের সুরে বললেন,”আধ ঘণ্টার মধ্যে বাইরের পোশাক ছেড়ে রান্নাঘরে এসো।”
জ্যোতি দুদিকে মাথা নাড়িয়ে “আচ্ছা মা” বলে ঘরে চলে গেলো। আনোয়ারা বেগমও চলে গেলেন রান্নাঘরে। কপালে হাত রেখে চোখ জোড়া বন্ধ করে বিছানায় আধ শোয়ার মতো করে বসে আছে শোভন। ঘরের ভেতরে স্বামীকে দেখে চমকে গেলো জ্যোতি। শুকনো ঢুক গিলে শব্দহীন পায়ে ভেতরে প্রবেশ করল।ব্যাগটি মেঝেতে রেখে আলমারি থেকে কাপড় বের করে বাথরুমে ঢুকলো। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ মেলে তাকালো শোভন। মেঝেতে কাপড়ের ব্যাগ দেখতে পেলো। বাথরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। প্রতিক্রিয়া হীন ভাবে পূর্বের ন্যায় আবারো চোখ বন্ধ করে নিলো।
পোশাক বদলে বাথরুম থেকে বের হলো জ্যোতি। আড়চোখে শোভনকে দেখে নিলো। তারপর বাইরের কাপড়গুলো ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে ঘর থেকে চলে এলো। চেয়ারের মধ্যে শরীর ছেড়ে বসে আছেন আনোয়ারা বেগম। খাঁন বাড়ির বর্তমান কর্ত্রী তিনি। বিশাল বড়ো বাড়ি। বাড়ির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির সদস্য সংখ্যাও অনেক এককথায় যৌথ পরিবার। বাড়ির তিন জন বউয়ের মধ্যে দুইজন রাতের খাবার প্রস্তুত করছে আর একজন সবার জন্য চা নাস্তা তৈরি করছে। রান্নাঘরের দরজার ধারে বসে সেসব তদারকি করছেন আনোয়ারা বেগম।
জ্যোতি শাশুড়ির সামনে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। নরম কণ্ঠে শুধালো,”আমি কী করবো মা? যদি বলতেন।”
আনোয়ারা বেগম কাঁসার বাটিতে পানের পিক ফেলে উত্তরে বললেন,”মেজো বউয়ের কাছ থেকে তোমার আর শোভনের নাস্তা নিয়ে ঘরে যাও। এখন এটাই তোমার কাজ।”
“আমি এখন নাস্তা করবো না মা। আমি বরং এলিনাকে রান্নার কাজে সাহায্য করি। রেশমা না হয় উনাকে নাস্তা দিয়ে আসবে।”
রেগে গেলেন আনোয়ারা বেগম। রাগ প্রকাশ না করে স্বাভাবিক ভাবে বললেন,”সংসারে পা দিলা এই তো কয়দিন আগে এখনি শাশুড়ির মুখে মুখে কথা বলা শিখে গেছো?”
আনোয়ারা বেগমের শান্ত গলায় বলা কথাটি কানে যেতেই ভয় পেয়ে গেলো জ্যোতি। আনোয়ারা বেগম এবার ধমক দিয়ে বললেন,”এ কদিন যে ভাইয়ের বাড়িতে ছিলে তখনও কিন্তু খাঁন বাড়িতে রান্নাবান্না খাওয়া দাওয়া চলেছে। তাই শাশুড়ির উপর কথা বলার দুঃসাহস আর দেখিও না। যা বলেছি তাই করো। কথার অবাধ্যতা আমার মোটেও পছন্দ নয়।”
জ্যোতি আর কিছু বলার সাহস পেলো না।রান্নাঘরের ভেতরে ঢুকলো। এ বাড়ির মেজো বউ নিলা একটি ট্রেতে দুই কাপ চা আর চানাচুর বিস্কুট সাজিয়ে জ্যোতির হাতে দিলো। জ্যোতি ট্রে নিয়ে ঘরের দিকে হাঁটা ধরলো।আনোয়ারা বেগমের ছোটো জা আবেদা বেগমের একমাত্র পুত্রবধূ হচ্ছে নিলা। আনোয়ারা বেগমের দুই ছেলে দুই মেয়ে। একটা মেয়ে সবে ক্লাস টেনে পড়ে আরেকটা মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে তার ঘরে একটা ছেলেও আছে। শোভন হচ্ছে উনার বড়ো ছেলে।
ঘরে প্রবেশ করল জ্যোতি। শোভন আগের মতোই শুয়ে আছে। জ্যোতি বিছানার একপাশে ট্রে রেখে বসলো। তাতেও শোভনের কোনো হেলদুল নেই। শোভনের এমন আচরণে মনে এক অজানা কষ্ট হানা দিলো জ্যোতির। দৃষ্টি তার শোভনের দিকে।
খানিকক্ষণ বাদে চোখ বন্ধ করেই শোভন শুধালো, “তাকিয়ে আছো কেন? কিছু বলবে?”
ভড়কে গেলো জ্যোতি। একটা প্রশ্ন মাথায় এলো, “উনার তো চোখ বন্ধ তাহলে জানলেন কীভাবে আমি যে উনার দিকে তাকিয়ে আছি?”
ভাবনার মধ্যেই শোভন আবারো বললো,”কী হলো?”
“মা নাস্তা পাঠিয়েছেন।”
“রেখে চলে যাও। এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে কেন?”
লজ্জা পেলো জ্যোতি। নিজের চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বসা থেকে উঠে ব্যালকনিতে চলে গেলো।ঘড়িতে এখন সন্ধ্যা সাতটা বেজে ৪ মিনিট। বাহিরে অন্ধকার। আজ তিনদিন হলো বসন্তের আগমন ঘটেছে। মৃদু ঠান্ডা হাওয়া বইছে বাহিরে। খোলা চুল গুলো উড়ে উড়ে চোখেমুখে এসে পড়ছে। এই পরিবেশটা এই মুহূর্তটা কেন জানি বেশ ভালো লাগছে জ্যোতির। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মুহূর্তটি অনুভব করতে ব্যস্ত সে। এ সময় হুট করেই মনের মধ্যে একটি গানের লাইন উদয় হলো। চোখ জোড়া বন্ধ করে গুনগুন করে গাইতে লাগলো,
❝সে কী দেখতে পেয়েও পায় না!
না কি দেখতে আমায় চায় না..
তবুও সুযোগরা দেয় তারই ঘরে ডুব…❞
“কে দেখতে পায় না তোমায়? তার কী চোখ নেই যে এত বড়ো একটা মেয়েকে দেখতে পায় না?”
পুরুষালি কণ্ঠের কথাটি শুনেই জ্যোতির ভিতু মন কেঁপে উঠল। শোভন হাত ভাঁজ করে বারান্দার দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। লজ্জায় চোখেমুখে রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে জ্যোতির। মনে মনে ভাবছে,”আমি যে গান গাইছিলাম তা কি উনি শুনে ফেলেছেন?”
জ্যোতির নিরবতায় বিরক্ত হলো শোভন। বুঝতে পারলো তার স্ত্রী লজ্জা পাচ্ছে। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“ট্রে টা রান্নাঘরে রেখে এসো।”
হাফ ছেড়ে বাঁচলো জ্যোতি। কোনোদিকে না তাকিয়ে দ্রুত শোভনের পাশ কাটিয়ে বারান্দা থেকে চলে গেলো। শোভন দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজার কাছ থেকে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিগারেট ধরালো।
আবারো শাশুড়ির মুখোমুখি হলো জ্যোতি।আনোয়ারা বেগম পুত্রবধূকে পর্যবেক্ষণ করে বললেন,”আবারো এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
“নাস্তা শেষ। এবার কী করবো মা যদি বলতেন?”
“ঘরে যাও।”
মুখ ভার হলো জ্যোতির।যতই শোভনের থেকে দূরে দূরে থাকতে চায় ততোই যেনো তার শাশুড়ি মা তাকে পেছন থেকে ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে দেয়। নিজের শাশুড়ি মা’রা যাওয়ার পর থেকে এই বাড়ির কর্ত্রী হয়েছেন আনোয়ারা বেগম। উনার কথার বিপরীতে কথা বলার সাহস এ বাড়িতে কারোরই নেই। মলিন মুখে আবারো ঘরে চলে এলো জ্যোতি। ঘর ফাঁকা, বুঝতে পারলো শোভন এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। বারান্দা থেকে এক বিদঘুটে গন্ধ আসছে।
জ্যোতি এগিয়ে গেলো বারান্দার দিকে। শোভনকে সিগারেট খেতে দেখে বেশ অবাক হলো। বেশ কয়েকদিন হলো তাদের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। অথচ শোভনের এমন একটি বদঅভ্যাসের কথা জানা ছিলো না তার।জানার কথাও অবশ্য নয়। শুধু এই কথাটি কেন শোভন সম্পর্কে কিছুই যে জানা নেই জ্যোতির। কারণ শোভন সেই সুযোগটাই তাকে দেয়নি।
ছোটো বেলা থেকেই মা আর ভাইয়ের কষ্ট দেখে জ্যোতিরও ইচ্ছে করতো, একদিন লেখাপড়া শেষ করে বড়ো একটা চাকরি করবো আর তারপর সংসারের দায়িত্ব নিবো মা আর ভাইয়ের সব কষ্ট দূর করে দিবো। কিন্তু জ্যোতি তার সেই ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারেনি। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই তার জন্য বিয়ের সম্বন্ধ আসে, ছেলে এবং ছেলের পরিবার ভালো হওয়ায় জাহিদ আর দেরি করতে চায়নি। মায়ের সম্মতি নিয়ে ধুমধাম করে বোনের বিয়ে দিয়ে দেয় শোভনের সঙ্গে। শোভন চাকরি সূত্রে চট্টগ্রামে থাকে, বিয়ের সপ্তাহ খানেক পরই নববধূকে রেখে নিজের কর্মস্থলে ফিরে যায় সে। এই দূরত্বের কারণেই শোভন সম্পর্কে জ্যোতির জানার পরিধিটা কম। তাদের মনের দূরত্বটাও হয়তো অনেক।
জ্যোতি নরম স্বরে বললো,”ধূমপান করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষ’তিকারক। এগুলো কেন খান? কি বিচ্ছি’রি গন্ধ!”
জ্যোতির কণ্ঠস্বর শুনতেই হাতের অর্ধ খাওয়া সিগারেটটা দ্রুত ফেলে দিলো শোভন। এমন ভাবে ঘরে এলো যেনো এখানে কেউ যে আছে তা সে দেখতেই পায়নি। যতবার শোভন বাড়িতে ফিরে ততবারই জ্যোতিকে সে এভাবেই উপেক্ষা করে আসছে। মাঝে মাঝে জ্যোতির খুব ইচ্ছে করে শোভনকে প্রশ্ন করতে,”কেন আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করেন? কেন আমায় ভালোবাসেন না?”কিন্তু গলা পর্যন্ত এসেই আটকে যায় প্রশ্ন গুলো। কেমন যেনো অনুভূত হয়। হয়তো দুজনের মধ্যকার এত দূরত্বের কারণেই সাহস হয়ে ওঠে না মন খুলে কথা বলার।
খাঁন বাড়িতে রাতের খাবারটা সবাই একসঙ্গে করলেও শোভন বাড়িতে ফিরলে কখনোই সবার সঙ্গে খাবার খায় না।আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।
আনোয়ারা বেগম বড়ো একটা স্টিলের ট্রে তে খাবার সাজিয়ে জ্যোতির হাতে দিয়ে দিলেন।শোভনের সঙ্গে জ্যোতিও ঘরেই খেয়ে নেয়। এটাও আনোয়ারা বেগমেরই আদেশ। পুত্রবধূকে তিনি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন,”স্বামীকে রেখে নিচে এসে খাওয়ার দরকার নেই। যতদিন শোভন থাকবে ততদিন ওর সঙ্গে বসে ঘরেই খেয়ে নিবে।”
জ্যোতি তার বিপরীতে প্রশ্ন করেছিল,”আচ্ছা মা উনি সবাইকে রেখে একা একা ঘরে বসে খান কেন?”
আনোয়ারা বেগম সঠিক কোনো উত্তর দেননি বরঞ্চ প্রসঙ্গ বদলে দিয়েছিলেন তারপর থেকে জ্যোতি আর কাউকে শোভনের ব্যাপারে কোনো প্রশ্নই করেনি। শোভন নামক পুরুষটি তার কাছে বরাবরই কেমন এক রহস্যময় মানবের মতো।
শোভন আজ বিকেলেই বাড়ি ফিরেছে তাই আনোয়ারা বেগমের তত্ত্বাবধানে শোভনের পছন্দের সব খাবার রান্না করা হয়েছে। রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় এসে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল শোভন। জ্যোতি এঁটো বাসন নিচে রাখতে গেলো তারপর ইচ্ছে করেই একটু সময় নিয়েই ঘরে এলো। ভাইয়ের বাড়ি থেকে ফিরে একটুও শুতে পারেনি সে। এখন বেশ ক্লান্ত লাগছে। মলিন মুখে মেঝেতে বিছানা করার প্রস্তুতি নিলো। আলমারির পাশ থেকে পাটিটা নিয়ে এলো জ্যোতি।
পাটি বিছাতে যাবে তখনি শোভন বললো,”আলাদা বিছানা করার দরকার নেই খাটেই শুয়ে পড়ো।”
চমকে গেলো জ্যোতি। শোভন বাড়িতে ফিরলে জ্যোতি নিচে বিছানা করেই ঘুমায় তবে নিজের ইচ্ছায় নয় বরং শোভনের ইচ্ছায়। শোভন স্পষ্ট করেই একদিন বলে দিয়েছিল জ্যোতিকে,”তোমার সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
জ্যোতি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে,”ঠিক শুনেছি তো?”
শোভন ভ্রু কুঁচকে জ্যোতির দিকে তাকালো। বললো,
“আলোর মধ্যে আমি ঘুমাতে পারি না দ্রুত লাইট অফ করে শুতে এসো।”
জ্যোতি এবার নিশ্চিন্ত হলো যে ঠিকই শুনেছে। দ্রুত লাইট নিভিয়ে শোভনের পাশে শুয়ে পড়ল। জ্যোতি শুতেই শোভন বললো,”পাশে শুতে দিয়েছি বলে যেনো রাতে আবার আমার শরীরে হাত-পা উঠিয়ে দিও না। সঙ্গে সঙ্গে নিচে কিন্তু ফেলে দিবো।”
এমন একটি কথায় প্রচন্ড রাগ হলো জ্যোতির। ইচ্ছে করল এখনি শোভনের উপর হাত-পা উঠিয়ে দিয়ে বলতে, উঠিয়েছি হাত-পা এবার পারলে নিচে ফেলে দেখা। কিন্তু জ্যোতি পারলো না কাজটি করতে তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।মুহুর্তেই ঘুম এসে হানা দিলো। জ্যোতি পাড়ি দিলো ঘুমের রাজ্যে।
_________
জানালার কাঁচ ভেদ করে আলো এসে ঘরের অন্ধকার দূর করে দিয়েছে। পিটপিট করে তাকিয়ে পুরো ঘর পর্যবেক্ষণ করল জ্যোতি। শোভন ঘরে নেই দরজার ছিটকিনিও খোলা। শোয়া থেকে উঠে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। সাতটা বেজে তেরো মিনিট। জিভে কাম’ড় দিয়ে জ্যোতি দ্রুত বিছানা ছেড়ে বাথরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
মেজো বউ নিলা এবং ছোটো বউ এলিনা মিলে সকালের নাস্তা তৈরি করছে। নাস্তা তৈরি প্রায় শেষের দিকে। একটু সকাল সকালই খাঁন বাড়িতে রান্নাবান্না শুরু হয়ে যায় কারণ বড়োদের অফিস ছোটোদের স্কুল আছে তারা তো খেয়ে বের হবে।
নিলা মুখ ভার করে এলিনার উদ্দেশ্যে বললো,”এই বাড়িতে সারাটা দিন শুধু আমাদেরই গাধার মতো খাটতে হয় এরপরেও কারো মন পাই না আর ওদিকে বড়ো বউ গায়ে হাওয়া লাগিয়ে শুধু ঘুরে,বাপের বাড়ি গিয়ে পড়ে থাকে অথচ কেউ কিচ্ছুটি বলে না।”
এলিনা জায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বললো,”ঠিক বলেছেন ভাবী। তারপরেও মা উনার বড়ো বউকেই ভালোবাসেন। এখনো বড়ো বউ নিচেই নামেনি কিন্তু কারো তাতে হেলদোল নেই ওর জায়গায় আমরা থাকলে দেখতেন কেমন করতো।”
কথাটি বলে বামে ঘুরতেই এলিনা ভয়ে শুকনো ঢুক গিললো। জ্যোতি দাঁড়িয়ে আছে, ওদের সবকথাই শুনেছে সে। এলিনা আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,”আসলে আমি ওভাবে __!”
জ্যোতি স্মিত হাসলো। এলিনাকে থামিয়ে দিয়ে রান্নাঘরের ভেতরে প্রবেশ করল। বললো,”কাল ও বাড়ি থেকে ফেরার পর অনেক ক্লান্ত লাগছিল আর রাতেও একটু দেরিতে ঘুমিয়ে ছিলাম তাই ঘুম থেকে উঠতেও দেরি হয়ে গেছে। আজকের সন্ধ্যার নাস্তাটা না হয় আমিই তৈরি করে নিবো তোমরা তখন বিশ্রাম নিও।”
এলিনা এবং নিলার মুখে কোনো কথা নেই। শোভন ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে গেছিলো। নামাজ শেষে চা খেয়ে বাড়িতে ফিরলো। ছোটো বোন রেশমা এগিয়ে এসে বললো,”ভাইয়া, তোমাকে মা দেখা করতে বলেছে।”
“কোথায়?”
“মা ঘরে আছে। তোমাকে ওখানেই যেতে বলেছে।”
রেশমা কথাটি বলেই চলে যাচ্ছিল। শোভন পেছন থেকে ডেকে বললো,”রেশমা শোন।”
“কী?”
“আসলে মানে__”
রেশমা ভ্রু কুঁচকে নিলো। ভাইয়ের দ্বিধান্বিত কথায় কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করল। হুট করেই সবটা বুঝে গেলো রেশমা। আশ্বস্ত করে বললো,”বাবা বাড়িতে নেই। নাস্তা করেই বাজার করতে বেরিয়ে গেছে।”
“ওহ।” বলেই কোনদিকে না তাকিয়ে আনোয়ারা বেগমের ঘরের দিকে চলে গেলো শোভন। আনোয়ারা বেগম দুতলার বারান্দায় বসে পাঞ্জাবি সেলাই করছেন। শোভন দরজায় জোরে জোরে দুইবার কড়া নেড়ে বললো,”ভেতরে আসবো?”
ভেতর থেকে উত্তর এলো,”হুম এসো। আমি বারান্দায়।”
শোভন বারান্দায় চলে এলো। প্রশ্ন করল,”পরশু রাতে ফোন করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বললেন। অথচ বাড়িতে কিছুই হয়নি। তা কেন ডাকলেন?”
“তা বলার জন্যই এখন ডাকলাম। চেয়ারটায় বসো।”
শোভন আনোয়ারা বেগমের পাশের চেয়ারে বসলো। দৃষ্টি তার মেঝেতে। আনোয়ারা বেগম পানের পিক ফেলে বলার জন্য প্রস্তুত হলেন।
চলবে _____