সাবিহার বিয়ে”
লেখক :-শ্রাবণী ঘোষ
পর্ব -(১৬+১৭)
পর্ব -১৬
সাবিহাকে বাসায় পৌছে দিয়ে মেহবুব যখন
বাসার পথে যাচ্ছিল সারাটা পথ ও সাবিহার কথা
ভাবতে ছিল।কেমন যেন একটা ভাললাগা
কাজ করছিল ওর
মনে। সাবিহার নিষ্পাপ সরলতা বার বার ওর মন
ছুয়ে দিচ্ছিল অথচ এই মেয়েকেই
একদিন ও বাসা হতে বের করে
দিয়েছিল।ভাবতেই ওর অসহ্য
লাগতেছিল।কেমন এমন করছিল???রিতার
জন্য? যে অনেকদিন আগেই ওকে
ছেড়ে অন্যের হাত ধরছিল?ওর মনকে
চুড়মার করতে যার এতটুকু বাধেঁ নি,ঐ
থেকেই ও কেমন জানি
মেয়েজাতকে ঘৃনা করে,ভাবে সবাই
এক।তেমনটি সাবিহাকেও ভাবত এই
মেয়েটাও এমন।এরা কাউকে ভালবাসতে
জানে না।ভাবত একেমন নিলজ্জ মেয়ে,
এত বাজে বিহেব করার পরও যাচচ্ছে না
চলে।আকঁড়ে পড়ে আছে। ওতো
সাবিহাকে বিয়েও করতে চায় নি।কিন্তু
এখন কেমন জানো একটা ঘোড় লাগা
কাজ করছে ওর মধ্যে,যেটা হতে
বরাবর দূরে থাকতে চেয়েছে।
কয়েকবার ভাবল এটা কি সাবিহার প্রতি
আকর্ষন না ওর হাজবেন্ড হিসেবে
একটা পুরুষের সহজাত স্বভাব??
রাতে বাসায় ফিরার পর ফ্রেশ হয়ে
খেতে বসল তখন দেখল মা বেশ
থমথমে মুখ করে আছে।জানত এর
কারন ও ই।তারপরও জিঘাস করল,-কি ব্যাপার
মা?
-কি আর হবে? আমার কথা ভাবার কারও সময়
আছে?
বলেই মেহবুবের মা নিজের রুমের
দিকে চলে গেল,ও পিছন পিছন গেল
মায়ের। খাটের পাশে বসে মায়ের হাত
ধরে বলল-দেখ মা জিদ কর না। আমি জানি
তুমি কেন রাগ?
– তাহলে আমার রাগ ভাঙাস না কেন?
বউকে নিয়ে আয়।
-দেখ মা সেটা সম্ভব না। আমি এই বিয়ে
করতেই চাই নি।তোমরা জোর
করেছো তাই করেছি।কি হলো
বলো?আমরা কি সুখে ছিলাম?
-তুই নিজের সুখ নিজে নষ্ট করেছিস।
সাবিহা কত ভাল মেয়ে।ও তোকে কত
সুখে রাখত।তুই বুঝলি না।
হ্যাঁ মেহবুব জানে সাবিহা অনেক ভাল
কিন্তু ও চায় না নিজের সাথে কাউকে
জরাতে। মা তো আর বুঝবে না তাই আর
কথা না বাড়িয়ে রুম হতে বের হয়ে
এলো।রুমে এসে ফোনটা হাতে
নিয়ে ভাবল সাবিহা ডা. কে একটু জালানো
যাক।আজ সে একটু ভাব দেখাচ্ছিল কিনা
এবার একটু ওর ভাবের পালা কিন্ত নাম্বার
তো ওর কাছে নেই।নিজের কপাল
নিজেরই চাপরাতে ইচ্ছে হলো।
হসপিটালে বসে এত কথা বলত আর তখন
কিনা নাম্বার টাই নেয় নি। আজও পারত তাও
ওর মনে আসে নি।কি করবে চিন্তা
করতে করতে ভাবল মায়ের কাছে
তো আর চাওয়া যায় না, না জানি কি বলতে
কি বলে বসেন আর বোনকে তো
জানানোই যাবে না যে সাবিহার নাম্বার ওর
কাছে নেই এতদিন পরও। বিবিসি টেপ
রেকর্ডার তাহলে বাজঁতেই থাকবে
তখন মনে পরল বড় ভাবির কথা। তার
রুমের সামনে গিয়ে দেখে দরজা
আটকানো হয়ত শুয়ে পরেছে। মনটা
ওর খারাপ হয়ে গেল,ফিরে আসবে
তখনি দেখে যে ভাবি রুম হতে বের
হলো।জগ হাতে, পানি নিবে। ওকে
দেখে বলল,-মেহবুব কিছু লাগবে
তোমার?
-না মানে ভাবি আসলে…
-হ্যাঁ বলো।
– সাবিহার নাম্বার টা ডিলেট হয়ে
গেছে,আমার মুখুস্ত না। একটু দাও তো।
এক নিঃশাসে বলল মিথ্যে কথাটা। ভাবি অবাক
হয়ে গিয়ে রুম হতে তার ফোন এনে
সাবিহার নাম্বার টা দিল ওকে।
-শোন কি মনে করছ?আমি বুঝি না?
-না মানে ভাবি…
-একদিন তোমার বউ ও এমনি আমতা আমতা
করতে করতে তোমার নাম্বার চাইছিল
জানো?
ওতো ঠিকই জানে, আর সেদিন তো
ফোনে চরম খারাপ বিহেবও করছিল ওর
সাথে।না জানি মেয়েটার মনের অবস্থা
তখন কেমন হয়েছিল???ভাবির কাছ হতে
বিদায় নিয়ে রুমে এসেই সাবিহাকে
ফোন দিল।ওপাশ হতে দু একবার রিং
হতেই ফোন ধরল সাবিহা।
-হ্যালো।
-হ্যালো আপনি ডা. সাবিহা?
– জি কে বলছেন বলুন?
-আমি আপনার পেশেন্ট ছিলাম একসময়।
-হ্যাঁ তো? এখন কি সমস্যা?
-সমস্যা হলো আমি এখনও সুস্থ হই নি।
-তাহলে আপনি কাল আবার হসপিটালে
আসুন। আমি নতুন করে আপনার হিস্ট্রি
নিয়ে দেখব।
-না ফোনে বলুন।
-এভাবে ফোনে তো বলা যায় না,
আপনি বুঝছেন না কেন?
মেহবুব তো সাবিহাকে বিরক্ত হতে
দেখে বেজায় খুশি।সাবিহা ফোন
কেটে দিল এরই মধ্যে।কাল সকালে
অফিসে যাবার পথে সাবিহা মাড্যামকে আর
একবার চমকিয়ে দেয়ার ইচ্ছে নিয়ে
ঘুমুতে গেল মেহবুব।
ওদিকে সাবিহার অশ্রু জলের সাক্ষি থাকল
বরাবরের মতো ওর বালিস।যতই ও বাইরে
শাক্ত থাকুক না কেন ভিতরে ভিতরে ও
ভেঙে যাচ্ছিল। অল্প কিছু দিনের
মধ্যে কি হতে কি হলো।একটা
ডির্ভোসী হিসেবে কিভাবে পরিচয়
দিবে সমাজে, মা বাবাকে কত কথাই না
শুনতে হবে ওর জন্য।যে মেয়ের
বিয়ে ছয় মাসের মাথায় ভেঙে যায়
নিশ্চই মেয়ের মধ্যে সমস্যা। কি করে
বুঝাবে ও ওর স্বামী একটা নেশাখোর,
বিয়ের আগে অন্য মেয়ের সাথে
সম্পর্ক ছিল,যে কথায় কথায় ওর সাথে
খারাপ আচারন করত।মেহবুব কি চায় ও
নিজেও জানে না।আজও তো সন্ধ্যা
বেলা তিতুনদের প্রোগ্রামে আপু ভাইয়া
এদের সাথে কত ভাল আচারন করল।তারা
তো বুঝছে ওরা কত হ্যাপি!!কেন ও
সাবিহার সব কিছুতে জরাচ্ছে??হসপিটালের
কলিগ এখন আবার ওর পরিবার।তাহলে কি
মেহবুব সবার কাছে ভাল হতে চায় যাতে
সব দোষ সাবিহার হয়। কারন ও জানে যে
মেহবুব ডির্ভোস ফাইল করেছে কিন্তু
আটকে গেছে ওর অ্যাকসিডেন্টের
কারনে।যেকোন সময় পেপার
আসবে। ওর অসুস্থতার সময় একদিন
মেহবুব বলেছিল যে ওদের
ডির্ভোসের পর ও বাইরে যাবে
সেনাবাহিনীর সামরিক কাজে।
এখানের লাইফ নিয়ে ওর কোন আগ্রহ
নেই।এর বেশি আর ও ভাবতে পারছিল না।
শেষে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল।
সকাল আটটায় সাবিহার ডিউটি ছিল,সকাল
যেহেতু রোগীর চাপও কম ছিল
মোটামুটি। এরই মধ্যে দেখে মেহবুব
হসপিটালে। আরে আবার এই লোক??
-হায় ডা.।
-আপনি এখানে?
-তুমিই তো আসতে বললা।
-কখন?
-বললা না যে হিস্ট্রি নিবা?
-ওটা আপনি ছিলেন?
-হুম এত ডা. দেখালাম কিন্তু পেশেন্ট
দেখে তোমাকেই দেখলাম অবাক
হতে।নিজের স্টুডেন্টসদেরও
এগুলো শিখাও নাকি??
-আরে ধূর। আপনি বলবেন না যে ওটা
আপনি?
মনে মনে বিরক্ত হলেও প্রকাশ করল না
সাবিহা।
-আচ্ছা আপনি বলছিলেন না আপনি অসুস্থ।
কই কাল রাতেও তো দেখলাম আপনি
বেশ সুস্থ তাহলে?
-আরে কিছু না এমনিই তোমার নাম্বার নিলাম
ভাবির কাছ থেকে ভাবলাম একটু বিরক্ত
করি।
-হা হা হা আপনি যাই বলুন না কেন আমি
বুঝতে পারতেছি আপনার মাথাটা গেছে
আগোছালো হয়ে।
-হ্যাঁ তা তো পারবেই।
এভাবে আরও কিছুক্ষন কথা বলে
মমেহবুব বলল,–আচ্ছা আমি উঠছি
তাহলে। তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে
চেয়েছিলাম আমি সাকসেস।সি ইউ সুন।
বাই।
-বাই।
মেহবুবের ফিরার পথের দিকে তাকিয়ে
সাবিহা নিজের মনেই বলল-সারপ্রাইজ
তো আপনি সেই বিয়ের রাত থেকেই
দিচ্ছেন।যাই হোক সারাদিন ডিউটির পর
বিকালে আবার মেহবুবের ফোন।ও
নম্বার সেভ করে রাখে নি কিন্তু
আওয়াজে বুঝল।
-এই তুমি ফ্রি আছো বিকেলবেলা?
-না মানে.. হ্যা।
-ওভাবে বলছো কেন আমতা আমতা
করে?আমি বাঘ না ভাল্লুক যে খেয়ে
ফেলব?
-হাহ আমি ওত ভয় পাই না।
-আচ্ছা তাহলে খালামনি বের হও,তোমার
বাসার নিচে আসছি।
-কি কাজ ছিল?ফোনে বলা যায় না?
মেহবুব আগের মত করে ওকে
জোরে বকা দিল।-যা বলছি কর।বলেই
ফোন কেটে দিল।এই শয়তান
মেজরের কত বড় সাহস ওকে বকা দে।
আজ কিছু কথা শুনাবে,কি কি শুনাবে
ভাবতে ভাবতে রেডি হলো।নিচে নামল
যখন মেহবুব এসে ফোন দিল।দেখা
হতেই মেহবুব হেসে গাড়ির দরজা
খুলে দিল।সাবিহার রাগে গা জলে গেল।
মেহবুব ঠিকই ওর রাগ বুঝছিল।গাড়িতে উঠার
পর মেহবুবই কথা বলতে ছিল,সাবিহা চুপচাপ
বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল আর মাঝে
মাঝে হু হা করতে ছিল।
-আমার উপর বিরক্ত?
-না।
-তাহলে কথা বলছো না যে?কখন হতে
বক বক করেই যাচ্ছি।
-আপনি আমাকে বকা দিলেন কেন?
-সরি।
-তাহলে অনেক সরি বলতে হবে কারন
আপনি আমাকে আজ পর্যন্ত অনেক
বকছেন।
-আচ্ছা তাহলে সরি হিসেবে কি চাও?
-কিছুনা।
-ওকে। জানো আমি ভাবছিলাম তুমি শাড়ি
পরবা।তোমাকে শাড়িতে কখনই দেখি নি।
-আপনি আমার কি হন যে শাড়ি পরব?আর
কেন বিয়ের সময় দেখেন নি?
সাবিহার এমন ঝাঁঝালো আচারনে মেহবুব
অনেক আশাহত হলো।অন্য কেউ এমন
করলে ও কি করত নিজেই জানে না।কিন্তু
ও চায় না ওর সাথে আর কোন বাজে
বিহেব করতে।এমনিতেই মেয়েটাকে
অনেক কষ্ট দিছে,অন্তত যে কদিন
একসাথে সময় কাটাতে পারে সেটুকু
ভাল স্মৃতি হয়ে থাকুক।তাই তো ওর শত
ব্যস্ততার মাঝেও ওকে নিয়ে বের
হয়েছে,বার বার দেখা করছে যাতে
একটা ভাল সম্পর্ক থাকে ওদের মাঝে।
অন্যদিকে সাবিহা মনে মনে মেহবুব
সম্পর্কে যে নেগেটিভ ধারনা নিয়েই
এগুলো বলছে তা ও জানেই না।
-বিয়ের সময় ওত ভালোভাবে দেখি নি।
পরে যখন ভালো মত দেখতাম তখন
তো তোমার ঐ সাদা এ্যাপ্রোণ পরা।
-আচ্ছা পরব শাড়ি।
এরকম আরো অনেক খুটিনাটি কথাবার্তা
চললো দুজনের। সাবিহা মেহবুবের
সাথে কোন রেস্টুরেন্টে যেতে
নারাজ।ও ও আর কোন জোর করল না
সত্যি বলতে পারল না। রাস্তায় বসে ফুচকা,
আইসক্রিম খেল।ও যে এত ঝাঁল
খেতে পারে মেহবুব জানতই না।পরে
তো সাবিহার পুরো অস্থির অবস্থা।
চোখ হতে পানি বেরচ্ছিল, মেহবুব
মুছতে চেয়েছিল সাবিহা ছিটকে দূরে
সরে গেল।মেহবুব তো হাসতে
হাসতে খুন।
-তুমি আসলে একটা আহ্লাদী।ভাব কর
অনেক বড় হয়েছ।
-মোটেই না।
-মোটেই হ্যা।তিতুনের থেকেও
ছোট।
তারপরে ওরা আরও কিছুক্ষন ঘুরল
শেষে সাবিহাকে ওর বাসায় নামিয়ে দিল।
-ভিতরে আসুন।আপনার ফেভারেট মশলা
চা বানিয়ে খাওয়াব।
-তুমি জানলে কি করে?
-আমি অন্তত একমাস আপনার সংসার করছি।
তো আপনাকে ভালভাবে চিনি।আসুন।
লিফটে উঠেই দেখল পাশের ফ্লাটের
আন্টি। ওদের দিকে খুব ভাল ভাবে
তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে,সাবিহা
পুরো চুপসে গেল।ওর বাসায় ঢুকে
মেহবুব জিজ্ঞাস করল-কেউ জানে না
যে তুমি ম্যারিড?
-নাহ।
-আমার মনে হয় আসাটা উচিৎ হয় নি
তাহলে।
সাবিহা ভাবল এ তো কিছুই না আমার যে
আরও কত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে
তা আপনি কিভাবে বুঝবেন??ওকে
বসতে দিয়ে সাবিহা কিচেনে গেল।
মেহবুবের মনটা খুব খারাপ লাগছিল না
জানে কিভাবে মেয়েটা দুনিয়াদারি
সম্মুখীন করবে।ডিভোর্সের পর ও
যেন বাইরে যাবে তাছাড়া ওকে তেমন
কেউ কিছু জিজ্ঞাসও করবে না কিন্তু এই
মেয়েটা??আর সাবিহাকে দেখে এখন
পর্যন্ত ওর মনে হয় নি যে ও অন্য
মেয়েদের মত রিলেশন ভেঙে
গেলেও কিছু আসে যায় না,তাহলে
বিয়ের পরপরই চলে যেত।এই ভাবছে
তখন সাবিহা কিচেন হতে জানতে চাইল ও
চায়ের সাথে কি খাবে।ওর মনে পরল
ওর হসপিটালে থাকাকালিন একদিন সাবিহা ওর
জন্য পাকোরা বানিয়ে নিয়েগিয়েছিল
সেটাই বলল।
চা খেতে খেতে মেহবুব খেয়াল
করল সাবিহা কেমন যেন নিষ্প্রাণ হয়ে
আছে।
বুঝেও না বুঝার ভান করে বলল-আবার মুড
অফ হলো কেন ডা তোমার?
-কিছুনা এমনি।অনেক পড়াশুনা জমে আছে
তো তাই টেনশন লাগছে।
মেহবুব মনে মনে হাসল,-জানো তুমি
কিন্তু চা টা বেশ ভালই বানাও।মা বলেছে
রান্নাও নাকি ভাল কর। যে তোমাকে
পাবে সে একজন অলরাউন্ডার বউ
পাবে।
কথাটা শুনে সাবিহা উদাস দৃস্টিতে তাকাল ওর
দিকে, মেহবুবের মনটা আনচান করে
উঠল একি বলল ও। কোথায় ওর মুডটা ভাল
করবে তা না উলটো আরও বার বার খারাপ
করে দিচ্ছে।তারাতারি বলল,
-আচ্ছা তুমি তিতুনকে ফোন দাও ওর
সাথে কথা বলি।
-নাহ এখন ওরা ঘুমিয়ে পরছে হয়ত।
-যত যাই হোক আমি ওদের এখন ওদের
ফেভারেট আংকেল।আমার কথা শুনলে
ওরা ঠিকই জেগে যাবে।
সাবিহা পরল বিপদে ও যতই মেহবুবকে
আটকাতে চায় এইলোক আরও জরায়
নিজেকে। এত কেন ভাল হতে চায় ও?
এমনকি বাচ্চাদের কাছেও।ও তো আর
জানে না মেহবুব ওর মুড ভাল করার জন্যই
অন্য উপায় না পেয়ে বাচ্চাদের সাথে
কথা বলতে চাচ্ছে। কিছু উপায় না পেয়ে
আপুর বাসায় ফোন দিল।কথা বলিয়ে দিল।
তিতুনদের সাথে মেহবুবের মজার
কথাবার্তা শুনে ও তো হেসে খুন!!কত
নালিশ করল ওরা একে অপরকে সাবিহার
নামে।মেহবুবের হাসি দেখে আর
বাচ্চাদের সাথে খুনশুটি শুনে ভাবল
লোকটা এমনি একটু রাফ হতে পারে
কিন্তু মনটা ভাল কারন সহজে বাচ্চাদের
প্রিয় পাএ হওয়া মুখের না।ফোন রেখে
মেহবুব ওকে বলল,
-আবার কি হলো?কি ভাবছ?
-ভাবছি আপনি ভাল বাবা হতে পারবেন।
-কিভাবে হবো? বউই তো নাই আমার।
-নেই তো আপনার দোষে।
-হুম তা ঠিক।আচ্ছা এ নিয়ে আর কথা বারাব
না,তুমি এখন ঝগড়ার মুডে আছ।
-মোটেই না।
-আচ্ছা আমি গেলাম।ডাবিহা ম্যাম।
-কি ডাবিহা????
-হ্যা। তোমার নতুন নাম। তিতুনের দেয়া।
-ওকে আমি পুরো খেয়ে ফেলব।
-খবরদার ওকে কিছু বলবানা নইলে
তোমার স্টুডেন্টসদের শিখিয়ে দিয়ে
আসব তোমাকে ডাবিহা ম্যাম বলে
ডাকতে।
এই বলে মেহবুব আর দাঁড়াল না জানে
সাবিহা এখনই লংকা কান্ড ঘটাবে ঝগড়া
করে।
চলবে।।।।
“সাবিহার বিয়ে”
পর্ব -১৭
এরপরে মেহবুব আর সাবিহার মধ্যে
প্রায়ই ফোনে কথা হতো।বেশি
হতো রাতে।ও দিন দিন সাবিহার প্রতি দূর্বল
হচ্ছিল,সাবিহারও মন চাইত ওর সাথে মিশতে
কিন্তু ও তো একটু হলেও মেহবুবের
আসল চেহারা জানে।তাই ওকে এত
আমলে নিত না।দেখা করতে চাইলেও
করত না। ব্যস্ততার অযুহাত দিত।ও তো
আর জানত না যে মেহবুব ওকে পছন্দ
করতে শুরু করছে।মেহবুব তো
ওদিকে অস্থির হয়ে যেত কথা বলতে
পারলে কিন্তু বুঝতে দিত না হয়ত রিতার ভয়
থেকেই।পরবর্তীতে এই না বুঝতে
দেওয়াটাই কাল হলো মেহবুবের জন্য।
একদিন হঠাৎ করে ওর আইনজীবীর
ফোন সকালে।সে জানাল ওদের
সেপারেশন লেটার আর
দেনমোহরের টাকার চেক যা তাকে
মেহবুব দিয়েছিল তা সাবিহার কাছে পাঠিয়ে
দেয়া হয়েছে।সে এতদিন নাকি ওর
সুস্থতার জন্য অপেক্ষা করছিল।শুনে
তো ওর দিশেহারা অবস্থা। ও ভুলেই
গেছিল যে হসপিটালে বসে একদিন
তাকে বলেছিল ও সুস্থ হোক তারপর
লেটার পাঠাতে।বার বার অফিসে বসে
ভাবতে ছিল না জানি সাবিহা ওকে কি ভাবছে।
অসভ্য?চরিএহীন না মানষিক রোগী?
হ্যা আসলেই তো ও মানষিক রোগী
হয়ে গিয়েছে রিতার জন্য।নাইলে এত
ভাল একটা মেয়ের জীবন নিজ হাতে
নস্ট করে দে??এত দিন এত ভাল একটা
সম্পর্ক হবার পর এত বড় ধোকাঁ।কি
বলবে সাবিহাকে বা ওর পরিবারকে?না জানি
সাবিহার এখন কি অবস্থা!! ফোন দিল ওকে
ওর ফোন সুইচড অফ।কি করবে ভাবতে
গিয়ে ভাবল দেখা করবে ওর সাথে ওর
বাসায় গিয়ে। ও জানে সাবিহার সিডিউল সে
অনুযায়ী আজ ওর ক্লাস নেই আর
রাতে ডিউটি।তাই বাসায় যাবার মন স্থির করল।
অফিস থেকে ছুটি নিল।
ওদিকে সাবিহা সকালে উঠে দরজা খুলে
পেপার নিতে যাবে তখন দেখে বাসার
দারোয়ান এসে হাজির কুরিয়ারের একটা
এনভেলাপ নিয়ে।একটা কাগজ এগিয়ে
দিয়ে জানাল যে -আপু এখানে সাইন করুন
আপনার পার্সেল আছে। নিচে
কুরিয়ারের লোক দাঁড়িয়ে আছে।
ও সাইন করে দারোয়ানকে বিদায় করে
দিয়ে এনভেলাপের গায়ে নাম দেখল –
মেহবুব রহমান।আর কিছু বোঝার দরকার
হলো না যা বোঝার বুঝে নিল যে এটা
কি?খুলে দেখল যে সেপারেশন
লেটার আর একটা টাকার চেক।ও যতই
আগে থেকে জানুক না কেন এই
বিয়ের পরিনতি কি কিন্তু তার পরও হঠাৎ
লেটার পেয়ে খুব ভেঙে পরল।মা
বাবাকে কি বলবে ও?ও যতই স্ট্রং থাকুক
তারা যে ভেঙে পরবে তা ও কিভাবে
সামাল দিবে?ফ্লোরে বসে খুব কাঁদল।
এই ছিল মেহবুবের মনে?এতদিন তার ভাল
সাজার অভিনয় তাহলে ঠিকই ও ধরতে
পারছিল।ও ওতো অবাক যে, যে লোক
ওকে সহ্য করতে পারছিল না সে
কিভাবে এত পালটে গেল হঠাৎ?নিজের
গায়ে কাঁদা লাগতে দিবে না বলেই ভাল
সাজত।এরই মধ্যে দেখে মেহবুবের
মায়ের ফোন। অসহ্য লাগল ওর। রিং
কেটে যাবার পরই ও ফোন অফ করে
রাখে।বারবার নিজেকে বুঝাচ্ছিল যে
কাঁদবে না তাতে ঐ লোকটাই জিতবে
তারপরও বারবার পানি পরছিল চোখ
থেকে।নিজেকে একটু সামলে
নিয়েছে এরই মধ্যে ল্যান্ড লাইনে
ফোন এলো -আপু গেটে এক ভাইয়া
আসছে নাম বলছে মেহবুব রহমান।
উপরে পাঠাব?
একটু চুপ থেকে বলল-আচ্ছা দাও।
মনে মনে ভাবল মেহবুব কেন এখন
আসছে? কি চায় ও?ও যদি দারোয়ানকে
বলত- না আসতে দিও না। তাহলে মেহবুব
নিজেই সোজা চলে আসত উপরে
কারও নিষেধ না শুনেই।এতটুকু ও ওকে
চিনেছে।
ও তরিঘরি করে ওর চুল আর কাপড় ঠিক
করছিল আর বারবার নিজেকে বুঝাচ্ছিল
মেহবুবের কাছে কাঁদবে না। কলিং
বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দিল।
দেখে মেহবুব ওর দিকে অস্থির
ভাবে তাকিয়ে আছে।ভিতরে আসতে
বলল।দরজাটা মেহবুবই আটকাল।চুপচাপ
গিয়ে সোফায় বসল।সাবিহা অন্য
আরেকটি সোফায় বসল।দুজনের ভাব
এমন যেন ককিছুই হয় নি।কথা বলল
প্রথমে মেহবুবই।
-কি ব্যাপার। চোখ নাখ মুখ ফুলে গেছে
কেন?কাঁদতে ছিলা?
-নাহ,মাএ ঘুম থেকে উঠলাম তো তাই।
মেহবুব বেশ ভালভাবেই জানে যে এটা
মিথ্যা।
-ও আচ্ছা। নাস্তা কর নি?
-নাহ।আপনি এখন?কাজ বাজ কি সব ছেড়ে
দিয়েছেন নাকি?
-তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হলো
তাই আসছি।
-তাই?
বলে সেপারেশন লেটারটা টেবিলের
উপর থেকে ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে
বলল-এর পরও দেখতে ইচ্ছে হলো?
-আসলে সাবিহা…
-ঠিক কি বলতে চান আপনি? এরপর আর কি
বা বলার থাকতে পারে? আমি কখনই
আপনার কাছে জানতে চাই নি কিন্তু আজ
জানতে চাচ্ছি।কেন এমন অভিনয়
করতেন ভাল হবার?
-আমি তোমার সাথে কোন অভিনয় করি
নি। আমি তো তোমার কাছে প্রথম
হতেই খারাপ তারপরও চাইছিলাম অন্তত
আমাদের মাঝে একটা ভাল বন্ধুক্ততা
থাকুক। কোন তিক্ত অভিজ্ঞাতা না থাকুক।
রিতার ব্যাপারে আমি তোমাকে সব
বলেছি। এর পর আর অন্য মেয়ের
সাথে জরানোর কোন ইচ্ছে ছিল না।
তাই বিয়ের পর ওমন বাজে বিহেব করতাম
পরে আমি আমার ভুল বুঝতে পারছিলাম।
-ও তাই? আসলে কি আমি আপনার সাথে
কোন কথাই বলতে চাই না। আপনার যা
করার আপনি করেছেন এবার আর একটু
কষ্ট করে ডিভোর্স লেটারটা পাঠিয়ে
দিবেন াআমি সাইন করে দিব।
মেহবুব যতই বুঝায় সাবিহা ততই চিৎকার
করে পরে এক সময় কাঁদতে কাঁদতে
বসে পরল।
-আপনি আমাকে এই ছয় মাসে যে
অভিজ্ঞতা দিলেন আমি সারা জীবনেও তা
ভুলবো না। আজ আমি আমার পরিবারের
সামনে যেতেও ভয় পাই শুধু মাএ আপনার
জন্য।
[6/5, 3:56 PM] Promity: আমি সব জানি।
আসলে আমি বুঝতে পারি নি তোমাকে।
-আর কোন বুঝাবুঝির দরকারও নাই আপনি
চলে যান এখান থেকে আর কখনও
কোন যোগাযোগ করবেন না।
কথাটা শুনে মেহবুবের খুব খারাপ লাগল,
কিছু বলল না কারন সাবিহা ওর জায়গায় ঠিক।
আজ ওর একটা ফালতু ইমোশনের জন্য
একটা মেয়ে আর তার পরিবার কস্ট
পাচ্ছে। ও প্রায়ই ভাবত যে ওকে নিয়ে
আবার সব কিছু নতুন করে শুরু করবে।
নিজের মনকে প্রায় স্থির করেও
ফেলেছিল যে সাবিহাকে বলবে সব
কথা। ওর পরিবারও তো চায় সাবিহাকে
মেহবুবের বউ হিসেবে।কিন্তু প্রথম
দিকে ওর একটা ফালতু জেদের বসে
আজ এই বিপওি।এখন সাবিহাকে যতই ও
বুঝাবে ও ভাববে ও ওর প্রতি দয়া
দেখাচ্ছে।
সাবিহা ফ্লোরে বসে কাঁদতে ছিল আর
মেহবুব ওর একদম পাশে গিয়ে বসল।
সাবিহা একটু সরে বসল।
-আচ্ছা কাছেও বসতে দিবা না?
-না।
-আচ্ছা আমি যাচ্ছি। তোমার মন মেজাজ
ঠিক হোক পরে আমরা না হয় কথা বলব।
-আমি কোন কথাই বলব না আপনার সাথে।
-আচ্ছা বলতে হবে না কিন্তু দরজাটা তো
দাও।
এই বলে ও উঠল।পেছন থেকে সাবিহা
ডাকল।
-শুনুন এটার দরকার নেই।বলে
দেনমোহরের টাকার চেকটা দিল
মেহবুবের হাতে।
-আমি কোন ভিখিরি না যে আপনার টাকা
আমার লাগবে। এটা নিয়ে যান।
-এটা নিয়ম সাবিহা। এটা দেনমোহরের
টাকার চেক। তোমাকে অপমানের জন্য
না।
-এটা আমি রাখব না।
-সেটা তোমার ব্যাপার।
সাবিহা চেকটা ছিড়ে ফেলল।মেহবুব
তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল সবটা। সাবিহাকে
ওর এরজন্যই ভাল লাগছিল যে ও কোন
কিছুর ভনিতা করে না, যেটা ওর ঠিক লাগে
ও সেটাই করে।অন্য মেয়েরা হলে
আগে টাকার চেকটা হাতে নিত কিন্তু সাবিহা
তা করে নি।ও বুঝছিল যে এতে ওর
অপমান হচ্ছে। মেহবুবের টাকা ওর
কাছে থাকা মানে ওর নিজের
সংকীর্নতাকে প্রকাশ করা।ধর্ম যতই
বলুক না কেন।একজন স্ত্রী হিসেবে
ওর যতই মেহবুবের উপর
দেনমোহরের অধিকার থাকুক না কেন
নিজের আত্নস মান বোধ থাকায় ও টাকাটা
নিবে না।
মেহবুবের কি হলো ও নিজেও জানে
না হঠাৎ করে গিয়ে ও সাবিহাকে জড়িয়ে
ধরে বলল,
-আমি তোমাকে আমার কাছ থেকে
কখনই আলাদা করব না। এখন তুমি চাইলেও
সেটা সম্ভব না।আমিই তা হতে দিব না।
তোমার যা করার তুমি কর।
এই বলে সাবিহার কপালে একটা চুমু দিয়ে
ও ওর দিকে একবারও না তাকিয়ে চলে
এলো। পিছনে না তাকিয়েই মনে মনে
দেখল সাবিহা ম্যাম প্রচণ্ড বিরক্তি আর
রাগী চেহারা নিয়ে ভ্রু কুঁচকে ওর যাবার
পথের দিকে তাকিয়ে আছে।