সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব -১৬

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

চোখ খুলে নিজেকে একটা বেঞ্জে শোয়া অবস্থায় আবিষ্কার করে কায়াসা।কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বেঞ্জে শুয়ে থেকে উঠে বসে সে।পুরো রুম অন্ধকার যার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।কায়াসার হঠাৎ মনে পড়ে সুতো এসেছিল আর তার মুখ চেপে ধরেছিল।আর তার ভয়েই সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।সুতোর কথা মনে পড়তেই কায়াসার ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়।সে একটা শুকনো ঢোক গিলে,আস্তে আস্তে তার ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে আর ফ্ল্যাশলাইট অন করে।না ক্লাস রুমে কেউ নেই।কায়াসা তাড়াতাড়ি বেঞ্জ থেকে নেমে দরজার কাছে চলে আসে।হাত দিয়ে টান দিতেই দরজা খুলে যায়।দরজা খোলা পেয়ে কায়াসা স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।কায়াসা তাড়াতাড়ি ক্লাস রুমটা থেকে বেরিয়ে আসে।তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় কারো সামনে পড়ে যায় কায়াসা।কায়াসা মাথা তুলে দেখে জেমি আর তার বান্ধবীরা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তারা সবাই শাড়ি পড়ে সুন্দর করে সেজেগুজে এসেছে।

” তুমি এখানে কি করছো?” জেমির একটা ফ্রেন্ড বলে।

” ওই আসলে……” কায়াসা নার্ভাসনেসের জন্য কি বলবে বুঝতে পারছেনা।

” কি হলো মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কেন?” জেমি বলে।

” কোন সমস্যা হয়ে কি আপু?” জেমির আরেকটা ফ্রেন্ড বলে।

” না না আপু কোন সমস্যা হয়নি।আসলে আমি ওয়াশরুম এসেছিলাম।”

” ও আচ্ছা ঠিক আছে।”

” হু…..দেখ গিয়ে নাকি বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে কথা বলতে এসেছে।” তাচ্ছিল্যভাবে বলে জেমি।জেমির কথা শুনে তার বান্ধবীরা তার দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকাই কিন্তু কায়াসার এতে কিছু যায় আসেনা।সে তাদের পাশ কাটিয়ে নিচে চলে আসে।

নিচে এসে কায়াসা স্টেজের দিকে যেতে থাকে।স্টেজের কাছে আসতেই কায়াসা দেখে ইতি আর আরোহী দাঁড়িয়ে কথা বলছে।কায়াসা তাদের কাছে এসে দাঁড়ায়।

” কিরে কোথায় গিয়েছিলি তুই?” ইতি বলে।

” ওই একটু ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।”

” কোন সমস্যা হয়ে কি?” আরোহী বলে।

” আরে না না সমস্যা হবে কেন?আমি ঠিক আছি।প্রোগাম কি শেষ?”

” হ্যাঁ শেষ হওয়ার পথে।” ইতি বলে।

” ও তাহলে আমি এখন আসি।তোরা থাক।”

” আরে কোথায় যাচ্ছিস?আমরা আজ বাইরে লান্ঞ্চ করবো।তুই না থাকলে হয় নাকি?” আরোহী বলে।

” নারে আমি রান্না করে এসেছি।এখন বাইরে খাবার খেলে বাড়ির খাবারগুলো নষ্ট হবে।”

” আরে একদিন খেলে কিছু হবেনা।আর খাবার নষ্ট হবে কেন?ওগুলো তুই গরম করে রাতে খেয়েনিস।”

ইতি আর আরোহী কায়াসাকে মানানোর চেষ্টা করছে।তখন সেখানে আদ্রিক আসে।

” হেই মিস ইডিয়টে।”

বিরক্তি নিয়ে কায়াসা পেছন ফিরে তাকাই।

” আপনি আবারো আমাকে এই নামে ডাকছেন?আপনাকে না বলেছি আমাকে এই নামে ডাকবেন না।আর ডাকেন ভালো কথা কিন্তু এখন সবার সামনেও কেন ডাকবেন?”

” আমিও তোমাকে বলেছি আমার ইচ্ছা আমি কি বলে ডাকবো।”

” এই তুই স্যারের সাথে এভাবে কথা বলছিস কেন?তুই কি জানিস না উনি এখন আমাদের স্যার?” কায়াসার কানে ফিসফিস করে বলে ইতি।

” হ্যাঁ জানি ওনি এখন এখানের প্রফেসার বাট ভুল মানে ভুল।ওনাকে কত বার বারণ করেছি তাও উনি শুনেনা।”

” এই কায়ু তুই কি ওনাকে আগে থেকে চিনিস নাকি?”

” হুম চিনি খুব ভালো করেনি।রাক্ষস একটা,ইলিগেল অর্গান ব্যবসায়ী।”শেষের কথাগুলো খুবই আস্তে আস্তে বলে কায়াসা।

” কি?তোমরা এতো কি ফিসফিস করছো?”

” ও কিছু না স্যার।আপনি ভালো আছেন স্যার?” ইতি বলে।

” হ্যাঁ আমি খুব ভালো আছি।তোমরা কেমন আছো?তোমরা নিশ্চয়ই এই মিস ইডিয়টের ফ্রেন্ড?”

” জ্বি স্যার আমরাও ভালো আছি।” ইতি বলে।

” কিন্তু স্যার মিস ইডিয়ট?” আরোহী ভ্রু-কুচকে বলে।

” এইযে তোমাদের মাঝে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন।” বাঁকা হেসে বলে আদ্রিক।আদ্রিকের কথা শুনে ইতি আর আরোহী মুখ টিপে আসে আর কায়াসা দাঁত কিড়মিড় করে আদ্রিকের দিকে তাকাই।

” আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি এখন আসছি।আমাকে আবার হসপিটালে যেতে হবে।তোমাদের সাথে ক্লাসে দেখা হচ্ছে।”

” জ্বি স্যার সাবধানে যাবেন।” আরোহী বলে।

” হুম আর তোমরাও সাবধানে থেকে আর এই মিস ইডিয়টেও খেয়াল রেখো।ম্যাডাম তো আবার খুবই ভাবুক টাইপের।”

” স্যার আপনার না দেরি হয়ে যাচ্ছে।” দাঁতে দাঁত চেপে বলে কায়াসা।কায়াসাকে রাগতে দেখে আদ্রিক মুচকি হেসে চলে যায়।আদ্রিক চলে যাওয়া পর ইতি আর আরোহী আবারো কায়াসাকে মানানোর চেষ্টা করতে থাকে আর একসময় ইতি মেনেও নেয়।এদিকে দূর থেকে কায়াসার উপর নজর রাখে চলেছে কেউ।সেই সাথে সে কায়াসার কিছু ফটোও তুলেছে।

সন্ধ্যাবেলা,

স্টুডেন্টকে পড়িয়ে বাড়ির সময় কিছু বাজার করে হেঁটে বাড়ি ফিরছে কায়াসা।একটা জায়গায় এসে সে দাঁড়ায়।কারণ এতো বড় বাজারের ব্যাগটা নিয়ে তার পক্ষে আর হাঁটা সম্ভব নয়।দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে কায়াসা।হঠাৎ রাস্তার অপরপাশে বাইকে আরোহীকে দেখতে কায়াসা চমকে যায়।সে প্রথমে তার মনের ভুল মনে করলেও পরে ভালো করে দেখার পর সে বুঝতে পারে না সে ঠিকই দেখছে।বাইকে আরোহী পেছনে বসে আছে আর একটা ছেলে বাইকটা চালাচ্ছে।ছেলেটার মুখ হেলমেটর কারণে দেখতে না পেলেও আরোহীর মাথার হেলমেটটার সামনের কাঁচটা নামনো ছিলনা বিধায় কায়াসা আরোহীকে চিনতে পেরেছে।আরোহীর পরনে এখনো ওই শাড়িটা আছে যেটা সে কলেজের ফাংশনে পড়ে গিয়েছিল।কায়াসা এবার চিন্তায় পড়ে যায় যে এতোটা সময় পরেও আরোহী বাইরে কি করছে।

” কি গো ম্যাডাম যাইবেননি?”

রিকশাওয়ালার কথায় কায়াসার ধ্যান ভাঙে।সে ভাড়া ঠিকটাক করে রিকশায় উঠে পড়ে।

বাড়ি এসে বাজার সব রান্নাঘরে রেখে ফ্রেশ হতে চলে যায় কায়াসা।ফ্রেশ হয়ে এসে সে ভাবে একবার আরোহীকে ফোন দেবে কিন্তু পরে তার সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলে।

ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে কায়াসা ইতিকে ফোন দেয়।দু’বার রিং হতেই ইতি ফোন রিসিভ করে নেয়।

” হ্যাঁরে কায়ু বল।”

” তুই কোথায় রে?”

” কেন?আমি তো এখন বাসাই।কিছু হয়েছে কি?”

” না কি হবে।আচ্ছা আমি চলে আসার পর তুই আর আরু কি বাসায় চলে এসেছিলি?”

” না।তুই চলে আসার পর আমরা রেস্টুরেন্টে পেছনে যে পার্কটা ছিল ওখানে গিয়েছিলাম।”

” তারপর?”

” তারপর আর কি?আমরা দুজন হেঁটে হেঁটে কিছুক্ষণ গল্প করলাম।তারপর আমি বাড়ি চলে এলাম।”

” আর আরু?”

” সে তো রিকশায় উঠে গিয়েছিল।তার মানে নিজের বাড়িতেই চলে গিয়েছে।এই কিছু কি হয়েছে?”

” না কিছু হয়নি।এমনিতেই জানতে চেয়েছি।আচ্ছা ইতু আমি এখন রাখি।”

কায়াসা ফোনটা কেটে দিয়ে চিন্তা করতে থাকে আরোহীর সাথে ছেলেটা কে হতে পারে।অন্যমন্সক হয়ে ফোনটা টেবিলে রাখার সময় হাত লেগে কায়াসার ব্যাগটা নিয়ে পড়ে যায়।কায়াসা বিরক্ত নিয়ে ব্যাগটা উঠানোর সময় তার মধ্যে থেকে একটা কাজ নিয়ে পড়ে।কাগজ কিসের তা কায়াসা মনে পড়ছেনা।ব্যাগটা বিছানায় রেখে কায়াসা কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করে।

” এইযে সুঁই ভিতুরাণী,আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে আমাকে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেলে?আমি জানতাম এরকম কিছু হতে পারে তাই তো আজ পর্যন্ত তোমার সামনে এই রুপে আসিনি কিন্তু আজ যখন এলাম তখন আমার ধারণাটাই সত্যি হলো।তুমি না বড়ই ভিতু।এতো ভিতু হলে কি দুনিয়াতে চলা যায়?সাহসী হও সুঁই,তা না হলে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বাঁচতে পারবেনা।

আচ্ছা সেসব কথা বাদ দাও যেটার জন্য আজ তোমার সমানে এসেছিলাম।আজ তোমাকে কালো রঙে জামাতে খুব সুন্দর লাগছিল।যেখানে সব মেয়েরা শাড়ি পড়ে সেজেগুজে এসে সেখানে তুমি শুধু একটা নরমাল ড্রেস পড়ে,নরমালি এসেছে।ভেবেছিলাম তুমিও ওদের মতো শাড়ি পড়ে আসবে কিন্তু না তুমি তো স্বভাবগতই নরমালি এসেছো।তোমার এই সাদাসিধা ভাবটার জন্যই তো আমি তোমার প্রতি আরো আকৃষ্ট হচ্ছি।তবে ভেবোনা আমি তোমার অন্যরূপগুলো পছন্দ করিনা।আমি তোমার সব রূপকেই ভালোবাসি,বুঝতে পেরেছো?আর তুমি জানো কালো রঙ আমার খুব পছন্দের।আজ তোমাকে নিজের প্রিয় রঙের জামা পড়তে দেখে খুবই ভালো লেগেছে।ভালোবাসি সুঁই।

ইতি,
তোমার অপ্রিয় সুতো

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here