#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ২৯
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” নিশু মা তুই কি আমার উপর রাগ করেছিস?”
” না আব্বু,আমি তোমার উপর রাগ করিনি তবে অভিমান অবশ্যই করছি।আর তুমি জানো রাগ থেকে অভিমানের পাল্লা কিন্তু অনেক ভারী হয়।”
” দেখ মা আমি যা করতে যাচ্ছিলাম সেটা তোর ভালোর জন্যই।যদি ওরা তোর সাথে বাজে কিছু করতো তখন?তখন তো তুই না কাউকে মুখ দেখতে পারবি আর না তোর ভালো কোথাও বিয়ে হবে।তখন আমাদের আত্নহত্যা ছাড়া আর কোন কিছু করার উপায় থাকবেনা।”
” তুমি আদ্রিক স্যারের সাথে আমার বিয়ে দিলে কেন?তুমি তো জানোই উনি আমার কলেজের প্রফেসর।”
” উনি তো গেস্ট টিচার হিসেবে এসেছেন কয়েকদিন পরেই তো চলে যাবে।এতো তো কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।আর আমার ছেলেটাকে খুব ভালো লেগেছে।অনেক সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে জানে আর ঠিকভাবে পরিস্থিতিও সামলাতে জানে।আদবকায়দা জানে,সাথে সে ভালো একজন ডাক্তারও।ওই মূহুর্তে তোমার বিয়ে না হলে লোকে অনেক কথা বলতো।আর আমার আদ্রিককে উপযুক্ত মনে হচ্ছে তাই আমি ওকেই বেছে নিয়েছি।এতে আমি তোমার বান্ধবীরও মত নিয়েছি,সেও আমার সিদ্ধান্তে রাজি ছিল।”
” হুম বুঝতে পেরেছি।কিন্তু এখন কি করবে তুমি?”
” কোন বিষয়ে?”
” ওইযে টাকা ধার নিয়েছিলে?”
” ওটা আমি দেখে নেবো।এখন আমার এতো চিন্তা নেই।তোমাকে একটা সুরক্ষিত জায়গায় রাখতে পেরেছি এটাতেই আমি নিশ্চিন্ত।আমার বিশ্বাস ও তোমাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে।”
” হুম।”
এরিই মধ্যে দরজায় কেউ নক করে।
” কে?”
” ম্যাডাম আমি,সুমি।স্যার আপনাকে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকছেন।”
” আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি।আব্বু আমি এখন রাখছি,ভালো থেকো তুমি।”
” তুইও সাবধানে থাকিস।”
কায়াসা ফোনটা রেখে নিচে নেমে আসে।টেবিলে আগে থেকেই আদ্রিক বসা ছিল।কায়াসা এসে আদ্রিকের সামনের চেয়ারটা টেনে বসে পড়ে।সুমি এসে কায়াসাকে রুটি আর সবজি দেয়।কায়াসা একবার আদ্রিকের দিকে তাকিয়ে দেখে সে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে তাই কায়াসাও খাবার খাওয়া শুরু করে দেয়।
দুজনের খাবার প্রায় শেষ হওয়ার পথে।এরই মধ্যে বেল বেজে উঠে।সুমি গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
” স্যার।”
কায়াসা যেহেতু পেছনে ঘুরে বসেছিল তাই তার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে দেখতে হয়।কায়াসাকে দেখে যে ছেলেটা অবাক হয়েছে এটা কায়াসা ছেলেটার মুখ দেখেই বুঝতে পেরে গিয়েছে।কায়াসা ঘুরে আদ্রিকের দিকে তাকাই।
” স্যার উনি…..?”
” এসো কুনাল বসো।তুমিও আমাদের সাথে খেয়ে নাও।”
” না স্যার আমি খেয়ে এসেছি কিন্তু উনি…..”
” এদিকে এসো বলছি তোমাকে।”
কুনাল বড় বড় চোখ করে কায়াসার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায়।কুনালকে এভাবে তাকাতে দেখে কায়াসার অস্বস্তি হতে লাগে।
” স্যার এসব কিভাবে কি?”
আদ্রিক এরপর প্রথম থেকে কুনালকে সব বলতে থাকে।সব শুনে কুনাল ভয় পেয়ে যায় এটা ভেবে যে আজ অথবা কাল আবারো কারো প্রাণ যেতে চলেছে।
” কায়াসা এ হচ্ছে কুনাল,আমার এসিস্টেন্ট।”
” হ্যালো ভাইয়া।আচ্ছা আপনারা কথা বলুন আমি হাতটা ধুয়ে আসছি।”
কায়াসা চলে যেতেই কুনাল তাড়াহুড়ো করে আদ্রিকের পাশে এসে দাঁড়ায়।
” স্যার এসব কি?ম্যাডাম এখানে?উনাকে কি আপনার আসল সত্যিটা বলেছেন?”
” না এখনো পর্যন্ত না।এখন বলবোনা,তুমিও চুপ করে থাকবে।এমন ভাব করবে যেন তুমি ওকে আগে থেকে চেনোনা।”
” কিন্তু স্যার ম্যাডাম যদি কোনভাবে জেনে যায় যে আপনিই সুতো তাহলে….. ”
” আ.. কুনাল এতো চিন্তা করোনা।যা হবে তা তখন দেখা যাবে।তুমি এতো চিন্তা করোনা।তোমাকে যা করতে বলেছিলাম তা করেছিলে তো?”
” হ্যাঁ স্যার আপনি যেমনটা বলেছেন তেমনটাই করেছি।”
এরই মধ্যে কায়াস হাত ধুয়ে চলে আসে।কায়াসাকে দেখে তারা দুজন কথা বলা বন্ধ করে দেয়।
” কায়াসা তুমি কি কলেজ যাবে?”
” হুম যাবো।যেতে দেবেন আপনি?”
” কেন দেবোনা?তোমার পড়াশোনা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই।যদি তুমি না করতে তাহলে আমিই জোর করে তোমাকে কলেজে পাঠাতাম।”
” আচ্ছা তাহলে আমি রেডি হয়ে আসছি।কিন্তু….. ”
” কিন্তু কি?”
” আমার কাছে তো বই বা জামা কোনটাই নেই।তাহলে কলেজ কিভাবে যাবো?”
” গেস্ট রুমে কার্বাড খুলে দেখো কয়েকটা জামা রাখা আছে।আর বই নিয়ে চিন্তা করোনা তোমার ইয়ারের বইগুলো আমার কাছে আছে।আজকের মতো আমার বইগুলো নিয়ে যাও।রাতে তোমারগুলো নিয়ে এসো।”
কায়াসা চুপচাপ গেস্ট রুমে চলে যায়।কায়াসা যাওয়ার পর কুনাল আর আদ্রিক কিছু কথা বলে।কায়াসা নিচে এসে দেখে আদ্রিক সোফায় বসে আছে।
” কুনাল ভাইয়া কি চলে গিয়েছেন?”
” হ্যাঁ ওর ডিউটি আছে এখন।চলো তাহলে যাওয়া যাক।”
” চলুন।”
আদ্রিক গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে,কায়াসাো দরজা খুলে আদ্রিকের পাশে বসে পড়ে।আদ্রিক চোখ বড় বড় করে কায়াসার দিকে তাকিয়ে থাকে।
” এভাবে দেখছেন কেন আদ্রিক?” সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলে কায়াসা।
” না তুমি আমার পাশে বসেছো।আমি তো আরো ভেবেছি তুমি আমার সাথে কলেজ যেতে চাইবেনা যদি কেউ জেনে যায় এই জন্য।”
” আমাদের বিয়ে হয়েছে কোন খারাপ কাজ তো করিনি আমরা তাই এতে এতো লুকানোর কিছু আমি খুঁজে পাচ্ছিনা।আর এতক্ষণে হয়তো সবাই জেনে গিয়েছে।”
” কিভাবে?যা হবার তো তা এখানে হয়নি চট্টগ্রামে হয়েছে।”
আদ্রিকের কথা শুনে মুচকি হেসে কায়াসা বলে,” অপ্রয়োজনীয় খবর প্রয়োজনীয় খবর থেকেও তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে।এবার চলুন নয়তো আমাকে বকা খেতে হবে।”
কলেজের সামনে এসে আদ্রিক গাড়ি থামাই।গাড়ি থেকে আদ্রিক আর কায়াসাকে নামতে দেখে সবাই আড়চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।তবে তারা দুজনেই সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে নিজের নিজের কাজে চলে যায়।
কায়াসাকে দেখেই ইতি তাড়াতাড়ি তার কাছে আসে।
” কায়ু তুই!তুই আজ আসতে গেলি কেন?আর কালই তো তোর……।”
” কায়ু তোর নাকি আদ্রিক স্যারের সাথে বিয়ে হয়েছে?” আরোহী অধির আগ্রহে জিজ্ঞেস করে।
” হুম কালকেই হয়েছে।” নরমালভাবে বলে কায়াসা।
আরোহী হা করে কায়াসার দিকে তাকিয়ে আছে।সে বুঝতে পারছেনা কায়াসা কি করে এতো নরমাল বিহেব করছে,শুধু আরোহী না ইতিও বুঝতে পারছেনা।
” কায়ু তুই কি আমার উপর রাগ করেছিস?”
” নাতো,রাগ কেন করবো?শুধু আমাকে তোর হ্যাঁ বলার কারণটা বল।”
” কারণ আমার তখন আর কোন কিছু মাথায় আসেনি।আমার মাথায় শুধু তোকে কিভাবে বাঁচাবো সেটাই ঘুরছিল।তুই তো বলেছিলি আগে থেকে চেনা পরিচিত থাকলে তোর বিয়ে করায় কোন আপত্তি নেই আর তুই তো আদ্রিক স্যারকে আগে থেকেই চিনতিস তাই আমি হ্যাঁ বলে দিয়েছি।”
এরই মধ্যে টিচার চলে আসে।টিচার সবাইকে বসতে বলে একবার কায়াসার দিকে তাকিয়ে তারপর পড়ানো শুরু করে।এই তাকানোর অর্থ কায়াসা ঠিকই বুঝতে পারছে।কায়াসা আগেই থেকে ধারণা করেছে তাকে এই কয়েকদিন এসব ফেস করতে হবে তাই সে আগে থেকেই মেন্টালি প্রিপারেশন নিয়ে রেখেছে।
ক্লাস শেষ হওয়ার পর তারা তিনজন কথা বলতে বলতে ক্লাস থেকে বের হয়।এরিই মধ্যে কেউ কায়াসার নাম ডাকে।তিনজনেই পেছন ফিরে দেখে জেমি কায়াসাকে দেখেছে।
” শুনলাম আদ্রিক স্যারের সাথে নাকি তোমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে?”
কায়াসা একবার আরোহী আর ইতিকে দেখে নেয়।
” হ্যাঁ হয়েছে।”
” দেখলে তো আমি বলেছিলাম না কখন কি হয় তা বলা যায় না।আমার কথা মিলে গেলো তো।ছাড়ো এসব কংগ্রেস নতুন জীবনের জন্য।” জেমি হাত বাড়িয়ে দেয়।কায়াসাও হাত বাড়িয়ে হ্যান্ড শেক করে কিন্তু যখন ছাড়তে যাবে তখন জেমি হাত না ছেড়ে উল্টো কায়াসার হাতটা টেনে কাছে নিয়ে আসে।
” সাবধানে থেকো।বলা যায়না কখন কি হয়,তাই সাবধানে থেকো।” কায়াসার কানে কানে বলে জেমি।কায়াসা কপাল কুচকে জেমির দিকে তাকাই।জেমি কায়াসার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে চলে যায়।কায়াসা জেমির কথার কোন অর্থ খুঁজে পাইনা।
২ দিন পর,
আজ শুক্রবার।কায়াসার কলেজ বন্ধ তবে আদ্রিকের হসপিটাল খোলা।বাড়িতে কায়াসা একা,তাই সে বাড়িটা একটু ঘুরে দেখছে।হাঁটতে হাঁটতে কায়াসা দোতালার ডান সাইডে চলে আসে।এদিকে এসে কায়াসা দুটো রুম দেখতে পাই আর দুটো রুমই বন্ধ।তাই কায়াসা ফিরে চলে আসে।
চলবে…….
(