#সূখতারার_খোজে 🧚♀️
#লেখক:আর আহমেদ
পর্ব ২২
শব্দের উৎস চেনা কবিতার! খাটাসটা আসছে বোধহয়। ঘোমটাটা আরও ভালোভাবে নিয়ে নিলো কবিতা। ধরা পড়লে ভরা বাড়িতে আর মান সন্মান কিছু থাকবে না। অর্নব চলে গেলো কবিতার কাছে। সন্দিহান দৃষ্টিতে পরখ করলো। বললো,
-মুখের ঘোমরাটা সড়াও তো!
ঠিক ভেবেছে কবিতা। যেখানেই বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। কবিতা শুকনো ঠোগ গিলে কন্ঠস্বর পালটে বললো,
-একজন মেয়ের চেহারা দেখতে চান লজ্জা থাকা উচিত।
-কন্ঠ পাল্টালেন অথচ তেজ টা যে একটু কমানো উচিত ছিলো এটা ভুলে গেছেন। চিনে ফেলেছি আমি। পার্টিতে খাওয়ার মতলবে চলে এসেছেন? লজ্জা নেই আপনার?
যাহ! কিভাবে চিনলো? কবিতা পরের কথাগুলোয় আর রাগ কন্ট্রোল করতে পারলো না। ঘোমটা এক টানে খুলে চেঁচিয়ে বললো,
-কি বললেন আপনি? আমি বিনা নেমন্তন্নে চলে এসেছি?
-ও মা! তা নয়তো কি চুড়ি করতে এসছেন?
-মুখ সামলে কথা বলুন। বাই দা ওয়ে,আপনি এখানে কেন এসেছেন? নিশ্চই আমার পিছু নিয়েছেন? বলি দেশে কি আর মেয়ে নাই? দামড়া বুড়ো। বিয়ে করে নিলেই তো হয়!
অর্নব দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
-হোয়াট ননসেন্স? কি বললে? বুড়ো? দামড়া…আর আমি আপনার পিছু নিয়ে এসেছি? আপনি জানেন আমি কে?
এবার খানিক ভয় হচ্ছে কবিতার। যদি এ বাড়ির কোন আত্মীয় হয়? কিন্তু এখন ভয় পেয়েছি বোঝালে তো আরও চেপে ধরবে। কবিতা ভয় চেপে বললো,
-আপনি জানেন আমি কে?
এবার অর্নব ভাবতে লাগলো কে এনি? এ বাড়িতে তো আগে দেখেনি। তাহলে কি সায়নের শালি? অর্নব আটকানো গলায় বললো,
-কে..কে আপনি?
আধখাওয়া কন্ঠ শুনেই একটু সাহস পেলো কবিতা। দূর থেকে তইমুর, আরমান লক্ষ করলেন সবকিছু। কবিতা কিছু বলবে তার আগেই আরমান সাহেব এসে দাড়ালো অর্নবের সম্মুখে। অর্নবকে জিজ্ঞেস করলো,
-কে এই মেয়ে?
-আই ডোন্ট নো আঙ্কেল।
ব্যাস সুযোগের সৎ ব্যাবহার করলো কবিতা। আস্তে করে কেটে পড়লো সেখান থেকে। অর্নব কথা শেষে আর দেখতে পেলো না কবিতাকে। এদিক সেদিক তাকিয়েও আর দেখা মিললো না মেয়েটার।
__________
-আমার সূখতারাকে আজ প্রচুর সুন্দর লাগছে। আচ্ছা ঘুরতে যাবা?
-পাগল আপনি? আমাদের নিয়েই আজকের পুরো অনুষ্ঠান! সেটা ছেড়ে ঘুরতে যাবো?
-জানো সূখতারা,
তোমায় আজ কত মায়াবী লাগছে? ছোট্ট হৃদয়টা উজার করে ভালোবাসতে মন চাইছে তোমায়। নিজ মুখে কখনো বলিনি কোন মেয়েকে সে সুন্দর। শুধু সাবিহা বাদে।
অন্ধকারের আবছা আলোয় মুখের দিকে তাকিয়ে সায়ন। তারা ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে বললো,
-তাই নাকি?
-সূখতারা। আমার সূখতারা!
-ঘরের দরজা বন্ধ কেন? কে ভেতরে?
কারো কটমটে গলায় সায়ন ছিটকে দূরে সরে গেলো। তারার কলিজায় পানি নেই। যদি তাদের এ ভাবে কেউ দেখে ফেলে কি হবে? তারা সুইচবোর্ডে খুজতে লাগলো। উত্তেজনায় সায়ন নখ কামড়াচ্ছে। আওয়াজে স্পষ্ট এটা তারার চাচী। অর্থাৎ ইলিমা! অনেক কষ্টে তারা সুইচবোর্ড পেলো। আলো জ্বালিয়ে সায়নকে দেখে চটে গেলো তারা,
-আপনি এখনো লুকাননি?
-আরে আজিব তো! লুকাবো ক্যান?
-ধরা পরার সখ আছে?
সায়ন বোকাসোকা ভাবে বললো,
-না।
-তাইলে খাটের তলে ডুকুন।
-এ্যাহ্?
-হ্যা।
-ওয়াশরুমে যাই?
তারা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো,
-জান কোথায় যাবেন।
সায়ন ছুটে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। ওয়াশরুমের বেসিনে ঠেস দিয়ে বললো,
-বউয়ের সাথে একটু সময় কাটিয়েও শান্তি নাই!
এদিকে তারা নিজেকে সামলে খুলে দিলো দরজা। এরমানে সায়নও ঘরে এসে দরজা লাগিয়েছিলো। তারা দরজা খুলতেই হুরমর করে ঘরে ডুকলেন আয়রা আর ইলিমা। তারা দরজা খুলেই পাশে দাড়িয়ে বুকে হাত গুজলো। ভুলেও যদি কেউ ওয়াশরুমে পা বাড়ায় তাহলে আজ মান আর সম্মানের ফালা ফালা হয়ে
যাবে। ইলিমা আর আয়রা ঘরে এসেই পুরো ঘরে চোখ বোলালেন। এরপর তারাকে বললেন,
-তুই ঘরে কি করিস?
তারার বুক টিপটিপ করছে। হাত কাঁপছে! অথচ উত্তর সে মুখ ফুটে বলতে পারছে না। অদ্ভুত!
-কি হলো তারা?তুমি দরজা বন্ধ করে কি করছিলে?
-ও..ওই সাবিহা দরজা লাগিয়ে দিয়ে গেছিলো। উনি ঘোরাঘুরি করছিলেন তো….আর আমিও…
তারার কথা ওয়াশরুম থেকে সায়ন শুনে আটকে রইলো। শেষে কিনা তাকে লুচ্চা প্রমানের চেষ্টা? সে ঘোরাঘুরি করছিলো এটা না বললেই চলছিলো না তারার? মুখ বাঁকিয়ে ওয়াশরুমের আয়না নিজেকে দেখতে লাগলো সায়ন।
তারা কি বলেছে জানেনা! তবে আয়রা আর ইলিমার মুখ দেখে বোঝা যায় ওরা বিশ্বাস করেছে। তারা বড় করে শ্বাস নিলো। তখনি সদরে দাড়ালো সাবিহা। বলে উঠলো,
-ভাবি চলো নিচে।
তারা ‘হুম’ বলেই চলে গেলো তার সাথে। সায়ন ধরা পড়লো পরুক। নিজে বচলে বাপের নাম!
তারা,কবিতা,সাবিহা,তনয়া একসাথে দাড়িয়ে। কেউ আসলে শুধু সালাম দিচ্ছে তারা। চারজনে আড্ডায় মেতেছে। ইলিমা অখুশি চোখে তাকিয়ে। আজকালকার মেয়েদের লাজ লজ্জা বলে কিছু নেই। কই মেয়েটা লজ্জা লজ্জা ভাব করে মোটা করে ঘোমটা দিয়ে থাকবে তা না..
ইলিমা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তাদের সময় হলে হয়তো ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতেন উনি।
-কেমন আছো মিস এন্ড মিসেস কবিতা,তারা?
কারো জিজ্ঞেসু আওয়াজে তাকালো দুজনে। সামনে অভ্র দাড়িয়ে। কবিতা একপলক তাকিয়েই মাথা নিচু করে নিলো। তারা হেঁসে জবাব দিলো,
-খুব ভালো আছি! আসার জন্য ধন্যবাদ।
-কবিতা তুমি?
কবিতার মন বিষিয়ে উঠছে। বলার ভাষা সে হাড়িয়েছে। তৎক্ষনাৎ সে চলে গেলো সেখান থেকে। অভ্র যাহ্ জাতিয় কিছু উচ্চারন করে পিছু নিলো কবিতার। এদিকে কবিতা দূরে এসে বাগানের এক কোনায় দাড়ালো। অভ্র খানিক দূরত্ব রেখে দাড়ালো পাশে। কবিতা অভ্রের অস্তিত্ব বুঝতেই হাত মুষ্টিময় করে নিলো। অভ্র বললো,
-কথা বলবে না?
কবিতা সেভাবেই বললো,
-কোন অধিকারে? কেন?
-আমি বলছি!
ঠিক দুজনের মাঝখানে এসে বলে উঠলো অর্নব। কবিতা তাকাতেই একা একাই বলে উঠলো,
-আ..আপনি?
#চলবে….
এই অভ্রকে নিয়ে কিছু বলে যান। আর যারা গল্প পড়ছেন অবশ্যই রেসপন্স করবেন।