সে আমার মায়াবতী পর্ব -১৩+১৪

#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_১৩
আজ হলুদে হলুদে সেজে উঠেছে প্রতিটা মানুষ। আপুর হলুদ বিধায় মেয়েদের জন্য হলুদ শাড়ি ছেলেদের জন্য কালো পাঞ্জাবি, প্রতিটা রমনি তার প্রেমিক পুরুষ এর সাথে সেজে উঠেছে একি রুপে।আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি, আজকে যেহুত হলুদ তাই আপুকে হলুদ সবুজ কম্বেসন এ শাড়ি সাথে ফুলের গহনা পরিয়েছে৷ ভারি মেকাপ এর সাথে মেহেদি রঙের হাত, দেখতে পুরো নতুন বউ। আমিও যে কি ভাবি না, আপু তো নতুন বউই।হটাৎ করেই চাচিমার সকালের কথা মনে পরে গেলো,আমি ভাবতে লাগলাম —

— হ্যাঁ রে ঈশা দেখি দেখি আমার মা টার মেহেদীর রঙ, কেমন হয়েছে।

আমিও হাত বারিয়ে দিলাম, নিজের কাছেই একটা ভালোলাগা কাজ করছে, কি সুন্দর রঙ হয়েছে মেহেদী, দু-হাত ভর্তি ঘারো টকটকে রঙ, আমিও ব্যস্ত হয়ে হাত দেখার সময় চাচিমা হাতে চুমু দিয়ে বললো,

— মাশাল্লাহ আমার মেয়েটার ভাগ্য তো অনেক ভালোবাসা পাবে, সে কি জানে তার বর তাকে কি পরিমান ভালো বাসবে! হু ( হেসে হেসে)

— চাচিমা কি বলো এসব, ছি

চাচিমার কথায় লজ্জায় মুখ ঢেকে কথাটা বলেই দৌরে নিজের রুমে চলে এলাম।
এর মধ্যেই চাচ্চু চাচিমার কাছে গিয়ে বলে উঠলো–

— দিন দিন নাবিলা আর মায়ের অত্যাচার মেয়েটার ওপর বাড়ছে। তাই নিপা আমি ভাবছিলাম কি মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করতে।সামিয়ার বিয়ের পর যদি মেয়েটার ও!

— আমিও সেটাই ভাবছি। কিন্তু মেয়েটার অতীত জেনে কেউ যদি!

— চিন্তা করো না, এমন কারোর হাতেই মেয়ে দিবো, যে আমার মেয়েটার অতীত না, মেয়েটাকে ভালোবাসবে।রানী করে রাখবে।

— হ্যা আমিও চাই আমার ছোট মা টা সুখে থাকুক,

— ওতো কিছু ভেবো না, সামিয়ার বিয়েটা শেষ হোক তার পর মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করবো।

চাচ্চু – চাচিমা নিজেদের কথা বলার মাঝেই রাইসা নামের মেয়েটা যে আমার বিরুদ্ধে সরযন্ত্র করছে তা ওদের নিজেদের অজানা।

— বিয়ে দিবে তাই না? আবার রানী হয়ে থাকবে! হা শেকরে বালি গো চাচ্চু। যানো আমার না খুব আফসোস হচ্চে তোমাদের সো-কোল্ড ঈশার জন্য।চিন্তা করো না। তোমাদের এই মেয়ে আছে না! সব চিন্তা ভ্যনিস করে দিবে।শুধু আজকের দিনটাই কালকে ও এমনিতেই বিদায় হয়ে যাবে। তোমার বড় মেয়ের সাথে ছোট মেয়েও কাল শশুর বাড়ি যাবে।কিন্তু আদোও তোমার ছোট মেয়ে শশুর বাড়ি যাবে নাকি হা হা হা।

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে একে একে সবাই সেজে উঠেছে। খালি আমি শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছি, কারন একে তো শাড়ি না সামলানোর ভয় তার ওপর যদি ওই লোকটা আবার আসে? ভাবনার মাঝেই তুবা ঘরে এসে হাজির হলো। বাহ মেয়েটাকে আজও কি মিস্টি লাগছে। হলুদ শাড়ি, ফুলের গহনা, পার্লার থেকে সাজায়
বউ বউ লাগছে। তুবার কথায় ধ্যন ফিরলো।

— কি রে এমন তাকিয়ে আছিস কেন?

— ইয়ার তোকে না দারুন লাগছে। ইশ পুরো বউ বউ৷ আহা এত লজ্জা পাচ্ছিস কেন? ভাইয়ার জন্য কিছু রাখ। বাসর ঘরেও!

–ঈশায়া তুই দিন দিন অসভ্য হচ্ছিস। দেখিস তুই আবার আমার আগে বিয়েটা সেরে ফেলিস না।

— আচ্ছা হয়েছে লেট হচ্চে, আমাকে সাজিয়ে দে না!

— তুই এমন কেন? সবাই পার্লার থেকে সাজতে পাগল আর তুই কিনা ঘরে সিম্পল সাজিস।

— আমার এত আটা ময়দা ভালো লাগে না। কত কি মাখে, আমি ওই সিম্পল এই ঠিক আছি। তুই দিবি নাকি

— দিচ্ছি মেরি বেহেন। আপনি বসুন।

আস্তে আস্তে আমাকে সাজিয়ে দিচ্ছে আর আমি আয়নায় মুগ্ধ হয়ে দেখছি নিজেকে। হলুদ শাড়ি, হালকা সাজে, হাত ভর্তি চুড়ি, ফুলের গহনা। আমি অবাক নয়নে নিজেকে দেখছি।

— দেখি দেখি ঈশা, তোকে এত সুন্দর লাগছে। ইস আমি ফিদা।

— হয়েছে আপনি এবার আর এসব না বলে চলেন।

আমি আর তুবা কোন মতে আপুর কাছে গেলাম, আপু সহ সবাই দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি অসস্তি তে সরে এলাম, এর মধ্যেই শুনলাম হলুদ নিয়ে ছেলে পক্ষের সবাই এসেছে। আমিও নিচে গেলাম, মায়া এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলাম, মায়া ও সেই তুবার মতো সেম কথা বলায় সবার সামনে হালকা লজ্জা পেলাম। মায়াও আমাদের মতো সেম সেজেছে। হটাৎ শুনলাম আমাকে চাচ্চু ডাকছে তাই দেখার জন্য বাহিরে যেতে, নিচে পা বারাতেই হুট করেই কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে তার ওপরেই পরতে পরতে বেচেঁছি, কারন লোকটা নিজেই আমাকে ধরে আছে।এর মধ্যেই ফুলের বর্ষন শুরু হলো।আমি হা করে সুর্দশন লোকটার দিকে তাকিয়ে আছি।কালো পাঞ্জাবি তে হাতা ফোল্ড করা, যদিও তার নিজের স্টাইলে আছে, কালো ঘারো চোখের গভির চাহনির লোকটাকে কে দেখে কেন আমি অন্যরকম হয়ে যাই, এ কেমন অনূভতি আমার?

— আজকে কি সারাদিন এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি ঈশা ( হেসে দিয়ে)

— তুবার কথায় নিজের সম্ভিত ফিরে পেলাম। একি ছি ছি সবাই এদিকেই তাকিয়ে আছে। লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। লোকটা এখনো একি ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন৷

— আব না মানে প পরে যাচ্ছিলাম

— ওওও আচ্ছা তাই নাকি? মায়া আমি কি কিছু বলেছি?

— মোটেও না।

— আহা তোমরা মেয়েটার সাথে এমন করছো কেন?

— কথার মাঝেই দেখলাম মিঃ চৌধুরী কিছু না বলে হেটে চলে গেলো ভিতরে। আচ্ছা আমি কি কোন ভাবে ওনাকে হার্ড করলাম? কিন্তু আমি তো কিছুই করি নি। না চাইতেও চোখ দু-টো ঝাপসা হয়ে এলো,

— বড় ভাইয়ার আবার কি হলো?

— জানি না। এমনিতেও তো আসতে চাইছিলো না?

—আহা এসব রাখো তোমরা চলো ভাবির কাছে যাই।

— সবাই চলে যেতে নিলেও মায়ার হাত ধরে আবির ভাইয়া বলে উঠলো-

— শুভ্রপরি তুমি এত সেজেছো কেন?তুমি কি পাগল করতে চাও আমায়।

— আপনি তো এমনিতেই পাগল আর কি পাগল করবো। ( লজ্জা পেয়ে)

— পরিটা রে, কবে পাবো তোমায়?

— আপাদত এই বিয়েটা শেষ হতে দিন। অসভ্য লোক।

— তোমার জন্যই অসভ্য।

হেসে সবাই ভেতরে চলে গেলো, আমিও চলে গেলাম। ভেতরে যেতেই দেখি মিঃ চৌধুরী আপন মনে কথা বলছে ব্লুটুথ এ।

— এ জন্যই মেয়েটার কাছাকাছি যেতে চাই না। জান তুমি কি বোঝ আমি যে কি পরিমান তোমাতে আসক্ত আমার মায়াবতি। আমাকে তো অনেক আগেই পাগল করেছো।এত সাজতে বারন করলাম না তুমি তো আমার কথা শুনবে না, সেই শাড়ি, চুড়ি, ফুলের রানি সেজে এসেছো।কিন্তু জান তোমার পিঠ যে কত বড় সরযন্ত্র চলছে তা তুমি জানো না। আমার মায়াবতির রক্ষা আমি নিজেই করতে জানি। জাস্ট কালকের অপেক্ষা জান শুধু আজকের রাতটুকু এর পর তুমি আমার। ( বাকা হেসে)

একে একে সবাই মিলে আপুকে হলুদ লাগানোর এক পর্যায় আমিও দিলাম, এর মধ্যে খেয়াল করলাম মিঃ চৌধুরী আড় চোখে অনেক বার আমার দিকে তাকিয়েছেন৷ আমি না চাইতেও আমার নজর ওনার কাছে কেন যায়।
তার মাঝেই নাচ গানে তুবা মায়া, আবুর ভাইয়া , তুহিন ভাইয়া, সবাই আনন্দ করলেন। যদিও আমাকে ডেকেছে, কিন্তু রাহুল নামের ছেলেটার চাহনি দেখে আমার যেতে ইচ্ছা করে নি৷
সবাই ক্লান্ত হয়ে গল্পের আসর জমালে চাচিমার কথায় ছাদে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই কেউ একজন আমার কোমড়ে শাড়ি ভেদ করে হলুদ স্পর্শ করে দেয়। ভয়ে, রাগে ঠান্ডায় জমে যাই। এতটুকু বুঝতে পারছি লোকটা ধির পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার কোমড় টেনে হুট করেই ঠোটে চুমু খেয়ে নেশালো কন্ঠে বলে ওঠলো!

— পাগল করার জন্য তোমার রুপ না জান ওই মায়াবতী চোখ গুলোই এনাফ। তুমি কি জানো আজ আমার ফুলের রানি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে,
কিন্তু জান বি রেডি, আমাকে এতদিন অনেক জ্বালিয়েছো।কাল থেকে আমার পালা, বি রেডি মাই কুইন।

না আর না, অনেক সাহস নিয়ে আজকে বলেই ফেললাম।

— আপ আপনি কে? প্লিজ এভাবে হুট হাট আমার কাছে আসবেন না। চলে যান প্লিজ, কেউ আমাকে এভাবে দেখলে অ অন্যকিছু ভাববে৷ প্লি

— সসস ডোন্ট পেনিক জান, ভয় পেয়ো না, আমি কিচ্ছু করবো না, আর প্লিজ কেদো না৷

কারো পায়ের শব্দে আমি চমকে উঠি আচ্ছা, এখন এই অচেনা লোকটার সাথে আমাকে দেখলে? কি হবে ভাবতেই চোখ বেয়ে তরতর করে জল গড়িয়ে পরলো।
লোকটা হটাৎ আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলে উঠলো।

— বি রেডি এন্ড প্রিপেইড মাই কুইন। কাল আমার জিবনে আপনার আগোমন জান। আমার মায়াবতি কে নিজের করে নিবো আমি।

বলেই হটাৎ ছেড়ে চলে গেলো। কিন্তু আমি আজও লোকটাকে চিনতে পারলাম না। কিন্তু কি বলে গেলো। কালকে কি হবে?
আমার জিবনে কি ঘটতে চলেছে কাল?#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_১৪
এক কোনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছি।পুরো বিয়ে বাড়ির মধ্য মনি এখন আমি। বিয়ে বাড়িতে যে এমন একটা ঘটনা ঘটে যাবে আর তার মূল কেন্দ্রবিন্দু যে আমি হবো সেটার কল্পনার বাহিরে আমি। কিন্তু আমার সামনে দিব্বি বসে ফোন স্ক্রল করে যাচ্ছে মিঃ চৌধুরী।
আমি নিরবে কান্না করতে করতে ভাবতে লাগলাম কিছু ঘন্টা আগের কথা।

** ২ ঘন্টা আগে **

বিয়ে বাড়িতে পুরো মানুষ গিজগিজ করছে। আজকে আপুর বিয়ে তাই তুবা সকাল সকাল চলে এসেছে, যদিও চাচ্চু আর চাচিমা কোন কাজ করতে বারন করেছে। কিন্তু বিয়ে বাড়ি যেহুত তাই হাতে হাতে কিছু কাজ করে দিচ্ছি। এভাবেই সময় পেরিয়ে ১২ টার কাছাকাছি গেলে আমি সাওয়ার নিয়ে চুল শুকতে বসি। আপুকে পার্লার এর মেয়েরা সাজিয়ে দিচ্ছে, মাঝে মাঝে তুবাও কিছু ইনস্ট্রাকসন দিচ্ছে। আমি দেখছি আর মুচকি হাসছি। এর মধ্যে তুবাও সাজতে বসে পরেছে। যেহুত শাড়ি পরবে তাই আজকে গর্জেস সাজবে। অবশ্য এটা মায়ার প্লেন। তার মতে তার ছোট ভাইয়ার বিয়েটাই আনন্দ করতে পারবে, বড় ভাইয়া যদি বিয়েই না করে? ওর কথা শুনে আমরা সবাই সেদিন খুব হেসেছি। হাতে কালো শাড়িটা নিয়ে বসে আছি। কিন্তু হটাৎ করেই ওই দিনের মিস্টি কালার শাড়িটার কথা বড্য মনে পরছে, আপুর কথায় বাস্তবে ফিরলাম,

— ঈশা যা শাড়িটা পরে আয়। সাজতে বসতে হবে তো।

— যাচ্ছি আপু।

ঘরে যেতেই আমি অবাক। একি এই রেপার বক্স কার? আমার রুমে কি করছে? এটা কি তুবা এনেছে? কিন্তু তাহলে আমি দেখলাম না কেন? ভাবনার মাঝেই বক্সটা খুলে আমি ৪০০ বোল্ডের শক খেলাম, এটা যে সেই শাড়িটা। অবাকের চরম পর্যায় চলে গিয়ে শাড়িটা হাতে নিতেই দেখলাম মেচিং করা চুড়ি, সিম্পল জুয়েলারি, সাথে একটা চিরকুট। চিরকুট এ লেখা ছিলো—

🌼🌼”আমার প্রেয়সি কি জানে তাকে এই শাড়িটা জড়ালে কতটা সুন্দর লাগবে।
“শাড়িটায় তোমাকে দেখবো ভাবতেই একরাশ ভালোবাসা কাজ করছে জান।
সব কিছু দিয়ে নিজেকে মুড়িয়ে নাও,
আমি দু-চোখ ভরে তোমাকে দেখতে চাই এ শাড়িতে।
ভালো কথায় শাড়িটা না পড়লে,আমি এসে পড়িয়ে দিতে বাধ্য হবো।।🌼🌼

এটা কি থ্রেড ছিলো নাকি?
আদেশ ছিলো? আমি এটা পরবো না, কিছুতেই পরবো না। হাহ,।
এর মধ্যেই তুবা শাড়িটা টেনে নিয়ে বললো-

— বাহ্ ঈশা শাড়িটা কবে কিনলি রে? আমাকে তো বললি না। কি সুন্দর শাড়িটা রে , ওয়াও এই জুয়েলারি গুলো কি এক্সপেন্সিভ, কবে কিনলি?

তুবার হটাৎ করে আসাতে আমি ভয় পেয়ে চিরকুট টা লুকিয়ে ফেললাম। তারপর আমতা আমতা করে বললাম ,

— আব মা মানে অ অনেক আগে কিনেছিলাম।

— কত সুন্দর রে, এই আজকে তুই এটাই পরবি। রাখ তো ওই শাড়ি।

— না না আমি এটা পরবো না।

— কেন? কি সমস্যা এটা পরলে? কত সুন্দর লাগবে জানিস। চল বলছি।

— তু তুবা শোন না আমার কথাটা।

— কোন কথা না। চল বলছি।

কোথায় চেয়েছিলাম অচেনা লোকটার জিনিস পরবো না? সেখানে সেই এইগুলোই পরতে হবে। হায় কপাল।
আমাদের কথার মাঝেই দুইটা মেয়ে এসে দড়জায় দারিয়ে বললাম!

— ম্যম আসবো?

— জ্বি আসুন। আপনারা কারা?

— আসলে ম্যম আমরা পার্লার থেকে এসেছি। ম্যম কে সাজানোর জন্য।

— কিন্তু ব্রাইড তো ও না। আর তাকে সাজানোর জন্য তো লোক নেয়া হয়েছে।

— আসলে ম্যম আমরা ব্রাইডের সাজানোর লোকের সাথেই এসেছি,

— ও আচ্ছা এবার তাহলে আমাদের কে সাজিয়ে দিন।

— আচ্ছা ম্যম, আপনারা শাড়ি গুলো পরে আসুন।

— কিরে চল ঈশা লেইট হচ্ছে এবার।

— আচ্ছা চল।

আমি আর তুবা শাড়ি পড়তে চলে গেলে,দুইটা মেয়ের মধ্যে একটা ফোন বের করে কাউকে ফোন করে বললে-

–স্যার আপনার কথা মতো বক্সটা রেখে দিয়েছিলাম। ম্যম এখন এই শাড়ি আর জুয়েলারি গুলোই পরবে।

ফোনের ওপাস থেকে কেউ শরিরে পারফিউম স্প্রে করতে করতে বললো –

–গুড। আই লাইক ইউর জব। সাজতে বসিয়েছো? ( গম্ভির গলায়)

— না স্যার শাড়ি চেঞ্জ করা হলেই করবো।

— ওকে। কেউ জেনো কিছু টের না পায়। খেয়াল রাখবে। গড ইট।

— জ্ব জ্বি স্যার।

— আপনি কার সাথে কথা বলছেন?

— আব ব ম্যম আরেকটা কাস্টমার ছিলো।

— ওও। আসুন সাজাতে শুরু করুন। ঈশা তোর হলো?

— হ্যা আসি।

আমি বেরিয়ে আসতেই দেখি ওই দুইটা মেয়ে আর তুবা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আমি অসস্তি নিয়ে জিজ্জাস করলাম-

— এভাবে তাকিয়ে আছো কেন সবাই? আমাকে দেখতে কি বাজে লাগছে?

— না ম্যম আপনাকে পুরো পরি লাগছে, মাশাল্লাহ আপনি সত্যি অনেক সুন্দর

— দেখলি তো? আমি বললেই বলিস আমি নাকি মজা করি এখন তার বেলায়।

ওদের কথায় হালকা লজ্জা পেয়ে তাকাতেই আমাকে টেনে নিয়ে বসিয়ে দিয়ে সাজানো শুরু করলো।
তুবা আর আমার সাজ সেইম। অবশ্য মায়াও সেম সাজবে। শুধু শাড়ির কালার গুলো ভিন্ন।মায়ার সবুজ, তুবার নীল আর আমার কালো ছিলো। কিন্তু এখন তো আমার শাড়ি চেঞ্জ হয়েছে, তবুও আমরা সেইম সাজলাম, আয়নাতে তাকাতেই দেখলাম মিস্টি কালার শাড়ি সাথে মেচিং জুয়েলারি, হাতভর্তি চুড়ি,পাফ করে ফুলিয়ে খোপা করে ব্রাইডের মতো ফুল লাগানো।ব্রাইডাল সাজ,আমি অবাক নয়নে তাকিয়ে আছি নিজের ওপর নিজেই অবাক।
তুবা হুট করেই বলে উঠলো,

— মাশাল্লাহ বইন আমি কি পরি দেখি নাকি?

— সত্যি তোকেও অনেক সুন্দর লাগছে রে।

আমার কথায় তুবা মুচকি
হাসলো।

— সত্যি ম্যম ইউ আর সো কিউট এন্ড লাকি।

— লাকি? কিন্তু কেন?

— আব আসলে ম্যম উনি খুব সুন্দর তাই ।

— ওহ আচ্ছা৷

চল সামিয়া আপুর কাছে যাই।দেখি কতটুকু হলো।
ঘর থেকে বের হতেই দেখি সকলে আমার দিকে হ্যবলার মতো তাকিয়ে আছে। কোন মতে আপুর ঘরে গিয়ে দেখি চাচিমা চাচ্চু কান্না করছে। আপুর ও সেইম অবস্থা আমাকে দেখে দাদি আর মা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে, চাচ্চু আর চাচিমার ও সেইম অবস্থা। হটাৎ আমাকে চমকে দিয়ে চাচিমা জড়িয়ে ধরে বললো।

— আল্লাহ আমার মেয়েটাকে কি মিস্টি লাগছে। মনে হচ্চে যেন তোর বিয়ে মা।

— চাচ্চু আর আপুও একই কথা বললে, আমি লজ্জা পেয়ে দড়জায় তাকাতেই দেখলাম রাইসা হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তুবাও খেয়াল করে বলে উঠলো,

— কি হয়েছে রাইসা? এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?ক্রাস খেয়েছো বুঝি?

রাইসা কোন মতে মুখটা অফ করে বললো,

— কি বলছো তুমি? কোথায় ও আর কোথায় আমি?

— নিজেকে এত স্পেশাল ভাবো কেন? দেখো আমার ঈশার জন্য এর থেকেও স্পেশাল কেউ আছে।

— হ্যা তা তো অবস্যই। ( স্পেশাল তোর জন্য আমি রেখেছি রে ঈশা। তুই নিজেও জানিস না আজ তোর সাথে কি হবে। রেডি থাক তোর প্রতিটা মুহুর্ত আমি এমন রঙহিন করে দিবো যে, জিবনের অস্তিত্যই পাবি না।(সয়তানি হেসে)
আমি এর মধ্যে খেয়াল করলাম রাইসা একটা লেহেঙ্গা পরেছে পেট পিঠ দেখিয়ে, গর্জেস সেজেছে, দেখতে ভালো লাগলেও, শরির বেরিয়ে থাকার জন্য মেয়েটাকে বাজে লাগছে।কিন্তু মা ওকে চুল ঠিক করে দিচ্ছে কিন্তু আমার দিকে একবার ফিয়েও তাকায় নি।দাদি মুখ লটকিয়ে আছে।বড় এসেছে শোনা যেতেই একে একে সবাই বের হলো।আপুর নার্ভাস এর কারনে তুবা সহ আপুর ফ্রেন্ডরা সাহস দিচ্ছিলো।
আমরাও নিচে গেলাম, আপুর ফ্রেন্ড, তুবা, আমি, রাইসা আরও অনেকেই গেট ধরেছে। তাদের কথা একটাই ৫০ হাজার দিতেই হবে। সায়ন ভাই আবির ভাই আর তুহিন ভাই এই সেই বলছে তুবা আমিও বলছি। এক প্রকার ঝগড়া করছি। হটাৎ গার্ড এসে সবাই কে সরিয়ে নিচ্ছে কারন সয়ং আরাভ চৌধুরী আসছে, সবাই অধির আগ্রহে আছে ওনাকে দেখার জন্য। একটা মিস্টি স্মেল আমার নাকে এলে আমি চোখ তুলে তাকাতেই দেখলাম মিঃ চৌধুরী। হালকা ব্রাউন শেরয়ানি, ব্লাক ওয়াচ,চোখে গ্লাসেস, কাটিং চাপ দাড়ি আর নজর কারা কালো চোখের চাহনি আমার অনূভতি গুলো বলছে আমি এই লোকটার প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমি খুব করে চাই এটা না হোক, কারন কোথায় উনি আকাশের চাঁদ আর আমি জমিনের বামন। ওমনি উনি ফের বলে উঠলেন,

— ওয়েল সায়ন তোর টাকা দিতে হবে না!

ওনি আর কিছু বলার আগেই আমি বলে উঠলাম,

— কেন কেন, এটাই নিয়ম, মেয়েদের টাকা দিয়ে তবেই ভিতরে আসতে হবে৷

আমার কথার মাঝেই রাইসা রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো

— ঈশা কি হচ্ছে উনি বারন করেছে তো? তুই এখানে কেন যা এখান থেকে,

রাইসার কথায় প্রতিটা মেয়ে ক্ষুব্দ নয়ন তাক করলো ওর দিকে, আমিও কিছু না বলে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মিঃ চৌধুরী বলে উঠলো দাড়াও মিস, আমি ঘরে দাড়াতেই উনি হাত বাড়িয়ে আমার হাত ধরে হাতে একটা বান্ডেল তুলে দিলেন, আর রাইসার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— কখনো কাউকে ছোট করার আগে নিজের সম্পর্কে জেনে নিবেন। নেক্স টাইম এই ভুল করলে মাসুল দিতে হবে!

এবার আমার দিকে তাকিয়ে মিঃ চৌধুরী বলে উঠলেন,

— দের লাখ আছে, হবে মিস?

আমি, রাইসা সহ বাকি মেয়েরা হা হয়ে আছে। কারন কোথায় ৫০ হাজার আর কোথায় দের লাখ।
মেয়েরা টাকা পেয়েই রাইসা সহ সবাই চলে গেলো,কিন্তু রাইসা যাওয়ার আগে আমার দিকে ক্ষুব্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিলো, আস্তে আস্তে আপুকে নিয়ে এলাম,বড় যাত্রির খাবার পালা এলে আনটি আংকেল আমাকে টেনে তাদের সাথে নিজের হাতে খায়িয়ে দেয়, তুবা আর মায়াকেও দিয়েছে, খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই সবাই বিয়ে দেখতে যায়। এদিকে মিঃ চৌধুরী

— উফফ জান জান এত সেজেছো কেন আম কন্ট্রোললেস, এর পাওয়ার আমার চাই জান, একটু পর ধামাক্কা হবে বাট তুমি তা সহ্য করতে পারবে না, তবে চিন্তা করো না জান আজকের পর থেকে তোমাকে কোন কস্ট পেতে দিবো না,।

মিঃ চৌধুরী ফোন বের করেই কাউকে বললো,

— অল ডান? সাহিল?

— জ্বি স্যার সব ঠিক আছে, ম্যম এর অপেক্ষায় আছি,

— সময় হয়েছে এসে যাবে, কাউনডাউন শুরু করো।

— আপু কিছুতেই কবুল বলতে চায় নি। আপুর কান্না দেখে আমার কান্না পেয়ে গিয়েছে, চাচ্চু আর চাচিমাও অনেক কান্না করেছে, অবশেষে বিয়েটা হয়ে গেলো কিন্তু এর মদ্যে খেয়াল করলাম একটা মহিলা বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো, হুট করেই আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো

— তুমি কে মা? তোমার নাম কি? তোমার মা বাবা কোথায়?

বাবা মায়ের কথায় মনটা খারাপ হলেও মুখে মিথ্যা হাসি নিয়ে বললাম!

— আমার নাম ঈশা, আমি সামিয়া আপুর ছোট বোন আসলে আমার বাবা মা নেই।

— ও আসলে মা ক্ষমা করবে,
আচ্ছা মা তোমার বিয়ে

কিছু বলার আগেই রাইসা এসে বলে ঈশা তোর রুম এ আমার ফোনটা আছে নিয়ে আয় তো।

আমাকে রাইসা এত মিস্টি কথা বলে না, আজ হটাৎ বলায় একটু সন্দেহ হলো,আর কিছু ভাবার আগেই বললো!

— কি হলো যা!

— যাচ্ছি।

আমি আমার ঘরে যেতেই দেখলাম অন্ধকার, হাতরে লাইট অন করার আগেই কেউ টেনে বিছানায় ফেলে দিলো, আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার শাড়ি ধরে টানটে লাগলো, আমি কান্না করে হাত দিয়ে সরাতে চেয়েও পারছি না, এতটুকু বুঝতে পারছি এই লোকটা আর অচেনা লোকটার মাঝে মিল নেই,,ওনার স্পর্শ খারাপ ছিলো না, কিন্তু এই লোকটা আমাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করছে , আমি কান্নার মাঝেও মিঃ চৌধুরী কে মনে করে বলতে লাগলাম,

— মিঃ চৌধুরী প্লিজ আমাকে বাচান, এই লোকটা আমাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করছে,। লোকটা যেই না আমাকে কিস করতে যাবে ওমনি কেউ টেনে নিয়ে ঘুসি দিলো।অনেক গুলো জুতার শব্দ পেতেই দেখলাম লাইট অন হয়েছে। একি এতো মিঃ চৌধুরী, ওনার মুখে তাকাতেই দেখলাম হিংস্র চোখ ইচ্ছে মতো মারছে, আরে এই ছেলেটা তো রাহুল , তার মানে উনি, ভেবেই কেদে উঠলাম। এর মধ্যেই পুরো বাড়ি ছড়িয়েছে ঘটনাটা , সবাই এসে হাজির, সবাই আমাকেই খারাপ কথা বলছে।

মিঃ চৌধুরী রাহুল কে মারতে মারতে আধমরা করে, রাগে কাপতে কাপতে গার্ডদের বললো

— নিয়ে যাও এই জানোয়ার কে, এর ব্যবস্থা আমি এসে করবো।

আম্মু এসেই আমাকে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো।চাচিমা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আম্মু বলতে শুরু
করলো,

— এর জন্যই তোর কথা বেরেছে তাই না,তুই এত খারাপ হয়েছিস যে শেষ এ কিনা ঘরে।

— মাআআ প্লিয মা চুপ করো,আমি এসব করি নি মা এই লোকটা( কাদতে কাদতে)

দাদি বলে উঠলো!

— দেখসো আরও মাথায় তুইলা নাচো,ছি ছি আমাগো বাড়ির মান সম্মান শেষ করে দিলো এই অসৎ মাইয়া!

রাইসা বলে দেখেছো মা, অথচ আমাদের সামনে কি একটা ভাব করে,যেন কিছুই যানে না।

— চুপ করো সবাই, এসব কি বলছো, আমি এসব জানি না, চা চাচ্চু বিশ্বাস করো, চাচি মা তু তুমি তো যানো আমি

— ওও তাইলে অন্ধকারে এই পোলা তোর ঘরে ক্য

— তোর এই অবস্থা কেন রে, আমাদের বাড়িতে থাকতে পারবি না বের হো, আর তোকে বিয়েই বা কে করবে।

চাচিমা বলে উঠলো, নাবিলা এসব কি বলছিস মেয়েটার কথাটা শোন একবার,

আম্মু বলে ফেললো।

— এই মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবে তুমি? কে করবে নস্টা চরিত্রের মেয়ে কে বিয়ে ছি ছি এই মে

আর কিছু বলার আগেই কেউ বলে উঠলো

— আমি করবো বিয়ে ওকে!

কারো কন্ঠ পেয়ে সবাই চমকে তাকায়, একি এ তো মিঃ চৌধুরী, উনি কেন বিয়ে করবে আমায়? উনি রাগি চোখে হাত মুঠ করে তাকিয়ে আছে রাইসার দিকে,
আমি কিছুতেই ওনার লাইফ নস্ট হতে দিবো না, নিজের কথা ভাবতে ডুকরে কেদে উঠলাম।

( 😉

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here